Tag: ধারাবাহিক গল্প

  • নিশির প্রবাস (পর্ব-১০)

    নিশির প্রবাস (পর্ব-১০)

    আজ সুমন এর অফডে, তারপর ও সুমন নাস্তা করে তাড়াহুড়া করে বের হয়ে গেলো, একটা ফোন এসেছিলো। কাল রাতে বললো দুই বেড রুমের বাসা নিতে হবে। এই বাসাটা ঢুকে একটা স্পেস (লিভিং রুমের মতো)ওটার সাথে ওপেন কিচেন। আর ১টা বেড রুম। এনাফ। দুই বেড রুমের বাসা কেনো?
    আজ সুনিল কে ফোন করবে, জিজ্ঞেস করবে, আচ্ছা কি জিজ্ঞেস করবে? দুই বেড রুমের বাসা খুজছে, কেমন হাস্যকর হবে বিষয় টা, আচ্ছা আর একটু দেখা যাক। সুনিল কে ফোন করলো তারপর ও একটা, ও তো ফোন করেই না, সুনিল ই ফোন করে, সুনিল ওর ফোন পেয়ে খুব খুশি, এতদিন এ সুনিল কিছুটা জানতে পেরেছে নিশি আর সুমন এর সাংসারিক জীবন যে খুব একটা সুখের না। সুনিল কে উপমার (সুনিলের গার্ল ফ্রেন্ড) কথা জিজ্ঞেস করলো,কিছুক্ষণ কথা বলে রেখে দিলো, মানুষ এর কথা বলার কতো টপিক, সুমন মনে হয় গুটি কয়েক কথা ছাড়া কথা বলতে পারে না।
    একটা ফোন এলো, নিশি হ্যালো হ্যালো করলো, ওপাশ থেকে কেউ কথা বলছে না। ইদানীং এটা হয়, একদিন সুমন এর চর ও খেতে হয়েছিলো এই জন্য, বলছিলো তোর ফোন, আমি ধরাতে কথা বলছে না। কয়েকটা বাংগালি প্রোগ্রাম এ যাওয়াতে দেখলো এখানে ভালোই বাংগালি আছে। অনেকেই নিশির সাথে ফোন এ কথা বলতে চায়, খুব ইন্টারেস্ট ও দেখিয়েছে দুই এক জন। ইনিয়ে বিনিয়ে কতো কথা।
    এ সবে নিশির পুরুষ মানুষ এর প্রতি একটা বিরুপ ধারনা ছাড়া আর কিছুই আসে নাই।
    নিশির আজ ডে শিফট, ও রান্না করে বের হয়ে গেলো কাজের উদ্দেশ্যে।
    রাতে বাসায় এসে দেখলো সামনের রুম টাতে অনেক বিয়ার এর ক্যন। সুমন বেড রুমে ঘুমাচ্ছে। অজানা কারনে নিশির খুব ভয় লাগছিলো, মনে হচ্ছিলো খুব খারাপ কিছু আসছে সামনে। সুমন সিগারেট খায় না, তাই বাড়িতে কোন এ্যশট্রে নেই, একটা বাটি তে অনেক গুলি সিগারেট এর ফিল্টার।তারমানে কেউ এসেছিলো বাসায়।
    কে হতে পারে?
    নিশি কাজে জায়গায় গিয়ে দেখলা, একটা রব রব অবস্তা, একটা কর্নার সাজানো হচ্ছে বেলুন দিয়ে, কি ব্যাপার? কাল মেনুয়েল এর জন্মদিন,
    রাত ১২টায় সেলিব্রেশন হবে, সব এম্পোয়িকে থাকতে হবে রাত ১২টা অব্দি, আর ১২টা থেকে প্রথম ১০ জন কাস্টোমার ফ্রি। কি যন্ত্রণা, ওর আজ ১০ টা অব্দি ডিউটি। ২ ঘন্টা ও কি করবে? সেন্ডি বললো তুমি বাসায় যেয়ে আবার আসতে পারো। দেখা যাক। বিকাল ৫ টার মতো, ও ক্যাশ এ বিল করছে, সামনে দেখলো একটা পরিচিত মুখ, আরিফ সাহেব, পিছনে আরো লোক দাড়ানো, তাই একটা হাসি দিয়ে ” How are you” জিজ্ঞেস করা ছাড়া আর কিছু বলার মতো অবস্তা নেই। ওইপাশ থেকে বাংলায় একটা উত্তর এলো, ও বুজলো না, চেঞ্জ ফেরত দিয়ে নেক্সট কাস্টোমার এর দিকে মন দিলো। ( ও ভাবছে এতো ফাস্ট ফুড এর দোকান রেখে এই টা তেই আসতে হবে কেনো উনার!!, আচ্ছা আসতেই পারে, ও খুব বদ হয়ে যাচ্ছে দিন দিন) যাওয়ার সময় একটা টিস্যু দিয়ে গেলো, উনার স্টাইল, কিছু লিখা। নিশি দেখার সময় পাচ্ছে না, ক্যাশ এর এই এক প্রব্লেম, এক মিনিট এর জন্য মুভ করা যায় না, ইস আজ এতো লোক কেনো!! অবশ্য এখন রাশ আওয়ার, ইচ্ছা করলে নিশি এখন ই পড়তে পারে, কিন্ত উনার এক লাইন এর লিখা বুঝতে ও সময় লাগে, আর এটা মনে হচ্ছে একটু বড় লিখা। নিশি পকেট এ রেখে দিলো। কাজের ফাকে ভাবলো ১০ টার দিকে বাসায় ফোন করে সুমন কে বলে দিবে রাত ১২টার প্রোগ্রাম শেষ করে একবারেই আসবে। বাসায় যেয়ে কি করবে, বরং এই দুই ঘন্টা আশেপাশে অনেক সুন্দুর সুন্দুর জায়গা আছে অই গুলি দেখবে। এখন একটু ফ্রি সময় পেলো, বাথরুম এ যেয়ে পড়লো কি লিখা,
    যার বাংলা করলে হয়-

    নিজেকে খুব চিপ/ ক্যাবলা মনে হচ্ছে তোমার কাছে, তুমি কি আমাকে তাই মনে করো?🙄🙄

    ইউনিফর্ম এ যে কাউকে এতো সুন্দুর লাগতে পারে, আজ ই প্রথম অনুভব করলাম।🤩🤩

    সেদিন এর দুটো গান ই তোমাকে ডেডিকেট করে গাওয়া, তোমাকে জানালাম।🤭🤭

    জানিনা আমার নাম্বার রেখেছো কি না,
    তারপর উনার নাম্বার…….।
    নিশি বুঝতে পারছে না, ওর কি আচরণ এ উনি এমন কথা লিখতে পারে!!!
    ও কাজ থেকে বের হয়ে বুথ থেকে ফোন করলো উনার নাম্বার এ, – আমার কোন আচরণ এ আপনার এরকম মনে হলো? “জানি না, মনে হয়েছে” – আজিব, আপনার অকারনে একটা কিছু মনে হবে, আর আপনি বলবেন?
    “অকারণ নয়”। – যাই হোক আপনাকে আমি চিপ ভাবি নাই কখোনোই। “আমরা কি একটু সামনা সামনি কথা বলতে পারি? ” – পারি, কাল জানাবো।
    “আমি তোমার ফোন এর জন্য অপেক্ষায় থাকবো”
    বাসায় ফোন করলো, সুমন ফোন ধরলো না, ও একটা ভয়েজ মেসেজ রেখে দিলো।
    কি বলবে আরিফ সাহেব? কি বলতে পারে?
    ও কাজের জায়গায় ফিরে দেখলো এলাহি কান্ড, ডান্স ফ্লোর এর মতো করা হয়েছে, ওখানে সব কলিগ রা ডান্স করছে, ১২টা বাজতে এখন ও
    ১৫ মিনিট বাকি, ওকে সেন্ডি হাত ধরে টেনে ডান্স ফ্লোর এ নিয়ে গেলো, বাহাঃ ওর খুব মজা লাগছে ডান্স করতে,
    ও ভুলেই গিয়েছিলা স্কুল এর প্রতিটা প্রোগ্রাম এ ও নাচতো।
    ১২ টা, সব লাইট অফ হয়ে গেলো ২ সেকেন্ড এর জন্য, লাইট অন হলো মেনুয়েল আসলো, সবাই একসাথে উইশ করলো। কেক কাটা হলো, একে একে সবাইকে কেক খাওয়ালো, ওকে ও খাওয়ালো।
    তারপর শুরু হলো,

    একজন একজন করে মেয়ে মেনুয়েল এর কাছে যাচ্ছে, মেনুয়েল একটা করে গিফট এর বক্স তুলে দিচ্ছে, আর মেনুয়েল এর ঠোট এ একটা করে কিস করছে, আবার উইশ করছে, আর ছেলেরা হেন্ডশেক করছে।
    নিশির পালা এলো, ও গিফট এর প্যাকেট মেনুয়েল হাত থেকে নেওয়ার সময় মেনুয়েল সবার মতো ওকে ও কিস করতে গেলো, ও গিফট এর প্যাকেট নিয়েই এক ঝটকায় সরে গেলো। মেনুয়েল এর দিকে তাকাতেই ভয় লাগছে।
    ও সেন্ডি কে আগেই বলে রেখেছিল সাবওয়ে স্টেশন অব্দি ওরা একসাথে যাবে। সেন্ডি ওকে বললো “তুমি কাজ টা ঠিক করো নাই” – কোন কাজ টা?
    ” তুমি দেখো নাই? যখন মেনুয়েল তোমার দিকে তার মুখ বাড়িয়ে দিয়েছিলো, তুমি ঘুরে একটা দৌড় দিলা, অপমান এ মেনুয়েল কেমন লাল হয়ে গিয়েছিলো”, – আমি মেনুয়েল কে আমার ঠোট এ কিস করতে দিবো!!
    আমাদের মদ্ধে এইগুলি নেই। “তুমি গাল এর সাথে গাল লাগিয়ে ও উইশ করতে পারতে, মেনুয়েল খুব অপমানিত হয়েছে, ওর মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছিল, আর ওখানে ও সবাই এটা নিয়ে কথা বলছিলো”।

    চলবে…

  • নিশির প্রবাস (পর্ব-৯)

    নিশির প্রবাস (পর্ব-৯)

    মেনুয়েল এর সামনে বসে নিশি ঘামছে। মেনুয়েল জিজ্ঞেস করলো ” এখানে কাজ করতে তোমার কেমন লাগছে” – জি, খুব ভালো। “নেক্সট উইক থেকে তুমি ক্যাশ এ কাজ করবে” আচ্ছা ধন্যবাদ।
    ” তুমি কি আমাকে আর কিছু বলতে চাও? “

    জি না। আমি কি যেতে পারি এখন?
    ” যাও, তোমার বাকি দিন টি ভালো কাটুক”
    নিশির খুব খুশি লাগছে, সিলভি যে কি উলটা পাল্টা কথা মাথায় ঢুকালো, আজাইরা। ও চেঞ্জ করে ইন্ডিয়ান মার্কেট এ গেলো, আজ ওর পরনে ছিলো জিন্স, লাল শর্ট টি শার্ট, উপরে সাদা ফুল স্লিভ সাদা শার্ট, বোতাম খোলা। শপিং মল টা ৪ তলা। ও দোতালায় উঠে একটা দোকান এর সামনে দাঁড়িয়ে ডল কে পড়ানো একটা লেহেঙ্গা দেখছে, কেউ একজন পিছন থেকে শুদ্ধ বাংলায় বললো ” আমি কি ঠিক মানুষ টা কে দেখছি?”
    ও তাকিয়ে দেখে আরিফ সাহেব, আপনি? ” জি কাল সপ্নে দেখলাম আজ তুমি এই মার্কেট এ আসবে, তাই সকাল থেকে এসে ঘুরাঘুরি করছি” – হাহাহাহা, কি যে বলেন আপনি। “দাড়াও দাড়াও তুমি হাসতে পারো”? — কেনো আমি কি মানুষ এর বাইরে?
    “সরি, আমি কিছু মিন করে বলি নাই, মনেহচ্ছে তুমি মন খারাপ করেছো, আমি এইভাবে তোমাকে কখোনো হাসতে দেখি নাই তাই” – না মন খারাপ করি নাই, আপনি আমাকে কয়দিন দেখেছেন? কতটুকু চেনেন? “চোখের দেখা দুইদিন দেখেছি, মন দিয়ে কতোবার দেখেছি হিসাব নেই, আর কতটুকু চিনি? যতটুকু তুমি ও চেনো না নিজে কে” – নিশির বুকের ভিতর টা কেমন যেন করে উঠলো। নিশি তারাতারি বললো, আচ্ছা যাই তাহলে, আমার একটু কাজ আছে। ” আমি যদি তোমার সাথে থাকি? ” নিশি বললো না। “এক কাপ কফি খেতে চাইলে কি খুব বেশি চাওয়া হবে?” – চলুন।
    নিশি দেখলো আরিফ এর হাতে ছোট একটা ব্যাগ, বোধহয় কিছু কিনেছে। কফি শপ এ বসে আরিফ জিজ্ঞেস করলো ” আজ সন্ধায় দেখা হচ্ছে তো” জানি না, আমার হাসবেন্ড জানে। ” দেখা হবে “

    এটা ও সপ্নে দেখেছেন? ” না লিস্ট কনফার্মেশন এ মিস্টার & মিসেস সুমন নাম দেখেছি”।
    ও আচ্ছা। আরিফ উঠে গেলো বিল দিতে, কফি খেয়ে বিদায় নেওয়ার সময়, নিশির হাতে একটা টিস্যু দিয়ে গেলো, কিছু লিখা।

    SORRY, I never wanted to hurt you. I will never give up… ( লাস্ট এর লাইন টা তে কি বোঝাতে চাইছে, নাইন এ পড়া একটা মেয়ে ও, এতো কঠিন ইংরেজি )
    নিশির আর শাড়ি কিনতে ইচ্ছা করছে না, অনেক শাড়ি নিয়ে আসছে, টাচ করা হয় নাই। ও বাসায় যেয়ে লাগেজ খুলে তিন টা শাড়ি বের করলো, আসার সময় ওর বড় ভাবি, ছোট মামি, আম্মা সুমনের জন্য পাঞ্জাবি দিয়েছিলো, একদিন নিশি বের করতে চেয়েছিলো, সুমন বলেছিলো “এইগুলি পরার সময় আছে নাকি এখন?” আজ তো ঈদ পুর্নমিলনি, আজ তো পরাই যায়। ও শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে দেখলো সুমন চলে আসছে, সুমন শাওয়ার নিতে ঢুকলো, নিশি আয়নার সামনে বসলো, ও খেয়াল করলো ওর চুল গুলি বেশ লম্বা হয়ে গেছে ( কাধ ছাড়িয়ে বেশ খানিক টা নিচে, নেট দিয়ে আটকে রাখে বলে হয়তো মেনুয়েল এর চোখে পরে নাই ) হেয়ার ড্রাইয়ার এ চুল শুকাতে শুকাতে সুমন বের হলো শাওয়ার নিয়ে। নিশি সুমন কে প্রথম শাড়ি গুলি দেখিয়ে বললো, দেখো না কোন টা পরবো? সুমন না দেখেই উত্তর দিলো ” পড়ো একটা”। আচ্ছা দেখো এখানে তিন টা পাঞ্জাবি আছে, ঈদ এর প্রোগ্রাম, তুমি পাঞ্জাবি পড়ো না প্লিজ।
    ” না আমি সুট পরবো”
    নিশি হাল্কা আকাশী কালার এর উপর গোলাপি ফুল, এম্ব্রডারি করা একটা শাড়ি পারলো।
    নিশি রা যেতে যেতে অনেকেই চলে এসেছে, এখন ও আসছে। দুই তিন জনের সালাম আদান প্রদান হলো, দেখলো আরিফ সাহেব এগিয়ে আসছে, সুমনের সাথে হেন্ডশেক করলো, ওর চোখের দিকে তাকিয়ে কেমন একটা হাসি দিলো, সামনের একটা শারি তে বসিয়ে আবার অন্য দিকে গেলো। সুমন উঠে গেলো অন্য বাংগালি দের সাথে হাই হেলো করতে। ” পাশ থেকে আরিফ এসে জিজ্ঞেস করলো টেলিপ্যাথি বুঝো? ও একটু বিব্রত বোধ করলো, “আমার পাঞ্জাবি আর তোমার শাড়ি” নিশি একটু অবাক হলো, উনি ও হালকা আকাশী পাঞ্জাবী। “তোমাকে আজ অন্যরকম সুন্দুর লাগছে” নিশির হাত পা কাপছে, সুমন দেখলে বাসায় যেয়ে কি করে কে জানে।
    একটু পর প্রোগ্রাম শুরু হলো, একটা মেয়ে এংকরিং করছে, লাস্ট টাইম দেখেছিলো, আরিফ সাহেব এর সাথে খুব ভাব।
    বাচ্চা কতোগুলি মেয়ে নাচলো ( ফাগুন এর ই মোহনায়) এক ভাবি গাইলো ( আকাশ প্রদিপ জলে) তারপর ডাক পড়লো আরিফ সাহেব এর।

    বাবা উনি গান ও গায়। উনি গাইলেন ( যেনো কিছু মনে করো না কেউ যদি কিছু বলে, কতোকিছু সয়ে যেতে হয় ভালোবাসা হলে) আজিব গান গাওয়ার সময় সে বার বার নিশির দিকে তাকাচ্ছে🙄, সবাই রিকোয়েস্ট করলো আর একটি গান এর, তার পর গাইলেন ( ও চাঁদ সামলে রেখো জ্যোৎস্না কে) আজ নিশির কপালে খারাপি আছে, এম্নিতেই সুমন তিনবার বলে ফেলছে “সবাই তোমাকে দেখছে কেনো” একবার নিশি উত্তর দিয়েছে, তাদের কে জিজ্ঞেস করো, আর একবার উত্তর দিয়েছে, এরপর থেকে আমাকে আর নিয়ে আইসো না। ” সবার সাথে মিশতে হবে, কমিউনিটির সাথে না মিশলে যখন আমরা পার্মানেন্ট হবো, কেউ ডাকবে না”।
    বাসায় আসতে আসতে রাত ২ টা, কাল সকালে কাজ, ঘুমাতে হবে।
    ফ্রেশ হয়ে ও যখন ঘুমাতে গেলো, সুমন বললো “ভাবছি দুই বেডরুম একটা ফ্লাট নিবো” – কেনো আমরা দুইজন মানুষ, দুই বেডরুমের ফ্লাট দিয়ে কি হবে, ভাড়া ও তো বেশি লাগবে।
    সুমন উত্তর দিলো “দরকার আছে”।

    চলবে…

  • নিশির প্রবাস (পর্ব-৮)

    নিশির প্রবাস (পর্ব-৮)

    এরমাঝে বাংলাদেশ এ নিশির কথা হয়েছে। আব্বা আম্মা খুবি অবাক নিশি চাকরি করে শুনে, সেটা ও(রাতে ডিউটি করতে হয়,নাইট শিফট করতে হয়) আব্বা কে যতটুকু বোঝানো গেলো, আম্মাকে কিছুতেই বোঝানো গেলো না। নিশি শেষ এ বলেই ফেললো, এখানে কেউ কাজ ছাড়া বসে বসে খায় না। নিশি বুঝতে পারলো আম্মা খুব কস্ট পেয়েছে। “তুই কি কাজ করিস?” – সবাই যা করে। আম্মা বারবার জিজ্ঞেস করলো, মা তুই ভালো আছিস তো? নিশি উত্তর দিলো – খুবি ভালো আছি, ভালো থাকার জন্য ই তো এখানে পাঠাইছেন। ও বুঝলো সুমন হয়তো ভালো করে বলে নাই ও কোথায় কাজ করে, হয়তো সিং এর ওখান টার কথাই বলেছে। ইদানীং ওর আম্মার উপর ওর খুব অভিমান কাজ করে। একদিন এক বাংগালি প্রোগ্রাম এ আরিফ নামে একজনের সাথে পরিচয় হয়েছিলো, আন ম্যেরেড, হেন্ডসাম, এখানে একটা কলেজ এ পড়ায়। সুমন এর কাছ থেকেই সম্ভবত ফোন নাম্বার নিয়েছিলো, উনি প্রায় ই ফোন দেয়, বিভিন্ন রকম গল্প করে, ভালোলাগার গল্প, ভালোবাসার গল্প, নিশিকে অনেক কিছু বোঝাতে চায়, একদিন বললো ” তুমি কি জানো তোমার চোখ কথা বলে? ” – তাই, তো কি বলে? “তোমার ভিতরে অনেক কস্ট, নিজেকে খুব সুখি সুখি একটা ভাব দেখাতে চাও” – না আমার কোন দুঃখ নেই, আমি আসলেই অনেক সুখি।”মোটেই না,আমি চেলেঞ্জ করে বলছি, তুমি জানো না, প্রথম দিন আমার চোখ প্রতিটা মুহুর্ত তোমার দিকে ছিলো, আমি অনেক কিছু বুঝি,২য় দিন আমিই সেধে যেয়ে মিস্টার সুমন এর সাথে পরিচিত হয়েছি,( যেটা আমি নরমালি করি না) শুধু তোমার জন্য” নিশি না বোঝার ভান করে, মুড ভালো থাকলে কথা বলে, মুড না থাকলে নানা অজুহাত এ ফোন রেখে দেয়। একদিন সুমন এসে জিজ্ঞেস করলো ” প্রায়ই ফোন বিজি পাই ইদানিং, কে ফোন করে এতো? তোর টেক্সাস এর বয়ফ্রেন্ড?” ( নিশি এখন আর আগের মতো নেই) বললো – ওমা! সেই একদিন দেখা এতদিন ধরে একটা বয়ফ্রেন্ড ই থাকবে? আরো কয়েকটা হয়েছে🤭। নিশি একটা চড় খাওয়ার জন্য রাডি হয়ে ছিলো, সুমন সম্ভবত সেদিন একটু ধাক্কা খেয়েছিলো। ওর দিকে কটমট করে তাকিয়ে ছিলো শুধু।নিশি ভাবছিলো ও কেনো আরিফ এর সাথে কথা বলে? যে কথাই হোক ও,ও তো বলে বা শোনে, ( ওর একটু গিলটি ফিলিং হচ্ছিলো) * ওর ভালো লাগে, ও কোনদিন ভালো লাগার কথা ভালোবাসার কথা শোনে নাই। হয়তো বা এই জন্য ই।সুমন দুপুরে ফোন করে জানালো, কাল রাতে বাংগালি দের ঈদ পুর্ন মিলনি আছে, নিশি ভাবলো ও আজ একটা গোলাপি শাড়ি কিনবে, আর খুব সাজবে। আচ্ছা !! এই অনুভুতি তো কখোনো আসে নাই, কার জন্য সাজতে চাইছে সে। সুমন এর জন্য না।আচ্ছা সুমন কি ওকে ভালোবাসে? না।ভালোবাসা বা ঘৃনা কোনটাই নেই। আর ও? আগে ও সুমন কে অনেক ভালোবাসতো, এখন ওর ও একি অবস্তা, ভালোবাসা ঘৃনা কোনটাই বোধহয় কাজ করে না। থাকার দরকার থাকে। সুমন এর কিছু ব্যাবহার ওর কাছে খুব সন্দেহজনক লাগছে, প্রায় রাত্রে অনেক দেরি তে ফেরে, ফোন এ কিছু কথা, ডলার নিয়ে দরাদরি, কন্ট্রাক ম্যেরিজ, সেদিন রাতে কাজ থেকে ফেরার সময় দেখলো বাসার সামনে এক কালোর সাথে দারিয়ে কথা বলছে। ও ফ্লাট এর চাবি সুমন এর কাছে ভেবে সামনে যাওয়াতে, সুমন বললো, “রুপ দেখাতে এইখানে আসছো” ও বললো, চাবির জন্য? ” ফ্লাট খোলা”। সুমন বাইরে থেকে এসে তার বড় ভাই, জার্মানি থাকে সোহেল ভাইয়া কে ফোন দিলো, কর্ড লেস ফোন নিয়ে ড্রইং রুম এ চলে গেলো।আলাপ করার বা বুদ্ধি নেওয়ার ও কেউ নেই ওর, বাংগালি অনেক এর সাথে পরিচয় হয়েছে এর মাঝে। কিন্তু বিশশাস করার কেউ নেই। যদি সুমন কে বলে দেয়, নিশি গালাগালি,মার এই গুলি কে খুব ভয় পায়। ভালো কথা মনে পড়েছে, সুনিল এর সাথে আলাপ করা যায়, সুমন রা এখানে অনেক বছর যাবত থাকে, নিয়ম কানুন সব জানে। কাজ ও ভালো চলছে, শুধু সিলভির ওই কথা শুনার পর থেকে সারাক্ষণ ভয়ে ভয়ে থাকে, অই বিষয় সুমনকে কিছু বলে নাই, যখন যেটা হবে, তখন দেখা যাবে। নিশি কাজে যেয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে উপরে উঠার সময় ( বেইজ মেন্ট থেকে) মেনুয়েল এর সাথে দেখা, Good Morning, ” Good Morning Nishi, You are looking beautiful”Thank You. নিশির হাত পা কাপছে, কি কাজ করবে। কখন যেন মেনুয়েল এর ডাক পড়ে। অবশ্য এর আগে ও কয়েকবার মেনুয়েল এই ধরনের কথা বলেছে, শুধু ওকে না মোটামুটি সবাইকেই বলে, কিন্তু আজ হাত পা কাপছে কেনো! ওর ডিউটি ফ্রন্ট এর ডেস্ক এ। ওর কাছে মনে হলো সিসি ক্যামেরায় মেনুয়েল শুধু ওকেই দেখছে। আজ সিলভির ডিউটি নেই, সেন্ডি কে ও একফাকে বললো তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে, ” কি বিষয়ে ” – মেনুয়েল এর বিষয়। সেন্ডি বললো “আচ্ছা ডিউটি শেষ করে আমি তোমাকে সময় দিবো” এখন মর্নিং শিফট চলছে, কাজ শেষ করে শপিং এ যাবে, ( ইন্ডিয়ান শাড়ির মার্কেট) “একটা মেয়ে এসে বললো মেনুয়েল তোমাকে তার অফিস রুমে ডাকছে। ” নিশি ঘড়ি দেখলো 1.50। ১০ মিনিট পর শিফট শেষ, নিশির হাত পা কাপছে, কেনো মেনুয়েল ডাকছে? সিলভির সব কথা মনে পরছে, ও কি বলবে মেনুয়েল কে? কিভাবে বলবে? মেনুয়েল কি আজ ই বলে দিবে কাল থেকে আর কাজে এসো না। ভাবতে ভাবতে নিশি মেনুয়েল এর দরজায় টোকা দিলো। কাচের দরজা দেখা যায়। মেনুয়েল বললো, ” come in,- did You called me Mr Manuyel?” Yes Nishi, sit down please.

    চলবে..

  • লিভিং রুমে স্নেহা (পর্ব-৩)

    লিভিং রুমে স্নেহা (পর্ব-৩)

    সকাল ৭ টার দিকে ফুয়াদের ঘুম ভেঙে যায়৷ পাশে তাকিয়ে দেখে স্নেহা বিছানায় নাই৷ স্নেহাকে না দেখে ফুয়াদ চিন্তিত হয়ে পড়লো৷ নীচে গিয়ে দেখে স্নেহা রান্না ঘরে নাস্তা বানাচ্ছে আর গুন গুন করে গান গাইছে৷ ফুয়াদ খুব খুশী হয়ে গেলো, অনেক দিন পর স্নেহার স্বাভাবিক আচরণ দেখে৷ যদিও স্নেহা আগে কখনও গান গাইতো না৷ বরং গান শুনতে খুব পছন্দ করতো৷ ঘুম থেকে উঠে নামাজ শেষ করে কোরান শরীফ পড়ে তারপর নাস্তা বানাতো নিজ হাতে৷ ডাইনিং টেবিলে নাস্তা সাজিয়ে গান বাজিয়ে ফুয়াদ সহ গান শুনতো আর নাস্তা করতো৷ তারপর ফুয়াদকে গাড়ী পর্যন্ত এগিয়ে দিতো৷ স্নেহার এ স্বভাবটা ফুয়াদের খুব পছন্দ ছিলো৷ কিন্তু গত তিন মাস আগে গ্রীস বেড়াতে গিয়েছিলো তারা৷ গ্রীস থেকে আসার পর থেকেই স্নেহার আচরণ পাল্টে গেলো৷ তারপর একটার পর একটা দূর্ঘটনা ঘটেই চলেছে৷ আজ স্নেহা আগের রুটিনে ফিরে এসেছে দেখে ফুয়াদ বেশ সস্তি পেলো৷ আজ স্নেহা ঠিক আগের মতো ফুয়াদকে গাড়ী পর্যন্ত এগিয়ে দিলো৷

    তারপর সে তার ঘরে ফিরে এলো৷ অনেকদিন পর আজ তার খুব হালকা লাগছে৷ রাতে ঘুমও বেশ ভালো হয়েছে৷ সে ভাবলো সেই কবে গ্রীস থেকে এসেছে৷ অথচ বন্ধুদের জন্য যে গিফট গুলো এনেছিলো, তা দেয়াও হয় নি৷ সে প্যাকেট করে সব ক্লজেটে রেখেছে৷ আজ সে সেই গিফটগুলো বের করলো৷ রুমের টেবিলের উপর সব সাজিয়ে রেখে ভাবছে কোনটা কাকে দেবে৷

    বাসার জন্যও সে কিছু ডেকোরেশন পিস এনেছে৷ সেগুলোর মধ্যে ছিলো একটা রাজ প্রাশাদ, রাজা, একটা রানী, রাজকন্যা, তাদের সিংহাসন, তার পাশে একটা সুড়ঙ্গ, একটা জলকুপ, (যা ডেকোরেশনের সময় পানি দিয়ে রাখতে হয়), একটা অন্ধ বুড়ী লাঠি নিয়ে বসে৷ সব মিলিয়ে কোনো একটা কাহিনী তাতে আছে৷ যে দোকান থেকে কিনেছে সেখানে বসে সে এই কারেক্টার গুলোর ভয়ানক একটা গল্প শুনেছিলো৷ শুনতে শুনতে ভয়ে তার গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠেছিলো৷ ভয়ের হলেও গল্পটা তার খুব ভালো লেগেছিলো৷ তাই সে কাহিনীর পুরো সেটই কিনেছিলো৷ সে জিনিসটাই সে বন্ধুদের জন্য একটা একটা করে কিনেছিলো৷ সে ভেবেছিলো দেশে এসে বন্ধুদের ইনভাইট করে গল্পটাও বলবে গিফট গুলোও দেবে৷ কিন্তু অসুস্থ হয়ে পড়ায় তা আর হয়ে উঠেনি৷

    এরই মধ্যে তার একটা ফোন আসলো, তার পাশের বাসার ভাবী বললো একসাথে মার্কেটে শপিং এ যেতে৷ সে ফুয়াদকে কল করে বললো, আমি একটু মার্কেটে যাচ্ছি৷

    ফুয়াদ বললো আচ্ছা যাও৷ সাবধানে যেও। তোমার শরীর খারাপ কোরোনা। কোন সমস্যা হলে আমাকে কল দিও৷ আজ আমি মোটামুটি ঝামেলা মুক্তই থাকবো৷

    যাওয়ার সময় পাশের বাসার ভাবীর জন্য নিয়ে আসা একটা গিফট সে একটা প্যাকেটে ঢুকিয়ে নিলো৷ ভাবীর সাথে শপিং শেষে বাসায় ফিরে আসার সময় গিফটটা ভাবীর হাতে দিতেই প্যাকেটের গিফটটা পাউডার হয়ে গেলো৷ (গিফটটা ছিলো পাথরের তৈরী একটা সুড়ঙ্গ)। এ ঘটনায় দুজনেরই মন খুব খারাপ হলো৷ সে বললো, ভাবী আমি অন্য একটা আপনাকে দিবো এটা আমি নিয়ে যাই৷ প্যাকেটটা এনে সে অন্য গিফট গুলোর সাথে টেবিলেই রেখে হাত মুখ ধুয়ে কাপড় চেঞ্জ করে টায়ার্ড হয়ে বিছানায় এসে শুয়ে পড়লো৷ তার শরীর খুব খারাপ হয়ে গেলো৷ তখন বাজে বিকেল চারটে৷

    সন্ধ্যায় ফুয়াদ বাসায় এসে দেখে স্নেহা ঘুমাচ্ছে৷ লাইট জ্বালিয়ে দিয়ে ফুয়াদ বললো তুমি এখনও ঘুমাচ্ছো কেনো স্নেহা? তোমার কি শরীর খারাপ করেছে? স্নেহা ঘুম থেকে উঠে বসে খুব রাগান্বিত কন্ঠে ফুয়াদকে বললো, ওফফফ তুমি কেনো আমাকে এতো জোরে আঘাত করলে??? আমি অনেক কষ্ট করে এতদূর পথ পার হলাম৷ আমি প্রায় শেষ পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিলাম। তুমি কেনো আমাকে এতো জোরে বাড়ী দিলে? (যা তার স্বভাবের বাইরে ছিলো)৷ ফুয়াদ বুঝতে পেরে বললো আচ্ছা আচ্ছা তুমি ঘুমাও৷ তুমি বোধ হয় কোনো স্বপ্ন দেখছিলে। আমি অন্য ঘরে যাচ্ছি৷ ঠিক তখনই স্নেহার নজর পড়লো টেবিলের সে প্যাকেটের দিকে৷ দৌড়ে উঠে গিয়ে সে প্যাকেটের পাউডার হয়ে যাওয়া সুড়ঙ্গ টা বের করতে গিয়ে দেখে জোড়া লেগে একেবারে ঠিক হয়ে গেলো৷ এখন হঠাৎ তার মনে হলো সে ফুয়াদের সামনে৷ সে সঙ্গে সঙ্গে ফুয়াদকে বললো, তুমি কখন এলে? ফুয়াদতো অবাক। সে বলে উঠলো কি হয়েছে তোমার স্নেহা? প্লিজ স্নেহা তুমি আমাকে বলো কি হয়েছে তোমার৷ আজকাল তুমি হঠাৎ হঠাৎ কেমন যেন করো৷ আমি বুঝে উঠতে পারছি না তোমাকে নিয়ে আমি কি করবো। স্নেহা বলে আমিও কিছু বুঝতে পারছি না৷ (অথচ প্রতিদিন সে যখনই ঘুমায়, সে স্বপ্নে দেখে ওই রাজ প্রাসাদ থেকে কে যেনো কেঁদে কেঁদে তাকে ডাকছে৷ কিন্তু একটা অন্ধ বুড়ী তাকে কোনো ভাবেই যেতে দেয় না৷ শুধু লাঠি দিয়ে বাড়ী দিয়ে মাথা ফাটিয়ে দেয়৷ কিন্তু সে ফুয়াদকে কিছু বলে না৷ কারন ফুয়াদ ভয় পাবে৷ আর ভাবে নিজে নিজে সব ঠিক করে ফেলবে৷) রাতে খাওয়া দাওয়া করে তারা দুজন বেশ গল্প করলো৷ গান শুনলো। নিজেদের মধ্যে বেশ অন্তরঙ্গ কিছু সময় কাটালো৷ তারপর গল্প করতে করতে তারা দুজন ঘুমিয়ে পড়লো৷

    মাঝ রাতে কুকুরের চিতকার শুনে ফুয়াদের ঘুম ভেঙ্গে যায়। পাশে তাকিয়ে দেখে স্নেহা বিছানায় নেই৷ উঠে গিয়ে সারা ঘরে চেক করে দেখে স্নেহা কোথাও নেই৷ ডাকাডাকি করে বুয়াদের জাগালো৷ ফুয়াদের মাথা খারাপ হয়ে গেলো৷ সে ভেবে কুল পাচ্ছে না কি করবে৷ ফুয়াদ ভীষণ নার্ভাস প্রকৃতির লোক৷ সে তার বন্ধু ফায়সলকে ফোন করে আসতে বললো৷ ফয়সল আসার পরে সে এ কয়েকদিনের সব ঘটনা খুলে বললো৷ সব শুনে ফয়সল বললো, দোস্ত এটাতো অন্যরকম কেস৷ ফয়সলের কথা শুনে ফুয়াদ আরও ঘাবড়ে গেলো৷

    হঠাৎ রুবিনা এসে বললো স্যার একটু ছাদে গিয়ে চেক করলে ভালো হয়৷ ভয়ে ভয়ে তারা সবাই ছাদে গেলো৷ রাত তখন তিনটা বাজে৷ সারা ছাদে খুঁজে পাওয়া গেলো না স্নেহাকে৷ সবাই ছাদে দাঁড়িয়ে আছে৷
    হঠাৎ রুবিনা শুনতে পেলো ডুকরে ডুকরে কে যেনো কাঁদছে। তাদের ছাদের নীচের দিকে একটা বড় ফলস ছাদ আছে৷ সেখানে বসে সাদা শাড়ী পরে উসকো খুশকো চুলে কে যেনো দুলছে আর কাঁদছে, আবার বিড় বিড় করে কি যেনো বলছে৷

    রুবিনা বললো স্যার ঐ যে আমাগো মেডাম৷

    ফুয়াদ বলে উঠলো ধুর….ওখানে তোমাদের মেডাম কেমন করে যাবে? সে ছাদে যেতে হলে মই দিয়ে যেতে হয়৷ তবে সে সেখানে কেমন করে গেলো? তারপর আবার সেখানে অন্ধকার। তুমি কি পাগল?

    কিন্তু রুবিনা কিছুতেই মানছে না৷ সে বুঝতে পেরেছে এটা তার মেডাম৷ কিন্তু কেউ সাহস পাচ্ছে না সেখানে যেতে৷ দারোয়ানকে ডাকা হলো৷ দারোয়ান টর্চ লাইট দিয়ে দেখে চিতকার করে বলে উঠলো… ওরে বাবারে… এটাতো ভুত বা পেতনি৷ আমি যাই, আমি নাই, আমি যাই, বলে সে ভাগবে ভাগবে এমন করছে৷

    কিন্তু রুবিনা কোনো মতেই দারোয়ান কে যেতে দেবে না৷ পাশের বাসার কুকুরটা জোরে জোরে চিতকার করেই চলেছে। আশপাশের দারোয়ান কয়েকজন জড়ো হয়ে গেলো৷ তিন চার জন মিলে মই দিয়ে স্নেহাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে ঘরে আনলো৷

    তখন স্নেহার কোনো জ্ঞান ছিলো না৷ ঘরে এনে মাথা ধোয়ানোর পর তার জ্ঞান ফিরলো৷ খাদিজা বুয়া আর রুবিনা মিলে তার কাপড় বদলে দিলো৷ সে খুব ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। খাদিজা বুয়ার হাত ধরে স্নেহা বললো, বুয়া প্লিজ আমায় ছেড়ে যেও না৷ আমায় একটু ঘুমাতে দাও৷ আমি আর পারছি না৷

    রুবিনা এসে ফুয়াদ আর ফয়সল দুইজনকে বললো,
    স্যার বেয়াদপি নিয়েন না৷ মেডামরে ভুতে ধরছে৷ আমগো বাইত অলি মিঞার কাছে নওন লাগবো৷ হ্যেয় সব ঠিক কইরা ফালাইবো৷ স্যার আমি ছুডু মানুষ অইলেও অইতে ফারি৷ কিন্তু আমার কতাখান চিন্তা কইরা দেইক্ষেন৷ মেডামের যে অবস্থা, আর দেরি করলে উনারে বাচাইতে ফারতেন না৷

    কাঁদতে কাঁদতে সে বলছে…
    আহারে আমাগো এত্তো বালা মেডামডার কি অইলো…

    চলবে…

  • নিশির প্রবাস (পর্ব-৭)

    নিশির প্রবাস (পর্ব-৭)

    নিশির চাকরি ভালোই চলছে।
    একদিন নিশির নাইট ডিউটি ছিলো, আব্বা ফোন করেছিলো, নিশির সাথে কথা হয় নাই, পরদিন ও সুমনকে বলেছিলো, কাল তো বাসায় কথা হলো না, বাংলাদেশ এ একটা কল করে দাও না,কথা বলি,” মিনিট এ ৫ ডলার, আমি বলে দিয়েছি তুমি ভালো আছো, আর কি কথা বলবা, উনাদের জানা দরকার তাদের মেয়ে কেমন আছে, আর কি?”
    নিশি বুঝতে পারছে নিশি এখন আগের মতো নেই, ও বদলে যাচ্ছে, সেটা কি ভালো না খারাপ নিশি জানে না।
    কাল ভাবিরা ফ্লোরিডা চলে যাবে, বাচ্চাদের জন্য কিছু কিনে নিয়ে যাবে আজ। ওর উইকলি পেমেন্ট খুব ভালোই,( নতুন অবস্তায়)। ওভার টাইম আছে, চেক এ পেমেন্ট দেয়, এই অব্দি সুমন চেক নিয়ে নিয়েছে। এক মাসের কিছু বেশি, ৪ টা চেক ই সুমন নিয়ে নিয়েছে। ও টিপস এর টাকা দিয়ে আসা যাওয়া করে, আর যদি টুক টাক কিছু লাগে সেটা কিনে। (সেটা ও সংসারের, নিজের জন্য ও এই অব্দি একটা ফেস ওয়াস ছাড়া কিছুই কিনে নাই) আজ ও চেক পাবে, আর সেটা ভাংগিয়ে ভাবির বাচ্চাদের জন্য কিছু কিনবে, ওর মদ্ধে একটু রাগ ও কাজ করছে, আর কস্ট!!! সেটা তো….। মনে হচ্ছে দিন দিন চাপা কস্ট টা বাড়ছে।
    যে ভাবা সেই কাজ, ও চেক ভাংগিয়ে ভাবির বাচ্চাদের জন্য ৯৫ ডলার এর খেলনা কিনলো। ভাবির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাসায় এসে দেখলো সুমন আলরেডি চলে আসছে। নিশি কে দেখেই চেঁচানো শুরু করলো, এতো রাত হলো কেন? আজ নিশির ডিউটি ছিলো দুপুর ২ টা থেকে রাত ১০ টা। নিশি খুব ঠান্ডা মাথায় ডলার টা টেবিল এর উপর রেখে বললো – ভাবিরা কাল চলে যাচ্ছে তাই ভাবির বাচ্চাদের জন্য কিছু খেলনা কিনেছিলাম ওটা দিয়ে আসলাম আর বিদায় নিয়ে আসলাম।
    এর মদ্ধে ডলারগুলি নিয়ে বললো “চেক ভাংগানো শিখে গেছো? কম কেনো ? ” – ভাবির বাচ্চাদের জন্য কিছু খেলনা কিনেছি ৯৫ ডলার দিয়ে। ” এতো টাকা দিয়ে কি দরকার ছিলো উনাদের অইগুলি দেওয়ার? ওরা তোর কি হয় “

    কিছু হয় না, আমার মন চেয়েছে তাই দিয়েছি, এখন কি এইজন্য মারবা? আসো মারো।
    রাগে গজ গজ করতে করতে বললো, ” বলছি টাকার দরকার আছে, এইখানে পার্মানেন্ট হতে হবে, এই মেয়ে আমার কথাই শুনে না, এমন বেশরম, অসভ্য মেয়ে আর একটা দেখি নাই লজ্জা নাই” নিশির বলতে ইচ্ছে করলো * ঠিক বলেছো, লজ্জা নাই বলেই তো তোমার সাথে আছি, কিন্তু ওর কথা বলতে ইচ্ছা করছে না, টায়ার্ড লাগছে।
    এরমাঝে সুনিল দুইদিন ফোন করেছিলো, উনি এতো মজার মজার কথা বলে, এতো সুন্দুর করে গল্প করে, নিশির কথা বলতে খুব ভালো লাগে।
    (এরমাঝে সুমন একটা কাজ প্রায়ই করে যখন নিশি বাসায় থাকে, ফোন করে, যেটা আগে কখোনোই করতো না, একটা দুইটা কথা বলে রেখে দেয়, তারপর ফোন করে কিন্তু ফোন ধরার আগেই কেটে দেয়, চেক করে নাম্বার বিজি কিনা 😝) নিশি বুঝে কিছু বলে না। দুই তিন দিন এসে জিজ্ঞেস করেছে “ফোন বিজি ছিলো কেনো? কে ফোন করে ছিলো “? – কেউ ফোন করে নাই।
    নিশির দুটো ফ্রেন্ড হয়েছে, কাজের জায়গায়, সেন্ডি ( ইটালিয়ান) সিলভি ( ফ্রান্স) ।
    পরদিন থেকে নিশির নাইট শিফট, রাত ১০ টা থেকে সকাল ৬ টা। রাতের ডিউটি গুলি কাজের প্রেসার একটু কম থাকে। ও ডিঊটি তে যেয়ে দেখলো সিলভির ও নাইট ডিউটি 😆.
    সিলভি সিংগেল কিন্তু ও একটা কালো
    ছেলের সাথে লিভিং টুগেদার করে। গল্প হচ্ছিলো সিলভির সাথে, সিলভি হঠাত ওকে জিজ্ঞেস করলো
    ” তুমি মেনুয়েল এর সাথে এখন ও যাও নাই?” – মানে? কোথায় যাবো? (সিলভির ঠোটে দুষ্টামির হাসি) ” মানে তোমাকে এখন ও মেনুয়েল চায় নাই”

    কেন আমাকে চাইবে? দেখো তুমি আমার বন্ধু আমাকে খুলে বলো। ” দেখো মেনুয়েল এর যাকে ভালো লাগে, মেনুয়েল চায়, আমাকে চেয়েছে আমি গিয়েছি, ভাবলাম তুমি জয়েন করেছো ১ মাসের বেশি, তুমি দেখতে ও অনেক সুন্দুরি,এট্রাক্টিভ,নিশ্চয়
    তোমাকে ও চেয়েছে”।

    তুমি এইগুলি কি বলছো? আমি যদি না যাই?
    “সেটা তোমার ইচ্ছা” এরমাঝে এক সাথে কিছু কাস্টোমার এলো, ওরা দুইজনেই বিজি হয়ে পরলো, আর বেশিক্ষণ কথা বলা ও ঠিক না, সিসি টিভির ফুটেজ এ দেখা গেলে বিপদ। নিশির কোন ভাবেই কাজে মন বসছে না, অস্থির লাগছে। এই চাকরি টা ও মনে হচ্ছে করা হবে না, ওর কপাল টাই খারাপ। চেস্টা করলো কাজ শেষ করে সিলভির সাথে বাইরে বের হয়ে কথা বলবে, কিন্তু সিলভি অন্য স্টেশন দিয়ে যায়। ও ভেবে কুল কিনারা পাচ্ছিল না, এটা কি সুমন এর সাথে আলাপ করবে? করা উচিত, চাকরি চলে গেলে পরে আবার দোষ দিবে। আগে ভাগেই বলে ফেলা ভালো। ইস ভাবি ও চলে গেলো, কোন নাম্বার ও দিয়ে যায় নাই।
    আচ্ছা!! এই অব্দি ও যা বুঝেছে, সব শোনার পর সুমন যদি বলে ” বললে যাবা, এই দেশে এটা কোন ব্যেপার না” হায় আল্লাহ আমাকে পথ দেখাও।

    চলবে…

  • নিশির প্রবাস (পর্ব-৬)

    নিশির প্রবাস (পর্ব-৬)

    রাতে মার খেয়ে সোফায় ঘুমিয়ে পরেছিল নিশি, উঠতে উঠতে একটু দেরি হলো। সুমন অফিসে চলে গেছে। রাতের কথা মনে পড়লো সব। সুমন এরমধ্যে ওর গায়ে তিন দিন হাত তুলেছে, কোন টার ই কোন দোষ খুজে পায় না নিশি, কালকের ব্যেপার টা নিশির কি দোষ? একটা মানুষ ফোন করতেই পারে। ভালো করে কিছু জিজ্ঞেস করার ও প্রোয়জন মনে করে নাই। নিশি ও কোনদিন ইটালির আলাপ করে নাই ওর সাথে, কি আলাপ করবে, নিশির মনে পড়ে না সুমন ওর সাথে কোনদিন গল্প করেছে, একা একা কি আর বক বক করা যায়। হঠাত নিশির চিতকার করে কাদতে ইচ্ছা করছে, এমন সময় ফোন বাজলো। ওপাশ থেকে ভাবি, ” তুমি কি একটু আসতে পারবে ? ” জি ভাবি, আসছি। নিশি চোখে মুখে পানি দিয়ে ভাবির ফ্লাটে গেলো। নিশিকে দেখেই ভাবি বুঝলো যা বোঝার। ” সকাল থেকে নিশ্চয় কিছু খাও নাই, এটা খাও আগে” বলে একটা সেন্ডউইচ দিলো। নিশি কিছু বলতে পারলো না, ভাবিকে জড়িয়ে ধরে হু হু করে কেদে ফেললো। ভাবি ওকে জড়িয়ে ধরে রাখলো,অনেকক্ষণ পরে বললো, আমি তোমাকে কি বলবো কিছু বুঝতে পারছি না। গতকাল রাতে তোমার ভাই যখন তোমাদের রুম এর সামনে দিয়ে আসছিলো সে শুনেছে, এসে আমাকে বলেছে, তোমার ভাই এটাও বলেছে এতো টুকু ফুটফুটে একটা মেয়েকে বিয়ে দিয়েছে বুঝলাম, কিন্ত ওর বাবা মা কি করে বিদেশ পাঠিয়ে দিলো। ভাবি নিশিকে অনেকক্ষন নিজের কাছে রাখলো, নিশি এক সময় বললো ভাবি কাল থেকে আমার জয়েনিং, আমার আগের জায়গায় কিছু টাকা পাবো, আমি যাই, টাকাটা নিয়ে আসি।
    নিশি মিস্টার সিং এর কাছে গেলো টাকা টা আনতে, সিং ওকে দেখে খুব অবাক হয়ে বললো
    ” তুমি তোমার এত সুন্দুর চুল কেটে ফেলছো কেনো ” – নিশির বলতে ইচ্ছা করছিলো না, লম্বা চুল নিয়ে ওখানে কাজ করা যাবে না, বললো মেইন্টেন করা খুব ঝামেলা তাই। নিশির বাসায় যেতে ইচ্ছা করছিলো না। রাস্তায় ও প্রায়ই কিছু ছেলে মেয়ে দেখে, জেনেছিলো ওদের কেউ নেই, ওরা যাযাবর লাইফ লিড করে, যখন ইচ্ছা সেখানে থাকে, যখন যেখানে রাত হয় সেখানেই গুমায়। ইচ্ছা হচ্ছিল ওদের সাথে মিশে যায়। নিশি একটা বেঞ্চে বসে ভাবছিলো একবার ওর বড় ভাই কোন কারনে ওর ভাবির সাথে খুব ঝগড়া করেছিলো, ভাবি সারাদিন ঘর থেকে বের হয় নাই, খায় নাই। ভাইয়া আসার সাথে সাথে আম্মা বললো। ভাইয়া ঘর এ ঢুকে ভাবিকে কি বললো, প্রায় আধা ঘন্টা, দুই জন একসাথে হাসতে হাসতে বের হলো, ( পরে শুনেছিলো ভাইয়া ঘর এ ঢুকেই কান ধরে ভাবির সামনে দাড়িয়ে ছিলো, যে অব্দি ভাবি না হেসেছিলো) এই অব্দি সুমন ওকে তিনদিন মেরেছে, কোন দোষ ছাড়া, একদিন ও সুমন ওকে সরি বলে নাই, বা কখোনো মনে হয় নাই সুমনের মাঝে এই জন্য কোন গিলটি ফিলিং কাজ করে। সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে, বাসায় গিয়ে রান্না করতে হবে।
    সুমন এসে জিজ্ঞেস করলো
    ” কোথায় গিয়েছিলে? ” সিং এর ওখানে টাকা আনতে। নিশি নিজে থেকেই বললো কাল সকাল ৬ টা থেকে ওর ডিউটি, ২ টা অব্দি। শুয়েই সুমন জিজ্ঞেস করলো ” আজ তোমার বন্ধু ফোন করে নাই? ” উনি তো আর কোনদিন ফোন করে নাই গতকাল ই প্রথম তিন মাস এ।
    নিশির হঠাত মনেহলো অজ্ঞাত কোন কারনে ও সুমন কে খুব ভয় পায়।
    ঘড়িতে এর্লাম দেওয়া ছিলো, নিশির প্রথম চাকুরী দিন আজ। নিশি যাওয়ার পর একটা মেয়ে কে ডেকে বুঝিয়ে দিলো, ড্রেস দেওয়া হলো। প্রথম দিন ভালোই কাটলো, আন্ডারগ্রাউন্ড থেকে খাবার এর ভরা কার্টুন উপরে তোলা, টেবিল মোছা, বার বার মপ করা।(নিশির মনে হলো গলার মদ্ধে কি যেন একটা আটকে আছে, কিন্তু কান্না আসছে না,যে নিশি কোনদিন প্লেট ধুয়ে ভাত খায় নাই, দুটি তিন ভাই এর ৭ বছর পর নিশির জন্ম, একমাত্র মেয়ে, একদিন বাসায় বুয়া আসে নাই, আম্মা বলছিলো ঘর টা ঝাড়ু দিতে, আব্বা এসে দেখার পর আম্মার সে কি রাগারাগি) টেবিল পরিষ্কার করার সময় কয়েন পেয়ে ছিল, এক কলিগ কে জিজ্ঞেস করলো এই টা কি করবো? ও বললো ” It’s yours, টিপস। সারাদিন পর ও দেখলো ৮ ডলার এর মতো টিপস পেয়েছে, চেঞ্জ করে সাবওয়ে তে আসার সময় খুব খুশি লাগছিলো, ইস কি যে খুশি লাগছে, সুমন এসে জিজ্ঞেস করবে, খুব মজা করে সুমন এর সাথে গল্প করবে। নিশি ভাবলো এখন ও অনেক সময় আছে ভাবির সাথে দেখা করে আসি, ভাবি কে জড়িয়ে ধরে বললো ভাবি আপনার কাছে আমি অনেক কৃতজ্ঞ, আপনার জন্য এই জব টা পেয়েছি। ভাবি খুশী হয়ে বললো, ” মানুষ এর জন্নই তো মানুষ, শোন তোমাকে কাল যে কারনে ফোন করেছিলাম, তোমার মন খারাপ এর জন্য বলা হয় নাই, তোমার ভাইয়ার, ফ্লোরিডা তে খুব ভালো একটা জব হয়েছে, আমরা চলে যাবো এখান থেকে” নিশির খুব খুব কস্ট হচ্ছিল, একমাত্র এই ভাবি টার সাথে একটু মন খুলে কথা বলতো, ভাবি ও ওকে অনেক বুঝতো।
    সুমন এসে জিজ্ঞেস করলো ” কখন এসেছো”। নিশি বল্লো বাসায় আসতে আসতে পোনে ৪ টা বেজেছে। “৫ টার দিকে কে কল করেছিলো? ফোন বিজি ছিলো ” – কেউ তো ফোন করে নাই, আর আমি তো এসেই ভাবির ফ্লাটে গিয়েছিলাম, যেহেতু জব টা উনার জন্য হয়েছে উনাকে থ্যাকস দিতে।
    আর কিছু না। খাওয়ার সময় নিশি নিজে থেকেই বললো ৮ ডলার টিপস পেয়েছি। ” হুম, টাকা পয়সা বুঝে খরচ করবা, টিপস এর টাকা দিয়ে যাওয়া আসা, আর টুক টাক বাজার হয়ে যাবে। সপ্তাহে যেটা পাবা সেটা পুরাটাই জমাতে হবে” টাকার দরকার আছে।
    নিশি বাথরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে দেখলো সুমন কার সাথে যেন ফোনে কথা বলছে, কন্ট্রাক ম্যেরেজ এই টুকু বুজলো। হয়তো নিশির জন্য কথা আর বেশি আগালো না সুমন।
    নিশির সাহস নেই এই বিষয় সুমন কে জিজ্ঞেস করার।

    চলবে…

  • নিশির প্রবাস (পর্ব-৫)

    নিশির প্রবাস (পর্ব-৫)

    নিশি যখন বাংলাদেশ থেকে আমেরিকা আসছিলো, ফ্লাইট এ হঠাত ঘোষনা এলো (যান্ত্রিক ত্রুটির জন্য আমাদের ফ্লাইট ইটালি তে অবতোরন করতে হচ্ছে, পরবর্তি ঘোষনা না দেওয়া অব্দি সব যাত্রীকে বিমান এর খরচে ইটালি থাকতে হবে) নিশি বুঝতে পারছিলো বাংলাদেশ এ ওর ফেমিলি এবং আমেরিকা তে ওর হাসবেন্ড ও নিশ্চয় খুব চিন্তা করবে। ইটালি তে এয়ারপোর্ট এ ওরা সারাদিন বসে ছিলো, বিমান ঠিক হবে এই আশায়, সন্ধায় তাদের জানানো হলো, তাদের কে হোটেল এ নেওয়া হবে, আজ ফ্লাই করা সম্ভব না। সবার মদ্ধে হুরমুর পড়ে গেলো, যে যার বাসায় খবর দেওয়ার জন্য। ( নিশি কে বাংলাদেশ থেকে এক মহিলার সাথে দেওয়া হয়েছিল, যেহেতু নিশি কোনদিন একা ট্রাভেল করে নাই, কিন্ত এই মহিলা টা কেমন যেন, ফ্লাইট এ উঠে ওর সাথে একটা দুটা কথা হয়েছে, তারমধ্যে প্রথম কথা ছিলো ” তুমি কি তোমার হাসবেন্ড এর কাছে যাচ্ছ?” জি। “এতো অল্প বয়সে তোমার বিয়ে হয়েছে কেনো?” কি উত্তর দিবে নিশি? চুপ করে ছিলো। ( এখন ও মহিলা একা একা ফোন করে এসে ওকে জিজ্ঞেস করছে “তুমি বাসায় জানিয়েছো, ফ্লাইট যে ডিলে হবে?”) নিশি বল্লো, না কোথা থেকে ফোন করবো? মহিলা বল্লো, ওই দিকে যাও ( আংগুল উচু করে একটা জায়গা দেখালো, দেখবা অনেক গুলি টেলিফোন বুথ আছে, ওখান থেকে ফোন করতে পারবে) নিশি অনেক খুজে পেলো, কিন্তু অনেক লোক, কেউ কেউ নিশির মতো কিছুই বুঝে না, একে ওকে জিজ্ঞেস করছে। নিশি অই গুলি শুনে শুনেই বোঝার চেস্টা করছে। নিজেকে পৃথীবির সবচেয়ে অসহায় প্রানি মনে হচ্ছে। কারন ওর কাছে ডলার আছে কয়েন নেই, ফোন করতে কয়েন লাগে। নিশি জিবনে এতোটা অসহায় বোধ করে নাই , দেখলো এক ভদ্রলোক এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলো ” May I help you? “


    I need to call Bangladesh, but I don’t have coin. “আচ্ছা আপনি বাংলাদেশি, আমি কোলকাতার, সুনিল, আসুন আমার সাথে আমি আপনাকে হেল্প করছি।” সুনিল নিয়ে গেলো এয়ারপোর্ট এর মানি একচেঞ্জ এ, ওকে কয়েন করে লোকজনের ভিড় ঠেকে ওকে বাংলাদেশ এ ফোন করে দিলো, আর বল্লো যতো শর্ট কারট এ কথা সারতে পারেন।নিশি এখানকার সব জানালো, আর বললো চিন্তা না করতে। যেখানে সেই মহিলা বসে ছিলো, এসে দেখে সেই মহিলা ও হোটেল এ চলে গেছে, সুনিল ই এয়ারপোর্ট এ কথা বলে নাহিদা নামের মহিলা কোন হোটেল এ গিয়েছে সেই হোটেল এর বাসে নিশির সাথে গেলো, কোন রুম এ উঠেছে সেই রুম অব্দি দিয়ে এলো। ” নাহিদা ভাবি ওকে বল্লো আমি তোমার নাম দিয়ে এসেছিলাম যখন ওরা ডাবল শেয়ারিং রুম এর কথা বলছিলো ” নিশি সুনিল এর সাথে নাহিদা ভাবির পরিচয় করিয়ে দিয়ে বললো, উনি অনেক হেল্প করেছে।


    ফাকে ফাকে সুনিল এর সাথে নিশির অনেক কথাই হলো, * সুনিল ভেবেছিলো নিশি পড়তে যাচ্ছে বা তার ফ্যমিলি থাকে আমেরিকা, যখন শুনেছে হাসবেন্ড এর কাছে যাচ্ছে, বেশ অবাক হয়েছিলো।
    পরদিন সকালে আবার দেখা ব্রেকফাস্ট করতে যেয়ে, নাহিদা ভাবি আর নিশি দুইজন ই সুনিল কে বললো ওদের সাথে বসতে। দুইদিন ওদের কে ইটালি থাকতে হয়েছিলো, অই দুইদিন সুনিলের সাথে একটা বন্ধুত্ত হয়ে গিয়েছিলা। যেহেতু নিশির আমেরিকার নাম্বার নিশি জানতো না তাই নাহিদা ভাবির নাম্বার নিয়েছিলো। এই ক মাস সুনিল কোনদিন ফোন করে নাই। আজ ই প্রথম, হয়তো নাহিদা ভাবির কাছ থেকে নাম্বার নিয়েছে।


    সুনিল এর ফোন রেখে নিশির আর কোথাও যেতে ইচ্ছা করছে না, ভাবতে ইচ্ছা করছে। অই দুইদিন ই সুনিল কতো আপন মানুষ এর মতো হয়ে গিয়েছিলো, মনে হচ্ছিল কতো চেনা। হঠাত আয়নায় চোখ গেলো, ছোট ছোট চুল ওয়ালি নিশি। (সুনিল যখন হিথ্রো এয়ারপোর্ট থেকে বিদায় নিবে, বললো “একটা কথা দুই দিন যাবত বলবো বলবো করে ও বলা হয় নাই। ” কি? “তোমার চুল গুলি অসম্ভব সুন্দুর,নাটোর এর বনলতা সেন কে হার মানাবে, আমি টেক্সাস গিয়েই তোমার চুল নিয়ে একটা কবিতে লিখবো”) আহা সুনিল কে জিজ্ঞেস করা হলো না কবিতা টা কি সে লিখেছিলো? এর পরের বার যখন কথা হবে তখন জিজ্ঞেস করবে।


    এরমধ্যে নিশি রান্না শেষ করে শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে দেখলো সুমন এসেছে। টেলিফোন এর পাশে অপরিচিত নাম্বার লিখা দেকে জিজ্ঞেস করলো “এটা কার নাম্বার? ” নিশি বললো উনার সাথে ইটালি দেখা হয়েছিলো, টেক্সাস থাকে, কোলকাতার, উনি ইটালি তে অনেক ভাবে আমাকে হেল্প করেছে, আজ উনি ফোন করেছিলো।
    “এর মদ্ধে বন্ধু ও হয়ে গেছে? আর কয়দিন ফোন করেছিল? বলতে বলতে নিশির সামনে এসে দাড়ালো, আজ ই প্রথম, বাকি টুকু আর বলতে পারলো না নিশি, দুই তিন টা চড় সহ সুমন বললো “আমি প্রায় ই ফোন বিজি পাই, সত্যি করে বল।” নিশি একি কথা বলে ডুকরে কাদতে থাকলো আর বললো, তুমি নাহিদা ভাবিকে জিজ্ঞেস করো উনি আমার নাম্বার কবে নিয়েছে।

    চলবে…

  • লিভিং রুমে স্নেহা (পর্ব-২)

    লিভিং রুমে স্নেহা (পর্ব-২)

    হাসপাতাল থেকে রুবিনাকে নিয়ে ফিরতে ফিরতে তাদের সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো৷ গাড়িতে বসেই স্নেহা ফুয়াদকে বললো, আমি খুব ক্লান্ত৷ বাসায় গিয়েই ডিনার সেরে ঘুমিয়ে পড়বো৷ ফুয়াদ বললো, আমার বিদেশী গেষ্ট আছে৷ আমি বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে ডিনারে যাবো৷ তুমি ঘুমিয়ে পোড়ো৷ আমি আসতে দেরি হবে৷

    কথা মতো ফুয়াদ রেডি হয়ে চলে গেলো ডিনারে৷ খাদিজা বুয়াকে টেবিলে খাবার দিতে বলে, স্নেহা সাওয়ারে গেলো৷ ঘন্টা পার হয়ে গেলো। কিন্তু স্নেহা বাথরুম থেকে বের হোলো না৷ খাদিজা বুয়া চিন্তিত হয়ে যেই বাথরুমের দরজাতে হাত দিতেই খট করে একটা শব্দ হয়ে দরজাটা খুলে গেলো৷ এবার খাদিজা বুয়া ভাবলো মেডাম হয়তো তার শব্দ পেয়ে বাথরুমের দরজা খুলে দিয়েছে৷ কিন্তু ভেতরে পানির শব্দ শুনতে পেয়ে মেডাম মেডাম বলে ডাকতে ডাকতে ভেতরে ঢুকলো৷ ভেতরে ঢুকেই খাদিজা বুয়া মে…ডা….ম বলে চিতকার করে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলো৷

    বেশ কিছু সময় পার হয়ে গেলো৷ রাত প্রায় ১১ টা৷ ফুয়াদ বাসায় ফিরে রুমে ঢুকে দেখে স্নেহা বিছানায় ঘুমাচ্ছে ধবধবে সাদা শাড়ি তার পরনে উপুড় হয়ে শুয়ে আছে৷ তার পুরো শরীর ভেজা৷ তাকে হাত দিয়ে আলতো করে ধরতেই সে উঠে বসে পড়েছে৷ ফুয়াদ তার সে ভয়ঙ্কর চেহারা দেখে আতঙ্কে পাশে রাখা চেয়ারে বসে পড়লো৷ বাথরুমের দিকে চোখ পড়তেই সে দেখে কেউ একজনের পা দেখা যাচ্ছে বাধরুমে৷ ফুয়াদ ভাবছে তার এখন কি করা উচিৎ।

    এবার স্নেহা মটমট করে ঘাড় মচরিয়ে বলে উঠলো, ওমা!!! সে কি???? আমার গায়ে কে পানি ঢাললো? আমার গা ভিজা কেনো? এ সাদা শাড়ি আবার কোত্থেকে এলো? আমাকে এমন অদ্ভুত সাজে কে সাজালো?

    লিভিং রুমে স্নেহা

    নরম এবং ভয় ভয় গলায় ফুয়াদ বললো, স্নেহা তুমি ঠিক আছোতো?

    স্নেহার বিছানা সোজা আয়নাতে তাকিয়ে স্নেহা চিৎকার করে বলতে শুরু করলো, কে আমাকে এমন পাগলের মতো সাজিয়েছে? আমিতো খাদিজা বুয়াকে বলেছি খাবার দিয়ে আমাকে ডাকতে৷ এখন এসব কি হচ্ছে৷ আমার প্রচন্ড ক্ষিদে পেয়েছে৷ যাই আমি কাপড় বদলে নেই। বলেই…

    বিছানা থেকে উঠে বাথরুমের দিকে গিয়ে দেখে খাদিজা বুয়া অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে৷

    ওমা!!! বুয়া তুমি শুয়ে আছো কেনো? তোমার কাছে না আমি খাবার চাইলাম। তুমি আমাকে খাবার না দিয়ে এখানে কি করছো?

    ফুয়াদ দৌড়ে এসে খাদিজা বুয়াকে ডেকে তুলার চেষ্টা করলো৷ স্নেহা খাদিজা বুয়ার মাথা তার কোলে নিয়ে বসলো৷ ফুয়াদ বুয়া বুয়া বলে ডেকে চোখে মুখে পানি দিলো৷ খাদিজা বুয়া চোখ খুলে দেখে সে স্নেহার কোলে শুয়ে আছে৷ ভয়ে সে কিছু না বলে উঠে বসে বলতে শুরু করলো,-

    মেডাম আমিতো আফনেরে খাওনের লাইগা ডাকতে ডাকতে উফরে উইঠ্যা আইয়া দেহি আফনে নাই। বাথরুমে শব্দ ফাইয়া দরজায় আত দেওনের লগে লগে ফট্টাস কইরা দরজাডা খুইল্লা গেলো৷ হ্যের পরে দেহি, সাদা শাড়ি ফিন্দা আউলা ছুলে ক্যাডায় জানি আমারে এমন জোরে একডা থাপ্পড় মারলো, তারপর আমার চোক মুক আন্দার অইয়া গেলো৷ আর কিছু কইতাম ফারুম না৷ তবে ডান কানডা অহনও অবস অইয়া রইছে৷ ওমা!!! হেই সাদা শাড়ি দেহি আফনে ফিন্দা রইছেন!!! আফনে এই রহম কইরা ফাওলের লাহান সাইজা রইছেন ক্যালা মেডাম?

    স্নেহা থতমত খেয়ে বললো, বুয়া আমিতো কিছুই জানিনা৷ তুমি এসব কি বলছো?

    জ্বিন ভুত প্রেআত্মা এসব কিছু ফুয়াদ কখনও বিশ্বাস করতো না৷ এ কয়েকদিনের কান্ড কারখানা দেখে এখন ফুয়াদের মাথা এলোমেলো হয়ে গেলো৷

    খাদিজা বুয়া উঠে রান্না ঘরে চলে গেলো৷ গিয়ে ননদিনী রুবিনাকে সব বললো। তারা দুজন এখন স্নেহার জন্য খুব চিন্তিত হয়ে পড়লো৷

    কিছুক্ষন পরে স্নেহা কাপড় চোপড় বদলে নীচে আসলো খাবার খেতে৷ খাবার খেয়ে সে রুবিনার শারীরিক পরিস্থিতি জিজ্ঞেস করে নিজ হাতে ঔষধ পত্র খাওয়ালো। খাদিজা বুয়াকেও সে ব্যাথার ঔষধ দিয়ে বললো, তোমরা প্লিজ ঘুমিয়ে পড়ো। আমি কিছুই বুঝতে পারছি না, আমার সাথে কি কি সব হচ্ছে৷

    এদিকে ফুয়াদ খুব চিন্তিত এবং খুব ভয় পাচ্ছে৷ সে ভাবছে, রাতে ঘুমের মধ্যে না জানি আবার কোনো অঘটন ঘটে যায়৷ ভাবছে কার কাছে এ কথাগুলো বলবে৷ স্নেহা মা বাবার একমাত্র সন্তান৷ মেয়ের এ অবস্থার কথা জানলে, তারা এ অসুস্থ শরীরে চলে আসবে মফসসল থেকে৷ কিন্তু স্নেহার যে সমস্যা তা শহরে বসে সমাধান করা সম্ভব নয়৷ ভাবতে ভাবতে ফুয়াদ ঘুমিয়ে পড়লো।সকাল উঠে স্নেহাকে বিছানায় না দেখে ফুয়াদ চিন্তিত হয়ে পড়লো৷

    চলবে…

  • নিশির প্রবাস (পর্ব-৪)

    নিশির প্রবাস (পর্ব-৪)

    সময় মানুষ কে বদলে দেয়।
    ইন্টারভিউ দিয়ে এসে নিশি ওয়েট করছে, সুমন আসলে খুব মজা করে গল্প করবে, পাশাপাশি আফসোস ও হচ্ছে, এতো হেন্ডসাম একটা এমায়ুন্ট, জব টা করতে পারবে না।
    সুমন এসেই জিজ্ঞেস করলো,
    ইন্টারভিউ কেমন হলো? – ভালো।
    সব ঠিক ছিলো,পেমেন্ট ও খুব ভালো, পার আওয়ার ১০ ডলার, সপ্তাহে ৬ দিন। “তো ঠিক ছিলো কেন? সমস্যা কোথায়? “। আরে উনি বলেছেন আমার এই লম্বা চুলে ওইখানে কাজ করা যাবে না।”তো কি সমস্য চুল কেটে ফেলবা” – মানে? আমার এই চুল কেটে ফেলবো? আর একটু কাটলে হবে না, একদম ঘাড় অব্দি। “হ্যা বুঝতে পেরেছি তো, কাটবা ঘাড় অব্দি”

    • না আমি আমার চুল কাটবো না।
      সুমন একটা চড় মারলো নিশির গালে- “মানুষ একটা ভালো চাকরির জন্য কতো কিছু করে, আর চুল কাটবে না, কেশবতি কন্য”। নিশি জিবনে একটা ফুলের টোকা খায় নাই, এমনকি ওর সাথে জোরে কেউ কথা বলেছে বলে মনে পরে না। ও পুরা বাকরুদ্ধ হয়ে হয়ে গেলো। ও কতক্ষণ সোফায় বসে ছিলো জানে না। সুমন এর কথায় হুশ হলো ” খাবা না”
    • পরে খাবো। সুমন খেয়ে শুয়ে পরলো। নিশি সোফায় বসে ছিলো, ইচ্ছে হচ্ছিল সাবওয়ের নিচে গিয়ে সুইসাইড করে, কতো উল্টা পাল্টা ভাবনা যে মাথায় আসছিলো। কখন সোফায় ঘুমিয়ে পরে ছিলো, সকালে উঠে দেখলো সুমন কাজে চলে গেছে, ৫০ ডলার রেখে গেছে, আর একটা কাগজে লিখে গেছে চুল কাটার জন্য। পাশের ফ্লাট এর ভাবি কে জানানো উচিত, ফোন করে বললো – ভাবি চাকুরী টা হয়েছে, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, আমি একটু বাইরে যাচ্ছি, এসে আপনার সাথে দেখা করবো।
      তারপর ফোন করলো মিস্টার মেনুয়েল কে- জানালো জব টা সে করবে, মেনুয়েল জানালো সোমবার থেকে তুমি জয়েন করো, এবং তোমার ডিউটি এই সপ্তাহে আমি সকাল ৬ টা থেকে দুপুর ২ টা দিবো, তারপর বাই রোটেশন হবে।নিশি বের হলো সেলুন এর উদ্দেশ্যে, অনেকক্ষখ পর ও খেয়াল করলো ও শুধু এদিক সেদিক হাটছে, আর ভাবছে কবে ওকে চুল নিয়ে কে কি বলছিলো,
      (একবার আম্মার সাথে নিউমার্কেট গিয়েছিলা, একটা ছেলে নিশিদের ফ্লো করছিলো, পরে আম্মাকে খুব করে রিকুয়েস্ট করেছিলো এ্যড এর জন্য, আম্মা যখন কিছুতেই রাজি হচ্ছিল না তখন ছেলে টা বলছিলো “আন্টি চেহারা দেখাবো না শুধু চুল গুলি দেখাবো “। স্কুল এ নিয়ম ছিলো দুই বেনি করে যেতে হবে, প্রগ্রাম গুলিতে যখন ও চুল খুলে যেতো, সবাই তাকিয়ে থাকতো, অনেকেই এসে বলেছে তোমার চুল গুলি খুব সুন্দুর, মনেই হয় না আসল চুল, আরো কতো ঘটনা এই চুলের। ও একটা সেলুন এ ঢুকলো, দুইটা মেয়ে এসে জিজ্ঞেস করলো, ও কি করতে চায়? নিশি ওর চুল দেখিয়ে বললো, আমি চুল ছোট করবো, এবং হাত দিয়ে দেখালো কান অব্দি। একটা মেয়ে খুব অবাক হয়ে বললো, Why so short? You got beautiful hair, I have never seen such type beautiful and long hair. নিশি বললো –
      It’s my hair, my wish. নিশি খেয়াল করলো ওর মাঝে কোন বোধ কাজ করছে না। ও শুধু মেয়ে টা কে বললো, চুল গুলি যেন ওকে দিয়ে দেয়।
      বাসায় এসে চুল গুলি সযত্নে রেখে দিলো।
      সুমন সন্ধায় দেখে বললো,ভালোই তো লাগছে।
      কাজের জায়গায় ফোন করেছি কিনা জিজ্ঞেস করলো, কবে থেকে জয়েন করতে বলেছে এইসব জিজ্ঞেস করলো।
      সুমন বললো চলো লাভলি ভাবির বাসায় যাই। নিশির কোথাও যেতে ইচ্ছা করছে না।
      ভালোবাসা কাকে বলে নিশি জানে না, সিনেমায় দেখেছে। আব্বা আম্মার মাঝে যেটা সেটা ও সম্ভবত ভালোবাসা, কতো গল্প করে, দুজন একসাথে সিনেমা দেখতে যায়,বেড়াতে যায়, আবার ঝগড়া ও করে, তারপর একজন কে ছাড়া আর একজন খায় না।
      তবে কি সুমন নিশি কে ভালোবাসে না, কোনদিন ওকে নিয়ে বেড়ানোর উদ্দেশ্য এ কোথাও যায় নাই, যা ও দুইদিন বাংগালি দের গেট টুগেদার প্রগ্রাম এ গিয়েছে, ওর মতো ও আলাদা ছিলো, বাসায় এসে সবাই কেনো ওর দিকে তাকিয়ে থাকে সেটার জন্য মেজাজ। ভাবি সেদিন একটা কথা বলেছিলো,
      ” উনার বয়সের সাথে তো তোমার অনেক গ্যপ”। সুমন তো দেখে পছন্দ করেই ওকে বিয়ে করেছে, তারপর ও কেন ও এতো অবহেলিত। একদিন ও ওর সাথে ভালো করে কথা বলে নাই, এমন কি মনে হয় না কোনদিন হেসে ওর সাথে কথা বলেছে, নিশি একদিন বলেছিলো
      -তুমি একদিন ও আমার সাথে ভালো করে কথা বলো নাই, কোন ভালো মন্দ গল্প করো না। সুমন বলেছিলো
      “কি গল্প করবো তোমার সাথে”
      আজ শুক্রবার, আর দুইদিন পর নতুন জায়গায় জয়েনিং। সুমন কাজে, নিশি বাসায় বসে ভাবছে কি করবে, সিং এর ওখানে কিছু পেমেন্ট বাকি আছে ওটা আনতে যাবে।
      এমন সময় একটা ফোন এলো, ওইপাশ থেকে জিজ্ঞেস করলো,” আমি কি নিশাত এর সাথে কথা বলছি? ” জি বলছি। “বলেন তো আমি কে?” ( বাংলাদেশ এর কল না, বোঝাই যাচ্ছে) জি আমি ঠিক চিনতে পারছি না।”চেস্টা করুন, আচ্ছা একটা ক্লু দিচ্ছি, একটা কিশোরী ইটালি তে অনেকক্ষখ টেলিফোন বুথ এর লাইনে দাঁড়িয়ে আছে, তার বাসায় খবর দিতে হবে বিমান এ যান্ত্রিক সমস্যার জন্য ইটালি তে জরুরি অবতরণ করতে হয়ছে, কয়দিন লাগবে বলা যাচ্ছে না, ও ভালো আছে, চিন্তা না করতে, কিন্ত কিশোরী টা কোনভাবেই চান্স পাচ্চিলো না, কারন সবাই তখন হুমরি খেয়ে পরেছে ফোন করার জন্য” এক মুহুর্তে নিশি…
      ও মাই গড!!! সুনিল। আপনি নাম্বার কোথায় পেলেন? ” ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়, আমার নাম্বার কিন্তু দিয়েছিলাম, তুমি কিন্তু একদিন ও ফোন করো নাই”। সত্তিই আমি আপনার নাম্বার হারিয়ে ফেলেছি। “আচ্ছা তুমি কেমন আছো কিশোরী বউ”
    • এইতো আছি। “তোমার বর কেমন আছে?” জি ভালো আছে।
      আপনি তো টেক্সাস এ তাই না?
      “জি কিশোরী বউ” আপনি কেমন আছেন? “ভালো আছি, পড়াশোনার পাশাপাশি কাজ করছি, “তোমার সময় কাটে কেমন করে”
      -আমি ও কাজ করি, তারপর বাসার কাজ করে সময় কেটে যায়। “কাজ করো? কি কাজ করো” নিশি বিস্তারিত বললো, এতদিন কি করতো, আর সোমবার থেকে জয়েন করছে। “OMG Unbelievable” নিশি হাসলো। “আচ্ছা শোন আমার নাম্বার টা দিচ্ছি রাখো, ফোন দিও সময় সুযোগ হলে, নাকি আবার হারিয়ে ফেলবে?” না হারাবো না, দিন।নিশি নাম্বার টা লিখে রাখলো।

    চলবে…

  • নিশির প্রবাস (পর্ব-৩)

    নিশির প্রবাস (পর্ব-৩)

    সময় মানুষ কে অনেক কিছু শেখায়।
    নিশি আমেরিকা এসেছে আজ ২৬ দিন। ওর মাথায় সারাদিন একি চিন্তা কাজ করে, এখানে কেউ বসে বসে খায় না। সকালে সুমন কাজে চলে যাওয়ার পর নিশি প্রতিদিন বের হয়ে যায়, চাকরির খোজে, নিশি একটা দোকানের সামনে দাড়ালো,
    (সিং এম্পোরিয়াম) দেখলো এক ইন্ডিয়ান সিক বয়স্ক করে লোক দারানো, ও আস্তে আস্তে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “তোমাদের কি কোন লোক প্রোয়জন আছে কাজ করার জন্য ” লোকটি প্রথমেই জিজ্ঞেস করলো ” তুমি কি ইন্ডিয়ান?
    ” না, আমি বাংলাদেশি। ( ততদিন এ নিশির ইংলিশ বলার জড়তা কেটে গিয়েছে, চাকরি চাইতে ও আর লজ্জা লাগে না) লোকটি বললো – দেখো আমার এই দোকান টা আমি শুধু সামার এ খোলা রাখি, দুপুর ২ টা থেকে রাত ৮ টা, এখন খোলার সময় হয়েছে, যেহেতু সামার চলে আসছে। আমি নেক্সট ২দিন এটা পরিষ্কার করবো, তারপর ওপেন করবো। তুমি চাইলে এখানে কাজ করতে পারো, সেলস গার্ল হিসাবে, ঘন্টায় ৪ ডলার, সপ্তাহে ৫দিন, তুমি যদি রাজি থাকো, কাল থেকে শুরু করতে পারো, এই দুই দিন পরিস্কার করে, কাজ শুরু করতে পারো।
    তোমার পেমেন্ট আমি কাল থেকেই ধরবো। নিশি সাথে সাথে রাজি হয়ে গেলো। বললো জি আমি কাল ২ টায় চলে আসবো। নিশির খুবি খুশি লাগছিল, সুমন অনেক খুশি হবে।
    রাতে সুমন বাসায় ঢোকার সাথে সাথে বললো – আমার জব হয়েছে, তারপর বিস্তারিত। –
    ” পার্ট টাইম, ৪ ডলারX ৬ ঘন্টা = ২৪ ডলার = ৫ দিন =১২০ ডলার সপ্তাহে। আসা যাওয়ার ভাড়া। কিন্ত চাকরি খোজা ছাইরো না। সেদিন শুনলে না লাভলি ভাবি সপ্তাহে ৫০০ থেকে ৬০০ ডলার পায়। বিকাল থেকে নিশির ভিতরে যে খুশি টা কাজ করছিলো তা এক নিমিষেই কোথায় যেন হারিয়ে গেলো। রাতে আব্বার ফোন এলো, আব্বার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলার পর আম্মা যখন ফোন নিলো, কেনো যেন আম্মার সাথে কথা বলতে ইচ্ছা করছিলো না। আম্মা জিজ্ঞেস করলো ” সারাদিন কি করো মা? ইচ্ছা হচ্ছিল বলে ” ওমা আপনি জানেন না আমাকে এখানে স্কুল এ ভরতি করে দিয়েছে, কি সুন্দুর স্কুল, সুইমিংপুল আছে, সবুজ আর সবুজ ” উত্তর দিলাম তেমন কিছু না, সারাদিন বাসায় থাকি, মাঝে মাঝে সুমন এর সাথে বাইরে যাই। আম্মা মহা খুশি আমি জানি।
    পরদিন শুরু হলো আমার জিবনের প্রথম চাকুরী জীবন। ওই মল টা তিন তলা, কাপড় থেকে শুরু করে ঘর সাজানোর জিনিষ সবই আছে। সেদিন বাসায় আসতে আসতে রাত ৯ টা, আমি রান্না করে রেখে যাই নাই, দেখলাম সুমন ও ফিরেছে, আমার সাথে খুবি রাগারাগি করলো কেনো রান্না করে রেখে যাই নাই, এখন কখন রান্না হবে, কখন খাবো। ” আমি কি তোমার মতো ২ টায় যাই, আমার সকাল ৭ টায় উঠতে হয়” নিশি বললো কাল থেকে আর হবে না, আমি রান্না করে রেখে যাব।
    নিশির অই মলের কাজ টা ভালোই চলছিল, আর পাশাপাশি নিশি চাকরি খুজতে থাকলো,
    ( সুমন ২/৪ দিন পর পর মনে করিয়ে দিতো) এই ২ মাসে নিশি আরো বেশি শিখতে পেরেছে, জিবনের বাস্তবতা শিখছে, সুমন এর অবহেলা আর আগের মতো কস্ট দেয় না, আর ভিতর টা মনে হচ্ছিল শক্ত হয়ে যাচ্ছে। নিশির বেতন এর টাকা দিয়ে গতমাসে বাজার করেছে, নিশি খুশি সুমন এর কাছে চাইতে হয় না। ( এর মদ্ধে ২ বার ২ টা বাঙালি দাওয়াত এ গিয়েছিলো ওরা, একদিন একি কথা আবার ও রিপিট করলো সুমন-
    ” সবাই তোর দিকে তাকিয়ে থাকে কেনো ” তুই!! (নিশির মনে পড়ে না এই জিবনে নিশিকে কেউ তুই বলেছে) আর একদিন দাওয়াত থেকে এসে ধুম মেরে ছিলো, পরের দিন রবিবার সকালে দেড়ি করে উঠেছে, জিজ্ঞেস করছিলো “এত কি গল্প করছিলা ওদের সাথে?” নিশি উত্তর দিলো – নরমাল কথাবার্তা, বাংলাদেশ এ আমরা কোথায় থাকি, আমার দেশের বাড়ি কোথায়, কোন স্কুল এ পড়তাম, এইসব।
    যে বাড়ি টা তে ওরা থাকতো সেটা গ্রাউন্ড ফ্লোর এ ছিলো, জানালা খোলা যায় না, পর্দা সরানো যায় না, বাইরে থেকে সব দেখা যায়, আর সাবওয়ে স্টেশন একটু দূর ছিলো, আমাকে বলে হলো, নেক্সট রবিবার এই বাসা টা শিফট করবো।
    বাসা শিফট করা হলো। অই এপার্টমেন্ট ছিলো ২৬ তলা, নিশি রা উঠলো ৭০৩ এ, দুই দিন পর অই ফ্লোর এর ই এক বাংগালি মহিলার সাথে পরিচয় হলো, শিলা ভাবি। উনারা ছিলেন ৭১০ এ। অই ভাবির দুই টা জমজ বাচ্চা, তাই ভাবি আর এখন কাজ করে না। উনার হাসবেন্ড ভালো একটা জব করে। অল্প দিনের মদ্ধে ভাবির সাথে নিশির খুব ভালো একটা সখ্যতা গড়ে উঠলো। ভাবি বাজারে যায়, নিশি বাসায় থাকলে বাচ্চা দুইটা কে দেখাশোনা করে, ভাবি ভালো মন্দ রান্না করলে নিশিকে ডাক দিয়ে একসাথে খায়। একমাত্র অই ভাবির সাথে নিশি কিছুটা কস্ট, অভিমান শেয়ার করতো।
    অই ভাবির সাথে নিশির সখ্যতা সুমন পছন্দ করতো না, কেনো সেটা নিশির বোঝার বাইরে।
    একদিন ভাবি বললো “নিশি আমি যে জব টা করতাম, “একটা ফ্রেঞ্চ চেইন রেস্টুরেন্ট, ফুল টাইম, অইখানে এখন ও কাউকে নেয় নাই, তুমি চাইলে আমি কথা বলে দেখতে পারি” নিশি বললো দেখেন না ভাবি, তাহলে তো খুবি ভালো হয়। দুই দিন পর ভাবি বললো ” নিশি আমি কথা বলেছি, তোমার জব এর বিষয়, তুমি কাল ১২ টায় এই ঠিকানায় যাবে, ঐ শপ টার হেড হচ্ছে মিস্টার মেনুয়াল, উনার সাথে দেখা করবে।”
    নিশি সুমন কে জানালো,কাল একটা ইন্টারভিউ আছে।
    নির্দিষ্ট দিনে নিশি গেলো, মিস্টার মেনুয়াল ওর সাথে কিছুক্ষণ কথা বললো, তারপর ওকে কাজ বুঝালো– “দুই মাস তোমাকে সব করতে হবে, স্টোর থেকে মাল উঠানো, টেবিল ক্লিনিং, মপ করা, তারপর আমি তোমার সাথে কথা বলে এক জায়গায় দিবো, হতে পারে ওয়েট্রেস, হতে পারে ক্যাশ এ, বা ফ্রন্ট এ, আর এই শপ ২৪ ঘন্টা খোলা তোমাকে শিফটিং ডিউটি করতে হবে, কোন কোন সপ্তাহে তোমাকে নাইট শিফট করতে হবে, ঘন্টায় তুমি ১০ডলার পাবে, ৮ ঘন্টা করে, সপ্তাহে ৬ দিন” – নিশি তো মনে মনে মহাখুশি। ও জিজ্ঞেস করলো আমাকে কবে থেকে শুরু করতে হবে? ” নেক্সট মানডে থেকে ” – নিশি আল্লার কাছে হাজার হাজার শুকরিয়া জানালো, ও যখন উঠতে যাবে তখন মেনুয়াল বললো ” ওয়েট, এটা কি তোমার আসল চুল? নিশি খুব অবাক হলো, নকল চুল হয় নাকি আবার! বললো “তোমার এতো লম্বা চুল নিয়ে কিন্ত এখানে কাজ করতে পারবা না, তোমার চুল কাটতে হবে, তুমি দেখো আমার এখানে ইউনিফর্ম এর সাথে আলাদা একটা স্টাইল আছে, এবং এটাই সবাইকে মেইন্টেন করতে হবে। (সবার মাথায় হেট,পিছনের ফাকা জায়গা দিয়ে অল্প একটু চুল,বের করা,নেট দিয়ে আটকানো)
    চুল নিশির সবচেয়ে বড় অহংকার, নিশির মা ও নিশির চুল নিয়ে খুব অহংকার করতো। আর সুমন ও রাজি হবে না, সে নিজে না বললে ও বাংলাদেশ এ থাকা অবস্থায় ওর পক্ষের আত্তিয়সজন যখন চুলের প্রশংসা করেছে, তখন সুমন ও খুশি হয়েছে। এখানে যে কয়টা প্রোগ্রাম এ গিয়েছে, কেউ বাদ নাই, ওর চুলের প্রশংসা করে নাই। ও মেনুয়েল কে বল্লো, আচ্ছা আমি তোমার ফোন নাম্বার নিয়ে যাচ্ছি, আমি কাল তোমাকে ফোনে কনফার্ম করবো। মন টা খুব খারাপ লাগছিলো,এই জব টা ও করা হবে না। আর মনে মনে ভাবছিলো ইস চুল কেটে উনার ওইখানে কাজ করবে, খাইয়া দাইয়া কাজ নাই।
    আর সুমন ও রাজি হবে না।

    চলবে…