Tag: ধারাবাহিক গল্প

  • ভাবীর সংসার (পর্ব-২৪)

    ভাবীর সংসার (পর্ব-২৪)

    রাহেলা খানম ব্যাংক থেকে, পলির বিয়ের টাকা তুলে, এখন জাহিদ কে নিয়ে স্বর্ণের দোকানে বসে আছেন। এই দোকান হরিধন বাবুর, হরিধন বাবু রাহেলা খানমের অনেক দিনের পরিচিত। হরিধন বাবু ভিতরে কাজ করছেন, তার জন্য অপেক্ষা করছেন।

    হরিধন বাবু এসে বললেন, দিদি অনেক দিন পর আমার দোকানে এলেন।
    – যা স্বর্ণ ছিল, তা বিক্রি করা শেষ, তাই আসা লাগেনা।
    – স্বর্নের চেয়ে দামী, ছেলেরা পেয়েছেন। আর কি লাগে।
    – জি, এটা সত্য। মেজ মেয়ের বিয়ে আগামী সপ্তাহে, স্বর্ণ লাগবে।
    – বাহ, খুব খুশির সংবাদ।
    – ভরি কত করে?
    – এখন ভরি ছয় হাজার টাকা।
    – কি বলেন দাদা? এতো বেড়ে গিয়েছে?
    – জি। হু হু করে বাড়ছে।
    – আচ্ছা, একটা নেকলেস, এক জোড়া ঝুমকা, আর একজোড়া বালা দেখান। আর কমান দাদা টাকা।
    – দিদি, এই সব নিলে পাঁচ ভরির কম হবেনা, টাকা দেখবো পরে।
    – আচ্ছা, দেখান।

    রাহেলা খানম মেয়ের জন্য ছয় ভরি স্বর্ণ কিনলেন। জামাইকে দেওয়ার জন্য একটা চেইন। সব মিলিয়ে পঁয়তাল্লিশ হাজার টাকা গেল। রাহেলা খানম জাহিদ কে বললেন বাবা, খরচ কি বেশি করে ফেলেছি?
    – মা, তোমার টাকা তুমি যেভাবে ইচ্ছে খরচ কর। আর পলির শ্বশুড় যেহেতু কিছু নিতে চাইছেন না, তাহলে স্বর্ণ দেওয়াই ভালো। বিপদে কাজে দিবে।
    – তাই বাবা। আমি জানি, এই জিনিস আমার কত বিপদে বাঁচিয়ে রেখেছে।

    বাকি টাকা নিয়ে, বিয়ের মাত্র তিন দিন আগে রাহেলা ছেলের বাসায় গেলেন। যথারীতি শারমিনের রুম তালা দেওয়া। এক রুমে সবাই বসে আছে। সাঈদ চাবি দিয়ে অফিসে চলে গিয়েছে।

    কলি বললো মা, ভাবী কি বিয়ের আগে এই বাসায় আসবেনা?
    – বাচ্চা ছোট, কেমনে আসবে।
    – মা, অযুহাত দিও না।
    – যার বাসা সে না আসলে, কিচ্ছু করার নেই। আচ্ছা শোন, তুই পলির জন্য ভালো দেখে চারটি শাড়ি কিনে দিবি, এক জোড়া ঘরে পড়ার স্যান্ডেল, ওর শ্বাশুড়ির জন্য একটা শাড়ি আর টুকটাক যা লাগে কিনে নিয়ে আয়, আমি টাকা দিচ্ছি।
    – মা, আমি কোন কিছু কিনবো না?
    – কমিনিউটি সেন্টার আর খাওয়ায় চলে যাচ্ছে চল্লিশ হাজার টাকা। জামাইয়ের কাপড়, ওয়ালিমায় যাওয়ার খরচ নাই? কাপড় কিনবি!

    পলি বললো মা, আমার চারটা শাড়ি লাগবেনা একটা নতুন হলে হবে, জলিপা কলি আর ভাবীকে কিনে দাও। আর তিন ভাইকে তিন টা শার্ট। আমার আর কিছু কেনা লাগবেনা।
    – তুই চুপ থাক।

    জাহিদ বললো এই, পলি আছি রে, এখনো ভাই জীবিত, এতো চিন্তা করিস না। কলি তুই ওকে নিয়ে রেডি হ, আমি তোদের শপিং করে দিচ্ছি। মা, তুমি সাবধানে থাকো। এই টাকা তোমার কাছে রাখো। বাজার সদাই করতে হবে, কাল মেহমান আসবে।
    – না, বাবা। তুই খরচ করিস না, বিয়েতে কত খরচ, পরে টাকা লাগবে।
    – মা, তুমি চিন্তা করবেনা, শান্ত হয়ে থাকো।

    জাহিদের কেন জানি, মন টা আজ খুব খারাপ লাগছে৷ পলির বিয়ে হয়ে যাচ্ছে, কেমন যেন ছায়াহীন লাগছে। পলি খুব সুন্দর করে সব কিছু বুঝতে পারতো। বিয়ে হয়ে গেল, বোন গুলি কত দূরে চলে যায়। বিয়ের আগে, যা ইচ্ছে মন ভরে শপিং করুক। কত আত কিনবে, শখ মিটিয়ে যাক। তাই বোন কে নিয়ে শপিং যাচ্ছে জাহিদ।

    শারমিনের জন্য একটা মেরুন রঙের কাতান পছন্দ করেছে পলি। চিকন সুতার কাজ করা, চমৎকার শাড়ি। আর কলি আর জলির জন্য কেন্স হয়েছে আকাশী রঙের মিরপুরী কাতান শাড়ি। নিজের জন্য সুতির দুটি শাড়ি কিনেছে পলি। কিন্তু জাহিদের পলির দুটি শাড়ি পছন্দ হয়নি, তাই সে জলি আর কলির মতো একই রকম আরেক টা শাড়ি কিনে দিল। সবচেয়ে দামী শাড়িটা কেনা হলো, শারমিনের জন্য। জাহিদ, চার ভাইয়ের জন্য শার্ট, মায়ের জন্য একটা শাড়ি কিনে নিল। আর ছোট্ট জিহানের জন্য পাঞ্জাবি সেট। পলিকে বার বার বলছে যা ইচ্ছা কিনে নে, কোন সমস্যা নেই।

    কলি রাস্তায় এসে বললো, মেজ ভাই তুমি ভাবীর বাপের বাড়ী গিয়ে এসব দিয়ে এসো, আমি ওদের বাসায় যাবো না। আর আপার কাল পরে পড়শু বিয়ে আপা, ও যাবেনা।
    – তুই চল, কলি। তুই ছাড়া আমি একা কেমনে যাবো?
    – জানিনা। আমি যাবো না।

    জাহিদ শেষ পর্যন্ত একাই গেল। কলিং বেল দিতেই আইরিন বের হয়ে এলো, খুব বিরক্ত হয়ে বললেন আপনারা চলে এসেছেন?
    – হ্যা৷ আজ সকালে এসেছি।
    – বসেন।
    – ভাবী কোথায়?
    – এই বড়পা, এদিকে আয় একটু….

    জাহিদ বসার ঘরে বেশ কিছুক্ষণ বসার পরে, শারমিন এসে বসলেন। কি ব্যাপার জাহিদ, কেমন আছ?
    – ভালো আছি ভাবী। আপনি?
    – আছি। ভালোই আছি।
    – বাসায় যাবেন কবে?
    -সত্যি কথা, জিহান বেশি মানুষ দেখলেই ঝামেলা করে। এজন্য বিয়ের আগেরব্দিন রাতেই দেখি যাবো।
    – ওহ।
    – আপনার জন্য পলি এই শাড়ি পছন্দ করে কিনেছে।
    – আমি কি কাতান শাড়ি এই বাচ্চা নিয়ে পরতে পারবো? আর শাড়ি আমার অনেক আছে। আম্মা তো অনেক টাকা পেলেন, মেয়ের জন্য ঠিকই স্বর্ণ কিনেছেন। আর আমার জন্য শাড়ি। একটা আনার স্বর্ণ তো কেউ গিফট দিল না!
    – একটু সময় পরে নিয়েন, খুশি হবে সবাই।
    – ভাইরে, আমি বাচ্চা সামাল দিব? নাকি শাড়ী? আর, জাহিদ সেন্টারে যখন অনুষ্ঠান জলিকে সেন্টারে আসতেই বলতে।
    – ইয়ে, ভাবী। ও আর বড় মামী আম্মা শুধু আগের দিন আসবে, আর কেউ না।
    – তাহলে একটা বাসা ভাড়া নিতে? এতো মানুষ যখন আসবে।
    – জি ভাবী, ঠিকই বলেছেন। আচ্ছা ভাবী আমি আসি। কিছু দরকারী কাজ আছে।
    – হুম। যাও, চা খেয়ে যাও।
    – না, না। এখন না।

    জাহিদের একদম মেজাজ ধরে গিয়েছে শারমিনের কথা শুনে। অথচ তার মায়ের শেষ সম্বল এক জোড়া বালা, তিনি তার বড় ছেলের বউকে দিয়েছিলেন। ভাইজান দশ ভরি স্বর্ণ নতুন বানিয়ে দিয়েছেন। মায়ের জায়গা বিক্রির পঞ্চাশ হাজার টাকাও ভাইজান কে দেওয়া হলো তবুও ভাবী কত রকম কথা বলছেন। মুখ যখন আছে, বলতে হবে, এজন্য হয়তো বলছেন।

    পাশের বাসার তিন জন মহিলা রাহেলা খানম কে সালাম দিয়ে বসার ঘরে ঢুকে বলছেন, খালাম্মা আমরা আপনাদের পাশেই থাকি। বিয়ে শুনলাম তাই দেখতে এলাম।
    – খুবই ভালো হয়েছে এসেছো, বসো। আমি মা, গ্রামে থাকি, তাই তোমাদের সাথে পরিচয় নাই।
    ,- এই বাসা তালা দেওয়াই থাকে, হঠাৎ ভাই এসে পরিষ্কার করে চলে যান। আমরাও আপনাকে আজ প্রথম দেখলাম।
    – হ্যা, ছেলের চাকরি দূরে। এজন্য বউমা বাবার বাড়ী থাকেন।
    – জি। খালাম্মা, আমাদের সবার ঘরে রুম খালি আছে, মেহমান আসলে পাঠিয়ে দিবেন। একদম আপন মনে করে। আর কিছু লাগলে ডাকবেন।
    – আচ্ছা মা, ডাকবো।
    – ভাবী কি রান্নাঘরে? ননদের বিয়ে তো, তাই ব্যস্ত বোধহয়। ননদের বিয়েতে সব দায়িত্ব ভাবীর।
    – হ্যা, হ্যা। বউমা একটু বাইরে গিয়েছে, কাজে।
    – আর হলুদ করতে চাইলে উঠানে করবেন, আমরা সাহায্য করবো সমস্যা নাই।
    – অনেক ধন্যবাদ মা, সবাই বিয়েতে আসবে। রাগ করবেনা আবার, এখন দাওয়াত দিচ্ছি বলে, আজই এসেছি বাড়ী থেকে।
    – আমরা আছি, আপনি চিন্তা করবেন না। এখন আসি।

    কলি সবাই চলে যাওয়ার পর বলছে, দেখেছো পাশের ঘরের মানুষ সাহায্য করতে আসছে। আর আমাদের একমাত্র ভাবীর খবর নাই, আবার রুমেও তালা দিয়ে রেখেছে।
    – থাক, শুভ সময়ে অযথা কথা বলার দরকার নাই।
    – তোমার নীরবতাই সকল সমস্যা।
    – আর, কথা বলিস না তো! যা। কাজে যা!

    রাহেলা খানমের নিজেরই কেমন পর পর লাগছে। কিন্তু কি করবেন, কিচ্ছু করার তো নাই।

    বিয়ের আগের দিন সকালে জলি তার জামাই, দুই ননদ নিয়ে এসেছে। সাথে বড় মামী, ও তার বড় মেয়ে।

    রাহেলা খানমের জলির এই কম বুদ্ধির জন্য সবসময় ভোগেন। কত বার বলেছেন, এই খানে জায়গা কম, তবুও ঠিকই ননদ নিয়ে এসেছে। এরমধ্যে আবার দুইজন। তাদের নিশ্চয়ই জোড় করে নিয়ে এসেছে সে। এখনো শারমিন আসেনি, রুম তালা দেওয়া। কি করবেন তিনি বুঝতে পারছেন না।

    নাহিদ-শাহিদ মরিচ বাতি আর গায়ে হলুদের স্টেজ সাজানোর জন্য ফুল আর কাগজ নিয়ে উপস্থিত হয়েছে কিছুক্ষণ আগে।

    সবাই গোল হয়ে বসে কাগজ কাটছে, গাদা ফুলের লম্বা লাইন করছে, স্টেজ সাজানোর জন্য। বেশ উৎসব উৎসব লাগছে। জামাইয়ের বাড়ীর কাপড় এসে এখনো পৌছায় নি। এর জন্য অপেক্ষা করছে সবাই।

    পলির খুব আনন্দে লাগছে, তার বিয়েতে মরিচ বাতি জ্বলবে, কিংবা কেউ এতো আগ্রহ নিয়ে কাগজ কেটে স্টেজ করবে, কখনো চিন্তা ও করেনি সে। আগামী কালকের শুভ সূচনা কি শুভ হবে, তাই নিয়ে ভাবছে পলি। সবার মায়াকে ছেড়ে যাবে কেমনে! তা ভাবলেই বুকে ছ্যাৎ করে উঠে তার।

    রাহেলা খানম সব দেখছেন, কিন্তু ভাবছেন এতো মানুষের থাকার ব্যবস্থা কেমনে হবে? কেমনে আদর করে দিবেন অতিথিদের। কতশত চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে মাথায়….

    চলবে…

    আন্নামা চৌধুরী।
    ০৫.০১.২০২২

  • ভাবীর সংসার (পর্ব-২৩)

    ভাবীর সংসার (পর্ব-২৩)

    রাহেলা খানম মেয়ের চিঠি এই নিয়ে তিন বার পড়লেন, এবং চিঠি হাতে বারান্দার বেঞ্চিতে বসে জাহিদের জন্য অপেক্ষা করছেন। এখন দুপুর বেলা, জাহিদ বাড়ী আসবে!

    তিনি এক দৃষ্টিতে দুটি শালিক দেখছেন, তিনি কুংসস্কার বিশ্বাস করেন না, তবে তিনি জোড়া শালিক দেখে ভাবলেন হয়তো সুসংবাদ তার জন্য কিছু অপেক্ষা করছে।

    জাহিদের সাইকেলের শব্দে তিনি জাহিদের দিকে ফিরে তাকালেন।

    জাহিদ বললো এতো মনোযোগ দিয়ে কি দেখছো মা?
    – না, বাবা। পলি চিঠি লিখেছে।
    – কি? জামাই পছন্দ হয়নি।
    – আরে না! সাঈদ ছেলে পছন্দ করেনি, না করতে যাইতে চাচ্চে, এখন পলি ওই ছেলেকেই বিয়ে করতে চায়।
    – আলহামদুলিল্লাহ! ছেলে খুব ভালো মা। শুধু টাকা পয়সা কম, কষ্ট করেই চলতে হবে।
    – সারা জীবন এই টানাটুনির সংসারের ঘানি ঠেলেছি, এখন মেয়েদের এই ঘানি ঠেলতে দিতে, ভয় লাগে। সাঈদ কে তুই ফোন কপ্রে বল, যেন সে এখানেই বিয়ে ঠিক করে, আমি পাক্কা মত দিয়েছি।
    – তাই ভালো। ছেলে ভালো হলে, সুখ এবং শান্তি দুই থাকবে। টাকা একদিন হবেই, সেটা সময়ের অপেক্ষা।
    – তাই যেন হয়।

    সাঈদ খবর শুনে, খুব বিরক্ত হয়েছে। কারণ এই ছেলের কাছে বিয়ে দিতে তার একদম মন টানছে না। কিন্তু যেহেতু মা নিজে হুকুম দিয়েছেন, তাই সাঈদ শফিউল আলম সাহেব কে কল করে জানিয়ে দিয়েছে, তাদের কোন আপত্তি নেই। মেয়ের ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হলেই, বিয়ে হবে।

    পলি এই খবর শুনে, খুব শান্তি পেয়েছে। যাক, একজন সৎ মানুষের সাথে বিয়ে হবে।

    দুই মাস পরে, আবিদ ছুটিতে এসে, মহিলা কলেজের সামনে হাঁটাহাঁটি করছে, এক নজর পলিকে দেখবে বলে। কিন্তু পলির দেখা মিলছে না। কারণ আজ পলি ক্লাসেই আসেনি, রাত থেকে তার জ্বর। কলিও বোনের কাছে কাছে থাকছে। এখন কলি একটু নাপা কিনতে হলের বাইরে যাবে, এজন্য বের হবে।

    আবিদ প্রায় ঘন্টা খানেক ধরে কলেজের গেইটের বাইরে দাঁড়িয়ে ঝালমুড়ি, বাদাম, খেয়ে যাচ্ছে। কিন্তু পলির দেখা পাচ্ছেনা!

    হঠাৎ কলিকে দেখে আবিদ হাতে চানাচুর নিয়েই দৌড়ে সামনে এলো, কিন্তু এভাবে দ্রুত পায়ে এসে, নিজেই লজ্জা পেয়ে গেল।

    আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া, কেমন আছেন?
    – জি ভালো, আপনি?
    – ভালো আছি। এদিকে কি মনে করে।
    – আমি, এদিকে বন্ধুর সাথে দেখা করতে এসেছিলাম।
    – তা, বন্ধু কি মহিলা কলেজে পড়ে?
    – হ্যা, না না। ও মহিলা কলেজে পড়বে কেন?
    – না, কলেজের মামার চানাচুর খাচ্ছেন, তাই ভাবলাম।
    – এমনি, এমনি নিয়েছি।

    কলি নিজে ভিতরে, ভিতরে হাসছে, বেচারা বউকে দেখতে এসেছে, তাও লজ্জায় বলতে পারছেনা।

    আপনি চানাচুর খাবেন?
    – আপনি আপনি করছেন কেন? তুনি বলুন।
    – হ্যা, তাই। তুমি খাবে?
    – না, আমি খাবো না। বউয়ের কথা জিজ্ঞেস করবেন না?
    – হ্যা?
    – বলছি, আপনার হবু বউ, মানে আমার আপার, কথা কিচ্ছু জিজ্ঞেস করবেন না?
    – কেমন আছে সে?
    – ভালো নেই, অসুস্থ। রাত থেকে জ্বর।
    – এখন কি অবস্থা?
    – ঔষুধ কিনতে যাচ্ছি।
    – আমি আসি সাথে?
    – জি অবশ্যই।

    আবিদ পলির জন্য এক কেজী মালটা, কমলা লেবু ,আঙ্গুর, স্যালাইন, ঔষুধ কনে দিয়েছে। কলি অনেক না করার পরেও!

    যাওয়ার সময় বললো, তোমার আপার যত্ন নিও, আমি আজই রওনা হবো। দুদিনের ছুটিতে এসেছিলাম। আমার ঠিকানা দিয়ে দিলাম, পলিকে দিয়ে দিও। আজ আসি!

    কলির খুব ভালো লাগছে, এই মানুষটির ভালবাসা দেখে, সে সত্যি আপা কে ভালবেসে ফেলেছে। এজন্য পলিকে এক নজর দেখার জন্য দাঁড়িয়ে ছিল, আবার ফল ও কিনে দিয়েছে, অসুস্থ শুনেই মন ভার করে ছিল।

    পলি এতো ফল দেখে বললো কি রে, এতো সব কি দিয়ে আনলি? টাকা নিল ত্রিশ টাকা।
    – দুলাভাই দিয়েছে।
    – জলিপার দুলাভাই? কিভাবে আসলো?
    – আপনার জামাই, মিস্টার আবিদ।

    পলি জামাই শব্দ টা শুনেও বেশ লজ্জা পেয়ে চমকে উঠেছে, গাল দুটি লাল হয়ে আছে।

    কেন উনি এসব দিলেন?
    – উনি তো প্রায় কেঁদেই দিচ্ছিলেন, তুই অসুখ শুনে।
    – ফাইজলামি করবি না তো!
    – এই নে, ঠিকানা, পত্র লিখতে বলেছে।
    – নিজে লিখে নিয়ে এসেছিস! ফাজিল মেয়ে।

    আমার লেখা কি এতো গুটি গুটি করে হয়, দেখো ভালো করে।

    ছোট্ট চিরকুট,

    আবিদুল আলম আবিদ, আগ্রাবাদ, নুর ম্যানশন, ৩য় তলা, চট্টগ্রাম।

    পলির লেখা টা অনেক বার পড়তে ইচ্ছে করছে, আবার রাগ ও লাগছে, কেন সে তাকেই প্রথমে চিঠি লিখতে বললো, নিজেই আগে একটা চিঠি দিত!

    শফিউল আলম বিয়ের তিন মাস আগে, রাহেলা খানম কে চিঠি লিখলেন।

    আপা,
    আসসালামু আলাইকুম, আমি আবিদের আব্বা। আল্লাহর ইচ্ছায় ভালো আছেন। সব ঠিকঠাক থাকলে, আগামী তিন মাসের মধ্যে আমার পুত্রবধূকে আমি ঘরে নিব। কন্যার পিতা-মাতার চিন্তা বেশি, কন্যাকে নিয়ে। কন্যা কে বিদায় দেওয়া অনেক বেদনার। আমার দুই কন্যা আছে, এদের বিবাহের কথা মাথায় আসলে, আমি চোখে অন্ধকার দেখি, আবার ভাবী, দুই কন্যা দিয়ে সাত কন্যা ঘরে আনবো। আমার একটা বিশেষ অনুরোধের কথা জানানোর জন্য চিঠি দিলাম।
    আমি আমার ছেলেদের বিয়ে দেওয়ার আগেই তাদের রুম বানিয়ে দেই, আবিদের রুমের রঙের কাজ চলছে এখন, আমার বাড়ীর কাঁঠাল গাছ কেটে বউমার জন্য একটা খাট, ড্রেসিং টেবিল, আর কাপড় রাখার জন্য একটা আলমারী বানানো চলছে, ইনশাআল্লাহ বিবাহের আগে সব বানানো শেষ হবে।

    দয়া করে, কোন প্রকাশ আসবাবপত্র দিয়ে আমাকে ছোট করবেন না। আমি আপনার মেয়ে আমার ঘরে নিব,তাই আমার সৌভাগ্য! আপনি মাত্র ত্রিশ জনের খাবার আয়োজন করবেন, আমি বিয়ের পরের ফিন, আমার বাড়ীতে প্যান্ডেল করে ওয়ালিমা করবো, আপনার সব আত্নীয় নিয়ে আসলে খুশি হবো। আমার জন্য দোয়া রাখবেন, আর আমার মেজ পুত্র আবিদের জন্য দোয়া রাখবেন। বাড়ীর বড়দের সালাম, আর ছোটদের জন্য স্নেহ রইলো। আজ এই পর্যন্ত, ভালো থাকুন।

    ইতি,
    আপনার ভাই,
    প্রফেসর শফিউল আলম।

    রাহেলা খানম চিঠি পড়ে খুশিতে কাঁদছেন, এতে ভালো একজন পিতার সন্তানের সাথে তার মেয়ের বিয়ে হবে, যিনি মেয়েদের এতো সম্মান করেন, ভালোবাসেন। রাহেলা খানম চিঠি বন্ধ করে চিন্তা করছেন, মেয়েকে তিনি তাহলে কি উপহার দিয়ে শ্বশুড় বাড়ী পাঠাবেন! সময় আর বেশি নেই, চিন্তা লাগছে, কি করবেন তিনি মেয়ের খুশির জন্য, আর তো তিনি চাইলেও বিবাহিত মেয়েকে বেশি কিছু দিতে পারবেন না। এখনই যা দেওয়ার দিতে হবে, কি দিবেন এই চিন্তায়ই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে….

    চলবে…

    আন্নামা চৌধুরী।
    ০২.০১.২০২২

  • কালো বিড়াল (শেষ পর্ব-৪)

    কালো বিড়াল (শেষ পর্ব-৪)

    ফজরের আযানের জন্য সবাই অপেক্ষা করছিলো৷ আজানের ঠিক কয়েক মিনিট আগে জানালার উপর ধাম করে কি যেন একটা পড়ে এমন শব্দ হলো যেন জানালা ভেঙ্গে গেলো৷ এবং দুই তিন মিনিট পর গভীর নিস্তব্ধতা। পুরো বাড়ী যেন হালকা হয়ে গেলো৷ সাথে সবার গা ও হালকা হয়ে গেলো৷ সূর্য উঠতে চললো, চারিদিক কিছুটা আলোকিত হলো। লাভলী বেগম লাবন্যের মাথায় হাত বুলাতে গিয়ে দেখে মাথা সহ পুরো বালিস ভেজা৷ আবছা আলোতে তিনি দেখলেন বালিশ পুরো রক্তে ভেজা৷ লবন্যের গলাতে চোখ পড়লো। লাবন্যের গলাটা নীল হয়ে গেছে৷ লাভলী বেগম মোবাইলের লাইট দিয়ে দেখলেন, পুরো বালিশ রক্তারক্তি হয়ে আছে৷ তিনি তাড়াতাড়ি সবাইকে ডাকলেন৷ কান্নায় সবাই ভেঙে পড়ছে৷ লাভলী বেগম দেরি না করে পাশের বাড়ীর আতর আলীকে খবর দিলেন৷

    সুরাইয়া লাবন্যের মাথা মুছে মেয়েকে কাপড় বদলে দিলেন৷ মেয়ে ক্লান্ত হয়ে ঘুমাচ্ছে৷ সে জানেই না তার সাথে কি হচ্ছে৷ বাড়ীর সবার মন খারাপ৷ লাবন্যের এ অবস্থা দেখে সবাই কান্না কাটি শুরু করে দিয়েছে৷

    সকাল তখন দশটা৷ আতর আলী আসলো৷ ঘরে ঢোকার আগেই আতর আলী বললো, এই ঘরে বহুত খারাপ একখান জিনিস ঢুইক্কা হড়ছে৷ মুই ঘরে ঢুইক্কুম না৷ তাইলে হ্যায় মোরেও কাবু হইরা ফেলবো৷ পিছনের উডানের দুয়ার খানা খুইলে দেন৷

    আতর আলীর অভ্যেস হলো কিছুক্ষন পর পর আতর ছিটায়, আর ভালো খারাপ যে কোনো কিছুতে সে হেহ হেহ হেহ করে। এটা হাসি বা কান্না নয়৷ শুধু হেহ হেহ হেহ৷ পেছনের উঠোনের মাঝ বরাবর এসে আতর আলী বললো, “খবর বেশী বালো নহে৷ রাইত না অইলে কাইত করোন যাইতোনা৷ রাইত ফর্যন্ত অফেক্কা কইত্তে অইবে৷ হেহ হেহ হেহ”৷

    বলে তিনি কামরাঙ্গা গাছের দিকে তিক্ন দৃষ্টিতে তাকালেন৷ ততখনাত কামরাঙ্গা গাছের উপর যেনো একটা ঝড় বয়ে গেলো এমন ভাবে কামরাঙ্গা গাছের পাতা নড়ে উঠলো৷ বেশ কিছু পাতা ঝরে গিয়ে কামরাঙ্গা গাছ যেন খালি হয়ে গেলো। এবার আতর আলী একটু একটু করে কোদাল দিয়ে মাটিতে কোপ মেরে মেরে ঠিক কামরাঙ্গা গাছের নীচ বরাবর কোদালটা গেড়ে বসে রইলেন এবং তিনি সবাইকে বললেন, ফতিস্থিতি বালো নহে৷ কেউ আমার লগে কতা কইবেন না৷ বলেই উনি ধ্যানে বসলেন৷

    মাগরিবের নামাজের আযান পর্যন্ত তিনি ধ্যানেই রইলেন কামরাঙ্গা গাছের নীচে৷ যেই মাত্র মাগরিবের আযান হলো, আতর আলী একটা বড় কোপ মারলেন মাটিতে৷ ধুপ করে গাছ থেকে একটা জিনিস মাটিতে পড়লো৷ সারা বাড়ী গন্ধে ভরে গেলো৷ আতর আলী গর্ত করতে শুরু করলেন কামরাঙ্গা গাছের নীচে৷ কয়েক সেকেন্ড পর ধুপ করে পড়া জিনিসটা একটা বিদঘুটে কালো বিড়ালে পরিনত হয়ে গেলো৷

    এদিকে লাবন্য ঘুমাচ্ছে৷ আতর আলীর কথা অনুযায়ী লাবন্যকে কেউ ঘুম থেকে জাগালো না৷ সুরাইয়া শুধু চামচ দিয়ে একটু একটু করে আতর আলীর দেয়া পড়া পানি দিয়ে গেলো তার মুখে৷

    মাগরিবের নামাজ শেষে আতর আলীর নির্দেশ অনুযায়ী একটা চকিতে লাবন্যকে বাড়ীর উঠোনের মাঝখানে নিয়ে শোয়ানো হলো৷ লাভলী বেগম তার মাথার কাছে কোরান শরীফ পড়ছেন৷

    একটা সময়ে আতর আলীর কথা অনুযায়ী লাভলী বেগম কোরান শরীফ পড়া বন্ধ করলেন৷ লাভলী বেগমকে বলা হলো তিনি যেন, একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ান। তিনি একটু দূরে যেতেই বেশ কয়েকটি কালো বিড়াল লাবন্যের চকির আশপাশ ঘিরে ফেললো৷ আর সবচেয়ে বড় বিড়ালটা লাবন্যের গায়ের উপর উঠে তার চুলের গন্ধ নেয়া শুরু করলো। আতর আলী বিড়ালকে উদ্দেশ্য করে কিছু পড়লেন, যেমন…ধ্রুম্ম ধ্রুম্ম ঢাং ধ্রুমকুলাঙ্গা ধ্রুম্ম ধ্রুম্ম ঢাং, বস করলাম আমি তোকে ধ্রউম্ম ধ্রুম্মম্মম্মম্মম্ম ঢাং।

    সঙ্গে সঙ্গে বিড়ালটি আতর আলীর সামনে গিয়ে হাজির৷ আতর আলী তার গায়ে কিছু আতর ছিটিয়ে বললো যা তুই তোর বাচ্চাদের নিয়ে আয়৷

    এদিকে ক্লান্ত লাবন্য উঠে বসে তার চুলকে জোরে ঝেড়ে নিলো দুইবার৷ সবাই দেখলো চুল থেকে দুইটা ভারি বস্তার মতো জিনিস পড়লো৷ কালো বিড়ালটি সেই দুটো জিনিসকে কামড় দিয়ে সোজা আতর আলীর কাছে গিয়ে হাজির৷ আতর আলী বললো, তোরা এ বাড়ীর বহুত নিমক খাইছস৷ তবুও নিমক হারামী ক্যারে? গাছের উপর থেকে অনেক জোরে আওয়াজ আসলো, আমার বাচ্চাদের গলা চেপে চুলের সাথে বেঁধে নিয়েছিলো৷ আমিকি তবে তাদের ছেড়ে দেবো? আতর আলী বললো, না জেইনে বাইন্ধেছে৷ তাই বইলে কি তুই মাইয়াডার রক্ত খাইবি? আইজ তোরে মইরতেই অইবো৷ বলে আতর আলী কামরাঙ্গা গাছের গোড়ায় কুপিয়ে তাকে গাছ থেকে গর্তে ফেললো। এবং সে কালো বিড়াল গুলোও এসে গর্তে পড়লো। আতর আলী বললো, “বহুত দিন ধইরা আমি তোদের খুঁইজতাছি। আইজ পাইয়াছি। ছাড়াছাড়ি নাইক্কা”৷

    কেরোসিন ঢেলে বিড়াল গুলিকে সহ গর্তে আগুন জালিয়ে দিলো৷ ধাউধাউ করে আগুন জলছে৷ চারিদিকে প্রচন্ড দূর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়লো৷ সে পেতনি সহ তার পুরো পরিবার মরে গেলো৷

    লাভলী বেগম আতর আলীর কাছে জানতে চাইলো কি হয়েছিলো, আতর আলী বললো, হাইঞ্জের বেলা চুল ছাইড়া রাহোন ঠিক নহে৷ ছাড়া চুলে মাইয়াডা বইয়া আছিল যহন তহন পেতনির জমজ বাইচ্চারা খোলা চুলের ভিতরে হান্দাইয়া খেলতাছিলো৷ আর তহনই চুল বান্দন্ডা ঠিক অয়নাইক্কা৷ হ্যের চুল দিয়া তাগো গলায় ফাঁস লাইজ্ঞা গেছলো৷ আর তক্ষন তক্ষনই বাইচ্চা গুলান আধমরা অইয়ে গিয়েছিলো৷ হ্যের লাইজ্ঞা ফেত্তুনির ঝি ফেত্তুনির বাচ্চারা হ্যার মাথায় কামড়াইয়া দিছলো৷ আর হ্যের লাইজ্ঞা লাবন্যের মাতায়ও ফ্রচন্ড ব্যদনা হইয়েছিলো। তার যন্যি রক্তে বালিশ ভিজ্জা গেইয়েছিলো৷ রাইতে পেত্নি বিলাইর রূপ ধইরে লাবইন্যের চুল থেইক্কা তার বাচ্চাগো উদ্ধার কইরতে গেছলো৷ কিন্তু তাকে মারধর কইরে বাইর কইরে দেওনে হ্যায় ছেইত্তা গেছে৷ বাচ্চাগোরে কইছে লাবইন্যের মাথা থেইক্কা রক্ত খাইয়ে লইতে৷ ব্যাফারটা ছিলো এই৷

    তার পর থেকে কেউ আর খোলা চুলে কামরাঙ্গা গাছের নীচে যেতো না৷ যদিও সে পেতনিকে পরিবার সহ পুড়িয়ে মারা হয়েছিলো৷

    (সমাপ্ত)

  • নিশির প্রবাস (শেষ পর্ব-২০)

    নিশির প্রবাস (শেষ পর্ব-২০)

    নিশির ব্যাগ এ কিছু কয়েন ছিলো। প্রথমে ও সুনিল কে ফোন করলো। – সুনিল আমি এয়ারপোর্ট এ, দেশে ফিরে যাচ্ছি। ” আচ্ছা ঠিক আছে, জানোতো উনি এখন টেক্সাস এ, আমার লাইফ টা হেল করে দিচ্ছে, উনার মতো সিক একটা লোকের সাথে তুমি এতোদিন কিভাবে ছিলা ভগবান ই জানে “

    আমি দুঃখিত। তোমাকে থ্যানক্স দেওয়ার জন্য ফোন দিয়েছি, তুমি অনেক করেছো আমার জন্য।
    “ঠিক আছে, সেইফ জার্নি “।
    তারপর ও ফোন করলো আরিফ কে।

    আমি নিশি এয়ারপোর্ট এ, বাংলাদেশ এ ফিরত যাচ্ছি।
    ” নিশু তুমি কেনো এটা করলে?
    “- কি করেছি। ” তুমি জানো পুরা নিউইয়র্ক জানে তুমি একটা হিন্দু লোকের সাথে পালিয়েছ, এবং উনার সাথে তোমার অনেক দিনের সম্পর্ক ছিলো, সুমন সাহেব যেভাবে কাঁদছিলেন সবাই বিশশাস করেছে”
    ” নিশু আমি বুজতাম তোমার মনে অনেক দুঃখ, অনেক অভিমান, আমি অনেক চেস্টা করেছি তোমার কাছ থেকে জানতে, কিন্ত তুমি এত চাপা কখনো কিছু বলো নাই”।

    কি করতেন জানলে?
    ” অনেক কিছুই করা যেতো, আমি তো তোমার কাছ থেকে ২% রিস্পন্স ও পাই নাই।আমি তোমাকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছি, কিন্তু বলতে পারি নাই, সেই সুযোগ ই তুমি কখোনোই দেও নাই।
    –আচ্ছা আমার বাংলাদেশের নাম্বার টা চাইলে রাখতে পারেন।
    ” হ্যা প্লিজ বলো, আমি অবশ্যই ফোন দিবো।

    আচ্ছা একটা কথা জানার ছিলো, সবার মতো আপনি ও কি বিশশাস করেছেন, আমি একটা হিন্দু ছেলের সাথে পালিয়েছি? ফোনে টুন টুন শব্দ, কয়েন শেষ।
    নিশি ভাবতে লাগলো বাংলাদেশ এ যাওয়ার পর কার কি অনুভুতি হবে, আম্মা দাদু হয়তো কথাই বলবে না। চাচা, চাচি, ফুফুরা হয়তো সারাক্ষণ বাকা চোখে তাকাবে, আর উনাদের মেয়েদের ওর সাথে মিশতে দিবে না, আরো আছে খালারা। এইসব ভেবে এখন আর যেতে ইচ্ছা করছে না।
    এনাউয়েন্সমেন্ট হচ্ছে। চেকইন করে ও ফ্লাইট এ বসলো। বেশিরভাগ সময় ই ওর ঘুমিয়ে কাটলো।
    ঘুম ভাঙলে একটাই ভাবনা মাথায় এসেছে, লেন্ড করার পর ওর কপালে কি অপেক্ষা করছে। ও লেন্ড করলো, আব্বা আর ভাইয়া ওকে নিতে এসেছে। ও ভেবেছিলো আব্বাকে দেখে ওর অনেক কান্না পাবে, কিন্তু না আব্বা ওকে জড়িয়ে ধরলো। ” কেমন আছিস মা? ” – ভালো আছি আব্বা। ভাইয়া জড়িয়ে ধরে বললো ” কি যে ভালো লাগছে তোকে দেখে, খুব টেনশন এ ছিলাম রে”।
    নিশি বাসায় এলো, আম্মা নিশিকে দেখে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দিলো, নিশি বুঝতে পারছে না, ও শক্ত হয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো। দাদু এসে আম্মাকে বললো ” মেয়ে টা এতোদুর থেকে এসেছে, ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া করতে দাও”। নিশি দাদু কে সালাম করতে গেলো, দাদু ওকে জড়িয়ে ধরে ধরা গলায় বললো ” তুমি যে সহি সালামতে ফিরত আসছো এটাই আল্লার কাছে কোটি কোটি শুকরিয়া। আমি নামাজ, রোজা নিয়ত করেছি। নামাজ পড়তে যাই, তারপর বসে কথা বলবো।
    আম্মা বললো ” যা মা চেঞ্জ করে আয়, কেউ খায় নাই, সবাই তোর জন্য অপেক্ষা করছে। ইলিশ মাছ বেগুন দিয়ে রান্না করেছি, তোর পছন্দের।
    নিশির বাথরুমে যেয়ে খুব কান্না পাচ্ছিলো। কতো উল্টা পাল্টা ভাবনা এসেছে আম্মাকে নিয়ে, দাদুকে নিয়ে। নিশি খেতে বসলো, কতোদিন পর আম্মার হাতের সেই শাদ।
    মামা খালাদের ফোন আসছে একটার পর একটা, সবার ফোনের রিপ্লাই আম্মা দিচ্ছে, আমার মেয়ে আমার বুকে ফিরত এসেছে, এটাই আল্লার কাছে কোটি কোটি শুকরিয়া, তোমরা দোয়া কইরো। ভাবি নিশিকে বললো এতো লম্বা জার্নি করে আসছো যাও একটু রেস্ট নাও। চাচি আসলো দেখা করতে, ও গুমের ভান করে শুয়ে থাকলো, ইচ্ছা করছে না কোন প্রস্নের সামনাসামনি হতে।
    সন্ধার সময় সবাই একসাথে বসলো, কেউ সুমন কে নিয়ে কোন কথা জিজ্ঞাস করছে না, বা প্রবাস নিয়ে কোন প্রশ্ন করছে না। আম্মা উশখুশ করছে, ও বুঝতে পারছে।
    আব্বাকে নিশি বললো – আব্বা আমি এস এস সি পরিক্ষা দিতে চাই। আব্বা বললো পরিক্ষার আর ৫ মাস বাকি, তুমি পারবা?

    জি আব্বা ইনশাআল্লাহ।
    ” কিন্তু এখন তো রেজিস্ট্রিশন হয়ে গেছে, প্রাইভেট এ দিতে হবে”

    তাই দিবো।
    ভাইয়া বললো ” আমার এক ফ্রেন্ড আছে বোর্ড অফিস এ, আমি কাল কথা বলবো”
    রাত্রে ফোন এলো সুমন এর, ও বাংলাদেশ এ ফিরত এসেছে উনি জেনে ফেলেছেন, উনি ও বাংলাদেশ এ আসছেন।।

  • ভাবীর সংসার (পর্ব-২২)

    ভাবীর সংসার (পর্ব-২২)

    পলি বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে, আজ মনে হচ্ছে বাতাস টা অন্যদিনের তুলনায়, অনেক ঠান্ডা, সম্ভবত বৃষ্টি হতে পারে। কি সিদ্ধান্ত আসে, তাই নিয়ে একটু মন টা চিন্তায় আছে তার।

    জাহিদ এসে পিছনে দাঁড়ালো, পলি, কি করছিস?
    – না, কিছু না।
    – রিতা খালাম্মা গাড়ী পাঠিয়েছেন, উনার বাসায় যাওয়ার জন্য। আমার খুব লজ্জা লাগছে, আমাদের থাকার কি দরকার? আর থাকলে ভাইজানের বাসায় থাকতাম, বাসাটা খালি পরে আছে।
    – ভাইজান, চায়না, আমাদের জন্য আবার তার বন্ধ ঘর খুলতে, সে সপ্তাহে একদিন আসে, সেজন্য তার বাসা খোলার দরকার নাই।
    – এক কাজ করি, আমি আর নাহিদ চলে যাই।
    – আমি সত্যি করি বলি, আমাদের মুনা খালা আমাদের যে আদর করতেন, রিতা খালা সে-রকম একজন মানুষ।
    – তবুও….

    তারা চার ভাই-বোন যখন রিতা খালার বাসায় যাওয়ার জন্য গাড়ীতে উঠবে, তখন সাহেদা খানম বলছেন তোমাদের ট্রেন কখন?
    – খালাম্মা এখনো টিকেট করিনি।
    – টিকেট কনফার্ম করে আসবে, এখন গেলে কি আর পাবে?
    – দেখি খালা।
    – থাকলে, থেকে যাও আমার বাসায়। রিতার মেয়ের সামনে পরীক্ষা।
    – না, থাকবো না খালাম্মা, বাসেই চলে যাবো।
    – নিজের বাড়ী ঘরেই বাবা, সবচেয়ে শান্তি।
    – জি খালাম্মা।

    সাঈদ ঘর থেকে বেড়িয়ে বললেন কি রে তোরা নাকি খালাম্মার বাসায় যাচ্ছিস? বাসায় নিতাম, কিন্তু এমন বাজে অবস্থা হয়ে আছে, যে গিয়ে পরিষ্কার করতেই একদিন লাগবে। কাল সকালে কল দিস, খালার ল্যান্ড লাইন থেকে। তোর সাথে কথা আছে।
    – জি ভাইজান।

    জাহিদ গাড়ীতে উঠে চার রাস্তার মোড়ে এসে বললো, পলি-কলি, তোরা ফাইনাল পরীক্ষা ভালো করে দে, বারোশো টাকায় কি হয় তোদের?
    – কিসের বারোশো?
    – আমি এক হাজার আর ভাইজান দুইশো দেন।
    – হুম, হয় হয়।

    পলি সাথে সাথে চোখ দিয়ে ইশারা করে কলিকে চুপ থাকতে বললো।

    ড্রাইভার সাহেব, আমাদের এখানে একটু নামিয়ে দেন।
    – তুমি এখানে নেমে কি করবে?
    – না রে, যেতে ইচ্ছে করছেনা। বাড়ীর জন্য রওনা হবো।
    – এখন কি কোন বাস পাবে? রাত নয়টা বাজে প্রায়।
    – হয়ে যাবে এক ব্যবস্থা।
    – ট্রেনের টিকেট আর পাবেনা। কেমনে যাবে?
    – আহারে, পলি আমি ছেলে মানুষ, নাহিদ ও ছেলে মানুষ, ব্যবস্থা হবেই। তোদের একা যেতে সমস্যা নাই তো?
    – না, ড্রাইভার সাহেব এর সাথে খালার বাসায় আরও গিয়েছি।
    – মেজ ভাই?
    – আর কথা বলিস না পলি। এবার যা!

    কলি এবার বললো এতো রাতে…
    – একবার ব্যাখ্যা দিয়েছি আর কথা না। সাবধানে যাবি। আমি গিয়ে খালাম্মার বাসায় কল দিব।

    দুই বোনের চোখে পানি ছল ছল করছে, এই রাতের বেলা তাড়াতাড়ি রওনা হয়ে যাচ্ছে।হয়তো খালার বাসায় থাকতো জাহিদ শুধুমাত্র সাহেদা খানমের কথায় কষ্ট পেয়ে চলে যাচ্ছে। মন খুব অস্থির লাগছে দুজনের।

    রিতা খানম খুব বকছেন,কেন জাহিদ-নাহিদ কে রেখে আসলো। তিনি খাবারের সব আয়োজন করে রেখেছেন।

    কলি বললো খালা ইয়াশার পরীক্ষা এজন্য আর, ভাইয়া আসেন নি।
    – ইয়াশা নিজের রুমে পড়বে, ওরা আসলে ইয়াশার কি হবে?
    – আসবে মেজ ভাই আরেকদিন।

    দুই সপ্তাহে পরে, কলি বের হয়েছে খাতা কিনতে, তখন প্রফেসর সাহেব এই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। কলি কে দেখে থামলেন, হাতের ছাতা বন্ধ করে বললেন আরে মেয়ে আছ কেমন?
    – ভালো আছি স্যার।
    – আমার বউমা কেমন আছে?

    কলি হঠাৎ বলায় বুঝতে পারেনি, কলি বললো জি?
    – আমার পলি আম্মা আছে কেমন?
    – জি ভালো আছে।
    – আমার ছেলের পলি মায়েরে খুব পছন্দ হয়েছে। কিন্তু মা, তোমার ভাইজান আর খবর দিলেন না তো কিছু। সম্ভবত ব্যস্ত। আচ্ছা, তাড়াহুড়োর কিছু নেই, আমাকে একটু জানাতে বলবে।
    – জি।

    প্রফেসর সাহেব হন হন করে ছাতা খুলে হেঁটে গেলেন। লম্বায় পাঁভ্লচ ফিট তিন ইঞ্চির এই মানুষটি অত্যন্ত অমায়িক। আপার শ্বশুড় হলে মন্দ হয়না।

    কলি হলে ফিরছে তখন নিচে বললো আপনাদের চিঠি এসেছে বাড়ী থেকে। আপনি নিয়ে যান।

    কলি চিঠি নিয়ে রুমে এসে বললো আপা, তোর জন্য সুখবর।
    – কি?
    – চিঠি এসেছে বাড়ী থেকে। বিয়ে লেগেই গেল নাকি?
    – কি যে বলিস।
    – এই নে, পড়।

    পলি চিঠি পড়া শুরু করেছে।

    প্রিয় পলি,
    কেমন আছিস? আমরা ভালো আছি। এই চিঠি তোর জন্য। ভাইজান প্রফেসর সাহেবের ছেলেকে পছন্দ করেন নি। ছেলে শিক্ষক, সে তোকে খাওয়াতে পারবেনা। সাত ভাই, তেমন কোন সম্পত্তি নেই। ছেলের বাবার ঢাকার যায়গা নাকি সম্ভবত বুয়া। এইখানে একটা বাড়ী আছে। মা, বলেছেন তুই চিন্তা না করতে, আল্লাহ উওম ফয়সালাকারী, তিনি অবশ্যই তোর জন্য ভালো রেখেছেন। কলিকে আদর দিস।
    ইতি,
    জাহিদ।

    পলি চিঠি বন্ধ করেই, টেবিলে খাতা নিয়ে বসে গেল।

    কলি বললো কিরে আপা কি হয়েছে?
    – কিচ্ছু না। আজ কোন বার?
    – রবিবার। কি হয়েছে আপা?
    – প্লিজ তুই চুপ থাক, আমাকে একটু একা থাকতে দে।
    – মায়ের কিছু হয়নি তো?
    – এই নে, চিঠি। তুই দয়া করে বারান্দায় গিয়ে পড়। যা!

    পলি চিঠি লিখছে।

    প্রিয় মা,
    সালাম নিবে, মা, আমার টাকা পয়সা নিয়ে কোন আগ্রহ নেই। যে মানুষ টি শিক্ষিত, তার পরিবার শিক্ষিত, বংশ ভালো। তার কাছে বিয়ে হতে আমার কোন আপত্তি নাই। যদিও আমি মাত্র অনার্স ফাইনাল ইয়ারে কিন্তু, কত কত ক্লাস আমি আব্বার জন্য পড়তে পারিনি, সেটা তুমিই জানো। তাই, আমি চাই একটা শিক্ষিত পরিবারের বউ হতে। ঢাকায় বাড়ী এবং সম্পত্তির উপরে আমার কোন আগ্রহ নেই। আমি একজন ভালো মানুষ জীবনে চাই। মাগো বিবাহিত লোকের চেয়ে, টাকা কম হলেও আবিদ সাহেব বেশি ভালো। আমি বেহায়ার মতো বলছি, ভাইজান কে তুমি বলবে, জীবন আমার, সুতরাং বিয়ে যেখানে ঠিক হয়েছে সেখানেই দিতে। ফোন দিয়ে বলবে আজ ভাইকে, নয়তো চিঠি আসতে আসতে ব্জাইজান না করতে চলে যাবে।
    তুমি ভালো থেকো।
    ইতি,
    পলি।

    অতি দ্রুত সিঁড়ি নেমেই, পোস্ট করে হলে ফিরলো পলি। সে জানে এই কথা গুলি সে আরেকবার চিঠিতে পড়লে, চিঠিতে কাটাকুটি আসবে। কিন্তু এই কাটাকাটি বন্ধ করতে গিয়ে মনের কাটাকাটির রক্তক্ষরণ করে লাভ নেই।

    পলি সত্যি, এখন একজন ভালো মানুষ চায়, একদম আবিদের মতো ভালো মানুষ। পলি মায়ের চিঠি এবং ভাইজানের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা করছে….

    চলবে…

    আন্নামা চৌধুরী।
    ৩০.১২.২০২১

  • কালো বিড়াল (পর্ব-৩)

    কালো বিড়াল (পর্ব-৩)

    বিড়ালের লেজে কেমন যেন একটা ধারালো জিনিষ ছিলো যা দিয়ে নোমান সাহেবের হাত কেটে চিরচির করে রক্ত বের হতে লাগলো৷

    সুরাইয়া দৌড়ে গিয়ে কটন হেক্সিসল এসব নিয়ে এসে নোমান সাহেবের হাতের পরিচর্যা করতে শুরু করলেন৷ এদিকে লাবন্যের আবারও কাঁপিয়ে খুব জ্বর আসলো৷ জ্বরের ঘোরে সে আবল তাবোল বকছে৷

    দেখো দেখো আম্মু ওই যে দুইটা বাচ্চা কি সুন্দর করে খেলছে। আহারে কে যেন তাদের গলা চেপে বেঁধে দিয়েছে৷
    হঠাৎ সে লাফ দিয়ে উঠে তার মাকে জড়িয়ে ধরে সামনের দিকে হাত দেখিয়ে ভয়ে থর থর করে কাঁপছে আর বলছে, –

    আম্মু ওই যে দেখো ওই বিদঘুটে আন্টিটা আমাকে বলছে ছুরি দিয়ে নাকি আমাকে জবাই করে ফেলবে৷ আম্মু সে নাকি আমার রক্ত খাবে৷

    বলেই লাবন্য অজ্ঞান হয়ে গেলো৷ তার ঠোঁট নীল হয়ে গেছে৷ কপাল আর গা গরম৷ কিন্তু হাত পা বরফের মত ঠান্ডা৷
    মেয়ের এ অবস্থা দেখে সুরাইয়া মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরে হাউ মাউ করে কাঁদছে। কি হয়েছে আমার মামনীটার? এসব কি বলছিস তুই মামনী৷ এই যে আমি আছি না৷ কেউ তোকে কিছু করতে পারবে না৷ দেখ তোর দাদু আছে, আমি আছি, বাসার সবাই আছে৷ কেউ তোকে কিছু করতে পারবে না৷

    সব শুনে লাভলী বেগম এতক্ষনে বুঝে গিয়েছেন, তাঁর আদরের নাতনীর কি হয়েছে৷ তিনি তাড়াতাড়ি অযু করে এসে নাতনীর কানের কাছে কোরান শরীফ পড়া শুরু করলেন৷ নাতনীকে ফু দিচ্ছেন৷ কিছুক্ষনের মধ্যে লাবণ্য ঘুমিয়ে পড়েছে৷

    রাত তিনটা বাজে৷ লাবন্য খুব ঘামছে৷ লাবন্যের জ্ঞান ফিরেছে৷ সে একটু পানি খেতে চাইছে৷ যেই তার হাতে পানির গ্লাস দেয়া হলো, সে পানি দেখে চিতকার করছে, আমি রক্ত খাবো না৷ পানি খাবো৷ সুরাইয়া বেগম বললেন মাগো এটা পানি৷ তুই খা৷ ভুল দেখছিস৷ লাবন্য ভয়ে কাঁপছে আর বলছে না আম্মু, এটা পানি না আম্মু, এটা রক্ত৷

    এরই মধ্যে জানালায় ঠক ঠক করে কে যেন টোকা দিচ্ছে৷ লাভলী বেগম জিজ্ঞেস করলেন, কে? বাইরে থেকে জোরে জোরে নিশ্বাঃসের শব্দ শোনা যাচ্ছে৷ আবার শোঁ শোঁ শব্দ করছে৷ আবার নিশ্বাঃসের শব্দ৷ লাবন্য আর তার মা ভয়ে কাঁপছে৷ লাভলী বেগম জোরে জোরে কোরান শরীফ পড়ছেন৷ বাসার সবাই এসে দোয়া দরুদ পড়া শুরু করে দিলো৷ এই দোয়া দরুদ যতক্ষন চলে, শব্দ ততক্ষন বন্ধ থাকে, দোয়ার শব্দ কমে গেলে আবার ঠক ঠক, আবার নিশ্বাসের শব্দ৷

    এদিকে লাবন্য খুব চাইছে পানি খাবে৷ কোনো ভাবেই সে পানি খেতে পারছে না৷ উপায়ান্তর না দেখে সুরাইয়া আপেল কাঠতে গেলো৷ ছুরি দিয়ে সে হাত কেটে ফেললো। যতবারই আপেলে ছুরি চালায়, ছুরি হাতের উপরে এসে পড়ে৷ তবুও সে মেয়ের জন্য কোনো ভাবে এক টুকরো আপেল আনলো৷ লাবন্য এক টুকরো আপেল খেয়ে আবার ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়লো৷ ঘুমের মধ্যে আবারও সে প্রলাপ বকছে৷

    ওই দেকো আম্মু, ওই দেখ আম্মু, ওই যে ওই আন্টি৷ আমাকে মেরে ফেলবে৷ ওই আন্টি আমাকে মেরে ফেলবে বলছে৷ ঘুমের মধ্যে সে ছটফট করছে আর ঘামছে৷

    সবাই জোরে জোরে দোয়া পড়ছে, কোরান শরীফ পড়ছে, আর ফজরের আজানের অপেক্ষা করছে৷

    চলবে…

  • ভাবীর সংসার (পর্ব-২১)

    ভাবীর সংসার (পর্ব-২১)

    পলি এক প্লেট কাচ্চি বিরিয়ানি খেয়ে এখন কোল্ড ড্রিংক্স খাচ্ছে, বোরহানির স্বাদ পলির ভালো লাগেনা।
    কলি নিজের বোরহানির গ্লাস শেষ করে পলির গ্লাস হাতে নিয়েছে।

    নাহিদ আরাম করে দুই বোনের খাওয়া দেখছে। কি তৃপ্তি করে খাচ্ছে দুজনে। নাহিদের এই দৃশ্য খুব ভালো লাগছে।

    কলি বললো কিরে নিজের খাওয়া বাদ দিয়ে কি দেখিস?
    – তোদের দেখছি আপা।
    – আমাদের?
    – আরে, এমনি বললাম চা খাবি?
    – আজ রাতে মিল অফ দিতে হবে, যে খাওয়া দিয়েছি।
    – তাই?
    – হুম।
    – তুই আজ থেকে যা!
    – আমার স্যারের বাসায় আরেকবার যেতে হবে। আচ্ছা যুবায়ের খালুকে কি এখন অফিসে পাওয়া যাবে?
    – যেতে পারে, এক বারে ঘুরে যা।

    পলি বললো তাহলে এক্ষুনি যাবি?
    – না না, এখন না। তোদের নিয়ে বেড়ানো বাকি আছে।
    – আমরাও যাই খালুর অফিসে।
    – না, বিকালে যাবো। এখন অন্য কোথাও যাই।

    তিন ভাই-বোন রিকশা করে ঘুরছে, চানাচুর খাচ্ছে, ডাব খাচ্ছে, খুব আনন্দ করছে তিন জনে। নাহিদের পকেটে যাবার ভাড়া আর সামান্য খুচরা টাকা আছে। নাহিদ চিন্তা করেছে ভাড়া রেখে সব টাকা বোনেদের জন্য আজ খরচ করবে।

    বিকাল বেলা, যুবায়ের সাহেবের চেম্বারে নাহিদ বসে আছে। তিনি একটু নিচের ফ্লোরে গিয়েছেন অফিস বয়, দশ মিনিট অপেক্ষা করতে বলেছে।

    নাহিদ যুবায়ের সাহেবের টেবিল দেখছে, কি সুন্দর করে গোছানো, পিন পর্যন্ত আলাদা বক্স করে রাখা। টেবিলের এক কোনে, সতেজ ফুল রাখা। কত টা সৌখিন তিনি, বুঝা যায় তার অফিসের এই রুম দেখলেই।

    ঠিক দশ মিনিট পরে, যুবায়ের সাহেব রুমে ঢুকলেন।

    নাহিদ সালাম দিয়ে বললো, খালু আমি নাহিদ। সাঈদ ভাইয়ের ছোট ভাই।
    – ওয়ালাইকুম আসসালাম। কেমন আছ ইয়াং ম্যান?
    ,- ভালো আছি।
    – আমি একটু নিচের ফ্লোর ভিজিটে গিয়েছিলাম।
    – খালু, আমার একটা দরকারী কথা ছিল।
    – ইয়েস, বলো।
    – প্রফেসর শফিউল আলম, আমার স্যার। ফিজিক্স পড়ান, সম্ভবত আপনার ভার্সিটি সিনিয়র।
    – হ্যা, অনেক সিনিয়র কিন্তু খুবই ফ্রেংকলি কথা বলেন।
    – এখন আপনি কি আপার কথা, উনাকে বলেছিলেন। মানে, আপার বিয়ের কথা।
    – হ্যা, হ্যা। পলি এতে ভালো একটা মেয়ে। তুমি জানলে কেমনে?

    নাহিদ সব খুলে বললো।
    – ওহ, বেশ ভালো।
    – এখন কি আমি স্যারের সাথে কথা বলবো?
    – না, আমি কথা বলে নিচ্ছি। আমি সাঈদের সাথে আলাপ করবো। আর ছেলে চট্টগ্রাম থাকে, দেখতে আসার সময় তুমি উপস্থিত থাকবে।
    – জি খালু।
    – লাঞ্চ করেছো?
    – জি।
    -বাসায় চলে যাও, দুই তিন দিন থেকে যাবে।
    – আবার আসবো সময় থাকবো। আজ আসি, খালু।
    – বাসায় যাও সম্ভব হলে, আচ্ছা আল্লাহ হাফিজ।

    পনেরো দিন পরে, জাহিদ আর নাহিদ এসেছে শারমিনের বাবার বাসায়, আজ বিকেলে ছেলে পক্ষ দেখতে আসবে। জাহিদ-নাহিদ সব ধরনের নাশতার বাজার কিনে এনেছে। যাতে ভাবীদের সমস্যা না হয়।

    সাহেদা খানম পলিকে বললেন কি গো! তোমার কি শিক্ষক ছেলে পছন্দ হবে? তোমার তো আবার চয়েজ হাই।

    পলি কি বলবে বুঝতে পারছেনা। খালাম্মার অভ্যাস সবাইকে খুঁচিয়ে কথা বলা।

    রিতা খালা আসার সময় দুই ধরনের পিঠা, মিষ্টি নিয়ে এসেছেন তাদের সামনে দেওয়ার জন্য।

    প্রফেসর সাহেব, উনার বড় ছেলে, মেজ ছেলে, স্ত্রী এবং ছোট মেয়েকে নিয়ে এসেছেন।

    সাঈদ এসে সালাম দিয়ে বসলো।
    – বাবাজি আছেন কেমন?
    – জি ভালো আছি।
    – নাহিদ ওইদিন বলতে, তোমার বোন তাহলে সেদিনই আমি চিঠি লিখে দিতাম আমার আবিদের কাছে। তোমার বোন, সেখানেই আমার আর কিছু জানার দরকার নেই। বাবাজি মেয়ে কোথায়?
    – আসছে চাচা।
    – মেয়ে দেখার আগে, কিছু কথা বলি বাবা। আমার সাত ছেলে দুই মেয়ে। বড় ছেলে মাস্টার্স পাশ করে, এখন একটা এন.জি.ওর এরিয়া ম্যানেজার হসেবে আছে। আর যে ছেলে বিয়ে করবে সে শিক্ষক, তিন নম্বর ছেলে ইন্টার্নি করছে, মেডিকেলে। বাকিরা স্কুলে,কলেজে পড়ছে। আমি শিক্ষক মানুষ, এখানে একটা বাড়ী কিনেছি, টিন শেডের। আর ঢাকায় প্লট কিনেছি। এখন বাবা, মেয়েকে আনেন, সব বলে ফেললাম।
    – জি জি। আপনাদের ভালো লাগলে মেয়ে দেখান।

    পলির হাত-পা যেন কাঁপছে, কি হয় এই ভেবে! তাছাড়া এক্ষুনি বিয়ের জন্য ঠিক প্রস্তুত ছিল না সে।

    প্রফেসর সাহেব দেখেই বললেন আলহামদুলিল্লাহ! কন্যা আমার পছন্দ হয়েছে, বাবা আদিব তুমি ঠিক মতো দেখো, সম্ভব হলে আলাদা কথা বলো।
    – জি আব্বা।

    রিতা খানম সাথে সাথে পাশের রুমে নেওয়ার ব্যবস্থা করলেন।

    আবিদ শুধু বললো, আমি খুবই সাদামাটা একজন মানুষ, আপনার মধ্যে এক ধরনের মায়া আছে, সেজন্য মায়া পড়ে গিয়েছি আমি। আমার আপনাকে বিয়ে করতে সমস্যা নেই, শুধু ছয়/সাত মাস সময় দিতে হবে। নিজের একটু গোছানো আছে।
    – আমার সমস্যা নেই।
    – হাতের নখের খুব যত্ন করেন দেখছি।

    পলি সাথে সাথেই হাতের আংগুল লুকিয়ে ফেললো। কি অদ্ভুত ভাবে, তিনি নখ দেখছেন।

    আমার আর কিছু বলার নেই, আপনার কিছু জানার ইচ্ছা আছে?
    – আমার ও আর কিছু জানার নেই।
    – থ্যাংক ইউ।

    আবিদ সত্যি খুব সাদামাটা, চুল গুলি পালিশ করে সিথি করা। চোখে বড় ফ্রেমের চশমার। সাদা রঙের শার্ট পরা, শার্টের কলারের নিচের জায়গায় অনেক কালো হয়ে আছে৷ হয়তো ব্যাচেলর এজন্য সুন্দর করে ধুইতে পারেন নি। পলি ও ভাবছে সে অনেক কিছু পর্যবেক্ষণ করেছে, দেখছে।

    এক কেজি মিষ্টি নিয়ে আসায়, আইরিন-আয়মন খুব হাসাহাসি করছে। তারিন বলছে কি পলি আপা! এতো কিপটা কেন এরা?
    – জানিনা।
    – ভালো মিলছে। হাবা হাবা চেহারা।
    – কি?
    – কিছুই না!

    পলির রাগ লাগছে, এরা সত্যি কখনোই ঠিক হবেনা। সবকিছুতেই ভুল খোঁহে।

    সাঈদের খুব একটা পছন্দ হয়নি বোধহয়। কিছুই বুঝা যাচ্ছেনা। তিন ভাই গেইটের বাইরে দাঁড়িয়ে কি যেন পরামর্শ করছে।

    হাবা হলেও, সেও আবিদের মায়ায় পড়েছে। পলি তাদের সিদ্ধান্ত জানার জন্য অপেক্ষা করছে….

    চলবে…

    আন্নামা চৌধুরী।
    ২৬.১২.২০২১

  • নিশির প্রবাস (পর্ব-১৯)

    নিশির প্রবাস (পর্ব-১৯)

    আজ চারদিন নিশি টেক্সাস এ। কয় রাত যে পার হলো ও ঠিকমতো গুমায় না, ঘুমাতে পারে না ওর অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ এর কথা ভেবে। মরে যেতে ইচ্ছা করছে।
    মামি এসে বললো, নিশি চলো শপিং এ যাই, নরমালি শপিং এ যেতে ওর খুব ভালো লাগে, কিন্তু আজ ভালো লাগছে না। আম্মার কথা গুলি কানে বাজছে ( সুমন বার বার ফোন দিয়ে আমাদের কাছে নিজের ভুলের জন্য মাফ চাইছে, তূই একটা বার ওর সাথে কথা বল, এই রকম প্রতিটা পরিবার এ হয়, ও তো মাফ চাইছে, ভুল তো মানুষ ই করে। মানুষ কে, আত্মীয় দের আমরা মুখ দেখাতে পারবো না, নানান জন নানান কথা বলবে)
    ও রেডি হতে লাগলো, ও তো কাঠের পুতল,ওর নিজের কোন ইচ্ছা থাকতে নেই। মামি ওকে নিয়ে বের হলো, মামি ড্রাইভ করছে, ওকে খুব চুপচাপ দেখে মামি জিজ্ঞেস করলো ” তোমার মন কি খুব বেশি খারাপ? ” ও কোন উত্তর দিলো না, চোখ ভরে গেলো পানিতে। মামি বললো ” তুমি কোন চিন্তা করো না নিশি তুমি যা চাইবে সেটাই হবে।
    “ও কি চাইবে, ওর ফ্যামিলি তো ওকে চাইছে না, ও কিছু বল্লো না। মামি অনেক কিছু কিনলো, তারপর রেস্টুরেন্ট এ গেলো ওকে নিয়ে লাঞ্চ করলো। বেশিরভাগ সময় ই নিশি চুপচাপ ছিলো। বিকালে বাসায় এসে শুনলো সুমন এসেছিলো এই খান কার দুই তিন জন বাংগালি নিয়ে, ( উনারা এখানকার বাংগালি কমিউনিটির প্রেসিডেন্ট, সেক্রেটারি, এবং বলেছে ( উনারা আমার বউ কে জোর করে আটকে রেখেছে, আমার সাথে দেখা করতে দিচ্ছে না, কথা বলতে দিচ্ছে না) এইসব শুনে নিশির মরে যেতে ইচ্ছা করছিলো। মামারা নিশির জন্য কতো অপদস্থ হচ্ছে। ও রুম বন্ধ করে অনেক কাদলো, আল্লাহ আমাকে এই বিপদ থেকে উদ্ধার করো। সন্ধায় মামি এসে ওকে জোর করে নিয়ে গেলো ড্রইং রুম এ। ” নিশি যারা এসেছিলো সেই ভাবিদের সাথে আমি কথা বলেছি, সব সত্যি ঘটনা খুলে বলেছি, তুমি এটা নিয়ে ভেবো না, অই ভদ্রলোক কারো কাছ থেকে আর কোন হেল্প পাবে না”। মামাকে খুবই চিন্তিত মনে হলো। নিশি বললো- আমি একটু আব্বার সাথে কথা বলতে চাচ্ছি। মামা বললেন
    ” আমি আজ কথা বলেছি, বলেছেন তোমাকে পাঠিয়ে দিতে, তারপর ও তুমি কথা বলতে চাইলে বলতে পারো” – না মামা, আমাকে প্লিজ বাংলাদেশ এ পাঠিয়ে দিন। আব্বা রাতে ফোন করলেন ” নিশি মা তুমি আসো, তারপর দেখা যাবে তুমি আবার যাবা কি যাবা না, এটা নিয়ে আর কোন কথা নেই”। মামা ফোন নিয়ে বললেন
    ” ও একা একটা বাচ্চা মেয়ে এখান থেকে যে ফ্লাইট যায় দুই জায়গায় ফ্লাইট চেঞ্জ করতে হয়, ওয়াশিংটন থেকে যে ফ্লাইট যায় সেটা লন্ডন এ একবার চেঞ্জ হয়, ওয়াশিংটন থেকে ফ্লাইট ধরতে হবে।” আব্বা বললেন ” আমার মেয়ে এখন তোমার জিম্মায় আছে, তোমার দায়িত্ব কিভাবে কি করবা, আমি টিকেট এর টাকা তুমি যেখানে বলবা সেখানে দিয়ে দিবো”। নিশির প্রচন্ড খারাপ লাগছে, কি একটা ঝামেলায় পড়ছে উনারা নিশির জন্য। ওর কপাল টা এইরকম কেনো? আল্লাহ ওর ভাগ্যটা এতো খারাপ কেন করলো!!! কিভাবে কি করা যায় তাই নিয়ে মামা মামি কথা বলছে, ওর অসস্থি লাগছে, লজ্জা লাগছে উনাদের এই ঝামেলায় ফেলার জন্য।
    পরদিন বিকালে মামি বল্লো “কাল ভোরে তোমার মামা তোমাকে ওয়াশিংটন এয়ারপোর্ট এ নিয়ে ওখান থেকে বাংলাদেশ এর ফ্লাইট এ তুলে দিবে”।
    রাত্রে মামি ওর লাগেজ গুছিয়ে দিলো, সেদিন মার্কেট থেকে যা যা কিনেছিলো প্রায় সব ই নিশির জন্য। ” এই কয়দিন তুমি ছিলা আমার সময় গুলি অনেক সুন্দুর কেটেছে, সম্ভব হলে তোমাকে আরো কিছুদিন রেখে দিতাম, কিন্তু অই লোক যেভাবে ঝামেলা করছে তাই সম্ভব হলো না, তোমাকে অনেক মিস করবো, যদি কপালে থাকে আবার আমাদের দেখা হবে” নিশি মামি কে জড়িয়ে ধরে বললো – মামি আপনারা যা করেছেন, আমার মনে হয় না আপন মামা মামি ও করে, আমি সারাজিবন আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ থাকবো, আমার কোন ভুল হলে আমাকে মাফ করে দিয়েন। মামি পরম আদরে নিশিকে জড়িয়ে ধরলো।
    খুব ভোরে নিশি বিদায় নিলো মামা ড্রাইভ করছে, নিশি মনে মনে দোয়া দরুদ পড়ছে। মামা এম্নিতে ও কথা কম বলে। এয়ারপোর্ট এ নামানোর সময় নিশির হাতে মামা ১০০ ডলার দিয়ে বললো,
    “এটা রাখো, যদি লাগে। এখান থেকে বের হওয়ার সময় তোমাকে কিছুই জিজ্ঞেস করবে না। লন্ডন এ ৯ ঘন্টার ট্রানজিট, এয়ারপোর্ট থেকে বের হবে না, ইত্যাদি আরো অনেক কিছু বুঝিয়ে দিলো।
    চেক ইন করে নিশি অপেক্ষা করছে। দুই ঘন্টা পর ফ্লাইট, অনেক ফোন বুথ, ভাবলো ওর কাছে কিছু কয়েন আছে, সুনিল কে একটা ফোন করে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত।
    আরিফ এর কথা অনেক বার মনে পড়েছে, কিন্তু মামা মামি কি মনে করে তাই ফোন করে নাই।
    আরিফ কে একটা ফোন করবে।


    চলবে…

  • কালো বিড়াল (পর্ব-২)

    কালো বিড়াল (পর্ব-২)

    লাবন্য ভীষণ লক্ষি মেয়ে৷ সে জেঠিমার কথায় ফিরে যাচ্ছিলো, এমন সময় সে বিড়ালটা খুব জোরে মেয়াও বলে একটা চিতকার করে উঠলো। সে ভাবছে কি করবে। আবার পেছন দিকে তাকিয়ে দেখে গাছ থেকে ধুম করে ভারি কালো কি যেন একটা কিছু পড়ে গেলো৷ সে ভেবেছে বিড়ালটা পড়ে গেছে৷ সে যেই না দৌড়ে যাবে, এমন সময় তার ফুফাতো বোন লাইলী লাবন্য আপু লাবন্য আপু বলে তাকে হাত ধরে টেনে ঘরের ভেতরে নিয়ে গেলো৷ তার মনটা খুব খারাপ হয়ে গেলো৷ সন্ধ্যায় সবাই মিলে ক্যারাম খেলবে বলে লাবন্য নতুন ক্যারামবোর্ড আনিয়েছে, গ্রুপ গ্রুপ করে কতো কি খেলার আয়োজন। কিন্তু সে আর খেলায় মন দিতে পারছে না৷

    যখনই সে দাদার বাড়ী আসে সে সবাইকে মাতিয়ে রাখে৷ বড় জেঠা-জেঠি, দাদা-দাদু, চাচা-চাচী, দুই ফুফা-ফুফু সবার আদরের৷ বছরে একবার করে ডিসেম্বর মাসে তারা সবাই বাড়ী আসে৷ অনেক হই হুল্লোড় করে। বাড়ীটাকে মাতিয়ে রাখে৷

    রাত ৯ টার দিকে তার প্রচন্ড জ্বর সহ মাথা ব্যাথা শুরু হলো৷ তারপর শুরু হলো অসহ্য পেট ব্যাথা৷ ঠোঁট মুখ নীল হয়ে আসছে৷ সবাই লাবন্যকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে৷ রাত ১২ টার দিকে শুরু হলো রক্ত বমি৷ বেশ কিছুক্ষন রক্তবমি করে লাবন্য ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়লো৷ সবাই গিয়ে শুয়ে পড়লো৷ কিন্তু লাবন্যের মা (সুরাইয়া) আর দাদু (লাভলী বেগম) ওর পাশে বসে সকাল হওয়ার অপেক্ষা করছে৷

    এদিকে বাইরে একটা বিড়াল খুব চিতকার করছে৷ লাবন্যের দাদু জানালার পাশ থেকে লাঠি নিয়ে বিড়ালটাকে মারবে বলে যেই মাত্র জানালাটা খুললো,শনশন করে বাতাসের সাথে সেই কালো বিড়ালটা লাফ দিয়ে লাবন্যর গায়ে এসে পড়লো৷ বিড়ালটা লাবন্যের গায়ের উপর উঠে তার চুলে কি যেন খুঁজছে৷ বিড়ালটা ঢুকার সঙ্গে সঙ্গে পুরো ঘর প্রচন্ড গন্ধে ভরে গেলো৷ সে গন্ধে সুস্থ্য মানুষের শ্বাস নেয়া অসম্ভব৷ বিড়ালের এ অবস্থা দেখে লাবন্যের দাদু অনেক ভাবে চেষ্টা করছে বিড়ালটাকে সরাতে লাবন্যের কাছ থেকে৷ এরই মধ্যে লাবন্যের ঘুম ভেঙে গেলো৷ সে বিড়ালটাকে দেখে অবাক হয়ে গেলো৷ সে চেষ্টা করলো বিড়ালটাকে কোলে নিতে৷ কিন্তু কোনো ভাবেই পারছিলো না৷ বিড়ালটা শুধু ছুটোছূটি করছে, আর বারবার লাবন্যের চুলের উপর লাফ দিয়ে দিয়ে উঠছে৷ কোনো ভাবেই থামানো যাচ্ছে না৷ এবার বিড়ালটা লাবন্যের হাতে তার নখের আঁচড় দিলো৷ সেখান থেকে চিরচির করে রক্ত বের হতে লাগলো৷ বিড়ালটা নাক দিয়ে শুঁকে জিভ দিয়ে সে রক্তগুলো চেটে নিলো৷ সুরাইয়া এবং লাভলী বেগম কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলেন না কি করবেন তারা৷ লাঠি দিয়েও মারতে পারছিলেন না কারন লাবন্যের গায়ে বাড়ি পড়বে৷ এদিকে বিড়ালের আঁচড় খেয়ে এবার লাবন্য একটু খেপেই গেলো বিড়ালটার উপর৷ সে হাত দিয়ে অনেক কষ্টে ধরে বিড়ালটকে ছুড়ে মারলো জানালার দিকে৷ বিড়ালটা ছিলো অনেক ভারী৷ বুদ্ধি করে লাভলী বেগম বিড়ালটাকে জোরে ধাক্কা দিয়ে জানালা বন্ধ করতে গিয়েই বিড়ালের লেজ জানালার চিপায় আটকা পড়ে যায়৷ আর বিড়ালটা অনেক জোরে চিতকার করতে থাকে৷ লাভলী বেগম কোনো ভাবেই জানালা আর খুলছেন না৷ বিড়ালের চিতকারে বাড়ির সবার ঘুম ভেঙে গেলো৷ সবাই দৌড়ে আসলো কি হয়েছে তা দেখতে৷ রুমে ঢুকে প্রথমে গন্ধে সবাই নাক চেপে ধরলো৷ লাবন্যের বাবা নোমান সাহেব এসে জানালাটা একটুখানি ফাঁকা করে বিড়ালের লেজটা কোনোভাবে বের করেই জোরে টান দিয়ে ছিটকিনি আটকে দিলো৷ কিন্তু বিড়ালের লেজে কেমন যেন একটা ধারালো জিনিষ ছিলো যা দিয়ে নোমান সাহেবের হাত কেটে চিরচির করে রক্ত বের হতে লাগলো৷

    চলবে…

  • কালো বিড়াল (পর্ব-১)

    কালো বিড়াল (পর্ব-১)

    বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো৷ লাবন্য পুকুর ঘাটে বসে বর্সি দিয়ে মাছ ধরছিলো সেই দুপুর তিনটা থেকে৷ বেশ কিছু পুটি আর তেলাপিয়া মাছ ধরেছে৷ লাবন্যর বয়েস ১৩/১৪ তার সাথে আছে তার বড় ফুফাতো বোন লতা আর তারই কাছাকাছি বয়েসি চাচাতো ফুফাতো ভাইবোন ৩/৪ জন, আর আশ পাশের বাড়ীর কয়েকজন৷

    বড় ঘর থেকে লাবন্যের জেঠি মা ডাকাডাকি করছে, সবাই ঘরে চলে এসো৷ সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে৷ এ সময় বাইরে থাকা উচিৎ নয়৷ খারাপ বাতাস এসময় ঘুরোঘুরি করে৷ সবাই ঘরে যাও….এসব বলতে বলতে উনি কাজের বুয়াকে দিয়ে হাঁস মুরগী গুলোকে তাদের ঘরে ঢুকাচ্ছেন। আর জোরে জোরে বলছেনঃ লাবন্য, ও লাবন্য তোর চুলটা বেঁধে নে৷ এতো বড় চুল ছেড়ে ঘুরে বেড়াসনে মা৷ যা ঘরে যা৷

    হঠাৎ লাবন্য লক্ষ্য করলো দূরে একটা কুচকুচে কালো বিড়াল বসে আছে একটা কামরাঙ্গা গাছের নীচে। বিড়ালটা খুব নাদুস নুদুস৷ ততোক্ষনে মাছ ধরা শেষ৷ লাবন্য ভাই বোন দের সাথে হাসি গল্প করছে আর মিষ্টি মুড়ি খাচ্ছে৷

    আবার জেঠি মা বললো, (আদর করে কখনও কখনও জেঠি মা তাকে রূপ্সি বলে ডাকতো)। রূপ্সি….. তোর চুল বেঁধে নে৷ চুল বেধে নে৷ তোকে না বলেছি চুল না বেঁধে গাছ তলায় যাবিনে…খবরদার, তোর ওই খোলা চুলে কামরাঙ্গা গাছের কাছে যাবি নে৷ ওদিকে একটা খারাপ জিনিস আছে৷ চলে আয়৷ ঘরে চলে আয়৷

    জী…… জেঠি মা৷ এইতো এক্ষুনি চুল বেঁধে নিচ্ছি৷

    বলেই সে তার কোমর সমান চুলটা ঝটপট খোপা করে নিলো৷

    আর মিষ্টি মুড়ি খেতে খেতে সে বিড়ালটার দিকে এগিয়ে গেলো কামরাঙ্গা গাছের নীচে৷ সেখানে গিয়ে সে বিড়ালটাকে কাছে ডাকলো, চু, চু, চু করে৷ বিড়ালটাও কাছে এলো৷ সে মুটভরা মিষ্টি মুড়ি দিলো৷ বিড়ালটা গপ গপ করে খেয়ে নিলো৷ যেন আরও খেতে চাইছে তাই লাবন্যের মুখের দিকে তাকাচ্ছে৷৷ লাবন্য দেখছে, লক্ষ্য করছে বিড়ালটার আচরন অন্য রকম৷ সে খুব মজা পেলো৷ সে আরো মুড়ি দেবে বলে পুকুর ঘাটে ফিরে এসে দেখে সবাই ঘরে চলে গেছে৷ এখন বিড়ালটার জন্য তার খুব মায়া লাগছে৷ সে পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখে বিড়ালটা নেই৷ সে আবার পেছনের দিকে যাবে বলে যেই পা বাড়ালো, পেছন থেকে জেঠি মা তাকে ডাকলোঃ মা এ সময়ে এতো গাছ গাছালির দিকে যাস নে। আয়, ঘরে আয়।

    চলবে…