Tag: ধারাবাহিক গল্প

  • নিশির প্রবাস (পর্ব-২)

    নিশির প্রবাস (পর্ব-২)

    বর ( সুমন) এর কথামতো নিশি পরদিন কাছাকাছি দুই তিনটা দোকানে গেলো চাকরির সন্ধানে। ( এই ৮ দিনের প্রবাস জিবনে নিশি দুই দিন সুমনের সাথে বের হয়েছিল, একদিন বাজার করতে, পাশাপাশি সুমন ওকে বলছিলো এর পর থেকে বাজার ওকেই করতে হবে, আর একদিন সুমনের এক বন্ধুর বাসায় নিয়ে গিয়েছিলো, বন্ধু রাশেদ, আর বন্ধুর বউ লাভলি, সেইদিন নিশির অনেক ভালো লেগেছিলো, ১০ দিন পর মন খুলে কথা বলতে পেরেছিল বলে, লাভলি ভাবি এখানে আছে ২ বছর, মেকডোনালস এ চাকরি করে) সুমন এর কথা মতো ও দোকানে দোকানে জিজ্ঞেস করলো, ” I am looking for a job” দুই দোকানে কি যে বললো নিশি কিছুই বুঝতে পারছিলো না, এক দোকান এর ভদ্রলোক জিজ্ঞেস করলো
    ” Are you from India?
    নিশি বললো – No from Bangladesh.
    তারপর এইটুকু বুজলো ওদের কোন লোক দরকার নেই। নিশি বাসায় এসে কাপড় ওয়াশিং মেশিন এ দিয়ে, রান্না শেষ করে দেখলো মাত্র ৬ টা বাজে, সুমন আসবে সেই ৮ টায়। নিশির এখন ভাবার সময়। * আচ্ছা কেন ওর জীবন টা এমন হলো? এখন তো ওর SSC ফাইনাল এর জন্য রেডি হওয়ার কথা, কতো লিখাপড়া করার কথা, আব্বা চাইতো ও ডাক্তার হবে, এই জন্য সাইন্স নিয়েছিলো, ” আর আজ ও দোকানে, রেস্টুরেন্ট এ ঘুরছে কাজ করবে” কেন হুরমুর করে ওকে বিয়ে দিয়ে দিলো, এমন ও তো না ও কারো সাথে রিলেশন এ জরিয়েছিলো। সুমন এলো সময় মতো, এসেই জিজ্ঞেস করলো ” গিয়েছিলা জব এর জন্য? নিশি যা সত্যি তাই বল্লো, ” মাত্র তিন টা? সারাদিন ঘর এ বসে থাকো, আশেপাশে ১০০ এর বেশি দোকান আছে, আর না বুঝার কি আছে? তোমাকে তো বার বার বলেছি ইংলিশ টা ভালো করে শিখে আস ” নিশির খুব কান্না পাচ্ছিলো, ও শুধু বলতে পারলো, কাল আবার যাব। নিশি শুয়ে শুয়ে ভাবছিলো, এই কয় দিন এ সুমন একদিন ও ওর সাথে ভালো করে কথা বলে নাই, নিশি জিবনের প্রথম রান্না করেছে এখানে এসে, বলার ও প্রয়োজন মনে করে নাই, জিবনের প্রথম রান্না ভালো হয়েছে, হলুদ বেশি হয়েছিল সেদিন খুব মেজাজ দেখিয়ে বলেছিলো –
    ” এতো হলুদ দেয় নাকি” অথচ বাংলাদেশ এ নিশি কোনদিন রান্না ঘর এ যায় নাই। পরের কয়েক দিন নিশি অনেক গুলি দোকান, রেস্টুরেন্ট এ গেলো চাকরির খোজ এ, কোথা ও কিছু হলো না। একদিন নিশি বাড়ির রাস্তা হারিয়ে ফেলেছিলো, অনেক কস্টে খুজে পেয়েছে। তারপর থেকে নিশি একটা কাগজে ঠিকানা লিখে জ্যেকেট এর পকেটে রাখতো।
    এক রবিবার সুমন এর অফ ডে,
    প্রায় সারাদিন নিশিকে নিয়ে শিখালো কিভাবে সাবওয়ে তে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে হয়। শহর এর দিকে, কারন ওখানে অনেক জব পাওয়া যায়। সেদিন নিশির খুব ইচ্ছা করছিলো এতো এতো খাবার দোকান, আজ সুমন নিশ্চয় বাইরে খাওয়াবে, ওর বলার সাহস হচ্ছিল না। অনেক বড় একটা শপিং মলে নিয়ে গেলো দেখানোর জন্য “কতো বাচ্চা মেয়েরা এখানে কাজ করছে দেখো” অনেক ইন্ডিয়ান মেয়ে ও আছে।
    বাসায় এসে খুব মেজাজ দেখিয়ে সুমন যে কথা টা প্রথম বললো,
    ” এই সবাই তোমার দিকে তাকিয়ে থাকে কেনো”

    এটার উত্তর জানা ছিলো না নিশির।

    চলবে…

  • নিশির প্রবাস (পর্ব-১)

    নিশির প্রবাস (পর্ব-১)

    নিশি ক্লাস নাইন এ উঠলো। গতকাল স্কুল এ নিশির বার্ষিক খেলা প্রতিযোগীতা ছিলো। তাই আজ স্কুল বন্ধ। দুপুরে নিশি শুয়ে আছে, গতোকাল সারাদিন রোদে থাকার কারনে একটু জর জর লাগছিল। নিশির মা এসে নিশি কে বল্লো মা একটু উঠো তো, আমাদের ওই বাসায় যে নতুন ভাড়াটিয়া এসেছে উনারা আসছে। নিশি বুজতে পারছে না নিশি কে এইজন্য উঠতে হবে কেনো। উনারা আসলেন, একটা ভদ্রমহিলা (ছেলের মা) আর একটা ২৮/২৯ বছর এর ছেলে। আম্মা খুব সমাদার করলেন। ছেলে টা যাওয়ার সময় জোর করে নিশির হাতে দুটা ৫০০ টাকার নোট দিয়ে গেলো।

    আম্মা আর দাদুর কথায় নিশি বুঝতে পারলো ছেলাটা আমেরিকা থেকে এসেছে, বিয়ে করতে, এবং পাত্রী খুজছিলো। যেহেতু ছেলেটার ফ্যমিলি আগেই নিশি কে দেখেছিলো, আজ ছেলে দেখে গেলো এবং নিশিকে ছেলের পছন্দ হয়েছে। বিয়ে করে কিছুদিনের মধ্যেই বউ নিয়ে যাবে।

    নিশি সুন্দরি, ক্লাস সেভেন থেকে ওর বিয়ের প্রস্তাব আসা শুরু হয়েছে, আর অন্যান্য ছেলেদের জালাতন তো আছেই। সেটা ও নিশির ফ্যামিলির অজানা নয়, কারন নিশি সবার ছোট, বড় দুই ভাই, ভাইয়াদের কাছে কিভাবে যেন এই খবর গুলি চলে আসতো। এক সপ্তাহের মধ্যে মোটামুটি ধুমধাম করে নিশির বিয়ে হয়ে গেলো সেই আমেরিকা বাসি ছেলের সাথে। বিয়ের ১০ দিন পর নিশির বর চলে ও গেলেন আমেরিকা। আমেরিকা যেয়ে উনি কাগজ পত্র ঠিক করে নিশিকে নিয়ে যাবে। এর মাঝে চিঠি আদান প্রদান হয়েছে কয়েক বার। যেহেতু কাছাকাছি শশুর বাড়ি, মায়ের বাড়ি, স্কুল, করে করে নিশির বিয়ের ৭/৮মাস হয়ে গেলো। তিন মাস পর নিশির টিকেট সহ চিঠি এলো। নিশির বয়স তখন ১৫ হয়েছে। চিঠিতে একটা এড্রেস দেওয়া ছিলো। যেহেতু নিশির প্রথম বিদেশ যাত্রা, ওই মহিলা ও সেইদিনই যাবে, নিশির কোন অসুবিধা হবে না। একদিন সবাইকে ছেড়ে নিশি পাড়ি জমালো আমেরিকা।

    নিশির বর নিশিকে নিয়ে গেলো এয়ারপোর্ট থেকে। ঢাকা ফোন করা হলো নিশি এসে পৌচেছে এই খবর টা দেওয়ার জন্য। নিশি ওর মায়ের গলা পেয়ে খুব কান্নাকাটি শুরু করে দিলো। নিশির বর খুব বিরক্ত হয়ে বল্লো, কি আশ্চর্য এটা লং ডিস্টেন্স কল, এতক্ষণ কথা বলার কি দরকার! তুমি আসছো এই খবর টা দেওয়ার জন্যই ফোন করা।

    সারাদিন নিশি একা একা বাসায় থাকে, রান্না করে। ওর বর সকাল ৮ টায় কাজে যায়, রাত ৮ টায় কাজ থেকে আসে, খাওয়া দাওয়া করে শুয়ে পরে। এর মাঝে প্রায় ৮ দিন হয়ে গেছে।

    নিশি খুবি আদরে বড় হওয়া মেয়ে, বিয়ের পর যে ৭ মাস দেশে ছিলো, কিছু রান্না শিখেছে, আর বর এর কথা মতো স্পকেন ইংলিশ কোর্স করেছে। সেদিন ওর বর ওকে বল্লো দেখো এটা এমন একটা দেশ, একার রোজগার এ এখানে কিছুই হয় না, তোমাকে ও কাজ করতে হবে। এখানে কেউ কাজ ছাড়া বসে বসে খায় না। নিশির মাথায় কিছু ঢুকছিল না “ও কি কাজ করবে”। ও জিজ্ঞেস করলো আমি কি কাজ করবো? ওর বর উত্তর দিলো এখানে সবাই কাজ করে, কাজের অভাব নেই, তুমি বের হবা, কাছাকাছি দোকান, শপিং মল গুলি তে জিজ্ঞেস করবা, I am looking for a job, চেস্টা করতে হবে তো, তবেই না পারবা।

    শুরু হলো নিশির জিবনের নতুন অধ্যয়…

    চলবে…

  • শারমিন (পর্ব-১০)

    শারমিন (পর্ব-১০)

    দর্শন বিভাগের কাজ শেষ করে অগ্রনী ব্যাংকে টাকা জমা দিতেই একটা বেজে গেল।ভর্তি শাখায় ইসমাইল মামার কাছে পল্লবরা যখন পৌছলো,মামা তখন লাঞ্চের আয়োজনে ব্যস্ত।
    পল্লবঃ- মামা, কাগজগুলো একটু নেন না।
    মামাঃ- দুইটার পরে মামা।এখন লাঞ্চ টাইম।
    পল্লবঃ- প্লিজ মামা।
    মামাঃ- আমরাওতো মানুষ।সকাল থেকে কি পরিশ্রমটাই না করছি।এখন একটু খেতে দেন।
    পল্লবঃ- মামা তুমিতো এমন ছিলা না।আমরা তোমার কত প্রশংসা করি।তুমি কি সেটা জানো?
    পল্লব ইসমাইল মামাকে একটু পটাতে চেষ্টা করলো।
    মামাঃ- কি প্রশংসা করেন?
    পল্লবঃ- সবাই বলি, ইসমাইল মামা সবার চেয়ে ভাল।সময়-অসময়ে কাউকে ফিরিয়ে দেয় না।
    মামাঃ- হইছে, আর পাম দিতে হবে না।দেন সব কাগজপত্র।
    পল্লবঃ- আমার লক্ষি মামা।
    রেজিষ্ট্রার ভবন থেকে বের হয়ে ওরা ক্যাফেটেরিয়ায় লাঞ্চ করতে গেল।
    শারমিনঃ- আচ্ছা, ইসমাইল মামা কি খুব ভাল?
    পল্লবঃ- ও আচ্ছা একটা খবিশ। ওই কথা না বললে আড়াইটার আগে আমাদের কাজ করে দিত না।
    শারমিনঃ- মানুষকেতো ভালই পটাতে পারেন।
    পল্লবঃ- তোমার মতামত এটা?
    শারমিনঃ- হুম।আপনার আজকের কাজগুলোতো দেখলাম।আমি একা হলে দুই দিনেও সবটা করতে পারতাম না।
    পল্লবঃ- আর কি কি অবজারভেশন করলে?
    শারমিনঃ- আপনি হলেন হরফুনমৌলা- সকল কাজের কাজী।
    পল্লবঃ- শুনে ভাল লাগলো।ভবিষ্যৎই বলে দিবে তোমার অবজারভেশন কতটা সঠিক।
    শারমিনঃ- আমি মানুষ চিনতে ভুল করি না।
    পল্লবঃ- তাই! বলতো আমি মানুষটা কেমন?
    শারমিনঃ- আপনি খুব ভাল মানুষ।তবে বেশ সহজ সরল।
    পল্লবঃ- মানে বোকা?
    শারমিনঃ- আরে না।বোকা হবেন কেন?অন্য দশজন থেকে আলাদা।
    পল্লবঃ- তাহলেতো চিড়িয়াখানায় ঠাঁই হবে।
    শারমিনঃ- কি যে বলেন ভাইয়া।আপনি খুব ভাল মানুষ।তবে ভাল মানুষেরা ভালবাসা যেমন পায়,কষ্টও তেমনি পায়।
    পল্লবঃ- তুমি ছোট মানুষ।এতকিছু কেমনে জানলে?
    শারমিনঃ- আমি কিন্তু বেশ বড় হয়ে গেছি।এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট।
    পল্লবঃ- আমাদের এখানে কিন্তু একটা সুন্দর নিয়ম আছে।
    শারমিনঃ- কি নিয়ম ভাইয়া?
    পল্লবঃ- এখানে আপনি বলা নিষেধ।
    শারমিনঃ- মানে
    পল্লবঃ- জুনিয়ররা সব সিনিয়রকে ভাইয়া বা আপু বলে।আর সিনিয়ররা জুনিয়রকেও ভাইয়া আর আপু বলে।তাছাড়া সবাই সবাইকে তুমি বলে।শুধুমাত্র ক্লাশমেটরা তুই তোকারি করে।
    শারমিনঃ- খুব ভাল নিয়মতো!
    পল্লবঃ- তাহলে তুমি নিয়ম ভাঙছো কেন?
    শারমিনঃ- আমি আবার কখন নিয়ম ভাঙলাম!
    পল্লবঃ- আমাকে তুমি আপনি আপনি করে বলছো।
    শারমিনঃ- হা হা হা। আস্তে ধীরে বলবো ভাইয়া।

    চলবে…

  • শারমিন (পর্ব-৯)

    শারমিন (পর্ব-৯)

    পল্লবঃ – কিভাবে এলে?
    শারমিনঃ – তার আগে জিজ্ঞেস করবেন তো, কেমন আছি?
    পল্লবঃ – সরি,কেমন আছ তুমি?
    শারমিনঃ -ভাল ছিলাম না।এখন ভাল।আপনি কেমন আছেন?
    পল্লবঃ -আমিও ভাল ছিলাম না, এখন ভাল। কিন্তু তুৃমি ভাল ছিলে না কেন?
    শারমিনঃ -ছেলেদের হলের গেষ্টরুমে একটা মেয়েকে কেউ একঘণ্টা বসিয়ে রাখে? আর সেই মেয়েটি ভাল থাকতে পারে?
    পল্লবঃ- তুমি সিকবয়কে তোমার নাম বলোনি কেন?
    শারমিনঃ- বললে কি করতেন? আমিতো শুনেছি আপনি নাকে তেল দিয়ে ঘুমুচ্ছেন।
    পল্লবঃ- পুরাটা সত্য না।ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছিলাম।
    শারমিনঃ- বাহ্। সকালেও স্বপ্ন দেখেন! তা ঘুমান কখন?
    পল্লবঃ- ঘুমাতে শেষরাত হয়ে যায়।
    শারমিনঃ- বলেন কি! কি করেন এতটা সময়?
    পল্লবঃ- খেলাধুলা, আড্ডা,রাজনীতি,গান,টিভি দেখা, পড়াশুনা….
    শারমিনঃ- রাত জাগলে দিনে ঘুম পায় না?
    পল্লবঃ- বিশ্ববিদ্যালয় জীবনটাই এ রকম।ভর্তি হলে তুমিও তোমার আগের জীবনটা হাসিমুখে ত্যাগ করবে।
    শারমিনঃ- না ভাই। আমি রাত জাগতে পারি না।এগারোটা বাজলেই ঘুমিয়ে যাই।
    পল্লবঃ- হা হা হা।আমাদের এগারোটার পরে রাত শুরু হয়।
    শারমিনঃ- নাস্তা করেছেন?
    পল্লবঃ- সময় পেলাম কই? তুমিও তো নাস্তা করোনি।
    শারমিনঃ- খুব সকালের বাস ধরে চলে এলাম।সময় পেলাম কই!
    পল্লবঃ- খুবই ভাল করেছো।চলো, ক্যাফেটেরিয়ায় গিয়ে নাস্তা করি।পরে সব কাজ করবো।
    ওরা একটা রিক্সা নিয়ে ক্যাফেটেরিয়ায় এলো।ক্যাফেটেরিয়ায় সকাল সাড়ে সাতটা থেকে দশটা পর্য্যন্ত সকালে নাস্তা পাওয়া যায়।নাস্তার ভিতরে পরোটা, ডিম,ডাল,সবজি, হালুয়া,গরুর মাংস আর চা।পরোটা,ডাল,সবজি,হালুয়া আর চা চল্লিশ পয়সা করে।ডিম ষাট পয়সা আর গরুর মাংস সাড়ে তিন টাকায় এক বাটি।ওরা ক্যাফেতে এসে দুজনের কুপন কেটে খেতে বসলো।রাঙা আর শিল্পিও এসে ওদের সাথে যোগ দিল।
    পল্লবঃ- কিরে শিল্পি,তোরা দেখি ফেভিকল হয়ে গেছিস।
    শিল্পিঃ- আস্তে আস্তে সবাই ফেভিকল হয়ে যাবি।তোর সাথে এই মিষ্টি মেয়েটা কে রে? পরিচয় করিয়ে দিলি নাতো।
    পল্লবঃ- ওর নাম শারমিন। এবারে জাবিতে চান্স পেয়েছে।আজ ভর্তি হতে এসেছে।আর শারমিন ও শিল্পি আর এইটা রাঙা।আমার সাথে পড়ে।নিউলি কাপল্ ড।
    শারমিনঃ- সালামু আলাইকুম আপু।ভাল আছেন?
    শিল্পিঃ- হুম।তোমাদের কি আগেই পরিচয় ছিল, মানে রিলেটিভ?
    পল্লবঃ- নারে, সেদিনই পরিচয় হলো।
    শিল্পিঃ- ও আচ্ছা। “ভ্রু -পল্লবে ডাক দিলে, দেখা হবে চন্দনের বনে।”
    পল্লবঃ- কি শুরু করেছিস তোরা….
    শিল্পিঃ- পল্লবকে নিয়েইতো সুনীল লিখেছিল,কি বল শারমিন!
    শারমিনঃ- কি জানি আপু,তখন আমি সামনে ছিলাম না।
    শিল্পিঃ- হাহাহা।তুমিতো বেশ রোমান্টিক আছো।
    কোন সাবজেক্টে ভর্তি হবা শারমিন? পল্লব কথার মোড় ঘুরিয়ে দিল।
    কয় সাবজেক্টে চান্স পেয়েছে,রাঙা জানতে চাইলো।
    ও একটা জিনিয়াস। ইংরেজি, ইতিহাস ও দর্শনে টপ ফাইভে আছে।পল্লবের উত্তর।
    শিল্পিঃ- আমি চাই ও দর্শনে পড়ুক।তাহলে তোকে সময় দিতে পারবে।
    রাঙাঃ- ইংলিশ খুব ভাল সাবজেক্ট। যারা ইংলিশে পড়ে তারা খুব স্মার্ট হয়।ও অনেক স্মার্ট।
    শিল্পিঃ- খবরদার, ওকে ভুলেও ইংলিশে দিবি না।তাহলে তুই মরেছিস।আর একজনের হাত ধরে চলে যাবে। হা হা হা।
    পল্লবঃ- শিল্পি তুই এত পচা হইলি কবে থেকে?
    শিল্পিঃ- তোর বন্ধুকে জিগা।
    রাঙাঃ- শারমিন, তুমি কোন সাবজেক্টে ভর্তি হতে চাও?
    শারমিনঃ- কোনটায় হলে ভাল হবে ভাইয়া?
    রাঙাঃ- সাবজেক্ট বড় কথা না।আসল কথা লেখাপড়াটা তুমি কোনটাতে বেশি এনজয় করবে সেটা।ভাল রেজাল্ট করলে সবটারই দাম আছে।
    শারমিনঃ- আমি দর্শনে পড়তে চাই ভাইয়া।
    রাঙাঃ- পল্লব তুই ওকে দর্শনে ভর্তি করিয়ে দে।
    পল্লবঃ- তোরা এখন কই যাবি?
    রাঙাঃ- তেমন কোথাও না,একটু ঘোরাঘুরি করবো।
    পল্লবঃ- এ কয়দিনে তো জাহাঙ্গীরনগরের সব চিপাচাপা চিনে ফেলেছিস।
    শিল্পিঃ- তোদেরও স্বাগতম।দেখা হবে ওখানে।
    পল্লবঃ- তোরা কয়টায় ঢাকা যাবি?
    রাঙাঃ- সাড়ে তিনটার বাসে।
    পল্লবঃ- আমাদের জন্য দুটো সীট রাখিস।ওকে পৌছে দিয়ে আসবো।
    রাঙাঃ- ওকে দোস্তো।
    ওদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে শারমিনকে নিয়ে পল্লব দর্শন বিভাগের দিকে চললো।

    চলবে…

  • শারমিন (পর্ব-৮)

    শারমিন (পর্ব-৮)

    খুব সকালে একটা সুন্দর স্বপ্ন দেখলো পল্লব।একটা নৌকায় করে ওরা রুবিদের বাড়ি যাচ্ছে। রুবি পল্লবের মেঝো বোন।সুগন্ধা নদীতে জেলেরা ইলিশ ধরছে।ওরা এক জেলের নৌকার পাশ দিয়ে যাচ্ছিল।জালে জ্বলজ্যান্ত ইলিশ দুই লাফ দিয়ে মারা যাচ্ছে।কি সুন্দর দৃশ্য! শারমিন বলে উঠলো,”আমরা জেলেদের কাছ থেকে তাজা ইলিশ নিবো।আমি এত তাজা ইলিশ কখনও দেখিনি।খাওয়াতো দূরের কথা।”পল্লব মাঝিকে নৌকাটা জেলেদের নৌকার সাথে ভিড়াতে বললো।
    -ভাই, ইলিশ বিক্রি করবেন?
    ঃ করমু না ক্যান! বেচার জন্যই তো ধরছি।
    -হালি কত করে?
    ঃ বড়গুলো নিলে আশি টাহা।মাঝারি নিলে ষাইট টাহা।ছোট সাইজ চল্লিশ।
    -দাম বেশি হয়ে গেল না?
    ঃ খেয়ে যে মজা পাইবেন,তহোন দামের কতা মোনে থাকবো না।
    -বড়গুলো ষাট টাকায় দেন।
    ঃলাব থাহে না বাই।
    -সবইতো লাভ।নদীকে তো আর টাকা দেন না।
    ঃ কি যে কন! কি পরিশ্রম করি দেহেন না।আম্মেরা দুইডা টেহা বেশি দিলে মোরা বাঁচতে পারি।আম্মেরা না দেলে মোরা কই পামু!
    -আচ্ছা, সত্তুর টাকা নেও।
    ঃ নতুন ভাবীসাবরে লইয়া আইছেন।নেন,হেরে মোগো মজার মাছ খাওয়ান।
    পল্লব দুই হালি ইলিশ মাছ নিলো।হঠাৎ করে ঘুম ভেঙে গেল।কি স্বপ্ন দেখলো ও!মনেমনে সবটা আবার ভাবতে চেষ্টা করলো।শারমিনকে নিয়ে এমন স্বপ্ন কেন দেখলো। ও কি কালকে অনেক টেন্স ছিল! মাঝির কথাগুলো মনে পরলো,”নতুন ভাবীসাবরে নিয়া আইছেন।নেন,হেরে মোগো মজার মাছ খাওয়ান।”
    ওয়াড বয় ফরিদ এসে রুমে নক করলো।
    ঃ মামা,আপনার গেষ্ট এসেছে।গেষ্টরুমে অপেক্ষা করছে।
    -কে এসেছে?
    ঃ নাম বলে নাই। বলল,গিয়ে বলবি খালা এসেছে।
    -আচ্ছা যা।আমি আসছি।
    ঘড়িতে দেখে সকাল সাড়ে আটটা।তাড়াতাড়ি উঠে ওয়াসরুম ঢুকে আধাঘণ্টায় রেডি হয়ে নীচে গেষ্টরুমে ঢুকে অবাক হয়ে গেল পল্লব।একটা পেপার নিয়ে পড়ছে শারমিন। শাড়ি পরে এসেছে।কি অপূর্ব লাগছে ওকে দেখতে।স্বপ্নে ওকে শাড়ি পরা দেখেছিল।কি স্নিগ্ধ চেহারা! আহা! বিধাতা সব মায়া কি ওকেই দিয়ে রেখেছে!!!

    চলবে…

  • লিভিং রুমে স্নেহা (পর্ব-১)

    লিভিং রুমে স্নেহা (পর্ব-১)

    আজকাল স্নেহা প্রায়ই অসুস্থ্য থাকে৷ সন্ধ্যা হতেই মাথাটা ধরে আসে তার৷ সপ্তাহ দুয়েক আগে সে রাতে খুব ভয় পেয়েছিলো৷ জানালায় গিয়ে তার হাত কেটে গিয়ে রক্তারক্তি হয়ে গিয়েছিলো। অথচ সে জানেই না কেন এমন হয়েছে৷

    সেদিনের পর থেকে তার একটা নতুন জিনিস বাসার সবাই লক্ষ্য করছিলো, সন্ধ্যা হলেই সে খুব সাজগোজ করে৷ গান গায় গুনগুন করে৷ বিকেল তিনটা চারটার দিকে ছাদ বাগানে চুল ছেড়ে হাঁটাহাটি করে৷ আগে কখনও তাকে এ ভাবে চুল ছেড়ে হাঁটাহাটি করতে কেউ দেখেনি৷ আরেকটা নতুন জিনিস সবাই লক্ষ করেছে, সে একেবারেই চুলার কাছে যায় না৷ চুলার কাছে গেলেই সে অস্থির অস্থির হয়ে কিছুক্ষনের মধ্যেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে৷ অথচ আগে প্রতি শুক্রবারে নিজে বাজার করে এনে সবার জন্য রান্না করতো৷ সবাই ভেবেছিলো হয়তো, সেদিনের কারনে সে একটু অসুস্থ্য হয়ে পড়েছে তাই এমন করছিলো।

    আজ স্নেহা একেবারে অন্যরকম কিছু করছে৷ লাল শাড়ি পরেছে৷ লাল টিপ পরেছে৷ হাত ভরে কাঁচের চুড়ি পরেছে। খুব সেজেছে৷ গুনগুন করে গান গাইছে৷ ফুয়াদ অফিস থেকে এসে দেখেতো অবাক৷

    কি ব্যাপার কোথাও যাবে নাকি তুমি স্নেহা?

    কেন? তুমি না কাল রাতে আমায় বললে ডিনারে নিয়ে যাবে আমায়? তুমি বললে লাল শাড়ি পরতে৷ টিপ পরতে। কাঁচের চুড়ি পরতে৷ তাইতো পরলাম এসব৷

    ফুয়াদ বলে, আমি আবার কখন বললাম?

    স্নেহা হঠাৎ খুব রেগে মেগে চিতকার চেচামেচি শুরু করে দিলো, যা কখনই সে করেনি। আশেপাশে বেশ কয়েকটি কাচের জিনিস সে ভেঙে ফেললো৷ ফুয়াদ বুঝে উঠতে পারছিলো না তার এখন কি করা উচিৎ। সে বললোঃ
    আচ্ছা চলো৷ আমরা ডিনারে যাবো৷

    স্নেহা চেচামেচি করেই চললো। বলছিলো, না আমি এখন আর যাবো না৷ বলতে বলতে হঠাৎ সে হাউ মাউ করে কাঁদতে শুরু করলো৷ ফুয়াদ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে স্নেহার দিকে৷ আর ভাবছে এটা কি হচ্ছে স্নেহার সাথে!!! বুঝে উঠতে পারছে না সে কি বলবে এখন৷ এবার স্নেহা কাঁপতে শুরু করলো। কাঁপতে কাঁপতে এক পর্যায়ে সে হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে গেলো৷ ফুয়াদ তাড়াতাড়ি তাকে ঠিক মতো শুইয়ে দিলো। কাজের বুয়া রুবিনাকে ডেকে সবাই মিলে বেশ কিছুক্ষন হাতে পায়ে তেল মালিশ করে মাথায় পানি দিলে পরে তার জ্ঞান ফিরলো৷ জ্ঞান ফিরার পর তাকে যখন ফুয়াদ জিজ্ঞেস করলো কেন সে অমন করেছিলো, সে অবাক। সে জানেই না সে কি করেছে৷ সে বলে অসম্ভব আমি কেন এমন করবো? উলটো সে নিজেই প্রশ্ন করে বসলো, ওমা!!!! এসব আমাকে কে পরালো? বিছানা সোজা আয়নাতে নিজেকে দেখে সে বারবার ফুয়াদকে বলছিলো, বলোনা, কে আমাকে এমন করে সাজালো? এখন ফুয়াদের মনে একটা ভয় কাজ করতে লাগলো৷ সে ভেবেই নিয়েছে, স্নেহাকে নিয়ে সিঙ্গাপুরে ডাক্তার দেখাতে যাবে৷ স্নেহার নিশ্চয় কোন মানসিক সমস্যা হয়েছে৷

    স্নেহা খুব ক্লান্ত হয়ে পড়লো। বাইরে আর গেলো না তারা৷ রাতে ডিনার শেষে সবাই শুয়ে পড়লো৷ স্নেহাও শুয়ে পড়লো৷ ঘুমিয়ে পড়েছে স্নেহা। বেশ কিছুক্ষন ফুয়াদ স্নেহাকে দেখলো। ফুয়াদের চোখের ঘুম পালিয়েছে৷ সে ভাবছে তার এতো সুখের সংসার, এতো ভালো লক্ষি বউ। কি হলো হঠাৎ তার৷ ভাবতে ভাবতে একসময়ে ফুয়াদ ঘুমিয়ে পড়লো।

    রাত প্রায় তিনটা৷ পুরো ঘর জুড়ে নীরবতা৷ স্নেহা আস্তে করে উঠে দরজা খুলে বের হলো৷ তার খুব পিপাসা পেয়েছে৷ সে ফ্রিজ খুলে পানি খেলো৷ তারপর ফ্রীজ থেকে মিষ্টির প্যাকেট বের করলো। প্রায় এক কেজির মতো মিষ্টি ছিলো বক্সে৷ বক্সটা নিয়ে আস্তে করে লিভিং রুমে ঢুকে সোফায় গিয়ে বসলো৷ তারপর কার সাথে বসে খুব গল্প শুরু করলো৷ খুব হাঁসছে হা হা করে আর সমানে রাখা মিষ্টি গুলো খেয়ে যাচ্ছে।

    স্নেহা যখন ফ্রীজ খুলে পানি নিচ্ছিলো, শব্দ শুনে কাজের বুয়া রুবিনা উঠে এসেছিলো৷ সে চুপিচুপি স্নেহাকে ফলো করলো। সে গ্লাসের দরজায় একপাশ থেকে সব দেখছিলো৷

    স্নেহা বেশ হেঁসে হেঁসে কার সাথে গল্প করছে আর সব মিষ্টি গুলো খেয়ে শেষ করে ফেলছে। দেখে রুবিনা ভাবলো খালাম্মা এতো ডায়টিং করে৷

    যেই মানুষ কত কষ্ট কইরা ডাইটিং করে, অহন এত্তগুলান মিষ্টি খাইতাছে৷ আমি যাই, মানা করমু অহন৷ নয়তো সক্কালে আমারে কইবো মানা করিনাই ক্যান৷

    লিভিং রুমের দরজার দিকে একটু এগিয়ে যেতেই লিভিং রুম থেকে বড় একটা কাঁচের ফুলের টব এসে পড়লো রুবিনার মাথায়৷ রুবিনা ও খালু….গো….. বলে চিৎকার করে মাথা ঘুরে পড়ে গেলো। রুবিনার চিৎকারে ফুয়াদের ঘুম ভেঙে গেলো৷ ঘুম ভেঙে দেখে স্নেহা পাশে শুয়ে আছে৷ স্নেহা স্নেহা বলে কয়েকবার ডেকে দেখলো, বেচারা গভীর ঘুমে মগ্ন। তাই কিছুক্ষন চুপ করে আর কোন শব্দ হয় কিনা অবজার্ব করতে করতে ফুয়াদ আবার ঘুমিয়ে পড়লো৷

    সকালে খাদিজা বুয়া ঘুম থেকে উঠে ননদিনী রুবিনাকে খুঁজে না পেয়ে ঘরের দিকে আসতেই সে চিতকার ও খালাম্মা ও খালু দেইক্ষা যান!!! আয় হায় হায় কি সর্বনাশ অইয়া গেছে!!!

    সে রীতিমতো বিলাপ করেই যাচ্ছে৷
    আমার অহন কি অইবো…
    আমার হউড়ির বহুত আদরের মাইয়ারে আমি কইয়া বইল্লা লইয়া আনছিলাম…
    অহন হ্যায় মইরা গেছে…
    ও খালুজান…
    ও খালাম্মা…
    রক্তের সাগর অইয়া যাইতাছে৷ আফনেরা তত্তরি আহেন৷

    চিৎকার চেচামেচি শুনে স্নেহা আর ফুয়াদের ঘুম ভেঙে গেলো৷ তাড়াতাড়ি নীচে নেমে এসে দেখে রুবিনা মাটিতে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে৷ তার কপাল থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে৷ তাড়াতাড়ি ড্রাইভারকে ডেকে গাড়ি বের করিয়ে রুবিনাকে নিয়ে গেলেন স্কয়ার হসপিটালের ইমার্জেন্সিতে৷ ডাক্তাররা বললেন মনে হয় ওর মাথা ফেটে গেছে৷ সিটি স্ক্যান করতে হবে৷ এখন ডাক্তারের প্রশ্ন কি দিয়ে মাথা ফেটেছে৷ কেউ কিছু বলতে পারছে না৷ এ ঘটনা দেখে তখন ডাক্তার বললেন এটাতো পুলিশ কেস৷ আমি কোন চিকিৎসা করতে পারবো না৷ লেগে গেলো ঝামেলা৷ থানায় জানানো হলো৷ হয়ে গেলো পুলিশ কেস৷

    এদিকে রুবিনার চিকিৎসার পর যখন তার জ্ঞান ফিরেছে। চোখ খুলতেই সে দেখে পুলিশ তার সামনে৷ পুলিশের পাশেই স্নেহা দাঁড়িয়ে। স্নেহাকে দেখার সঙ্গে সঙ্গে তার গত রাতের সব ঘটনা মনে পড়ে গেলো৷ পুলিশ বললো, আপনারা সবাই বাইরে যান৷ রোগীর সাথে আমি কথা বলবো৷ তারপর আপনারা আসবেন৷

    পুলিশ রুবিনাকে জিজ্ঞেস করা শুরু করলো, তোমার মেডাম স্যার কেমন মানুষ?

    ও স্যার খালাম্মা খালু খুব ভালা মানুষ। তেনাগো মতো মানুষ অয় না৷ তয় খালাম্মার শরীরডা বালা না কয়দিন ধইরা৷ আমারে তত্তরি ছাইড়া দেন৷ খালাম্মার লইয়া আমাগো গেরামে ওলিদ মোল্লার কাছে নিতো অইবো৷ আমারে ছাইড়া দেন৷ আমার খালাম্মার লগে আমার কতা কওন লাগবো৷

    পুলিশ স্নেহাকে ভেতরে ডাকলো৷ স্নেহাকে দেখে রুবিনা একটু ও ভয় পেলো না৷ সে ততক্ষণে বুঝে ফেলেছিলো স্নেহার কি হয়েছে৷ সে স্নেহাকে বললো,
    খালাম্মা আফনে কিমন আছইন? স্নেহা বললো ভালো৷ বলেই সে রুবিনাকে জড়িয়ে ধরে বললো, কিন্তু তোমার কি হয়েছিলো রুবিনা? মাথা ফাটালে কি করে৷ রাত বিরাতে কে তোমার মাথা ফাটালো? এখন ভয়ে আর রুবিনার মুখ থেকে কোন কথা হচ্ছে না৷ সে জানে৷ পুলিশের সামনে কাল রাতের কথা বললে স্নেহাকে পুলিশ এরেস্ট করে নিয়ে যাবে৷ স্নেহা আর রুবিনার কথা বার্তা দেখে পুলিশ বের হয়ে চলে গেলো৷

    তারপর রুবিনাকে রিলিজ করে নিয়ে ওরা বাসায় ফিরলো৷

    চলবে…

  • শারমিন (পর্ব-৭)

    শারমিন (পর্ব-৭)

    ক্লাশ শেষ করে সোয়া একটায় পল্লব পরীক্ষা শাখায় গেল।নজরুল ভাইয়ের রুমে তাপসদার সাথে দেখা।নজরুল ভাই ও তাপসদা ওর এলাকার বড় ভাই।একই স্কুলের ছাত্র ছিল।নজরুল ভাই জাহাঙ্গীরনগর থেকে পরিসংখ্যানে পাশ করে এখানে সেকশন অফিসার হিসেবে আর তাপসদা ডিগ্রি পাশ করে এখন পরীক্ষা শাখায় চাকরি করছে।নজরুল ভাই প্রমোশন পেয়ে সহকারী রেজিস্টার।তাপসদা তারই অধীনে আছে।আজ পরীক্ষা শাখায় উপচেপড়া ভীড়। খ- ইউনিটের এডমিশন টেষ্টের রেজাল্ট দিয়েছে।পল্লবের পরীক্ষা শাখায় তাপস ভাইয়ের সাথে ভাল সম্পর্ক থাকায় ও সোজাসুজি নজরুল ভাইয়ের রুমে চলে গেল।
    -কেমন আছেন নজরুল ভাই?
    ★ভাল আছি।তুমি কেমন আছ?
    -আলহামদুলিল্লাহ। আমিও ভাল আছি।
    ★অনেকদিন এদিকে আসছ না যে!
    -লেখাপড়ার চাপে আছি ভাই।
    ★শুনলাম রাজনীতি করছ?
    -না ভাই,তেমন একটা না।
    ★কি মনে করে এলে?
    -একজনের এডমিশন টেষ্টের রেজাল্ট জানতে।
    ★কে হয় তোমার?
    -কেউ না,এমনিই পরিচিত।
    ★তাপস, পল্লবের কেন্ডিডেটের রেজাল্টটা দেখে দাও তো।
    তাপসদা এসে পল্লবের কাছ থেকে রোল নম্বর নিয়ে গেল।কিছুক্ষণ পরে রেজাল্ট নিয়ে এলো।জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন ছাত্র /ছাত্রী একটা ইউনিটে তিনটা সাবজেক্টে পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ পায়।পরীক্ষা শুরু হলে তিনঘণ্টায় তিনটা বিষয়ে আলাদা আলাদা পরীক্ষার খাতায় একঘণ্টা করে উত্তর লিখতে হয়।প্রতিটি ডিপার্টমেন্টের আলাদা রেজাল্টশীট হয়।শারমিন সায়েন্সের ছাত্র হলেও ও শুধু কলা বিভাগের এডমিশন টেস্ট দিয়েছে।তাপসদা রেজাল্ট নিয়ে এসে ওর হাতে দিল।শারমিন ইংলিশ, হিস্ট্রি ও ফিলোসফিতে চান্স পেয়েছে।প্রতিটি সাবজেক্টে ওর সিরিয়াল প্রথম দিকে।হঠাৎ করে শারমিনের প্রতি পল্লবের একটা সমীহ ভাব চলে এলো।
    হলে ফিরে আবুলের ক্যান্টিনে খেয়ে হলের টেলিফোন সেটের কাছে গেল।শারমিনকে ফোন করে খবরটা দিতে হবে।হলের টেলিফোন সবসময় ব্যস্ত থাকে।ছেলেরা মেয়েদের হলে ফ্রেন্ডকে কল দিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা আড্ডা দেয়।বাকিরা লাইনে দাড়িয়ে থাকে।একজনের শেষ হলে আরেকজন শুরু করে।এরমধ্যে কোন সিনিয়র ভাই এলে তাকে আবার সিরিয়াল ব্রেক করে লাইন দিতে হয়।পল্লব দু একদিন ওর ক্লাসমেট বান্ধবীকে ফোন করেছে।কিন্তু কোন রিলেশনস না থাকায় সে কলের স্থায়িত্ব এক মিনিটও হয়নি।অথচ অনেকে ঘন্টার পর ঘন্টা ফোনে কথা বলে।ওর খুব জানতে ইচ্ছে করে,কি বলে ওরা!!!
    ফোনের কাছে গিয়ে দেখে আজ কেউ নেই।ওর আশ্চর্য লাগলো।রিসিভার নিয়ে প্রথমে টিএনটিতে ফিরোজ ভাইকে ফোন দিয়ে শারমিনের নম্বর দিয়ে লাইন দিতে বললো।
    -ফিরোজ ভাই,যতক্ষণ ইচ্ছা কথা বলব।প্লিজ লাইন কেটে দিবেন না।
    ★তোর কি হয়?
    -এখনও কিছু হয় না।
    ★হবে বলে মনেহয়?
    -প্লিজ ফিরোজ ভাই।
    ★আচ্ছা স্যারদের কোন কল না এলে তোর জন্য আনলিমিটেড সময়দিচ্ছি। নে রিং হচ্ছে।
    -হ্যালো।
    ★হ্যালো।
    -কে বলছেন, প্লিজ!
    ★আমি পল্লব
    -সরি,কোন পল্লব?
    ★জাহাঙ্গীরনগরের পল্লব।
    -ও পল্লব ভাইয়া! কেমন আছেন?
    ★ভাল,তুমি কেমন আছো?
    -আমি ভাল নেই।আপনার উপরে অনেক রাগ করেছি।
    ★রাগ করেছো কেন?
    -পরীক্ষার পরে আর এলেন না।আমি কি ওখানের কিছু চিনি? আমার বাসায় আসতে কত কষ্ট হয়েছে।
    ★আমি তোমাকে ভীড়ে হারিয়ে ফেলেছিলাম।
    -খোঁজার চেষ্টা করেননি। জানি।খুঁজলেই পেতেন।
    ★খুঁজেছি। প্রান্তিকেও গিয়েছিলাম।ভেবেছিলাম তোমাকে পাবো।
    -ফোন করতে তো পারতেন! আমার নম্বরতো ছিলো।
    ★ভেবেছি, তুমি কি মনে করো!
    -কি মনে করবো!
    ★না মানে…..
    -এখন যে করলেন!
    ★তোমার পরীক্ষার রেজাল্ট দিয়েছে।তাই।
    -কোন খবর আছে, ভাইয়া?
    ★নারে, কোন খবর নাই।
    -ইশ,খুব ইচ্ছা ছিল।আপনাদের ভার্সিটিতে পড়ার।আমার খুব পছন্দ হয়েছিল।
    ★কতটা পছন্দ?
    -খুব খুব খু-উ-বববব-ই
    ★আর কিছু পছন্দ হয়নি?
    -যেমন?
    ★যেমন ভার্সিটিতে যারা থাকে?
    -আপনারাও খুব ভাল।
    ★তোমার স্বপ্ন সত্যি হতে চলছে।তুমি চান্স পেয়েছো।
    -সত্যি!!!!!সত্যি ভাইয়া!!!
    ★হুম।শুধু চান্সই পাওনি।যে তিনটা সাবজেক্টে পরীক্ষা দিয়েছিলে,সবকটায় চান্স পেয়েছো।
    -কি বলেন!!!সত্যি ভাইয়া!!!
    ★হুম।এবং সবগুলোতে সিরিয়াল পাঁচের মধ্যে।
    -আমি কি স্বপ্ন দেখছি নাকি সত্যি!!
    ★হুম। তুমিতো ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট।
    – ভাইয়া!!!
    ★ আমি যে সুখবর দিলাম।পুরষ্কার কই?
    – অবশ্যই পুরষ্কার দিব।কি পুরষ্কার চান বলেন।
    ★ যা চাই,তাই দিবে?
    – অবশ্যই দিব।অবশ্য আমার সামর্থ্যের মধ্যে হতে হবে।
    ★তোমার সামর্থ্যের মধ্যে তো অবশ্যই।
    – তাহলে ধরে নেন,সেটা অবশ্যই পাবেন।
    ★তোমাদের এডমিশন ২২ থেকে ৩০ শে এপ্রিলের মধ্যে হবে।
    -আমি ২২ তারিখেই আসবো।
    ★ তাহলে দেখা হবেতো!
    -কি বলেন! আমার ভর্তির সব আপনাকে করে দিতে হবে।
    ★আচ্ছা
    – আপনার রুমের ঠিকানা দিন।আমি এসে যোগাযোগ করবো।
    ★ঠিকানাটা লিখে নাও।
    পল্লব ওর ঠিকানাটা শারমিনকে দিল।এমন সময় ফিরোজ ভাই লাইন কেটে দিল।হয়তো কোন স্যার ঢাকাতে কল করবে।খুশিমনে পল্লব কমনরুমে টিটি খেলতে গেল।

    চলবে…

  • শারমিন (পর্ব-৬)

    শারমিন (পর্ব-৬)

    সোলসের অনুষ্ঠান শেষ হতে হতে রাত একটা বাজলো।সবাই খুব মজা করলো।তার আগে বিকেলে আর একটা মজার ঘটনা ঘটে গেল।রাঙা অনেকদিন ধরেই শিল্পিকে পছন্দ করতো।আড়েঠ্যাড়ে অনেকদিন বলতেও চেয়েছে।কিন্তু সাহসে কুলায়নি।আজকে কোথা থেকে এত সাহস পেল কে জানে।দুপুরে লাঞ্চের সময় রাঙা এক তোড়া গোলাপ হাতে নিয়ে সবার সামনে বলে বসল।

    -তোদের সবার সামনে আমি একটা কথা বলতে চাই।তোরা বিশজন আমার বন্ধু।আর একজনকে বন্ধু না ভেবে নিজের জীবনসঙ্গী হিসেবে ভেবে আসছি।
    সবাই সবার মুখ চাওয়াচাওয়ি করে একটা মুখে এসে থমকে গেল।সে মুখবুজে হাসছে।
    -আমি ওকে প্রথম যেদিন দেখি সেদিনই ভালবেসে ফেলি।এতদিন নিজের কাছে লুকিয়ে রেখেছি।আর পারছি না।এমএইচ হলের বাগান থেকে বিশটা গোলাপ চুরি করে এনেছি।যে আমার মন চুরি করেছে সেই চুন্নিকে আমার বিশ বসন্তের বিশটা গোলাপ উপহার দিতে চাই।
    এই বলে রাঙা ফুলের তোড়াটা শিল্পিকে এগিয়ে দিল।শিল্পিও স্বাভাবিকভাবে ফুলগুলি গ্রহন করলো।পল্লবরা সবাই হাততালি দিয়ে ওদের নতুন সম্পর্ক বরন করে নিল।
    রাজু দাঁড়িয়ে বললো,”এবার আমরা শিল্পিকে কিছু বলার জন্য অনুরোধ করছি”।
    -আমরা চল্লিশ জন বন্ধু একসাথে পড়ি।তোমরা চব্বিশ জন ছেলেবন্ধু আর আমরা ষোলজন মেয়ে বন্ধু।সবসময় ফেভিকলের মত মিশে আছি।আজ রাঙা এর থেকে দুজনকে অশুভ উদ্দেশ্যে আলাদা করতে চাচ্ছে। ওর উদ্দেশ্য সফল হবে না।আমরা সবাই একইভাবে মিলেমিশে থাকবো।রাঙা খুব ভাল ছেলে।আমি ওর চেয়েও ভাল মেয়ে।আমাকে পেতে হলে তোমাদের সবাইকে ওর ট্রিট দিতে হবে।আর মুক্তমঞ্চে অনুষ্ঠানের সময় তোমাদের সাথে একসাথে অনুষ্ঠান উপভোগ করতে দিতে হবে।তোমরা সব বন্ধুরা আমাদের জন্য দোয়া করো।
    সবাই একসাথে হাততালি দিয়ে উঠলো।রাঙা দাড়িয়ে বললো,” শিল্পির আবেদন মঞ্জুর করা হইলো।আগামিকাল ডিনার আমরা হাইওয়ে ইনে করব।”
    সবাই হাততালি দিল।তবে প্রথম দিনেই শিল্পির একটা চাওয়া নামঞ্জুর হলো। রাতের মুক্তমঞ্চের অনুষ্ঠানে শিল্পি ও রাঙাকে দেখা গেল না।ওরা তখন সমাজবিজ্ঞান অনুষদের পিছনে নতুন পাঠে ব্যস্ত।
    আজকের সকালটা আর পাঁচটা সকালের মতোই।কিন্তু পল্লবের কাছে মনেহলো কি যেন স্পেশাল কিছু ওর জন্য অপেক্ষা করছে।আজ শারমিনের এডমিশন টেষ্টের রেজাল্ট দিবে।আজকে আবার অনেক কাজও ওকে করতে হবে।সকাল সকাল উঠে হাতমুখ ধূয়ে গোসল করে রেডি হয়ে নীচে এলো। এসে দেখে কালাম ভাইয়ের দোকান এখনও খোলেনি।আল বেরুনী হলের পিছনে ইসলামনগরে কালাম ভাই থাকে।হলের দুই ব্লকের দুইটা দোকান।বি ব্লকের দোকান চালায় নুরু মামা আর এ ব্লকের দোকান চালায় কালাম ভাই।জাবি’র সকল কর্মচারী আর ছাত্র-ছাত্রী দের ভিতরে মামা-খালা সম্পর্ক হলেও সবাই কালামকে মামা না বলে ভাই বলে ডাকে।ব্যাপারটা একটা রহস্য।
    কালাম ভাই এখনও আসেনি দেখে পল্লব মিলন মামার লণ্ড্রীতে গেল সেই দিনের জামাকাপড় আনতে।মিলন মামা চারটা প্যান্ট আর চারটা শার্ট প্যাকেট করে দিল।চার টাকা মজুরি হলে পল্লব দশ টাকার একটা নোট দিলো।
    -সকালে কই ভাংতি পামু মামা।এহনই দোহান খুলছি।
    ★আমার কাছেতো ভাংতি নাই মামা।
    -তাইলে কালামের দোহানে নাস্তা খাইয়া ভাংগাইয়া মোরে দিয়েন।
    ★আচ্ছা
    পল্লব চলে যাচ্ছিল। মিলন মামা পিছন থেকে ডাক দিলো
    -হোনেন মামা।
    পল্লব পিছন ফিরে তাকালো।
    -হেদিন যে জামা দেছেলেন,হের পকেডে এই কাগোজডা পাইছি।মুই রাইখ্যা দিছি।
    বলে শারমিনের রোল নম্বর ও ফোন নম্বর লেখা কাগজটা বাড়িয়ে দিল।
    পল্লবের ভিতরে তেত্রিশ হাজার কিলো ভোল্টের বিদ্যুৎ শক দিয়ে গেল।বাকরুদ্ধ হয়ে ফ্যালফ্যাল করে মিলন মামার দিকে তাকিয়ে রইলো।গলাটা কেমন জানি শুকিয়ে আসছে।মাথাটা ভনভন করে ঘুরছে।সামনের বেঞ্চিতে বসে পরলো।মিলন মামা অবাক হয়ে গেল। এক গ্লাস পানি এনে পল্লবকে দিলে ঢোক ঢোক করে সবটা খেয়ে ফেললো।
    -মামা আপনি এমন করছেন কেন?
    একটু ধাতস্থ হয়ে পল্লব বললো,
    ★মামা তুমি আমার কি যে উপকার করেছো!পুরা দশ টাকাই তোমাকে গিফট দিলাম।আরও দশ টাকা নাও।
    বলে মানিব্যাগ থেকে আরও দশ টাকার একটা নেট মিলন মামাকে দিয়ে রুমের দৌড় দিল।মিলন মামা পল্লবের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো।

    চলবে…

  • শারমিন (পর্ব-৫)

    শারমিন (পর্ব-৫)

    বুধবারে ক্যাফেটেরিয়ায় দুপুরে স্পেশাল লাঞ্চের ব্যবস্থা হয়। চিকেন বিরিয়ানি সাথে কাবাব আর কোক। বিশ টাকা করে বিরিয়ানি। কাবাব তিন টাকা আর কোক চার টাকা। সাতাশ টাকায় ফুল প্যাকেজ। দুইটা কাবাব নিলে ত্রিশ টাকা। আগেভাগে কুপন না কাটলে মিস।পল্লবের আজ এগারোটা পঁচিশ থেকে বারোটা পনের পর্য্যন্ত ক্লাশ অফ। এই সময়ে ওরা ক্যাফেতে আড্ডা দেয়। চা, শিঙাড়া, সিগারেট আর আড্ডা-গান। সমানে সমান চলে।

    পরীক্ষা শেষ করেই সবাই ক্যাফেতে চলে এলো। পরিমল কাউন্টারে নাই। সুশান্ত আজকে ডিউটি করছে। বিরিয়ানির দিন ডিপার্টমেন্টের সব বন্ধুরা মিলে একসাথে কুপন কেটে রাখে। আজকে ওরা বাইশজন দুপুরে একসাথে খাবে। রাজু সবার কাছ থেকে সাতাশ টাকা করে নিয়ে সুশান্তের কাছে দিয়ে বাইশটি কুপন কেটে নিয়ে এলো। আখলাক স্যারের পরীক্ষাটা সবার ভাল হয়েছে। তাই সবার মন খুব ভাল। ইকোনোমিক্সে ওনার মত এত ভাল শিক্ষক সারা বাংলাদেশে আর নেই। কোন ছাত্র -ছাত্রী কখনও ওনার ক্লাশ মিস করেন না।

    পরশু পহেলা বৈশাখ। তার প্রস্তুতি চলছে। ক্যাফেটেরিয়া সরগরম। মুক্তমঞ্চে সাতদিন ব্যাপি অনুষ্ঠান গত পরশু থেকেই শুরু হয়েছে। আজকে সোলসের অনুষ্ঠান। তপন চৌধুরীর অনেক ভক্ত আছে জাবিতে। বিকেলে তাড়াতাড়ি না এলে মুক্তমঞ্চে জায়গা পাওয়া যাবে না। জাবির ট্রাডিশন খুব সুন্দর।সব ইয়ারমেট দলবেঁধে একসাথে বসে মুক্তমঞ্চে অনুষ্ঠান দেখে। সিনিয়র জুনিয়র খুনসুটি চলে। এখানে সবাই সবাইকে তুমি বলে সম্বোধন করে।তুমি ভাইয়া বা তুমি আপু। আর অফিস স্টাফ সবাই মামা আর খালা।

    সাড়ে বারোটা থেকে দুপুরের লাঞ্চ শুরু হয়। আড়াইটায় শেষ।আগে না এলে সীট পাওয়া যায় না। খাবার পরেও সবাই যার যার টেবিলে বসে আড্ডায় মেতে উঠে। পল্লবদের আজকে বারোটা পনেরো থেকে তাজুল স্যারের ক্লাশ আছে। তাই ওদের আজকে খাবার সময় সীট পেতে কষ্ট করতে হবে। চা শিঙাড়া খেয়ে ওরা তাজুল স্যারের ক্লাশ করার জন্য ডিপার্টমেন্টে রওয়ানা দিল।

    দশটার দিকে টেলিফোনের শব্দে শারমিনের ঘুম ভাঙলো। কালরাতে কখন ঘুমিয়ে পরেছে সেটা মনে নেই। ওদের বাসার টেলিফোন সেট আগে বাবা-মায়ের রুমে ছিল। শারমিনের বিয়ের পরে ওর রুমে টেলিফোন সেটটি চলে এসেছে। তমাল প্রায় প্রতিদিন ওকে ফোন করে। মা-বাবার রুমে বসে বরের সাথে কথা বলতে কেমন লাগে! তাই ওর রুমে ফোন দেয়া। আজও তমাল ফোন করেছে। শারমিন ফোন সেটটা টেনে নিলো।

    হ্যালো
    -কি করো?
    ★ঘুমাই
    -কেন ঘুমাও?
    ★ভাল লাগে
    -ঘুমিয়ে কি করো?
    ★স্বপ্ন দেখি
    -কাকে দেখ?
    ★একটা সুন্দোর ছেলেকে
    -কি দেখ?
    ★তার হাত ধরে হাঁটছি
    -ছেলেটা কে?
    ★তাতো বলা যাবে না
    -একটু ক্লু দাও।
    ★বেশ লম্বা,স্লিম,সুন্দোর দুটি চোখ
    -তা কোথায় হাটছো?
    ★জাহাঙ্গীরনগরের সবুজ বনে
    -মানে?
    ★মানে হলো কাল জাবিতে এডমিশন টেস্ট দিলাম। এত কষ্ট করে এলাম যে, এখন শরীর ব্যাথা করছে। সারাপথ ঝুলেঝুলে এলাম। বিছানা থেকে উঠতেও পারছি না। তুমি কেমন আছ?
    -ভাল নাইরে শর্মী। কিছুই ভাল লাগছে না। সবকিছু ফেলে চলে আসতে ইচ্ছে করছে।
    ★দেখতে দেখতে চারটা বছর চলে যাবে। মন দিয়ে স্টাডি করো। আমিও ততোদিনে লেখাপড়া শিখে তোমার উপযুক্ত হয়ে উঠি।
    -তুমি যা আছ, তাতেই আমি খুশি।
    ★আমি খুশি না।
    মায়ের ডাকে ওদের কথা আর এগোলে না। শারমিন উঠে হাত মুখ ধুয়ে নাস্তার টেবিলে চলে গেল। কাল রাতেও কিছু খাওয়া হয়নি। অনেক খিদে লেগেছে।

    চলবে…

  • শারমিন (পর্ব-৪)

    শারমিন (পর্ব-৪)

    বাসায় এসে শারমিন যখন পৌছলো ততক্ষণে মাগরিবের আযান হয়ে গেছে। এসেই সোজা ওয়াসরুমে গিয়ে একঘণ্টা ধরে গোসল করে যখন বেরোল, ততক্ষণে চোখ লাল হয়ে গেছে। খুব ধকল গেছে আজ। কোথাও ভর্তি হতে এত ভীড়, জাবিতে না গেলে ওর জানাই হতো না। বাসের জন্য অনেকক্ষণ দাড়িয়ে তারপরে ঠেলাঠেলি করে যদিওবা একটা বাসে উঠতে পারলো কিন্তু বসার জন্য কোন সীট পেলো না। সারাপথ ঠায় দাঁড়িয়ে এলো। রাস্তায় চরম যানজট। আড়াইটায় বাসে উঠে পল্টনে যখন নামলো তখন ছয়টা বাজে। এতটা পথ জীবনে প্রথম দাঁড়িয়ে এলো। তবে আশ্চর্য, ওর একটুও খারাপ লাগলো না। সবাই ওর সমবয়সী। পরিচয় নাই, তবুও কেমন যেন আপন। ছোটছোট বন্ধুর গ্রুপ। হইচই, চেঁচামেচি, গান, মনেহয় সবাই পিকনিক করতে যাচ্ছে। অনেক কঠিন জার্নিও সঙ্গী পেলে কেমন প্রাণবন্ত হয়ে উঠে।

    পল্লবের যখন ঘুম ভাঙলো তখন রাত ঠিক দশটা। সবাই ম্যাকগাইভার দেখে কমনরুম থেকে বের হচ্ছে। তাড়াতাড়ি উঠে হাতমুখ ধূয়ে নীচে নামলো। কালাম ভাইয়ের দোকানে নাস্তা খেয়ে সামনের ফ্লোরে বসে সিগারেট খেতে খেতে আজকের কথা ভাবছিল পল্লব। মেয়েটার মায়াবি মুখটা বারবার কেন মনে পরছে! কালকে আখলাক স্যারের টিউটোরিয়াল। কিছুই এখনও পড়া হয়নি। শফিকের কাছ থেকে নোট নিতে হবে। রাতের ভিতরে মোটামুটি কাভার করতে পারবে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনটা কেমন করে জানি সবকিছু বদলে দিলো। এখন পড়াশোনা করতে বসে রাত বারোটার পরে। আহারে, আগের দিনগুলি কত না পরিপাটি জীবন ছিল!!

    শফিকের রুমে আর যাওয়া হলো না। সূর্য, হুমায়ুন আর স্বপন এসে তাস খেলার জন্য পল্লবকে ডেকে নিয়ে গেল। পল্লব খুব ভাল তাস খেলে। অকশন ব্রীজে ইউনিভার্সিটি চ্যাম্পিয়ন। সূর্য ওর পার্টনার। হুমায়ুন আর স্বপন রানার্স আপ। কমনরুমে খেলা শুরু হলো। সতেরো ড্রিল খেলা হবে। সবাই খেলা দেখতে চলে এলো।

    যখন খেলা শেষ হলো,তখন রাত একটা বিশ! হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর পল্লবরাই জিতলো। আসলে পল্লব এত ভাল কার্ড খেলে যে ওকে হারানো শক্ত। আজ রাতে ও আর নিজের রুমে যাবে না। শফিকের রুমে গিয়ে গ্রুপ স্টাডি করে বাকীটা সময় কাটিয়ে দিবে।

    শারমিন খেয়েদেয়ে যখন ঘুমাতে গেলো তখন হঠাৎ কবে লক্ষ্য করলো দু’চোখে কোন ঘুম নেই। সারাদিনের ক্লান্তি কোথায় জানি চলে গেছে। মিউজিক প্লেয়ারে চিত্রা সিংয়ের গান লো ভলিউমে ছেড়ে দিয়ে ‘যায় যায় দিন ‘ নিয়ে পড়তে বসলো।চিত্রার অপূর্ব কন্ঠে তখন বেজে চলেছে-
    “তুমি এসে আমার মনে
    ফাগুন জাগালে।”

    সকালে শফিকে ধাক্কায় ঘুম ভাঙলো পল্লবের। সাড়ে দশটায় আখলাক স্যারের টিউটোরিয়াল। নয়টা বাজে। রাতে পড়তে পড়তে কখন ঘুমিয়ে পরেছে খেয়াল নাই।তাড়াতাড়ি হাতমুখ ধূয়ে একটা জামা কোনরকম পরে বেরিয়ে পরলো। ক্লাশে যাবার সময় মিলন মামার লন্ড্রিতে ময়লা কাপড়গুলো ওয়াস করতে দিয়ে গেল।

    তারই কোন একটি শার্টের পকেটে শারমিনের পরীক্ষার রোল নম্বর ও বাসার ফোন নম্বর ছিল।

    চলবে…