Tag: গল্প

  • শারমিন (পর্ব-৩)

    শারমিন (পর্ব-৩)

    ঠিক দশটায় পরীক্ষা শুরু হয়ে গেল। শারমিনকে পরীক্ষার হলে দিয়ে পল্লব নুরু মামার চায়ের দোকানে চলে এলো। একটা সিগারেট আর এককাপ চায়ের অর্ডার দিয়ে বেঞ্চে বসে পরলো।

    মামা একা কেন, আর সবাই কই?
    -আছে,সবাই ক্যাফেটেরিয়ায় আর স্টলে। আমিও চা খেয়ে চলে যাব।
    চায়ে চুমুক দিয়ে মনটা আনন্দে ভরে গেল পল্লবের। কেন এমন খুশি লাগছে আজ! যা দেখে সব ভাল লাগছে। বৈশাখের কাঠফাটা রোদে ঘুরতেও ভাল লাগছে।

    ট্রান্সপোর্ট থেকে হেটে হেটে ক্যাফেটেরিয়ায় চলে এলো। নীহারদা, নিশানদা,কন্ঠি, মুনিরা সবাই এসে ক্যাফেটেরিয়ায় জড়ো হয়েছে। একটায় পরীক্ষা শেষে ওরা মিছিল করবে। পল্লবকে দেখে মানস এগিয়ে এলো। মানস কুষ্টিয়ার ছেলে। নৃবিজ্ঞানে ওর সাথেই পড়ে। খুব গুছিয়ে কথা বলে।চেহারা বাংলার পাঁচ, তবে কথা বলা আর ওর হাতের লেখা দেখলে যেকোন মেয়ে ওর প্রেমে পরবেই। ছাত্র ইউনিয়নের সবগুলো চীকা ওরই মারা।

    এই পল্লব, যা শিঙাড়া আর চা নিয়ে আয়। খিদেয় পেট চোঁচোঁ করছে।
    -টাকা দে।পকেট খালি দোস।
    গুল মারার আর জায়গা পাস না! যা তাড়াতাড়ি।
    উপায় না পেয়ে দু’প্লেট শিঙাড়া আর দুকাপ চা পরিমলকে অর্ডার দিয়ে এসে মানসের সামনের চেয়ারটা টেনে পল্লব বসতে বসতে বললো,
    আজকে মিছিল না করলে হয় না?
    -মাথা খারাপ! নতুন ছাত্র -ছাত্রী আসবে।ওদের শুভেচ্ছা জানাতে হবেনা!
    পল্লবের ভাললাগা মনটা হঠাৎ বিষাদে ভরে গেল। একটা সুন্দর অবয়ব বারবার মনের আয়নায় ভেসে উঠছে। একটা সুন্দর মিষ্টি কন্ঠ রিনঝিনিয়ে কথা বলছে।
    -চল, মিছিল শুরু হয়েছে।
    মানসের কথায় বাস্তবে ফিরে এল পল্লব। সবাই মিছিল নিয়ে ক্যাফেটেরিয়া থেকে প্রথমে সোশ্যাল সায়েন্স, সুপারিবাগান হয়ে কলাভবনে যখন গিয়ে মিছিল শেষ হলো তখন সব পরীক্ষার্থী হল ত্যাগ করেছে।
    পল্লব দৌড়ে গেল ২০৭ নম্বর রুমে। মনে আশা ছিল শারমিন হয়তো অপেক্ষা করছে। খালেদ স্যার ওকে দেখে বললো,
    -পরীক্ষার হলে কি করছিস?
    না, মানে, আমার কাজিন পরীক্ষার্থী…
    -যা ভাগ। ওরা সবাই বিশ মিনিট আগেই চলে গেছে।

    পল্লব কলাভবন ছেড়ে প্রান্তিক গেটে চলে এলো। এখান থেকেই সবাই ঢাকার বাসে উঠে। শারমিনের দেখা হয়তো এখানেই পাবে। চারটা বেজে গেল। পরীক্ষার্থী সবাই চলে গেছে। একটা রিক্সা নিয়ে সালাম বরকত হলে চলে গেল পল্লব। আবুলের ক্যান্টিন বন্ধ করছে। খাবার শেষ।

    নাজিরের দোকানে গিয়ে চা পাউরুটি আর কলা খেয়ে খিদে নিবারন করলো।সিগারেট টানতে টানতে নিজের রুমে এসে যখন ঘুমিয়ে পরলো তখন আসরের আজান হয়ে গেছে।

    রাজ্যের একরাশ বিষাদে ঘুমিয়ে গেল পল্লব। তখনও ওর বুক পকেটে শারমিনের লেখা সেই কাগজের টুকরাটি যেখানে ওদের বাসার ফোন নম্বর আর ওর রোল নম্বর মুক্তার মত ঝলঝল করছে।

    চলবে…

  • শারমিন (পর্ব-২)

    শারমিন (পর্ব-২)

    অনেকদিন হলো তবুও মনেহয় এইতো সেদিন। এপ্রিলের এগারো তারিখে ছিল জাহাঙ্গীরনগরে এডমিশন টেষ্ট। সবকিছুই শারমিনের এখনও মনে আছে। খুব সকাল সকাল বাসা থেকে রওয়ানা দিল জাবি’র উদ্দেশ্যে। সকাল দশটায় পরীক্ষা শুরু। নয়টার ভিতরেই পৌছে গেল।এত মানুষ!! ভীড়ে পায়ে কি যে ঠোকাঠুকি অবস্থা। ডেইরী গেটে বিভিন্ন জেলা সমিতির ব্যানারে দোকান খুলে ছাত্র -ছাত্রীরা বসে আছে। বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের স্টলও আছে। আছে বিভিন্ন বিভাগের স্টল। আছে চায়ের স্টল থেকে শুরু করে রকমারি কসমেটিকসের দোকান। যেন মেলা বসেছে। চারিদিকে উৎসব উৎসব ভাব।

    শারমিন ছাত্র ইউনিয়নের স্টলে ঢুকে পরলো। বেশ কয়েকজন কর্মী বসে আড্ডা দিচ্ছে। ছিপছিপে একহারা বাবরিওয়ালা একটা ভাইয়ার কাছে গিয়ে এডমিট কার্ডটা দিয়ে কোথায় ওর সীট পরেছে জানতে চাইলো। ভাইয়াটি সীটপ্লান দেখে বললো কলা ভবনের ২০৭ নম্বর রুমে এবং কিভাবে যেতে হবে বলে দিল। শারমিন কাছুমাছু করে দাড়িয়েই রইলো দেখে ভাইয়াটি জানতে চাইলো, কোন সমস্যা আছে কিনা! শারমিন বললো, আমিতো কিছুই চিনি না। কেমনে যাব?

    ভাইয়াটি তখন একটি ছেলেকে ডেকে বললো,পল্লব তুমি ওকে কলা ভবনের ২০৭ নম্বর রুমে দিয়ে এসো। শারমিন সবার ব্যবহারে মুগ্ধ হয়ে গেল।

    যেতে যেতে ওদের কিছু কথা হলো।

    তোমার নাম কি?
    -শারমিন।
    বাড়ি কোথায়?
    -আরামবাগ
    কোথায় পড়াশোনা করেছো?
    -আইডিয়াল স্কুল ও কলেজে
    কোন বিভাগে?
    -সায়েন্স
    তোমাদের বাসায় ফোন আছে?
    -কেন?
    যদি থাকে তবে আমি তোমাকে রেজাল্ট জানাতে পারব। আমার নাম পল্লব। আমি ইকোনোমিক্সে দ্বিতীয় বর্ষে পড়ি। তুমি ভর্তি হতে পারলে আমি হবো তোমার এক বৎসরের সিনিয়র।
    -ফোন আছে। আমি আপনাকে রোল নম্বর ও ফোন নম্বর দিচ্ছি। আপনি জানালে আমার খুব উপকার হবে।

    কথা বলতে বলতে ওরা কলা ভবনের ২০৭ নম্বর রুমে চলে এলো। শারমিন ওর রোল নম্বর ও ফোন নম্বর পল্লবকে দিল। পরীক্ষার পরে ওর সাথে দেখা করবে বলে পল্লব বিদায় নিলো।

    চলবে…

  • শারমিন (পর্ব-১)

    শারমিন (পর্ব-১)

    আজ খুব সকাল সকাল শারমিন ঘুম থেকে উঠেছে। অনেকদিন সকালবেলা উঠা হয় না।হাতমুখ ধূয়ে ব্যালকনিতে দাড়িয়ে হঠাৎ মনটা ভাল হয়ে গেল। কি সুন্দর মৃদুমন্দ বাতাস! বাসার সামনের শিউলি ফুলের গাছটা নীচে কি অপূর্ব সুন্দর সাদা চাদর বিছিয়ে আছে। আশ্বিনের এই সুন্দর সকাল যেন জানান দিচ্ছে মায়ের আগমনী বার্তা।

    আজ আমার মেয়ে বাসায় আসবে,ভাবতেই শারমিনের মনটা এক অনাবিল আনন্দে ভরে যায়। শারদীয় পূজার ছুটি শুরু হয়ে গেছে। শারমিনের কলেজ গতকাল থেকেই ছুটি হয়ে গেছে। পনেরো দিনের ছুটি। বেশ লম্বা সময়। তবে এবারের ছুটিটা খুব ছোট মনে হচ্ছে শারমিনের। তবুও মন্দের ভাল। ঋতুকে আনতে সেই ভোররাতে তমাল গিয়েছে বিমান বন্দরে। সাড়ে চারটায় প্লেন ল্যান্ড করবে। সবকিছু ফর্মালিটিজ শেষ করে বাসায় আসতে আসতে আটটা বেজে যাবে। এখনও হাতে দুই আড়াই ঘন্টা সময় আছে। কতদিন পরে মেয়েকে দেখবে, ভাবতেই কেমন আনমনা হয়ে পরে শারমিন।

    ঊনিশ না পেরোতেই শারমিনের বিয়ে হয়ে যায়। বর তমাল এফআরসিএস করার জন্য পাড়ি জমায় বিলেতে। একা শারমিন কি করবে! শেষে ভর্তি হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শনে। শুরু হয় নতুন জীবন। প্রকৃতিপ্রেমী শারমিনের কাছে মনেহয়, এইতো জীবন। আহা জীবন!!!

    চলবে…

  • শারমিন (পূর্বকথা)

    শারমিন (পূর্বকথা)

    শারমিনের যখন বিয়ে হয় তখন কতই বা ওর বয়স! টিনএজ ও পেরোতে পারেনি। হঠাৎ করেই বিয়ে হয়ে গেল। তমাল এফআরসিএস করতে বিলেতে যাবে। এমন সুপাত্র বাবা হাতছাড়া করতে চাইলেন না। মাসের শেষ বিষুদবারে বিয়ের একটা ভাল দিন দেখে পাকা কথা দিয়ে দিলেন। পন হিসেবে মাত্র দুই! লাখ টাকা। এমন পাত্রের জন্য এটা কিছুই না। আর শারমিনটাও কেমন! কোন প্রতিবাদ নাই। দিব্যি রাজি হয়ে গেল!

    আমরা সারারাত খেটে কলাপাতা, নারিকেল পাতা আর বাশের চাটাই দিয়ে বিয়ে বাড়ির তোরন সাজিয়ে ফেললাম। গেটের কাছে গুঁজে দিলাম একগুচ্ছ লাল গোলাপ। সেটা অবশ্য মমিনুদ্দীদের বাড়ি থেকে চুরি করা। সে আর এক কাহিনী।

    গেটের ছবিটা তুলে রেখেছিলাম। এতদিনেও স্মৃতিটা রয়ে গেছে!

    চলবে…

  • রুপার মনের আয়না

    রুপার মনের আয়না

    রূপা বারান্দায় দাঁড়িয়ে বাহিরে তাকিয়ে দেখছে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে আছে। মনে হচ্ছে কিছু পরেই বৃষ্টি শুরু হবে। ঝুম বৃষ্টি রূপার দারুন ভালো লাগে আর মনের ভাবনা গুলোও মনের অলি গলিতে হোঁচট খায়। রূপা বাসায় একা আজ। ঘরের কাজ ও অনেক্ষন আগেই শেষ হয়েছে।

    ছাদে যেতে হবে এবং বৃষ্টিতে ভিজতেই হবে আজ। খুব ইচ্ছে করছে বৃষ্টিতে ভিজতে। রুপা ছাদে চলে এলো বৃষ্টির অপেক্ষা। সেই ফাঁকে ছাদের গাছ গুলোর সঙ্গে থাকলে মন্দ হয় না। সকালে ফোঁটা ফুল গুলো অনেকটা নেতিয়ে পড়েছে। তবুও ফুলগুলো দেখে রূপার ভালোই লাগছে।

    ছাদের এক কোনে প্রতিদিন বিভিন্ন রকমের পাখি আসে। তার অনেকটাই কারন হলো রূপা পাখিদের মাঝে মাঝে খাবার দেয়। পাখিদের দেখতে রুপার বেশ ভালো লাগে। বিশেষ করে ঘুঘু পাখি গুলো দেখতে দারুন লাগে। দূর থেকে রুপাকে দেখেই উড়ে যায়। শালিক , টুনটুনি, দোয়েল , কাক আসে। তবে কাক দেখলেই রুপার বিরক্ত লাগে।

    বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো। রূপা অনেক দিন পরে ভিজছে। সেদিনের অনিমেষের বকা খাওয়ার কথা মনে পরে গেলো। হোক না আবার জ্বর তবুও রূপা ক্ষনিকের আনন্দ টুকু উপভোগ করতে চায়। বৃষ্টি আরো যে বেড়েই চলেছে। রূপার মনে এক অন্য রকম ভালোলাগা কাজ করছে। এই ভালোলাগা টুকুই রূপা ধরে রাখতে চায় তার মনের আয়নায়।

    লীনা ফারজানা
    ৭ সেপ্টেম্বর,২০২১ইং

  • কৌতুহল রোজনামচা

    কৌতুহল রোজনামচা

    ফেব্রুয়ারি মাসের ১৫ তারিখ খুলনা যাবার উদ্দেশ্যে বাস স্টপে যাই। একদিন আগে টিকিট কাটার আগেই বলে নেই সিট জানালার পাশে দিতে হবে এবং পাশের সিট যেনো একজন মহিলার হয়।

    যথা সময়ে বাসে উঠে আমার সিটে একটা ব্যাগ দেখে সরিয়ে বসে পড়লাম। কয়েক মিনিট পরে একটি ছেলে এসে বললো- আপু, এই পাশে বসবেন? আমি বিরক্ত হয়ে বললাম, এটাই আমার সিট। আমি সব সময় জানালার পাশের টিকিটই কাটি।

    কিছু না বলে আমার পাশে বসে পড়লো। আমি অবাক হয়ে বললাম- এটা আপনার জায়গা? ছেলেটি হ্যাঁ বললো। আমি বুঝতে পারলাম কোনো মহিলাকে না পেয়ে এই ছেলেটাকে দিয়েছে।

    বাস ছেড়ে দিলো। আমি মাস্ক সরিয়ে নিঃশ্বাস নিচ্ছিলাম। কয়েক মিনিট পরেই ছেলেটি প্রশ্ন শুরু করে দিলো। আমি কি করি ,আমি কোথায় যাবো, কোথায় থাকি, এমন অনেক প্রশ্ন। আমি বিরক্ত হয়ে বর আছে, ছেলে আছে দশম শ্রেণীতে পড়ে বলে দিলাম। ছেলেটির বয়স সম্ভবত ২৪ বছরের মতো। আমি ব্যাগ থেকে ফোন বের করে ফেবুতে ঢুকলাম।

    ছেলেটি হাত পা ছেড়ে বসে আছে। আমি যে বিরক্ত হয়ে যাচ্ছি বুঝতেই পারছে না। ঠিকভাবে বসতে পারছি না। এই প্রথম এমন অবস্থায় পড়েছি। যখনই একা যাবো কোনো মহিলাকে পাশে পাবই। এই প্রথম উল্টোটা হলো। কিছুই করার নেই চার ঘণ্টা পথ কষ্ট করেই যেতে হবে।

    ছেলেটি কিছুক্ষন পরে বললো, “আমি আর্মিতে জব করি। গোয়েন্দা বিভাগে আছি। খুলনা থেকে এখানে আসামী ধরতে এসেছি। গতরাতে মাইক্রো করে ৮ জন এসেছিলাম। আসামী সহ ৯ জন হলো। বসার জায়গা সমস্যা হওয়ায় তাই আমি আজ বাসে যাচ্ছি। আপনাকে দেখে মনে হয় না আপনার ছেলে দশম শ্রেণীতে পড়ছে। আপনার কথা এখনো আমার বিশ্বাস হচ্ছে না।” আমি কি তার কথা শুনতে চেয়েছি?

    আমি চুপ করে আছি ফেবু তে মনোযোগ দেয়ার চেষ্টা করছি কিন্তু পারছি না। বললো- আপনি ফেবু চালান? বললাম, হ্যাঁ। বললো- কি নাম আপনার? আমি রিকোয়েস্ট দেই। বিরক্ত হয়ে বললাম, অপরিচিতদের ফ্রেন্ড করি না। বললো- করেন না আপু প্লিজ, আমি আপনাকে ডিস্টার্ব করবো না। ছেলেটি নাছরবান্দা। আমি নাম বললাম, আর সে রিকোয়েস্ট দিলো।

    মনে মনে ভাবলাম আজকেই তোকে ব্লক করে দিবো। মাথা ব্যাথা করছিলো চোখ বন্ধ করেও থাকতে পারছি না। ফেরিঘাটে পৌঁছাতেই আমড়া কিনে নিয়ে এসে খেতে বললো। আমি খাবোনা বলে বিরক্তি ভাবটা বুঝিয়ে দিলাম।

    দুপুর প্রায় তিনটায় পৌছালাম। ছেলেটি আমার ব্যাগ নিয়ে অটো রিকশায় তুলে দিলো। খালার বাসায় পৌঁছে খালা,খালাতো ভাই ও ভাইয়ের বউকে ছেলেটির গল্প বললাম। তারা হেসে মজা নিলো বেশ। কিছুক্ষন পরে মেসেঞ্জারে ছেলেটি কল দিলো। আমি কেটে দিচ্ছি আবার কল দিচ্ছে। নয় দশবার কল কেটে দিয়ে ব্লক করে দিলাম।

    সারাটা পথ আমাকে বিরক্ত করেছে। এমন বিবেকহীন মানুষ খুব কম দেখেছি। তবে ছেলেটি বলেছিলো – আপনি হয়তো আমাকে ব্লক করে দিবেন। আমি উত্তর না দিয়ে মনে মনে বলেছিলাম- আগে তো বাসায় যাই, তারপর দিবো।

    লীনা ফারজানা
    ৩ সেপ্টেম্বর,২০২১ ইং

  • হঠাৎ বৃষ্টি এলো

    হঠাৎ বৃষ্টি এলো

    রাত ৮:৫০ মিনিট। আপাতত রুপার রান্না ঘরে কোনো কাজ নেই। তবুও রান্না ঘরের জানালায় উঁকি দিলো সেই এক ফালি চাঁদের সাথে কথা বলবে তাই।

    নারকেল গাছ দুটোর মাঝখানটা ফাঁকা। চাঁদটা নেই আজ। ওপরে আকাশটাকে দেখতে পাচ্ছে অনেকটাই মেঘে ঢাকা। অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে আছে চারদিক। আজ রুপার চাঁদের সাথে কথা হবে না!

    মনে হচ্ছে বৃষ্টি শুরু হবে। আকাশের দিকে তাকিয়ে বৃষ্টির অপেক্ষায় রুপা। মাঝে মাঝে রুপার বৃষ্টিতে ভিজতে মন চায়। মন চায় বৃষ্টিতে ভিজে গুনগুনিয়ে গান গেতে। কোনো একদিন রুপা শিলা বৃষ্টিতে ভিজেছিলো। দু’হাতে ভরে অনেক গুলো শিলা কুড়িয়েছিলো। কি যে ভালোলাগা ছিলো সে এক অন্যরকম অনুভূতি।

    সেই রাতেই রুপার প্রচন্ড জ্বর এসেছিলো। অনিমেষ ভীষণ রেগেছিলো। কেনো বৃষ্টিতে ভিজেছে? কেনো ইচ্ছে করে জ্বর বাঁধালো? এরপরে জ্বরের ঔষধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছিলো।

    হঠাত বৃষ্টি এলো। রুপার ভাবনা গুলো এলোমেলো হয়ে গেলো। জানালার বাইরে তাকিয়ে আছে রুপা। অঝোরে বৃষ্টি হচ্ছে। জানালার গ্রিল ধরে বৃষ্টি দেখতে রুপার যেমন ভালো লাগে তেমনি মন খারাপ ও হয়।

    রুপা চায় এভাবেই কিছুক্ষণ একাকী থাকতে। ইচ্ছে করে গাছেদের সাথে কথা বলতে, চাঁদের সাথে কথা বলতে, তারাদের সাথে কথা বলতে। তা আর হয়ে ওঠে না। তার জন্য যে নিরিবিলি সময়ের দরকার। সেই সময় টুকু ও যে নেই রুপার!

    লীনা ফারজানা
    ২১-৮-২০২১ইং

  • এক ফালি চাঁদ

    এক ফালি চাঁদ

    রাত ১০: ২৫ মিনিট। রুপা রান্না ঘরে দুধ গরম করে জানালা বন্ধ করতে গেলো। হঠাৎ ওপরে নজর পড়লো কিছুটা দূরেই দুটো বড় নারকেল গাছের মাঝখানে এক ফালি চাঁদ। ভীষন ভালো লাগলো রুপার। অনেক দিন চাঁদের সাথে দেখা হয় না,কথাও হয় না।

    রুপা তাকিয়েই আছে শুধু। কি সুন্দর দেখতে দুটো গাছের মাঝ থেকে উঁকি দিচ্ছে। এ যেনো অন্যরকম ভালোলাগা। একদমই আনমনে চেয়ে ভাবছে , ভাবছে তো ভাবছেই। হঠাৎ চমকে ওঠে রুপা। অনিমেষ ডাকছে রুপাকে।

    আরেকটু সময় কি চাঁদের সাথে কাটানো যেতো না?? মনে মনে চাঁদের সাথে কতো কথা হয়েছিলো।রুপার ভাবনা গুলো হারিয়ে যায় নিমিষেই।

    লীনা ফারজানা
    ১৯-৮-২০২১ইং

  • পুতুলনাচ

    পুতুলনাচ

    আমরা ছোটবেলায় পুতুলনাচ দেখেছি খুব মজা নিয়ে….. তখন গ্রামে গঞ্জে মেলা হতো…. মেলায় সার্কাস বসতো,পুতুল নাচ হতো, হতো যাত্রাপালাও আরো ছিলো মৃত্যু কুপে বাইক চালানো….এরকম নানান আয়োজন থাকতো।

    মেলায় প্রবেশের পথে থাকতো সিংহদ্বার, মেলায় প্রবেশের টিকিট লাগতো…. তখন বিনোদনের উপায় এখনকার মতো এতো ব্যাপক ছিলনা…. এগুলোর মধ্যেই ছিলো অকৃত্রিম বিনোদন…. বাবা মায়ের হাত ধরে মেলায় ঘোরা আর নানারকম রং বেরং এর জিনিস নিয়ে ঘরে ফেরার মজাই ছিলো অন্যরকম….

    এগুলো বলার পেছনে কারণ হলো এইযে ছোটবেলায় পুতুলনাচ দেখে মজা পেয়ে হাততালি দিতাম…. আর এখন পুতুলনাচ দেখে কষ্ট পাই….. কেনো??? তবে বলি….

    এইযে করোনার ভয়াবহ থাবায় যখন প্রতিদিন দুশোর উপরে মানুষ মারা যাচ্ছে….. আক্রান্ত ৩০% এর উপরে…. সর্বত্র মৃত্যুর হাতছানি, এই অবস্থায় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেয়া হলো…. কি অবর্ননীয় কষ্ট সহ্য করে ঢাকায় পৌঁছালো শিল্প কারখানা সংশ্লিষ্ট কর্মীরা….

    আমার দেখা সবচেয়ে অসহায় পুতুল এখন তারা, আমরা নিত্য তাদের দুঃখজনক পুতুলনাচ দেখি ভারাক্রান্ত চোখ নিয়ে…. যখন ঘোষণা হয় শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ তখন বাড়ি না গেলে খাবে কি, থাকবে কিভাবে, চলবে কিভাবে এসব ভাবনায় শুরু হয়ে যায় বাড়ি ফেরার ভয়াবহ পুতুলনাচ….

    ছোটবেলার পুতুলনাচ যেমন আঙুলি হেলনিতে হতো এখনো তেমনই তবে সেটা আনন্দ বিহীন….. ওরা জীবন্ত পুতুল… ওদের হাতে পায়ে মুখেও রয়েছে পুতুলনাচ এর মতো অদৃশ্য সুতোর কারসাজি….. পেট বাঁচানোর তাগিদে, সংসার বাঁচাতে সন্তানের মুখে ভাত তুলে দেওয়ার তাগিদে, একটু ভালোভাবে বেঁচে থাকার তাগিদে ওরা পুতুল হয়ে যায়…..

    আমরা জানি ওদের কোনো উপায় নেই….আমার দেখা কিছু মানুষের করোনাকালীন চাকরি হারানোর দৃশ্য আমি দেখেছি… সুন্দর সাজানো গোছানো জীবন ছেড়ে দিয়ে ফিরে যেতে হয়েছে গ্রামে….. সেখানে গিয়েও শান্তি মেলেনি…. পদে পদে অপমান অপদস্ততার সম্মুখীন হতে হচ্ছে….

    করোনা শুধুই মৃত্যু ঘটাচ্ছে তা নয়, মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে করে তুলছে দুর্বিষহ….

    জীবন আর জীবীকার মধ্যে কোনটাকে বেছে নিবে?? অবশেষে জীবিকাই জিতে যায়……

    আর তখন অদৃশ্য সুতোর উপরে জীবনের মায়া ছেড়ে দিয়ে প্রচন্ড অনিচ্ছা সত্ত্বেও ওরা পুতুল নাচের দুর্দান্ত কুশিলব হয়ে যায়…

    ~শিমু কলি

  • রিকশাওয়ালা

    রিকশাওয়ালা

    প্রায় দু বছর আগের ঘটনা সকাল থেকে কলে চেষ্টা করে ও ডাক্তারের সিরিয়াল পাচ্ছিলাম না। বাধ্য হয়ে ধানমন্ডি ইবনে সিনায় যেয়ে নিজেই সিরিয়াল করি।

    রায়ের বাজার বাংলা সড়ক ভাতিজির বাসায় যাবো রিকশা ডেকে উঠে পড়ি। প্রথম যাচ্ছি বাসা কতদূরে হবে তাও জানি না।

    কিছু দূরে যাওয়ার পরে ভাতিজির কাছে কলে শুনে নিলাম কোন রাস্তা দিয়ে যেতে হবে।

    রিকশাওয়ালা জানতে চাইলো কোথা থেকে এসেছি।

    বরিশালের কথা বলতেই খুশি হয়ে আলাপ শুরু করে দিলো।

    আমার বাড়ি ও বরিশাল আপা। আপনার ভাবি ও ঢাকায় আমার সাথেই থাকতো এখানে ভালো লাগে না তাই দেশে চলে গেলো।
    আমি ভাবছিলাম উনি আমার ভাবি হোন? মনে হচ্ছে উনি আমাকে কতো চিনেন। সেভাবেই গল্প জুড়ে দিলো দেশের বাড়ির। অনেকটা বিরক্ত হই। ভাতিজি কল দিলো, রিকশাওয়ালা বললো আমাকে দিন আমি কথা বলে জেনে নেই।

    অনেক গুলো অলি গলি ঘুরে দু চারজন এর কাছ থেকে জেনে আমাকে পৌঁছে দিলো। ছিলো না কোনো বিরক্তির ছাপ।

    হয়তো দেশের লোক তাই বলেই।

    আমি ও অনেক খুশি হলাম দশ টাকা বাড়িয়ে দিয়ে এগোলাম।

    ভাতিজির সাথে বলতেই হেসে বললো উনার বউ আপনার ভাবী? আমি বললাম এক জেলার মানুষ ভাবীই হবে আমার।

    লীনা ফারজানা
    ১/৮/২০২১ইং