Tag: ধারাবাহিক গল্প

  • ভাবীর সংসার (পর্ব-১৩)

    ভাবীর সংসার (পর্ব-১৩)

    জাহিদ বাড়ীতে এসে দেখলো, মা লাউ কাটছেন, তবে খুব আনমনে। পলি আলনার সব কাপড় নামিয়ে একটা একটা করে ভাঁজ করছে, কলি পড়াশোনা করছে।

    জাহিদ বললো, মা আজ কি লাউ রান্না করবে?
    – মাত্র এটা কেটে আনলাম।
    – মা, লাউ এর খোসা দিয়ে ভাজি করবে, একদম কচি লাউ দেখছি।
    – হ্যা, দেখি।
    – সাঈদের সাথে কথা হয়েছে?
    – নাহ, ভাইজানের নাকি আজ কি বাইরে কাজ, তাই অফিস থেকে বাইরে।
    – ওহ, শোন, কাল টাকা পাওয়ার পর, দুই লক্ষ টাকা তুই ফিক্সড করে পলি আর কলির বিয়ের জন্য রাখবি।

    – এটা ভালো বুদ্ধি মা, ওদের কে একটু ভালো উপায়ে যেন দিতে পারি।

    – আর পঞ্চাশ হাজার দিয়ে তুই একটা লাইব্রেরি দে বাবা। এভাবে সংসার আর চলেই না। শাহিদ আর নাহিদ কে তখন সামান্য দিতে পারবি। ওদের কিছুটা সাহায্য হবে। আর যদি এমনি টাকা দিয়ে দিস তাহলে টাকার অংক কমে যাবে।

    কিন্তু ব্যবসা করলে টাকা লাভ আসবে, তখন কাজে দিবে। আর ব্যবসা করলে পড়াশোনা টা করতে পারবি, চাকরির জন্য, সারাদিনের পায়ে হেঁটে টিউশনির কষ্ট অনেক খানি কমবে।
    – মা, ঘর ঠিক করবে না?
    – না বাবা। প্রয়োজন শেষ হয়না, আর ঘর!
    – আর বাকি পঞ্চাশ কি করবে?
    – তোর ভাইজানের বদলি নিয়ে ঝামেলা, সে এক লক্ষ টাকা চেয়েছে!
    – কি? সে টাকার কথা জানলো কেমনে?
    – না, তুই যাওয়ার পর চিঠি এসেছি। সে এই টাকার কথা জানেনা। সে জমি বন্দক দেওয়ার কথা বলছে।

    জাহিদ চিৎকার করে বলছে, মা আমাদের তিন বেলা ডাল ভাত জুটেনা৷ আর তাকে তুমি জমি বন্দক দিয়ে দিবে? আমার মা, ধৈর্যের সীমা অতিক্রম করছে।
    – তোমরা চার ভাই সমান ভাগে পাও পঞ্চাশ করে, আর বোনেরা ২৫ করে। কিন্তু এখন আমার তিন মেয়ে, একজন বিয়ে হয়েছে। তাছাড়া জমি বিক্রি মাত্র শুরু হয়েছে, আমার আরো চার/সাড়ে চার লাখ টাকার সম্পত্তি আছে। তখন আমি পলি-কলিকে আর ভাগ দিব না, জলি আর তোদের চারজন কে দিব।আর সাঈদ কেও কম দিব, কথা দিলাম।
    – ভালো।
    – রাগ করিস না বাবা। যেভাবেই হোক কলি-পলি, নাহিদ কে রেখেছে তার বাসায়, খরচ যাই হউক দিয়েছে। এখন বাবা, তুই যদি না বুঝিস আমি কোথায় যাবো?
    – মা, আমার পলি- কলির বিয়ের টাকায় কোন সমস্যা নাই। তোমার টাকা ভাইজান কে দাও, তাতে ও আমার দুঃখ নেই, কিন্তু জমি বন্দক দেওয়ার কথা কেন তার মাথায় আসলো?
    – আমি তো বন্ধক দিচ্ছিনা। এখন সে, তোদের সবাইকে আগলে রাখে, এখন তাকেও দেখতে হবো, সেজন্য পঞ্চাশ হাজার টাকা দিচ্ছি!
    – মা, কি আগলে রাখে! জানা আছে।
    – আজ দুই মাস মেয়ে দুটিকে কি পেরেছি হোস্টেলে দিতে? যেভাবেই হোক রাখে, আর তো কেউ বাবা, এই কাজ ও করেনা। থাক ঝামেলা করে লাভ নেই। তুমি বাবা, লাইব্রেরির জন্য ঘর দেখো!

    জাহিদ আর কিছু না বলেই পুকুর ঘাটের দিকে গেল, তার অতিরিক্ত রাগ হলেই সে চুপ করে ঘাটের কাছে বসে থাকে।

    পলি ঘর থেকে এসে বললো মা, ভাইজানের বদলির জন্য এতো টাকা দিবে? তার না, এতো বড়লোক শ্বশুরবাড়ী? তারা দেয় না?
    – জামাই হয়ে খুঁজবে নাকি?
    – বড়লোক শ্বশুর দেখেই তো বিয়ে করলেন, তোমার ছেলে!
    – যেদিন মা হবি, সেদিন বুঝবি কি জ্বালা, এখন বুঝবি না।

    সাতদিন পরে আজ রাহেলা খানম নাতি দেখতে যাচ্ছেন। তার ভাই আরও দশ হাজার টাকা বেশি দিয়েছেন। এজন্য তিনি পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে টয়লেট টা একটু উন্নত করেছেন। এক হাজার যাওয়ার রাস্তা ভাড়া। শাহিদের জন্য এক হাজার টাকা পাঠিয়েছেন। আর তিন হাজার টাকা দিয়ে আট আনার একটি স্বর্ণের চেইন নাতির জন্য নিয়েছেন। বংশের প্রথম বাতি।

    স্বর্ণের দাম হু হু করে বাড়ছে। এখন প্রায় ছয় হাজার টাকা হয়ে গিয়েছে। তবুও সামান্য একটু সোনা দিয়ে নাতির মুখ তো দেখতেই হয়।

    কলি সারা রাস্তা শুধু বলছে ইশ ভাইজানের ছেলেকে আমরা আদর করবো, ভাইজানের মতো ফর্সা হয়েছে নাকি? ভাবীর মতো শ্যামলা? একই প্রশ্ন বার বার করছে কলি। আবার মাকে প্রশ্ন করছে, মা নাম কি রাখা যায় বাবুর? ভাইজানের নাম সাঈদ ছেলের নাম সামী রাখলে কি হয় মা?

    রাহেলা খানম বলছেন, তাদের ছেলে তারা নাম রাখবে, তোর এতো চিন্তা কেন?
    – ওমা, আমি ফুপু না? মা আমি কিন্তু তোমার একটা জিনিস চুরি করেছি।
    – কি?
    – সেদিন ব্লাউজের জন্য একটা সাদা কাপড় মামী দিয়েছিলেন আমাদের জামার সাথে। কি নরম তুলতুলে। আমি বাবুর জন্য কাঁথা সেলাই করেছি। আর লিখেছি সামী।
    – এই কাজ কখন করলি?
    – গত কাল রাতে, সব ঘুমানোর পর, হারিকেন জ্বালিয়ে এই কাজ করেছি। ভেবেছিলাম তাদের বাড়ী গিয়ে বলবো। কিন্তু এতোক্ষণ কথা পেটে রাখার ধৈর্য্য নেই।

    পলি বললো, আমার ও ভাতিজা দেখার জন্য মন ছটফট করছে। আর দয়া করে কথা বলিস না, রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি, চুপ করে থাক।

    রাহেলা খানম মনে মনে ভাবছেন অথচ তার কত ধৈর্য্য নাতির আকিকা হয়ে নাম রাখা শেষ। এই কথা টি তিনি পেটে লুকিয়ে রেখেছেন, কারণ তারা কষ্ট পাবে।

    জাহিদ লাইব্রেরির সাইন বোর্ড বানাতে দেয় নি। ভাতিজার নামে হবে, সেজন্য। না, দেখেই কত টান ভাতিজার জন্য। সবাই বলছে এখানে ব্যবসা খুব ভালো হবে, জাহিদ ও তাই আশা করছে।

    গাড়ী দ্রুত গতিতে যাচ্ছে, রাহেলা খানম ভাবছেন সাঈদ কি বলবে পুরো টাকার কথা জেনে, যদিও সাঈদ এখন পরিস্থিতির কারণে বদলে গিয়েছে। কিন্তু এক সময় টিউশনি করে, নিজের ডাল-ভাত খেয়ে সব টাকাই এই সংসারব দিয়েছে। ঈদে ভাই-বোন দের জন্য হাত ভরে বাজার করেছে, এখন হয়তো পারছেনা, কিংবা বদলে গিয়েছে। কিন্তু আগে তো করেছে, এখন বিপদে এতোটুকু সাহায্য না করলে মনের অশান্তি দূর হবেনা রাহেলার।

    সাঈদ কি অনেক ঝামেলা করবে? এরা আকিকা হয়েছে জানলে কি খুব কষ্ট পাবে? এদের কি হোস্টেলে ভর্তি করাবে সাঈদ? নাকি সব জট পাকিয়ে যাবে? এসব চিন্তা করছেন রাহেলা খানম….

    চলবে…

    আন্নামা চৌধুরী
    ০৪.১২.২০২১

  • ভাবীর সংসার (পর্ব-১২)

    ভাবীর সংসার (পর্ব-১২)

    রাহেলা খানম ফযরের নামায পড়ে উঠেছেন মাত্র। এখন বারান্দার বেঞ্চিতে বসে আছেন। সকাল বেলার এই সময় একা একা বসে থাকতে যেন এক ধরনের শান্তি লাগে।

    ঘড়িতে ছয়টা বেজেছে মাত্র, জাহিদ মসজিদ থেকে এসেছে, এসে টুপি হাতে নিয়ে মায়ের পাশে বসে আছে।

    রাহেলা খানম বলছেন, জাহিদ তুই যে, সকাল বেলা ফযর পড়তে মসজিদে যাস, এর জন্য আমি আল্লাহর কাছে প্রতি শুক্রবার দুই রাকাআত শোকরানা নামায পড়ি। তোকে দেখলেই মনে হয়, তোর আব্বার কথা। উনি ও এই ভাবে নামায পড়ে এসে বসতেন আর বলতেন সাঈদের মা, এক কাপ গরম পানি হবে?

    – আব্বা কি খুব চা প্রেমিক ছিলেন নাকি? দেখিনি তো!
    – গরম পানি হলো, কুসুম গরম পানি লেবু আর মধু দিয়ে খেতেন। কত সচেতন মানুষ চিলেন।
    – ওহ।
    – তোরা কি আর আগে এতো সকালে উঠতি?
    – না, আগে কেমন ঘুমের কাতর ছিলাম।
    – এখন, তোর কত পরিবর্তন হয়েছে, দায়িত্ব কাঁধে আসলে কত কিছু বদলে যায়।
    – সত্যি।
    – কিছু দিব খেতে?
    – না, মা। এখন একটু বিছানায় গড়াগড়ি করে আসি সাতটায় আবার পড়ানো আছে।
    – সাইদকে ফোন দিবি কখন?
    – দশটা, সাড়ে দশটায়।
    – আচ্ছা বাবা।

    দশটার দিকে একটা চিঠি আসলো, বাড়ীতে। চিঠি প্রথম রাহেলা খানমের হাতে পড়েছে। চিঠি লিখেছে সাঈদ।

    তিনি পড়া শুরু করেছেন,

    মা,
    আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছ মা? আমরা ভালো আছি। মা, আমার ছেলের নাম রেখেছি সৈয়দ মোহাইমিনুল হক জিহান। জাহানের ছেলে জিহান। সাত দিনের আগেই আকীকা করা সুন্নত। তাই একটা লাল রঙের গরু দিয়ে আকিকা করে ফেলেছি। তোমাদের বলার মতো সময় পাইনি, হুটহাট ডিসিশন নিয়েছি। রাগ করবেনা মা। এখন আসি দুঃখের সংবাদে আমার বদলি হয়েছে, অনেক দূরে। এখন, ছোট্ট বাচ্চা আর জাহান কে এভাবে রেখে যাওয়া অনেক ঝামেলার। তাছাড়া পলি-কলির কোন ব্যবস্থা এখনো করতে পারিনি। যদি পার, সরিষা ক্ষেতের জায়গা বন্দক দিয়ে এক লক্ষ টাকার বন্দোবস্ত কর, আমার মামা শ্বশুরের হাত লম্বা তিনি বলেছেন লাখ খানেক টাকা হলে, ম্যানেজ দিতে পারবেন। মা, এটা আমার জন্য বড় বিপদ মা, তুমি ছাড়া উদ্ধারের কেউ নাই।আমি কথা দিলাম, বছর দুইয়ের মধ্যে আমি জমির বন্ধক ছাড়িয়ে দিব।
    তুমি আমাকে সাহায্য করবে, আশা রাখি।
    টাকা হাতে পেলেই কলি-পলিকে নিয়ে আসবো। তুমি জাহিদ কে একটা কল দিয়ে আপডেট জানাতে বলবে। সালাম নিবে, ভালো থেকো।
    ইতি,
    তোমার বড় হতভাগা ছেলে,
    সাঈদ।

    রাহেলা খানমের মন টা খুব খারাপ লাগছে, তার নাতির তাকে রেখেই আকীকা হয়ে গেল? তিনি এখনো চোখেই দেখলেন না। তিনি সাথে সাথেই চুলার আগুনের সাথে চিঠি পুড়িয়ে দিলেন, কারণ পলি-কলি কিংবা জাহিদ শুনলে মন খুব খারাপ করবে। থাক, বলার দরকার নেই।

    ছেলের টাকার সমাধান তিনি এখন করতে পারবেন, তবে তার অনেক সমস্যাই সমস্যা রয়ে যাবে। আর সরিষা ক্ষেতের টাকায় এই সংসারের চাল আসে। এটা বন্দক দিলে, আবার বড় সমস্যায় পড়বেন তিনি। কি করবেন কিছুই বুঝতে পারছেন না রাহেলা।

    পলি মায়ের পাশে বসে বললো মা, কি ভাবছো চুলার দিকে তাকিয়ে?
    – না, কিছু না।
    – মা, আনি বলছিলাম কি! মামা যখন টাকা দিবেন, আমাদের কাচা টয়লেট টা ঠিক করলে হয়না? এটার অবস্থা তো খুবই খারাপ।
    – দেখি!
    – আর আমার বিয়ের টাকা জমাও না জমাও, কলির বিয়ের জন্য লাখ খানেক টাকা রাখবে। যাতে একটু সুন্দর করে বিয়ে টা হয়।
    – হ্যা, দেখি।
    – মা, তোমার কি মন খারাপ?
    – না, মন খারাপ না। ভালো লাগছে না। জাহিদ বাড়ী আসছে?
    – না, আসে নাই।

    রাহেলা খানম ভাবছেন জাহিদের কথা, ফোন দেওয়ার পরে কি উত্তর দিবে সাঈদ। এদিকে ছোট্ট নাহিদ আর শাহিদ এতো বড় ঢাকা শহরে কেমনে চলছে সেই চিন্তায় মাঝে মাঝে অস্থির লাগে। জলির সংসার কেমন চলছে সেটাও জানেন না তিনি। মা হওয়ার জ্বালা এমন কেন? সকল দিকেই চিন্তা থাকতে হয়।

    সাঈদ কে টাকা দিলে, তার অনেক কিছুই হবেনা, আর টাকা না দেওয়ার ও কোন পথ তিনি জানেন না। বার বার শুধু এটা মনে হয় প্রথম নাতির আকীকা তাদের সবাইকে ছাড়াই হয়ে গেল! এতো নিষ্টুর কেন দুনিয়া?

    কিছু মন খারাপ কাউকে বলাও যায়না আবার সয়ে নেওয়াটা বিরাট কষ্টের। তিনি আছেন এখন সেই অবস্থায়। তিনি আবার বারান্দায় গিয়ে বসে রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছেন জাহিদ কথা বলে, কি খবর নিয়ে আসে…..

    চলবে…

    আন্নামা চৌধুরী
    ০১.১২.২০২১

  • ভাবীর সংসার (পর্ব-১১)

    ভাবীর সংসার (পর্ব-১১)

    রাহেলা খানম উঠানে বসে বসে সবজি কাটছেন, পলি চুলার পাশে বসে আলু সিদ্ধ করছে, ভর্তার জন্য। ঘড়িতে সকাল এগারো টার কিছু বেশি হবে। কলি বারান্দার শেষ কোনায়, মোড়ায় বসে পাঠ্য বই পড়ছে।

    রাহেলা খানমের ছোট ভাই সৈয়দ কামরুল হাসান হাতে এক পাতিল দই আর এক প্যাকেট মিষ্টি নিয়ে, রাহেলা খানমের সামনে এসে সালাম দিলেন।

    রাহেলা খানম ভাইকে দেখে বেশ চমকে উঠলেন, কারণ তার ভাই অনেক ব্যস্ত, সময় বের করে হঠাৎ উপস্থিত হবেন টের পান নি রাহেলা।

    সাথে সাথে হাত পানিতে ধুয়ে দাঁড়িয়ে বললেন, কামরুল কেমন আছিস ভাই?
    – ভালো আছি বুজি। তুমি কেমন আছ?
    – আল্লাহর শুকরিয়া ভালো আছি। সুমি আর ভাতিজা, ভাতিজি ভালো আছে?
    – আছে বুজি ভালো। সুমি ব্যাংকের চাকরি নিয়ে খুব ব্যস্ত, ছেলে-মেয়েরা পড়াশোনা নিয়ে, এজন্য সাথে আনতে পারিনি।
    – আয় ঘরে আয়।

    রাহেলা খানম ভাইকে ঘরে বসিয়ে রেখে এসে বললেন পলি, জলির জামাইয়ের জন্য যে মোরগ রেখেছিলাম, তা ধরার জন্য দৌড় দে, তোর চাচী আম্মার কাছে কালিজিরার চাল পাবি, চালের জন্য কলিকে পাঠিয়ে দে। আর তার আগে শরবত করে নিয়ে আসতে বল কলিকে।
    – আচ্ছা।

    রাহেলা খানম পিছনে না তাকিয়ে আবার ঘরের দিকে দৌড় দিলেন। পলি দেখছে, তার খুব ভালো লাগছে।

    কলি এসে বললো দেখেছিস আপা, মামা কত বড় অফিসার কিন্তু মা কে কত ভালবাসে। প্রতি বছর ঠিকই মাকে দেখতে আসে।
    – হুম। যা শরবত দে, আমি আমাদের লালু মিয়ারে ধরি।
    – আপা, এটা না দুলাভাই এর জন্য মা রাখলেন।
    – এখন লালু মিয়া, মামার পেটে যাবে। তুই দোয়া কর, যেন ঘন্টা খানেকের মধ্যে লালু মিয়ারে কাবু করতে পারি।

    কলি হাসছে যাও যাও পারবে।

    কামরুল হাসান বললেন বুজি আমি চট্টগ্রামে একটা বাড়ী কিনবো, তাই বাড়ীর কিছু জায়গা বিক্রি করতে এসেছি৷

    বাড়িরসম্পত্তি গুলো এখন ভাগ বাটোয়ারা করে আমার ভাগ বিক্রি করবো।
    – চট্টগ্রামে কেন বাড়ী কিনবি?
    – ছেলে-মেয়ে বড় হয়েছে, সারাজীবন চাকরি করেছি এখানে, এখন ফ্ল্যাট নিয়েছিলাম, সুমি একটা তিনতলা বাড়ী পছন্দ করেছে। এজন্য ফ্ল্যাট বিক্রি করে দিচ্ছি, সুমি লোন নিবে, তারপরেও আরও ১২ লক্ষ টাকা লাগে। তাছাড়া বছর সাতেক পরে রিটায়ার্ড করবো,ইনকাম বের করা দরকার। এজন্য গ্রামের জায়গা বিক্রি করবো ভাবছি, এখন এখানে বাটোয়ারা করে দেখা গিয়েছে, আব্বা তোমার নামের যে জায়গা দিয়েছেন, তার দুই শতক সহ দাম হচ্ছে। কিন্তু এই দুই শতক না হলে জায়গা লম্বাটে হওয়ায় কেউ কিনতে চায়না। তুমি যদি দুই শতক লিখে দাও, আমি তোমাকে টাকা দিয়ে দিব।
    – দুই শতকের দাম কত টাকা আসে?
    – এখানে শতক দেড় লক্ষ টাকা, তুমি তিন লক্ষ পাবে। তুমি কি দিবে আপা? তুমি হয়তো ভাববে, আমার জন্য হয়তো তোমার জায়গা চাইছি।
    – আরে না, ভাই, আমার টাকার দরকার থাকলেও মেজ ভাইজান, কিংবা বড় ভাইজান কে বলিনি। কারণ জায়গা এখনো বিক্রি শুরু হয়নি। আর বাপের সম্পত্তি ভাইয়েরা না দিলে, আমি কখনো দাবী করবো না।
    – তা ঠিক, ভাইজান বললেন তুমি দিলে বিক্রি করে ফেলতে। কারণ বাড়ী টা কিনলে মাসে ষাট হাজার টাকা ভাড়াও আসবে।
    – তোর কাজে যদি লাগে বিক্রি করবি কর, আর তুই টাকা না দিলে সাঈদ কে ভার্সিটিতে পড়ানো কষ্ট হয়ে যেতো।
    – ভাগ্না মানুষ করার অর্থ হচ্ছে আমার বোন ভালো থাকবে। ভাবতেই ভালো লাগে বড় ভাগ্না বিসিএস ক্যাডার। এখন এজন্য আর এতো দেই না কারণ সাঈদ ভালো ইনকাম করে। আর এদিকে আমার ছেলে প্রাইভেট ভার্সিটিতে পড়ে খরচের উপরে খরচ।
    – না, না। তোর দুলাভাই শিক্ষক মানুষ, সাঈদের পড়াশোনা নিয়ে সবচেয়ে বেশি ঝামেলায় পড়তেন, তুই উদ্ধার না করলে…..
    – বুজি এসব বলবেনা, সাঈদ মানুষ হয়েছে তাই শান্তি।বাড়ীঘর পাকা কর এখন, মেয়েদের বিয়ে শাদি আছে, সাঈদ ভালো আছে?
    – নাতি হয়েছে।
    – মাশাল্লাহ।

    কলি মামাকে লেবুর শরবত দিল।

    কি রে কলি কেমন আছিস?
    – ভালো আছি ছোট মামা।
    – খুব পড়ছিস দেখলাম, তাই ডাকিনি।
    – পড়া চলছে কোন মতে!
    – কেন?
    – অনেক দিন বাড়িতে আছি, কলেজ যাইনা। ভাইজান চিঠি দিলে যাবো।

    সাথে সাথে রাহেলা খানম বললেন পরীক্ষা হয়েছে,আমিও জলির বিয়ের পর একা, এজন্য ক দিন রেখে দিয়েছি।
    – না, না পড়া নষ্ট করে বেড়ানোর দরকার নাই।

    রাহেলা খানম চোখ গরম করে তাকালেন, যেন কলি আর কিছু না বলে। কারণ তিনি কখনোই সাঈদ ছোট হোক কিংবা ঘরের ঝামেলা বাইরে কেউ জানুক, তা পছন্দ করেন না। কিন্তু মামা সাঈদের জন্য অনেক করেছেন তার গুনধর ভাগিনার কথা জানাতে চেয়েছিল কলি।

    কলি বাইরে এসে দেখলো, পলি এখনো দৌড়াচ্ছে কিন্তু লালুমিয়া দৌড়াচ্ছে আরও দ্রুত গতিতে।

    শেষ পর্যন্ত দুই বোনের চেষ্টায় লালু মিয়া ধরা খেয়ে জবেহ হয়েছেন।

    মোরগ কাটতে কাটতে কলি বললো আপা, মা সব সময় ভাইজানের প্রশংসা করেন, আমি ছোট মামাকে কিছু বলতে চেয়েছিলাম, কিন্তু মা যেভাবে তাকালেন, বাপরে!
    – তিন পুত্র মরে যাওয়ার পরে ভাইজান কে পেয়েছেন। এজন্য আদর একটু বেশি।

    রাহেলা খানম মোরগের ঝোল করেছেন, পোলাও, কদু শাক দিয়ে পাতুরী, মাছের তরকারি, পাতলা ডাল। আর ভাইয়ের পছন্দের পিয়াঁজ বেরেস্থা।

    জাহিদ দুপুরের সময় মাছ নিয়ে এসে দেখে ছোট মামা এসেছেন, হাতে রুই মাছ ছিল। এটা সাথে সাথে রান্না করেছেন রাহেলা।

    কামরুল খাওয়া দাওয়ার সময় বললেন, বুজি তুমি রান্না করলে আম্মার রান্নার স্বাদ পাই। আম্মা মরে যাওয়ার প্রায় বারো বছর হয়ে যায়।
    – আম্মার রান্না কত ভালো ছিল!

    জাহিদ কি করছিস, বিসিএস দে, ভাইয়ের মতো পজিশনে যা। তোদের নিয়ে আমাদের কত স্বপ্ন
    – জি মামা।

    যাওয়ার সময় কামরুল বললেন, বুজি আমি আগামী পড়শু দিন এসে তোমাকে নিয়ে যাবো, আর সেদিন বায়নার তিন লক্ষ পাবো, তোমাকে সম্পূর্ণ দিয়ে দিব।
    – না, বিক্রি হলেই দিস।
    – না না। দিয়ে দিলে, আমিও শান্তি। আর এই ব্যাগে সুমি, কলি-পলির জন্য জামা দিয়েছেন দিও, আর এক হাজার টাকা রাখো, খরচ করবে।
    – না, থাক। লাগবেনা।
    – বুজি, তুমি কত আদর করেছো, এখন ঝামেলায় পরে আসতে পারিনা, জলির বিয়ের চিঠি পেয়েছি কিন্তু চট্টগ্রাম থেকে আসার সুযোগ হয়নি। আর এই এক হাজার জলিরে দিবে, ছোট মামার উপহার।
    – থাক, আর লাগবেনা।
    – বুজি, আবারও জিজ্ঞেস করছি, তুমি খুশি হয়ে লিখে দিবে তো? তোমার ইচ্ছা না থাকলে আমি জোড় করবো না।
    – আরে না, আমার ও দিলে উপকার হয়।
    – আচ্ছা, যাই।

    কামরুল যাওয়ার পর রাহেলা জাহিদ কে বললেন তিন লক্ষ টাকা এখন পেলে, আমার যে কি উপকার হবে বাবা। তোদের লেখা পড়ায় আর ঝামেলা হবেনা, বাড়ী ঘর ঠিকঠাক করতে পারবো, আল্লাহ এতো দিন আমার দিকে মুখ তুলে তাকালেন। আমার মরহুম আব্বা, ও মরহুম আম্মাকে আল্লাহ বেহেশত নসিব করুন। আমার আব্বা যদি আমাদের তিন বোনের জন্য জায়গা, লিখে না দিতেন, আমরা কিছুই পেতাম না।
    – নানাভাই সম্পদ শালী কিন্তু বিচারী মানুষও ছিলেন।
    – হ্যা বাবা। কিন্তু আব্বা জমি বিক্রি করা পছন্দ করতেন না তাই তোর বড় দুই মামা কখনোই জমি বিক্রি করেন নি। অনেক সময় কষ্ট করে চলেছেন। তাই আমিও কখনো বলিনি। আব্বার ইচ্ছা সবার আগে, এখন কামরুলের দরকার আমারও ভালো হয়, তাই বিক্রি করছি।
    – ভালো হয়েছে। যাক, একটু শান্তি পাওয়া যাবে।
    – আল্লাহ যদি দেন, বাবা সাঈদ কে একটা কল দিও আজ সন্ধ্যায় বাজার থেকে। পরে আবার রাগ করবে, না জানালে।

    কলি বললো কেন রাগ করবে, সে কি আমাদের রাগ অভিমান কষ্টের দিকে খেয়াল রাখে?
    – বিয়ে হউক বুঝবে যন্ত্রণা, যাই হউক জাহিদ তুই কল দিস।
    – সকালে, ভাইজানের অফিসে কল দিমু, এখন আর বাইরে যাচ্ছিনা।
    – আচ্ছা।

    রাহেলা খানমের আজ অনেক দিন পর খুব শান্তি লাগছে, তাছাড়া কামরুলের কাজে লাগবে টাকা, এটা শুনেও ভালো লাগছে। এই ভাই, তার সব সময় খেয়াল রেখেছে। সাঈদ নিশ্চয়ই খুশি হবে জানলে, তার মাথা থেকে কিছু ঝামেলা নামবে….

    চলবে…

    আন্নামা চৌধুরী
    ২৯.১১.২০২১

  • নিশির প্রবাস (পর্ব-১৬)

    নিশির প্রবাস (পর্ব-১৬)

    নিশি সারারাত ঘুমায় নাই। নাস্তা বানালো, অপেক্ষায় ছিলো কখন সুমন কাজে যাবে। সুমন উঠে রেডি হয়ে বের হওয়ার সময় নিশি গেট অব্দি গেলো, সুমনের কপালে একটা চুমু দিলো ( যেটা নিশি কখোনোই করে না, জানে না সুমম অবাক হয়েছে কিনা, সুমন কিছু বললো না) তারপর লাগেজ খুলে আব্বুর দেওয়া একটা ডায়রি বের করলো, (এই ডায়রি টা তে আব্বু কিছু ঠিকানা যে আত্মিয় রা দেশের বাইরে থাকে তাদের নাম, ঠিকানা, ফোন নাম্বার, আর আম্মার হাতের লিখা কিছু দোওয়া, কখন কোন দোওয়া পড়া উচিত) ও সুনিল কে ফোন করলো, সুনিল কে বললো

    আমি আজ টেক্সাস আসবো, ওখানে আমার এক মামা থাকে, তুমি প্লিজ আমাকে এয়ারপোর্ট থেকে আমার মামার বাসায় নামিয়ে দিবা।
    ” কখন তোমার ফ্লাইট, লেন্ড করবে? কারন আমার তো অফিস আছে। “
    — আমি এয়ার পোর্ট থেকে জানাতে পারবো।
    ” আচ্ছা আমাকে জানিও “।
    নিশি একটা ব্যাগ এ ওর পাসপোর্ট, ওই ডাইরি টা, ২/৩ টা কাপড়, আর ওর নিজের প্রায় ২০০০ ডলার ছিলো সেই গুলি নিলো। তারপর সুমন কে একটা চিঠি লিখলো।
    ( আমি চলে যাচ্ছি, আমাকে খোজার চেস্টা করো না, তোমার সব ডলার মেট্রেস এর চেইন এর ভিতর রেখে গেলাম) ও চিঠি টা বেড রুমের টেবিল এর উপর রেখে দিলো। ও একটা টেক্সি নিয়ে এয়ারপোর্ট এ যেয়ে টিকিট নিলো টেক্সাস এর। ফ্লাইট সন্ধায়। এখন মাত্র দুপুর। ও অপেক্ষা করছে ফ্লাইট এর। আচ্ছা আরিফ কে কি একটা ফোন করবে, না দরকার নেই, যদি চলে আসে, ওকে না যেতে দেয়। সুমন এসে যখন চিঠি টা পাবে, ওর কি রিএকশন হবে? মনে হয় খুশি হবে। সুমন কাজে থেকে আসবে ১০ টার দিকে, তখন ও সম্ভবত টেক্সাস থাকবে। সুনিল কে জানানো হয় নাই। ও বুথ থেকে সুনিল কে ফোন করে জানানো রাত ১০ টায় ও লেন্ড করবে টেক্সাস এ। সুনিল জানালো, নিশিকে পিক করতে পারবে। নিশি যাদের কাছে যাচ্ছে উনি নিশির মেঝো মামির বড় ভাই, ডাক্তার। এখানে অনেক বছর যাবত আছে। এক সময় ফ্লাইট টেক অফ করলো, তিন ঘন্টার জার্নি। ও লেন্ড করে সুনিল কে পেলো, গাড়িতে উঠে নিশি ঠিকানা টা সুনিল কে দেখালো। ঠিকানা দেখে সুনিল বল্লো “এটা তো হিউস্টন, এখান থেকে প্রায় দের ঘন্টার ড্রাইভ, অলরেডি ১০.৩০, যেতে যেতে রাত ১২ টা, আমার আবার ফিরত আসতে হবে, একটা কাজ করো, তুমি আজ রাত টা টেক্সাস এ থাকো, আমি তোমাকে কাল দিনে হিউস্টন নিয়ে যাবো”। নিশির অনেক টেনশন হচ্ছিলো – কোথায় থাকবো? ” আমি তোমাকে একটা মোটেল ঠিক করে দিচ্ছি, শুধু রাতের ব্যাপার টাই তো”।

    আমি একা থাকবো? ” নিশি আমার বাসায় আমার ছোট ভাই আর আমার ফিয়ান্সের বড় ভাই থাকে, এক্সট্রা কোন রুম নাই”

    না না আমি সেটা বলি নাই, মানে কোন প্রব্লেম হবে না তো? ” না কোন প্রব্লেম হবে না”। সুনিল ওকে একটা মোটেল এ রুম ঠিক করে দিলো, বললো ” আমি কাল সকালে অফিসে যেয়ে বস কে বলে চলে আসবো, তোমাকে হিউস্টন নিয়ে যাবো। তুমি টেনশন নিও না” হঠাত নিশির মনে হলো ও সারাদিন কিছু খায় নাই, রুম এ একটা ফোন আছে, ও জিরো তে ফোন করে জানতে চাইলো খাবার কি আছে? ওকে জানানো হলো, এটা হোটেল না মোটেল, এখানে খাওয়ার কোন এরেঞ্জমেন্ট নেই, আর আশেপাশে ও কোন খাবার পাওয়া যাবে না। পানি দেওয়া যাবে, পে করে নিতে হবে। – ও তাই করলো, একটা পানি নিলো। খিদায় পেট বেথা করছে। ও আধা বোতল পানি একসাথে খেয়ে ফেললো। গুম তো আজ আসবেই না, প্রচন্ড ভয় করছে, বারবার দরজার কাছে যাচ্ছে, কোন ধরনের আওয়াজ আছে কিনা, বার বার জানালা চেক করছে, ও একা একটা মেয়ে মানুষ,।
    রাত ২ টা রুমের ফোন বেজে উঠলো, ও খুব ভয় পেয়েছে, রিসিপশন থেকে জানানো হলো, Your call.. ওপাশ থেকে সুনিল বললো ” নিশি তুমি তোমার হাসবেন্ড এর সাথে ঝামেলা করে এখানে এসেছো, আমাকে জানাওনি, আমাকে পুরাপুরি দোষী করে দিলা, আমি তোমাকে হেল্প করতে চেয়েছি, আর তুমি আমার এতো বড় ক্ষতি করলে” — মানে কি? কি বলছো এইসব?
    ” তোমার হাসবেন্ড আমার বাসায় ফোন করে, চিত্রার ভাইকে আর আমার ছোট কে বলেছে, আমি তোমাকে ভাগিয়ে এখানে নিয়ে আসছি, তোমার সাথে আমার ৮/৯ মাসের সম্পর্ক।
    — কিন্তু এটা তো সত্যি না, আমি তো আমার মামার বাসায় চলে যাবো কাল। ” কিন্ত উনি তো অনেক ঝামেলা করছে, এই অব্দি উনি ৬ বার ফোন করেছে, আর আমি যে তোমাকে পিক করতে গিয়েছিলাম এটা তো সত্যি,আমার বাসায় জানে। তোমাকে হেপ্ল করা যে আমার জিবনের এতো বড় কাল হবে আমি ভাবতে ও পারি নাই, উনি বলেছে এখানকার বাংগালি এসোসিয়েশন এ কমপ্লেইন করবে আমি তার বউ ভাগিয়ে নিয়ে আসছি, ওহ গড”।
    — তুমি কি বলেছো আমাকে তুমি এখানে রেখে গেছো? ” আমার সাথে কথা হয় নাই, সঞ্জীব আর দাদাকে বলেছে”

    সুনিল আমি হাত জোর করে মিনতি করছি আমি যে এখানে আছি বলো না, ও আমাকে মেরে ফেলবে ( নিশি অনেক কাঁদছিল আর বলছিলো) তুমি আমার মামাকে শুধু খবর টা দাও প্লিজ, আমি এখানে আছি, আমাকে যেনো এখান থেকে নিয়ে যায়।
    ” আমি জানি না, আমি কি করতে পারবো, আমার ছোট ভাই, চিত্রার দাদা আমাকেই দোষী ভাবছে”
    –প্লিজ সুনিল এখান থেকে বাইরে ফোন করা যায় না, আমি তোমার কাছে আর কিছু চাইবো না, তুমি আমার জন্য অনেক করেছো, শুধু এইটুকু করো, নাম্বার টা তোমার কাছে আছে, কাল সকালে মামাকে ফোন করে একটু বলো আমার কথা, আমি এখানকার কিছু চিনি না, আমার সুইসাইড করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না। হাত জোর করে রিকুয়েস্ট করছি, প্লিজ আর কিছু চাইবো না তোমার কাছে।
    নিশির মাথা কাজ করছে না। একটা ঠিকানা আর একটা ফোন নাম্বার, যে ফোন নাম্বার এ কাল ট্রাই করা হয়েছিলো, কেউ পিক করে নাই। যদি খুজে না পায়! ও কি করবে? সুনিল ও আর হেল্প করবে না মনে হচ্ছে। এখানে আসতে ওর ওর ৫০০ডলার শেষ, তারপর মোটেল বিল। আজকের মতো অসহায় নিজেকে কখোনোই লাগে নাই। রাত টা কি ভিষন বড়, শেষ হচ্ছে না। এই পরিস্থিতি তেই বুঝি মানুষ সুইসাইড করে। ও বুঝতে পারছে যে টোন এ সুনিল কথা বলেছে, সুনিল ওকে আর কোন হেল্প করবে না। নিজের উপর প্রচন্ড রাগ হচ্ছে, কেনো ও ডায়াল লিস্ট থেকে সুনিল এর নাম্বার টা ডিলেট করলো না। সুমন টের পেয়েছে ও এইখানে আছে। সুমন চলে আসতে পারে।
    ওকে পালাতে হবে, কিন্তু কোথায়?

    চলবে…

  • ভাবীর সংসার (পর্ব-১০)

    ভাবীর সংসার (পর্ব-১০)

    নাহিদ সকাল বেলা ভাইয়ের বাসায় যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে। পলি-কলি সব ঠিক ঠাক ভাবে গুছিয়ে দিচ্ছে।

    রাহেলা খানম কৌটায় করে নিজের হাতে বানানো চিড়েরনাড়ু আর তিলের নাড়ু, দিলেন। দুটি কৌটা দিয়ে বললেন, একটা বউমা কে দিবি, আর আরেকটা তোর, পড়তে বসলে ক্ষিদা লাগলে খাবি। কলি-পলি যাওয়ার সময় আরও দিয়ে দিব। বাবা, মন দিয়ে পরীক্ষা দিবি, যেন খুব ভালো ফল আসে।

    নাহিদের চোখ ছলছল, দুই আপা ছাড়া এই প্রথম ভাবীর বাসায় যাচ্ছে সে। খুবই চিন্তা হচ্ছে তার।

    পলি নাহিদের পিঠে হাত রেখে বললো, ভাবী যা দিবে, তাই খাবি। খুব ভালো করে সব বিষয় পড়বি, যেন পরবর্তীতে ভর্তি পরীক্ষার কাজে আসে। আর মাথা ঠান্ডা করে পরীক্ষা দিবি।
    – দোয়া করিস আপা।
    – অবশ্যই। আর আমাদের ফার্স্ট ইয়ারের রেজাল্ট হলে, গঞ্জের দোকানে কল দিস। যেকোনো দিন রেজাল্ট হয়ে যাবে।
    – আচ্ছা জানাবো, তোদের সেকেন্ড ইয়ারের ক্লাস চলছে যাবিনা?
    – আরেকটি চিঠির অপেক্ষা ভাই। তুই খুব ভালো করে পরীক্ষা দিস।
    – হুম।

    নাহিদ কে বিদায় দিয়ে, খুব বেশি কান্নাকাটি করছেন রাহেলা খানম। ছোট ছেলেকে নিয়ে দুঃচিন্তা বরাবরই বেশি করেন রাহেলা।

    নাহিদ ভাইয়ের বাসায় পৌছাতে পৌছাতে সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে। নতুন বাসা না চেনায়, বই খাতা সব নিয়ে ভাবীর বাবার বাসায় গেল নাহিদ।

    শারমিন দরজা খুলেই বললেন চিঠি পেয়েই রওনা হয়েছো বুঝি?
    – ইয়ে মানে, আমার পরীক্ষার রুটিন দিয়েছে…
    – হ্যা হ্যা জানি জানি। এই আয়মন দরজা আটকে দে, আমি বাসায় যাচ্ছি, আমার আরামের দিন শেষ।
    – ভাবী চাবি দিয়ে দাও, বাসার নাম্বার বললেই হবে, আমি চলে যাবো।
    – না, চলো।

    নাহিদের বেশ লজ্জা লাগছে, আয়মন দরজা খট করে লাগিয়ে দিল,কিন্তু কুশল বিনিময় পর্যন্ত করলো না। ওদের অহংকার আগের মতোই আছে। ভাবী ও খুব বিরক্তি নিয়ে তার সাথে যাচ্ছেন।

    এই বাসার ছোট্ট একটি রুমে নাহিদের থাকার ব্যবস্থা হলো, ড্রয়িং রুমে চাইলে সিংগেল খাটে একজন থাকা যাবে, কিন্তু ভাবীর ধারণা সে হয়তো রুম এলোমেলো করে দিবে, সেজন্য আট ফিট বাই আট ফিটের ছোট্ট রুমে নাহিদের থাকার ব্যবস্থা হলো।

    ঠিক পাঁচ দিন পর, পলি আর কলির ১ম বর্ষের রেজাল্ট হয়েছে পলি দ্বিতীয় বিভাগ, আর কলি প্রথম বিভাগ পেয়েছে।

    শারমিন রেজাল্ট শুনে নাহিদ কে বললো এতো আরামে থেকেও পলি সেকেন্ড ডিভিশন পেল, আমাদের হামিদা বুয়ার ছেলেও ফার্স্ট ডিভিশন পেয়েছে।
    – ভাবী, আপনি অনার্সে ভর্তি হবেন নাকি?
    – সংসার করি আগে, আর পড়াশোনা! দুদিন পরেই আবার বাবু হবে।
    – ভাইজান একজন বিসিএস ক্যাডার আর আপনি ইন্টারমিডিয়েট পাশ থাকবেন?
    – নাহিদ বেয়াদবি করবেনা, ছোট মানুষ, ভদ্র ভাবে থাকবে।

    নাহিদের এই কথা বলতে পেরে বেশ শান্তি লাগছে কারণ ভাবী ইন্টারমিডিয়েটে তৃতীয় বিভাগ পেয়েছেন। অথচ পলি আপার রেজাল্ট নিয়ে ঠিকই মজা নিচ্ছেন।
    তিনি নিশ্চয়ই এই ব্যাপারে ভাইজান কে বিচার দিবেন , আবার নিজের সম্মানের কথা ভেবে নাও দিতে পারেন।

    জাহিদ বাজার থেকে বাতাসা কিনে নিল, দুই বোন খবর শুনে গলায় জড়াজড়ি করে হাসছে, আর কলি বলছে আপারে, আমরা পাশ করে ফেলেছি। সত্যি পাশ করে ফেলেছি।

    জাহিদ বলছে ৯৭ সালের পরীক্ষা নাকি কঠিন হয়েছিল, সবাই বলাবলি করছিল, যাক পাশ করে ফেলেছিস শান্তি। আর মাত্র কয়েক বছর কষ্ট করলে গ্রেজুয়েট হয়ে যাবি!
    – তাই যেন হয়, তাই যেন হয়।

    দুই মাস পরে নাহিদ পরীক্ষা শেষ করে বাড়ী আসলো, কিন্তু সাঈদ পলি-কলি যাওয়ার ব্যাপারে এখনো কিছুই জানায় নি। এজন্য দুই বোন বিরাট টেনশনে আছে, তাদের পড়াশোনা হয়তো আর হবেই না, এইটা ভাবছে তারা!

    শারমিনের বাবু হবে এই মাসে, পলি ভাবছে হয়তো বাবু হওয়ার পরই ভাইজান তাদের নিয়ে যাবে। আশায় বুক বেঁধে আছে দুই বোন।

    ইঞ্জিনিয়ারিং কোচিং করার জন্য নাহিদ ঢাকা যাবে, কিন্তু জাহিদ কোন ভাবেই তাকে টাকার জন্য দিতে পারছেনা।

    শেষ পর্যন্ত শাহিদ তার এক বন্ধুর কম্পিউটারের দোকান আছে মতিঝিলে, সেখানে চাকরীর ব্যবস্থা করলো, বেতন সাড়ে তিন হাজার টাকা। এই বেতনে দুই ভাই ডাল-ভাত খেয়ে মেসে থাকতে পারবে কোন রকম।

    শাহিদ সরকারী ডিগ্রি কলেজে ভর্তি হয়েছে কিছু দিন আগে, কিন্তু ক্লাস একদিন ও করেনি, তার চিন্তা এখন নাহিদ কে নিয়ে, সে যেন ভালো জায়গায় চান্স পেতে পারে। সেজন্য সে চিন্তা করছে সে শুধু পরীক্ষার সময় পরীক্ষা দিবে, আর বাকি সময় কম্পিউটারের দোকানে চাকরি করবে, আর নাহিদ এক /দুই টা টিউশনি পেলে টেনেটুনে চলে যাবে।

    দুই ভাই বিদায়ের সময় জাহিদ বন্ধুর কাছ থেকে ধার করে পাঁচশো টাকা দিল শাহিদ কে। কারণ প্রথম কয়েক দিন তো তাদের চলতে হবে।

    রাহেলা খানম আল্লাহর নামে দুই ছেলেকে বিদায় দিলেন। দুজনের বয়সই কম, কিন্তু এই অবস্থায় তার এছাড়া কোন পথ নেই।

    পরেরদিন গ্রামের বাজারে ফোন আসলো সাঈদের এক ছেলে সন্তান হয়েছে। কিন্তু এই মুহুর্তে পরিবারের কেউ তার ছেলে দেখার জন্য, যাওয়ার দরকার নাই, তিনি যাওয়ার সময় হলে চিঠি দিবেন, বললেন জাহিদ কে।

    খবর শুনে পলি-কলির সময় যাচ্ছেনা কখন ভাতিজার মুখ দেখবে। তাদের বংশের প্রথম সন্তান।

    কলি বার বার বলছে আমার এখনই উড়ে যেতে ইচ্ছে করছে। কি করছে বাবাটা! কার মতো হয়েছে মা?

    রাহেলা খানম বলছেন আমার প্রথম নাতি আমার কেমন লাগছে বল, কেন যে সাঈদ না করে বুঝিনা। আমার কি নাতি দেখতে ইচ্ছে করেনা, সে চিঠি দিবে তখন যাবো!

    জাহিদ বললো ভাতিজারে দেখতে আমার ও মন চায় মা। হয়তো ভাইজান ঝামেলায় আমরা গেলে হয়তো ঝামেলা বাড়বে, তাই না করছে। হাসপাতাল থেকে বাবুকে আনলেই হয়তো চিঠি দিবে। চিন্তা করো না। আচ্ছা মা, আমি যাই দুই কেজী জিলাপি কিনে আনি, সবাইকে দিবে। গরীব চাচা সবাইকে মিষ্টি মুখ করাতে পারছেনা, জিলাপি মুখ করাই।
    – তোর যেমন অবস্থা, সেভাবেই করতে হবে বাবা। নাতির মুখ দেখে কি দিব, সেই চিন্তা লাগছে এখন!
    – ব্যবস্থা হবে চিন্তা করো না!

    পলি প্রতিদিন দুই/,তিন বার করে রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকে, এই ভেবে, হয়তো ভাইজান চিঠি লিখবেন বাবুকে দেখতে যাওয়ার জন্য। কিন্তু আজ পাঁচ দিন হয়ে গিয়েছে এখনো চিঠি আসেনি। পলির তার ভাতিজাকে দেখার জন্য মন ছটফট করছে, সাথে পড়াশোনা কবে শুরু হবে তার জন্য চিন্তা হচ্ছে, কিন্তু কোন খবরই আসছেনা…..

    চলবে…

    আন্নামা চৌধুরী
    ২৭.১১.২০২১

  • ভাবীর সংসার (পর্ব-৯)

    ভাবীর সংসার (পর্ব-৯)

    সকাল থেকে পলি, তার জামার বড় দাগ টা কোন ভাবেই তুলতে পারছেনা। এটা পরেই আজ জলির বাড়ী দাওয়াতে যাবে সে, এজন্য দাগ তোলার চেষ্টা করেই যাচ্ছে। এই জামা সাঈদের শ্বশুরবাড়ী থেকে উপহার পেয়েছিল পলি। সাদা জামা, কিন্তু ওড়না টা সুতার কাজ করা। খুব যে দামী তা নয়, কিন্তু পরলে বেশ ভালো লাগে, সুতির হলেও মন্দ নয়।

    পলি আবার ও মায়ের কাছে গিয়ে বললো, মা, লেবু দিয়ে অনেক্ক্ষণ জায়গা টায় ঘষাঘষি করলাম, কিন্তু হলুদের দাগ উঠছেনা।
    – অন্য জামা পরে যাবি, এটা বাদ দে।
    – আমার আর কোন ভালো জামা নেই।
    – পলি, আমার এমনি মনটা ভালো লাগছেনা। তুই যা ইচ্ছে কর! এখান থেকে যা।

    জলির বাড়ী যাওয়ার জন্য সাঈদ ছাড়া সবাই রেডি হচ্ছে, সাঈদ বিয়ের দিন ই চলে গিয়েছে। তাদের সাথে আরও যাচ্ছেন, রাহেলা খানমের মেজ ভাই, আর ভাসুর। এই নয়জন মানুষ জলির বাড়ী দাওয়াতে যাচ্ছেন।

    রাহেলা খানম সকাল পর্যন্ত না করছিলেন, তিনি যাবেন না। জাহিদ বললো মা, তুমি জলিপা কে দেখলে শান্তি পাবে, তাছাড়া আরেকদিন যেতে হলে খরচ যোগাড় হবেনা, যাওয়া হবেনা। পরে, অনেক কথার পর রাহেলা খানম যেতে রাজী হলেন।

    রাস্তার পাশেই জলির বাড়ী, টিনের বেড়া দেওয়া দুই রুমের ছোট্ট বাড়ী, এক রুমে শ্বাশুড়ি আর দেবর ননদেরা থাকে, অন্য রুম জলির।

    রুমের মধ্যে একটা খাট আছে, একটা আলমারী, একটা চেয়ার, আর মুখ দেখার জন্য একটা আয়না।

    রাহেলা খানম দেখলেন জলি খাটের উপর বসে আছে সবাইকে দেখে দৌড়ে নেমে সালাম করলো। তারেক ও তিন জন মুরুব্বিকে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করলো।

    রাহেলা খানমের মেয়ের বাড়ী দেখে মনটা কেমন খচখচ করছে। এতো ছোট্ট ঘর। তেমন কোন আসবাব পত্র ও নাই। এরচেয়ে তাদের অবস্থা অনেক উন্নত।

    জলির শ্বাশুড়ি খুব আদর যত্ন করে খাওয়াচ্ছেন, আর বলছেন বেয়ান আমার খুপরি ঘর, কি করবো বলেন, আমার তারেকের ভালো চাকরী হলে ঘর দিব,আশা করে। আমার সাহেব অল্প বয়েসে মারা গিয়েছেন তিন ছেলে মেয়ে নিয়ে বিরাট বিপদে ছিলাম। আল্লাহ অনেক খানি উদ্ধার করেছেন।

    কলিকে তার মেজ মামা হাত দিয়ে ইশারা করে ডাকলেন,

    কিরে, জলির এমন ফকিন্নি জায়গায় বিয়ে কে ঠিক করলো?
    – ভাইজানের কাছে আলাপ আসছিল।
    – হায়রে! ছেলের শিক্ষা কম, সহায় সম্পত্তি নাই। ঘরে আর ভাই-বোন আছে। কেমনে যে কি করে সাঈদ বুঝিনা। তবে, এরা আন্তরিক আছে, জলির যদি আদর করে তাই শান্তি। আর তো কিচ্ছু করার নাই,এখন।
    – জি মামা।

    কলির ও মন টা খারাপ হচ্ছে মামার কথায়, কিন্তু তারেক দুলাভাই খুব মজার মানুষ, তিনি বেশ রসিকতা করছেন, মিষ্টি পানের ব্যবস্থা করেছেন দুই শালীর জন্য। জলিকেও বেশ পছন্দ হয়েছে, বুঝা যায়!

    জলি আসার সময় পলিকে কানে কানে বললো,
    মাকে বলবি চিন্তা না করতে, উনি মানুষ ভালো, আম্মা, মানে আমার শ্বাশুড়ি ও খুব ভালো। তোর দুলাভাই খুব সুন্দর গান গাইতে পারে। আমার দুঃখ নাই গরীব ঘরে বিয়ে হওয়ায়, উনি মহব্বত করলেই আমি খুশি।

    পলি হাসছে, তার এই বোন সব সময় অল্পতেই খুশি হয়। সে যে ভালো আছে তাই ভালো। মাকে বললে হয়তো তিনিও শান্তি পাবেন।

    এক মাস পরে, সাঈদের চিঠি বাড়ী আসলো, এই চিঠির জন্য তিন ভাই-বোন অপেক্ষা করছে…

    রাহেলা খানম কলিকে চিঠি পড়তে বললেন,

    শ্রদ্ধেয় মা,
    আসসালামু আলাইকুম, আপনি কেমন আছ? আমি ভালো আছি। তোমার বউমার শরীর বেশি ভালো না, বাবা মারা যাওয়ার পর, আরও দুর্বল হয়ে গিয়েছে। আগের বাসা ছেড়ে দিয়েছি। এখন এক বেডের বাসা নিয়েছি, আমার শ্বশুরের বাসার কাছে, যাতে সে সারাদিন মায়ের বাসায় থাকতে পারে। মা, নাহিদ কে আগামী দু/এক দিনের মধ্যে পাঠিয়ে দিও, ওর এইচ.এস.সির পরীক্ষার রুটিন হয়েছে। সে চলে আসুক, এখানে এসে পরীক্ষা দিবে। আর পলি আর কলিকে আরও মাস দুয়েক পরে, কলেজের হলে তুলে দিব, এখন আমার পক্ষে তিন জন কে বাসায় এনে রাখা সম্ভব না। নাহিদ কে পাঠিয়ে দিও আর সাথে দশ কেজী দুধ দিও, জাহানের খাঁটি দুধ খাওয়া দরকার।
    দোয়া রাখবে, নতুন স্যার সুবিধার নয়, যেকোনো দিন ট্রান্সফার হয়ে যেতে পারি।
    ইতি,
    সাঈদ।

    কলির মুখটা একদম মলিন হয়ে গেল, তাদের যাওয়া টা অনিশ্চিত হয়ে গেল। নাহিদ একা একা কেমনে গিয়ে থাকবে? পরীক্ষা কিভাবে দিবে?আলু সিদ্ধ খেয়েই পরীক্ষা দিতে হবে।

    রাহেলা খানম বললেন, কি করবে সে? ঝামেলায় আছে এজন্য নিতে পারছেনা, বই খাতা আছে এখানে বসেই পড়। পরীক্ষা দেরী আছে।
    – মা, তুমি সব জানো না। এজন্য কথা এভাবে বলছো! আমি আমাদের চিন্তা করছি না, নাহিদের চিন্তা করছি।
    – নাহিদ ছেলে মানুষ তার একা থাকতে সমস্যা কি?
    – সমস্যা কি শুনবে?
    – কি সমস্যা শুনি…
    – আমাদের জন্য মাছের লেজ, লেজের সাইডের টুকরা থাকে, নাহিদ কাটা সহ মাছ খেতে পারেনা। আপা, ভাবীকে বলতো আমরা মাছ পছন্দ করিনা, তুমি দুই পিস রেখে দাও মাঝের এক পিস দাও ভাবী। ভাবী বিরক্ত হয়েই দিতেন।
    – মানুষ বেশী তাই…
    – না, সেজন্য না। ভাবী আমাদের থাকা পছন্দ করেন না, নাহিদ ডালের উপরেএ পানি একদিন খেয়েছিল দেখে ভাবী সব ডাল ফেলে দিয়েছেন, বলেছেন এই ডাল আর খাবে না। আপা আর আমি ওকে আগলে রাখি।
    – ও বড় হচ্ছে কলি, দুই দিন পরে ভার্সিটিতে যাবে, তখন একাই থাকবে, ওর নিজের কাজ নিজে করা শিখতে হবে।
    – তুমি কখনোই কারো দোষ দেখো না!
    – যা, নাহিদ কে গিয়ে খবর দেয়, ব্যাগ গুছিয়ে পাঠাতে হবে।
    – কথা ঘুরিয়ে দিলে না?
    – যেটা বলেছি কর।

    কলি চলে যাওয়ার পর, রাহেলা খানমের চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পড়ছে। এসব কথা শুনলে বুক টা ছিড়ে যায়। কিন্তু তিনি অপারগ ছেলে-মেয়েদের সামনে তিনিও কথায় তাল মেলালে, তারা আর কষ্ট পাবে, তারা যেন ভেতর থেকে শক্ত হয়, তাই তিনি এমন ভাব ধরে থাকেন। সন্তান কষ্টে থাকলে, মায়ের মনের ভেতর কতটুকু কাঁদে সেটা কে বুঝবে!

    রাহেলা খানম ভাবছেন প্রথম তিন সন্তান মারা যাওয়ায় তিনি ভয়ে এতো গুলি সন্তামের জন্ম দিয়েছেন, ভেবেছেন প্রথম তিন জনের মতো বাকীরাও যদি মারা যায় অল্প বয়েসে।

    নয়তো এই ভুল তিনি করতেন না। কবে, যে ছেলে মেয়েরা দিক লাগবে, সে চিন্তায় অস্থির লাগে রাহেলার! কলি-পলির পড়াশোনা আর হবে তো! এটাই এখন বেশি ভাবাচ্ছে রাহেলাকে!

    চলবে…

    আন্নামা চৌধুরী
    ২৬.১১.২০২১

  • নিশির প্রবাস (পর্ব-১৫)

    নিশির প্রবাস (পর্ব-১৫)

    আজ সন্ধায় পহেলা বৈশাখ এর প্রোগ্রাম। নিশি কাজ করছে আর ভাবছে, মিস্টার স্টিফেন কে বলে আজ একটু আর্লি বের হবে। লাঞ্চ এর পর পর আরিফ এলো, নিশি কে একটা চিরকুট দিলো হাতে, কফি নিয়ে টেবিলে বসলো। নিশি বাথরুম এ যেয়ে চিরকুট টা পড়লো, ( আত্মতৃপ্তির জন্য যদি কেউ কারো অভিবেক্তি প্রকাশ করে, আর সেটা অন্যায় হয়, তবে সেই অন্যায় এর জন্য আমি ক্ষমা প্রার্থি। আমি পারকিং এ তোমার অপেক্ষায় থাকবো) মিশি স্টিফেন কে বলে পারকিং লট এ গিয়ে দেখলো আরিফ ওয়েট করছে। কাছে যেতেই দরজা খুলে দিয়ে বললো,
    “আজ ও ফিরিয়ে দিবে” নিশি কিছু না বলে গাড়িতে উঠলো। ‘ জানো এই কয় দিন আমি কিন্তু তোমায় দেখেছি ” — মানে? ” আমি প্রতিদিন বাইরে থেকে গ্লাস দিয়ে তোমায় দেখেছি” — ডাকেন নাই কেনো? ” তুমি ফিরিয়ে দিবা এই ভেবে, যেমন সেইদিন ফিরিয়ে দিয়েছিলে।
    দেখো নিশু আমি জানি আমি যা করছি এটার কোন রেজাল্ট নেই” – তাহলে কেনো করছেন?
    ” আমার মনের শান্তির জন্য, আমার ভালোলাগার জন্য” — কিন্তু এই ভাবে মেলামেশা, যদি বাংগালি কেউ দেখে, কি হবে ভেবেছেন?
    ” এটার উত্তর আমি পরে দিবো” পিছন থেকে একটা বক্স বের করে নিশির হাতে দিয়ে বললো
    ” এটা আমার রিকোয়েস্ট এই শড়িটা তুমি আজ পরবে” – না, কেনো আমার অনেক শাড়ি, আমি এটা নিবো না। ” বন্ধু কি বন্ধু কে কিছু দিতে পারে না”

    পারে, কিন্তু আমি এটা নিবো না, ‘ প্লিজ আমি অনেক সখ করে তোমার জন্য কিনেছি” -বুঝেছি, কিন্তু এটা আমি নিতে পারবো না, আপনি কি আমাকে নামিয়ে দিবেন? না আমি চলে যাবো?
    আরিফ গাড়ি স্টার্ট দিলো, পথে একটা ডাস্টবিন এর সামনে থামলো, শাড়িটা ডাস্টবিন এ ফেলে দিলো।

    ফেলে দিলেন কেনো? যার জন্য নিয়েছিলাম সে তো নিবে না, আমি এটা দিয়ে কি করবো। – রাগ করেছেন? ” না তোমার এইগুলি তে আমি অভ্যস্ত হয়ে গেছি। আমি কি তোমার হাত টা একটু ধরতে পারি? ” নিশি হাত টা এগিয়ে দিয়ে বললো – নেন ধরেন। আরিফ হাত টা ধরলো না। শুধু বললো ” তুমি এমন কেনো? ” – কেমন?
    ” কিছু না, তুমি তোমার মতো।”
    আরিফ ওকে নামিয়ে দিয়ে চলে গেলো। সুমন ফোন করে বল্লো তুমি রেডি হয়ে নাও, আমি আসছি। ও আয়নার সামনে বসে সাজলো, রেডি হলো,( নিজেকে দেখে নিজেই মুগ্ধ হয়ে গেলো) লাল জামদানি তে ওকে অনেক সুন্দুর লাগছে। সুমন এসে ওর দিকে একবার তাকালো, কিছু বললো না।
    ও প্রোগ্রাম এ যাওয়ার পর সবাই ওকে ঘুরে ঘুরে দেখছে,, ওর চোখ একজন কেই খুঁজছে। একটু পর পাশ থেকে উনি ৭ টা লাল গোলাপ দিয়ে বললো, এটা নিতে ও আপত্তি? নিশি তাকিয়ে দেখলো সুমন একটু দূরে, স্টেজ এর সামনে। হল রুম টায় আলো অনেক কম, স্টেজ টাতে অনেক আলো, ও ফুলগুলি নিলো। ও একটা চেয়ার এ বসলো, সামনেই স্টেজ। একটু পর আরিফ এসে দুইটা কালো ক্লিপ দিলো, ” ফুল গুলি কি চুলে আটকানো যায়” নিশি কথা না বলে ক্লিপ দুইটা নিলো, দুইটা গোলাপ কানের পাশে ক্লিপ দিয়ে আটকালো। আরিফ পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় আস্তে করে বললো, থানক্স।
    এসো হে বৈশাখ গান এর সাথে নাচ হচ্ছে। এর মদ্ধে ভাবিরা এসে হাই হেলো করলো, মোটামুটি নিশিকে সবাই তুমি করেই বলে। ২/৩ জনের গানের পর আরিফ স্টেজ এ উঠলো, ” আমার এই গান বিশেষ একজন কে ডেডিকেট করছি।”
    ১/ (বঁধুয়া আমার চোখে জল এনেছে,বিনা কারনে )
    ২/ ( যেখানে সিমান্ত তোমার সেখানে বসন্ত আমার)
    তারপর খাওয়া দাওয়ার পর্ব শুরু হলো। প্রোগ্রাম শেষ হতে হতে রাত
    ১২ টা। আরিফ আজ অনেক চুপচাপ ছিলো, কারো সাথেই তেমন একটা কথা বলছিলো না। বাসায় এসে ও চেঞ্জ করে শুতে যাবে, তখন সুমন বললো “তোমার তো কাল ডে অফ” – হুম। “একটা কাজ আছে” – বলো। সুমন কাবার্ড থেকে সেই হলুদ খাম টা বের করে দিয়ে বললো “এটা তে সাইন করে দাও।”

    কি এটা? ” ডিভোর্স লেটার” – মানে কি? “তোমাকে বলেছিলাম না কন্ট্রাক মেরি করবো”

    তাহলে ডিভোর্স লেটার কেনো? ” মুর্খামি করবা না, এখানকার ইমেগ্রেশন জানে তুমি আমার ওয়াইফ, ডিভোর্স না দেখালে আর একটা বিয়ে করতে পারবো না, তাই”। নিশির মাথা ঘুরছে, ও দেখলো তিনমাস আগের ডেট দেওয়া ডিভোর্স লেটার এ। ও শুধু বললো – খুব টায়ার্ড লাগছে, কাল করি। ” একটা সাইন ই তো আজ কাল আবার কি” – আজ করবো না বলে নিশি অন্য রুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়িয়েছে, তখনি সুমন ওকে এতো জোরে চড় মারলো, নিশির নাক দিয়ে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হচ্ছিলো আর ও মাটিতে পড়ে অজ্ঞান হয়ে গেলো। নিশির যখন জ্ঞান ফিরলো, দেখলো ও সোফার উপরে, আর সুমন ওই রুমে ঘুমাচ্ছে।
    নিশি উঠে চোখে মুখে পানি দিলো, রক্ত গুলি জমাট বেধে ছিল, ওই গুলি পরিষ্কার করলো, গোলাপি গেঞ্জি টাতে রক্ত চট চট হয়ে আছে,চেঞ্জ করলো, একটা ফ্রেশ জামা পরলো।
    ( আর জিবনের অনেক বড় একটা ডিসিশন নিলো)


    চলবে…

  • ভাবীর সংসার (পর্ব-৮)

    ভাবীর সংসার (পর্ব-৮)

    রাহেলা বেগমের স্বর্ণের একটা বালা ছিল, সেই বালা আজ বিক্রি করে, বিয়ের দিনের খাবারের বন্দোবস্ত করলেন । জামাইয়ের জন্য সামান্য কিছু বাজার, আর জলির জন্য দুটি সুতির শাড়িও কিনলেন। মেয়েটার সাথে দুটি নতুন শাড়ী তো যাওয়া দরকার। সাঈদ বলেছেন আসার সময় তিনি দই-মিষ্টি নিয়ে আসবেন, তারই অপেক্ষা করছেন তিনি।

    কলি বিয়ের দুই দিন আগে থেকে, একটা নতুন শাড়ি কেনার জন্য কান্নাকাটি করছে, কিন্তু রাহেলা বেগমের কাছে অবশিষ্ট কিছুই নেই, যে তিনি কলি কে কিছু কিনে দিবেন। শেষ পর্যন্ত জাহিদ দুইটা মেহেদী, লিপিস্টিক আর এক ডজন কাচের চুড়ি দেওয়ায় কিছুটা খুশি হয়েছে কলি।

    বিয়ের আগের দিন জলির মামা শ্বশুর একটা ট্রাংক দিয়ে গেলেন, সাথে পাঁচ কেজী মিষ্টি। তিনি খুবই সাদাসিধা ধরনের।

    রাহেলা খানম কে বললেন, বেয়ান আমার বোনের সংসারে মেয়েকে শক্ত করে দিবেন, কারণ অত্যন্ত টানাটানি করে চলতে হবে। তারেকের বেতন খুবই নিতান্ত, আমিও একজন কেরানী মানুষ, তাই ভাগ্নাকে তেমন সাহায্য করতে পারিনা। আর কিছুই বললেন না তিনি। এক গ্লাস লেবুর শরবত মুখে নিয়েই তিনি বিদায় হলেন।

    কলি-পলি খুব হাসাহাসি করছে ট্রাংক দেখে। তবুও বেশ আগ্রহ করে, দুইবোন ট্রাংক খুললো।

    খুলে একে বারেই হতাশ হয়ে গেল, তিনটা শাড়ী এসেছে,বিয়ের শাড়ীটি লাল টাংগাইলের শাড়ি, জরি সুতার কাজ করা, খুবই কমদামি শাড়ী। বাকি দুটি প্রিন্টের শাড়ি, এক জোড়া কালো ফিতার স্যান্ডেল, একটা রুমাল। শাড়ীর সাথে ব্লাউজ আর ছায়া। বিউটি বক্সে পাউডার, লিপিস্টিক, কাজল, আর আলতা, একটা সোনালী রঙের রঙ করা টিকলি, এক জোড়া চুড়ি, আর একটি চেইন। আর সরিষার দানার মতো ছোট্ট একটা স্বর্ণের নাক ফুল।

    পলি আর কলির খুব মন খারাপ হলো এই জিনিস গুলো দেখে, তাদের ভাবীর বিয়ের বেনারসী ছিল অত্যন্ত সুন্দর ও দামী, এক সেট স্বর্ণের গহনা ছিল। ভাইজান তার তিন শালীর জন্য উপহার দিয়েছিলেন। কিন্তু জলিপার এই কেমন পরিবারে বিয়ে হচ্ছে, দুই শালীর জন্য কিছুই নাই এমন কি বিয়ের শাড়ীটা এমন হালকা, দেখেই কেম যেন লাগছে!

    জলি তবুও খুশি, বিয়ে তো হচ্ছে! কমদামি হোক তবুও নতুন জিনিস তো দিয়েছে।

    রাহেলা বেগম বারান্দার খুঁটি ধরে বসে জাহিদ কে বলছেন, বাবা তোমরা আমার মেয়েকে কোথায় বিয়ে ঠিক করেছো? আজ থেকে পয়তাল্লিশ বছর আগে আমার বিয়ে হয়েছে, তোমার স্কুল শিক্ষক বাবা, তখনই মদলিন শাড়ী বিয়েতে দিয়েছিলেন, তোর দাদীমা দুই সেট গহনা দিয়েছিলেন। আর এই মেয়ের কোথায় বিয়ে হচ্ছে বাবা?
    – আমি তো মা, প্রথমেই তেমন পছন্দ করিনি, তুমি…
    – থাক, আর কথা না। ওর সামনে কিছু বলিস না, কষ্ট পাবে। আল্লাহ যা ভাগ্যে রেখেছেন। তাই হবে….

    রাহেলা বেগম বিয়ের দিনের চিন্তা করছেন সব কিছু ঠিকঠাক হবে তো?ছেলেটা ভালো হবে তো? মেয়েকে সুখী রাখবে তো? সাঈদ কখন আসবে, দই মিষ্টি নিয়ে!

    বড় যাত্রী আসলেন সব মিলিয়ে পনেরো জন। তারেক দেখতে ফর্সা, লম্বা, চেহারা ও খুব সুন্দর। কিন্তু ততো টা স্মার্ট নয়। সাদা একটা পাঞ্জাবি পরেছে সাথে ঘিয়া রঙের পাগড়ী।

    কলি জামাই দেখে এসে বললো, আপা, শেরোওয়ানী ছাড়া বিয়ে করতে চলে এসেছে! কি আজব। শুনেছি আব্বাও নাকি শেরোওয়ানি পরেও বিয়ে করতে গিয়েছিলেন।
    – তুই চুপ থাক, দয়া করে। দেখতে খারাপ না, এটা নিয়ে শান্তিতে থাক।

    সাঈদ বড় যাত্রীর আসার কিছুক্ষণ আগে বাড়ীতে এসেছেন, দই মিষ্টি নিয়ে এসেছেন। শারমিনের দুটি পুরোনো শাড়ি, জলির জন্য। জলি তাতেই বেশ খুশি।

    বর যাত্রী সবাই, খুবই নরমাল পোষাকে এসেছে,মনে হচ্ছেনা, বিয়ে বাড়ী এসেছে।

    এই লাল টাংগাইল শাড়ীতে জলিকে বেশ স্নিগ্ধ লাগছে। শ্যানলা হলেও চোখ দুটি ভীষন মায়াবী। বিয়ে নিয়ে জলির কোন অভিযোগ নেই, বিয়ে হচ্ছে তাতেই সে খুশি। কারণ এই কয়েক বছরে আত্নীয় স্বজন আর পরিবারের মানুষের কথা শুনতে শুনতে এক্কে বারে নাজেহাল অবস্থা জলির। তাই, বিয়ে হচ্ছে এটা নিয়েই খুশি জলি।

    রাহেলা খানম, সাঈদ যে ডেকে বললেন বাবা, এদের সংসারে আমার মেয়ে থাকতে পারবে তো?
    – মা, জা্হান যদি সুন্দরী শিক্ষিত ধনী হয়েও আমার মতো গরীব ছেলেকে মানতে পারে৷ তবে এরা কেন পারবেনা?
    – না, সেটা বলিনি বাবা। জামাই একটু সুন্দর হয়ে আসার দরকার ছিল না?
    – কিসের সুন্দর, জলির বিয়ে হয়ে যাচ্ছে, তাই আলহামদুলিল্লাহ বলো। এখনো পলি আর কলি বাকী।
    – বউ কেমন আছে?
    – আছে ভালো। আমি জলিকে বিদায় দিয়েই, রওনা হবো। তাড়াতাড়ি সব কাজ শেষ করো।
    – আজ থেকে যাও বাবা।
    – কত ঝামেলা ফেলে আসছি মা, সেটা আমিই শুধু এখন থাকতে পারবো৷ না!

    বিদায় বেলা মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে খুব কান্নাকাটি করছে জলি। সে সারাদিন মায়ের সাথে সাথে থেকে সব কাজ করতো। মায়ের সাথে তারা অন্য রকম এক প্রশান্তির সম্পর্ক আছে।

    রাহেলা খানমের মেয়ে বিদায়ের পর,চিন্তায় পাগল পাগল লাগছে! তার বুকের ভিতরে যেন ঝড় বইছে। ভেতর যেন ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে।

    কলি আর পলির মন খুব খারাপ হয়ে আছে। কোন প্রকার আনন্দ ছাড়াই এই বাড়ীর বড় কন্যার বিয়ে হয়ে গেল, ভাবা যায়!

    যাওয়ার সময় তারেকের মামা, পরের দিন তারেকের বাড়ী যাওয়ার দাওয়াত দিয়ে গেলেন, পুরো পরিবার কে।

    সাঈদ যাওয়ার আগে মাকে ডেকে বললো, সব সময় মা, সাঈদ সাঈদ করো। তোমার পলির জন্য কেমন ভালো বিয়ের প্রস্তাব আসলো, ছেলের বউ আছে বলে সে রাজী হয়নি।
    – না বাবা, এটা ভালো করেছে। বউ আছে সংসারে, তাহলে কেন বিয়ে দিবে? আমার এরকম জামাই পছন্দ না।
    – এজন্য বলেছি, আমি তোমার পলির বিয়েতে আর নাই।
    – রাগ কর কেন বাবা? ওরা তোমারই বোন।
    – রাগ করছিনা, আমি যাচ্ছি। আর এই এক হাজার টাকা রাখো, কাল মিষ্টি নিয়ে দাওয়াতে যেও, আমি আজ যাই।
    – সাবধানে যেও, গঞ্জে একটা ফোন দিও, শাহিদ কে রাতে পাঠাবো।
    – তুমি সাবধানে থাকবে, আসছি।

    কলি মায়ের পাশে এসে বললো, মা, দুলাভাই এমন কিপটা গেইটে মাত্র পাঁচশো টাকা দিয়েছে।
    – থাক, এসব নিয়ে কথা বলার দরকার নাই।
    – কাল কে কি সব যাবো আমরা?
    – কাল আসুক, দেখি। আমারে একটু তেল আর পানি মিক্স করে মাথায় দিয়ে দেয়, শরীর টা ভালো লাগছেনা।
    – লেবুর শরবত দিব?
    – না। তেল-পানি নিয়ে আয়।

    রাহেলা খানমের চিন্তায় কিছুই ভালো লাগছেনা, এই সহজ সরল মেয়েটা এই ঘরে গিয়ে সুখী হবে তো! জামাই কি তাকে সুখী করবে!

    তিনি বার বার দীর্ঘনিশ্বাস ফেলছেন আর মনে মনে বলছেন সাঈদের আব্বা এই ভবের সংসারে, আমাকে একলা রেখে কেন চলে গেলে? আমি যে আর পারছিনা! আমার মেয়ের চিন্তায় কিছই ভালো লাগছেনা, কাকে কি বলবো, সবই আমার পোড়া কপাল। আল্লাহ মেয়েকে সুখী করুন, আর কিছু চাওয়ার নাই…..

    চলবে…

    আন্নামা চৌধুরী
    ২২.১১.২০২১

  • ভাবীর সংসার (পর্ব-৭)

    ভাবীর সংসার (পর্ব-৭)

    পলির মা, সৈয়দা রাহেলা বেগম বটিতে বসে, লাউ কাটছেন, আজকে তিনি লাউ দিয়ে তিন পদ রান্না করবেন। এজন্য আলাদা আলদা বাটিতে লাউ রাখছেন। লাউয়ের খোসার সাথে একটা আলু দিয়ে, লাউয়ের খোসা ভাজি করবেন, লাউ দিয়ে মশুরের ডাল দিয়ে ঝোল, আর লাউয়ের বিচি দিয়ে ভর্তা।

    গত তিন দিন ধরে নিরামিষ চলছে এই বাড়ীতে, জাহিদের হাত পুরোপুরি খালি, তাই মাছ বাজার করার মতো টাকা হাতে নেই৷ তবে, আজ কিছু টাকা পেলে, হয়তো সন্ধ্যায় কিছু মাছ আনতে পারে, এটা সকালেই মাকে বলেছে জাহিদ।

    পলি, কলি আর নাহিদ এসে মাকে জড়িয়ে ধরলো। ফাতেমা খানম বটি নিচে নামিয়ে রাখলেন। তিনি বেশি হতবাক হয়েছেন দেখে।

    তিনি জানেন, শারমিনের বাবা মারা গিয়েছেন। সাঈদ নিজে ফোন করেছে গ্রামের দোকানে। কিন্তু এটাও বলেছে এখন আসার দরকার নাই। যেহেতু খবর দিয়েছে মারা যাওয়ার পরের দিন, তাই পরে যাওয়ার জন্যই বলেছে সাঈদ।

    মা, কেমন আছ তুমি?
    – ভালো আছি বাবা। তোরা কখন রওনা হয়েছিস?
    – আজকে সকাল ছয়টার ট্রেনে।
    – আর এখন দুপুর দেড়টা বাজে।
    – রাস্তায় কিছু খেয়েছিস?

    কলি বললো মা, আমরা রাস্তায় বাসায় কিছুই খাইনি, এখন কিচ্ছু দাও, ক্ষুধা লাগছে।
    – হ্যা, হ্যা। এই শাহিদ গাছ থেকে দুইটা লেবু দে, শরবত করে দেই। আগে ঠান্ডা হ, আমি তরকারি বসাই।
    – এখনো রান্না কর নি?
    – এক হাতে এই সংসারের কাজ করতে হয়।
    – মা, জলিপা কোথায়?
    – এক বউল কাপড় নিয়ে ধুইতে গিয়েছে পুকুর পাড়ে, একদম গোসল করে আসবে। ওরে এক কাজ দিলে, কাজ শেষ করতে তিন ঘন্টা লাগে। না করলো পড়াশোনা, না পারে কাজ। আচ্ছা, শোন আমার বউমা কি করছে?
    – কান্নাকাটি করছে!
    – বাপ নাই যার, দুনিয়া অন্ধকার তার। বেয়ান আর বাকি মেয়েরা ভালো আছে? আর আমাই সাঈদ?
    – সবাই ভালো আছে।
    – আচ্ছা, যা আগে তোরা মুখ হাত ধুয়ে নে, পরে কথা বলবো।

    মুখ হাত ধুয়ে, রান্নাঘরে পলি এসে মায়ের পাশে এসে বসলো,

    মা, তুমি কেমন আছ?
    – আলহামদুলিল্লাহ। আমি ভাবছিলাম এই মাসের শেষে বউমারে দেখতে যাবো, মেয়েটার বাবা মারা গেল, আবার পোয়াতি ও হইছে। এখনই যাইতাম, সাঈদ না করলো, এখন সত্য কথা ভাড়ার টাকাও হাতে নাই। গেলে আরও সাঈদের জন্য ঝামেলা তাই যাইনি।
    – ভালো করেছো। ভাইজান, এখন ঝামেলায়। খালুজানের জায়গায় নতুন বস আসবে! তাই, আমাদের পাঠিয়ে দিয়েছে, কয়েকদিন বাড়ীতে থাকতে।
    – আল্লাহ তাড়াতাড়ি আমার বাচ্চারে ঝামেলা মুক্ত করুন।
    – মা,
    – জলিপার বিয়ে দিবা না?
    – এই শ্যামলা মেয়েরে কে বিয়ে করবে? না আছে রুপ না আছে বিদ্যা!
    – ভাইজান, আমার জন্য বিয়ের পাত্র নিয়ে আসে। এদিকে জলিপা বাকি।
    – ভাইজানের নখের বুদ্ধি কি তোদের আছে? নিশ্চয়ই ভালো পেয়েছে তাই নিয়ে আসছে।

    পলি আর কথা বললো না, কারণ সাঈদ তার মায়ের অতি আদরের সন্তান, তিনি তার কথা খারাপ কিছুই শুনতে পারেন না। এর পিছনে কারণ একটাই সাঈদ এর আফে আরও তিন সন্তানের মৃত্যু। সাঈদ তার যক্ষের ধন। এজন্যই তার এতো গুলি ছেলে-মেয়ে। তিনি ভেবেছিলেন, আগের তিন জনের মতো এরাও হয়তো বাঁচবেনা। সন্তানের জন্য পাগল ছিলেন রাহেলা।

    নাহিদ মায়ের শাড়ীতে মুখ মুছে বলছে, মা এতো মজা করে কেমনে রান্না কর গো?
    – কি এতো মজা হইছে? নিরামিষ রান্না।
    – আমার কাছে অমৃত। কতদিন পর এতো আরাম করে খেলাম।

    কলি, পলির দিকে তাকিয়ে আছে, কারণ টা সত্যি। গত কয়েক মাসে, এতো যত্ন নিয়ে কেউ তাদের খাওয়ায় নি। মায়ের এমন যত্ন ভালবাসায় নুন ভাত ও ঘি ভাত লাগছে।

    জলি বার বার বলছে, আমার যে কি আনন্দ লাগছে, আমরা তিন বইন একসাথে, কত্ত দিন পর। আজকে সারা রাত গল্প করবো।

    রাহেলা বেগম তিন ছেলে-মেয়েকে বললেন, তোমরা বাড়ীতে একটু সময় ও জলির কথায় নষ্ট করবেনা। বই খাতা নিয়ে পড়বে। এই সময় আর আসবেনা। ওর শুধু গল্প, আর আড্ডা, কাজ নাই তো।

    সপ্তাহে খানেক পরে, জাহিদ এসে মায়ের কাছে রান্নাঘরে বসে বললো, মা জলিপার জন্য একটা বিয়ের প্রস্তাব ভাইজানের কাছে গিয়েছে। ভাইজান কল দিলেন, ছেলে পাশের গ্রামের।
    – সাঈদ কি বলে?
    – ভাইজান তো বলছে দিয়ে দিতে।
    – কি করে ছেলে?
    – বিস্কুট কোম্পানিতে চাকরি করে, বেতন খুবই সামান্য, ছেলে দেখতে ভালো। কিন্তু বাড়ীর অবস্থা সুবিধার নয়, টিনের বেড়ার এক চালা ঘর। ডাল-ভাত খেতে পারবে, কোন মতে। তাদের অবস্থা তেমন ভালো নয়, তাই তারা ১০/১২ জন মানুষ এসে, আপাকে কাবিন করে নিয়ে যাবে।
    – কাবিন করে?
    – ভাইজান এজন্য রাজী, বিয়েতে খরচ নাই।
    – মেয়েরে কিছু দিব না?
    – তাদের ঘরে জায়গা নাই, তারা স্পষ্ট না করে দিয়েছে। তারাও তেমন কিছুই দিতে পারবেনা। ও মা, এতো হত দরিদ্র পরিবারে কি জলিপা সুখী হবে?
    – বয়স ২৭ পার হয়েছে, শিক্ষা নাই। এইট পর্যন্ত পড়ছে, বাপ নাই, দেখতে ও শ্যামলা। ওর কি যোগ্যতা আছে?
    – মা, আরেক বার ভাববে?
    – সাঈদ যখন ভালো বলেছে, তবে ভালোই হবে। সাঈদ কোন দিন আসবে?
    – বিয়ের দিন আসবে, ওই দিন ই চলে যাবে। ভাবীর নাকি শরীর ভালো না, তাছাড়া আরও নাকি সমস্যা আছে।
    – বুঝলাম।

    চলবে…

    আন্নামা চৌধুরী
    ২১.১১.২০২১

  • নিশির প্রবাস (পর্ব-১৪)

    নিশির প্রবাস (পর্ব-১৪)

    ক্রিং ক্রিং। ওপাশ থেকে ফোন তুললো আরিফ।
    তুমি!!! সব ঠিক আছে তো?

    ওমা মনেহয় কোন কিছু বেঠিক হলেই আমি আপনাকে ফোন করবো?
    ” না আমি সেটা মিন করি নাই, তুমি কখোনো ফোন করো না তো তাই”

    এই যে করলাম।
    “আমার অনেক ভালো লাগছে তোমার ফোন পেয়ে, তোমার পতিদেবতা কোথায়? ” – ওই রুমে রেসলিং দেখে। ” আচ্ছা তুমি কি জানো তোমার কিছু কিছু কথায় মানুষ কস্ট পায়? “

    মানুষ এর কথা জানি না, আমার কোন কথায় আপনি কস্ট পেলেন?।
    ” না কোন কথায় না,” বলে হাসলো।

    আচ্ছা রাখি।
    “হুম তুমি ভালো থেকো “
    নিশি নতুন চাকরি তে জয়েন করেছে, দেড় মাস, খুব ভালো চলছে। সেন্ডির কাছে গ্রেটফুল, ওর বয় ফ্রেড ও এখানে জব করে, ( সেন্ডি ওকে জানিয়েছিলো) এই দেড় মাসে তেমন কিছু ঘটে নাই, যেমন চলছিলো তেমনি, আরিফ এর সাথে ঘোরা ঘুরি, সুমন এর অবহেলা।
    আজ আরিফ ওকে নামিয়ে দেওয়ার সময় একটা নীল খাম দিলো, আর বললো “সময় করে পড়ে নিও”। ও বাসায় এসে চুপ করে বসে রইলো,
    ও আন্দাজ করতে পারছে, চিঠিতে কি লিখা আছে। ওর ইচ্ছা করছে না এই চিঠি পড়তে।
    “নিশি”
    আমি জানি এই চিঠির কোন answer নেই। আমি ও এই answer অনেক খুজেছি, পাই নাই। কেনো লিখছি সেটা ও জানি না। তোমাকে আমার মনের কথাগুলি জানাতে খুব ইচ্ছা হলো, সামনা সামনি অনেক বার বলতে চেয়েছি, তোমার নির্লিপ্ততা আমাকে আরো দূরে সরিয়ে দিয়েছে।
    যেদিন তোমাকে প্রথম দেখেছি, সেদিন ই জিবনে প্রথম বুঝলাম ভালোলাগা কাকে বলে। প্রথম দেখায় প্রেম বলতে পারো, সেটা ও এক পক্ষের। তারপর তোমাকে যতই দেখেছি, তোমার সাথে যতই মিশেছি, ভালোলাগা অনেক গুন বেড়েছে। তুমি কি জানো? তুমি খুবই ম্যেচুউর একটা মেয়ে, এবং তোমার মাঝে একটা ভিষন করম আর্কষন আছে। You have a pride, যেটা চাইলেই কেউ ভাংতে পারবে না। তোমার ছোট ছোট জিনিষ গুলি আমাকে প্রচন্ড ভাবে মুগ্ধ করে। আমার মাঝে সারাক্ষণ একটা অস্থিরতা কাজ করে, তোমাকে কোনদিন না পাওয়ার অস্তিরতা। কখনো না পাওয়ার কস্ট। কতোদিন ভেবেছি তোমার সাথে দেখা করবো না, কিন্তু শেষ সময় এ যেয়ে সেটা পারি নাই। তোমাকে যখন নামিয়ে দিয়ে আসি, গলার ভিতর কি যেন আটকে থাকে, আর ভাবি ও তো আরেক জনের। মাঝে মাঝে ফোন করে তোমার গলা গুনি। আমি জানি এটার কোন শেষ নাই। আর আমার কস্ট দিন দিন বাড়ছে। আমার মাঝে মাঝে মনেহয় আমার কাছে যদি কোন টাইম মেশিন থাকতো, তোমাকে নিয়ে যেতাম ৯ মাস আগে, অথবা কোন ইরেজার, মুছে দিতাম অই সময় টুকু। আমি আমার লাইফে অনেক মেয়ের সাথে মিশেছি, কাজের প্রয়জন এ, আমার স্টুডেন্ট, বা ফ্যামিলি চেয়েছে পার্টনার হিসাবে, কেউ আমার মনের কাছাকাছি আসতে পারে নাই। দাগ কাটা তো অনেক পরের কথা। তুমি আমার মনে মাথায় কি প্রচন্ড ভাবে যে মিশে আছো, বোঝাতে পারবো না। আমি ইদানিং ঘুমাতে পারি না, মনেহয় তুমি সুমন সাহেবের সাথে আছো, কেমন একটা অস্তিরতা কাজ করে।
    এতো ভালো লাগা কেনো তোমার মাঝে!!! আমি জানি আমার এই সমস্যার কোন সমাধান নেই।কিছুই করতে পারবো না আমি। কিচ্ছু না।
    তুমি কি জানো কোন উপায়?
    ভালবাসি তোমাকে, অনেক ভালবাসি।
    কোনদিন কি আমার এই ভালোবাসা পুর্নতা পাবে?
    অনেক ভালো থেকো।
    সৈয়দ আরিফ আহমেদ।
    পড়া শেষ করে নিশি ফোন দিলো আরিফ কে।
    “হ্যালো”

    আচ্ছা আপনি না ছোট কাল থেকে এখানে থাকেন? এতো সুন্দুর বাংলা লিখেন কি ভাবে?
    ” হাহাহাহা এই যে এইটাই তুমি, চিঠি পড়ে ভাবান্ত এই, আমি বাংলা লিখি কিভাবে।”

    হুম বলেন।
    “আমি ক্লাস সেভেন অব্দি বাংলাদেশ এ পড়েছি, তখন আমি আমার দাদুর কাছে থাকতাম। আমার বাবা মারা যাওয়ার পর আমার মা এই ভদ্রলোক কে বিয়ে করে এখানে চলে আসে, আমি দাদুর কাছেই রয়ে যাই। দাদু মারা যাওয়ার পর মা আমাকে এখানে নিয়ে আসে। “

    ও আচ্ছা।
    আরিফ কে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে, নিশি বললো – আচ্ছা সুমন আসার সময় হয়েছে, এখন রাখি।
    সুমন এলো, ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া করলো জিজ্ঞেস করলো, আচ্ছা কতো ডলার জমা হয়েছে? – জানি না, ওইখানেই আছে দেখো।
    ও ঘুমাতে ড্রইং রুমে চলে এলো, ও নিজে ও জানে না কেনো। সুমন নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। ওর ঘুম আসছে না, আরিফ এর চিঠি টা আবার ও পড়লো।
    আচ্ছা এই চিঠির পর কি ঠিক হবে আরিফ এর সাথে মিট করা। সারারাত এপাশ ওপাশ করতে করতে সকাল। ও উঠে এককাপ কফি খেয়ে কাজে বের হয়ে গেলো। কাজের ফাকে ফাকে ও আরিফ কে খুজছে, এই সময় টাতে আরিফ এসে এককাপ কফি খায়। আজ এলো না। ওর এতো রাগ হচ্ছে কেনো? কি দরকার ছিলো সব জানার পর ও ওই চিঠি লিখার। ওর ডিউটি শেষ, চেঞ্জ করে বের হয়ে দেখলো আরিফ পার্কিং এ গাড়িতে বসে আছে। নিশিকে দেখে উনি গাড়ি থেকে নেমে পাশের দরজা খুলে দাড়ালো। নিশি এগিয়ে যেয়ে বললো – আজ আমার একটা কাজ আছে। আরিফ খুবই অবাক চোখে ওর দিকে তাকিয়ে রইলো। ” ঠিক আছে আমি ড্রপ করে দিই”

    না আমার কাজ এখানেই, আমি চলে যেতে পারবো। নিশি হাটতে হাটতে সাবওয়ে তে উঠলো। ওর প্রচন্ড কান্না পাচ্ছে। বাসায় যেয়ে শুনতে পেলো কন্টিনিউ ফোন বাজছে। – হ্যালো।
    ” কেন এমন করলে নিশু, আমি জানি তোমার কোন কাজ ছিলো না, আমি তো তোমার কাছে কিছু চাইনি, শুধু তোমার সংগ, এইটুকু থেকে আমাকে বঞ্চিত করো না প্লিজ” – আমি রান্না করবো এখন, আমার হাজবেন্ড এসে খাবে। ” কি করেছি আমি? কেনো কস্ট দিচ্ছো আমাকে”

    আপনি কিছুই করেন নাই, রাখছি।
    ফোন রেখে নিশি অনেকক্ষন কাদলো।
    এ কেমন জিবিন আমার। পর পর ৭/৮ দিন কেটে গেলো, নিশি বের হয়ে পারকিং এ খোজে, না আরিফ আসে নাই। ফোন করে, ওপাশ থেকে কোন কথা বলে না ব্যাক গ্রাউন্ড এ গান বাজে। ও বুঝে কে কল করছে। নিশি ও চুপ করে থাকে,গান শুনে।
    সন্ধায় সুমন এলো দুইটা খাম নিয়ে, এক টা খাম দেখিয়ে বললো, পরশু পহেলা বৈশাখ এর প্রোগ্রাম, খাম খুলে অনুস্টান শুচি পড়লো, ড্রেস কোড, লাল শাড়ি।।
    আর একটা খাম সুমন কাবার্ড এ রেখে তালা দিয়ে দিলো। ওটা কিসের খাম, মনে মনে ভাবলো। জানে সুমনকে জিজ্ঞেস করলে কোন উত্তর পাবে না। দেখলো চাবি টা সে তার ওয়ালেটে রেখে দিলো। নিশি ভাবতে লাগলো কি আছে এই খামের ভিতর!!
    সুমন নিশি কে বললো
    “শোন গেস্ট রুম টা ঠিকঠাক করে ফেলো” – কেনো কেউ আসবে নাকি? “এক কথা কতোবার বলবো”

    ও তোমার বিদেশি বউ?
    “তোর যা ইচ্ছা মনে কর”, বলে সে চলে গেলো পাশের রুমে টিভি দেখতে। নিশি লাগেজ খুললো লাল শড়ি কোন টা আছে দেখতে। একটা লাল জামদানি বের করলো, খুব সুন্দুর। ওর মনটা অকারনে খুশি লাগছে।


    চলবে…