Tag: ধারাবাহিক গল্প

  • অদ্ভুত আসক্তি (পর্ব-৬)

    অদ্ভুত আসক্তি (পর্ব-৬)

    নববধূ সেজে বসে আছি। বাইরে ভারী বর্ষণ হচ্ছে। সেই সাথে অশ্রুপাত ঘটছে আমার চক্ষুদ্বয়েও। কয়েক মুহূর্তেই আমি বিবাহিতা নারী হয়ে গেলাম। কিছুক্ষণ আগেও তো এমন কিছু কল্পনায় ছিলো না আমার।

    কিয়ৎক্ষণ পূর্বে—

    “একটু বাদেই আমাদের বিয়ে। নিজে থেকে রেডি হয়ে যাও। নয়তো তোমাকে প্রস্তুত করতে খুব ভালো করেই জানি আমি।”

    কথাটা শুনতেই আমার মাথায় বজ্রাঘাত পড়লো। কি বলছেন উনি? বিয়ে! বিয়ে কি কোনো ছেলেখেলা নাকি? তার উপর এই লোকটির নাম পর্যন্ত জানিনা আমি।

    “মজা করছেন নিশ্চয়ই!”

    “মজা করার মুডে নেই। জলদি রেডি হও। কাজী এসে গিয়েছে।”

    আমি দু’কদম পিছে চলে গেলাম। তেজ মিশ্রিত আওয়াজে বললাম,“আমি এই বিয়ে করবো না।”

    হালকা হাসলেন। কিছুক্ষণ পর ফোন হাতে নিয়ে কিছু একটা বের করতে করতে বললেন,“এভাবে যে মানবে না তা ভালো করেই জানি। দেখো এটা!”

    ফোনটা আমার সামনে ধরলেন। আমার চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেলো। বুকটা ধুক করে উঠলো। বাবা, ছোটমা, আপুকে বেঁধে রাখা। আমি ঘৃণার চোখে তাকালাম উনার পানে। তাতে মনে হয়না তেমন কোনো পরিবর্তন এলো। হাসিটা কমিয়ে বললেন,“বিয়ে করবে নাকি এদের ওপারে পাঠাবো? বিয়ে করবে?”

    শেষোক্ত কথাটায় তেজ ছিলো। দমে গেলাম আমি। আমার জন্য ওদের ক্ষতি চাইনা। সাথেসাথে ব্যক্ত করলাম,“করবো। করবো বিয়ে।”

    হাসলেন খানিকটা। আমার দিকে মৃদু ঝুঁকে বললেন,“রেডি কি নিজে হয়ে নেবে নাকি আমি হেল্প করবো? যদি তুমি বলো তো করতেই পারি। মাইন্ড করবো না।”

    “আমি রেডি হচ্ছি।”

    লোকটি “গুড” বলেই চলে গেলো। এরপর বিয়ে। প্রতিটি মুহূর্ত আমার দমবন্ধ হয়ে আসছিলো। মস্তিষ্ক শূন্য হয়ে গিয়েছিলো। পাথরের ন্যায় বসে ছিলাম। যা হচ্ছিলো তার কোনো কথা কানে যাচ্ছিলো না। খেয়ালে একটাই কথা, আমি কি তবে নিজের কাছ থেকে হারিয়ে যাবো? কবুল বলতে বলা হলো যখন, তখন আমার গলা জড়িয়ে গেলো। বলতেই পারছিলাম না। কবুল! খুব সম্ভবত পৃথিবীর সবচেয়ে ভারী একটি শব্দ। এই একটি শব্দ বলার সাথে সাথেই আমার দুনিয়া পাল্টে গেলো। হয়ে গেলাম, সম্পূর্ণ অজানা একজনের অর্ধাঙ্গিনী।

    কারো উপস্থিতির আভাস পেয়ে চোখ তুলে তাকালাম। সেই লোকটি, যে খানিকক্ষণ আগেই আমার স্বামী নামক উপাধিটি পেয়েছে। গুটিয়ে গেলাম আমি। জড়োসড়ো হয়ে বসে আছি। লোকটি আমার থেকে কিছুটা দূরে, বিছানায় বসলেন।

    “আমি আরহান আফসাদ খান। খান ইন্ডাস্ট্রির ওনার। বাড়িতে তোমার একজন শাশুড়ি মা আর একজন ননদ আছে। তবে এখনি ঐবাড়িতে নিয়ে যেতে পারবোনা।”

    উনার এটুকু পরিচয়ে আমার ভয় কমেনি। আরো বেড়েছে। আমাকে বিয়ে করার পেছনের কারণটা কি? আমিতো উনাদের মতো হাই সোসাইটি থেকে বিলং করিনা। দেখতেও আহামরি সুন্দরী না। তবে?

    আমার প্রশ্নবিদ্ধ চাহনির দরুন উনার ঠোঁটের কোন ঘেঁষে হাসি ছড়িয়ে পড়লো। পুনরায় বলা শুরু করলো,“এক বছর আগে দেখেছি তোমায়। মস্তিষ্কের প্রতিটি নিউরনে নিউরনে তুমিনামক আসক্তি ছড়িয়ে গেলো। ভাবনা জুড়ে তোমার বিস্তার হলো। তোমাকে ভাবতে ভালো লাগতো, কল্পনায় শান্তি আসতো। কিন্তু আমার অনুভূতি সম্পর্কে অজ্ঞাত ছিলাম আমি। দ্বিতীয়বার, কোনো এক পূর্ণিমার গভীর রজনীতে দেখা পেলাম। তুমি চন্দ্র বিলাসে ব্যাস্ত। পুনরায় তোমাকে নিয়ে স্বপ্ন বুনা শুরু করলাম। কখনো নিজেকে কারোর কাছে এক্সপ্লেইন করিনি। আমার অর্ধাঙ্গিনী তুমি। সবটা জানার অধিকার তোমার আছে। আর হ্যাঁ! প্রতি রাতে তোমার কাছে আমিই যেতাম।”

    উনার শেষোক্ত কথাটি শুনে চকিতে তাকালাম। ইনিই আমার ছায়ামানব? এক মিনিট! কি বললাম আমি? “আমার ছায়ামানব”? এতো সহজে “আমার” বলে ফেললাম?

    এরই মধ্যে, আরহান আমাকে ফ্রেশ হয়ে চেঞ্জ করে নিতে বলে বললেন,“আমার একটা কাজে বেরোতে হবে, ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নিবে। সার্ভেন্ট এসে খাবার দিয়ে যাবে। আমি দেরি করবো না। আর মনে রেখো একটা কথা, তোমার পরিবারের সবাই কিন্তু আমার হাতেই আছে।”

    চলে গেলেন আরহান। যাওয়ার আগে আমাকে আরো একটা কথা বলে গেলেন, “আজ থেকে আমার সবকিছুতে তোমার অর্ধেক ভাগ আছে। কাবার্ড এ তোমার জন্য অনেকগুলো শাড়ি রাখা আছে। পছন্দমত একটা বের করে নাও। আমি বের হলেই ফ্রেশ হয়ে নিও। এতো ভারী শাড়ি-গহনায় ঝামেলা হচ্ছে তোমার।”

    উনি চলে যেতেই, উঠে দাঁড়ালাম। এগিয়ে গিয়ে কাবার্ড খুলতেই দেখলাম, অর্ধেকটা শাড়িতে ভরা। সবগুলো কি সুন্দর! এখান থেকে একটা ছাই রঙ্গা শাড়ি তুলে নিলাম। ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে, একপলক নিজেকে দেখে নিলাম। চেহারায় উজ্জ্বলতা এসেছে। আমার হিসাবমতে মুখখানা মলিন থাকার কথা। তা হলো না কেনো?

    কিছুক্ষণ পূর্বে উনাকে নিয়ে মনের গভীরে যেই সুপ্ত অনুভুতি জেগে উঠেছিলো, তা মুহূর্তেই নিভে গেলো। লোকটা খুব খারাপ। নয়তো ব্ল্যাকমেইল করে বিয়ে কেনো করতে যাবে? মনের মধ্যে এক আকাশ সমান রাগ নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকলাম। হয়তো এটা রাগ, নয়তো অভিমান!

    ________________

    “নিশা! তোর ভাইকে কল দে তো, কই আছে ছেলেটা? কাল থেকে দেখিনি, আজ দুপুরে খেতে আসবে না?” নিশাকে উদ্দেশ্য করে আরহানের মা এই কথাটি বললেন। আরহান শত ব্যস্ততার মাঝেও লাঞ্চটা পরিবারের সাথেই করে। আরহানের মায়ের একটাই কথা, ছেলে তার এমন ছিলো না। সময় ও পরিস্থিতি বাধ্য করেছে।

    নিশা মায়ের কথার প্রেক্ষিতে বললো,“ভাইয়াকে কল দিচ্ছি, দাঁড়াও।”

    নিশা কল দেওয়ার আগেই সেখানে রুদ্রের আগমন ঘটলো। মিষ্টি হেসে আরহানের মাকে সালাম দিলো। আরহানের মা সালামের জবাব দিয়েই বললেন,“আরে রুদ্র! এখন এলি? এই মাকে তো মনেই পড়ে না তোর!”

    “না মামনি, এরকম না। কাজের প্রেশার অনেক বেশি তো।”

    কথাটা বলার এক ফাঁকে নিশার দিকে তাকালো। মনটা বড্ড খারাপ জিনিস। নিষিদ্ধ জিনিসের দিকে বেশি টানে। এই টানেই তো আবারও এই বাড়িতে চলে এলো রুদ্র। ভালোবাসার মানুষটির দেখা না পেয়ে হাজারো জনম কেটে যায় সহজেই। কিন্তু একবার তার দেখা পেয়ে গেলে, অবাধ্য চক্ষুদ্বয় তাকে বার বার দেখার জন্য মরিয়া হয়ে উঠে। ভাবনায় দিবারাত্রি শুধু সে’ই বসত করে। মন-মস্তিষ্ক সবটাই জুড়ে শুধু সেই একজনেরই নাম নেচে বেড়ায়।তেমনটাই হচ্ছে রুদ্রের সাথে। এতদিন নিজেকে নিয়ন্ত্রনে রেখেও আজ আর পারছে না। তাই তো নিশার আঙিনায় রুদ্রের আগমন ঘটলো।

    টুকটাক কথা বলে আরহানের মা কিচেনে চলে গেলো, কিছু খাবার তৈরির উদ্দেশ্যে। রুদ্র একটা জরুরি কথা বলতে চেয়েছিল আরহানের মাকে। কিন্তু উনি বললেন,“এসে শুনবো।”

    ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে আছে নিশা। প্রিয়মানুষটির আগমনের সাথে মনে এমন আনন্দ আসে কেনো?? নিশার উঠে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে। কিন্তু সে তো পাথর হয়ে বসে আছে। নড়তেও পারছে না। রুদ্র একপলক নিশাকে দেখে, ঠিক সামনের সোফায় বসে পড়লো। হালকা কেশে মনোযোগ আকর্ষণ করেই বলে উঠলো,“কেমন আছো নিশা?”

    সর্বাঙ্গে এক অন্যরকম শিহরণ খেলে গেলো। প্রিয়মানুষটির মুখে নিজের নাম শুনতে পারা বুঝি এতোটাই সুখের?

    নিশা তাকালো এই শ্যামপুরুষের মুখে পানে। চোখে চোখে মিলন হতেই চোখ নামিয়ে নিলো। মাথা নিচু করে কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বললো, “জ ‘জি ভালো, আপনি?”

    “হুঁ, ভালো।”

    নার্ভাস শুধু নিশা না, রুদ্রও। নিশা আড়চোখে বারবার দেখে যাচ্ছে। আর রুদ্র! সে তো চোখ অন্যদিকে সরাচ্ছেই না। আঁখি পল্লব ফেলতেও ভয় পাচ্ছে, যেনো এই এক পলক না দেখলে অনেকটা কম পড়ে যাবে। এদের দুজনের কথাটা শব্দে না, হচ্ছে নয়নে। হচ্ছে মনে।

    ফোনের রিংটোনের সাউন্ডে হকচকিয়ে উঠলো নিশা। ফোন হাতে নিতেই দেখলো, তার ভাইয়ার কল। উঠে কল রিসিভ করে কিচেনে চলে গেলো। মনে মনে নিজ মনকে বলছে,“যাক বাঁচলাম। এখানে থাকলে আর কিছুক্ষনেই দম বন্ধ হয়ে যেতো।”

    “কিছু বলার ছিলো। মায়ের কাছে যা। আর স্পিকারে দে।”

    আরহানের একসাথে এতোগুলো কথা বলায় নিশা বিস্মিত হলো। তার ভাইতো অনেক বছর আগেই “দ্যা ওয়ান লাইনার” ট্যাগটা পেয়েছে। এতোগুলো লাইন বললো যে? নিশ্চয় সিরিয়াস কিছু।

    ভাবনায় মশগুল নিশা ভাবনা হতে বের হয়ে বললো,“মায়ের কাছেই আছি। আর স্পিকারেও দিচ্ছি। বলো এবার।”

    “একটা মেয়েকে পছন্দ করি। কিছু প্রবলেম ছিলো বলে এতোদিন বিয়ে করিনি, আজকে বিয়ে না করলে প্রবলেম হতো। তাই আমি বিয়ে করে নিয়েছি।”

    ছেলের মুখে এমন কথা হজম করতে পারছে না আরহানের মা। হাতে থাকা খুন্তিটা পড়ে গেলো। নিশা পানি খাচ্ছিলো, ও বিষম খেলো। যেই ছেলেকে বিয়ের জন্য এতো প্রেশার দেওয়ার পরও মুখ দিয়ে টু শব্দ বের করতে পারেনি, সেই ছেলে নিজে থেকে বিয়ে করে নিয়েছে। প্রথমে বিস্মিত হলেও ভীষণ খুশি তারা। ছেলে যাকেই বিয়ে করুক, করেছে তো। এই অনেক!

    খুশিতে উল্লাসিত কন্ঠে আরহানের মা বললেন,“বউ নিয়ে বাড়ি আয় বাবা।”

    নিশাও বললো,“হ্যাঁ ভাইয়া। ভাবিকে নিয়ে এসো না।”

    আরহান কণ্ঠস্বর গম্ভীর করে বললেন,“এখন আনা সম্ভব নয়। আর কিছুদিন আমিও ওর সাথেই আমাদের ফার্মহাউজে থাকবো। চিন্তা করোনা তোমরা। খুব শীঘ্রই নিয়ে আসবো ওকে।”

    কল কেটে দিলো আরহান। আরহানের মা আর নিশা একবার দুজন দুজনের দিকে তাকালো। পরপর খুব জোরে হেসে জড়িয়ে ধরলো একে অপরকে। আরহানের মা ফ্রিজ থেকে মিষ্টির প্যাকেট বের করে নিলেন। নিশাকে খাইয়ে দিলো। নিশাও ওর মাকে খাওয়ালো। আরহানের মা এরপর মিষ্টি নিয়ে ড্রইং রুমে চলে গেলো। রুদ্রকে খাইয়ে দিয়ে বললো,“আমার আরহান বিয়ে করে নিয়েছে বাবা। কি যে খুশি আমি! বলে বোঝাতে পারবো না।”

    রুদ্র ঠোঁট প্রসারিত করে হেসে বললো,“এই খবরটা বলতেই এসেছিলাম।”

    পুরো পরিবারে খুশির জোয়ার নেমেছে। পরিবারে নতুন সদস্যের আগমন ঘটেছে। এ যে কতোটা খুশির! এই পরিবারকে না দেখলে বোঝাই যাবে না।

    ____________________

    বেডরুমে বসে ড্রিংক করছে তৃষ্ণা। এটা তৃষ্ণার নিত্যসঙ্গী। কিন্তু আজ যে তার নেশা হচ্ছে না। প্রথম কোনো নারী, তৃষ্ণার মনে এমন ভাবে প্রভাব ফেললো। কি আছে ঐ নারীতে?

    গ্লাস হাতে নিয়ে একবার গভীর দৃষ্টিতে তাকালো। হালকা আওয়াজে বলে উঠলো,“এর নেশার চেয়েও বেশি নেশাক্ত আপনি, নয়নতারা।হয়তো এই কিছু সময়েই আমি আপনাতে আসক্ত হয়ে পড়েছি।”

    এক চুমুকে পুরোটা শেষ করলো। মিনিট খানেক বাদেই তৃষ্ণার ফোনে কল এলো। দুদিন আগে তৃষ্ণার বিশ্বস্ত কর্মচারী, সায়েদের মৃত্যুতে একটু লোকসান হয়েছিলো। তবে খুব একটা সমস্যা হয়নি। লোকের অভাব আছে নাকি?

    কলটা দিয়েছে তার নতুন কর্মচারী। সায়েদের জায়গায় রাখা হয়েছে। নাম আশিক। বাচ্চা ছেলে, বয়স বেশি হলে উনিশ হবে। তবে এসব বিষয়ে খুব পটু। তৃষ্ণা কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে বললো,“স্যার, মাইয়াটার খবর পাইসি।”

    তৃষ্ণা রেগে গেলো। হাতের গ্লাসটি জোরে মেঝেতে ফেলে বললো,“কল হার ম্যাম!”

    আশিক ভয় পেয়ে গেলো। কম্পনরত ধীর কণ্ঠে আঞ্চলিক ভাষায় বললো,“জী স্যার, ম্যামের খবর পাইসি।”

    তৃষ্ণা মৃদু হাসলো। বললো,“ডিটেইলস বলতে থাকো।”

    “নাম, অর্শীয়া বীনি। অনার্স করতাছে। থার্ড ইয়ারে এইবার। মা মারা গ্যাছে পাঁচ বছর বয়সে। হ্যার বাবা, একটা মহিলারে বিয়া কইরা আনে, ম্যামরে দেখাশোনা করার লাইগা। হেই মহিলার আবার আগের ঘরে মাইয়া আসিলো। মধ্যবিত্ত ঘরের মাইয়া হেতী। আইজকা হ্যাগো বাইত গেসিলাম। কিন্তু…”

    এই “কিন্তু” শব্দটার জন্য তৃষ্ণার কপাল কুচকে এলো। জিজ্ঞেস করলো,“কিন্তু কি?”

    “স্যার, আইজকা পুরা বাইত্তে কাউরে খুইজা পাইনাই। কেউ আসিলো না। আশেপাশে খোঁজ লাগাইসি, তাও কিছু পাইলাম না। বাইতে তালা মারাও আসিলো না।”

    তৃষ্ণা চিল্লিয়ে উঠলো,“হোয়াট?”

    ____________________________

    গভীর রাত। বাইরে বৃষ্টির তেজ ক্ষণে ক্ষণে বাড়ছে, কমছে। আমি ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে দেখে যাচ্ছি। আমার জীবনটা এই কোন মোড়ে এসে থমকে গেলো? খেই হারানো নৌকার মতো হয়ে গিয়েছি আমি। কোথায় যাবো? এখানে থাকতে ইচ্ছে হয় না। কিন্তু যেতেও মন সায় দেয় না। এরকম একজন রহস্যময় ছায়ামানবের সাথে থাকতে ভয় লাগে। আবার যেতেও পারবো না, পরিবারের সবাই যে বন্দী তার হাতেই। এতকাল পর জীবনের সুখ নামক অনুভূতির সাক্ষাৎ পেলাম। পরক্ষনেই মনে হয়, উনি কিডন্যাপ করেছেন আমাকে সহ আমার পুরো পরিবারকে, ব্ল্যাকমেইল করে বিয়ে করেছেন। লোকটি বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হয়, আবার খারাপ বলে আখ্যায়িত করতেও। কি করবো আমি? মন মস্তিষ্কের এই খেলায় জিতবে কে?

    গাড়ির শব্দে ধ্যান ভাঙলো। গেট দিয়ে আরহানের গাড়ি প্রবেশ করছে। আমি রুমে গেলাম না। ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইলাম, যেভাবে দাঁড়িয়ে ছিলাম। কিছুক্ষণ বাদে আরহান রুমে প্রবেশ করলেন। আমাকে রুমে না পেয়ে সোজা ব্যালকনিতে চলে এলেন। একটা আটকে আসা শ্বাস ফেললেন। বললেন,“ভেবেছি, চলে গিয়েছো।”

    আমি উত্তর দিলাম না। আরহান আমার পাশে এসে দাঁড়ালো। আকাশ পানে নজর বন্দী আমার আর আরহানের নজর তার শুকতারার উপর। আকাশে নয়, পাশে। আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,“খেয়েছো?”

    মৃদু কন্ঠে “হুঁ” বললাম।

    “আমিও খেয়েই এসেছি।”

    পুনরায় আরহান “এসো” বলে রুমে গেলেন। আমি গিয়ে বিছানায় বসলাম।

    আরহান কাবার্ড এর সামনে গেলেন। একটা এনভেলাপ বের করে আমার সামনে এগিয়ে এলেন। আমার পাশে বসে সযত্নে আমার হাতটি ধরলেন। শরীরে এক অদ্ভুত শিহরন বয়ে গেলো। এই স্পর্শ বড্ড চেনা, বড্ড আকাঙ্খিত। আমি চেয়েও হাত ছাড়িয়ে নিতে পারছি না। আরহান আমার কম্পনরত হাতটি তুলে ধরে, কিছুক্ষণ আগের আনা এনভেলাপটি দিয়ে বললেন,“এতে দেনমোহরের টাকা আছে। এই টাকাটা আজ থেকে বছর দশেক আগের। হাতখরচের টাকা জমিয়ে রেখেছিলাম। ভেবেছিলাম, আমার ভবিষ্যত বউ যখন জানবে, তার স্বামীর জমানো টাকা এটা, অনেক বেশিই খুশি হবে। সেজন্য আরো উৎসাহিত হয়ে, টাকাটা জমিয়েছিলাম। খুব একটা নেই, তবে যা আছে, সবটা তোমার নামেই বরাদ্দ ছিলো এতো বছর আগ থেকেই। আশা রাখছি, ফিরিয়ে দেবে না।”

    আমার কি যেনো হলো, আর ফিরিয়ে দিতে পারলাম না। আরহান মুচকি হেসে ওয়াশরুমে চলে গেলেন।

    আরহানের ওয়াশরুমে যেতেই আমি উঠে দাঁড়ালাম। এনভেলাপের দিকে এক পলক তাকালাম। আমার জন্য যত্নে ছিলো? ভাবতেই আনমনে অধরকোনে সূক্ষ্ম এক হাসির রেখা তৈরি হলো। এনভেলাপটি হাতে তুলে নিলাম। পাশের ড্রয়ারে রেখে দিলাম। মুহূর্তেই মাথায় এলো,“আজ আমাদের বাসররাত!”

    চলবে…

  • অদ্ভুত আসক্তি (পর্ব-৫)

    অদ্ভুত আসক্তি (পর্ব-৫)

    ভর সন্ধ্যেতে এই উৎসবমুখর পরিবেশে চারিপাশে শুধু একটাই নাম ভেসে আসছে। “তৃষ্ণা!”

    এতক্ষণ গানটিতে এতটাই ডুবে গিয়েছিলাম যে আর খেয়াল আসেনি গানটি কোত্থেকে আসছে। চোখ তুলে তাকিয়ে দেখি, আমার সামনের সবগুলো ঘোর লাগানো নয়নে আমার পেছনে দেখছে। দৃষ্টি অনুসরণ করে পিছনে তাকালাম। স্টেজের উপর ব্ল্যাক শার্ট আর জিন্স পরা এক যুবক। কি সুন্দর দেখতে!

    হঠাৎ সামনের এই যুবকটির দৃষ্টির সাথে আমার দৃষ্টির মিলন ঘটলো। মাদকতায় ভরা নীলাভ চক্ষুদ্বয়। আমি সেখান থেকে তৎক্ষনাৎ প্রস্থান ঘটালাম।

    কিছুদুর এগোতেই রুশী আর অয়নকে চোখে পড়লো ওদের কাছেই এগিয়ে গেলাম। আমি যেতেই রুশী আমাকে বললো,“চল, ফুচকা খাবো।”

    “আমি খাবো না রে।”

    “প্লিজ…”

    রুশীর এমন ডাকে সাড়া না দিয়ে থাকতে পারলাম না। অয়ন নাক সিটকালো। এসব অয়নের পছন্দ না। বিরক্তির সহিত বললো,“তোরা মেয়ে জাত কি এসব উল্টা-পাল্টা খাওয়া ছাড়া শান্তিতে বাঁচতে পারিস না?”

    রুশী চেঁতে উঠলো। হাজার হোক, ফুচকা ভীষণ প্রিয় ওর। এই নিয়ে খোটা বাক্য শুনতে নারাজ। হালকা তেজ মিশ্রিত কন্ঠে বললো,“এই তোকে জোর করেছি আমি? আসতে ইচ্ছে হলে আয়, নয়তো ভাগ। তবুও উল্টা পাল্টা বকবি না।”

    অয়ন মুহুর্তেই নিভে গেলো। আমাদের ছাড়তে পারবে না, অগত্যা কথা বন্ধ করে

    চুপ হয়ে আমাদের সাথেই এলো।

    তিনজন চললাম ফুচকার স্টলে। যেতেই রুশী ফুচকা মামাকে উদ্দেশ্য করে বললো, “মামা! দুই প্লেট ফুচকা দিন তো। দুটোতেই প্রচুর ঝাল দেবেন।”

    মামা মৃদু হেসে “আইচ্ছা আম্মা” বলে ফুচকা বানানোতে মনোযোগ দিলো। আমি ভ্রু কিঞ্চিৎ বাঁকালাম। অয়নের একটা কল আসায় একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ালো। ও রুশীর ঝাল নেওয়ার কাহিনী শোনেনি। শুনলে হয়তো খেতে দিতো না। রুশী আমাকে নিয়ে পাশের বেঞ্চিতে বসতেই আমি বলে উঠলাম,“এতো ঝাল খাবি তুই? তুই না বেশি ঝাল সহ্য করতে পারিস না?”

    রুশী ডান হাতটি মুখের সামনে এনে হেসে দিলো। অয়ন তন্মধ্যে কাছাকাছি এসে দাঁড়িয়েছে। রুশীর হাসির সাথে চুড়ির রিনিঝিনি আওয়াজটা সোজা গিয়ে বিঁধলো, পাশে দাড়িয়ে থাকা সুদর্শন পুরুষটির বুকে। জীবনের সেরা সৌন্দর্যপূর্ন দৃশ্য উপভোগ করছে সে। আঁখি পল্লব ফেলতে ভুলে গিয়েছে। স্থির দৃষ্টিতে দেখে যাচ্ছে এই মোহময়ী নারীকে। রুশী ওষ্ঠদ্বয়ে হাসির রেখা বজায় রেখেই বললো, “বা রে! ফুচকা খাবো, ঝাল ছাড়া? তা হয় নাকি?”

    আমি কিছু বলতে যাবো, তার আগেই মামা দুটো ফুচকার প্লেট এগিয়ে দিলো আমাদের দিকে। প্লেট দুটো হাতে তুলে নিলাম। অয়নের এসবে বড্ড সমস্যা, তাই সে খাবে না। রুশী তাও ওকে একবার সাধলো। নাকচ করতেই রুশী মুখ বাঁকালো। আমার ঝাল পছন্দ খুব, সইতেও পারি ঝাল। তাই সমস্যা নেই।

    রুশী মুখ বড় করে পুরো একটা ফুচকা মুখে পুরে নিলো। কিন্তু, মনে হচ্ছে ঝালটা একটু বেশিই লেগে গিয়েছে। আমি আস্তে করে বললাম,“সমস্যা হলে খাস না কিন্তু।”

    রুশী জোরপূর্বক এক হাসি দিলো। তার ফর্সা মুখমণ্ডল লাল হয়ে গিয়েছে। পুনরায় ফুচকা মুখে দিলো। অয়ন আমাদের থেকে কিঞ্চিৎ দূরে দাঁড়িয়ে আছে। হয়তো তার দেখার ঘোর এখনও কাটেনি। দ্বিতীয়বার ফুচকা মুখে দিতেই রুশীর চোখ ভিজে এলো। ঝালে আর খেতে না পেরে গলায় আটকে গেলো। দম বন্ধ হয়ে আসছে প্রায়। নিশ্বাস নেওয়ার চেষ্টায় মুখটা “হা” আকৃতির করে ফেলেছে। আমি ফুচকা ফেলে ওর দিকে তাকালাম। ধুক করে উঠলো আমার বুক, মুহূর্তেই কি অবস্থা করে ফেলেছে নিজের। ইতিমধ্যে অয়ন আমাদের সামনে এসে হাজির। রুশীর এই অবস্থা ওর মনে কি প্রভাব ফেলছে তা আমার বোধগম্য নয় অস্থির হয়ে আছে সে। যেনো রুশীর নিশ্বাসের সাথে তার নিজের দমও আটকে আছে। হাঁটু মুড়ে বসে রুশীর গালে হালকা থাপড়িয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বলছে,“এএই! ক’কী হয়েছে তোর? ওমন করছিস কেনো?”

    আমি অয়নকে উদ্দেশ্য করে বললাম,“পানি নিয়ে আয় ফাস্ট!”

    অয়ন উঠে ফুচকার স্টলে গেলো। মামাকে জিজ্ঞেস করতেই বললো, পানি তো ফুরিয়ে গিয়েছে। অয়নের অবস্থা রুশীর চেয়েও নাজেহাল। দৌড়িয়ে গেলো কোথাও একটা। মিনিট দুইয়েকের মধ্যেই পানি নিয়ে হাজির। সাথে আইস্ক্রিম। রুশীকে পানি খাওয়ালাম। এখন শ্বাস নেওয়ার গতি স্বাভাবিক হয়েছে তবে ঝাল কমেনি। অয়ন রুশীর হাতে আইস্ক্রিম দিলো। রুশী খেতে খেতে খানিকটা স্বাভাবিক হলো। অয়নের দিকে তাকালাম আমি। চোখ মুখের কি অবস্থা! পুরো চোখ রক্তলাল হয়ে আছে। ফর্সা মুখশ্রী রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে। চুলগুলো এলোমেলো। কি বিধ্বস্ত দেখাচ্ছে!

    রুশীর পুরোপুরি ঠিক হতেই ওকে নিয়ে দাঁড় করলো। পাশের গাছটির সাথে ধাক্কা দিয়ে বাহুতে চেপে ধরে চিৎকার করে বলে উঠলো,“তুই ঝাল খেয়েছিস কোন সাহসে?”

    রুশী অয়নের এই ক্রোধের সাথে পূর্বপরিচিত। জানে এখন কি হতে যাচ্ছে। তবুও তুতলিয়ে বললো, “য’যা হ’ হবার হয়েছে, ক’ কিছু বলিস না প্লিজ।”

    রাগের তেজ বেড়ে গিয়েছে অয়নের। ছেড়ে দিলো রুশীকে। পাশের বেঞ্চিতে একটা লাথি দিলো। বড় বড় পা ফেলে চলে গেলো সেখান থেকে। রুশী ওখানেই দাঁড়িয়ে দম ফেলছে। অয়ন খুবই শান্ত ও চঞ্চল প্রকৃতির ছেলে। কিন্তু রেগে গেলে পুরো উল্টে যায় ও। আমি রুশীর কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। রুশী ভয় পাচ্ছে। অয়ন এতো রেগে আছে। কোথাও কোনো গন্ডগোল পাঁচটি কাবে না তো?

    আমি রুশীকে নিয়ে ভার্সিটির পেছনের দিকটায় গেলাম। একজনের তীক্ষ্ণ নজর যে আমারই উপর অবলোকন করছে, তা হতে সম্পূর্ণ অজ্ঞাত আমি।

    ________________________

    “স্যার! আপনাকে এতো বার কল করি করছিলাম।”

    রুদ্রের বলা কথার প্রেক্ষিতে আরহান বললো, “আ’ওয়াজ আউট অফ কভারেজ..”

    রুদ্র অস্থির ভঙ্গিতে বললো, “অনেক বড় এক ঘটনা ঘটে গিয়েছে এদিকে স্যার।”

    “হোয়াট! কী হয়েছে? ইজ শি ওকে?”

    “স্যার, ম্যাম তো ঠিক আছে। তবে..”

    “ক্লিয়ারলি বলো কি হয়েছে।”

    “তৃষ্ণার খোঁজ পাওয়া গিয়েছে।

    “দ্যাট’স আ গুড থিং..”

    রুদ্র জিভ দিয়ে ঠোঁট খানিকটা ভিজিয়ে বললো,“স্যার ঘটনা এটা না। ঘটনা হচ্ছে, তৃষ্ণা ম্যাম এর ভার্সিটিতে আছে।”

    আরহান চিল্লিয়ে বলে উঠলো,“হোয়াট? ওখানে কি করছে?”

    আরহানের চিল্লানো স্বরে রুদ্রের ভয় বেড়ে গেলো। এরপরের কথাটা বললে কি যে হবে! কিন্তু বলতে তো হবেই।

    “আজ ম্যাম এর ভার্সিটিতে নবীন বরণ অনুষ্ঠান ছিলো। সেখানেই স্পেশাল গেস্ট হয়ে এসেছে।”

    আরহান বুঝলো সেখানে তৃষ্ণার আসার কারণটা। এতক্ষণ দমটা আটকে এসেছিলো, একটা ছোট্ট নিশ্বাস ফেলে নিজেকে শান্ত করলো। যাক! তার শুকতারার খবর পায়নি তৃষ্ণা।

    রুদ্র ফটাফট একটা শ্বাস নিয়ে চোখ বুজে একটানে বলে ফেললো,“তৃষ্ণা, ম্যাম এর দিকে তাকিয়ে আছে প্রায় ঘন্টা খানেক।”

    আরহান চুপ মেরে গেলো। যা করার জলদি করতে হবে তাকে। রুদ্রকে “ওকে,স্টে উইথ ইউর ম্যাম..” বলেই আরহান কল কেটে দিলো। তার মাথায় এখন অন্য কিছু ঘুরছে। এতো চেষ্টা করে তার শুকতারা থেকে নিজেকে আলাদা রেখে কি লাভ হলো? যার থেকে বাঁচানোর জন্য গভীর রাতে গিয়ে তার শুকতারাকে দেখে চক্ষু তৃষ্ণা মেটাতো, আজ তারই নেশাক্ত নজর থেকে বাঁচাতে অক্ষম আরহান। এখন একটাই উপায়..

    _________________

    ক্যাম্পাসের একদম পেছনের দিকটায় রয়েছে একটা বকুল ফুল গাছ। সেখানেই মুখশ্রী গম্ভীর ভাব করে বসে আছে রুশী। ঠিক পাশেই আমিও আছি। ভীষণ চিন্তিত আমরা। আমাদের দুজনেরই ভাবনার মূল কারণ অয়ন। সেই যে গেলো, আর খুঁজে পেলাম না। কল ও দেওয়া হয়েছে বেশ কয়েকবার। প্রতিবারই ওপাশ থেকে একটা মেয়েলি কণ্ঠে ভেসে আসে,“দুঃখিত! কাঙ্ক্ষিত নম্বরটিতে এই মুহূর্তে সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।”

    রুশী খুবই নরম ও মিশুক প্রকৃতির হওয়া সত্বেও এই মুহূর্তে তার খুব করে ইচ্ছে হচ্ছে, ফোনের ওপাশের ঐ মেয়েটিকে ধরে দু’চারটে গালি শুনিয়ে দিতে। কিন্তু ওর ডিকশনারিতে তো গালি নেই। রুশী এবার মাথা উঁচু করে আমার দিকে তাকালো। চোখ দুটো ছলছল করছে। ঠোঁট চেপে রেখেছে। হয়তো কান্না হজম করার ব্যার্থ প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু ও পারলো না। কার্নিশ বেয়ে দু’ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। আমি তড়িঘড়ি করে রুশীর দু’গালে নিজের হাত রাখলাম। অতি সন্তর্পনে অশ্রুকণা মুছে দিয়ে মৃদু আওয়াজে বলে উঠলাম,“পাগলী কাঁদছিস কেনো?”

    রুশী কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলে উঠলো,“তার ক্রোধে আমার সহস্র ক্ষতি মানতে রাজি আছি। তবে সে হীনা, তার অবহেলা মরণ যন্ত্রণা সম..”

    ।“এতো ভালবাসিস?”

    কান্না থেমে গেলো। স্থির নয়নে আমার দিকে তাকালো। চোখ দুটোতে অবিশ্বাস। হয়তো বিস্ময়।

    “এটা বুঝি ভালোবাসা?”

    “হুঁ”

    একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। আকাশের দিকে চোখ তুলে বললো,“ওকে ভালোবাসি কিনা জানা নেই। তবে ওর জন্য বুকটা খুব পোড়ে আমার।”

    “অয়নকে বলবি না এই ব্যাপারটা?”

    “যেদিন এই ভালোবাসার সম্পূর্ণ অনুভূতির সাথে পরিচিত হবো, সেদিন অবশ্যই বলবো।”

    “দেখিস! দেরি যেনো না হয়ে যায়।”

    রুশীর আর কিছু বলার আগেই আমার ফোন বেজে উঠলো। আমাদের একটা ফ্রেন্ডের নম্বর। নেহা। রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে নেহার অস্থির কন্ঠে শোনা গেলো,“তোরা কোথায়?”

    “ক্যাম্পাসেই আছি। কেনো কি হয়েছে?”

    “স্টেজের এদিকে আয়, ফাস্ট। ঝামেলা হচ্ছে খুব।”

    আমি “আচ্ছা আসছি” বলেই কল কেটে দিলাম। রুশীকে নিয়ে স্টেজের দিকে এগোলাম। জানিনা কি হচ্ছে। তবে চিন্তায় পড়ে গিয়েছি। গিয়ে দেখি অয়ন একটা ছেলেকে বেধড়ক পেটাচ্ছে। অয়নও মার খাচ্ছে। ইতিমধ্যে অয়নের সাদা পাঞ্জাবি রক্তাক্ত হয়ে গিয়েছে। রুশী অয়নকে এই অবস্থায় দেখে স্থির হয়ে গিয়েছে। অয়ন এমন না। আমি রুশীকে ডাকলাম। ও আর এক মুহুর্ত বিলম্ব না করে এগিয়ে গেলো। অয়নকে ছাড়িয়ে আনতে যেতেই অয়ন রুশীকে আক্রমণ করতে যায়। কিন্তু কিছু করার আগেই থেমে যায়। মুখ দিয়ে অস্ফুটস্বরে বুলি আওড়াচ্ছে,“ওর সাহস কি করে হয়? কোন সাহসে ও আমার জানকে নিয়ে উল্টা পাল্টা কথা বলে? আমার কলিজায় হাত দেওয়ার সাহস কে দিয়েছে ওকে? আজ তো ওকে আমি..”

    কথাটি শেষ করেই পুনরায় মারতে যায় ছেলেটিকে। আমি আর রুশী মিলে ধরে ফেলি। পুরো ক্যাম্পাসের নজর এখন আমাদের দিকেই। অয়নকে নিয়ে পাশের এক ফার্মেসিতে যাই। অনেকটা জোর খাটিয়েই আনতে হয়েছে। অয়ন এখনও রাগে ফুসছে। ওর সামনে এখন কিছু বলা মানে নিজের পায়ে কুড়াল মারা। রুশী চুপিসারে অশ্রুপাত করছে। আমিও নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করতে ব্যাস্ত।

    শুরু থেকে এই অবধি কারো গভীর নজর আমার উপর ছিলো। সে তৃষ্ণার্ত নয়নে তাকিয়ে বলছে,“প্রথম দেখায় আমার অস্থির নয়ন যাকে দেখে থমকে গেলো, প্রহর ভুলে গেলো, এক আসক্তির সন্ধ্যান পেলো সে নিশ্চয়ই আমার নয়নের তারা। আমার নয়নতারা।”

    পকেট থেকে ফোন বের করে একটা নম্বর ডায়াল করে কল লাগালো। ওপাশ থেকে রিসিভ হতেই বললো,“একটা ছবি পাঠাচ্ছি, এ টু জেড ইনফরমেশন চাই আমার।”

    “ওকে বস।”

    কল কেটে দিলো। ঠোঁট বাঁকিয়ে হালকা হাসলো।

    ___________________

    ভর সন্ধ্যে, সূর্য ঢলে পড়েছে বেশক্ষানিক আগেই। বাড়ির রাস্তা ধরে হেঁটে যাচ্ছি আমি। রুশী আসতে চেয়েছিলো, কিন্তু আমি মানা করে দিয়েছি। ভার্সিটি থেকে ওর বাড়ি, আমার বাড়ির ঠিক উল্টো রাস্তায়। আমাকে ড্রপ করতে এলে ওর বাড়ি ফিরতে অনেক রাত হয়ে যেতো। এই রাস্তাটা ঠিক হয়েছে কয়েকদিন আগেই। মানুষজনের যাতায়াত কম না। কিছুটা এগোতেই একটা কৃষ্ণচূড়া গাছ দেখলাম। ভীষণ পছন্দ এই গাছটি আমার। মাঝে সাঝেই এখানে বসা হয়। এগিয়ে গেলাম। পাশেই একটা বেঞ্চ আছে। বসে পড়লাম সেখানে। হালকা বাতাস আর মাথার উপর কৃষ্ণচূড়া ফুলের আবরণ। ব্যাপারটা দারুন! মাথাটা খানিক উঁচু করে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম ঐ দূর আকাশপানে। কিছুক্ষণ তাকিয়ে প্রকৃতির এই সৌন্দর্য দেখে গেলাম। মিনিট দশেক যেতেই চোখ দুটো বন্ধ করে ফেললাম। প্রকৃতি সবাইকে একই সাথে দুটো উপহার দেয়। একটা ভালো, অন্যটা খারাপ। হয়তো সবসময় খারাপটা সামনে থাকে আর ভালোটা আড়ালে। সবাই আত্মবিশ্বাসী নয়। তাই আগে থেকেই ভেবে নেয়, তার সাথে খারাপটাই হবে। গ্রহণ করে যন্ত্রণার কাগজে মুড়ে রাখা একটা কষ্ট নামক উপহার। আর ভালোটা? সে তো পড়ে থাকে মস্তিষ্কের এক কোণে। ভাবলেই না আসবে! ভাবেটা কে? যেটুকু সময় আফসোস করে বেড়াই আমরা, সেটুকুকে কাজে লাগিয়ে জীবনে সুখ খুঁজলেও অনেক আগেই পেয়ে যেতাম।

    আমি আমার এটুকু জীবনে বাস্তবতা অনেক ভালো করে জেনেছি, বুঝেছি। জীবনের সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছি সেদিন, যেদিন ছোটমা আমার নামে বাবার কাছে মিথ্যে বললো, আর আমার বাবা আমাকে ভুল বুঝলো। নিজেকে এক্সপ্লেইন করেছিলাম, বাবা আমাকে অবিশ্বাস করলো। এতো ছোট বয়সে মাথার উপর কারো ভরসার হাত পাইনি, সেদিন থেকে দুনিয়াদারি শিখে নিয়েছি। প্রতিটি মানুষের যে দুটো মুখোশ থাকে, একটা দুনিয়াকে দেখায়, একটা কিছু মানুষের সামনে, আর নিজের চেহারা গোপন রাখে, তা জেনে নিয়েছি। তবুও থেকে গিয়েছি এখানেই, হাজার হোক, এরাই যে আমার আপনজন। আত্মার না হোক, রক্তের তো।

    পরপর দুটো গভীর নিঃশ্বাস ফেললাম। বুকটা অনেক ভার হয়ে আছে। নিশ্বাস এতো ভারী লাগছে কেনো? কষ্টের পরিমাণ কি খুব বেশি হয়ে গেলো? শুনেছি মাত্রাধিক কষ্টে মরণ ঘনিয়ে আসে। আমারও কি তাই হবে? কিন্তু আমি তো বাঁচতে চাই। ভীষণ বাঁচতে ইচ্ছে করে আমার।

    হঠাৎ একটা কালো গাড়ি এসে থামলো আমার সামনে। কোনো কিছু ঠাহর করার আগেই কিছু একটা স্প্রে করলো। আর আমি ঢলে পড়লাম কারো বাহুর বন্ধনে। অনুভব করলাম খুব চেনা স্পর্শ। লোকটির দিকে ঠিক মতো তাকাতে পারলাম না। সব অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে। চোখ দুটো বুজে এলো।

    _____________________

    পিটপিট করে চোখ মেলাতেই সকালের মৃদু আলো চোখে পড়ছে। পুরোপুরি ভাবে তাকাতেই নিজেকে সম্পূর্ণ এক নতুন জায়গায় আবিষ্কার করলাম। তড়িঘড়ি করে উঠে বসে চারিপাশটা একবার পরখ করে নিলাম। মানতেই হবে! যে এখানে থাকে, তার রুচি ভীষণ সুন্দর এবং শালীন। কিন্তু আমি এখানে কি করে এলাম? কাল রাতে কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচেই তো ছিলাম। তবে এখানে কি করে? আর ভাবতে পারছি না আমি মাথা ভার হয়ে আছে ভীষণ। চোখ দুটো বন্ধ করে নিলাম। মিনিট দুয়েক বাদে উঠে দাঁড়ালাম। উদ্দেশ্য একটাই। জলদি পালাতে হবে এখান থেকে। যে আমাকে এখানে কিডন্যাপ করে এনেছে, সে নিশ্চয় ভালো কিছু করবে বলে আনেনি। ব্যালকনিতে চলে গেলাম। দোতলায় আছি আমি। লাফানো যাবে না। কিন্তু কিভাবে যাবো?

    এসব ভাবনায় ছিলাম আমি। হুট করে দরজা খোলার আওয়াজ পেয়ে চকিতে আওয়াজের উৎসের দিকে তাকালাম। অ্যাশ টি-শার্ট পরা এক পুরুষ। সুদর্শন পুরুষ বলা যায়।

    “উঠে পড়েছো তবে?”

    ভয় জেঁকে ধরলো। কে উনি? চিনিনা আমি। কোনোদিন দেখিনি। হাতের ট্রে টা বেড সাইড টেবিলে রেখে আমার দিকে তাকালো। আমি কাঁপা কাঁপা কন্ঠে জিজ্ঞেস করলাম, “ক’ কে আআপনি?”

    লোকটি হালকা হাসলো। বড্ড ভয়ংকর এই হাসিটা। কে জানে, হয়তো এই হাসিতেই খুন হয়েছে অজস্র নারী।

    “তোমার চাঁদ।”

    লোকটির কথায় বিস্মিত হলাম। কে উনি? উনি আবারও বললেন,“সব ভাবনা পরে হবে। এখন ফ্রেশ হয়ে এসো। ব্রেকফাস্ট করতে হবে।”

    আর কিছু বলতে পারলাম না আমি। বলে লাভ হতো না বলেই বলতে পারলাম না। ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি লোকটি এখানেই বসে আছে। আমাকে এসে পাশে বসতে বললো। চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি। উনি পুনরায় মাথা নিচু করে ঠোঁট কামড়ে হাসলেন। কয়েক সেকেন্ড বাদেই উনি আমার দিকে তাকালেন। চোখাচোখি হয়ে গেলো। যেনো থমকে গেলো এই দুনিয়া। আছে শুধু এই চাঁদ আর আমি, আমি কি?

    “তোমার কোনো ক্ষতি করার হলে আগেই করে নিতাম। এখন খেয়ে ধন্য করুন মহারানী। নয়তো পালানোর শক্তিটাও পাবেন না।”

    কথায় কেমন যেনো একটা নেশা আছে। কথায় নাকি আওয়াজে জানা নেই। কাল রাত থেকে না খেয়ে আছি। তাই আর না করিনি। বেডে গিয়ে বসলাম। লোকটি আমার থেকে একটু দূরেই বসে আছে। খাবারের প্লেটটা আমার হাতে দিলো। আমি নিঃশব্দে নিয়ে খাওয়া শুরু করলাম। অনেকটা খাওয়া হয়েছে। আর পারছি না। খাওয়া থামিয়ে উনার দিকে তাকালাম। মৃদু হেসে “আচ্ছা” বলে প্লেটটি নিলো। আমি ওয়াশরুমে চলে গেলাম, হাত ধুতে। ভাবনায় একটাই কথা, এখান থেকে পালাতে হবে। লোকটাকে খারাপ মনে হলো না। কিন্তু ভালো হলে কি আর তুলে আনতে পারতো?

    ওয়াশরুম থেকে বেরোতেই আমার চোখ কুঁচকে এলো। লোকটি আমার এঁটো খাবার খাচ্ছে! একবার চোখ তুলে আমার দিকে তাকিয়ে আবার খাওয়ায় মনোযোগ দিলো। যেনো কিছুই হয়নি। নিঃশব্দে খাওয়া শেষ করে প্লেটটি নিয়ে সেখান থেকে প্রস্থান করলো। যাওয়ার আগে মিষ্টি হেসে বলে গেলেন,“পালানোর চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলুন।”

    লোকটি চলে যেতেই আমি বিছানায় গিয়ে বসলাম। যা হচ্ছে, সবটাই মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। আচ্ছা বাড়ির সবাই ঠিক আছে তো? রাতে তো রান্না করিনি। কি খেয়েছে ওরা? টেনশন হচ্ছে ওদের জন্য।

    আমার এই টেনশনের মাঝেই আবারও লোকটির আগমন ঘটলো। হাতে একটা প্যাকেট। রুমে ঢুকে প্যাকেটটি আমার হাতে দিয়েই বললো,“ফটাফট রেডি হয়ে নাও।”

    আমি প্যাকেট খুললাম। ভেতরে একটা লাল বেনারসি আর কিছু অর্নামেন্টস দেখতেই চোখ দুটো বড় বড় হয়ে এলো। ভীষণ অবাক হলাম। কি চাচ্ছেন উনি?

    শাড়ীটা হাতে নিয়ে উনার দিকে অবিশ্বাস্য চাহনি নিক্ষেপ করতেই উনি বললেন,“একটু বাদেই আমাদের বিয়ে। নিজে থেকে রেডি হয়ে যাও। নয়তো তোমাকে প্রস্তুত কিভাবে করতে হয় তা খুব ভালো করেই জানি আমি।”

    চলবে…

  • অদ্ভুত আসক্তি (পর্ব-৪)

    অদ্ভুত আসক্তি (পর্ব-৪)

    চলমান গাড়ি এসে থামলো বিশাল বড় এক ডুপ্লেক্স বাড়ির সামনে। চারিদিকে গার্ডস। আরহানের বাড়ি এটা। গাড়ি থেকে আরহান নামলো। রুদ্র এখানে থাকে না। বাড়ির পাশেই স্টাফ কোয়ার্টার আছে। রুদ্র সেখানেই থাকতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। নিজস্ব দুনিয়া বলতে স্যার, কাজ আর অব্যক্ত এক ভালোবাসা রয়েছে তার।

    রুদ্র কোয়ার্টারে যাওয়ার উদ্দেশ্যে গাড়ি স্টার্ট দিলো। আরহান থামিয়ে দিলো। থেকে যেতে বললো। রুদ্রের অস্বস্তি হচ্ছে এখানে থাকার কথা শুনতেই। তবুও তার স্যারের কথা ফেলতে পারলো না।

    আরহান ধীরকণ্ঠে “কাম” বলে বাড়ির ভেতরের দিকে পা বাড়ালো। রুদ্র আরহানকে অনুসরণ করে বাড়িতে ঢুকলো। বাড়িতে ঢুকতেই রুদ্রের নজর গেলো ড্রয়িং রুমে থাকা এক অপ্সরীর দিকে। সোফায় বসে আছে। নজর তার টিভিতে। উপভোগ করছে কার্টুন। নিষ্পাপ মুখশ্রীতে রয়েছে একরাশ মায়া। আর এই মুখখানা দেখেই রুদ্রের হৃদপিন্ড থমকে গেলো। চারিপাশ ভুলে তাকিয়ে রইলো এই মোহময়ী নারীর দিকে। নিজ মনকে একাজে প্রায়ই নিষেধাজ্ঞা জানায় রুদ্র। কিন্তু মন কি আর কথা শোনে?

    “ভাইয়া! চলে এসেছো?”

    নিশার সুরেলা কণ্ঠে ধ্যান ভাঙলো। রুদ্রের খেয়ালে এলো, এইমাত্র সে নিজের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছিলো। নিশাকে দেখলে কেনো যে রুদ্রের হৃদপিন্ড অসুস্থ হয়ে যায়!

    আরহান নিশার কথার উত্তরে হালকা আওয়াজে “হুঁ” বলে রুমে চলে গেলো। নিশা জানে তার ভাইয়া এরকমই। তাই কিছু মনে করলো না। তবে অন্য কেউ হলে, নিশ্চয়ই অপমানিত বোধ করতো। ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলে চোখ ঘুরালো দরজার দিকে। চোখ দুটো স্থির হয়ে গেলো। সামনে দাড়িয়ে আছে এক সুঠাম দেহের অধিকারী পুরুষ। শ্যাম বর্না পুরুষ বোধ হয় পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর দেখতে হয়! দ্রুত চোখ সরিয়ে নিলো নিশা। রুদ্র একটা চাঁদ। তাকে দেখতে পারবে, কল্পনায় স্বপ্ন বুনতে পারবে, তবে ছুঁতে পারবে না। সেই সাধ্যি নেই নিশার। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। রুদ্রও প্রস্থান করলো।

    আরহান নিজের রুমে এসে শাওয়ার নিয়ে নিলো। গোডাউনেই চেঞ্জ করে সব রক্ত শরীর থেকে ধুয়ে এসেছিলো। তাই বাড়ির কেউ এটা দেখেনি। আরহানের এই সিক্রেট গুলো তার মা-বোন জানে না।

    রাত বাজে বারোটা। আরহানের এখন বেরোতে হবে। উদ্দেশ্য তার শুকতারা। সে তার শুকতারাকে না দেখে থাকতে পারে না। সম্ভব হলে, খুব আগেই নিজের কাছে নিয়ে আসতো। কিন্তু বাঁধা হয়ে মাঝে ছিলো তৃষ্ণা। আরহানের সবচেয়ে বড় শত্রু। আরহানের এর আগেও অনেক শত্রু হয়েছে, তবে কখনো কাউকে নিয়ে এতোটা বিপাকে পড়তে হয়নি। খুব চালাক এই তৃষ্ণা। নীলাভ চক্ষুদ্বয়ের অধিকারী। অধর জুড়ে রয়েছে নেশাক্ত এক হাসি। সমগ্র চেহারা মাদকতায় ভরপুর। আসক্তি তার নারী। যখন যেই নারীকে ভালো লেগেছে, সেই নারী নিজ থেকে তাকে সাড়া দিয়েছে। গান এবং গান(বন্দুক) দুটোতেই সেরা তৃষ্ণা। আর তার ডানহাত ছিলো এই গুপ্তচর। যাকে দিয়ে আরহানের সব খবরাখবর নিতো। একে শেষ করে দিয়েছে আরহান। এখন তৃষ্ণা দুর্বল। আরহানেরতো একমাত্র ভয় তার শুকতারা কে নিয়ে। আর এই তৃষ্ণা আরহানকে হারাতে যেকোনো লেভেলে নামতে পারে। কোনো ভাবে আরহানের উইক পয়েন্ট যদি ধরে ফেলে! তাই লুকিয়ে রাতের বেলায় তার শুকতারাকে দেখতে যায়। যেমনটি এখন বেরোচ্ছে।

    ________________________

    রাতের গভীরতা বেড়ে গিয়েছে। নিস্তব্ধ রাত্রিতে কারো পায়ের ঠকঠক শব্দ ভেসে এলো আমার শ্রবণ ইন্দ্রীয়তে। গভীর ঘুমে মগ্ন আমি। তবুও এই শব্দ শুনতে পারছি। আঁখি পল্লব মেলতে অক্ষম। প্রতিরাতের মতো এবারেও। ছায়ামানব এগিয়ে এসে হাঁটু মুড়ে বসলো মেঝেতে। এই ছায়ামানবতো আরহানই। প্রতিবারের মতো আমার ডান হাতটি নিজের হাতে নিলো। হাতের পিঠে এঁকে দিলো, উষ্ণ পরশ। গভীর নয়নে দেখে যাচ্ছে তার শুকতারাকে। এ দেখায় এতো শান্তি! যেদিন প্রথম দেখেছিলো, সেদিন থেকে আমাকে দেখলেই আরহানের এমনটি লাগে।

    আজ থেকে বছর খানেক আগেই তো দেখেছে। এয়ারপোর্ট থেকে ব্যাক করার পর, যখন আরহানের গাড়ি জ্যামে আটকে গিয়েছিলো, তখন ফুটপাত ধরে হেঁটে চলছিলো এক মেয়ে। তাকে দেখেই তো আরহান থমকে গিয়েছিল। এক মায়াবিনীর মায়াজালে আবদ্ধ হয়ে গিয়েছিলো। সেই দিনটি কি আরহান ভুলতে পারে? মনে আছে প্রতিটি মুহূর্ত। এখনও ভাবতে গেলে সব জীবন্ত লাগে। সেদিন সেই মায়াবিনীর হৃদয় ছিলো ভীষণ ভারাক্রান্ত। একলা পথে গোমড়া মুখশ্রী নিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলো। পরনে সুতির থ্রিপিস। ওড়নাটা মাথায় দেওয়া। সামনে ছিলো এক কৃষ্ণচূড়া গাছ। মাথাটা খানিক উঁচু করলো। রক্তলাল কৃষ্ণচূড়া দেখে তার ভারাক্রান্ত হৃদয়, নিমিষেই খুশির ঝলকানি দিয়ে উঠলো। আহা! জীবন নাই বা সুন্দর হলো। প্রকৃতি কি সুন্দর! প্রাণখুলে হেসে উঠলো মেয়েটি। আর আরহান সেই হাসিটি রাস্তার পাশে গাড়িতে বসে তৎক্ষনাৎ মুঠোফোনে বন্দী করে নিলো। এরপর কয়েক রাত নিদ্রাহীন কেটেছে। ব্যাস্ত নগরীতে নির্ঘুম থেকে আরহান তার শুকতারাকে নিয়ে বুনেছে অজস্র স্বপ্ন। তবে নিজের মনের অনুভুতি সম্পর্কে অজ্ঞাত ছিলো আরহান। বুঝতে পেরেছিলো দ্বিতীয় দেখায়। এইতো কিছু মাস আগেই। গভীর রজনীতে, ছাদের একপাশে রেলিং ধরে দাড়িয়ে ছিলো সেই মেয়েটি। চোখ দুটো নিক্ষিপ্ত ছিলো ঐ অন্ধকারাচ্ছন্ন আকাশপানে। সেদিন দ্বিতীয় বারের মতো আরহানের হৃদপিন্ড থমকে যায়। তাও একই মানুষের জন্য। মনের কোঠায় সেই মেয়েটির জন্য “শুকতারা” সম্বোধনটি বরাদ্দ হয়ে যায়। সে বার আরহান তার মনের সুপ্ত অনুভুতি সম্পর্কে অবগত হয়েছিলো। কিন্তু, তৃষ্ণা….

    আরহান মস্তিষ্কের পুরনো স্মৃতিচারণ আপাদত বন্ধ করলো। নেশাক্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো তার শুকতারার দিকে। ঘর্মাক্ত মুখশ্রী, টানা টানা নেত্র, আলগা হওয়া অধরযুগল, ফুলো কপোল সব মিলিয়ে আরহানের একটাই কথা বলতে ইচ্ছে হয়,“আমার প্রতিটি নির্ঘুম রাত ধন্য, তোমার এরূপ দেখার সৌভাগ্য পেয়েছি…”

    আলতো ভাবে হাত স্পর্শ করলো তার শুকতারার ঠিক কানের নিচে।বৃদ্ধাঙ্গুল গালে কিছু এঁকে বেড়াচ্ছে। আরহানের স্থির দৃষ্টি তার শুকতারার নেত্রযুগল থেকে সরে অবলোকন করলো গলার নিচে। এই কালচে তিলে। অপর হাত এনে ছুঁয়ে দিলো এই নেশাক্ত তিলকটির উপর। মৃদু ধারালো স্বরে উচ্চরিত হলো,“সেদিন ভার্সিটিতে যাওয়ার সময়, তোমার এই তিলের দিকে একটা শু*য়ো*রে*র নজর পড়েছিলো। তাকে তো সরিয়ে দিয়েছি। কিন্তু রাগ দমছিলো না। তাই তোমার সাথে ওমন করেছিলাম। আর তোমার সাথে যে এরকম হচ্ছিলো বাড়ির ভেতরে, তা আমার জানা ছিলো না। দুঃখিত..!”

    __________________________

    মেঘলা আকাশ দুড়ুম দুড়ুম আওয়াজ করেই চলছে। অন্ধকার হয়ে আছে চারিপাশ। বর্ষণের এই আমেজে এমনটা প্রায়শই ঘটে। আকাশ ভেঙ্গে গড়িয়ে পড়লো ফোঁটা ফোঁটা পানি। ধীরে ধীরে এই ধারাপতনের জোর বেড়েই চলেছে। হয়তো প্রতিটি ফোঁটা একটি অপরটির সাথে অঘোষিত প্রতিযোগিতা শুরু করেছে, কে আগে নিজেকে এই ধরণীতে বুকে মাখতে পারবে। নিকষ কালো আকাশের বদন পাল্টে গেলো নিমিষেই। আকাশ পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে অনেকটা। বৃষ্টির তেজ থাকলেও, অন্ধকারের রেশমাত্র নেই আর।আমি সকালে ঘুম থেকে উঠেই এখানে দাড়িয়ে আছি। খুব ভোরে ঘুম ভেঙে গিয়েছে আজ। দেখতে দেখতে আরো একটি সপ্তাহ চলে গেলো। প্রতিরাতে ছায়ামানবকে অনুভব করি। কিন্তু সমস্যা সেই একই, দেখতে পারি না। সেদিন মীরা আপুকে জিজ্ঞেসও করেছিলাম, ঐ ঘটনার ব্যাপারে। আপু বলতে নারাজ। যে সেই কাজটি করেছে, সে যেনো আপুর মুখ তালা মেরে চাবি নিজের কাছে রেখে দিয়েছে। আপুকে আর সে বিষয়ে দ্বিতীয়বার জিজ্ঞেস করিনি। তিনদিন পর ছোটমা চলে এসেছিলো। আঘাত খুব একটা পায়নি ভেবেছিলাম। কিন্তু আমার ভাবনা ভুল হয়ে গেলো। ছোটমা এখন কোমর সোজা করে দাঁড়াতে পারে না। হাটতে পারে, তবে কুঁজো হয়ে। ডান হাত পুরোটাই ভেঙ্গে গিয়েছে। মারাত্মক আঘাত!

    গত এক সপ্তাহ ধরে ভার্সিটিতে যাওয়া হয়না আমার। ছোটমা, আপু দুজনেই অসুস্থ ছিলো। প্রতিটি কাজে নির্ভরশীল আমার উপর। আপুর হাত অনেকটা ঠিক হয়েছে। তবে ছোটমা এখনও একা চলতে পারে না। আশ্চর্যের কথা হচ্ছে, যেই ছোটমা আমাকে এক বেলা কটূক্তি না করতে পারলে শান্তি পেতো না সেই ছোটমা বাড়ি ফেরার পর থেকে আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেনি। খারাপ ব্যবহার করবে কি করে! অজ্ঞাত কোনো কারণবশত ছোটমা আমার সাথে কথা বলতেই ভয় পাচ্ছে। আর আপুও কোনরকম বাজে আচরণ করছে না।

    আজ ভার্সিটিতে যাবো। রান্না বান্না সেরে নিলাম। ছোটমাকে খাইয়ে দিলাম। আপুর হাত অনেকটা সেরেছে বিধায় নিজ হাতেই খেতে পারে।

    ____________________

    আজ ভার্সিটিতে নবীন বরণ। থার্ড ইয়ারে আমরা। সেজন্য প্রায় সব দায়িত্ত্ব আমাদের। প্ল্যান অনুযায়ী শাড়ি পরতে হবে। আমি রাজি ছিলাম না। শাড়িও ছিলো না আমার। কিন্তু রুশী বললো,“আমার শাড়ি পরার ভীষণ ইচ্ছে জেগেছে। তবে তুই না পরলে আমিও পরবো না।” রুশীর জোরাজোরিতে আর নাকোচ করার সাধ্য হলো না। এদিকে শাড়ি নেই বলে, অয়ন আর রুশী মিলে একটা লাল পাড়ের কালো শাড়ি কিনে দিয়েছে আমায়। সাথে ম্যাচিং অর্নামেন্টস।

    সকালে উঠে শাড়ির প্যাচ দিতে গিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে আমার। কিভাবে পরে? জানিনা তো আমি। বহুত মুশকিলে, ঘণ্টা দুইয়েক সময় লাগিয়ে হালকা পাতলা ভাবে শাড়ি জড়িয়ে নিলাম। আঁচল ছেড়ে দিলাম। হাঁটু লম্বা চুলগুলো মুক্ত রাখলাম। মুখে আহামরি কিছু দিলাম না। একটু খানি কাজল লাগালাম। রুশী বলে, আমার কাজল কালো চোখ নাকি ভীষণ নজর কাড়া। কানে রুশীর দেওয়া সিলভার ঝুমকা পরলাম। ব্যাস! এতেই হয়ে গিয়েছে।

    ভার্সিটিতে যাওয়ার আগেই রুশীর কল এলো। ওর আজকে আমাকে পিক করতে আসার কথা ছিলো। কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে বললো,“ঠিক আর কয় ঘন্টা লাগবে মহারানীর? সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছি। তোকে না বলেছি কখন বেরোতে হবে? দেড় ঘণ্টা লেট তুই। কই তুই? আর পাঁচ মিনিট টাইম দিচ্ছি। এখন না এলে আজ যাবোই না আমি।”

    কথাটা শেষ করেই ফোন কেটে দিলো। আমার কাছ থেকে কিছু শোনার অপেক্ষা করলো না। আমিও ফটাফট আরেকবার নিজেকে আয়নায় দেখে নিলাম। নাহ্! খুব একটা বাজে দেখাচ্ছে না!

    বাড়ি থেকে বেরোতেই বাইরে রুশীর গাড়ি দেখা গেলো। আমি এগিয়ে গেলাম। পেছনে মুখ গোমড়া করে অন্যদিকে ঘুরে বসে আছে। পরনে আকাশী রঙ্গা এক শাড়ি। ফর্সা দেহে এমন শাড়ি খুবই মানানসই। আর তা যেনো রুশীকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে।

    আমি ভেতরে ঢুকে বসলাম। আমি ঢুকতেই গাড়ি স্টার্ট দিলো ড্রাইভার। রুশী আমার আসার আভাস পেয়ে গাল দুটো আরো ফুলিয়ে বসলো। খানিকটা হেসে দিলাম।

    “আমাকে কেমন দেখাচ্ছে বলবি না?”

    আমার কথায় তাকালো না, ফুলো গালে বাচ্চামো স্বরে বললো,“কতক্ষন অপেক্ষা করিয়েছিস! কথা নেই তোর সাথে। যা!”

    আমি মিটিমিটি হেসেই যাচ্ছি। এতে ওর রাগ বাড়ছে বৈ কমছে না। আমি এই মিষ্টি মেয়েটিকে দেখছি। আমার বোন। হ্যাঁ! আমার বোন এটা। আমার চুপ হয়ে যাওয়া দেখে রুশী আমার দিকে চোখ তুলে তাকালো। আর চোখ সরালো না। রাগ সব জানালা দিয়ে বাইরে ছুড়ে মারলো। উল্লাসিত কন্ঠে বলল,“বীনু! তোকে কি সুন্দর লাগছে! আমি ছেলে হলে এখনি তোকে কি*ড*ন্যা*প করতাম।”

    আমি ফিক করে হেসে ফেললাম ওর কথায়।

    __________________

    চারিদিকে উৎসবমুখর পরিবেশ। পুরো ভার্সিটি সজ্জিত হয়েছে নতুন আমেজে। আমি আর রুশী ক্যাম্পাসে এসে খুঁজে চলেছি অয়নকে। পুরো ক্যাম্পাস আধঘন্টা ধরে খুঁজলাম। কোথাও নেই। হাপিয়ে উঠলাম দুজনেই। একেতো শাড়ি পরেছি, তার উপর শাড়ি পরে দৌড়াচ্ছি। উফ!

    ফাইনালি স্টেজের পেছনে দেখা মিললো। কাজে ব্যাস্ত আছে অয়ন। পরনে ব্লু মিক্সড সাদা পাঞ্জাবি। রুশীর দিকে তাকালাম এক পলক। তার স্থির দৃষ্টি সামনে দাড়িয়ে থাকা এই সুদর্শন পুরুষটির উপর। চোখে ভালোবাসার এক সাগর রয়েছে। মনে কি রয়েছে?

    আমি হাত নেড়ে অয়নের দৃষ্টি আকর্ষণ করলাম। অয়ন মুখে হাসি ফোটালো এদিকে তাকিয়ে। আমি রুশীর হাত ধরলাম। এগিয়ে যাচ্ছি অয়নের দিকে। অয়ন রুশীকে দেখে প্রশস্তিত হাসি সংকোচিত করলো। মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে রইলো এই শুভ্র রঙ্গা মেঘ পরীর দিকে। আঁখি পল্লব মেলতে যেনো ভুলে গিয়েছে। কোনো পুরুষের কাছে তার ভালোবাসার নারী, নিশ্চয়ই ভুবন ভোলানো সৌন্দর্যের অধিকারিণী।

    এদের দুজনের এভাবে তাকিয়ে থাকা দেখে আমার নিজেকে কাবাবে হাড্ডি মনে হচ্ছে। ইশ! এরা যেনো শতজনমের চক্ষু তৃষ্ণা মেটাচ্ছে।

    “আজ স্পেশাল গেস্ট হিসেবে কে আসবে জানিস?”—পাশ থেকে ফাইনাল ইয়ারের একটা আপুর আওয়াজে ধ্যান ভাঙলো আমার। আপুটি তার একজন ফ্রেন্ডকে উদ্দেশ্য করে কথাটি বলছে। না চাইতেও এদের কথোপকথন আমার কর্নে ভেসে আসছে। সামনের মেয়েটি বললো,“তুই জানিস না কে আসবে?”

    মেয়েটির “না” বোধক ইঙ্গিতের প্রেক্ষিতে বলে উঠলো,

    “তৃষ্ণা”

    নামটি শুনতেই অপর মেয়েটির মুখের আদল বদলে গেলো। শুধু মেয়েটি না। পাশে দাড়িয়ে থাকা সবাই উত্তেজিত হয়ে পড়লো। আমি কিছু বুঝতে না পেরে তাদেরই একজনকে জিজ্ঞেস করে বসলাম,“তৃষ্ণা কে আপু?”

    তারা যেনো আমার কথাটি শুনে তব্ধা খেয়ে গেলো। সবগুলোর মুখ “হা” আকার হয়ে গেলো। আমি অবুঝ নয়নে চেয়ে রইলাম। একটা আপু বলেই বসলো,“সিরিয়াসলি তুমি তৃষ্ণা কে চেনো না?”

    আমি মাথা দুইদিকে নাড়িয়ে না ইশারা করলাম। একজন আপু নিজেকে শান্ত করেও উত্তেজিত কন্ঠে বলল,“তৃষ্ণা হচ্ছে আমাদের সবার ক্রাশ। আমরা যখন ফ্রেশার ছিলাম, তখন ফাইনাল ইয়ারে ছিলো। বর্তমানে নামকরা সিঙ্গার। মানা যায়, তুমি সিনিয়র তৃষ্ণাকে চেনো না। কিন্তু সত্যিকি সিঙ্গার তৃষ্ণাকে চেনো না?”

    আমি পুনরায় “না” ইশারা করলাম। গান শোনা হয়না আমার। কি করে শুনবো? সে সময় আছে? একটা আপু বললো,“তার নীল চোখ! উফ! হাজারও মেয়ের খুন হয়েছে…”

    অন্য একজন আপু বললো,“তার হাসিটা কি সুন্দর! কতো মেয়ে পাগল হয়েছে..”

    পাশের আরো একজন বললো,“পার্সোনালিটি দেখেছিস! পুরোটাই ক্রাশ ম্যাটেরিয়াল।”

    আমি প্রস্থান করলাম। একটা ছেলেকে নিয়ে এতো বলার কি আছে? আমার পিছে পিছে রুশী ও অয়নও এলো। এতোদিন আমি শুধু গেস করেছিলাম, অয়নের মনে রুশীর জন্য ফিলিংস আছে। আজ বুঝে নিলাম, দুজনের মনেই দুজনকে নিয়ে অনেক বেশি কিছুই আছে।

    কিছুটা দূরে নজর যেতেই দেখলাম একটা মেয়ে কাঁদো কাঁদো মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে। এগিয়ে গেলাম মেয়েটির কাছে। গ্রীন স্যুট পরা মেয়েটিকে শ্যামবর্ণবিশিষ্ট রূপবতী বলা চলে। মুখশ্রীতে ঘনকালো আঁধার। কেনো?

    পাশে দাড়িয়ে কাঁধে হাত রাখলাম। মেয়েটি কেঁপে উঠলো। আমার দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলো। কি মায়ায় ভরা চাহনি! হৃদযন্ত্র ধুক করে উঠলো আমার। দুবার নিশ্বাস ছাড়লাম। তৃতীয়বার নিশ্বাস নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,“কি হয়েছে? আমাকে বলতে পারো। আমি তোমার বোনের মতোই।”

    মেয়েটির বিষন্ন নয়নের কার্নিশে দু ফোঁটা অশ্রু জমা হয়ে উঠলো । ভার হৃদয় থেকে উচ্চারিত হলো,“আপু!”

    আমি “হুঁ” বলায় মেয়েটির অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। আমি পুনরায় জিজ্ঞেস করলাম,“কি হয়েছে?”

    মেয়েটি বললো,“ঐ ছেলেটি ডিস্টার্ব করছিলো আপু।”

    “কোন ছেলেটি?”

    মেয়েটি হাত দিয়ে কিছুটা দূরে, বাইকে বসে থাকা একটা ছেলেকে ইশারা করে দেখলো। ছেলেটি আমাদের ব্যাচের। অন্য ডিপার্টমেন্টের। তবে যতটুকু জানি, ভীষণ উচ্ছল।

    মেয়েটির হাত ধরে বললাম,“চলো, আমার সাথে চলো।”

    আসার পথে জিজ্ঞেস করলাম,“নাম কি তোমার?”

    “দীপ্তি”

    তখনই কানে একটা গান এলো। যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম। থেমে গেলাম।

    “চুরায়া হি কিউ যাব ওয়ো তোড়না হি থা?

    দিলভী ওয়ো টুটা হ্যায় যো মেরে পাস নেহি

    দিখায়া হি কিউ যাব মুহ মোড়না হি থা?

    সিনে মে হাওয়া তো হ্যায় পার ওয়ো সা‌‌স নেহি হ্যায়

    মেরে পাস নেহি হ্যায় কই সাথ নেহি হ্যায়

    যো বাতা দে মুঝে বাত ইয়ে খাস নেহি

    দিল উদাস সেহি হ্যায় কই আস নেহি হ্যায়

    পাগলী আখো কি নামী ইয়ে বারসাত নেহি

    ম্যায় ভি না জানে কাহা খো গেয়া থা

    জিন্দেগি মুঝসে খাফা হো গ্যায়ী

    জিস দিন কি ইস দিল নে খুদসে মোহাব্বত

    তো জিন্দেগি ভি মুঝসে ফিদা হো গ্যায়ি

    মেরে পাস নেহি হ্যায় কই সাথ নেহি হ্যায়

    অর না হ্যায় আব কিসিকা ইন্তেজার কাহি

    তেরে বারে মে না সৌচু অ্যায়সা রাত নেহি হ্যায়

    পার তু তোরে দিল মেরা তেরি ঔকাত নেহি

    অঙ্খো মে ধুঁয়া থা ম্যায়নে দেখাহি নেহি

    খুশি পিছে হি থি খারী দাবে ইয়ে হাসি

    দিল ভি বোলা, সুন বাওয়ারে আখিও কি দুশমান

    না ম্যায় কাভি টুটা থা না খোয়া থা কাভি

    তেরে পাস ইয়েহি হুঁ ইয়ে আওয়াজ ম্যায় হি হুঁ

    ইয়ে কাহানি তেরি মেরি হ্যায় ইয়ে জামানে কি নেহি

    ম্যায় ধারাক্তা রাহু, তু ভি ইউ হাসতা রাহে

    দুনিয়া জায়ে সালি ভার মে কই পারওয়া হি নেহি

    এক রাত জাগা মে ম্যায়নে দেখা থা সাওয়েরা ”

    আওয়াজে অন্য কিছু ছিলো। হারিয়ে গিয়েছিলাম গানটিতে। চারিদিকে সবাই চিল্লিয়ে উঠলো। মেয়েদের কণ্ঠ বেশি শোনা যাচ্ছে। সবার মুখে একটাই শব্দ। তৃষ্ণা..!

    চলবে…

  • অদ্ভুত আসক্তি (পর্ব-৩)

    অদ্ভুত আসক্তি (পর্ব-৩)

    চারিদিকে নিরবতা বিরাজ করছে। কেউ কিছু বলার সাহস পাচ্ছে না। কিছুক্ষণ আগে আরহানের মুখে ডাকটা শুনে বিরক্তিতে রুদ্রের কপাল কুঁচকে এলো। বিরক্তিবোধটা আরহানের ও হচ্ছে। আরহান মেয়েদেরকে এড়িয়ে চলে যথাসম্ভব। কিন্তু এটাকে চাইলেও এড়াতে পারে না। অনেকটা ঘাড়ে চড়ে বসেছে টাইপের।

    রূপ উল্লাসিত কন্ঠে বলে উঠলো, “কতোদিন তোমাকে দেখিনি বেইবি। তাই চলে এলাম। খুশি হওনি?”

    আরহান মনে মনে ভাবছে,পেত্নী ঘাড়ে চাপলে বুঝি কেউ খুশি হয়!

    তবে সামনে বললো,“এসেছো, ঠিক আছে। কিন্তু নেক্সট টাইম থেকে নক করে আসবে। ইট’স ম্যানার্স।”

    রূপ অপমানিত বোধ করলো।

    “আচ্ছা আমি তাহলে পরে আসি।” —কথাটা বলেই বেরিয়ে গেলো রূপ। মিটিং হচ্ছে বিধায় বেরিয়ে গেলো, আরহান একা থাকলে শত অপমানেও যেতো না। রূপ যেতেই আরহান ছোট্ট করে একটা শ্বাস ফেললো। রুপ্তি আরহানের চাচাতো বোন। ছোট করে সবাই রূপ বলে ডাকে। চাচা পরিবারসহ লন্ডন থাকে। আরহানের বাবার দেশের বাইরের বিজনেস বর্তমানে তার দায়িত্বে। রুপের একটি ছোট বোন আছে। নাম মাহী। ভীষণ শান্ত প্রকৃতির।

    আরহানের বাবার মৃত্যু লন্ডনেই হয়েছিলো। এরপর চাচা একা বিজনেস সামলাতে হিমশিম খাবে বলে, ঐ দেশটিতে থেকে গিয়েছিলো চার বছর। এই চার বছরে সবচেয়ে বেশি বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল রূপ। মেয়েটি গায়ে পড়া টাইপের। আরহানের এসব সহ্য হয়না। এজন্যই তো যতো তাড়াতাড়ি পেরেছে, সব কিছু গুছিয়ে দেশে ফিরে এসেছে। এখান থেকেই সব সামলাচ্ছে আরহান। আজ দুবছর পর রূপকে দেখে বিরক্তির চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেলো সে।

    _____________________

    বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে। পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়া রক্তিম সূর্যরশ্মি দেখা যাচ্ছে। বাদবাকি পুরো আকাশ ধূসর রঙ্গা হয়ে আছে। প্রকৃতি নিস্তেজ। পাখিরা সব নিজ নিজ নীড়ে ফিরে গিয়েছে। আর আমি ব্যালকনিতে দাড়িয়ে ঐ আকাশের পানে তাকিয়ে আছি। সন্ধ্যার আকাশে সবচেয়ে উজ্জ্বল এক তারা দেখা যাচ্ছে। শুকতারা! চাঁদের পাশে কি সুন্দর জ্বলজ্বল করছে! মনের মাঝে এক ইচ্ছে জেগে এলো। ইশ! যদি আমি নিজের একান্ত ব্যক্তিগত চাঁদ পেতাম, তবে আমি তার শুকতারা হতে চাইতাম। মনের ইচ্ছে মনেই রয়ে গেলো। তীব্র আকাঙ্খা নিষিদ্ধ বস্তু, আমার জন্য।

    দুপুরে মীরা আপুকে খাবার খাইয়ে দিয়ে, ঔষধ দিয়ে, ঘুমোতে বলে চলে এসেছি। সারা বিকেল আমার কাটলো আকাশের দিকে তাকিয়ে। ভাবনায় ছিলো, সেই ছায়ামানবের কথা। ভাবনায় আরো এলো, এই দুদিনের ঘটনা। রাস্তার ঐ লোকটির নির্মম মৃ​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​ত্যু, ছোটমার ছাদ থেকে পড়ে যাওয়া, মীরা আপুর এই অবস্থা। সবটা এক সুতোয় গাঁথা। ধোঁয়াসে এক রহস্য। এই ছায়ামানবকে আমি গত এক মাস ধরে অনুভব করছি। অনুভব করছি ঘণ্টার পর ঘন্টা তার তাকিয়ে থাকা। তবে আমি এতো কিছু অনুভব করা সত্ত্বেও চোখ মেলতে পারছিলাম না। গতকাল কেনো পারলাম? প্রথম কয়েকদিন আমি স্বপ্ন ভেবেছি। ভয় পেয়েছি। ছোটমাকে বলায় উনি বলেছিলেন,“যতসব ঢং আর আদিক্ষেতা। নিশ্চয় সারাদিন ছেলে মানুষের সাথে লেগে থাকিস। এজন্যেই স্বপ্নে এসব দেখিস।” এরপরও স্বপ্ন ভেবে অবজ্ঞা করে এসেছি। তবে কাল সকালে গলার এই দাগে নিশ্চিত হয়েছি, এটা স্বপ্ন না। বাস্তবে কারো স্পর্শ পাচ্ছি, প্রতিটি রাতে। কিন্তু সে রাতেই বা আসছে কেনো? আর এভাবে স্পর্শ কেনো করছে? লোকটা কি খারাপ? তবে স্পর্শগুলো ভালোবাসাময় ছিলো কেনো?

    আর ভাবতে ইচ্ছে হচ্ছে না। বেশি চিন্তা করলে মাথায় ব্যাথা হয় আমার। এই যেমনটা এখন হচ্ছে। রুমে চলে এলাম। ছোট মায়ের জন্য টেনশন হচ্ছে। কি অবস্থায় যে আছে! দুপুরে একবার বাবাকে কল দিয়েছিলাম। রিসিভ করেননি। তাদের মীরা আপুর কথাও জানানো হয়নি।

    কিচেনে চলে এলাম। উদ্দেশ্য রাতের খাবার তৈরি।

    _____________________

    মিটিং শেষ করে মাত্রই আরহান চেয়ারে হেলান দিয়ে বসেছে। বড্ড চিন্তিত সে। মাথায় বিশাল এক ঝামেলা। কবে যে শেষ হবে এই ঝামেলা! কবে যে ধরতে পারবে, পুরনো শত্রুর সেই গুপ্তচরকে! কবে যে শেষ করতে পারবে তাকে! তবেই না নিজের প্রিয়তমাকে নিজের কাছে আনতে পারবে।

    “আরহান বেইবী! চলে এসছি।”—কথাটি রুপের। আরহানের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে। আরহান উপরে না তাকিয়েই ভ্রু কুচকে ফেললো। হাতের দুটো আঙ্গুল চালালো কপালে। আবার এসে গিয়েছে!

    কিছুক্ষণ পর আরহান রুপের দিকে তাকিয়ে ঝাঁঝালো কন্ঠে বললো, “এখানে কি?”

    রুপের উজ্জ্বল মুখশ্রীতে ঘন কালো মেঘ নেমে এলো। কণ্ঠস্বর আলতো করে বললো, “তুমি চলে এসেছো দুবছর আগে, তোমাকে ছাড়া ভালো লাগে না। চলে এলাম। কজ আই….”

    “স্টপ..”

    বাক্য সম্পূর্ণ করার আগেই রূপকে থামিয়ে দিলো আরহান। কেননা সে জানে, রূপ এখন কি বলবে। প্রায় শতাধিক বার বলে এসেছে এই কথাটা। কিন্তু সে তো তার প্রিয়তমা ছাড়া কাউকে ভাবে না। সে এসব কেয়ার করেনা।

    রূপ চুপ হয়ে গেলো। নিরবতা ভেঙ্গে ফেললো মিনিট তিনেক সময় নিয়েই। তীক্ষ্ণ কন্ঠে বলে উঠলো, “তুমি বার বার আমাকে রিজেক্ট করো কেনো? কি নেই আমার? লন্ডনে ছেলেরা আমার হাত ধরার জন্য লাইন ধরে আছে, সেখানে আমি নিজেই তোমার কাছে নিজেকে বিলিয়ে দিতে চাচ্ছি। আর তুমি পাত্তাই দিচ্ছো না।”

    “কজ আ’ম নট লাইক আদার্স”—কথাটি বলে আরহান চেয়ার থেকে নিজের ব্লেজার এক হাতে নিয়ে চলে গেলো। রূপ সেখানেই ঠায় দাড়িয়ে রইলো।

    আরহান বাইরে যেতেই রুদ্র তার পাশে এলো। আরহানের সাথে হাঁটতে হাঁটতে অফিসের বাইরে চলে এলো। আরহান গাড়ির ফ্রন্ট সিটে ও রুদ্র ড্রাইভিং সিটে বসে পরলো। গাড়ি স্টার্ট দিয়েই বললো,“স্যার! এইটা কেনো এসেছে?”

    আরহানের দৃষ্টি জানালার বাইরে গিয়ে পড়লো। রাস্তার পাশে বসে থাকা একজোড়া কপোত কপোতীকে দেখে মৃদু হাসলো। আওয়াজের ভঙ্গিমা অন্য সময়ের তুলনায় অনেকটা পাল্টে গেলো। বললো,“ভালোবেসে..”

    আসলে, ভালোবাসার অন্য একটা শক্তি আছে। পাথরকেও গলাতে সক্ষম এটা। এখানে আরহানতো র​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​ক্তে মাং​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​সে গড়া মানুষ। এজন্যই ভালোবাসার নাম নিতেই ঠোঁট প্রসারিত হয়ে এলো। হয়তো সত্যিকারের ভালোবাসার উপলব্ধি তারও আছে।

    আরহানের এই একটি শব্দের মানে রুদ্রর জানা আছে। তবে এটা জানা নেই, তার স্যার কেনো এই মেয়েটিকে গ্রহণ করে না। চেহারায় রয়েছে এক রাজ্য সৌন্দর্য আর মনে রয়েছে আরহানের জন্য অগাধ ভালোবাসা। তবে ফিরিয়ে দেওয়ার কারণ কি? রুদ্র জিজ্ঞেস করে বসলো,“তাহলে স্যার, মেয়েটিকে বিয়ে করতেই তো পারেন। একদিন না একদিন বিয়ে করতেই হবে। সেটা একে করলেই তো হয়।”

    আরহান রুদ্রের দিকে তাকালো। চোখে রয়েছে কারো জন্য এক সমুদ্র ভালোবাসা। যেকোনো নারী এই চোখের গভীরে ডুবে ম​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​রতে বাধ্য। তাইতো রূপ মরেছে। হ্যাঁ! ম​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​রণ হয়েছে তার, এই গম্ভীর চক্ষুজোড়ার মাঝে।

    আরহানের ঠোঁট দুটো কেঁ​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​পে উঠলো। কম্পনরত ঠোঁট দ্বারা উচ্চারিত হলো,“সব ভালোবাসা পূর্ণতা পায় কি?”

    রুদ্র দমে গেলো। এই বিষয়ে আর কোনো প্রশ্ন তোলার সাহস নেই। কারণ সে নিজেও এমন একজনকে ভালোবেসে বসে আছে, যাকে পাবার কোনো সম্ভাবনা নেই। আরহানের “সব ভালোবাসা পূর্ণতা পায় কি?”—কথাটির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত সে নিজেই।

    কিছু দূর এগোতেই আরহানের ফোনের মেসেজ টিউন বেজে উঠলো। হাতে নিলো ফোন। মেসেজটা পড়ে বাঁকা হাসলো। যেনো এটা অনেক বড় কোনো প্রাপ্তি। রুদ্রকে উদ্দেশ্য করে বলল,“পুরনো গোডাউনে চলো।”

    রুদ্র গাড়ি ঘোরালো। ওদের ফ্যাক্টরির পুরাতন গোডাউনটা খালি পড়ে আছে। প্রায়শই আরহান নিজের গোপন কিছু কাজ করে এখানে। যেমনটা এখন করতে যাচ্ছে।

    __________________

    অন্ধকার একটা রুম। উপরে একটা লাইট জ্বলছে। আলোর তেজ খুব একটা না। তীব্র এই অন্ধকারে এই লাইটটি দ্বারা শুধু মাঝের দুটো চেয়ার দেখা যাচ্ছে। একটিতে বসেছে আরহান এবং অপরটিতে একটা লোক। দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে লোকটিকে। শরীরে ক্ষ​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​তের চিহ্ন স্পষ্ট। মুখ দিয়ে র​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​ক্ত বেরোচ্ছে। বেধো​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​রক মা​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​রা হয়েছে লোকটিকে। আরহান মৃদু কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,“তৃষ্ণা কোথায়?”

    লোকটি কোনো পাত্তা দিলো না। আরহান রুদ্রের উদ্দেশ্যে বললো,“এর ফোন কোথায়?”

    রুদ্র তড়িঘড়ি করে বলে উঠলো,“আবদুলের কাছে।” তার স্যারের এই শান্ত কণ্ঠের মানে জানে সে। খুবই ভয়াবহ কিছু হবে। পাশে সিরিয়ালে দাড়িয়ে থাকা আরহানের লোকগুলোর মাঝে, আবদুল নামের লোকটি মাথা নিচু করে এগিয়ে এলো আরহানের কাছে। আবদুল ফোন এগিয়ে দিতেই, সে ফোন হাতে তুলে নিলো। লক করা না থাকায় বাঁকা হাসলো। কল লগে থাকা “বস” নামটা দেখেই রুদ্রকে ইশারা করলো। আরহানের ইশারা করে মাত্রই রুদ্র ফোন নিয়ে প্রস্থান করলো।

    আরহান চেয়ারে বেঁধে রাখা লোকটির দিকে একপলক তাকিয়ে পুনরায় বাঁকা হাসলো। পাশে থেকে ছু​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​রি উঠিয়ে, সোজা লোকটির শ্বাসনালী বরাবর চালিয়ে দিলো। এক ছু​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​রিকাঘা​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​তেই নিশ্বা​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​স বন্ধ হয়ে এলো। মেঝেতে লুটিয়ে পড়লো লা​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​শ। র​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​ক্ত ছিটকে এলো আরহানের চোখ-মুখে। হাতের আঙ্গুল দিয়ে ছু​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​রির র​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​ক্ত মুছে বললো,“তোমাকে পাবার আরো ধাপ কমে গেলো শুকতারা..”

    চলবে…

  • অদ্ভুত আসক্তি (পর্ব-২)

    অদ্ভুত আসক্তি (পর্ব-২)

    “ছেড়ে দিন আমাকে। দোহায় লাগে!”

    কথাটি অশ্রুসিক্ত নয়নে বলছি আর দৌড়াচ্ছি। কয়েকটা ছায়া আমার দিকে এগিয়ে এলো। মুখে শয়তানি হাসি। চোখে যৌনক্ষুধা জ্বলজ্বল করছে। লোলুপ এক দৃষ্টি উপহার দিচ্ছে তারা আমায়। আমি তো দৌড়াচ্ছি আর তারা হেঁটে আসছে। তবুও আমি এগোতে পারছি না। কিছুক্ষণ বাদে আমি পুনরায় তাদের উদ্দেশ্যে বললাম,“আমার এতো বড় সর্বনাশ করবেন না…”

    লোকগুলো আমার খুব কাছে চলে এলো। আমাকে ছুঁয়ে ফেলবে ফেলবে ভাব, তখনই হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো। চোখ মেললাম। সোজা হয়ে শুয়ে থাকলেও মাথাটা আমার ডানকাত হয়ে আছে। দেয়ালে চোখ গেলো। বড্ড বড় এক ছায়া দেখছি। ছায়া অনুসরণ করে বা দিকে তাকালাম। একদম কোনায় একটা বিড়াল দাড়িয়ে। গায়ের রং কালো কুচকুচে। চোখ দুটো রক্ত লাল। আস্তে পায়ে এগিয়ে এলো আমার দিকে। আমি উঠতে চাচ্ছি। দৌড়াতে চাচ্ছি। এখন থেকে সরতে চাচ্ছি। কিন্তু আমি তাকিয়ে থেকে ভয় পাওয়া ছাড়া পৃথিবীর সকল কাজে এই মুহুর্তের জন্য অক্ষম। নিজের কোনো অক্ষমতা কখনো এতটা পোড়াবে, জানতাম না। বিড়ালটি আমার খুব নিকটে চলে এসেছে। সামনে থেকে আরো ভয়ঙ্কর। চোখ দুটো আমার বিশাল আকৃতির বড় হয়ে গিয়েছে। না পারছি চিল্লাতে আর না পারছি এখান থেকে সরতে। হুট করে বিড়ালটি আমার উপরে লাফ দিলো। দেওয়ার সাথে সাথে এটিও হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো।

    ঝট করে আখি পল্লব মেললাম। সারা শরীর ঘেমে আছে আমার। শরীর থরথর করে কাপছে। ভয় যে কতটা পেয়েছি, তা এখন আমার চেহারা দেখলে যে কেউ বলে দিতে পারবে। এতো বাজে স্বপ্ন এর আগে দেখিনি। হয়তো কালকের দিনের প্রভাবটা অনেক বাজে ভাবে পরেছে। বেশ কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে বসে রইলাম। মাথা ঝিমঝিম করছে। কিছুক্ষণ বাদে চোখ মেললাম। শরীরের ব্যাথা কমেছে। তবে খুব একটা না। কপালে হাতের পিঠ ঠেকিয়ে দেখলাম, জ্বর নেই। বুঝতে পারছি না এসব কি করে হলো। রাতে সেই ছায়ামানবকে দেখেছি, এই অবদি মনে আছে আমার। কিন্তু, এরপর?

    মাথায় চাপ পরলো। হালকা যন্ত্রণা অনুভব করলাম। ভার হয়ে আছে মাথা। রাতের জোরালো খিদের রেশ মাত্র নেই। কেনো? আস্তে আস্তে করে বিছানা থেকে উঠে দাড়ালাম। শক্তি কম। ঢলে পরে যাচ্ছি। দেয়ালে হাত রেখে ভর দিয়ে দাড়ালাম। উন্মুক্ত পায়ে হাঁটতে গিয়ে কিছু একটা পায়ে বাঝলো। মাথা নিচু করে তাকালাম। ঔষদের পাতা! খানিক নিচু হয়ে হাতে তুলে নিলাম ঔষধের পাতাটি। হাতে উঠিয়ে দেখলাম, এটা প্যারাসিটামল। এখানে কেনো? জ্বর লেগেই থাকে আমার। এজন্য ঘরে এই পাতাটি থাকা আবশ্যক। তবে মজার কথা হচ্ছে, আমি খাইনা। ওভাবেই পরে থাকি। সেই হিসেবে পুরোটা থাকার কথা। কিন্তু একটা ঔষধ নেই এখানে। তবে কি আমি ঘুমের ঘোরে খেয়েছি?

    কিছুক্ষণ ভেবে বেড সাইড টেবিলে ঔষধটি রাখার উদ্দ্যেশে সেদিকে তাকালাম। ভ্রু কুচকে এলো। কারণ আমার সামনে রয়েছে একটি খাবারের প্যাকেট, যা সম্পূর্ণ ফাঁকা। প্রচন্ডরকম ভাবে বিস্মিত হলাম। এই! আমি কি সত্যি ঘুমের ঘোরে খেয়েছি? কিন্তু এগুলোতো বাইরের খাবার। এনেছে কে?

    সবকিছু কেমন যেনো অদ্ভুত লাগছে। কে করছে এসব? বিরক্তি বোধ করছি এবার। এতো রহস্যময় জীবন আমার জন্য না।

    কথা গুলো ভাবছি। এই ফাঁকে ঘড়িতে একবার সময় দেখতে তাকালাম। চোখ চড়কগাছ। বেলা এগারোটা বেজে গিয়েছে। যেখানে আমি ঘুম থেকে বাড়ির সকলের আগে না উঠলে শুনতে হয় গালি, খেতে হয় মার। সেখানে আজ কেউ কিচ্ছুটি বললো না? অসম্ভব ব্যাপার!

    ফ্রেশ হয়ে রুমের বাইরে পা রাখলাম। পিনপতন নিরবতা বিরাজমান। ছোটমার রুমে উঁকি দিলাম। নাহ্! নেই। ড্রইং রুম, কিচেনেও কেউ নেই। ছাদেও খুঁজেছি। পুরো বাড়ি খুঁজলাম। আমি ছাড়া একটা মানুষের চিহ্নও নেই। কোথায় গেলো তারা? কি হয়েছে জানার জন্য বাবাকে কল লাগলাম।

    প্রথম কলে রিসিভ হলো না বলে, পুনরায় কল দিলাম। এবার বাবা ওপাশ থেকে কল রিসিভ করতেই আমি বললাম,“বাবা! আপনারা কোথায়?”

    বাবা বিরক্তি প্রকাশ করলেন,”তা জেনে কি করবে? নিজের এক মাকে খেয়ে শান্তি হয়নি বলে আরেক মাকে খাচ্ছো?“

    আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। নিশ্চয় ছোটমা আবার কিছু বলেছে। আমিও কপাল করে একটা বাপ পেয়েছি। কিন্তু কি হয়েছে বুঝে উঠতে না পারায় আবার জিজ্ঞেস করলাম, “বলুন না! কি হয়েছে?”

    বাবা রাশভারী কন্ঠে বললো,“হসপিটালে আছি। তোমার মা ছাদ থেকে পরে গিয়েছিল আজ। হাত আর কোমরের হাড় ভেঙেছে।”

    একটু বিস্মিত ও খানিকটা ব্যথিত হলাম। তারা যতোই আমাকে কষ্ট দিক, আমি কখনো খারাপ চাইতে পারিনা। আর তাদের এমন কিছুতো কখনোই চাইনা। মনে কষ্ট অনুভূত হলো, ভীষণ রকমের। বাবাকে শুধালাম,“কোন হসপিটাল, বলুন! আমি এখনই আসছি।”

    বাবা নাকচ করে কল কেটে দিলো। রুমে চলে গেলাম। ভালো লাগছে না। মীরা আপুও বোধ হয় ওখানেই আছে।

    চোখ ঘুরাতেই টেবিলের উপর একটা চিরকুট নজরে এলো। এগিয়ে গিয়ে হাতে তুলে নিলাম। সেখানে গোটা গোটা অক্ষরে লেখা, “বাঁচিয়ে রাখলাম, কজ ইউ লাভ দেম”

    ________________________________

    “বস! মেয়েটিকে কিডন্যাপ করে আনা হয়েছে। এরপর কি করবো?”

    “এপ্লাই দ্যা পানিশমেন্ট নাম্বার সিক্স..”

    বাঁকা হেসে এই কথাটি সামনে দাড়িয়ে থাকা দুটো লোকের উদ্দ্যেশে বললো আরহান। লোক দুটি একসাথে “ইয়েস বস” বলে চলে গেলো। তাদের চলে যাওয়ার পর আরহান স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো সামনের দেয়ালে টানানো এক ছবির দিকে, যার উপর লাল রঙ্গা এক পর্দা আছে। সোফা ছেড়ে উঠে দাড়ালো। কয়েক কদম এগিয়ে গিয়ে ছবিটির উপর ফেলে রাখা পর্দা সরিয়ে ফেললো। দেখা যাচ্ছে একটি মিষ্টি মেয়েকে। পরনে তার সাদা সুতির একটা থ্রি পিস। মাথায় ওড়না দেওয়া। ভীষণ শালীন। মোহময় হাসি মেয়েটির। হাসছে সেই মেয়েটি। হাসছে তার চক্ষুদ্বয়। মায়াবী এই মুখশ্রীতে রয়েছে একরাশ পবিত্রতা, বিশুদ্ধতা। নেই কোনো হিংসে, অহংকার।

    আরহান পকেটে দুই হাত গুজে বললো, “তোমাকে ভালোলাগার নির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই। হয়তো তুমি এক আসক্তি, আমার ভীষণ প্রিয় আসক্তি। তবে বড্ড অদ্ভুত এই আসক্তি।”

    আরহান আফসাদ খান। দ্যা মাফিয়া কিং অফ দ্যা কান্ট্রি। পুরো দেশের আন্ডারগ্রাউন্ড বর্তমানে তার আন্ডারে। দেশের বাইরেও তার আধিপত্য বিরাজমান। এছাড়াও এখানে নিজের অনেক বড় একটা বিজনেজ রয়েছে। খুবই ইন্ট্রোভার্ট প্রকৃতির আরহান। দেখতেও আকর্ষিত। পরিবার বলতে আছে এক মা ও কলেজে পড়ুয়া ছোট্ট বোন। বোনের নাম নিশা।

    বাবা গত হয়েছেন বছর ছয়েক আগেই। মূল কারণ ব্যবসায় বেশ লাভবান হওয়া। ব্যবসায় শত্রুর অভাব ছিলো না। তাদের হাতেই নির্মম ভাবে খুন হতে হয়েছে আরহানের বাবাকে। বুদ্ধি হবার পর আরহানের চোখ প্রথম সেদিন অশ্রুসিক্ত হয়েছিলো। এদের শাস্তি দেওয়ার লক্ষেই মূলত এই রাস্তা নিয়েছে আরহান। শাস্তি দিতে সক্ষম। কিন্তু নিজের নামের সাথে লেগে থাকা “মাফিয়া” শব্দটি ছাড়তে পারেনি। বড় বড় লোকেরা আরহানের এক নাম শুনলেই ভয়ে কাঁপে। আর আরহান ভয়ে পায় তার প্রিয়তমার কষ্টে। কোনো মায়াবিনীর মায়া কাটানো এতোটা সহজ ব্যাপার না।

    দরজার করাঘাতের শব্দ মস্তিষ্কে গিয়ে বিধলো আরহানের। বিরক্তিবোধ করলো। ছবিটির উপর পর্দাটি মেলে দিয়ে পুনরায় সোফায় গিয়ে আয়েসি ভঙ্গিতে বসলো। দরজার ওপাশের ব্যক্তিটির উদ্দ্যেশ্যে বললো, ”কাম..”

    লোকটি ভেতরে এলো। এসেই বললো, “এবার না থামালে মেয়েটা মরে যাবে”

    আরহান একপলক তাকালো রুদ্রের দিকে। আরহানের পিএ। বিশ্বস্ত খুবই। বিগত দশ বছর ধরে আরহানের সাথেই আছে রুদ্র। পৃথিবীতে রুদ্রের নিজের বলতে এক বাবাই ছিলো। রুদ্রের বাবা আরহানের বাবার বন্ধু ছিলেন। বিশেষ বন্ধু। কোনো এক দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে বছর দশেক আগে পরলোক গমন করে রুদ্রের বাবা। তারপর থেকেই সে আরহানের সাথেই থাকে। আরহান রুদ্রকে নিজের ছোট ভাইয়ের মতো স্নেহ করে।

    আরহান ঠোঁট কিঞ্চিৎ বাঁকা করে হাসলো। বড্ড গম্ভীর এক হাসি। কারো হাসিতেও গম্ভিরতা থাকতে পারে, তা আরহানকে না দেখলে জানতে পারবে না কেউ। রুদ্রকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো,“বাড়ি পাঠিয়ে দাও।”

    রুদ্র প্রস্থান করলো। মেয়েটি আর কেউ নয়। মীরা ছিলো।

    ______________________

    মা হসপিটালে এডমিট। বাবা ওখানেই আছে। একতলা বিশিষ্ট বাড়ি বিধায়, ছাদ থেকে পরে যাওয়ায় তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। শুধু বয়সের কারণে কোমরের হাড় আর হাত ভেঙেছে, পায়ে কিছুটা লেগেছে। তবুও এ’ই অনেক। ছোটমাকে হসপিটালে থাকতে হবে কিছুদিন। এদিকে বাবা আমাকে হসপিটালের নাম অবদি বলেনি।

    কিছু শুকনো খাবার খেয়ে নিলাম। ভালো লাগছে না কিছুই। হয়তো ভার্সিটিতে গেলে ভালো লাগতো। পড়ালেখায় ছোট থেকেই বেশ মনোযোগী আমি। মা মারা যাওয়ার পর মামা, আমাকে তার কাছে নিয়ে যেতে চেয়েছিলো। ছোট মা আহ্লাদী হয়ে বলেছিলো, “আমাদের মেয়েকে নিয়ে যাওয়ার অধিকার নেই আপনার। ওর বাবা বেঁচে আছে। আর ওর মা নেই তো কি হয়েছে? আমি আছি।”

    তখন বয়স এতটাই কম ছিলো, যে মা হারানোর বেদনা বুঝিনি। আর না বুঝতে পেরেছিলাম সৎমায়ের চালাকি। ফ্রীতে চাকরানী কেউ হাত ছাড়া করতে চায় নাকি? ছোট মা ও সেটা ভেবেই আমাকে রেখে দিয়েছিলো। দিন যেতেই আসল রূপ দেখিয়ে দিয়েছিলো। আমার পড়াশুনো নিয়ে ঘোর আপত্তি পোষণ করতেই, মামা রুখে দাড়িয়েছিল। আমাকে নিয়ে যেতে চেয়েছিলো। দমে যায় ছোট মা। বাধ্য হয়ে আমাকে পড়াশুনো করার অনুমতি দিয়েই দেয়। কিন্তু যথাসম্ভব কষ্টে রাখার চেষ্টা করে। সারাদিন কাজ করাতে থাকে। কাজ না থাকলে তৈরি করে দেয়। বিয়ে দিতে চায়নি। ঐযে! ফ্রীতে চাকরানী কেউ হাতছাড়া করে নাকি?

    জ্বর বেশ কমেছে। একটা ব্যাথার ঔষধ খেয়ে নিলাম। যার কেউ থাকে না, এই দুনিয়ায় চলতে গেলে নিজেকেই তার সব হতে হয়। ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নিলাম। চুলগুলো আঁচড়িয়ে মাথায় ওড়না প্যাচাতেই কলিং বেলের আওয়াজ আমার কর্ণকুহরে এলো।

    মীরা আপু! ভাবনায় প্রথমে মীরা আপুর নাম এলো। পা দুটো গতিশীল হয়ে উঠলো আমার। দরজা খুলতেই মেঝেতে মীরা আপুকে পরে থাকতে দেখলাম। ভয়ে চোখ দুটো বড়সড় হয়ে গেলো। কথা বেরোচ্ছে না। সামনে রক্তাক্ত অবস্থায় মেঝেতে পরে আছে মীরা আপু। মীরা আপু আধো আধো চোখে আমাকে দেখছে। ডান হাতটি খানিক উঁচু করে আমার দিকে বাড়ালো। দেখেই বোঝা যাচ্ছে খুব কষ্ট হচ্ছে। আমার চোখের কার্নিশে একবিন্দু পানি এসে জমা হলো। হাজার হোক, আমিতো আপন ভাবি এদের। মীরা আপুর হাতের উন্মুক্ত যতটুকু জায়গা আছে, সবটুকুতেই কাটা। ব্লেড দিয়ে কুচি কুচি করে কাটলে যেমন দেখা যায়! ঠিক তেমন। তবে শুধু চামড়ায়। যে এটা করেছে, সে খুব সাবধানতা অবলম্বন করেছে। যেনো আঘাত করাই তার মূল উদ্দেশ্য, মেরে ফেলা নির্দেশের বাইরে।

    দ্রুত গিয়ে মীরা আপুকে তুললাম। এতো রক্ত দেখে মস্তিষ্ক ব্ল্যাঙ্ক হয়ে যাচ্ছে আমার। এ কেমন অবস্থা হয়েছে আপুর? আপুকে নিয়ে তার রুমে গেলাম। দেখেই কষ্ট লাগছে ভীষন। আলমারির প্রথম ড্রয়ার থেকে একটা বক্স বের করলাম। এখানে ড্রেসিং করার প্রায় সব উপকরণই আছে। ড্রেসিং করে দিলাম, অতি সাবধান হয়ে। এরপর ননস্টিক গজ দিয়ে মুরে দিলাম।

    ছোট মায়ের আদরের মেয়ে। একটা ফুলের টোকাও লাগতে দেয়নি। বাড়ির ছোট থেকে সব ধরনের কাজ আমি করে এসেছি। আপুকে কোনোদিন পানিটা অবদি ভরে খেতে হয়নি। আজ তাদের দুজনেরই একই অবস্থা! খারাপ লাগা আরো জেকে বসলো। আপুকে শুয়িয়ে দিয়ে আমি রুমে চলে এলাম। ভাবনায় পরক্ষণেই সকালের সেই চিরকুটের কথা চলে এলো। লেখা ছিল,“বাঁচিয়ে রাখলাম”

    তবে কি ঐ লোকটা? তখন খেয়াল ছিলো না। ওসব নিয়ে ভাবতে পারিনি। এখন খেয়ালে এলো, এই চিরকুট কে রেখেছে? সেই ছায়ামানব? যে প্রতিরাতে আমার কাছে আসে! তবে ধরা না দিয়েই চলে যায়। যার প্রতিটি স্পর্শে মিশে আছে এক তীব্র অনুভূত! অবশ্যই সেই অনুভূতিটি ভালো লাগার। তবে কি এই হিংস্রতা তারই বহিঃপ্রকাশ?

    মীরা আপুকে একা রেখে ভার্সিটিতে যাওয়া উচিত হবে না। নিজের রুমে গেলাম। ব্ল্যালকনিতে গিয়ে দাড়ালাম। গ্রিল নেই। চেয়ে রইলাম ঐ ধূসর রঙের আকাশের দিকে। ঠোঁট দুটো কম্পিত হলো। মৃদু স্বরে উচ্চরণ করলো, “ভাগ্য কি কখনো আমায়ও এক এমন প্রহর দেবে? যেই প্রহরে আমি থাকবো আমার একান্ত ব্যক্তিগত মানুষটির সাথে!”

    _______________________

    হাই হিল দ্বারা খটখট শব্দ করে এগিয়ে এলো এক নারী। রূপসী বলা যায়। দেখতে ভীষণ আকর্ষণীয়। তবে যে কেউ প্রথম দেখায় বলে দিতে পারবে, এই আকর্ষণ কৃত্রিম। মুখে এক ইঞ্চির মেকআপ। পরনে ক্রপ টপ।

    আরহান ওর অফিসে ছিলো। মিটিং চলছিলো। সেখানে আরহান, রুদ্র ও আরো অনেকেই ছিলো। হুট করে মেয়েটি নক না করেই দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলো। আরহান, রুদ্রসহ সেখানে উপস্থিত সকলের দৃষ্টি এই নারীর দিকে।

    আরহান মৃদু আওয়াজে বলে উঠলো, “রূপ!”

    চলবে…

  • অদ্ভুত আসক্তি (পর্ব-১)

    অদ্ভুত আসক্তি (পর্ব-১)

    গভীর রাতে ঘুমের মধ্যেই কারো ঠোঁটের উষ্ণ স্পর্শ গলায় অনুভূত হলো। এটা নতুন না। প্রতিরাতেই হয়। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে, আমি অনুভব করলেও, শত চেষ্টায়ও চোখ খুলতে পারি না। রোজকার নিয়ম অনুযায়ী আজকেও এই পুরুষালি হাতের বাঁধন আরো জড়ালো হয়ে আমাকে আবদ্ধ করলো নিজের আলিঙ্গনে।

    হৃদপিণ্ডের প্রতিটি স্পন্দনগুলো আমাকে নিয়ে গেলো এক ঘুমের রাজ্যে।

    সকালের মৃদু আলোয় পিট পিট করে চোখ খুললাম। গত রাতের কথা মনে হলো। প্রতিবারের মতো এবারও জানার আকাঙ্খা বেড়ে গেলো, এই ছায়ামানবকে। আচ্ছা, স্বপ্ন কি এটা?

    ঘড়িতে বাজে ছয়টা। দ্রুত উঠে নিলাম। কাজ করতে হবে বাড়ির। এবাড়িতে আমি মেয়ে হয়ে জন্মালেও, থাকি এক চাকরানীর মতো। সৎমায়ের বাড়ি এটা, রাজত্ব করে সৎ বোন। বাবাও আমাকে মায়ের মৃত্যুর কারণ বলে অগ্রাহ্য করে এসেছে।

    উঠে ফ্রেশ হয়ে এলাম। পানির ছিটে গলায় লাগতেই জ্ব​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​লে উঠেছিলো। রুমে এসে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়ালাম। চোখ বড় বড় হয়ে এলো। তার মানে সেসব স্বপ্ন ছিল না? সব সত্যি ছিলো?

    আয়নাতে গলার নিচের তিলে কালচে আবরণ দেখা গেলো। হাত দিয়ে স্পর্শ করলাম জায়গাটুকু। খানিক জ্ব​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​লন হচ্ছে।

    আমি অর্শিয়া বীনি। ভার্সিটিতে পড়ি। জন্মের পাঁচ বছর বয়সে মা মা​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​রা যায়। এরপরের বছর আব্বু বিয়ে করে নেন, আমার খেয়াল রাখার জন্য। কিন্তু হলো উল্টো। দিন দিন ছোট মায়ের কথায় আব্বুও আমাকে অপছন্দ করা শুরু করে দেন। ছোট মা আব্বুর কাছে আমার নামে অনেক উল্টা পাল্টা বকেছে। যার জন্য এতো অবহেলায় থাকতে হচ্ছে আমাকে।

    “কিরে নবা​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​ব​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​জা​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​দী! ঘুম ভাঙ্গেনি? এতগুলো কাজ কি তোর ম​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​রা মা এসে করে দিয়ে যাবে?”

    ছোট মায়ের ডাকে খেয়াল এলো। ভাবনা থেকে বের হয়ে ছোট মাকে বললাম, “আসছি আমি।”

    ছোট মা আমার সাথে এমন করেই কথা বলে। এটা তাও ভালো ভাবে বলেছে, একটু রেগে গেলে আমার ম​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​রা মাকে নিয়ে গালিগালাজ শুরু করে দেয় ছোট মা। খুব ইচ্ছে হয় নিজের একান্ত ব্যক্তিগত মানুষের কাছে চলে যেতে। কিন্তু আমার এই ছোট্ট জীবনে নিজের বলতে কেউ নেই।

    ______________

    রান্না করতে আজ দেরি হয়ে গেছে বিধায় সকালের খাবার জোটেনি কপালে। এরকম অনেক সকাল অভুক্ত থেকেছি। এটা ব্যাপার নাহ্!

    ভার্সিটির উদ্দেশ্যে বেরোলাম। বাড়ি থেকে বেরোতেই এক শান্তি অনুভব করলাম। নিজেকে হাল্কা লাগছে। অনেক ভারী একটা বোঝা বুক থেকে ঐ বাড়িতেই নামিয়ে রেখে, উড়ে চলছি গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। বাড়ি থেকে হেঁটে যেতে সময় লাগে ঘন্টা খানেক। টাকা নেই আমার কাছে। এজন্য হেঁটেই যাই।

    হাঁটতে হাঁটতে বেশ খাইনকটা দূরে এসে পরলাম। খেয়ালে এলো, কেউ একজন আমার পিছু নিচ্ছে। আমি দাড়িয়ে পরলাম। শুনশান রাস্তায় পায়ের ঠক ঠক আওয়াজও থেমে গেলো। আমি পিছে না ঘুরেই আবার চলতে শুরু করলাম। পায়ের ঠকঠকানির আওয়াজও গতিশীল হলো। কিছুক্ষণ বাদে লোকটি আমার হাত ধরে, আমাকে থামিয়ে দিল। গায়ের শিরা উপশিরায় একটা ঘিনঘিনে ভাব চলে এলো। পেছন ফিরে দেখলাম। একটা লোক। চেহারায় নে​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​শাখোর ছাপ। বুকটা ধুক করে উঠলো। আশে পাশে তাকালাম। কেউ নেই। মস্তিষ্ক উত্তেজিত হয়ে পরলো। কি হবে এখন?

    কাঁপা কাঁপা কন্ঠে লোকটির উদ্দেশ্যে বললাম, “ছছেড়ে দদিন, আমি কিন্তু চিল্লাবো!”

    লোকটি একটা শয়তানি হাসি উপহার দিয়ে বললো, “নাগো শুন্দুরী! এমন সুযোগ হাতছাড়া করার মতো বোকা আমি না। তুমি চিল্লিয়ে নিজের শক্তি অপচয় না করে কাছে এসো। তুমিও মজা পাবে।”

    আমি লোকটির কথায় ঘৃণামিশ্রিত কন্ঠে বললাম, “ভভালো হচ্ছে না কিন্তু, লোক ডাকবো!”

    আমার এহেন কথার প্রেক্ষিতে লোকটি দমে না গিয়ে হাসির তেজ বাড়িয়ে দিলো। তখনই আবার খেয়ালে এলো এটা একদম জনমানব শূন্য এলাকা। ভয়ে মরি মরি অবস্থা। এখন হাইপার হলে একদম চলবে না। খানিকক্ষণ চুপ থেকে মস্তিষ্ক শান্ত করলাম। লোকটি আমাকে চুপ হতে দেখে ভরকে গেলো। আমি এই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে লোকটির মেইন পার্ট বরাবর এক লাথি দিলাম।

    লোকটি ওখানে হাত রেখে পিছিয়ে নিচে পরে গেল। ব্যাথায় কাবু হয়ে গিয়েছে। গলার তেজ আরো বাড়িয়ে বলল, “শা​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​লী! আজকে তোকে আমার হাত থেকে কেউ বাঁচাতে পারবে না। এই রাস্তা দিয়েই তো তোর ফিরতে হবে।”

    আমি ভার্সিটির রাস্তা ধরে দিলাম এক ভো-দৌড়। ভার্সিটির গেটের পাশে এসে দাড়িয়ে পরলাম। বুকে এক হাত আর কোমরে এক হাত রেখে জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছি। একটু আগের ঘটনার কথা মনে পরতেই সমস্ত শরীর কাঁপুনি দিয়ে উঠলো। অনেক ভয়ঙ্কর এক বিপদ থেকে বেঁচে ফিরলাম।

    এমন সময় একটা হাত আমার কাঁধের উপরে এসে ঠেকলো। ভয়ে ওদিকে না তাকিয়েই আবারও চিৎকার করে উঠলাম। আমায় চিৎকার করতে দেখে আমার পেছনে দাড়িয়ে থাকা ছেলে ও মেয়ে উভয়েই চিল্লিয়ে উঠলো। ওদের আওয়াজ পেয়ে আমি চুপ হয়ে পিছে ঘুরে ভ্রু কুচকে তাকালাম। আমার সামনে আমার বেস্ট ফ্রেন্ডস দাড়িয়ে। রুশী আর অয়ন।

    আমি ওদের দুজনের বাহুতে, আমার দুটো হাত দিয়ে আলতো করে মেরে বললাম,

    “চিল্লাচ্ছিস কেনো তোরা?“

    থেমে গেলো ওরা। রুশী নিজ হাতে, বাহুতে বুলিয়ে বলল, “তুই এরকম ম​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​রা চিৎকার কেনো শুরু করেছিস?“

    অয়ন ব্যথিত কন্ঠে বললো, “মা​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​রলি কেনো?“

    আমি দুজনেরই উত্তর দিলাম, “আমি না হয় ভয় পেয়েছি বলে চিল্লালাম। তোরা তো কানের মাথা খেয়ে ফেলেছিস।”

    কথা আর বাড়াতে না দিয়ে নিজে ক্যাম্পাসে ঢুকে গেলাম।

    জীবনে এতশত না পাওয়ার ভিড়ে একটা বিশাল পাওনা ওরা আমার। আমার সুখের এক ঠিকানা। এরা আছে বলেই আমি বেদনায় ভরা জীবন নিয়ে দিব্যি বেঁচে আছি। ভালো নাইবা থাকলাম। বেঁ​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​চে যে আছি, এটাই বা কম কিসের?

    ক্যাম্পাসে ঢুকতেই রুশী আমার হাত ধরে টেনে ক্যান্টিনে নিয়ে গেলো। ওখানে গিয়ে খাবার অর্ডার দিয়ে একটা টেবিলে বসলো। পাশেই অয়নও বসেছে।

    রুশী আমার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বললো, “দেখেই বোঝা যাচ্ছে, আজও না খেয়ে আসতে হয়েছে। খেয়ে নে। পরে বাকি কথা।”

    আমি নাকচ করতেই অয়ন বলে উঠলো, “তোর গু​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​ষ্টির পি​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​ন্ডি চ​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​ট​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​কা​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​চ্ছি না, এটা তোর ভাগ্য ভালো। আর একটা কথা বললে তোর সৎমাসহ তার আগের ঘরের মেয়েকেও পু​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​তে দিয়ে আসবো। আর তোর বাপকেও ছা​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​ড়বোনা। খা।”

    শেষ উক্তিটি বেশ জোরালো গলায় বলেছে। ইতিমধ্যে ক্যান্টিনের সকলের দৃষ্টি আমাদের দিকে। আমি খাওয়া শুরু করলাম। আমাকে খেতে দেখেই এরা ক্ষ্যা​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​ন্ত হলো।

    ________________

    দুপুরের কড়া রোদে বাসার উদ্দ্যেশে যাচ্ছি। রাস্তা ঐ একই। আগে যেই রাস্তা দিয়ে আসতাম, সেই রাস্তায় কাজ চলছে বিধায় কিছুদিনের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এজন্যই মূলত এই নির্জন রাস্তায় চলতে হচ্ছে। কিছুদূর এগোতেই পুলিশ আর মানুষের ভিড় দেখা গেলো। একটা প্রশান্তির ছোট্ট শ্বাস ফেললাম। কিন্তু এখানে এতো মানুষ কিসের? ভিড় সরিয়ে এগিয়ে গেলাম। সামনে তাকাতেই আমি চিৎ​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​কার করে, তৎক্ষণাৎ দূরে ছিটকে পরলাম। চক্ষু কোটর থেকে বাইরে বেরিয়ে যায় অবস্থা। এমন কিছু দেখার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। চোখের সামনে মাটিতে পরে আছে দুপুরের ঐ লোকটার বি​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​দ্ধ​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​স্ত লা​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​শ। লা​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​শটির চোখ দুটো দিয়ে র​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​ক্ত ঝরছে। আর ডান হাত, যেটি দিয়ে আমাকে ছুঁয়েছিল, তা কে​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​টে পাশে ফেলে রাখা। এমন ভয়া​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​বহ মৃ​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​ত্যু আমি এর আগে কখনো দেখিনি। কে আর কেনোই বা এই কাজ করেছে। ইতিমধ্যে সকলের নজরের মধ্যমণি হয়ে উঠেছি।

    এদিকে আমার এতো র​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​ক্ত দেখে মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিচ্ছে। চোখ বন্ধ করে জোরে দুটো শ্বাস টানলাম। যে বা যারাই এই কাজ করেছে, সে বা তারা যে কতটা হিং​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​স্র, তা এই লা​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​শ দেখলেই বোঝা যাবে। আমি দ্রুত প্রস্থান করার উদ্দ্যেশে উঠে দাড়ালাম। এক নজর আবারও এই হিং​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​স্রতা দেখে নিলাম। চোখ ঘুরিয়ে নিতেই একটু দূরে একটা র​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​ক্তে রাঙা সাদা রুমাল চোখে বাঁধলো। কৌতূহল না দমাতে পেরে ওখানে গিয়ে রুমালটা হাতে নিলাম। এক কোনায় র​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​ক্তের ছো​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​প আর অপর কোনায় লাল সুতোয় ছোট করে একটা অ্যালফাবেট “A” লেখা। পুলিশ ভিড় কমাচ্ছে। সকলে চলে যেতে ধাক্কাধাক্কি লেগে যাচ্ছে। রুমালটা ব্যাগে ঢুকিয়ে আমিও চলে এলাম।

    ___________________

    বাড়ি ফিরতেই আবারও কর্ণকুহরে ভেসে এলো রুটিন মাফিক সেই অশ্রা​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​ব্য গালি। তবে আজকের গুলো অন্য রকম। ছোট মায়ের কর্কশ কন্ঠস্বর আমাকে শোনাচ্ছে, “নবাবজাদী দিন দিন নাগ​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​র যুটাচ্ছে। বাড়ি বয়ে এসে হুমকি দিয়ে যায়। রোজ বাইরে বেরোয় তো শরীর বি​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​ক্রি করতেই। নাহলে এই বে​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​*শ্যার আছেই বা কি? কতো টাকা দেয় তোকে ঐ ছেলে? আমরা কি তোকে কম খাওয়াচ্ছি? কম পড়াচ্ছি? তোকেই বা আর কি বলবো? হয়েছিস তো মায়ের মতো। তোর মা শরী​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​র বেচেছে আর তুইও সেই পথেই চলছিস।”

    ছোট মাকে থামিয়ে দিয়ে বললাম, “চুপ করো! তুমি এতক্ষণ আমাকে বলেছো, আমি শুনেছি। আমার মৃ​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​ত মাকে নিয়ে আর একটা কথাও বলবে না। দোহায় লাগে।”

    কথাটা বলতে বলতেই কেঁদে দিয়েছি। ছোটমা দ্রুত আমার সামনে এসে এক হাতে চুলের মুঠি শক্ত করে ধরে বললো, “কি বললি তুই? আমাকে ধমকাস তুই? তোর এতো সাহস! আজ তোর সাহস বের করছি।”

    এরপর মীরা আপুর উদ্দেশ্যে বললো, “স্টোর রুম থেকে দড়ি আর বেত নিয়ে আয় তো মীরা। এই হারা​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​মজাদি উড়তে শুরু করে দিয়েছে, ডানা কাটতে হবে।”

    মীরা আপু খুশি মনে “আনছি” বলে চলে গেলো স্টোর রুমের উদ্দেশ্যে। আপুকে ভীষণ ভালোবাসি আমি। সব কথা মেনে চলি। তবুও জানিনা, কেনো আপু আমার কষ্ট দেখে শান্তি পায়। হয়তো ফ্রীতে সিনেমা দেখতে পাওয়ার এক লোভ এটা। কিছুক্ষণ পর দুজনে মিলে আমাকে দড়ি বেঁধে নিচে ধা​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​ক্কা মে​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​রে ফ্লোরে ফেলে দিলো। ছোট মা আমাকে বেত দিয়ে মা​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​রা শুরু করলো। একেক ঘা​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​তে আমার চিল্লানো বাড়ি কাঁপিয়ে তুলছিলো। আমার আহাজারীতে পাথর গলতে রাজী। কিন্তু আফসোস! এরা পাথরের চেয়েও অ​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​ধম।

    আধা ঘন্টা টানা পে​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​টাবার পর এরা ক্ষ্যা​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​ন্ত হয়। আমার শরীরের প্রতিটি লোমকূপ এই নি​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​র্মম অত্যা​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​চারের সাক্ষী। আগেও এভাবে মে​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​রেছে। তবে প্রতিবার এতোটা গভীর ভাবে ক্ষত হয়নি, তারা করেননি। আজ কি এমন রাগ? যার জন্য এমন অমানবিক নি​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​র্যাতনের শিকার হলাম? আমার বাঁধন খুলে তারা নিজ নিজ রুমে চলে গেলো। মাটিতে হামাগুড়ি দিয়ে আমিও গেলাম নিজের রুমে। কি কষ্ট হচ্ছে আমার! একাকী এই দুনিয়ায় কষ্ট ছাড়া আমার নিজস্ব বলতে আর কিছু নেই।

    ওরা আমায় মে​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​রেছে। অভিযোগ নেই। ওরা আমার কেউ নয়। এজন্য কোনো রাগ নেই ওদের উপর। রাগ তো হচ্ছে নিজের উপর। রাগ হচ্ছে আমার মায়ের উপর। কেনো আমাকে একা রেখে গেলো? কেনো এই নিষ্ঠুর দুনিয়ায় আমাকে মরতে দিয়ে চলে গেলো? তার চেয়েও বেশি রাগ হচ্ছে আমার জন্মদাতার উপর। সে পিতা নয়। একটা কলঙ্ক।

    রাগে-কষ্টে-দুঃখে-ক্ষোভে ওয়াশরুমে ঢুকে শাওয়ার ছেড়ে নিচে বসে রইলাম। এই পানি আমার অশ্রুকণা লুকোতে সাহায্য করছে। প্রতিটি পানির ফোঁটায় অসহ​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​নীয় যন্ত্র​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​ণা সহ্য করছি। হ্যাঁ! করতেই হবে আমাকে। মানুষ একা আসে, একা যায়। মাঝখানে তৈরি হয় কিছু রক্তের ও আত্মার সম্পর্ক। যার একটিও আমার নেই। এটাতো সামান্য শরীরের ক্ষত, যা নজর এড়াতে অক্ষম। কিন্তু মনে যেই রক্তক্ষরণ হচ্ছে, এটা কে দেখবে? শরীরের অনেক জায়গা কে​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​টে গিয়েছে। জ্বলছে ভীষণ ভাবে। আল্লাহ! আমাকে কেনো এতো কষ্ট দিচ্ছো? আমি কি খুব খারাপ? ব্যাথা আর সহ্য না করতে পেরে চোখ দুটো বুঁজে এলো। আমার তো আর কেউ নেই, ম​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​রে পরে থাকলেও কেউ খোঁজ নিতে আসবে না। হয়তো অনন্ত কষ্টের সাগরে তলিয়ে গিয়ে আমিও চলে যাবো পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে।

    _____________________

    হালকা হালকা করে চোখের পাতা দুটো খুললাম। শরীরে এখনও পানি পরছে দেখে উপরে তাকালাম। বাঁকা হাসলাম। নিজের ভাগ্যকে উপহাস করে বললাম, “কি সুন্দর ভাগ্য আমার!”

    এখনও ওয়াশরুমে পরে আছি আমি। শরীরের ব্যাথা বেড়েছে আরো কয়েক গুণ বেশি। তাপমাত্রাও বেড়েছে। এতক্ষণ ব্যাথা শরীর নিয়ে ভিজেছি, জ্বর না আসলে বরং সেটা খারাপ দেখাতো।

    এতো কষ্ট সহ্য করেছি, খানিকটা নাহয় আরো সহ্য করলাম। এটা ভেবে উঠে রুমে গেলাম। আমার এই ছোট্ট দুনিয়ায় কষ্টের পরিমাণ এতো বেশি নাহলেও পারতো। চেঞ্জ করে প্রতিবারের মতো একটা ফুল স্লিভস এর কামিজ পরে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম। ক্ষত লুকোনোর প্রয়াস এটা। আরেকবার বাঁকা হাসলাম। জ্বরের মাত্রা অত্যধিক পরিমাণে বেড়েছে। খিদেও ভীষণ পেয়েছে। সকালে ওদের জোরাজোরিতে যা খেয়েছিলাম। তারপর আর পানি অবদি গলা দিয়ে নামেনি। নামবেও না। ওভাবেই ঘুমিয়ে গেলাম।

    মাঝরাতে আবারও সেই ছায়ামানবের আগমন ঘটেছে। আমার ঘুম কিছুক্ষণ আগেই ভেঙেছে। খিদে আর অসহনীয় যন্ত্রণায় ঘুম আসছে না আর। পিটপিট করে চোখ খুলতে সক্ষম আমি। লোকটির অবয়ব দেখে আবিষ্কার করলাম, বলিষ্ঠ দেহের লম্বা এক পুরুষ। আমার পাশে এসে বিছানায় বসে পরলো। অন্ধকারে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে না। লোকটি আমার ডান হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিলো। পরম যত্নে চুমু খেল হাতের পিঠে। দুপুরে যখন সেই লোকটি আমার হাত ধরেছিলো তখন ঘৃণা জেগেছিলো মনে। তবে এই লোকটির স্পর্শে সুখ অনুভূত হচ্ছে। লোকটি এক হাতে আমার হাতটি ধরে রেখে আমার বা গালে নিজের ডান হাত রাখলো। কপালে আরো এক উষ্ণ স্পর্শ এঁকে দিলো। আবেশে চোখ বুজে নিলাম। গালে রাখা হাতটা কানের নিচ দিয়ে রেখে বৃদ্ধাঙ্গুল গালে বুলিয়ে বলেছে, “তোমাকে ছোঁয়ার অধিকার আমি কাউকে দিইনি শুকতারা।”

    চলবে…

  • প্রেম-বিয়ে এবং বিচ্ছেদ উপাখ্যান (শেষ পর্ব-৩)

    প্রেম-বিয়ে এবং বিচ্ছেদ উপাখ্যান (শেষ পর্ব-৩)

    এবার ঐ বিশ্ববিদ্যালয়েই লেকচারার হিসাবে জয়েন করে তনু, পায়ের নীচে মাটি পায়, মেয়েকে পাশের ভাবীর কাছে রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতে যায়, বাসায় ফিরে ছাত্র পড়ায় আবার সংসার,সন্তানও সামলায়,এরপর সারাদিন পরে বিশ্রাম নেওয়ার সময় শুরু হয় তার উপর শারীরিক এবং মানসিক নিযার্তন,

    আনোয়ার এখন আর সেই অমিত নাই,তার মনে বাসা বেধেছে তার স্ত্রী পরকীয়া করে, তার স্ত্রী তার থেকে বেশী ইনকাম করে, সমাজে তার স্ত্রীর মযার্দা তার থেকে বেশী,তার স্ত্রী তার পরিবারের সাথে যোগাযোগ রেখেছে। এসব সহজভাবে মেনে নিতে পারে না আনোয়ার এখন নেশা ছাড়া থাকতে পারে না, তনু’কে এমনভাবে নিযার্তন করে তনু যেনো অন্য কাউকে সেটা বলতে বা দেখাতে না পারে, শরীরের গোপন অংগ সিগারেটের আগুনে পুড়িয়ে দেয়, আনিকা রোজ রাতে তার বাবার এই অত্যাচারের একমাত্র স্বাক্ষী।

    আনিকার যখন পাঁচ বছর বয়স তখন জন্ম হয় আয়ানের, ততোদিনে আনিকার দাদীর সাথে ওদের একটা যোগাযোগ তৈরী হয়েছে, হয়তো নাতি নাতনিদের কথা মনে করে তিনি ও আর দূরে থাকতে পারেননি। কিন্তু আনোয়ার আরো জানোয়ার হয়েছে। একদিন ওদের মারামারি এমন পযার্য় পৌছায় যে ছোট্ট আনিকা বুঝতে পারে মাকে বুঝি বাবা মেরেই ফেলবে,

    সে দৌড়ে কাছেই তার নানী বাড়ীতে যেয়ে বলে, নানী মাকে নিয়ে আসো না হলে বাবা মাকে মেরে ফেলবে, একথা শুনে তনু’র মা আর চুপ করে থাকেনি দৌড়ে যায় মেয়ের কাছে, মেয়ে ততোক্ষনে ঘুমের ঔষুধ খেয়ে অচেতন হয়ে আছে, ছোট্ট আয়ান কেঁদে চলেছে, আনোয়ার হাতে ছুরি নিয়ে বসে আছে, ভয়াবহ দৃশ্য, সিনেমাও হার মানে, প্রতিবেশীদের সহায়তায় ঐ দিনই তনু কে নিয়ে চলে আসে ওর মা। বিয়ের দশবছর পর একটা অধ্যায় শেষ করে তনু নতুন করে বাঁচার চেষ্টা করে, অবলম্বন তার মা আর দুই সন্তান।

    একটু সুস্থ হয়ে তনু বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরীটায় আরো মনোযোগী হলো, সেই সাথে আবার শুরু করলো উচ্চতর ডিগ্রী নেওয়ার চেষ্টা, সুযোগ ও হয়ে গেলো, ফুল স্কলারশীপ নিয়ে চলে গেলো বিদেশে, ছেলে মেয়েদের রেখে গেলো ওর মায়ের কাছে। ওদের বাবা মাঝে মাঝে এসে দেখে যায়।

    ওরা আবার বাবার খুব ভক্ত, আনোয়ার বাবা হিসাবে তার সন্তানদের কাছে শ্রেষ্ঠ বাবা। তনু তার মায়ের বাড়ীতে আসার পর থেকে আনোয়ারের সাথে সবরকমের যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়, কিন্তু আনোয়ার ও কম যায় না সে ভার্সিটিতে যেয়ে সময় অসময়ে তনুকে বিরক্ত করতে থাকে, তার একটাই দাবী তনু তার বিবাহিত স্ত্রী সুতরাং যেভাবেই হোক তনুকে তার কাছে ফিরে আসতে হবে।

    তনু এখন আর এগুলো পাত্তা দেয় না, সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে আর কখনই সে ফিরে যাবে না, আর তনু’র মা আর বোনেরা ও তনুকে ফিরে যেতে দেবে না। বিদেশ থেকে উচ্চতর ডিগ্রী নিয়ে ফিরে আসে তনু, বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ তাকে প্রমোশন ও দেয়। এতদিনে মানসিক দিক থেকে কিছুটা স্বস্তি পেয়েছে, কিন্তু আনোয়ারের উৎপাত বন্ধ হচ্ছে না,এখন আবার মেরে ফেলার হুমকি ও দিচ্ছে, তনু দ্বিতীয় দফায় স্কলারশীপ নিয়ে আবারো উড়াল দেয়, এবার যাবার আগে ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দিয়ে যায়, যখন ফিরে আসে ততোদিনে ডিভোর্স কাযর্কর হয়ে গেছে। এবার আরো একটা প্রমোশন, ছেলে মেয়ে দুটোই এতদিনে বেশ বড় হয়েছে। আনিকা ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে, আয়ান ক্লাশ নাইনে পড়ে। তনু’র মা এখন বৃদ্ধা, তার কাছে থেকে সেবা করে তনু আর ভাবে মায়ের সেবা করে যদি নিজের পাপের কিছুটা প্রায়ঃশ্চিত হয়।

    আনোয়ারের ও বয়স বেড়েছে, ওর ও অনেক পরিবর্তন, সে এখন সমাজ সেবা করে, দুঃস্থ-নিপীড়িত মানুষের সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছে, একজন মুসলিম হিসাবে যা যা করণীয় সবই করছে, ছেলেমেয়েদের প্রতি করণীয় কাজ গুলো করে,

    তনুকে আর বিরক্ত করে না ,জীবিকার জন্য ছোট একটা ব্যবসা দাঁড় করিয়েছে, নেশা থেকে ফিরে এসেছে, যখনই কারো বিপদ দেখে সবার আগে সেখানে সে হাজির হয়, তার মাকে মাঝে মাঝে তার কাছে এনে রাখে, ছোট একটা বাসায় সে একা থাকে, ছেলে মেয়েরা ও মাঝে মাঝে গিয়ে বাবার সাথে থাকে।

    এখন আনিকা আর আয়ান দু’জনেই ওর বাবা মাকে বলে তোমরা মিলে যাও, তাহলে তো আমরা একসাথে থাকতে পারি, আনোয়ারের ইচ্ছা থাকলে ও তনুর কোন ইচ্ছাই নাই। তনুর পরিবারের সদস্যরা, ওর বন্ধু মহল, পরিচিতি জন সবাই মিলে তনুকে বোঝাতে লাগলো, আবার দু’জন এক হওয়ার জন্য, মানুষই তো ভুল করে আবার সে সংশোধন ও হয়, আনোয়ার নিজেকে সংশোধন করেছে, তনু রাজী হয় না,

    সেই পুরানো স্মৃতি তার মনে পড়ে, আজ সে সমাজে প্রতিষ্ঠিত,সামাজিক মরযাদা ও অন্য ও যে কারো থেকে বেশী, এখন আর কোন মোহই তাকে টানে না, সে ও নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছে সৃষ্টির সেবার কাজে, দু’বছর আগে হজ্ব পালন করেছে,ধর্ম-কর্ম আর মানুষের সেবাই তার ব্রত,সে আর নিজেকে বন্দী করে রাখতে চায় না,

    সে আজ জনপ্রিয় একজন শিক্ষক ওদিকে আনোয়ার ও একজন জনপ্রিয় সমাজ সেবক। ওদের এই পরিবর্তন দেথে ওদের এলাকার একজন আলেম নিজেই এগিয়ে আসলেন তারা দু’জন এক হলে চারজন মানুষ সুখের নীড় গড়তে পারবে, তিনিই প্রস্তাব পাঠালেন তনুর মায়ের কাছে এবং তাদের পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের কাছে, আলেম সাহেবের প্রস্তাবে সবাই রাজী তাদেরকে এক করার জন্য, দিন তারিখ ঠিক করে সবাই একসাথে বসলো, তনুও এবার স্বেচ্ছায় রাজী হলো। বারো বছর পর মিল হলো চারটি প্রাণের। আনিকা আর আয়ান দেখলো তাদের বাবা মায়ের নতুন বিয়ে।

    (সমাপ্ত)

  • কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিন সমুদ্র দর্শন (পর্ব-৭)

    কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিন সমুদ্র দর্শন (পর্ব-৭)

    সমুদ্র বিলাসের গেটের কাছে কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে হুমায়ুন আহমেদ এর স্মৃতি তে উদাস হওয়া মন টা নিয়ে এগিয়ে চাললাম প্রবাল সৈকতে। কাছাকাছি যেতেই দেখলাম অল্প অল্প জমে থাকা পানিতে ছোটো বড়ো অনেক প্রবাল পড়ে আছে। আমরা সব ভুলে কটকটে দুপুরে ছুটে গেলাম সেগুলোর কাছে। তারপর ছুটোছুটি হুটোপুটি! ফটোসেশান। একসময় ক্লান্ত হয়ে একটা ছাতার তলায় বসে জিরাপানি খেতে খেতে বিশ্রাম করছি, এমন সময় দেখলাম আট দশ বছরের কয়েকটি মেয়ে ঝিনুক শামুক খুঁটে এনে বিক্রি করছে। একটা মিস্টি মেয়ে আমাদের কাছে আসলে আমি তার থেকে দশ টাকা দরে দুটো মালা কিনে পরে নিলাম। এখনও একটা আছে আমার কাছে।

    আমরা সমুদ্রের দিকে মুখ করে তাকিয়ে বসে আছি।
    আল্লাহর সৃষ্টি কতই না সুন্দর! সুবহান আল্লাহ! তা দেখার সৌভাগ্য দান করায় অন্তর থেকে তার প্রতি কৃতজ্ঞ হলাম। আলহামদুলিল্লাহ!

    বামে দূরে দারুচিনি দ্বীপ হাত ছানি দিয়ে ডাকছে। কিন্তু উপায় নাই ফিরতি জাহাজে টিকেট কাটা আছে। অল্পক্ষণের মধ্যেই ফিরতে হবে। এইবার রাতে না থাকতে পারার কষ্টে বুকের মধ্যে হাহাকার করে উঠলো। আবার কি আর আসা হবে! কেন একটা রাতও থাকা হলো না। কিছুই তো দেখা হলো না। উনাকে থাকার কথা বলা যাবে না। দলছুট হবার ব্যাপার টা উনার নৈতিকতায় বাঁধবে। সত্যি বলতে কি আমিও পারতাম না। অবুঝ মন কত কথাই তো বলে ক্ষণে ক্ষণে! তাই বিষন্ন চিত্তে ফেরার পথ ধরলাম।

    কেউ টম টম পেল কেউ পেলাম না। আমরা দুই ফ্যামিলি টম টম না পেয়ে রোদের মধ্যে ই হেঁটে হেঁটে জাহাজের কাছে পৌঁছালাম। যাত্রীতে ভরে গেছে। আমাদের জায়গা হল নিচে। প্রচন্ড গরম। অনেকে উপরে উঠে গেল। আমরা কয়েকজন নিচেই থেকে গেলাম। ইঞ্জিনের সামনে। তানভির এর মা এর ডায়বেটিস আর গরম দুটো ই বেশি। উনি পুরা বেহুশ হবার জোগাড়। একটা স্ট্যন্ড ফ্যান নিজের দিকে ফিরিয়ে রাখলেন। তার আবার ঢাকনা নাই। উনার সদ্য ছোটো করে ছাটা চুল ঢুকে যাছে। আমরা সবধান করে পারছিলাম না। উনি প্রচন্ড রেগে যাচ্ছিলেন। । একসময় উনার হাসবেন্ড ফেরদৌস ভাই কে ডেকে এনে উনাকে দিয়ে দিলাম।

    এরমধ্যেই প্রফেসর সাহেব তার টাক মাথা আর বিশাল বপু নিয়ে হাফ প্যান্ট পরা অবস্থায় একটা চেয়ারে ঘুমিয়ে পড়লেন। এবং সাথে সাথে বিকট আওয়াজে নাক ডাকতে লাগলেন। মজা পেয়ে উনার স্ত্রী সহ আমরা অনেকেই ভিডিও করে রাখলাম। পরে অবশ্য ডিলিট করে দিয়েছি।
    কিছুক্ষণ পরে সবাই জাহাজের উপরে উঠে এলাম।

    বাচ্চাদের খিদে পেয়েছে কিন্তু পর্যাপ্ত খাবার নেই। ওদের সাথে থাকা টাকা দিয়ে যে যার মতো করে খেয়েছে। একসময় অনেকেই দেখলো ভি আই পি লাউঞ্জে গিয়ে প্রফেসর সাহেব তার পরিবার নিয়ে চড়াদামে খাবার কিনে নিজেরা খাচ্ছে।

    এতে বাচ্চাদের খারাপ লাগে। ওরা আবারও মন খারাপ করলো। স্বান্তনা দিয়ে আমাদের মতো করে চা কফিতে ম্যানেজ করলাম। সন্ধ্যার পর টেকনাফে পৌছালাম।

    টেকনাফে এসে অন্ধকারে বাস খুঁজে সবাই চড়ে বসলাম। একেবারে বিদ্ধস্ত অবস্থা। কেউ কারো সাথে কথা বলার এনার্জি নাই। এভাবেই রাত সাড়ে নটা দিকে কটেজে এসে পৌছালাম। যে যার রুমে ঢুকে গোসল সেরে কাপড় বদলে নিচে নেমে গেল খাবার জন্য। আমরা চার পাঁচজন শেষে নামলাম।

    উদ্দেশ্য নিচের হোটেলে খেয়ে নেয়া। কিন্তু নিচে এসে শুনলাম সবাই ঝাউবন রেস্তোরাঁয় গেছে খেতে আমাদের ও যেতে হবে। উনি খুব বিরক্তহলেন। আমরা দুইটা টম টম ধরে চল্লাম। সাথে থাকা আজমাইনের ছোট্ট (তিন চার বছর) ভাই ইস্পার গায়ে জ্বর নিয়েই ওর আম্মুর কোলের মধ্যে ঘুমিয়ে গেল। রাস্তা ফাঁকা শুন শান। ভয়ে ও সাগর থেকে আসা বাতাসে শীত শীত করতে লাগলো।

    ফাতেমা হোসেন
    ২৭/৩/২২

  • জগতপুর সাদা বাড়ি এবং আমি (১)

    জগতপুর সাদা বাড়ি এবং আমি (১)

    স্কয়ার হাসপাতালে বসে আছি, একজন ডাক্তার দেখিয়েছি। আর একজনকে দেখাবো। মাঝে যেই বিরতিতে ও বললো- চা খাবে? বললাম -খাবো। আমি লেমন টি নিলাম ওকে বললাম তুমি কি চা খাবে? ও একটু হেসে বললো – তুমি যেটা খাবে তাই খাবো। হঠাৎ করে ওর চোখের মাঝে জলের মতো জমে থাকা ভালোবাসাটা আমায় ছুঁয়ে গেলো। ছোট্ট একটা কথা যে বলে সে হয়তো জানেই না কি ভিষণ মায়া জাগানো কথা। আমরা মেয়েরা মনে হয় এমনি ছোট ছোট সব কিছুর মাঝে ভালোলাগা এবং ভালোবাসা খু্ঁজে নেয়ই।আবার ছোট ছোট কষ্টে গভীরে দুঃখে মন ভাসে অপর পাশের মানুষ টা জানতেই পারে না।

    আজ কাল প্রতিটি দিন কোন না কোন হাসপাতালে যাচ্ছি। চারপাশে পরিচিত অপরিচিত করোনা মৃত্যুর মিছিল। তবুও যাচ্ছি, উপায় নেই। ও অনেক অনেক ব্যস্ত। তবুও ছুটেতে ছুটতে ঠিক হাজির হয়, বলি – আমি একাই পারবো, তবুও ভিষণ বিষন্ন মুখে আমার সাথি হয়।

    ওকে বলি আমায় সাদা বাড়িতে পাঠিয়ে দাও এক সপ্তাহে জন্য, দেখ আমি ঠিক ভালো হয়ে যাবো। সাদা বাড়ির এবং জগতপুরের সকাল, দীর্ঘ দুপুর এবং গোধুলীর যে রূপ থাকে তা যেন আমি স্পষ্ট দেখতে পাই। প্রতিটি ঋতুর রূপ রং সুবাস আমায় বার বার ছুঁয়ে যায়।

    আমার তখন বয়স কম নতুন সংসার। অনেক কিছু বুঝে উঠা হয় নি। মনটা বড় বেশি অভিমানি। কথায় কথায় অভিমান জমে। ওকে তখন প্রায় বলতাম আমি মরে গেলে কিন্তু আমার কবর দিবে আমার বাবার বাড়ির কবরস্থানে। ও হাসতে হাসতে বলতো- তা হয় না তোমার কবর হবে আমাদের বাড়িতে। আমি খুব মন খারাপ করতাম, এটা কেমন কথা? আমার কবরটা আমার ইচ্ছে মত হবেনা? কঠিন অভিমানে মনটা আমার ভাসতো।

    সময়ের সাথে সাথে কতকিছু বদলে যায়। আমার ডাল পালা শিকড় ছড়িয়ে যায় জগতপুরের মুহুরি নদী, পানুয়া পাথার, জঙ্গলা পুকুর, কবিরা পুকুর, মনিপুর গ্রামের পথে। আমি যেন হয়ে যাই মুহুরী নদীর পাড়ের সেই মাটির পথের পাশের ফুটে থাকা বইছি ফুল।

    আমার রুমের বারান্দা থেকে দেখা যায় কবিরা পুকুর পাড়ে এই বাড়ির কবরের স্হান। এই গ্রামের সব চাইতে হাসি খুশি প্রিয় কন্যাটি শ্রদ্ধেয় ফাতেমা বেগম এখানেই চির নিদ্রায় শুয়ে আছেন – আমার শাশুড়ি মা।

    জগতপুর কিংবা সাদা বাড়িতে গেলে রাতে প্রায়ই ঘুম আসে না। ইচ্ছে করে রাতের প্রতিটি প্রহর আমি ছুঁয়ে দেখি।

    সেই রাতটি ছিল শীতের রাত। হঠাৎ করেই যেন রাতটা গভীর হয়ে যায়। জোড়া কড়ই গাছের মাথায় বিশাল পূ্র্নিমার চাঁদ। বড় বড় ফোটায় শিশির ঝরে পড়ছে টুপটাপ শব্দে।কবিরা পুকুরের পানি ছুঁয়ে একটা ভিষণ শীতল বাতাস যেন ছুঁয়ে গেলো। আমি চাদরটা আর একটু ভালো করে গায়ে জড়িয়ে নিলাম। কি অপূর্ব মম জোস্ননা গলে গলে পড়ছে। হালকা একটা বাতাস বইছে। শান্ত কবিরা পুকুরের জলে ছোট ছোট ঢেউ ভাঙছে। ঢেউ গুলিতে চাঁদের আলো পড়ে চিক চিক করছে। ওপারে কবরে কত প্রিয় মানুষ শুয়ে আছে এই বাড়ির। কি এক মোলায়েম জোস্নার আলোর সাথে শীতল বাতাস বইছে প্রিয় মানুষ গুলোর কবরে। হঠাৎ করেই নাম নাজানা কয়েকটি পাখি আকাশে ডানা মেলে দিলো রাতের সমস্ত নিস্তব্ধতা ভেঙে। তখনি মনে হলো সারাটা জগতপুর গভীর ঘুমে। কোথাও কেউ জেগে নেই। শুধু আমি একা ঘুমহীন চোখে আর জেগে আছে রাতের প্রকৃতি।

    চোখের সামনে ভেসে উঠলো আমার প্রিয় একটা ছবি। আমরা সবাই যখন জগতপুর বেড়াতে আসতাম ঈদের সময়। তখনো এই বাড়িতে ডুপলেক্স ইট সিমেটের বাড়ি উঠেনি। বাবার বানান রিমঝিম বৃষ্টির শব্দ তোলা টিনের চালের পুরোন বাড়িটা। আমরা সবাই উঠানে মায়ের হাতে বোনা পাটি বিছিয়ে কত যে গল্প করতাম আর কারণে অকারণে হাসতাম। গরমের সময় তখন পল্লি বিদুৎ প্রায় আড়ি দিয়ে থাকতো। উঠুনে ঠিক একটা বাতাস বইতো। আমরা যতক্ষন গল্প করতাম মা ঠিক সিঁড়িতে বসে থাকতো কিংবা আমাদের সাথে বসতো। সারাটা দিনের কাজের শেষে চোখে জুড়ে ঘুম নামতো মায়ের চোখে। কোন ভাবেই মাকে ঘরে পাঠানো যেত না। আমি, ভাবি ( লুবনা), ননদিনী (খোদেজা) হয়তো গোপন কোন হাসির কথা বলতাম খুব নিচু গলায় কোন ভাবেই যেন মা না শোনে। আমরা যখন খুব হাসতাম আড় চোখে তকিয়ে দেখতাম মাও হাসছে। তাই দেখে আমরা আরো হাসতাম। কেমন এক মায়ায় মায়ায় জড়িয়ে থাকা পুরনো দিনগুলি।

    উঠান জুড়ে খেলা করতো এই বাড়ির ছোট ছোট বাচ্চা গুলো – নিশি, পৌষি, রাসা, রাহা, অনক সাথে যোগ হতো আশেপাশের বাচ্চারা। এই যেন চাঁদের হাটে। আজও বার বার ছুটে যাই জগতপুরে । এখনো রাসা,পৌষী আমেরিকার , রাহা জাপানে। নিশি সংসার নিয়ে ব্যস্ত।অনক মহা ব্যস্ত আর্কিটেক্ট। এখন আর উঠুনে বাচ্চাদের হাসিতে ভরে উঠে না।মাঝে মাঝে বড় মন খারাপ করে সেই সব দিন গুলোর জন্য।

    যখনি জগতপুরে যাই রাত গভীর হলে অমাবশ্যা পূর্নিমার চাঁদ কিংবা পঞ্চমীর চাঁদ যেমনই থাকুক না রাতের প্রকৃতি ঠিক কবিরা পুকুর পাড়ের সিঁড়িতে গিয়ে বসি। একটানা ঝিঁঝি পোকা ডাক প্রকৃতির নিরব আলাপন কাল পেতে শুনি। আর ভাবি ওপারে প্রিয় মানুষ গুলোর মাঝেই আমার কবর হোক আজ আর কোন অভিমান জমা নেই।

  • প্রেম-বিয়ে এবং বিচ্ছেদ উপাখ্যান (পর্ব-২)

    প্রেম-বিয়ে এবং বিচ্ছেদ উপাখ্যান (পর্ব-২)

    তনু’র মা রক্ষণশীল পরিবারের বউ হলেও মনে প্রাণে একজন প্রগতিশীল নারী, তিনি সবসময়ই চেয়েছেন তার ছেলেমেয়েরা অন্তত উচ্চ শিক্ষায় যেনো শিক্ষিত হতে পারে, যাই হোক যেটা বলছিলাম পাত্রের মায়ের এই কথা শুনে তনু’র মা পরিস্কার বলে দিল আমার মেয়ের বিয়ে আপনার ছেলের সাথে হবে না, যদিও ঐ সময় বিয়ের কেনাকাটা থেকে শুরু করে বিয়ের কার্ড পযর্ন্ত ছাপানো হয়ে গিয়েছিল, তনু আর ওর মেজোবোন রাজিয়ার একই সাথে একই দিনে বিয়ে হওয়ার কথা ছিল।

    রাজিয়ার বিয়ে হয়ে গেলো, তনু’র বিয়েটা আর হলো না, তনু’র অসুস্থ বাবা শুধু চেয়ে চেয়ে দেখলো, তার করার কিছু ছিল না,রাজিয়ার বিয়ের অনুষ্ঠান তার চাচা আর মামারা মিলেই শেষ করলো,সাথে ছিল ওদের বড়আপু আর দুলাভাই, তনু’র বিয়ে ভেঙ্গে যাওয়ার পর সবার মন খারাপ হলেও খুশী হলো অমিত আর তনু ওরা মনে মনে এটাই চেয়েছিল হয়তো দু’জন দু’জনের বাবার কথা মনে করে এ বিষয়টা নিয়ে আর কথা বলেনি,তনু ও আবার পড়াশোনায় মনোযোগী হলো।

    অনেক দিন পরে আসল সত্য জানা গেলো, অমিতই পাত্রের মা’কে এসব কথা বলতে বলেছিল আর তাদের সম্পর্কের কথা জানিয়েছিল যাতে বিয়েটা না হয় তাই এই ব্যবস্থা। এতদিনে তনু’র বাবা শয্যাশায়ী, তনু ও প্রতিটা পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করে এথন ফাইনাল ইয়ারে, আর অমিতের বাবা হার্ট এট্যাক করে এরই মধ্যে মারা গেছেন, সংসারের দায়িত্ব এখন অমিতের উপর, ওর ছোট আরো দুটো ভাই বোন আছে, বাবার বিশাল ব্যবসা, সেটা দেখাশোনা করতে হবে।

    তনু ফাইনাল পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে,পড়ালেখার ব্যাপারে সে কোন কিছুর সাথে কম্প্রোমাইজ করে না,অমিতের সাথে প্রেম করুক আর যাই করুক সে লেখা পড়াকে বরাবর গুরুত্ব দেয়, এরই মধ্যে তারা বাসা পাল্টে অন্য এলাকায় চলে গেছে, বাড়ীতে এখন মা, ছোট ভাই আর অসুস্থ বাবা, বড় দুইবোন যার যার সংসার নিয়ে ব্যস্ত।

    অমিত তার ব্যবসার হাল ধরেছে,কিন্ত ব্যবসাটা বাবার মত করে সামলে উঠতে পারছে না এরই মধ্যে ব্যবসায় লাভ দূরে থাক মূলধনে ঘাটতি পড়া শুরু করেছে, এরকমই আশাংকা করছিল অমিতের মা,ওর তো ব্যবসায় মন নাই সারাক্ষন তনু’র ধ্যানে থাকে, এখন তনু’র ভার্সিটিতে যেয়ে প্রতিদিন তনু’র সাথে দেখা করে, ব্যবসায় সময় দেয় না বললেই চলে।

    অমিতের মা তাকে বোঝাতে বোঝাতে এখন চুপ হয়ে গেছে, এখন বলারই বা কি আছে,ছেলে এখন মস্ত সেয়ানা, নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই নিতে পারে,কারো তোয়াক্কা করে না, এখন আবার একটু আধটু নেশা করা শুরু করেছে। তনু’র পরীক্ষার রেজাল্ট বের হলো, ওর ডির্পাটমেন্টে ফার্স্ট হয়েছে, এরই মধ্যে তনু নিজের মেধায় স্যারেদের কাছে প্রিয় হয়ে উঠেছে, ডির্পাটমেন্টের হেড স্যার বলেছে, মাস্টার্স শেষ করে ভার্সিটিতেই লেকচারার হিসাবে জয়েন করতে।

    তনু’র অসুস্থ বাবা এরই মধ্যে একদিন মারা গেলো, ওর বাবার একটা দোকান ছিল, সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিয়ে সেটা ভাড়া দিয়ে দিল, এর আয় দিয়েই ওদের সংসারটা চলত। মাস্টার্স শেষ করার আগেই একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীতে চাকরী হলো তনুর, প্রথম ইন্টারভিউতেই চাকরী হয়ে গেলো, চাকরীর কারণে ঢাকায় এসে কর্মজীবি মহিলা হোস্টেলে থাকতে লাগলো।

    তনু’র বড়আপু মাঝে মাঝে দেখে আসে,রান্না করা খাবার নিয়ে যায়, নিজ হাতে পরম মমতায় খাবার খাইয়ে দেয়, বেতনের কিছু টাকা নিজের জন্য রেখে বাকিটা মা’র কাছে পাঠিয়ে দেয়। একদিন বড়আপু হোস্টেলে যেয়ে দেখে তনু নাই, রুম মেটের কাছে খোঁজ নিয়ে জানতে পারে সে তার কোন এক কাজিনের সাথে সিলেটে বেড়াতে গেছে, তাজি চিন্তা করেও খুঁজে পায় না এমন কোন কাজিন আছে যার সাথে তনু বাইরে যেতে পারে।

    তাজির মাধায় কিছু ঢুকছে না,বাসায় এসে ও কিছু জানায়নি ওর স্বামীকে। দুদিন পর অমিত তনু’র বড়আপুকে ফোন করে দেখা করেতে চায়, তখনকার দিনে মোবাইল ছিল না পাশের ফ্ল্যাটে ফোন করে ডেকে দিলে তবেই কথা বলা যেতো, তাজির প্রতিবেশী ভালোই ছিল কোন ফোন আসলেই ডেকে দিত,যাই হোক অমিত যখন তাজির সাথে দেখা করতে চাইলো। তাজির বুকটা কেঁপে উঠল অজানা এক আশাংকায় কোন দুঃসংবাদ নয়তো!!! ক’দিন আগেই বাবাকে হারিয়েছে, তাজি আর চিন্তা করতে পারছে না, অমিতকে তার বাসায় পরের দিন আসতে বলল।

    আজ আমিত এসেছে বড়আপুর সাথে দেখা করতে,

    • কি রে খারাপ কোন কিছু? কোন কুশল না জিজ্ঞাস করেই সরাসরি জানতে চায় তাজি,
    • না তেমন কিছু না বড়আপু, একটা কাজ করেছি, সেটাই আপনাকে বলতে এসেছি,
      তাজি নিজের হার্টবিট নিজেই শুনতে পাচ্ছে
    • বল কি করেছিস অমিত
    • আমি তনুকে বিয়ে করেছি
    • মানে?
      অমিত দুইটা কাগজ বের করে তাজির হাতে দিল, তাজির হাত পা কাঁপছে, মাথা ঘুরছে,সে এরকম কিছুই আশংকা করেছিল,প্রথম কাগজটা রোটারী পাব্লিকের যেখানে অমিত রায় এর নাম এবং ধর্ম পরিবর্তন করে এখন নতুন নাম আনোয়ার হোসেন, লেখা আর দ্বিতীয় কাগজটা বিয়ের কাবিন নামা। কাগজ দুটো পড়ে তাজি ফিরিয়ে দিল অমিত ওরফে আনোয়ার হোসেনের কাছে।
    • তনু কোথায়?
    • ও হোস্টেলে আছে
    • এরপর তোরা কি করবি?
    • তোর ফ্যামিলির কেউ জানে? মানে অনিমা, মাসিমা এরা?
    • জানে
    • তারা কি বলেছে?
    • বাড়ীতে ঢুকতে মানা করেছে,
    • তো কি করবি এখন?
    • জানিনা, তবে ঢাকা ছেড়ে চলে যাবো
    • যেখানে খুশী যা তোরা তবে আমার মা’র কাছে যাস না,আমার মা সহ্য করতে পারবে না, যে কোন অঘটন ঘটে যাবে
    • আচ্ছা বলে বিদায় নিল আনোয়ার, হ্যাঁ আজ থেকে ও অমিত নয় আনোয়ার
      অমিত চলে যাওয়ার পর তাজি নিজেকে সামলাতে পারলো না হাউমাউ করে অনেকক্ষন কেঁদে নিজেকে হালকা করলো,রাতে ওর স্বামী বাসায় আসলে সব ঘটনা খুলে বলল।

    আনোয়ার আর তনু নিজ জেলায় ফিরে যেয়ে ছোট একটা একরুমের টিনশেড বাসা ভাড়া নিয়ে শুরু করলো নতুন জীবন, তনু চাকরী ছেড়ে দিয়েছে, আনোয়ার কোন রকমে বিএ পাশ করেছিল,মফস্বল শহরে চাকরীর সুযোগ নাই,বাবার ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছে, একটা দোকানে কর্মচারী হিসাবে যোগ দিল, তনু টিউশনি শুরু করলো, কোন রকমে দু’জনের সংসার চলে যায়।

    তনু আবারো তার মাস্টার্স শুরু করলো, তখন তারা দৃই পরিবার থেকেই বিচ্ছিন্ন, বাবাহীন দুই পরিবারের দুই মা সমাজের কাছে মুখ দেখাতে পারে না, কাঁদতে কাঁদতে তাদের চোখের পানিও শুকিয়ে গেছে, এরই মধ্যে তনু ওর মা’কে দেখার জন্য বাড়ীতে যায়, মা দেখা করেনি, বলেছিল আমার ছোট মেয়ে মারা গেছে, আমি ওর কথা মনে করতে চাই না, তনু’র ভাই গেট থেকেই তাকে বিদায় করে দিয়েছে, পাছে ওকে দেখে মা আবার অসুস্থ হয়ে পড়ে, অমিতের ও একই অবস্থা ওর ছোটবোনটা বিয়ের পর আত্মহত্যা করেছে, এখন ছোট ভাইকে নিয়ে অমিতের মা থাকে।

    দুই বছর পরে ওদের কোলজুড়ে আসে ওদের প্রথম সন্তান আনিকা, ওর যখন জন্ম হয় নার্সিং হোমে কাছের মানুষ বলতে কেউ ছিল না,তনু’র এক বান্ধবীর মা খবর পেয়ে এসেছিল,নার্স যখন বাচ্চা ধরার জন্য কাপড় চেয়েছিল,তনু তার ওড়না টা দিয়েছেল, সাথে করে কিছুই আনেনি বা আনার মত সামর্থ্য ছিল না। আনিকার বয়স যখন দশমাস ওকে নিয়ে তনু আবার ওর মা’র বাড়ীতে সাহস করে এলো, ভাবলো মা বুঝি এবার সব কিছু ভুলে বুকে টেনে নেবে, মা বুকে টেনে নিয়েছিল তবে তনুকে নয়, তনু’র মেয়ে আনিকাকে, সেই থেকে আস্তে আস্তে মায়ের বাড়ীতে যাওয়া আসা শুরু করলো।

    এদিকে আনোয়ার সেই নেশাটাকে এখন আরো আপন করে নিয়েছে, বাবা হারিয়েছে, ছোটবোনকে হারিয়ছে,মা থেকে ও নাই এত বড় ব্যবসা থাকতেও আজ সে অন্যের দোকানের কর্মচারী,এর সাথে নতুন আরেকটা রোগ যোগ হয়েছে,যার নাম সন্দেহ, তনু নতুন করে ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ায় তার মধ্যে সন্দেহ হয় রূপবতী, শিক্ষিত তনু অন্য কারো নজরে পড়বে নাতো, অহেতুক সন্দেহ নিয়ে প্রায়েই তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়, কখনও কখনও গায়ে হাতে তুলতে ও দ্বিধা করে না,তনু বুঝতে পারে ভুল করেছে, ভুলের মাসুল তো দিতে ই হবে, সব অত্যাচার, অপবাদ সহ্য করে মাস্টার্স পরীক্ষাটা শেষ করে, ফলাফল যথারীতি প্রথম স্থান।

    চলবে…