Tag: স্মৃতিকথা

  • মোটা বই

    মোটা বই

    সাল ১৯৮১ – কোনোরকম পাশ করে ক্লাস নাইনে উঠি। পাশ করেছি তাতেই খুশি। সাইন্স পড়বো ভাবতেই আরো আরো খুশি। আমাদের তখন পোস্ট অফিস থেকে বই সংগ্রহ করতে হতো। আমি আমার বাবার সাথে গিয়ে ক্যান্টনমেন্ট পোস্ট অফিস থেকে বই কিনে নিয়ে আসি। দাম কতো দিয়েছিলাম তা মনে নেই। সম্ভবত বেশি দাম ছিলো না।

    যাই হোক, সব বই হাতে নিয়ে ফিজিক্সের বই দেখে ঘাবড়ে গেলাম। এতো মোটা বই! ভয় আর কাটে না।

    কয়েকদিন পর যখন রেজিস্ট্রেশনের সময় এলো তখন স্কুলের স্যারেরা জানিয়ে দিলো যে আমার সাইন্সে পড়া হবে না। কেননা, আমি অনেক বাজে রেজাল্ট করে নাইনে উত্তীর্ণ হয়েছি। আমি কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছি। এটা দেখে আমার বাবা আমাকে নিয়ে স্কুলে যায় রিকোয়েস্ট করার জন্যে। স্যারেরা সাফ সাফ জানিয়ে দেয় যে এতো খারাপ রেজাল্ট নিয়ে সাইন্সে পারবে না। আমার কান্নাকাটি দেখে বাবা আবার স্যারদের রিকোয়েস্ট করেন। এবার একটা শর্তে আমার সাইন্সে পড়ার অনুমতি মিললো। তা হলো, আমাকে প্রথম সাময়িকিতে অংকে ভালো করে দেখাতে হবে।

    আমি তাই করেছিলাম। সব স্যারদের তাক লাগিয়ে প্রথম সাময়িকি পরীক্ষাতেই সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছিলাম।

    স্কুলে ফাঁকি দেয়ার ব্যাপারে মাহির থাকার পরেও স্যারদের কাছে কেমন জানি প্রিয়ই ছিলাম।

    আমার সব বন্ধুরা “মুসলিম মডার্ণ হাই স্কুল” এ পড়তো। আমি পড়তাম ভাঙ্গা বেড়ার স্কুল”উত্তর কাফরুল উচ্চ বিদ্যালয়” এ। এই স্কুল প্রতিষ্ঠার পর থেকে কোনো ছাত্র প্রথম বিভাবে উত্তীর্ণ হতে পারেনি। আমি বন্ধ্যাত্ব ঘুচিয়ে দিয়েছিলাম। আমি আর ফেরদৌসি সেবারই (১৯৮৩ সাল) প্রথম বিভাবে উত্তীর্ণ হই। আমি চারটা বিষয়ে লেটার মার্কস পাই। তার মাঝে সেই মোটা বই ফিজিক্সও ছিলো।

    উনচল্লিশ বছর পেরিয়ে গেছে। এরপর শুধু একবারই মার্কশীট ও সার্টিফিকেট আনতে গিয়েছিলাম। কয়েকজন স্যারের মৃত্যুর খবর বন্ধুদের কাছ থেকে শুনেছিলাম। এর মাঝে দুইজন বন্ধুও চিরবিদায় নিয়েছে।

    সেদিন মোটা বইয়ের কাছে হারিনি। অংক থেকে শূণ্য আমার আজও পেছন ছাড়েনি – শূণ্য ভাবনা!

  • ইরানের ডায়েরি (পর্ব-১)

    ইরানের ডায়েরি (পর্ব-১)

    আচ্ছা, যদি হাতে পেন্সিল নিয়ে প্রথম লেখা হাতে খড়ি হয় তবে কি মনের টানে প্রথম গল্পের বই পড়া কি মনে খড়ি হবে? রবি ঠাকুর লিখেছেন কান পেতে রই, তবে চোখ পেতে রই লেখা যাবে?

    যাই হোক, আমার গল্পের বই পড়ার মনে খড়ি আব্বার নিকট থেকে। আপা, ভাইয়াদের গল্পের বইও চুরি করে পড়তে গিয়ে ধরা পড়ে মার খেলাম একদিন। তখন আব্বা লাইব্রেরি থেকে ক্লাস থ্রির বাচ্চাদের উপযোগী বই এনে দিলেন,। সিন্দাবাদের কাহিনী। বই পড়ে মনে হয়েছিল সিন্দাবাদের মত জাহাজ নিয়ে সাগরে সাগরে ঘুরতে না পারলে জীবনই বৃথা। সেই শুরু…. এরপর গালিভার ট্রাভেল।রাতে মাঝে মাঝে আব্বার কাছে ঘুমাতাম, বায়না ধরতাম গল্প বলার। ছোটদের উপযোগী গল্প বলতেন। মাঝে মাঝে তাঁর চাকরী জীবনের গল্প। আব্বা ব্রিটিশ আর্মিতে ছিলেন। লাহোর, বেলুচিস্তান, ও কাশ্মীরের গল্প করতেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতার কথা বলতেন। তখন মনে হতো আব্বার মত আর্মিতে চাকরি করাই আমার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য। বড় হওয়ার সাথে সাথে আব্বার গল্প বলার ধরনও পাল্টে গেল। তখন মনে হতো ইবনে বতুতা কিংবা কলম্বাসের মত স্বাধীনভাবে নানা দেশ ঘুরে বেড়ালেও মন্দ হয় না। বিভিন্ন সমাজ, জাতির জীবন যাপন দেখব।

    বঙ্কিম চন্দ্রের দেবীচৌধুরানীও হতে ইচ্ছে হয়েছিল। সৈয়দ মুজতবা আলীর দেশে বিদেশে পড়ে ফেলেছিলাম এক নিমিষেই। আব্দুর রহমানের সেই উক্তি যেন এখনো কানে বাজে ” ইন হাস্তা ওয়াতানাম।” একরাতেই পড়ে শেষ করেছিলাম আন্দিজের বন্দি বইটি। মনে মনে সেই হতভাগা যাত্রীদের সাথে আমিও ছিলাম সেই বরফের ভেতর। ওয়েস্টার্ন সিরিজে যখন স্টেজকোচ ডাকাতি হত সেই সময় আমিও সেই কোচের যাত্রী থাকতাম।

    আমি এক একটা বই শেষ করতাম আর সেই চরিত্রে নিজেকে কল্পনায় দেখতে পেতাম। ভ্রমন কাহিনীতে আমিও যেন সেই চরিত্রের সাথে ঘুরে বেড়াতাম। বয়স বাড়ার সাথে সাথে জীবনের লক্ষ্যও পরিবর্তন হয়েছিল। ধীরে ধীরে বাস্তবতা উপলব্ধির সাথে সাথে ছোট হয়ে এসেছে জীবনের লক্ষ্য। কিন্তুু মাঝে মাঝে মনে হয় আমার ছোট বেলার সেই লক্ষ্য,, আশা, আকাঙ্খা যেন আজো সুপ্ত অবস্থায় মনের ভেতর লুকিয়ে আছে।তাই হয়ত আজ আমার ১৭ বছর প্রবাস জীবন মহান আল্লাহ উপহার দিয়েছেন। ১৭ বছরে ইরানের বিভিন্ন প্রদেশ বেড়িয়ে যে কেবল রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা ও মনোমুগ্ধোকর দৃশ্যই উপভোগ করেছি তাই না। বরং বিভিন্ন প্রদেশের মানুষের সাথে মিশে তাদের মানসিকতা, ব্যবহার, আচার-আচরণ, সামাজিক রীতিনীতি সম্পর্কে জানতে পেরে পুলকিত হয়েছি। বিভিন্ন ট্যুর শুরু হয়েছিল যেমন আকাশে ওড়ার অভিজ্ঞতা দিয়ে,আবার রাস্তায় দৌড়ে বাস ধরার মধ্যদিয়ে নাটকীয়তার দৃশ্যও রয়েছে। রয়েছে পাতাল রেলের গেট বন্ধের এক সেকেন্ড আগে দৌড়ে গিয়ে রিক্স নিয়ে ব্যাগ ঢুকিয়ে দেওয়ার ফলে অটোমেটিক গেট খুলে যাওয়ার অভিজ্ঞতা।

    আমার মাস্টার্স পরীক্ষা চলাকানীন সময়ে হাতে এসেছিল ডঃ আনিস সিদ্দিকী সাহেবের ইরান নিয়ে লেখা ” যখন আমি রাজা ছিলাম “, ” যখন আমি শাহজাদী ছিলাম “। সেই সময় প্রথম ধারণা পেয়েছিলাম শাহ পরিবার ও রেজা শাহ পাহলভী সম্পর্কে।

    পথের পাঁচালী র অপু অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করত বিলাতের ডায়েরি পড়ার জন্য। সপ্তাহিক পত্রিকার অপেক্ষায় থাকত সে।

    আমার লিখতে ইচ্ছে হলো ইরানের ডায়েরি…

    ইরানের ডায়েরি
    হামেদান কথা – ২০১৮
    প্রথম পর্ব

    নওরোজের ছুটি শুরু হয়েছে। নববর্ষকে ফার্সি ভাষায় ‘নওরোজ’ বলে। ছুটি অথচ বেড়াতে বের হব না এটা বিরল ঘটনা আমাদের জীবনে। ঠিক করলাম এবার হামেদানে যাব।

    তেহরান থেকে ৩২০ কিমি দূরে ইরানের একটি ছোট্ট প্রদেশ। ছোট হলে কি হবে, শহরটি বিশ্বখ্যাত কারণ এখানে আছে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ জলগুহা যা পাহাড়ের ভেতর দিয়ে নদীর মতো ঠিক নদী বললে হয়তো বেশি বলা হয়ে যাবে তবে লেকের মত প্রবাহিত হয়ে চলেছে। এ জল গুহাটির নাম ‘আলীসাদ্‌র’।

    ১৫ মার্চ, ২০১৮ বৃহস্পতিবার
    আমরা খুব ভোরে রওনা হলাম হামেদানের উদ্দেশ্যে। ৪ ঘন্টায় পৌঁছে গেলাম। আইআরআইবির হামেদান সম্প্রচার কেন্দ্রের কম্পাউন্ডেই রেডিও তেহরানের ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য নির্দিষ্ট হোটেল আছে, সেখানে গিয়ে উঠলাম। আলবান্দ পর্বতমালা দিয়ে পরিবেষ্টিত ছোট শহর হামেদান কিন্তু খুবই পরিচ্ছন্ন ও শান্ত পরিবেশ। প্রায় ৫,০০০ বছরের পুরানো এ শহরবাসীর প্রধান ভাষা ফার্সি, লোরি ও কূর্দি। লোকসংখ্যা ১মিলিয়ন ৭ লাখ ৫৮ হাজার।

    আলী সাদ্‌র গুহা
    এই হামেদানেই রয়েছে দর্শন ও জ্ঞান বিজ্ঞানের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র মহান ব্যক্তিত্ব আবু আলি সিনার (ইবনে সিনা) সমাধি। ইতিহাসের পাতায় অত্যন্ত গুণী ব্যক্তি ইবনে সিনা। তাঁর পুরো নাম আবু আলী হোসাইন ইবনে আবদুল্লাহ আল হাসান ইবনে আলী ইবনে সিনা। বিশ্ব ইতিহাসের অন্যতম সেরা চিকিৎসাবিজ্ঞানী, গণিতজ্ঞ, জ্যোতির্বিজ্ঞানী এবং দার্শনিক ইবনে সিনা’র সমাধিতেই গেলাম প্রথমে।

    গেট দিয়ে ঢোকার সময় এক অন্যরকম অনুভূতিতে আমার সারা শরীর কাঁপতে লাগল। মোহগ্রস্তের মত এলোমেলো পায়ে ঢুকে কিছুক্ষণ বসে থাকলাম সমাধির পাশের বাগানে একটা অদ্ভূত সুন্দর গাছের তলে। গাছটার নাম জানিনে। বসে ভাবছিলাম ইবনে সিনার কথা। আনন্দে চোখে পানি এলো। বারবার মনে হচ্ছিল এতকাল যার কথা কেবল বইএ পড়েছি সেই ইবনে সিনার সমাধির পাশে আমি বসে আছি!

    ছেলে তালহার ডাকে সম্বিত ফিরে পেয়ে উঠে হাঁটতে থাকলাম রশীদ আর ছেলে মেয়ের সাথে। কিছু ছবি তুললাম, ঘুরে ঘুরে দেখতে প্রায় একঘন্টার মত লাগল। ওখান থেকে বের হবার আগে আবারো বসে থাকলাম সিঁড়িতে কিছুক্ষণ। মনে করার চেষ্টা করছিলাম ওনার সম্পর্কে কি কি পড়েছি, কিন্তু মাথাটা আবারো এলোমেলো লাগল। কিছুই মনে করতে পারলাম না। আসলে আমার অনুভূতির কথাটা ঠিক মতো প্রকাশ করতে পারছি না।

    এরপর গেলাম ‘উরিয়ন’ নামে বিখ্যাত বাবা তাহের হামেদানি’র সমাধিতে। বাবা তাহের ছিলেন একজন মরমী কবি। তাঁর কবিতার বক্তব্য ছিল একেবারেই সাদামাটা। তাঁর কবিতা এখনো বিভিন্ন ভাষায় অবশিষ্ট আছে। তিনি ছিলেন একাধারে কবি ও দরবেশ। ইরানে বিশেষ করে হামেদানে তিনি দরবেশ বাবা নামেও পরিচিত। ওখানে কতর্ব্যরত কর্মকর্তা জানালেন যে, বিদেশিদের জন্য ১০ ডলার করে টিকিট তবে রশীদ কার্ড দেখালে তিনি ইরানি হিসাবে বিবেচনা করে জনপ্রতি ১ ডলারের কিছু কমের সৌজন্য টিকিটে আমাদেরকে প্রবেশ করতে দিলেন। ওখান থেকে অনেকগুলো বই, কার্ড উপহার দিলেন। তালহা রোদসীকে দিলেন ছোটদের উপযোগী গিফট৷এখানেও ফুলবাগানে কিছুক্ষণ বসলাম। চারদিকটা ঘুরে দেখতে ঘন্টাখানেক সময় লাগল। এরই মধ্যে রোদ কিছুটা পড়ে এসেছে…বাতাসটাও বেশ নরম, হালকা ঠাণ্ডা।

    দুপুরের খাওয়ার জন্য আমরা একটা হোটেলে ঢুকলাম। হেটেলটি দেখে আমার মনটা খুশিতে ভরে উঠেছিল। ঝরণার পাশে খুবই পরিচ্ছন্ন, গাছগাছালিতে ভরা কাঠের দুতলা। ব্যালকুনিতেও বসার জায়গা করা, কার্পেট পেতে বালিশে হেলান দিয়ে বসে নীচু টেবিলে খাবার খাওয়ার ব্যবস্থা করা আছে। এটা ইরানের বহু পুরানো ঐতিহ্য। ওয়েটার এসে মেন্যু দিয়ে গেল। খাবারের দাম দেখে আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম। তেহরানের চেয়ে প্রায় ৫ গুণ বেশি খাবারের দাম। আমি উঠে দাঁড়ালাম মন খারাপ করে। আমার মন খারাপ দেখে আবদুর রশীদ বলল, প্রতিটি দেশেই টুরিস্ট স্পটে সবকিছুর দাম বেশি থাকে স্বাভাবিকের তুলনায়। সুতারাং এখানেই খেয়ে নাও, কিন্তু আমার মন সায় দিল না। ঠিক ঐ মুহূর্তে পকেটের অবস্থা নিয়ে চিন্তিত হলাম। ভাবলাম খাবারদাবারের পিছনে এত ব্যায় না করে বরং ঘোরাঘুরির পিছনে খরচ করি। তাই উঁচু দামের হোটেলটা থেকে বের হয়ে আমরা একটা ছোট ফাস্ট ফুডের দোকানে ঢুকলাম। বার্গার খেলাম। তালহা রোদসী বাড়তি চিকেন আর ফ্রেন্স ফ্রাইজ খেলো। আমরা ড্রাইভারকেও ডেকে নিয়েছিলাম। তিনি খুবই খুশি হয়েছিলেন কিন্তু কিছুটা বিব্রত ভঙ্গিতে খাচ্ছিলেন। আবদুর রশীদ সহজ করার জন্য হামেদান সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশ্ন করছিলো। ইন্ডিয়ান মনে করে খেতে আসা আরেকজন ভদ্রলোকও যোগ দিলেন রশীদের আলোচনায়। আমরা তাদের ভুল ভাঙিয়ে দিলাম। বললাম, বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ ইন্ডিয়া। একসময় আমরা ইন্ডিয়া ও পাকিস্তানের একটি অংশ ছিলাম ঠিকই, পরে ১৯৭১ সালে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে আমরা স্বাধীনতা এনেছি।

    রোদসী ও আমার জন্য রাইডিং কেডস কেনার দরকার ছিল। মার্কেটে গিয়েও মনটা আরেকদফা খারাপ হলো। আসলে আমাদের অভ্যাস হয়ে গেছে দামের তুলনা করা। ইরানে গিয়ে প্রথম দিকে দেশের দামের সাথে তুলনা করতাম আর এখন এখানে তেহরানের সাথে। রশীদ বিরক্ত হয়ে বললো টুরিস্ট এলাকায় দাম বেশি থাকে দুনিয়ার সব দেশে। প্রয়োজন যেটা সেটা তো কিনতে হবে। কিনে নিলাম কেডস আর টুপি। এরপর গাইড নিয়ে গেল একটি ঝর্ণার কাছে। আলবান্দ পর্বতমালার মাঝামাঝি উপরে এ ঝর্ণাটির কাছে পৌঁছাতে বেশ কষ্ট হলো। প্রায় ৫০টির মত সিঁড়ি টপকে সেখানে পৌঁছলাম। ঝরণার একপাশে খানিকটা উপরে বিশাল পাথরে খোদাই করে প্রাচীন ফার্সি ও ব্যাবিলনিয় হরফে কিছু লেখা রয়েছে।ফার্সিতে একে বলে গাঞ্জনমে (শিলালিপি)।

    ওই শিলালিপিতে লেখা রয়েছে হাখামানেশীয় রাজবংশের দুই রাজার বিজয় গাঁথা। তার একজন হলেন রাজা দারিয়ুস যার নাম আমাদের কাছে পরিচিত। এখানে অনেক বিদেশি পর্যটকের দেখা পেলাম। বিশেষ করে জাপান ও চীনের বেশ কিছু মহিলা। সাথে তাদের ছেলেমেয়েকেও নিয়ে এসেছেন। কয়েক জন ভারতীয়কেও দেখলাম। এক সালোয়ার কামিজ পরা মহিলা সামনে এসে বললেন, তোম দিল্লিসে আইয়ে অর লাহোরসে ? আমি হটাৎ এ প্রশ্নে বিব্রত হয়ে গেলাম, মহিলা হাসিমুখে তখনো তাকিয়ে আছেন। হেসে বললাম, মে বাংলাদেশ থে আয়া। আমার উর্দূতে আমিই কনফিউশানে ছিলাম , হেসে আবার বললাম “আই অ্যাম ফ্রম বাংলাদেশ।” মহিলার সাথে বেশ আলাপ জমে উঠল। কথা বলে জানতে পারলাম মহিলা তেহরানে বোনের কাছে বেড়াতে এসেছেন; পাকিস্তানি। বোন ছুটি না পাওয়ায় একাই এখানে চলে এসেছেন। আরো কিছু কথাবার্তার পর মহিলা বিদায় নিলেন।

    বিকেলের স্নিগ্ধ আলোয় এক মায়াময় পরিবেশে ঝর্ণার হিমশীতল পানিতে কিছুক্ষণ পা ডুবিয়ে বসে থাকলাম।ঝরণার পাশেই একটা গাছে বুলবুলির দেখা পেলাম। পাহাড় থেকে নিচে নেমে এসে একটা টল দোকানে বসলাম। আমাদের দেশে যেমন ছোট ছোট টল দোকানে চা বিস্কুট, সিঙ্গারা, সমুচা বিক্রি হয় তেমনই একটা দোকানে গেলাম। তবে এখানে বিক্রি হয় শালগম সিদ্ধ, লাল বিট সিদ্ধ আর ভুট্টা সিদ্ধ। সিদ্ধ করা ভুট্টার সাথে পনির, লবণ, সস আর লেবুর রস মিশিয়ে খেতে বেশ সুস্বাদু। এরপর লাল চা খেলাম। সন্ধ্যার দিকে হেটেলে ফিরলাম। এভাবেই কেটে গেল প্রথম দিন।

  • এখনো পর্যন্ত গরীবই রয়ে গেলাম

    এখনো পর্যন্ত গরীবই রয়ে গেলাম

    কি ভাবে শুরু করবো বুঝতে পারছি না! জীবনে অনেকবার অনেক কিছু হতে ইচ্ছে হয়েছে বা হতে চেয়েছিলাম। শেষ পর্যন্ত কিছুই হতে পারলাম না। জীবন স্রোত ধাক্কা দিয়ে যেখানে নিলো, সেখানেই ঠেকে রইলাম।

    কয়েক বছর আগে ইচ্ছে পোষণ করলাম, একটা Canadian ডিগ্রি নিলে কেমন হয়! যেই ভাবা, সেই কাজ। খোঁজ নিতে থাকলাম কোন কলেজ গেলে আমার জন্য সুবিধা হবে। কারণ চাকরি বাদ দেয়া যাবে না। চাকরির পাশাপাশি পড়ালিখা করতে হবে। অনেক খুজে একটা কলেজ ঠিক করলাম, যেটার night ক্লাস শুরু হবে ৬-১১ টা। আর আমার অফিস টাইম ৯-৫ টা। অফিস থেকে কলেজের দূরত্ব ১৫ মিনিট। সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম, এখানেই ভর্তি হব। “Subject HR” যেহেতু ম্যানেজমেন্ট জবে আছি, HR ভাল হবে।

    ভর্তি হতে গেলাম অবশেষে, খুশি লাগছে! যখন কলেজ location choose করলাম, ওরা বললো ওই location আর যে সময় টা আমি নিতে চাচ্ছি, তখন শুধু মাত্র Business management আর Payroll class হয়। মাথাটা চক্কর মারলো, এখন কি করি, Payroll জীবনেও হবে না আমাকে দিয়ে। হিসেবে আমি খুবই কাচা। Business Management-এর কথা শুনলে বমি বমি লাগে। কান্না আসছে! তাহলে কি আর ডিগ্রি নেওয়া হবে না! অবশেষে রাস্তা না পেয়ে বমি বমি ভাব নিয়ে বিসমিল্লাহ্ বলে Business Management-এই ভর্তি হলাম। মনকে সান্তনা দিলাম ডিগ্রি একটা হলেই হলো।

    একসময় গ্রাজুয়েট ও করে ফেললাম ভালো নম্বর নিয়ে। তখনও বুঝতে পারিনি এই business management তো আমার রগে রগে দৌড়াচ্ছে তখন থেকেই, যখন বয়স আমার ৭/৮। ছাড়তে চাইলেই কি আর ছাড়তে পারি! ছোট বয়সে বিজনেস ভাল জমে আর প্রফিট ও ভালো হয়, যদি ২/৪ টা সুন্দরী অবিবাহিত খালা বা বড় বোন থাকে।

    এখন আসল কথায় আসি। প্রথম প্রফিট শুরু হয়েছিল চকলেট দিয়ে। খালাদের হাতে একটা করে চিঠি পৌঁছে দিতে পারলে বেশ ভাল ভাল চকলেট পাওয়া যেত। সেগুলো পেতাম মহল্লার মামাদের থেকে, যারা খালাদের জন্য প্রেম নিবেদন করতে চাইতো।

    অনেক দিন যাওয়ার পর খুব ভাল এক্সপার্ট হয়ে যাই, এক হাত চিঠি নিলে আরেক হাত টেরই পায় না, এরকম আরকি।
    চকলেট তখন একা খাই না, সাথে ছোট দুই ভাইকে নিয়েও খাই। অনেক গিফট আর চকলেট খাওয়া হলো, এখন আর মুখে মজা লাগে না।

    একবার ছোট খালার জন্য একটা চিঠি এলো। বলেই ফেললাম আর চিঠি নিবো না, চকলেট মজা না। মামা তখনই জোর করে হাতে একটা ৫ টাকার নোট ধরিয়ে বলল “তাহলে যা ইচ্ছা কিনে খাও”। এই প্রথম ক্যাশ প্রফিট। হেব্বি খুশি হয়ে গেলাম।

    একদিন হঠাৎ বড় বোনের জন্য একটা চিঠি এলো। নিতে রাজি হলাম না, ভিষণ রিস্ক আছে। আম্মা জানতে পারলে দুনিয়া ছাড়া করে ফেলবে। ক্যাশের পরিমাণ টা বড় ছিল, কি আর করা, রিস্ক নিয়েই ফেললাম। এমন উদ্যোগ না নিলে কি আর লাভ আসে নাকি!

    খুব ভালোই চলছে দিনকাল। এর মধ্যে মেজবোনের জন্য চিঠি আসা শুরু হলো। মহল্লার ভাইয়ারা উত্তর পাক আর না পাক, তাদের চিঠি ভালোলাগার মানুষের হাতে গিয়ে পৌঁছেছে, তাতেই উনারা খুশি!

    সবচেয়ে বেশি লাভ হয়েছে মেজো বোনের চাহিতিদের থেকে। আমি এখন বড়লোক, ভিষণ বড়লোক! স্কুলে টিফিন পিরিয়ডে বন্ধুদের সাথে ভীষন টাকা খরচ করি!

    হঠাৎ একটা ঝড় এসে সব লন্দ ভন্ড করে দিলো। আম্মার কানে কথাটা পৌঁছে দিল আমারই এক স্কুল শত্রু “রূপা টিফিনে অনেক কিছু কিনে খায়”। বাসায় এলাম, এমন ধুলাই খেলাম আম্মার হাতে, টয়লেটের স্যান্ডেল থেকে শুরু করে রান্নার খুন্তি পর্যন্ত কিছুই বাকি ছিল না। আমি গরীব হতে থাকলাম, ভিষণ গরীব, এখনো পর্যন্ত গরীবই রয়ে গেলাম।

  • আমার বিয়ের গল্প

    আমার বিয়ের গল্প

    ২৪শে নভেম্বর ১৯৮৬ তে আমার বি এ ফার্স্ট ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হবে।এরমধ্যে ই আমার বড়ো ননাসের (আমাদের চট্টগ্রাম নাসিরাবাদ কলেজের সমাজ কল্যাণের প্রফেসর) কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে বদলি হয়ে যাওয়ায় উনারা পুরো পরিবার কুমিল্লা শিফট করবেন। তাই তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন যাবার আগে তাঁর কাছে থাকা ছোটো ভাই গাজী মওদুদূর রহমান বুলুর পছন্দের পাত্রীর সাথে এনগেজমেন্ট টা করিয়ে বিয়ের ডেট ঠিক করে যাবেন।

    সেই মতো ২৩ শে নভেম্বর আমাদের বাসায় তারা আমাকে আংটি পরাতে আসবেন। আমার বড়ো ভাসুর ঢাকা থেকে আংটি নিয়ে যাবার কথা।সন্ধ্যার পর বড়ো আপা ও বড়ো ভাই আমাদের বাসায় আসলেন।বাইরে থেকে আমার হাসবেন্ড (তখনও হন নি) ঘুরঘুর করছিলেন যদি ডাকে তবে রুমাল মুখে হাজির হবেন কবুল পড়তে।

    আমার পরিবার এনগেজমেন্ট এর বিপক্ষে ছিলেন। আর তাই ই হল।আমার ভাসুর অফিস থেকে ডিউটি শেষে (বাংলাদেশ বিমানের ফুয়েল অফিসার ছিলেন) বাসায় না ফিরে ফ্লাইটে চট্টগ্রামে যাওয়ায় আংটি নিতে ভুলে গেলেন।এমনি এমনিই বিয়ের দিন ধার্য্য করা হল।৯/১/৮৭ শুক্রবার দুপুরে। উনাকে (হাসবেন্ড) এক ফকির বাবা নাকি বলেছিলেন ১/১/৮৭ উনি মারা যাবেন। তাই ২/১/৮৭ প্রথম শুক্রবার হওয়া সত্বেও তিনি দ্বিতীয় সপ্তাহ টা বেছে নিয়েছিলেন। যদি বেঁচে যান তাহলে বিয়েটা মজা করেই।করবেন এই আশায়।

    যাক পরেরদিন ক্যানটিন গেটে কলেজ বাসে উঠে বইয়ে ডুবে গেলাম।পাশে ঘটকিনি দুই বান্ধবী আপুনি ইশারা করে বাইরে দেখতে বল্লো, দেখেতো মরে যাই! মরে যাই!সামনে ফুল হাতে দাঁড়িয়ে আছেন ভদ্রলোক! তাড়াতাড়ি চোখ নামিয়ে বইয়ের পাতায় রাখলাম।পড়া কি আর মাথায় ঢুকে!

    এভাবে নানা উছিলায় উনি কলোনিতে বাসার আশে পাশে কখনো কাপড়, আংটি, চুড়ির মেজারমেন্ট নিতে হাজির হয়ে যান।লজ্জায় মরি মরি অবস্থা আমার!

    এরপর আসে সেই দিন।জানুয়ারির ৪ তারিখ পর্যন্ত ক্লাস করে পড়া এগিয়ে রাখলাম।তারপর আট তারিখ সন্ধ্যায় গায়ে হলুদ হয়ে গেল।৯/১/৮৭ দুপুরে বিয়ে হয়ে গেল।ইচ্ছে ছিলো পারলারে সাজার।কিন্তু পারলারে নিয়ে যাবার লোক পাওয়া গেলো না।বড়ো বোন এবং আমার হাসবেন্ড এর বান্ধবী মনি আপাই সুন্দর করে খোঁপা বেঁধে সাজিয়ে দিলেন।

    সেজ দুলাভাই (ননাসের হাসবেন্ড পিডিবি ট্রেনিং ডাইরেক্টর ছিলেন) এর কল্যানে পিডিবি রেস্ট হাউসে উঠানো হল।ঐ সময় সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া হল,সাথে সালাম। কাউকে চিনিনা তখনও। অবনত মস্তকে সবাই কে সালাম করে গেলাম।কারোরই চেহারা দেখিনি।বসানো হল দুজনকে। ফটোসেশন চল্লো।এরপর মিস্টিমুখ, বিভিন্ন রিউচুয়াল।

    এবার দেখি আমার ছোটো ননাস (হাসবেন্ড এর এগারো মাসের বড়ো) রুবি আপা একটা ছোট্ট আলাউদ্দিন এর মিস্টির বাক্স, একদম ই মিনি প্যাক করা। আমার হাতে দিয়ে বল্লেন, ‘বেবি,ধর এটা খাও বুলু অর্ধেক খেয়ে রেখেছে বাকিটা তুমি খাও।এটা নিয়ম।আমি হাতে নিলাম না খুলে ই প্রথমবারের মতো কথা বললাম।’এটা তো খালি মনে হচ্ছে ‘

    তখন আমার শ্রদ্ধেয় টিচার বড়ো আপা বল্লেন” মাশা আল্লাহ “বুলু হীরা চয়েস করেছে। কেউ ঠকাতে পারবে না তোমরা। ‘

    এরপর আপা বল্লেন তুমি এবার ওয়াশ রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও।আর নরমাল একটা শাড়ি পর যাতে বউ বউ না লাগে।কেননা রাতের ট্রেনেই আমরা ঢাকা ফিরবো।

    উনার কথামতো কাজ করলাম তারপর রেস্ট হাউসে রাতের খাবার খেয়ে স্টেশনে পৌঁছালাম।একটা বগিতে সবার সাথে গিয়ে বসলাম। মিয়াভাই ভাবি আসলেন বিদায় দিতে। ট্রেন প্রায় ছেড়ে দিয়েছে এমন সময় উনার বন্ধুরা আমাকে অন্য একটা সিংগেল ক্যুপ নিয়ে গেল ।যেখানে আমার হাসবেন্ড দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলেন।

    ক্যুপে উঠার সাথে সাথেই কিছু বুঝার আগেই ট্রেন জোরে চলা শুরু করলো। আমি দাঁড়িয়ে রইলাম।উনি আমাকে ধরে বসিয়ে দিলেন। যেহেতু আমাদের প্রথম রাত বাসর রাত তা ট্রেনে ই হোক না কেন।বড়ো দের শেখানো মতো আমি তাকে টুক করে সালাম করতেই অপ্রস্তুত হয়ে তিনি প্রথমবারের মতো তার বাহুবন্ধনে আবদ্ধ করে রাখলেন। দীর্ঘক্ষণ।

    এরপর ছাড়াপেয়ে আমি বসে গেলাম জানালা ঘেঁষে। উনিও আমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লেন।এবং প্রথম বার দুজনে প্রান খুলে কথা বলা শুরু করলাম।যদিও আমি শুনেছি বেশি উত্তরে হু হা ছাড়া কিছুই বলিনি। তিনি চেয়েছিলেন এই পবিত্র রাতকে পবিত্র অবস্থায় স্মৃতি মধুর করে রাখতে সেই খানে আমিও একমত ছিলাম।উনি সম্পর্কের শুরুতে কিছু কথা (তার জীবনের অজানা) আমায় জানতে চেয়েছিলেন। তারপর আমার প্রতিক্রিয়ার উপর সম্পর্ক তৈরি হউক।

    এভাবেই ওর অতীত জীবনের মানুষটি আমাদের বাসর সংগী হয়ে আমাদের দুজনের সাথে ট্রেন জার্নি করেছিল!

    ফাতেমা_হোসেন
    ১২/১/২২.
    আজকের দিনে ছিলো বউভাতের প্রোগ্রাম।

  • গোলাপি পুতুল

    গোলাপি পুতুল

    আমার মেয়ের জন্মের সময়ের কথা ১৯৯৩ মার্চ মাস। কাংখিত সময় পার হয়ে যাচ্ছে আমার কোন লেবার পেইন নাই। প্রফেসার বদরুননেছা আহমেদ আমার চিকিৎসক। দু তিন দিন ধরে শুধু একবার উনার বাড়ীর নিচতলার ক্লিনিকে যাচ্ছি আর চলে আসছি। ১৫ তারিখ থেকে এটা চলছে। ২২তারিখে উনি আমাকে বললেন ভর্তি হতে। আমি আমার হেলেন আপা সাথে সব গুছিয়ে টুছিয়ে হলাম ভর্তি। আপার একদম পছন্দ হচ্ছে না সিজার করার ব্যাপারটা। কারন আপা বার বার ই বলছেন তুই একদম সুস্হ আর তোর প্রথম বাচছা নরমাল এটাও নরমালই হবে। নার্স মাঝবয়সি একজন খৃস্টান ধর্মের মহিলা।

    খুব সুন্দর করে কথা বলতেন সবসময় আমার সাথে। গজ গজ করতে করতে স্যালাইন সব রেডি করছেন আর বলছেন, আজকাল বাপু কি এক যে নখরা শুরু হয়েছে, পেট কাটো, পেট কাটো। আরে বাবা সুস্থ্য থাকলে তো বাচ্চা স্বাভাবিক ভাবেই আসবে দুনিয়াতে,অসুস্হ হলে অন্য কথা। আমি আর আমার বোন চোখাচোখি করলাম আর দুজনেই চোখের ভাষা পড়ে নিলাম। নার্স একটু ক্ষনের জন্য রুমের বাইরে গেল আমি আর আপা দুজনে সব রেখে হাতের ব্যাগটা নিয়ে একবারে গাড়ীতে।

    বাসায় এসে ডাক্তার আপাকে ফোন দিলাম,- আপা আমি বাসায় চলে এসেছি। উনি হেসে দিলেন। দু’তিনটা প্রয়োজনীয় উপদেশ দিয়ে বললেন,- তুমি মেয়ে ঠিক ফাইনাল খেলার দিন আমাকে খেলা দেখতে দিবে না। তো তাই হয়েছিল ২৫শে মার্চ অনেক রাতে ব্যাথা নিয়ে গেলাম। সেদিন ক্রিকেট ফাইনাল খেলা ছিল আর ছিল ঢাকা শহর উত্তপ্ত গোলাম আযমের ধর পাকড নিয়ে। আপা এসে প্রথমেই বললেন,- কি দিলে না তো আমাকে খেলাটা পুরোটা দেখতে। সেই নার্সটা গোলাপি একটা পুতুল এনে বলেছিল,- দিদি দেখুন কি সুন্দর ভু্রু জোড়া। পরে মেয়েকে বলেছিলাম তুমি আর যাই করো কখনো ভুরুতে হাত দেবে না। মেয়ে আজ অবধি সেকথা রেখেছে। সে সময় মনে অনেক সাহস ছিল, কিছু ভয় পেতাম না। আর এখন অনেকটা পথ ফেলে এসেছি।

  • একটি চিঠির মুসাবিদা

    একটি চিঠির মুসাবিদা

    প্রিয় ‘আলম’,

    ভালোবাসা জানিস। আশাকরি ভালো আছিস।আজো আমলকীর ঐ ডালে ডালে আলোর নাচন হয়। কিন্তু অনেক কাল আর চিঠি লেখা হয় না।সময় বড্ড কঠিন হয়ে গেছেরে। চারদিক যান্ত্রিক।আন্ত্রিকে বিভোর সব৷অন্তরওয়ালা মানুষগুলো এখন ইট কাঠ- পরিপাট। কিন্তু ভিতরে ভিতরে তারা বড্ড ক্ষয়িষ্ণু। সহিষ্ণুরা দিশেহারা ঘরছাড়া।

    তবুও কেমন আছিসরে সাধু? কবিতা লিখিস?এখনো কি সেই সুধাময়ের বিভোরে আছিস?

    সুধার কথা কি মনে পড়ে? যার জন্য তুই সাধু হয়েছিলি! আমারতো আর সুধা ছিলো না!আমি বরাবর আগাগোড়া আটপৌরে সাদাসিদা। কখনো তাই সিঁধ কাটতে পারিনি!

    এখানে বড্ড শীতরে।শরীরে কাঁপন ধরায়।এখন আর অন্য কিছুতে কম্পনতা হয় না।বুঝিরে বয়স আর সরস নেইরে।বিকেলের ছায়া এখন আড়ষ্টতার মায়াতে আবদ্ধ। বড্ড ক্লান্তরে।জীবনের অনেকখানি পাড়ি দিলামতো!জীবনের ঐ পাড় এখন ধুসর। এই পাড় দেখা যায়- কালো আর আলোর মিশেলে ঐন্দ্রজালিক।

    তোর চোখের পাওয়ার এখন কতো?আমার জুলফির সাদা চুল চশমার পাওয়ারকে আচমকা অতিক্রম করে গেছে।

    বন্ধুরা কে কোথায় খবর রাখিস? দু’এক জনের খবর কখনো সখনো জনান্তিকে ছিটেফোঁটা পাই বটে!তবে কেউ উত্তরে কেউ দক্ষিণে, হাত বাড়ানো দায়!

    সেই সরোয়ার আজ মাছের ঘেরেতে জীবনটাকে নিঃসঙ্গতায় অঙ্গতা করে ফেলেছে। কী এক অজানা যন্ত্রনায় ও বিদ্ধ। তবুও তার মুখের অট্টহাসি উচ্চকিত। সিরাজ আজ বিন্দাস। মসি মমতায় এখনো তার মায়াবতি আত্মজার শোকটাকে বুকটাতে আটকে রেখেছে।

    শুভ্রা- আগাগোড়া সুখেতে মোড়া সে।পপি সেই দূরগাঁয় মল্লিকায় বসবাস। শাহেদ এখন কর্মে বড় বেশী ধৈর্য্যিক,সাত্তার ধ্যানের মতো ধার্মিক। জুবু, ইকবাল আর মাহমুদ বৈশ্বিক,মৈনিক।তবে সাবের আজ এক দেশ জাদরেল সৈনিক।

    তবে তাহের কঠোর কর্মীতে উচ্চাভিলাষী হয়েও মনেতে এখনো গৈরিক, কিন্তু রত্না সমাজ সেবায় একনিষ্ঠ রৈখিক। টোনা আর টোকন খোকন খোকন যেনো এখনো তাই। শুধু বাশার আজো কুমারের সভাতে লা-জবাবে খোয়াবে মত্ত।

    গিয়াস আর জব্বার পৃথিবীর পাঠ মাঠ-ঘাট পেরিয়ে ঘুমিয়ে আছে গোরস্থানে।ওখানে নির্জনতা,মৌনতা,সৌমতায় এপার ওপারের মেলবন্ধনের বসবাস।

    ওদিকে শাহনাজ ভালো নেই আজ। গুল নিজেতে মশগুল। আর ঐ ফাতেমা, আমাদের সেই ফাতু চঞ্চলা,আঁচল উড়ানো মেয়েটা হঠাৎ আজ জীবনটাকে যেনো থমকালো, চমকালো। কেমোতে মেমোতে আবদ্ধ। কেনো এমন হয়!? জীবনরে জীবন – বড়ই মায়াময়, বড়ই অবুঝময়। দেনা সব পাওনা সব, আপনা-আপনি শোধবোধ । এ এক ভীষন বিস্ময়, বিধাতার আনমনা চনমনা লীলা খেলা।

    আমি আছি, আছি একরকম।শরীরটাকে নিয়ে বড়ই কসরত করতে হয়রে।হায়রে শরীর!সকালে হাইপারটেনশন মেনশন,আর রাতে কোলেস্টেরলকে বাগে দাগে ভাগে রাখতে হয়।

    এখন রাত গভীর।সবাই গাঢ়তায় আচ্ছন্ন। মানুষ, গাছ, মাছ, পাতা,পক্ষী,অক্ষী সব মৌনতায় একাকার। দূরে,বহুদূরে একটা সারমেয় ডাকলো, প্রহর ঘোষনার জন্য।আজ আর শিয়াল নেই। আমি জেগে আছি , আমি জেগেই আছি…… , রাত পোহাবার কতো দেরী পাঞ্জেরি!?

    চিঠির উত্তর দিস।ভালো থাকিস,শরীরের যত্ন নিস।

    ইতি-
    তোর পরানের পুরনো বন্ধু ‘মানিক’
    ভেড়ামারা,কুষ্টিয়া।
    ১৫/০১/২০২২খ্রীঃ
    রাত ১.১২

  • আমার কবি হয়ে ওঠা

    আমার কবি হয়ে ওঠা

    কখনও কবিতা লিখিনি জীবনে ।অনেকে শখ করেও তো দু এক লাইন লিখে কিন্তু কবি কন্যা হয়েও আমি ২০২০ ইং সালের আগে পর্যন্ত কখনও একলাইন ও কবিতা লিখি নাই ।আমার জন্ম ও বেড়ে উঠা এক সাহিত্যে পরিমন্ডলে,আমাদের দিন শুরু হতো আব্বার কবিতা আবৃত্তি শোনার ভিতর দিয়ে। আব্বা কবি, সাহিত্যিক, শিক্ষক ও প্রবন্ধকার ছিলেন ।আমাদের বাসায় অনেক গল্পের বই, পত্রিকা, রাশিয়ান ম্যাগাজিন ছিলো।পড়াশোনার বাইরে আমার খুব আগ্রহ ছিলো বই পড়া। বাসায় যেহেতু আলমারী ভর্তি বিভিন্ন ধরনের বই ,তাই সুযোগ পেলেই আমি গল্পের বই, পত্রিকা নিয়ে বসে যেতাম।খুব ইচ্ছে হতো গল্প লিখবো, স্কুলে পড়বার সময় লুকিয়ে দু একটা ছোট গল্প লিখেছিলাম কিন্তু কখনও কবিতা লিখি নাই।

    ২০২০ ইং সালের জানুয়ারীতে এক বন্ধুর আমন্ত্রনে WAS83-তে আমাদের এস এস সি পাশের বন্ধু গ্রুপে যোগ দিলাম, এখানে এসে দেখলাম বন্ধুরা কি সুন্দর সুন্দর পোস্ট দেয় গল্প, কবিতা বা অন্য কোনো বিষয় নিয়ে সুন্দর সুন্দর লিখা লিখে পোস্ট দেয়। আমি মুগ্ধ হয়ে পড়ি । খুব ইচ্ছা হলো আমিও কিছু লিখি। শুরু করলাম যাপীত জীবন কাহিনী নিয়ে লেখালেখি। লিখে পোস্ট দেই গ্রুপে বন্ধুরা পছন্দ করে আমি উৎসাহ পাই, এইভাবে লিখা চলতে লাগলো। আমার আব্বা যেহেতু একজন সনেট কবি ,গ্রুপে কবি বন্ধুদের সুন্দর সুন্দর কবিতা লিখা পড়ে খুব ইচ্ছা হলো, আমিও কবিতা লিখবো। তাই শুরু করলাম কবিতা লিখা। যদিও প্রথম প্রথম ঠিকমত লিখতে পারতাম না, নিজের লেখা নিজের কাছে সবসময় ভালো লাগতো না। তারপরও কি এক নেশা আমাকে পেয়ে বসলো সেটা হলো কবিতার নেশা।

    রাত জেগে কবিতা লিখে গ্রুপে ও ফেসবুকে পোস্ট দেই। করোনা মহামারী চলছে সেভাবে আব্বার বাসায় যেতে পারি না, নিজের লেখা আব্বাকে দেখাতেও পারিনা কিন্তু দাদাভাইকে বলি আব্বাকে দেখাতে, কেমন লিখলাম! আব্বা পড়েন, মাঝে মাঝে যখন কথা হতো ফোনে আব্বাকে জিজ্ঞাসা করতাম, কেমন হয়েছে? আব্বা বলতেন, খুব ভালো, লিখে যাও।

    আব্বার মৃত্যুর সপ্তাহখানেক আগে আব্বার বাসায় আমরা তিনবোন ও বাচ্চারা গেলাম, দুদিন থাকবো বলে। আব্বা সন্ধ্যার সময় আমাকে বললেন, তুমি তোমার কবিতাগুলো খাতায় লিখে আমাকে পড়ে শোনাও। আব্বা পাশে বসে আছেন, আমি একটি একটি কবিতা আব্বাকে পড়ে শোনাচ্ছি আর দেখছি আব্বার মুখ খুশীতে উদ্ভাসিত হয়ে উঠছে। আমাকে বললেন, এইগুলো সব তুমি লিখেছো? আমি বললাম, হ্যাঁ আব্বা। আব্বা বললেন তুমি খুব সুন্দর লিখেছো, তুমি কখনও আমার কাছে কবিতা লেখা শেখোনি, কত মানুষ আমার কাছে শিখেছে। কিন্তু তুমি এতো ভালো লিখেছো, আমি শুনে আশ্চর্য হয়ে যাচ্ছি!! আমাকে আর শোনাতে হবে না, তুমি কবিতার বই বের কর।

    আম্মাকে ডাকলেন আর বললেন ,শুনেছো তোমার মেয়ের কবিতা ও কত ভালো লিখেছে ,আমার থেকেও ভালো লিখেছে!! আমি হেসে দিয়ে বললাম, আব্বা কি বলেন এটা! কিন্তু আজ আমি ভাবি তখন সবে মাত্র লেখা শুরু করেছি অজস্র ভুল লেখায় কিন্তু সন্তানকে উৎসাহ দেবার জন্য বললেন, আমি আব্বার থেকে ভালো লিখছি!! এই রকমই স্নেহময় ছিলেন আমার আব্বা।

    একসপ্তাহ পর ১৮ই জানুয়ারী ২০২১ ইং আব্বা মারা যান, মৃত্যুর আগের দিন আমাকে ফোন দিয়ে আবার জিজ্ঞাসা করলেন, লিখেছো নতুন কোনো কবিতা? আমি আমার পরিচিতজন, বন্ধু সবাইকে বলেছি, আর আপনাদের চিন্তা নাই, আমি মরে গেলেও আপনারা আমার উত্তরাধিকার পাবেন যে লিখবে, আমার বড় মেয়ে কবিতা লিখছে!! আমাকে বললেন মিতা, লিখবে কবিতা। লেখা ছাড়বে না কখনও। কবির মৃত্যু নাই, কবিরা বেঁচে থাকে মানুষের মনে তার লেখায়, কবিতা ও গানে।

    আব্বার আকস্মিক মৃত্যুর পর আমি যখন গভীর শোকে আচ্ছন্ন তখন সারাক্ষন আব্বার ওই কথাগুলো আমার মনে বেঁজে চলতো, লেখো কবিতা লেখো। আমি আকড়ে ধরলাম কবিতাকে। আমার ভালোবাসা বেঁচে থাকবার অবলম্বন হলো কবিতা। আমি শোক কাটিয়ে আস্তে আস্তে শান্তি খুজে পেলাম কবিতার মাঝে।

    আজ সব বন্ধুদের কাছে আমার পরিচয়, কবি শাহনাজ পারভীন মিতা। আমি যাই লিখি বন্ধুরা পছন্দ করে উৎসাহ দেয়। আমিও আমার প্রথম কাব্যগ্রনহ ‘কথামালা তুমি ‘বের করছি সব বন্ধুদের উৎসাহে আগামী বছর বাংলা একাডেমির একুশে বই মেলায় ইনশাল্লাহ।

    করোনা মহামারী নিয়ে আমার লিখা কবিতা

    মুক্তি দাও প্রভু
    শাহনাজ পারভীন মিতা

    কতদিন ছুঁয়ে দেখি না তোমায় সমুদ্রজল
    কতদিন মাথার উপর উড়ে চলে না গাঙচিল,
    যে নীল পাহাড় আমি চোখ মেলে চেয়ে দেখতে চাই
    তাও রয়ে যায় আমার দু’চোখের আড়ালে।
    আর কত কাল ,কত কাল করোনা তুমি
    রইবে পৃথিবীর রুপ আড়াল করে,
    দেখিনা প্রিয়জন আপনজন স্বজন আগেরই মতো
    দু-ক্রোশ দূরে নয় কিন্তু যোজন যোজন দূরে সব ।
    মুক্তি দাও প্রভু আমায় এই মহামারী হতে
    মুক্ত কর এ দু’চোখ , দু’বাহু আমার ,
    আমি স্পর্শ করতে চাই সব প্রিয়জন
    মনের ভালোবাসায় বুকের বন্ধনে।
    এই প্রানে এই মনে হৃদয়ে আমার
    করোনা মুক্ত এক নতুন ধরণীতে ,
    যেখানে হাসবে চাঁদ ,পাখি গাইবে গান
    ফুটবে ফুল মানুষের গানে সুরে সুরে ,
    আকাশ বাতাস সাগর পাহাড়ে
    মানুষের মাঝে মায়াময় ভুবনে।

  • ট্রাফিক পুলিশ

    ট্রাফিক পুলিশ

    সেপ্টেম্বর মাসের ৩০ তারিখ। অপারেশনের জন্য করোনা টেস্ট করাতে ল্যাব এইড যাবো বলে বাসা থেকে বের হয়েছি। ফুটপাতে দাড়িয়ে বাস এর জন্য অপেক্ষা করছিলাম।

    অনেক গুলো বাস যাত্রী নিয়ে দরজা বন্ধ করে চলে যাচ্ছে।

    সব বাস গুলোতে ভীড় দেখে,বাস থামার সঙ্গে সঙ্গে উঠবো ভেবে আমি রাস্তার প্রায় মাঝখানে ফাঁকা জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি।

    এমন সময়ে একজন ট্রাফিক পুলিশ এসে বললেন – আপনি কোথায় যাবেন?

    আমি বললাম- ল্যাব এইড যাবো। কিন্তু বাস অনেক যাত্রী নিয়ে, না থেমেই চলে যাচ্ছে।
    ট্রাফিক পুলিশ আমার কথা শুনে সামনে এগিয়ে বাস গুলো থামানোর জন্য হাত দিয়ে ইশারা করতে লাগলেন। কয়েকটা বাস না থেমেই চলে যাচ্ছিলো। আমি ও বাসে ওঠার জন্য উনার পেছনে দাঁড়িয়ে রইলাম।

    ব্যাপারটা আমার কাছে ভালো লাগলো। ঢাকা শহরে এখনো ভালো মানুষ আছে । আমাকে একা দেখে ডিউটি রেখে আমার জন্য বাস থামানোর চেষ্টা করছেন। মানুষটা হয়তো পরোপকারী।

    কিছুক্ষন পরে একটা বাস এসে উনার সামনে থামাতেই তাড়াহুড়ো করে বাসে উঠে গেলেন। আমি উনার কান্ড দেখে অবাক হয়ে, প্রায় দৌড়ে এসে বাসে উঠলাম। সিট পেয়ে বসে বসে ভাবতে লাগলাম, কি হলো এটা?

    উনি তাহলে ডিউটি শেষে বাসায় যাচ্ছিলেন অথবা অন্য কোন কাজে। আর আমি কি ভেবে নিলাম। যাই হোক শেষ পর্যন্ত ট্রাফিকের পিছু দাঁড়িয়ে বাসে তো উঠতে পেরেছি?

    লীনা ফারজানা
    ২২ ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ৮:৫৫ মিনিট

  • প্রবাস জীবন (পর্ব-৯)

    প্রবাস জীবন (পর্ব-৯)

    পালমার্সটন নর্থে আমার মা

    জীবন আর জীবিকার প্রয়োজনে মানুষ কত শহরেই না তার ক্ষুদ্র জীবনের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র আংশ নিজ অজান্তেই রেখে আসে। আবার কিছু কিছু নিজ হৃদয়ে গেঁথে নিয়েও আসে। কিছু স্মৃতি মানসপটে আজীবন আঁকা থাকে আর অন্যসব কালের স্রোতে হারিয়ে যায়। ছোটকালে মনে আছে বাবার চাকুরী বদলীর সুবাদে কয়েকটা শহরে আমাদের থাকতে হয়েছে। এমনকি আমরা মা সহ চার ভাইবোন গ্রামে নানাবাড়িতে পুরো এক বৎসর কাটিয়েছি যখন বাবার ইংল্যান্ড আর আলজেরিয়াতে চাকুরীর প্রয়োজনে থাকতে হয়েছে।

    পালমার্সটনের দেড় বৎসর সময় আমার স্মৃতিতে উজ্জ্বল। আমাদের তখন অনেক ব্যস্ত সময়। প্রমার বাবা চাকুরীর শুরুতেই ফেলোশীপ পরীক্ষার আয়োজন শুরু করে দিয়েছে। সামাজিকতা রক্ষা, সাংসকৃতিক অঙ্গনে আমাদের চলাফেরা, ছোট বাচ্চা , সংসার এতোসবের মাঝেও আমি কখনো দিক ভ্রানত হইনি। ফাঁক পেলেই ক্লিনিক্যল পরীক্ষার জন্য মুরতাগ নিয়ে বসতাম। অতিকষ্টে সেখানে আর একজন পরীক্ষা্র্থী পাওয়া গেলো যার সাথে আমি মাঝেমধ্যে পড়াশুনা শেয়ার করতে পারি আর ক্লিনিক্যল পরীক্ষার ভাইভা প্র্যাকটিস করতে পারি। হাসপাতালে প্রমার বাবা যার সাথে একসময় কাজ করেছিল মেডিসিন স্পেশালিষট রিডার্ড ইভার্টস এর সঙ্গে কথা বলে আমার অবজার্ভারশীপ ঠিক করে দিলো।যাতে আমি আমার সুবিধামতন যেতে পারি আর সপ্তাহে মাত্র কয়েক ঘন্টা আমার উপসথিত থাকলেই চলে। তবে আমার ভীষণই বিব্রত বোধ হতো রাউন্ডের মাঝখানে গিয়ে পৌঁছুলে বা কিছুক্ষণ পরই বাচ্চার অজুহাতে চলে আসতে হলে।কেনো যেন মনে হয় উনি আমাকে বুঝতে পারতেন আর সেই স্বল্প সময়ের মধ্যেই চেষ্টা করতেন আমাকে কিছু না কিছু শিখিয়ে দিতে। আমি চিরকৃতজ্ঞ উনার প্রতি। বলা বাহুল্য যে প্রকৃত অবজার্ভারশীপের জন্যে সবাইকে প্রায় চল্লিশঘন্টা হাসপাতালে থাকতে হয় আর তা রোগীদের সার্বিক ব্যবস্থাপনা শিখতে দারুন সহায়তা করে। আমার জন্যে বিকল্প এ ব্যবস্থার পেছনে কারণ ছিল মূলত প্রমার দেখাশুনা।

    আমার মনে আছে চাইলড কেয়ারের শিক্ষকের রেকমেনডেশনে আমার প্রমাকে কয়েকদিন একজনের কাছে রেখেছিলাম। ক’দিন না রাখতেই একদিন ওর ভীষণই বিরক্তিমাখা কন্ঠসবর ফোনের এপ্রান্তে পেলাম “ তুমি এক্ষুনি এসে তোমার বাচ্চাকে নিয়ে যাও। ও খামোখাই চিৎকার করে কেঁদে বাড়ি মাথায় করছে। থামতে বললে থামছে না।” আমি ভেবে পেলাম না শান্ত মেয়ে আমার যে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয় কাঁদে সে কেনো এতো তারস্বরে কাঁদছে? আমি হনতদন্ত হয়ে ছুটে গিয়ে দেখি প্রমাকে কান্নার শাস্তিস্বরূপ করিডোরের এক কোণে বসিয়ে রাখা হয়েছে আর সে স্বভাবসুলভ ফুঁপিয়েই কাঁদছে। আমাকে দেখে যেন আমার চার বৎসরের প্রমা হাতে আকাশের চাঁদ পেলো- মূহুর্তেই আমার কোলে ঝাঁপিয়ে পড়লো।সেদিন প্রথম বাচ্চাকে কষ্ট দেবার জন্যে আমার বুকটা ভেঙগে টুকরো হয়ে গিয়েছিল। তখন আমি বুঝতে পারিনি যে আরও কত বুকভাঙগা গল্পের প্লটের জন্য প্রফেশনাল মায়েদের তৈরী থাকতে হয়।

    আমি প্রতিজ্ঞা করলাম প্রমাকে বাঙ্গালী পরিচিত পরিবেশে রাখব আর সকল ভাবীদের জিজ্ঞেস করে ত্যক্ত করা শুরু করলাম।অবশেষে যিনি রাজী হলেন তিনি হলেন হাসিখুশী আর মিশুক ওয়াহাব ভাবী। আমি দুঃখপ্রকাশ করছি এজন্যে যে আমার উনার নামটি এখন মনে নেই যেহেতু উনি ওয়াহাব ভাবী নামেই পরিচিত ছিলেন। ভাই ভাবীর দুই মেয়ে আর এক ছেলে মোটামুটি বড় আর তাই উনার হাতে কিছু সময় ছিল যা আমাকে ধার দিয়ে চিরদিনের জন্যে ঋনি করেছেন। ওয়াহাব ভাই সম্পর্কে একটু না বললেই নয়। উনি ছিলেন পালমার্সটন নর্থ ইউনিভার্সিটির লেকচারার। উনার সবচাইতে বড় গুণ ছিল উনি জোকস বলে আসর মাতিয়ে রাখতে পারতেন আর তাই যে কোনো অনুষ্ঠানে উনি ছিলেন অপরিহার্য। আর আমরা সবাই যখন উনার জোকস শুনে হেসে গড়িয়ে পড়তাম ভাবীর মুখে এক চিলতে হাসি ফুটতো কিনা সন্দেহ। উনাকে জিজ্ঞেস করলে একদিন বললেন “ উনিশ বৎসর একই জোকস শুনছি আর কত হাসব?” আমার ধারণা ভাই প্রথম প্রথম কেবল ভাবীকেই জোকসগুলো শুনাতেন আর উনি নিশ্চিত ভালবেসেই শুনতেন আর হেসে কুটিকুটি হতেন। আমার এখন খুব জানতে ইচ্ছে করে কেনো ওয়াহাব ভাই ভাবীকে নিভৃতে জোকস শুনানো বন্ধ করলেন আর কেনোই বা ভাবী বারে বারে একই জোকস শুনেও হাসতে পারতেন না!

    আমার ক্লিনিক্যল পরীক্ষার সময় এগিয়ে এলো। প্রস্তুতি মোটামুটি খারাপ হয়নি বলেই আমার ধারণা আর তাছাড়া লিখিত পরীক্ষার চাইতে সন্মুখ পরীক্ষায় আমার পারফর্মেনস সবসময়ই ভালো ছিল। ইতোমধ্যে আমি ওয়েলিংটন শহরে ইংরেজী পরীক্ষা দিয়ে আসলাম পুরো পরিবারসহ। একেবারে হলিডে এর মত সেই দুদিন কাটল। এবার যেতে হবে ক্রাইস্টচার্চ কিন্তু একা কারণ প্রমার বাবার ঐ সময়ই পোস্টগ্রেজুয়েশন পরীক্ষার প্রিপারেশন হিসেবে একটা কনফারেন্সে যোগ দেবার অভিপ্রায় আগে থেকেই। আমার আর কোনো উপায় থাকলো না মাকে এসে আমাকে সাহায্য করতে বলা ছাড়া। আমার মা তখন সংসার, বাবা ছোটভাইবোন রেখেই পালমার্সটন আসতে এক মুহূর্তের জন্যে দ্বিধা করেননি। যিনি জীবনে কোনোদিন তেমন ট্রাভেল করেননি উনি একা একা ঢাকা থেকে কুয়ালালামপুর হয়ে অকল্যানড হয়ে আমার জন্যে পালমার্সটন নর্থ এসে পৌঁছালেন। অবশ্য অকল্যানডে উনাকে এয়ারপোর্ট থেকে রিসিভ করে বাসায় এনে, উর্মির মজাদার রান্না খাইয়ে আবার প্লেনে তুলে দেবার বাপপী ভাইয়ের সহযোগিতা আমার মা এখনো মনে রেখেছেন। এমনটি ই হলেন আমার মা যিনি এই একাত্তর বৎসর বয়স পর্যন্ত কেবল দিয়েই গেলেন কোনোরকম প্রতিদান ছাড়া।

  • আমিও মুক্তি যুদ্ধের স্বাক্ষী

    আমিও মুক্তি যুদ্ধের স্বাক্ষী

    উনসত্তর এর গন আন্দোলনের সময় আমি দুগ্ধপোষ্য ছিলাম। আমার পরিবার সদ্য অভিভাবক হারিয়ে জীবনযুদ্ধে নেমে পড়েছে।সবার বড়োভাই স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে কলেজ জীবন ও চাকরি নিয়ে সেনাপতিত্বে দাঁড়িয়ে গেছেন!
    মাঝের চারজন প্রাইমারি ও হাইস্কুলেরছাত্র ছাত্রী।

    আমার বড়ো জন আর আমি একেবারেই নাদান।

    যুদ্ধ শুরুর আগে আগেই আমাদের পরিবার বাবার কর্মস্থলের ফাইনাল সেটেলমেন্ট শেষে চট্টগ্রাম থেকে মেহেরপুর এ গ্রামের বাড়িতে চলে যায়। শুধু বড়ো ভাই রয়ে যান চট্টগ্রামে।

    গ্রামের পরিবেশ পড়াশোনা করার জন্য সুবিধা জনক না হওয়ায়, আর আমাদের মা মৃত্যুপথযাত্রী স্বামী কে কথা দেওয়া কথা রাখতে মেহেরপুর সদরে একটি দোতলা (ডুপ্লেক্স বল্লেও ভুল হবেনা) বাড়ি ৪০ টাকা মাসিক ভাড়ায় ভাড়া নিয়ে উঠলেন।

    অনেক গাছপালা ওয়ালা ও ভিতর ও বাইরে দুটো বিশাল উঠোনওয়ালা বাড়িটি সত্যিই সুন্দর ছিলো।

    প্রতিবেশীরা ছিলেন খাঁটি মানুষ! আমাদের জন্য ফেরেস্তা ! তাদের সাথে অনায়াস যাতায়াত ও অবারিত মেলামেশায় আমরা পিতৃহীন, আত্মীয় পরিজন হীন হয়েও কখনো অসহায় বোধ করিনি।

    ৭০ সালের শেষ দিকে।৭১ এর প্রথমেই ভাইবোনেরা যার যার ক্লাসে ভর্তি হয়ে গেছে। এমন সময় বংগবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণের পর সারাদেশে থমথমে অবস্থা য় বড়ো ভাই চট্টগ্রামে একা! তিনি তখন টগবগে তরুণ!রক্ত নেচে উঠছে! দিনে চাকরি সন্ধ্যায় পড়া রাতে পোস্টার লেখা ও দেয়ালে মারা করে চলেছেন তাঁকে ঠ্যাকাই কে।

    যুদ্ধ শুরু হলে, মা এর একটা স্বর্নের হার নিউমার্কেটে স্বর্ণের দোকানে রিপিয়ার করতে দেয়া ছিলো, সেটা বিক্রি করে টাকা নিয়ে সেমুতাং এ মামার কাছে চলে যান।মামা পেট্রোবাংলায় চাকরি করতেন। মামি তখন গর্ভবতী। নানু অসুস্থ। উনাদের সাথে করে অনেক কস্টে দেশে ফিরে গেলেন।মামা সেমুতাং এ রয়ে গেলেন।

    তিনি মেহেরপুরে এসে তার বয়সী ও বড়ো ভাইদের সাথে যোগাযোগ করে একদিন মা এর অনুমতি নিয়ে যুদ্ধে অংশ নিতে বেরিয়ে পড়লেন।

    আমাদের বাড়িটা ছিল শহরের মাঝখানে রাস্তার উপরেই।যুদ্ধ লেগে গেলে আমাদের একমাত্র আত্মীয় (যাদের ভরসায় ওখানে যাওয়া) ছোটো খালাম্মার একান্নবর্তী পরিবার আমাদের ফেলে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেল!

    প্রতিবেশিরাও চলে গেছেন।আম্মার তখন ৩৫/৩৬ বছর বয়স।তিনি বরাবর ই ছিলেন প্রচন্ড সাহসী! উনি আল্লাহ ভরসা করে আমাদের নিয়ে থেকে যান।

    সদ্য পরিচিত প্রতিবেশি জনাব আব্দুল জলিল আমিন খালু ও তার ছোটো ভাই স্কুল মাস্টার জনাব আব্দুল রুহুল আমিন খালু ঝাউবাড়িয়া গ্রামে আত্মীয় বাড়ি পৌঁছে পরিবার রেখে আমাদের কথা স্মরণ করলেন। এবং জানের মায়া ত্যাগ করে আমাদের নিয়ে যেতে আসলেন।মা প্রথমে নিষেধ করলেও উনারা আমার ভাই এর যুদ্ধে যাবার কথা স্মরণ করিয়ে সামনে ভয়াবহ বিপদের আশংকা করে মা কে বুঝিয়ে শুনিয়ে একপ্রকার জোরকরে নিয়ে চললেন।

    কাঁচা রাস্তায় হাঁটা পথে কয়েক মাইল পাড়ি দিয়ে আমরা সেখানে পৌঁছেছিলাম।যাবার পথে বড়ো ভাই-বোন দের মাথায় ট্রাংকে, ব্যাগে পোটলায় করে প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র নিয়ে যাওয়া হয়।আমি আর আমার ইমিডিয়েট বড়ো ভাই দুজন কে পালাক্রমে হাটিয়ে ও কোলে করে নেয়া হয়েছিল। আমাদের নখ ভেংগে পা কেটে রক্ত ঝরছি।,অনেকে র মায়া হওয়ায় পথচারী রা ও কোলে করে এগিয়ে দিয়েছিলেন। আমাদের প্রায় নখ ই আজও সেই স্মৃতি বহন করে চলেছে। ওখানে কিছুদিন থাকার পর শহর থেকে আসা লোকজন বেড়ে যাওয়ায় আমরা গাংনীর কাছে মহেশপুরে আমার বড়ো খালাম্মার বাড়ি চলে যাই।যুদ্ধের বাকি সময় আমাদের পরিবার সেখানেই ছিল।

    ছোটোবেলায় শান্তাহারে এবং বিয়ের পর চট্টগ্রামে রেলওয়ে কলোনি তে বিহারিদের সাথে থাকায় মা বেশ ভালো উর্দু জানতেন।তাই যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে মা প্রয়োজনে শহরে যেতেন।অবশ্য প্রায়ই গহনা বিক্রি করে বাজার করা আর বড়ো ভাই এর খোঁজ খবর নিতেই যেতেন।

    একমাত্র আর্নিং মেম্বার যুদ্ধে, তাই জীবন চালাতে মা আর বড়ো বোনের বিয়ের জন্য গড়িয়ে রাখা গহনাগুলো বিক্রি করা ছাড়া উপায় ছিলো না।তাতে অবশ্য চলেও চলছিল না।তাই ক্লাস সিক্সে পড়ুয়া কিশোর মেঝভাই গ্রামের লোকজন এর সাথে গামছা আর লুংগী বিক্রি করতে সাইকেল চালিয়ে হাঁটে হাঁটে যেতেন। এভাবেই চলছিল দ্বৈত লড়াই।

    আমাদের মেহেরপুরের বাড়িতে সিঁড়িঘরে দেয়ালে বইপত্র রাখার জন্য একটা বড় আলমারি সাইজের তাক ছিলো। সেখানে অস্ত্র রেখে সিমেন্ট করা থাকতো।তার উপর পাকিস্তানি পতাকা এঁকে দেয়া ছিলো। সন্দেহ মুক্ত থাকতে। মুক্তি যোদ্ধারা প্রায়ই আসা যাওয়া করতো।মেঝভাই যেয়ে খবর আনা-নেয়া করতো।কিশোর হওয়ায় কেউ সন্দেহ করেনি।

    একবার খবর এল,চুয়াডাংগায় অপারেশন চালাতে গিয়ে পাক আর্মির ব্রাশফায়ার এ আমার মিয়াভাই মারা গেছেন। সংবাদ পৌছালে আমার শক্ত কঠিন মা খুব কাঁদলেন।আবার অবিশ্বাস ও করলেন। আল্লাহ মেহেরবান তাঁকে এতো বড়ো কস্ট দিবেন এটা তিনি মন থেকে বিশ্বাস করতে পারেন নি।

    অনেক দিন পর গ্রাম থেকে ওপারে কাজে যাওয়া কৃষক রা আমার ভাইয়ের বেঁচে থাকার খবর নিয়ে আসলেন। তাঁরা মাকে বল্লেন তাঁরা নাকি মিয়াভাই কে দেখেছেন তার সাথে কথাও বলেছেন।

    সংবাদ শুনে মা নফল নামাজ আদায় করলেন।অনেক দিন পর আমরা সবাই ঈদের আনন্দ পেলাম।যারা খবর এনেছিলেন তাঁদের কাছে মিয়াভাই কে নিয়ে আসার বায়না ধরলেন মা।যুদ্ধ কবে শেষ হবে কেউ জানে না তাই একটিবার আরাধ্য (আমার প্রথম বোন আতুড়ে মারা গিয়েছিলেন আর তিনি নানার বংশে প্রথম ছেলে নাতি) ধনের মুখটা তিনি দেখতে চান।

    মা এর কথামতো তাঁরা মিয়াভাই কে চাষা ভুষা র সাজে সাজিয়ে মাথায় মাথাল দিয়ে,খালি গা, খালি পা উঁচু করে লুংগী পরা মাথার ঝুড়িতে সবজি সদাই দিয়ে সাজিয়ে নিয়ে আসলেন।ঝুড়ির ভিতর নিচের দিকে অস্ত্র আর আমার জন্য দুটো ফ্রক ছিল। খুব সুন্দর। অনেক দিন পর্যন্ত ছিলো সাথে।পরে পুতুল কে পরাতাম।

    সেরাতে ছেলেকে জড়িয়ে ধরে মা খুব কাঁদলেন। তারপর রাতভর গল্প চলেছিল। শোনালেন কিভাবে ব্রাশ ফায়ারে আহত হয়ে ক্রল করে করে ঝোঁপ জংগলের মধ্য দিয়ে বর্ডার ক্রস করে ভারতে ফিরে গিয়ে বেঁচেছিলেন।দিল্লিতে ছিলেন। ওখানে পক্স হয়েছিল। সুস্থ হয়ে আবার ও অপারেশন এ অংশ নিচ্ছিলেন। এদিকে অপারেশন চালিয়ে আবার ভারতে চলে যেতেন।

    সারাদিন ছিলেন। গ্রামের টিকটিকিরা জেনে যাওয়ায় সন্ধ্যার পর পরই আবার চলে গিয়েছিলেন। একেবারে দেশ স্বাধীন হলে আমরা মেহেরপুরের বাড়িতে ফিরে যাওয়ার পর উনিও ফিরে এসেছিলেন।

    এভাবেই আমি যুদ্ধ দেখেছি। আমি আমার পরিবারের সাথে যুদ্ধের অংশ ও স্বাক্ষী হতে পেরে গর্বিত।

    সকল যুদ্ধস্বাক্ষী পরিবার, মুক্তি যোদ্ধা, যুদ্ধাহত মুক্তি যোদ্ধা, বীরশহীদ দের প্রতি স্ব-শ্রদ্ধ সালাম ও বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই!

    ফাতেমা_হোসেন
    ৪/১২/২১