Tag: গল্প

  • ভাবীর সংসার (পর্ব-১৯)

    ভাবীর সংসার (পর্ব-১৯)

    জাহিদ সকাল বেলা এসে কলেজের উল্টো দিকের বইয়ের দোকানে বসে অপেক্ষা করছে, দুই বোন হলের নিচে নামলেই রওনা হবে!

    কলির হাতে ব্যাগ নিয়ে নিচে নেমে এসে ভাইয়ের পাশে দাঁড়িয়েছে।

    জাহিদ বললো পলি কোথায়?
    – আপা, হলের সবার কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছে। আর মেজ ভাই, ভাইজানের বাসায় যেতে হবে তো!
    – এখন?
    – হ্যা, মায়ের শাড়ি নাকি কিনবেন, আজ নিয়ে যেতে বলেছেন।
    – এখন ওই বাসায় যেতে ইচ্ছে করছেনা, কিন্তু মায়ের শাড়ি, যেতে তো হবেই।
    – হুম, আমরা বসবো না, তাড়াতাড়ি করে বেড়িয়ে যাবো। কখন বাড়ী যাবো সেই আশায় আছি।

    তিন ভাই-বোন শারমিনের বাবার বাড়ী গেটে নামতেই দেখলেন এক ফেরীওয়ালা বাসা থেকে বেড়িয়ে যেতে।

    শারমিন দেখেই বললো কেমন আছ তোমরা?
    – ভালো আছি ভাবী, জিহান কোথায়?
    – আইরিন ছাদে নিয়ে গিয়েছে, রোদের মধ্যে গোসল করাবে আম্মা।

    তারিন এসে বললো আপা, তুই আবার কি কিনলি ফেরীওয়ালার কাছ থেকে?
    – না, না। কিছু না, আম্মা বুয়ার জন্য শাড়ি কিনেছে। – – – আম্মা তো ছাদে
    – আরে, যাওয়ার আগে কিনেছে।
    – তোর হাতে সাদা মতন একটা শাড়ি না দেখলাম।
    – আরে না!
    – তবে, আপা তুই আম্মাকে যে শাড়ি আড়ং থেকে দিয়েছিস! কি সুন্দর কালার! আমি সেটা পরে র‍্যাগ ডে তে যাবোই।
    – আচ্ছা যাতো এখন! শুধু শুধু বেশি কথা বলিস।

    শারমিন তাড়াতাড়ি করে বললো কলি দাঁড়াও আমি মায়ের শাড়ি নিয়ে আসছি।
    – জি ভাবী।

    শারমিন সুন্দর করে আড়ং এর প্যাকেটে শাড়ি ঢুকিয়ে দিয়েছে। আর বলছে, তোমরা কি এখন বসবে কলি?
    – না ভাবী! জিহান কে এক্টু আদর করেই চলে যাবো।
    – আরে, আইরিন তেল মাখিয়ে নিয়ে গিয়েছে, তুমি কোলে নিলে আরও জামায় লাগবে। বাড়ীতে যখন যাবে, রওনা হয়ে যাও।
    – জি ভাবী।

    পলি বাসা থেকে বেড়িয়েই কলিকে বকছে, আমি একদিন বলেছি না, অতিরিক্ত আবেগ দেখাবিনা!
    – কি দেখালাম?
    – জিহান কে আমরা আদর করি, ভাবী পছন্দ করেন না! বুঝিস না কেন?
    — নিজের ভাইয়ের ছেলে, আদর করবো না?
    – আচ্ছা বাদ দে, কথা বেশি বলার দরকার নাই।

    পলি গাড়ীতে বসে ভাবছে, ভাবী আজ সকালে বাসা থেকে বের হোন নি, ভাইজান অফিসে অথচ শুধুশুধু আড়ং এর ব্যাগে কেন মায়ের শাড়ি দিলেন! তারিনের কথাই ঠিক ভাবী ফেরীওয়ালার কাছ থেকেই শাড়ি কিনেছেন! আবার কাল বললেন উনার মায়ের শাড়ি উনি পরে কিনবেন। শাড়ি কিনেছেন ভালো কথা,মিথ্যা বলার কি দরকার! কেন যে এই ছোটলোকি কাজ গুলি করেন, কে জানে! শাড়ি ফেরীআলার কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে, কলি বুঝে নাই তাই ভালো। জীবনে যারা কম বুঝে তারাই ভালো এবং শান্তিতে থাকে।

    জাহিদ বললো কি রে কি ভাবছিস?
    – কিচ্ছু না।
    – রোযা থাকতে পারবি তো?
    – তুমি রাস্তায় সেহরী খেয়ে দুই বার যাওয়া আসা করে থাকতে পারছো, আর আমি পারবো না কেন?

    জাহিদ হাসছে…

    ইফতারের দশ মিনিট আগে এসে বাড়ীতে পৌছে গেল কলি-পলি। দুই বোন দৌড়ে এসে মাকে জড়িয়ে ধরেছে৷

    রাহেলা খানম বলছেন যা কল পাড়ে, হাত মুখ ধুয়ে ওযু করে আয়, আযান হয়ে যাবে, যা!

    রাতে খাওয়া দাওয়ার পর, তাদের বাড়ীর বড় খাটে দুই বোন মায়ের দুই পাশে বসেছে, জাহিদ খাটের এক কোনে, পুরোনো কথা আলোচনা করে হাসাহাসি করছে সবাই। পলির বারবার মনে হচ্ছে আজ কে তারা পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ। এতো আনন্দ লাগছে, কোন ক্লান্তিই আর যেন লাগছেনা!

    রাহেলা বললেন বাবা জাহিদ জলির বিয়ের পর প্রথম ঈদ জামাইকে আর ওকে কিছু দেওয়া তো লাগবে।
    – দিবা, সমস্যা কি?
    – সমস্যা টাকা।
    – টাকার সমস্যা সবারই আছে, কোটিপতির ও আছে, কিন্তু ম্যানেজ দিতে হবে। এখন বলো কি দিতে চাও?
    – একটা পাঞ্জাবী, আর জলির জন্য একটা শাড়ি। আমার জন্য কিচ্ছু লাগবেনা বাবা।
    – জলিপার কথা মাথায় আছে মা।
    – সাঈদ শাড়ি দিল কেন আমাকে? আমি কি ছোট বাচ্চা যে ঈদে নতুন কাপড় লাগবে!

    কলি বললো ভাইজান বোনাস পেয়েছে, দিবেনা কেন?
    – ভাইজান যখন নতুন চাকরি ছিল তখন ও তোদের দিয়েছে।
    – গজ কাপড় দিয়েছে তাও ঈদের আগের রাতে। তুমি সারারাত সেলাই করে সকালে দিতে।
    – আর উপায় কি ছিল? তাও করেছে তো।
    – আমরা কি কখনো আবদার করেছি মা? যা দিয়েছে তাতেই খুশি।নাহিদ কে ভাইজান টেনে পড়ার সময় ঈদে একটা বই কিনে দিয়ে বললো যা এটা তোর ঈদ উপহার। তাও তো মন খারাপ করেনি।
    – সবুরে মেওয়া ফলে। আমার নাহিদ এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে একদিন আমার নাহিদের ও কাপড়ের অভাব থাকবেনা।
    – তাই যেন হয় মা!

    ঈদের আগের রাতে শাহিদ-নাহিদ এসে বাড়ীতে পৌছালো দুই বোনের জন্য সেন্ডেল, মায়ের জন্য ব্লাউজ পিস, সেমাই-লাচ্ছি নিয়ে।

    রাহেলা দুই ছেলের মুখে হাত দিয়ে আদর করছেন, আমার সোনা পুত্র তোরা মায়ের কাছে চলে এসেছিস, আজ আমার ঘরে শুধুই আনন্দ। এগুলো কেন এনেছিস বাবা, মায়ের সবই আছে।

    শাহিদ বলছে, নাহিদ তো তোমার জন্য শাড়ি কিনতে চেয়েছিল। কিন্তু বাজেট নেই, তাই হলো না। তবে আগামী বার অবশ্যই কিনে আনবো।
    – এই ব্লাউজ পিস ই তো আমার জন্য হীরা। শাড়ি লাগবেনা।

    পলি-কলি দুই বোন স্যান্ডেল পায়ে দিয়ে দেখছে আর হাসছে। কি সুন্দর পাথর বসানো স্যান্ডেল।

    নাহিদ বললো আপা পছন্দ হয়েছে?
    – খুব খুব।
    – আমরা দুইজন লটারী করে কিনেছি। কারণ আরেক জোড়া আমাদের পছন্দ হয়েছিল। কিন্তু কোন টা নিব ভেবে ভেবে পরে লটারী করে নিয়ে এলাম। টাকা থাকলে দুই জোড়া করে নিতাম।
    – খুউব সুন্দর হয়েছে। তুই নিজের জন্য কিছু কিনেছিস?
    – আমার নতুন শার্ট আছে, আর কিছু লাগবেনা।

    দুই বোনের মুখ অন্ধকার হয়ে গিয়েছে সাথে সাথে। কি! তুই আর শাহিদ কিচ্ছু কিনিস নি?
    – আরে না।
    – তাহলে কেন আমাদের জন্য আনলি?
    – আরেকবার ঈদে দেখবো তুই ও জলিপার মতো চলে যাবি, এরপরে কলিপা ও চলে যাবে। তোমরা এখন ঘরে আছ, আনন্দ করে নাও। আমরা পরার মতো কত সময় আছে।

    দুই বোন ভাইয়ের কথা হা করে শুনছে। ছোট্ট নাহিদ কত্ত বড় হয়ে গিয়েছে। ত্যাগ করেও যে কত আনন্দ পাওয়া যায়, তা শুধুমাত্র বড় পরিবারের ভাই-বোন গুলোই জানে। নিজে না কিনেও নাহিদ বোনেদের দিয়ে কত খুশি।

    ঠিক রাত দশটায় দুই বোনের জন্য মেহেদী আর চুড়ি আর তিন ভাইয়ের জন্য লাল টুকটুকে পাঞ্জাবী নিয়ে উপস্থিত হলো জাহিদ। এসেই বললো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর উপহার! এই এগুলো ওয়ান টাইম রে। এক ধোয়া দিবি দেখবি রঙ শেষ। কিন্তু ঈদ চালিয়ে নেওয়া যাবে। তাই নিয়ে এলাম।

    শাহিদ হাসছে আর বলছে এটা তো দারুন রে মেজ ভাই। এইটা না ধুয়ে আরও দুই ঈদ পার করা যাবে,কি বলিস নাহিদ।
    – হ্যা, চমৎকার চমৎকার হয়েছে।

    ঈদের দিন সকাল বেলা সবাই নামাযে যাওয়ার পরে পলি-কলি সুন্দর করে জামা পরে, স্যান্ডেল জোড়া পরে নিল। কারণ এই বার প্রথম তারা ঈদে নতুন স্যান্ডেল পেয়েছে।

    পলি দেখলো রাহেলা খানম আঁচল দিয়ে বার বার চোখ ডাকছেন।

    পলি গিয়ে বললো কি হয়েছে মা?
    – কিচ্ছুনা রে!
    – জলিপার জন্য মন খারাপ করছে?
    – আমার জলি ছাড়া এই বার প্রথম ঈদ। আমার সাঈদ গত ঈদেও আসেনি, এবার ও এলো না! আর কি ঈদে আমার ছেলে বাড়ী আসবেনা?
    – মা, অবশ্যই আসবে। ছেলে ছোট, ছুটি নেই, তাই আসেনি।
    – ঈদের দিন দুটি ছেলে-মেয়ে নেই, বুক টা কেমন যে লাগছে।
    – মাগো এখন তোমার, মেজ ভাই, শাহিদ-নাহিদ আসবে, নামায পড়ে। তুমি কান্নাকাটি আর কর না, ওদের জন্য অনেক দোয়া কর যেন, একদিন অনেক বড় বাড়ী এরা করতে পারে, ভাবী যেন নিজের ইচ্ছায়ই ভাইজান কে নিয়ে আসেন।
    – আমার চার ছেলে আর তিন মেয়েকেই যেন আল্লাহ সব সময় ভালো রাখেন আর সুস্থ রাখেন, এই দোয়া সবসময় করি।

    পলি রুমে এসেও দেখছে রাহেলা খানম আবার ও চোখ মুছেই যাচ্ছেন। মায়ের অনেক সন্তান থাকলেও একজন সামনে না থাকলে মায়ের কত খালি খালি লাগে, শুধু সেটা মা জানেন।

    রাহেলা খানমের খুব কষ্ট লাগছে সাঈদের জন্য। জলির জন্য ও মন খারাপ, এই মেয়ে ঈদের সকালে সব কিছুতে মায়ের সাথে সাথে থাকতো অথচ আজ সে শ্বশুরবাড়ী। সাঈদ তার তিন সন্তান মারা যাওয়ার পর একমাত্র আদরের পুত্র ছিল, আজ সে পুত্র ও মাকে ছাড়া ঈদ করছে, জীবন খুবই বিচিত্র খুউব…

    কলি এসব কান্নাকাটি দেখে তার ও মন খারাপ হচ্ছে, কিন্তু সে বার বার বাড়ীর বাইরের দিকে দেখছে তার তিন ভাই লাল পাঞ্জাবী পরে যখন ঘরে ঢুকে মাকে সালাম করবে, তখন আবার আনন্দে ঝলমল করবে বাড়ী, মায়ের মন তাড়াতাড়ি ভালো হওয়ার জন্য কলি ভাইয়েরা আসছে কিনা, আবারও বাইরে দিকে দেখছে….

    চলবে…

    আন্নামা চৌধুরী।
    ২১.১২.২০২১

  • ভাবীর সংসার (পর্ব-১৮)

    ভাবীর সংসার (পর্ব-১৮)

    আজ তিন দিন ধরে টাইপিং শিখতে যাচ্ছে পলি ও কলি। রিতা খালা নিজে গিয়ে ওদের কে সরকারি ভাবে ভর্তি করে দিয়েছেন, তেমন কোন টাকা লাগেনি। যেহেতু যুবায়ের সাহেব নিজে এখানে বড় পদে চাকরি করেন, তাই খুব সহজেই দুজন ভর্তি হয়ে গেল।

    পলি খুব কৃতজ্ঞ খালার প্রতি! কারণ তিনি না থাকলে ভর্তি হওয়া সম্ভব হতো না। একদম কলেজের কাছে তাই হেঁটে দুইবোন চলে যায় ক্লাসে।

    আগামীকাল থেকে রমযান শুরু হবে, পনেরো দিন ক্লাস শেষ করে তারা দুই বোন বাড়ী যাবে। যদিও কলেজের অনেকেই রমযানে হলে থাকেনা। কিন্তু তারা থাকছে, তাদের টাইপিং ক্লাসের জন্য। তাছাড়া মাস দুয়েক পরে, তাদের পরীক্ষা শুরু হবে। বাড়ীতে গেলে পড়া হয়না!

    কলির সেহরীতে উঠেই মুখ ভার করে বসে আছে। কারণ আজকেও হলে মূলা দিয়ে মাছের তরকারি আর পাতলা ডাল রান্না হয়েছে। এই প্রথম বার সে রমযান মাসে বাইরের বাইরে, এজন্য ও তার মন খারাপ।

    পলি বললো শোন, কৌটায় সামান গুড়ো দুধ আছে, দিব? মাখিয়ে খেতে পারবি।
    – না, আমি খাবো না।
    – এখন অভিমান করলে কি হবে? রোযা থাকতে হবে তো!
    — আমি রোযা রাখবো, তুই খেয়ে নে, আমার একদম ভালো লাগছেনা।
    – শেষবারের মতো বলছি, খেয়ে নে। নয়তো কষ্ট হবে।

    কলি উঠে বারান্দায় চলে গেল। এটা তার অভ্যাস, কখনও কিচ্ছু ঝামেলা হলে রুমে থেকে বেড়িয়ে যাবে।

    পলি জানে, কলি শেষ রাতে তেমন কিছু খেতে পারেনা। কিন্তু কি করবে তার কাছে তেমন কোন টাকা নেই যে, ভালো কিছু এনে খাওয়াবে।

    পলি অনেক জোড় করে, বোন কে ভাত খাওয়ালো। কি করবে, পরিস্থিতি। এমন বাজে। তাছাড়া হলে রমযান মাসের প্রথম সেহরিতে সব সময় মাংস থাকে। কিন্তু ডাইনিং এর দায়িত্ব যে লোক আছে, সে হঠাৎ ছুটিতে যাওয়ায় বাজার হয়নি ঠিকমতো, তাছাড়া অল্প কয়েকজনই হলে আছে এজন্য মেনু ভালো হয়নি।

    পরের দিন বিকাল বেলা, পলি ডাইনিং এ গিয়ে বললো মামা আজকে ইফতারিতে কি আছে?
    – কি আর থাকবো ভাগ্নী খিচুড়ি আর ছোলা ভুনা! আর কিছু নাইক্কা, আপনার মন যদি কিছু ছায় মন্টু মিয়ারে কইলে হেয় আইন্না দিবার পারে।
    – আচ্ছা।
    – আর হুনেন ভাগ্নী এই রমযান মাসে এখানে পইড়া আছেন ক্যালা। এহানে কি আর ভালো খাওন দিব নাকি!
    – ক্লাস করছি তো এজন্য থাকতে হচ্ছে।
    – বুঝবার পারছি।

    ইফতারের আগে আগে পলি দশ টাকার পিঁয়াজু আর দশ টাকার জিলাপি নিয়ে এলো। কারণ রাতেও মেয়েটি ঠিকমতো খায়নি!

    আসরের আযানের কিছুক্ষণ আগে, একজন এসে বললো আপনাদের গেস্ট আসছে নিচে আসেন।

    পলি বললো নিশ্চয়ই ভাইজান এসেছেন। আমাদের নিতে!
    – আজ কি শুক্রবার যে ভাইজান আসবেন?
    – আর কে আসবে?
    – দেখ গিয়ে।
    – তুই ও চল!
    – না, আমার আসরের নামায পড়ার পর একদম শরীর দূর্বল লাগছে, প্রথম রোযা তো তাই।
    – শুয়ে থাক, আমি লেবু নিয়ে এসেছি কাল, শরবত করে দিব।
    – তুই আগে যা, পরে কথা বলিস।
    – হ্যা হ্যা।

    পলি গেস্ট রুমে এসে দেখলো, এক টিফিন হাতে দাঁড়িয়ে যুবায়ের সাহেব।

    আসসালামু আলাইকুম খালু।
    – ওয়ালাইকুম আসসালাম। কেমন আছ তোমরা?
    – ভালো আছি খালু।
    – তোমাদের খালা, ইফতার আর সেহরীর জন্য খাবার দিয়েছেন, খেয়ে নিও।
    – খালু, এখানে খাবার অনেক ভালো। কেন কষ্ট করলেন?
    – মা, আমি ও হলে থেকেই পড়েছি।
    – রমযানের জন্য আলাদা খাবার আছে, আর নিয়ে আসবেন না খালু। আমরা খেতে পারবো।
    – আচ্ছা সে দেখা যাবে, আর ক্লাসে রেগুলার যাবে। কেমন?
    – জি খালু।
    – খাবে, আর পড়বে। আর সমস্যা হলে জানাবে।
    – খালু, অনেক ধন্যবাদ। খালাকেও জানাবেন। তবে, আর রমযানে খাবার লাগবেনা, এখানে ভালো ব্যবস্থা আছে।
    – আচ্ছা, দেখা যাক।

    পলি টিফিন হাতে দাঁড়িয়ে দেখছে যুবায়ের সাহেব উনার গাড়ী নিয়ে চলে যাচ্ছেন।

    পলি সিঁড়ি দিয়ে উঠছে আর বলছে জীবনে কখনো ফেরেশতার সাথে দেখা হয়নি, উনি হয়তো ফেরেশতা হয়ে জীবনে এসেছেন। আল্লাহ খালুকে হাজার বছর হায়াত দিন।

    কলি টিফিন দেখে বললো কি রে কে এসেছিল।
    – খালু। রিতা খালাম্মা টিফিট দিয়ে পাঠিয়েছেন।
    – এতো ব্যস্ত একজন মানুষ আমাদের জন্য টিফিন নিয়ে এসেছেন! আল্লাহ খালুকে খালাকে ভালো রাখুন।
    অথচ আমাদের ভাইজানের খবর নাই।
    – কলি, একটু পরে আযান দিবে, এই সময় কারো জন্য কষ্ট পাবিনা, আল্লাহ শুনে ফেলবেন। আল্লাহ আমাদের ভাইজান কে ও ভালো রাখুন।
    – ভাইজানের জন্য বদ দোয়া আসেনি, খারাপ লেগেছে বলছি। ভাইজান কে আল্লাহ সব সময় ভালো রাখুন, সে দোয়া করি।

    পলি টিফিন খুলে দেখলো, প্রথম বাটিতে পিঁয়াজু, ডিম চপ, কাবাব, বেগুনি,জিলাপি। পরের বাটিতে অর্ধেক বাটিতে ছোলা, আর বাকি অর্ধেকে সবজি ভাজি। তিন নম্বর বাটিতে গরুর মাংসের তরকারি, আর একদম নিচের বাটিতে গরুর মাংসের তেহারি।

    পলির চোখে পানি চিক চিক করছে, এতো যত্ন করে মা ছাড়া, কোন দিন তাদের কেউ খাওয়ায় নি, অথচ খালা কত সুন্দর করে পাঠিয়েছেন।

    ইফতার করে দুই বোন নামায পড়ে তাদের মা-বাবার সাথে সাথে খালা-খালুর জন্য অনেক দোয়া করলো।

    অনেক না করার পর ও দুই দিন পর পর ঠিকই খালু উপস্থিত হতেন সেহরী সহ টিফিন নিয়ে। উনার একই কথা, তোমরা তো আমার বড় কুটুম, ভাগ্নীর ননদ, মানে আরেক ভাগ্নী।

    আগামী কাল পলি-কলি বাড়ী চলে যাবে, আজ টাইপিং ক্লাস বন্ধ হয়ে গিয়েছে। দুই বোন ব্যাগ গুছিয়ে নিচ্ছে। সকাল বেলা জাহিদ এসে পৌছে যাবে। তাদের আজ মনে অনেক আনন্দ কারণ তারা বাড়ী যাবে।

    দুপুরের দিকে আবার খবর এলো যে, তাদের গেস্ট এসেছেন। পলি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললো কিরে খালু আজ এতো সকালে চলে এলেন! কাল বলে দিয়েছিলাম আজ খাবার লাগবেনা, কারণ কাল সকালেই চলে যাবো।
    – আচ্ছা আমি যাচ্ছি।
    – যা।

    কলি গিয়ে দেখলো সাঈদ দাঁড়িয়ে, বললো কলি, পলিকে নিয়ে আয়, আমরা ঈদের শপিং করবো, জিহান কে ওর নানুর কাছে রেখে আসছি। তাড়াতাড়ি আয়।
    – জি ভাইজান। ভাবী কোথায়?
    – বাইরে গাড়ীতে আছে।
    – আসছি ভাইজান।

    কলি-পলি তাড়াতাড়ি করে রেডি হয়ে নিচে আসলো।

    শারমিন দেখেই বললেন তাড়াতাড়ি গাড়ীতে উঠো, আমার ছেলে রেখে আসছি।
    – কেমন আছে জিহান?
    – ভালো আছে। তোমার ভাই, বোনেদের জন্য তার যে ভালবাসা, বোন ছাড়া শপিং করতে চায়না।

    সাঈদ বললো জাহান আমি চার হাজার টাকা বোনাস পেয়েছি, এর মধ্যে আম্মা আর মায়ের জন্য শাড়ি কিনবে, তোমাদের কাপড় কিনবে।
    – আম্মার টা আমি কিনে নিব।
    – না একই রকম নিও।
    – দেখছি।
    – আর শাহিদ নাহিদ এর জন্য শার্ট নিও।
    – না না, আমাদের বাজেটে হাত দিওনা আর। কি বলো কলি।

    কলি হাসছে।

    পলি ভাবছে ভাবী আজ হঠাৎ এতো ভালো হয়ে গেল কি করে!

    দোকানে গিয়েই ভাবী বলছেন জামদানী দেখান।

    দোকানদার বললো, আপা, নব্বই সালের সেরা জামদানী হলো মেরুন কালারের এই শাড়ি।
    – আগে দেখান।
    – দেখলে চোখ ফেরাতে পারবেন না।

    সাঈদ আস্তে করে বললেন আগে দাম জিজ্ঞেস করে নাও।
    – পছন্দ করার আগে, এমন করছো কেন?
    – আচ্ছা দেখো।

    শারমিন শাড়ীর প্রেমে পড়ে গেলেন, তিন হাজার টাকা দিয়ে শাড়ি কিনলেন, সাঈদ কে বার বার বলছেন, এই শাড়ি না নিয়ে আমি যাবোই না। কি সুন্দর শাড়ি!

    পলি-কলি দুই বোন একজন আরেকজন কে দেখছে।

    পলি আর কলির জন্য আটশো টাকা দিয়ে দুটি জামার কাপড় কেনা হলো। কারণ রেডি জামার বাজেট আর নাই।

    শারমিন বললেন তোমরা বাড়ীতে ঈদ করবে, দামী ড্রেস দিয়ে কি করবে? বলো? আমরা শহরে থাকি কত ধরণের মানুষ। আর মায়ের শাড়ি আমি কাল কিনে দিব। সমস্যা নেই, এই দুইশো দিয়ে স্যান্ডেল কিনতে হবে। আর আমার বাবুর কাপড় কিনতে আরেকদিন আসতেই হবে।

    পলি বললো কেমন লাগছে বাবুর জন্য কিছু নিলেনা!
    – ওর যে কত্ত জামা তুমি গুনে শেষ করতে পারবে?
    – ওহ।
    – আর ওর জন্য আগামী সপ্তাহে নিব। ওর জন্য আর আমার মায়ের জন্য।

    সাঈদের মন কিছুটা ভার হয়ে আছে এতো দাম দিয়ে শাড়ি কেনায়। তার আর কত শপিং রয়ে গেল।

    সাঈদ গাড়ীতে উঠে বললো আজ আমাদের সাথে চল, তোরা।

    শারমিন সাথে সাথে বললো কি যে বলো, কাল বাড়ী যাবে। কত গোছানো আছে, আজ কিভাবে আমাদের সাথে যাবে।
    – ঠিকই বলেছেন, কলি বইখাতা এখনো ঠিক করে গুছানো শেষ করেনি।
    – আর কাল যাওয়ার আগে একবার বাসা হয়ে যেও, মায়ের শাড়িটা দিয়ে দিব।
    – জি ভাবী।

    দুই বোন হলের সামনে নেমে গিয়েছে। রুমে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে বসে আছে দুজন।

    পলি বললো ভাবী আমাদের কেন আদর করেনা কলি, একবার যাওয়ার জন্য বলতে পারতো!
    – থাক আপা, এসব মানুষ নিয়ে ভাবতেও আমার ভালো লাগেনা।
    – হুম, ঠিক।
    – কাল বাড়ী যাবো, এই আনন্দেই থাকি, নতুন কাপড় পেয়েছি তাইতো শুকুর আলহামদুলিল্লাহ!
    – সত্যি বলেছিস।

    পলি কাল ভাইয়ের আসার অপেক্ষা করছে, কত্ত দিন পর বাড়ী যাচ্ছে, এটাই এখন সবচেয়ে আনন্দের বিষয়….

    চলবে…

    আন্নামা চৌধুরী
    ১৯.১২.২০২১

  • ভাবীর সংসার (পর্ব-১৭)

    ভাবীর সংসার (পর্ব-১৭)

    আজ শুক্রবার, পলি সকালে উঠেই এক টাকার শ্যাম্পুর মিনিপ্যাক দিয়ে ভালো করে চুল শ্যাম্পু করেছে। এখন হলের বারান্দায় বসে চুল শুকাচ্ছে। পলির কোমর পর্যন্ত চুল, ঘন চুল শুকাতে অনেক বেশি সময় লাগে। তাই বারান্দায় বসেছে পলি।

    কলি বারান্দায় এসে বললো আপা, তোর গোসল শেষ? তুই তো এতো সকাল গোসলের মানুষ না!
    – না, চুল গুলি শুকানোর জন্য।
    – তুই চিন্তা করিস না, আপা। দুলাভাই তোকে পছন্দ করবে।
    – আমি এমনি শ্যাম্পু করেছি!
    – বুঝি সবই।
    – বেশি বুঝিস একটু।
    – আচ্ছা, শোন ব্যাগে কি এক সেট জামা নিব?
    – দুই সেট নে, রাতে ঘুমাতে হবে তো!

    রুপা আর হেমা এসে বললো আরে আজ দুই বোন এতো খুশি, খুশি। কোথায় যাচ্ছ?
    – আমি আর কলি আমাদের আন্টির বাসায় যাচ্ছি, আজ রাতে ওদের বাসায় থাকবো।

    – বাহ, তোমাদের আত্নীয়ের বাসা আছে, আমাদের এইখানে কেউ নেই।

    কলি বললো একদিন তোমাদের নিয়ে যাবো। আজ একটা অনুষ্ঠান আছে, তাই আজ বলছিনা।
    – না না আজ না, অন্য একদিন যাবো।
    – আচ্ছা।

    পলি রুমে এসে তার একমাত্র শাড়ি খানা ব্যাগে ভরে নিল, সাথে তার এক ডজন কাঁচের চুড়ি। চুড়ি আস্তে করে ব্যাগে নিল, কলির সামনে কেমন লজ্জা লাগছে, এই মেয়েকে বিশ্বাস নেই, হুট করে বলবে কি রে আপা! এতো সাজগোজ বিষয় কি!

    দুই বোন দুপুরে তাড়াতাড়ি খেয়ে ভাবীর বাসায় যাওয়ার জন্য সাড়ে তিন টার দিকে রওনা হয়ে গেল।

    পলি রিকশায় উঠে বললেন এই হেমা-রুপাকে যে বললি ওদের নিয়ে যাবি, কি মনে করে বলবি?
    – এমনি বলেছি। কি ভাববে যদি না বলি।
    – আমাদেরই পছন্দ করেনা ভাবী, আর আমাদের রুম মেইট।
    – আরে, মানুষকে কি বুঝানোর দরকার আছে নাকি? তারা এটাই জানুক আমাদের ভাবীর পরিবার খুব ভালো।

    পলি হাসছে মিটিমিটি, কলির দিকে তাকিয়ে, যাক মেয়েটার বুদ্ধি ভালো হয়েছে।

    জাহিদ ভাবীর বাসায় এসেছে তাদের যাওয়ার কিছুক্ষণ অর। জাহিদ নুডুলস, ডিম, সবজি, দুধ, সেমাই, বিস্কুট, সিংগাড়া, চা-পাতা, চিনি, দুধ, পাপড়, চানাচুর, ফল সব নিয়ে এসেছে যাতে তারা কোন কথা না বলে। রহিমা বুয়াকে সামান্য বখশিশ দিয়েছে জাহিদ, যাতে এই জিনিস গুলো বানিয়ে দেয়।

    শারমিন বললেন, তাদের নিয়ে আসরের নামাযের পর তোমাদের ভাই আসবে। এর ভিতরে নাশতা কি কি এনেছো বুয়াকে বুঝিয়ে দাও। আমি আছি রুমে, কিছু লাগলে বলবে।

    রিতা খালাও কিছুক্ষণ আগে এসেছেন, কিন্তু তিনি জানেন না যে, আজ পলিকে দেখতে আসবে। এসে শুনে তিনি বলছেন, আমি মেয়েটাকে সাজিয়ে দিব, কেমন মায়াবী মুখ। বরপক্ষ পছন্দ না করে যাবে কই!

    তিনি শারমিন কে বললেন এই জাহান পারলে তোর কিছু মেকাপ দে, মেয়েটাকে সাজিয়ে দেই।
    – না, না খালা, দরকার নাই। শ্যামলা মেয়ে, তাই দেখে বিয়ে হোক। পরে তুমি মেকাপ করে ফর্সা করবে, বিয়ের পর শ্যামলা দেখে ঝামেলা করবে।
    – কি যে বলিস তুই!
    – ঠিক খালা, ওরা সাজতে পারে, তোমার চিন্তার কিছু নেই।

    রহিমা বুয়া জাহিদ কে বললো ভাই হুনেন, বখশিশ না দিলেও আমি ফলি আফার জইন্য রান্না করতাম। হের মন কত্ত ভালা, আল্লাহ হের জন্য ভালো ফাত্র অবশ্যই রাখছেন।
    – দোয়া করবে।
    – হ তাতো করি।

    আসরের নামায শেষ হওয়ার আগেই রহিমা বুয়া সব নাশতা দিয়ে টেবিল সাজিয়ে রেখেছে। আসলেই খেতে পারবে, শুধু চা পরে বসাবে।

    সাহেদা খানম পলিকে বার-বার বলছেন পলি তোমার ভাগ্য ভালো। দেইখো আবার, কোন ঝামেলা সৃষ্টি করবেনা কিন্তু। চুপ্ন করে রাজি হবে।

    আসরের নামাযের পর, সাঈদ খুব মন খারাপ করে বাসায় এলেন, এসেই জাহিদ কে বললেন,

    পাত্রপক্ষ আজ আসবেনা, তুই বাড়ী চলে যা।
    – কেন? কি হয়েছে?
    – তারা নাকি মাস্টার পাশ মেয়ে কিংবা চাকরিজীবি মেয়ে ছাড়া ছেলের বিয়ে দিবেনা। ছেলের এ নিয়ে সমস্যা নেই। কিন্তু ছেলের মায়ের আছে। এজন্য, শুধু এসে সময় নষ্ট করতে চায়না। আমার জুনিয়র অফিসার আমিও আর রিকুয়েষ্ট করিনি।
    – ওহ!
    – তোকে বেশ কষ্ট দিয়ে দিলাম, ওরা কি এসেছে।
    – হ্যা
    – শোন, আমি প্রতিমাসে দুইশো করে টাকা দিব, তোর ভাবীর কাছে। তোর টাকা পাঠালে, এক সাথে নিয়ে যাবে। আর এখন ওদের বলার দরকার নাই। টাকা পাওয়ার পর, তখন বলিস।
    – আজ কি আমি বাড়ী চলে যাবো?
    – হ্যা, তাই ভালো।

    আইরিন, আয়মন, তারিন তিন জন টেবিলের নাশতা মজা করে খাচ্ছে। শারমিন ও টুকটাক খাচ্ছে, কিন্তু পলির মন এতো খারাপ হয়েছে, তার খেতে ইচ্ছে করছেনা! পলির জন্য কলির ও মন খারাপ, তার বোন কত্ত স্বপ্ন আশা নিয়ে দেখেছিল, সব এক কথায় শেষ!

    জাহিদ মাগরিবের নামায পড়ে বোনেদের সাথে কথা বলে বেরিয়ে গেল। পলি মন খারাপ করে বারান্দায় বসে আছে। শুধু চিন্তা করছে, কেন এমন হয় তাদের সাথে!

    কলি দৌড়ে এসে বললো আপা, খালাম্মা জিজ্ঞেস করছে আমরা হলে কখন যাবো? রিকশার জন্য কাউকে পাঠাবেন কিনা!
    – এই ঘুটঘুটে অন্ধকারে আমরা দুজন কেমনে হলে যাবো!
    – আমরা এখানে থাকি, উনি পছন্দ করছেন না।
    – ভাইজান কি বলেন?
    -ভাইজান নাকি বাইরে চলে গিয়েছেন কাজে।
    – এই ঘুটঘুটে অন্ধকারে দুইজন মেয়ে কিভাবে যাবো? আর হলে কি এখন ঢুকতে দিবে? আর দিলেও হেমা-রুপাকে কি বড় মুখ করে বলেছি খালার বাসায় থাকবো। এখন?
    – জানিনা রে!

    সাহেদা ডাকতে ডাকতে এসে বললেন রিতা চলে যাচ্ছে, ওর গাড়ী আসছে, তোমরাও ওর সাথে চলে যাও। তাহলে ঝামেলা নেই। ওকে বলেছি, ও নামিয়ে দিবে।
    – জি খালাম্মা!

    দুই বোন জিহান কে আদর করে, রিতা খালার সাথে খুব মন খারাপ করে তাদের ব্যাগ নিয়ে উঠে গেল।

    কলেজের কাছাকাছি আসার পর রিতা বললেন এই পলি মন খারাপ নাকি?
    – জি না খালাম্মা।
    – শোনো, আল্লাহ যা করেন সব সময় ভালোর জন্য করেন। তোমার জন্য ভালো পাত্র অবশ্যই আছে।
    – জি।

    এই ড্রাইভার ওদের কলেজের নিচে নিয়ে গাড়ী রাখবে, ওরা নামবে!

    দুই বোন একে অন্যের দিকে তাকাচ্ছে। রাত প্রায় আটটা এখন কি হলে ঢুকতে দিবে?

    গাড়ী থামার পর পলি-কলি নামতে যাচ্ছে তখন হঠাৎ রিতা বললেন এই কলি ব্যাগে কি?
    – কাপড়।
    – কিসের? জাহান কিনে দিয়েছে?.
    – না, রাতে থাকার জন্য সাথে নিয়েছিলাম।
    – তাই নাকি?
    – জি।
    – এই তোমরা গাড়ী তে থাকো, আজ আমার বাসায় থাকবে। কাপড় যখন সাথে আছেই।
    – না, না।
    – আরে মেয়েরা চুপ থাকো। ড্রাইভার গাড়ি চালাও। আমার ছেলে মেয়েরা, দেখলে খুব খুশি হবে।

    দুই বোন ভিতরে ভিতরে কি পরিমাণ খুশি হয়েছে, যাক হলে যাওয়া থেকে তারা বেঁচে গিয়েছে। আজ রাতে থাকতে দেওয়ার জন্য রিতাকে সারাজীবন মনে রাখবে দুইবোন।

    রিতা খালার বাসা কি সুন্দর! সাদা রঙের দুইতলা বাড়ী। চমৎকার করে গোছানো,সম্পূর্ণ বাড়ী। বেতের চেয়ার সারি করে সাজিয়ে রাখা বারান্দায়।

    রিতার স্বামী যুবায়ের সাহেব বসারঘরে টিভি দেখছিলেন, রিতা কে দেখেই বললেন, যাক অবশেষে ঘরে এলে! কতক্ষণ হয়েছে, অফিস থেকে এসেছি।
    – মেহমান নিয়ে এসেছি, জাহানের ননদ।
    – ভাগ্নীরা কেমন আছ? রিতা, ল্যন্ডলাইনে জানালেনা, আমি কিছু স্পেশাল বাজার নিয়ে আসতাম।
    – বাজার আছে, তুমি চিন্তা কর না।
    – না না। এরা আমার বড় মেহমান।
    – সমস্যা নেই, আমি ওদের জন্য স্পেশাল ডিস করবো।
    – দ্যাটস গুড, সো ইয়াং লেডি তোমাদের এতো টায়ার্ড লাগছে কেন? যাও ফ্রেশ হও। বাই দ্যা ওয়ে দাবা পারো?
    – জি খালু, আমি আপা দুজনে পারি।
    – রাতে খেলবো।
    – জি।

    পলিদের জন্য একটি সুন্দর রুমের ব্যবস্থা করে দিলেন রিতা, বললেন তোমরা রেস্ট নাও। আমি একটু রান্নাঘরে যাই।

    পলি বললো খালা প্লিজ আমাদের জন্য কিচ্ছু এক্সট্রা করবেন না!
    – তুমি চুপ করে রেস্ট নাও, একদম চুপ। আর হ্যা, চাকরির জন্য ছেলে পক্ষ আসেনি তো! আমি তোমার খালুকে বলে তোমাদের টাইপিং এবং কম্পিউটারে ভর্তির ব্যবস্থা করছি সরকারি ভাবে। দেখবে শিখলেই পড়া শেষ করার সাথে সাথেই চাকরি পেয়ে যাবে।
    – ধন্যবাদ খালা।

    রিতা বেগমের মেয়ে শান্তা এসে অনেকক্ষণ বলে গিয়েছে, সে ক্লাস ফোরে পড়ে, সে তার পুতুলের গল্প করেছে। এবং তার বড় বোন ক্সন্তা আর ভাই মুয়াজ স্যারের কাছে পড়ছে এঈ খবর দিয়ে গিয়েছে। কি মিষ্টি দেখতে শান্তা!

    কলি বললো দেখেছিস আপা খালু কত্ত বড় চাকরি করে অথচ কোন অহংকার নেই। কত হাসিখুশি। অথচ ভাবীদের কি অবস্থা!
    – থাক, সেসব কথা।
    – শান্তা ও কত মিশুক।
    – হ্যা। অনেক মিষ্টি।
    – খালা যা বলেছেন তা হবে তো?
    – হবে হবে। খালু যদি আমাদের সরকারি ভাবে এসব কোর্সে ভর্তি করে দেন, তাহলে আমাদের যে কত বড় হেল্প হবে, এটা শুধু আমরাই জানি।
    – হ্যা আপা। তাই যেন হয়।

    পলি নিজেও ভাবছে সত্যি কি সাহেদা বেগম রিতার বোন একদমই মিলানো যায়না! থাক, সেসব চিন্তা এখন খালু ভর্তি করে দিলেই শান্তি…..

    চলবে…

    আন্নামা চৌধুরী
    ১৫.১২.২০২১

  • ভাবীর সংসার (পর্ব-১৬)

    ভাবীর সংসার (পর্ব-১৬)

    গত দুই দিন আরেকজনের বাটি দিয়ে কোন রকম দিন পার করলো পলি। কারণ আগে তরকারি না আনলে ভালো কিছু পাওয়া যায়না হলের ডাইনিং এ, এদিকে তাদের বাটি নেই। তরকারি আনতে বাটি প্রয়োজন।

    জাহিদ দুই দিন পর আসার কথা সে আজ এখনো আসেনি, হয়তো টাকার যোগাড় করতে পারেনি।

    কলি বললো কেন যে বিস্কুট-মুড়ি কিনে আনলি আপা! নয়তো ঠিকই মার্কেটে গিয়ে দুটি বাটি কিনে আনতে পারতাম।
    – গত কাল রাতেই তো মুলার তরকারি দিয়ে ভাত খেতে পারিস নি, বিস্কুট খেয়ে ঘুমিয়েছিস।

    – আজ তো দেখলে, রুপা মুখের উপর বলে দিল, তার বাটি সে দিতে পারবে না।
    – ভাবছি আজ বিকেলে ভাবীদের বাসায় গিয়ে দুটি বাটি নিয়ে আসবো।
    – আরেক দিন অপেক্ষা কর, মেজ ভাই আসবে।
    – আর যদি কাল না আসে?
    – তাহলে তুমি যাও, আমি যেতে পারবো না, ওই বাসায়।
    – আচ্ছা, আমি নিয়ে আসবো।
    – হেঁটে হেঁটে যাবে?
    – আছে আর চল্লিশ টাকা, এটা তো রাখতে হবে, কখন কোন প্রয়োজন আসে। আর কি উপায় আছে।

    পলি অর্ধেক রাস্তা হেঁটে যাওয়ার পর দেখলো শারমিনের খালা রিতা রিকশা করে যাচ্ছেন শারমিন দের বাসায়। তিনি রিকশা থামিয়ে বললেন, এই পলি কোথায় যাচ্ছ?
    – ভাবীদের বাসায়।
    – চলে আসো, আমিও যাচ্ছি।
    – জি খালা।
    – তা, এতো রাস্তা কি হেঁটেই যাচ্ছিলে?
    – রিকশা পাইনি খালা, তাই হাঁটছি।

    পলি ইচ্ছে করেই মিথ্যে বললো তাদের আর্থিক অবস্থার কথা সবাইকে জানিয়ে কি হবে! তার ভাইজানের সম্মান যাবে।

    পলি ভাবীকে গিয়ে আস্তে করে বললো ভাবী, মেজ ভাই দুই/তিন দিনের মধ্যে চলে আসবে। তুমি আমাকে দুটি বাটি দিতে পারবে! আসলে, মার্কেট অনেক দূরে, এজন্য একা যেতে চাচ্চিনা।
    – দুই বোন মিলে যেতে।
    – আমরা কি আর সব চিনি ভাবী।
    – আচ্ছা, বসো আমি নিয়ে আসছি।
    – ভাবী, প্লিজ রিতা খালার সামনে বলবে না, আমি যে বাটি নিতে আসছি। খুব লজ্জা লাগছে।
    – লজ্জা আমার ও করছে পলি, সামান্য বাটি না নিয়ে হলে উঠে গিয়েছ, আমারই তো ননদ বাটি কিনতে সমস্যা লজ্জা টা আমার, আমি কেন খালাকে বলতে যাবো।

    একটা কাগজের প্যাকেটে শারমিন পলিকে বাটি দিয়ে বললেন, সুন্দর করে দিয়েছি, হলে যেয়ে খুএ দেখিও।
    – ধন্যবাদ ভাবী, জিহান কে আদর দেই একটা, যাই এখন।

    আসার সময় রিতা, পলিকে রিকশা করে তার কলেজের গেইটের সামনে নামিয়ে দিয়ে গেলেন এবং বললেন, তোমাদের খারাপ লাগলেই খালার বাসায় চলে আসবে, মাত্র দশ মিনিট লাগবে। খুব খুশি হবো আসলে।

    সাহেদা বেগমের বোন রিতা, একদমই বিশ্বাস হয় না। কত আন্তরিক এই মানুষ টি! যেন সম্পূর্ণ আলাদা।

    পলি রুমে ঢুকতেই বললো, সরি রে আপা, তোকে এভাবে একা যেতে দেওয়া ঠিক হয়নি। মন খুব খচখচ করছিল, তুই যাওয়ার পর। শুধু মাত্র ভাবীর বাসার মানুষের কথার ভয়ে যেতে ইচ্ছা হয়না। অনেক কষ্ট হয়েছে না, কত দূর হেঁটে যেতে হয়েছে।
    – না, রিতা খালা কে পেয়ে তার সাথে চলে গিয়েছি।
    – যাক, শান্তি লাগলো। বাটি দিয়েছে।
    – দেখ, এই কাগজের ব্যাগে দিয়েছে। আমি টয়লেটে যাই, এসে দেখছি।
    – আচ্ছা।

    কলির ব্যাগ খুলেই মন খারাপ হয়ে গেল, পুরোনো দুটি বাটি, নিচের দিকে কালির দাগ, কিছুটা বাঁকা হয়ে গিয়েছে, সম্ভবত এগুলো পরিত্যক্ত বাটি ছিল। এর মধ্যে স্টিলের বাটি।

    কলির মনে হচ্ছে এগুলো এখন ফেলে দিতে, ভাবীর কি একবার ও রুচিতে বাঁধলো না, এই বাটি দিতে! থাক পলি আপার সামনে এই নিয়ে কথা বললে হয়তো মন খারাপ করবে, বলার দরকার নেই। কিন্তু কলিং বাটি দেখে মন খারাপ হলো।

    টয়লেট থেকে এসে টেবিলের উপরে বাটি দুটি দেখে পলি হা করে তাকিয়ে আছে, কেমনে পারলেন ভাবী এমন একটা কালি মাখা, বাঁকা বাটি দিতে। পলির মনে হচ্ছে কেন যে বাটি আনতে সে গেল, না গেলেই হতো!

    দুদিন পর জাহিদ হলে তাদের সব জিনিসপত্র নিয়ে আসলো, তাদের বই-খাতা, কাপড়, বাসনের মধ্যে আনলো,দুটি ধবধবে সাদা কাঁচের বাটি, দুটি মেলামাইনের বাটি, চামচ, দুটি মগ, দুটি কাঁচের গ্লাস, সব বাসন নতুন কিনে এনেছে জাহিদ।

    পলি বললো মেজ ভাই কেন নতুন জিনিস কিনতে গেলে? ঘর থেকে নিয়ে আসতে!
    – আর এই কয়েক টা জিনিস বতুন আনলে কি হয়? আর হলে থাকবি, দশজন দেখবে, ভালো জিনিস নিয়ে থাকবি না?
    -হুম

    পলি তার ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে, বোনেদের সম্মানের কথা কত চিন্তা করে, অথচ ভাবী কি ধরনের বাটি দিলেন! জগত খুবই রহস্যময়।

    পলি বললো, কাঁচের বাটির কি দরকার?
    – রাখ কাজে লাগবে, আর এই তিনশো টাকা রাখ, পাঁচ তারিখ হতে আর সাত/আট দিন আছে। আমি টিউশনির বেতন পেয়েই টাকা পাঠাচ্ছি, ভাবীর নামে।

    কলি বললো কেন ভাবীর নামে কেন?
    – ভাইজান আমাদের গুরুজন, উনি বলেছেন কথা টা রাখা উচিত, যতই হোক উনি আমাদের এক সময় করেছেন।
    – নিজের ব্যবস্থা করে, তবেই করেছেন।
    – থাক, এসব বলিস না। আমি আজ যাই, তোরা খুব ভালো করে পড়বি, খুব ভালো করে।

    দুই বোন কলেজের গেইটে দাঁড়িয়ে ভাইয়ের যাওয়া দেখছে। জাহিদ চলে যাওয়ায় মন টা খুব খারাপ হয়ে গিয়েছে দুজনের।

    রুমে আসার পর রূপা বললো তোমাদের দেখি অনেকগুলি বাসন-কোসন আসছে!

    কলি বললো হুট করে উঠায়, আগে আনতে পারিনি, তোমার লাগলে নিও।
    – হুম।

    পলি বললো কিরে তুই ওকে খোঁচা দিলি কেন?
    – খোঁচা দেইনি, তাকে সত্যিই ব্যবহার করতে বলেছি, দুই দিন আগে ঠিকই তো না করেছিল, আমরা ছোট লোক নই, বুঝিয়ে দিলাম।
    – থাক, বাদ দেয়।
    – না রে, সব সময় বাদ দিলে, অনেকেই মাথার উপর নাচা শুরু করে দেয়। ভাবীর মতো আর এদের নামানো যায়না।
    – হইছে, বাদ দেয় বললাম তো!
    – হুম, বাদ দিলাম।

    দুই দিন পর বাড়ী থেকে হলে চিঠি আসলো, কলি চিঠি নিয়ে এসে বললো আপা খারাপ কিছু নয়তো?
    – আগে পড়, দেখি কি লেখা।

    প্রিয়,
    পলি-কলি,

    আজ আমাদের অতিশয় খুশির দিন নাহিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছে। বাড়ীতে এসেই চিঠি পেলাম, এবং নতুন দুটি ভালো টিউশনি পেয়েছে, তারা চলতে পারছে, এখন ঠিক ঠাক মতো। যেখানে ভালো সাবজেক্ট পাবে, ভর্তি হয়ে যাবে। এরচেয়ে আনন্দের খবর আর কি হতে পারে। আরেকটি সু খবর হলো ভাইজানের নতুন অফিসের সহকর্মী, জুনিয়র অফিসার পলিকে আগামী শুক্রবার দেখতে আসবে, আমি ও আসবো সব ধরনের খরচ পাতি নিয়ে। দুইজন তোরা এক রাতের ছুটি নিয়ে ভাবীর বাসায় চলে যাবি। পলি, আল্লাহ হয়তো তোর জন্য উত্তম জিনিসই রেখেছেন,তুই চিন্তা করিস না। মা ভালো আছেব, তোরা ভালো থাকিস, আর পড়তে থাকিস।

    ইতি,
    জাহিদ।

    কলি আর পলি ভাইয়ের চান্স পাওয়ার খবরে হাত ধরাধরি করে ঘুরছে খুশিতে। তাদের মনে হচ্ছে আজকে তাদের সবচেয়ে আনন্দের দিন।

    কলি বললো, আপা, দেখেছিস তোর ভাগ্য কত ভালো, কত ভালো আছি বিয়ের প্রস্থান এসেছে।

    পলি বিয়ের কথা শুনে লজ্জায় লাল হয়ে গিয়েছে। কেমন যেন লজ্জা লাগছে তার!

    দুই বোন এখন, অধীর আগ্রহ করে আগামী শুরবারের অপেক্ষা করছে…..

    চলবে…

    আন্নামা চৌধুরী
    ১২.১২.২০২১

  • প্রবাস জীবন (পর্ব-৯)

    প্রবাস জীবন (পর্ব-৯)

    পালমার্সটন নর্থে আমার মা

    জীবন আর জীবিকার প্রয়োজনে মানুষ কত শহরেই না তার ক্ষুদ্র জীবনের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র আংশ নিজ অজান্তেই রেখে আসে। আবার কিছু কিছু নিজ হৃদয়ে গেঁথে নিয়েও আসে। কিছু স্মৃতি মানসপটে আজীবন আঁকা থাকে আর অন্যসব কালের স্রোতে হারিয়ে যায়। ছোটকালে মনে আছে বাবার চাকুরী বদলীর সুবাদে কয়েকটা শহরে আমাদের থাকতে হয়েছে। এমনকি আমরা মা সহ চার ভাইবোন গ্রামে নানাবাড়িতে পুরো এক বৎসর কাটিয়েছি যখন বাবার ইংল্যান্ড আর আলজেরিয়াতে চাকুরীর প্রয়োজনে থাকতে হয়েছে।

    পালমার্সটনের দেড় বৎসর সময় আমার স্মৃতিতে উজ্জ্বল। আমাদের তখন অনেক ব্যস্ত সময়। প্রমার বাবা চাকুরীর শুরুতেই ফেলোশীপ পরীক্ষার আয়োজন শুরু করে দিয়েছে। সামাজিকতা রক্ষা, সাংসকৃতিক অঙ্গনে আমাদের চলাফেরা, ছোট বাচ্চা , সংসার এতোসবের মাঝেও আমি কখনো দিক ভ্রানত হইনি। ফাঁক পেলেই ক্লিনিক্যল পরীক্ষার জন্য মুরতাগ নিয়ে বসতাম। অতিকষ্টে সেখানে আর একজন পরীক্ষা্র্থী পাওয়া গেলো যার সাথে আমি মাঝেমধ্যে পড়াশুনা শেয়ার করতে পারি আর ক্লিনিক্যল পরীক্ষার ভাইভা প্র্যাকটিস করতে পারি। হাসপাতালে প্রমার বাবা যার সাথে একসময় কাজ করেছিল মেডিসিন স্পেশালিষট রিডার্ড ইভার্টস এর সঙ্গে কথা বলে আমার অবজার্ভারশীপ ঠিক করে দিলো।যাতে আমি আমার সুবিধামতন যেতে পারি আর সপ্তাহে মাত্র কয়েক ঘন্টা আমার উপসথিত থাকলেই চলে। তবে আমার ভীষণই বিব্রত বোধ হতো রাউন্ডের মাঝখানে গিয়ে পৌঁছুলে বা কিছুক্ষণ পরই বাচ্চার অজুহাতে চলে আসতে হলে।কেনো যেন মনে হয় উনি আমাকে বুঝতে পারতেন আর সেই স্বল্প সময়ের মধ্যেই চেষ্টা করতেন আমাকে কিছু না কিছু শিখিয়ে দিতে। আমি চিরকৃতজ্ঞ উনার প্রতি। বলা বাহুল্য যে প্রকৃত অবজার্ভারশীপের জন্যে সবাইকে প্রায় চল্লিশঘন্টা হাসপাতালে থাকতে হয় আর তা রোগীদের সার্বিক ব্যবস্থাপনা শিখতে দারুন সহায়তা করে। আমার জন্যে বিকল্প এ ব্যবস্থার পেছনে কারণ ছিল মূলত প্রমার দেখাশুনা।

    আমার মনে আছে চাইলড কেয়ারের শিক্ষকের রেকমেনডেশনে আমার প্রমাকে কয়েকদিন একজনের কাছে রেখেছিলাম। ক’দিন না রাখতেই একদিন ওর ভীষণই বিরক্তিমাখা কন্ঠসবর ফোনের এপ্রান্তে পেলাম “ তুমি এক্ষুনি এসে তোমার বাচ্চাকে নিয়ে যাও। ও খামোখাই চিৎকার করে কেঁদে বাড়ি মাথায় করছে। থামতে বললে থামছে না।” আমি ভেবে পেলাম না শান্ত মেয়ে আমার যে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয় কাঁদে সে কেনো এতো তারস্বরে কাঁদছে? আমি হনতদন্ত হয়ে ছুটে গিয়ে দেখি প্রমাকে কান্নার শাস্তিস্বরূপ করিডোরের এক কোণে বসিয়ে রাখা হয়েছে আর সে স্বভাবসুলভ ফুঁপিয়েই কাঁদছে। আমাকে দেখে যেন আমার চার বৎসরের প্রমা হাতে আকাশের চাঁদ পেলো- মূহুর্তেই আমার কোলে ঝাঁপিয়ে পড়লো।সেদিন প্রথম বাচ্চাকে কষ্ট দেবার জন্যে আমার বুকটা ভেঙগে টুকরো হয়ে গিয়েছিল। তখন আমি বুঝতে পারিনি যে আরও কত বুকভাঙগা গল্পের প্লটের জন্য প্রফেশনাল মায়েদের তৈরী থাকতে হয়।

    আমি প্রতিজ্ঞা করলাম প্রমাকে বাঙ্গালী পরিচিত পরিবেশে রাখব আর সকল ভাবীদের জিজ্ঞেস করে ত্যক্ত করা শুরু করলাম।অবশেষে যিনি রাজী হলেন তিনি হলেন হাসিখুশী আর মিশুক ওয়াহাব ভাবী। আমি দুঃখপ্রকাশ করছি এজন্যে যে আমার উনার নামটি এখন মনে নেই যেহেতু উনি ওয়াহাব ভাবী নামেই পরিচিত ছিলেন। ভাই ভাবীর দুই মেয়ে আর এক ছেলে মোটামুটি বড় আর তাই উনার হাতে কিছু সময় ছিল যা আমাকে ধার দিয়ে চিরদিনের জন্যে ঋনি করেছেন। ওয়াহাব ভাই সম্পর্কে একটু না বললেই নয়। উনি ছিলেন পালমার্সটন নর্থ ইউনিভার্সিটির লেকচারার। উনার সবচাইতে বড় গুণ ছিল উনি জোকস বলে আসর মাতিয়ে রাখতে পারতেন আর তাই যে কোনো অনুষ্ঠানে উনি ছিলেন অপরিহার্য। আর আমরা সবাই যখন উনার জোকস শুনে হেসে গড়িয়ে পড়তাম ভাবীর মুখে এক চিলতে হাসি ফুটতো কিনা সন্দেহ। উনাকে জিজ্ঞেস করলে একদিন বললেন “ উনিশ বৎসর একই জোকস শুনছি আর কত হাসব?” আমার ধারণা ভাই প্রথম প্রথম কেবল ভাবীকেই জোকসগুলো শুনাতেন আর উনি নিশ্চিত ভালবেসেই শুনতেন আর হেসে কুটিকুটি হতেন। আমার এখন খুব জানতে ইচ্ছে করে কেনো ওয়াহাব ভাই ভাবীকে নিভৃতে জোকস শুনানো বন্ধ করলেন আর কেনোই বা ভাবী বারে বারে একই জোকস শুনেও হাসতে পারতেন না!

    আমার ক্লিনিক্যল পরীক্ষার সময় এগিয়ে এলো। প্রস্তুতি মোটামুটি খারাপ হয়নি বলেই আমার ধারণা আর তাছাড়া লিখিত পরীক্ষার চাইতে সন্মুখ পরীক্ষায় আমার পারফর্মেনস সবসময়ই ভালো ছিল। ইতোমধ্যে আমি ওয়েলিংটন শহরে ইংরেজী পরীক্ষা দিয়ে আসলাম পুরো পরিবারসহ। একেবারে হলিডে এর মত সেই দুদিন কাটল। এবার যেতে হবে ক্রাইস্টচার্চ কিন্তু একা কারণ প্রমার বাবার ঐ সময়ই পোস্টগ্রেজুয়েশন পরীক্ষার প্রিপারেশন হিসেবে একটা কনফারেন্সে যোগ দেবার অভিপ্রায় আগে থেকেই। আমার আর কোনো উপায় থাকলো না মাকে এসে আমাকে সাহায্য করতে বলা ছাড়া। আমার মা তখন সংসার, বাবা ছোটভাইবোন রেখেই পালমার্সটন আসতে এক মুহূর্তের জন্যে দ্বিধা করেননি। যিনি জীবনে কোনোদিন তেমন ট্রাভেল করেননি উনি একা একা ঢাকা থেকে কুয়ালালামপুর হয়ে অকল্যানড হয়ে আমার জন্যে পালমার্সটন নর্থ এসে পৌঁছালেন। অবশ্য অকল্যানডে উনাকে এয়ারপোর্ট থেকে রিসিভ করে বাসায় এনে, উর্মির মজাদার রান্না খাইয়ে আবার প্লেনে তুলে দেবার বাপপী ভাইয়ের সহযোগিতা আমার মা এখনো মনে রেখেছেন। এমনটি ই হলেন আমার মা যিনি এই একাত্তর বৎসর বয়স পর্যন্ত কেবল দিয়েই গেলেন কোনোরকম প্রতিদান ছাড়া।

  • ভাবীর সংসার (পর্ব-১৫)

    ভাবীর সংসার (পর্ব-১৫)

    সাঈদ হাতে করে এক হালি ডিম, কিছু বিস্কুট, এক প্যাকেট নুডুলস নিয়ে বাসায় ফিরলো কিছুক্ষণ পর।

    এসে মায়ের পাশে বসে বললো, খুব ঝামেলায় আছি, বদলির অর্ডার যেকোনো দিন আসবে। এখন কোথায় করবে কে জানে! বাচ্চা ছোট খুব যন্ত্রণায় আছি মা!
    তুমি টাকা এনে যে কি ভালো কাজ করেছ, আমি তোমাকে বুঝাতে পারবো না।

    রাহেলা খানম বললেন, বাবা শোন আমার কিছু কথা আছে। আর আমি কথা শেষ করার আগে তুমি কিছু বলবে না।
    – বলো, বলো।
    – কামরুল চট্টগ্রাম বাড়ী কিনছে, তার টাকার দরকার। তাই আমার পাশের জমি টি, আমার সহ বিক্রি করতে হয়েছে। কারণ আমার টা ছাড়া ওর জমি লম্বাটে হয়ে যায়। এখন বিক্রি করে তিন লক্ষ টাকা পেয়েছি। তার মধ্যে দুই লক্ষ টাকা পলি-কলির বিয়ের জন্য রেখেছি। পঞ্চাশ হাজার টাকা দিয়ে জাহিদ কে বইয়ের লাইব্রেরি করে দিয়েছি। আর বাকি পঞ্চাশ তোমাকে দিচ্ছি। আরো হাজার দশেক পেয়েছিলাম, তাতে কিছু কাজ, দাদুভাইয়ের চেইন কিনতে গিয়েছে। এখন আমার সকল দিক ভাবা লাগে, আমি মা। শুধু তোমাকে দিলে, আমার হবে না! আর জমির সরিষা বিক্রি করে, ঘরে চাল আনি। কেমনে বন্দক দিব বলো?
    – আমাকে কি কথা বলার জন্য বলছো?
    – বলো।
    – আমি আর কি বলবো? আমি কে? মা? তুমি ঠিক আমি তো আর তোমার একা ছেলে না! তবে, কেন আমাকে তোমার তিন তিনটি ছেলে মেয়েকে বহন করতে হলো! কেন ছাত্র থাকা কালীন সারা মাস ডাল-ভাত খেয়ে কাটিয়ে দিতাম, বাড়ী যাওয়ার সময় দুই প্যাকেট নিমকি নিতে পারবো, এই আশায়।
    – তোমার বাবার মৃত্যুর পরে, তুমি তো এই পরিবারের অভিবাবক। এখন আমি বড় অসহায় হয়ে গিয়েছি।

    – ছোট মামার জন্য জমি বিক্রি করলে, বললে না পর্যন্ত একবার!
    – জাহিদ কল দিয়েছিল, তুমি অফিসের বাইরে ছিলে।
    – থাক, তোমার জমি, টাকাও তোমার, আমি কে!
    – সাঈদ, কেন এভাবে বলছিস বাবা?
    – মা, এখন তো আর জাহিদের সমস্যা হবে না। তুমি পলি-,কলিকে হোস্টেলে রেখে যাও, ওদের খরচ জাহিদ দিবে। আমি আর পারবো না মা।
    – বাবা, শাহিদ-নাহিদ ঢাকায় একা কেমনে আছে, আল্লাহ জানে। তুমি দেখো, এখনো আমি সবচেয়ে বেশি টাকা তোমাকে দিয়েছি।
    – এজন্য ধন্যবাদ। কিন্তু, আমি ওদের দায়িত্ব নিতে পারবো না। আমার সংসার, বউ, বাচ্চা, বদলির জন্য আলাদা বাসা, খাওয়া-দাওয়ার খরচ। আমার পক্ষে সম্ভব না।জাহিদ কে বলবে, ওদের খরচ জাহানের কাছে পাঠিয়ে দিতে। আমার ট্রান্সফার এই পঞ্চাশ হাজার দিলেও হবে, হয়তো একটু কাছাকাছি হবে। এক লক্ষ টাকা হলে, হয়তো বাসা থেকে অফিস করার সম্ভবনা ছিল। থাক, যা হয়নি তা হয়নি। আর হ্যা, আমি ওদের ভর্তি করে দিব, হোস্টেলে। আর কিছুতে আমি নাই।
    – তুমি কষ্ট নিও না বাবা।
    – না, আমার কষ্ট কে দেখবে? সকলের প্রয়োজন দেখার দায়িত্ব শুধুই আমার।

    সাঈদ হন হন করে ঘরের বাইরে চলে গেল। রাহেলা খানম কি করবেন, তিনি জানেন না। ছেলেকে কি বলবেন! তিনি অপরাগ। জাহিদ কে বুঝিয়ে বললেন, কষ্ট করে রাত টা থাকার জন্য। ওদের ভর্তি করে, হলে তুলে দিয়ে এক সাথে যাবেন মা-ছেলে।

    রাতের বেলা, রাহেলা খানম ভাত, আর ডিম ভাজি করে চার জন খেয়ে নিলেন, সাঈদ হয়তো অভিমান করে কোথাও বসে আছে! তিনি ছেলের অপেক্ষায় বার বার বারান্দায় আসছেন,যাচ্ছেন।

    পরের দিন সকাল এগারোটায় দুই বোন ভর্তি হলেন মহিলা হোস্টেলে। সাঈদ হোস্টেলের টাকা দিয়ে বললেন, আর আমাকে কিছু বলবিনা, তোদের ব্যবসায়ী ভাই কে বলিস।

    লোকাল গার্ডিয়ান হলেন মিসেস সাহেদা খানম। কারণ, সাঈদের ধারনা তিন/চার দিনের মধ্যেই তার অর্ডার আসবে, বদলির।

    জাহিদ কলেজের বাইরে দুই বোন কে ডেকে বললো, কিরে তোরা বাড়ী চলে যাবি? নাকি এখানেই থাকবি?

    কলি বললো না, বাড়ী গিয়ে ভাড়া নষ্ট করে লাভ নাই। তুমি দু/এক দিন পরে বই খাতা, কাপড় নিয়ে হলে এনে দিয়ে যেও।

    জাহিদ দুই বোনের জন্য বালিস কাঁথা চাদর প্লেইট কিনে হলে তুলে দিল। রাহেলা খানম মেয়েদের বার বার বলছেন, ভাইয়ের বদনাম হয়, এমন কাজ করবেনা। আর বউয়ের কাছ থেকে টাকা আনবে গিয়ে, জাহিদ দিবে, নয়তো আমি। আমার মা-ছেলে শাক পাতা দিয়ে খাই সমস্যা নাই কিন্তু তোরা পড়িস।
    – কেন, আপার নামে মানি অর্ডার করলেই হয়।
    – জাহান তোদের বড় ভাইয়ের বউ, তার কাছ থেকে আনতে লজ্জা কিসের। সাঈদ এখন বেশি কষ্ট পেয়েছে, তাই রাগ করছে, পরে ঠিকই দেখবি, তোদের দেখতে আসবে, চিন্তা করিস না।

    জাহিদ আর রাহেলা খানম জিহান ( সাঈদের ছেলে) কে এক নজর দেখে রাতের ট্রেনে উঠলেন।

    জানালার পাশে বসেছেন রাহেলা। সাঈদ এক বোতল পানি দিয়ে বললো দোয়া কর তুমি, আমার সত্যি কোথায় বদলি হয় জানিনা!

    রাহেলা খানমের ট্রেন ছাড়ার পর থেকে মন খারাপ লাগছে, সাঈদ সত্যি বিপদে, ছেলেটা কষ্ট পেয়েছে। কিন্তু বাকিদের ভাবনা ভাবতে হলে, কিছুই করার নাই তার। মেয়ে দুটিকে অপরিচিত জায়গায় রেখে যেতে মন খুব অশান্ত লাগছে। পড়াশোনা শুরু হচ্ছে, এটা ভাবতে আবার শান্তি লাগছে। কায়া দেখলে মায়া হয়, বার বার নাতির মুখ টা চোখে ভাসছে রাহেলার।

    পলি-কলির রুম নাম্বার দুইশো সাত, দুই তলার শেষ রুম টা তাদের। শেষ রুম হওয়ায় ডাইনিং আর টয়লেট বেশ দূরে, তবুও হলে উঠেছে, তাই ভালো লাগছে।

    পলি দারোয়ান কে দিয়ে পঞ্চাশ টাকার বিস্কুট, মুড়ি, চানাচুর,চিড়া কিনে আনলো, কারণ পড়তে পড়তে ক্ষিদে লাগবে। জাহিদ যাওয়ার সময় আশি টাকা দিয়ে গিয়েছে। এবং দুই/তিন দিনের মধ্যে আবার আসবে বলেছে। তাই এই টাকা খরচ করেছে পলি।

    হলে, দুপুরের পর রাতের খাবার অনেক দেরীতে, মাঝের সময় অনেক লম্বা, তাই বাধ্য হয়েই এই ড্রাই খাবার এনেছে পলি।

    রাতে, ডাইনিং থেকে খাবার দেওয়ার সময় বলে দিল, যেন তরকারীর জন্য এবং ডালের জন্য দুটি বাটি, একটি বাটি নিয়ে আসে। কিন্তু পলির কাছে বাটি, চামচ নাই। বাটি কেনার জন্য মার্কেটে যেতেও ত্রিশ টাকা ভাড়া লাগবে। এদিকে বাটি ছাড়া তরকারি দিবেনা। কি করবে পলি ভাবছে, বাটি কিভাবে ম্যানেজ দিবে! জাহিদের হয়তো খেয়াল হয়নি, তাই কিনে দেয়নি।

    রুমে এসে দেখলো, রুম মেটের বই নিয়ে কলি খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ছে। পলির খুব ভালো লাগছে যাক শেষ মেষ পড়াশোনা শুরু হবে, তাই শান্তি। কিন্তু তবুও বাটির চিন্তা মাথায় রয়েই গেল…..

    চলবে…

    আন্নামা চৌধুরী
    ০৯.১২.২০২১

  • ভাবীর সংসার (পর্ব-১৪)

    ভাবীর সংসার (পর্ব-১৪)

    ট্রেন স্টেশন থেকে নেমে, রাহেলা খানম চারিদিকে দেখছেন। কোথাও মিষ্টির দোকান আছে কিনা! কিন্তু তিনি দেখতে পেলেন না।

    জাহিদ বললো এই ভাবে কি দেখছো মা?
    – মিষ্টির দোকান, আছে না?
    – ট্রেন স্টেশনে মিষ্টি পাবে কি করে?
    – নাতি দেখতে যাচ্ছি, মিষ্টি নিতে হবে না?
    – ভাবীদের বাসার পাশের আছে, নিব।
    – আচ্ছা।

    পলির সারা শরীর বার বার গুলিয়ে যাচ্ছে, সারা রাস্তা কেমন যেন বমি বমি লাগছে। সে খুব বিরক্তি হয়ে বললো মা, আর দেরী কর না, আমার শরীর ভালো লাগছেনা।
    – হ্যা, হ্যা। চল।

    দুই কেজী মিষ্টি, এক কেজি রসগোল্লা, এক কেজী জিলাপি নিয়ে বেয়ানের বাসায় গেলেন রাহেলা।

    কলিং বেল তিন বার দেওয়ার পর, কাজের বুয়া রহিমা দরজা খুলে দিল।

    কলি বললো কি গো এতো দেরী খুলতে?
    – আফনের ভাইজতা হারা রাইত জাইজ্ঞা তাহে, আর হক্কলে হের সাথে নানান ডং করে, আর সক্কাল হইলে হেরা ঘুমায়, আমি আছিলাম কাফর ধুইতে, হেই জইন্য হুনি নাই।
    – ভাইজান কোথায়?
    – দুলাভাই অফিসে। আসেন আফানারা তয় কতা কইয়েন হেরা চিক্কুর দিব, হেরার ঘুম ভাংলে।
    – হুম।
    বিশাল বড় বসার ঘর, তারা সবাই বসার ঘরে বসে আছে, বাকি রুম গুলো অন্ধকার করা, সম্ভবত সবাই ঘুমাচ্ছে। এই জন্য তারা বসার ঘরে বসে আছেন।

    ঘন্টা খানেক পরে সাহেদা খানম বসার ঘরে এসে বসলেন।

    আসসালামু আলাইকুম বেয়ান, আছেন কেমন?
    – ওয়ালাইকুম আসসালাম। নাতির যন্ত্রণায় রাতে ঘুম নাই।
    – জোয়ান নানি,তাই এমন করে।
    – নাতি বড় হয়ে গেল, দাদী এতো দিন পরে খবর নিতে আসলেন? নাতির মুখ আমি দেখাবো না।

    রাহেলা খানম হাসছেন, কিন্তু কোন কিছু বলছেন না।

    কলি দুই বার বললো, ভাবী আমি ওকে একটু কোলে নিই? তিনি বার বারই বলছেন, না না তুমি পারবেনা। ও ছোট মানুষ। অথচ ভাবীর ছোট বোন তারিন, মাত্র নাইনে পড়ে, সে কিন্তু দিব্যি বাবুকে কোলে রাখছে।

    কলি এ নিয়ে মন খারাপ করে বসে আছে, সে বার বার পলিকে বলছে, আপা আমাদের কে কি একবার বাবু কোলে নিতে দিবেনা?
    – অবশ্যই দিবে, এখন তুউ ছোট মানুষ এজন্য দিতে ভয় পাচ্ছে।
    – তারিন কি?
    – তারিন এই কয়েকদিন নিতে নিতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে।
    – আর কথা বলিস না তো! যত্তসব ফালতু যুক্তি।
    – আচ্ছা বলছি না।

    দুপুরে খেতে বসেছেন সবাই, সাহেদা খানম বললেন, বেয়ান আমরা তো জানিনা আপনারা যে, এখন আসবেন, তাই আর আকীকার মাংস রাখি নি! কিছু মাংস ছিল, এগুলো ও আমাদের কিছু আত্নীয় দের বন্টন করেছি।
    – না না ঠিক আছে। আল্লাহ পাক আমার নাতিকে বড় করেন, হায়াত দিন। মাংস তো সবই এক।

    জাহিদ, কলি-পলি যেন আকাশ থেকে পড়লো, তারা তিন ভাই-বোন সুক্ষ দৃষ্টিতে মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু রাহেলা খানম তাদের দৃষ্টি এড়িয়ে নিচের দিকে তাকি ভাত মাখিয়ে যাচ্ছেন, যদিও মুখে নিচ্ছেন না, কিন্তু ভাত মাখিয়ে যাচ্ছেন।

    ভাত খাওয়ার পর পর, রাহেলা খানম শারমিনের রুমে বসে আছেন, কি বলবেন ছেলে-মেয়েদের তাই, তিনি ইচ্ছে করে তাদের এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।

    জাহিদ বারান্দায় পলি কে ডেকে বললো, কি রে ভাইজান আকিকা করে ফেললো অথচ আমার জানলাম না!
    – মা জানেন কিন্তু!
    – না, মাকে কিছু বলিস না, হয়তো এখানে এসে শুনেছেন। নিজেই কষ্ট পাচ্ছেন। তোরা মাকে কোন প্রশ্ন করিস না, মা আরও কষ্ট পাবে। মা,নিজেই কষ্ট পেয়েছেন এজন্য চুপ করে আছেন। আর কষ্ট দিস না!
    – হুম।
    – কলি কোথায়?
    – মন খারাপ করে বসে আছে, ভাতিজা কোলে নিতে দিচ্ছে না, এজন্য।
    – কলির এই আবেগের জন্য জীবনে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাবে৷ বুঝিয়ে বল ওকে। আর, আমি আজই চলে যাবো, তোরা থাক।
    – না,আমরা ও চলে যাবো।
    – তোরা দু/এক দিন থাক, মায়ের এখন গেলে কষ্ট হবে, এতো দূরের রাস্তা। আমি আজই চলে যাবো, পিরে তোদের নিতে আসবো।

    সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত জাহিদ, কলি-পলি বসার ঘরে বসে আছে, অথচ এই বাসায় রুমের অভাব নাই চাইলে একটি খুলে দিলে, তারা কিছুক্ষণ রেস্ট নিতে পারে। অথচ এই বাসার মানুষ এড়িয়ে যাচ্ছে তাদের। জাহিদের এজন্য ভালো লাগছেনা, শুধু ভাইজানের সাথে দেখা করার জন্য সে, অপেক্ষা করছে…

    বিকাল চারটার দিকে সাঈদ বাসায় এসে সবাইকে দেখে বেশ অবাক হলো।

    খাওয়া দাওয়ার পর, মাকে বললো মা, আসবে বললে না তো আগে!
    – নাতি দেখার জন্য মন ছটফট করছিল, তাই চলে এলাম। বাবা, তোর বাসা কি কাছেই?
    – কেন?
    – আমরা তোর বাসায় গেলে, ভালো হতো। এখানে কুটুম বাড়ী লজ্জা লাগছে।
    – নাহিদ যাওয়ার পর, বদলির যন্ত্রণায় আমি বাসায় যেতেই পারিনি। এখান থেকে অফিস করছি। বাসায় গিয়ে কি করবে?
    – কিছু জরুরি কথা ছিল?
    – জমি বন্দক দিয়েছিলে?
    – টাকা নিয়ে এসেছি।

    এই কথা শুনে, সাঈদের বিরক্তি ভাব টা চলে গিয়ে, চেহারায় বেশ হাসি হাসি ভাব চলে এলো।

    রাহেলা খানম বললেন, আমি নাতির জন্য একটা চেইন এনেছি, এটা বউমা কে দিয়ে দিস।
    – চেইনের কি দরকার, তুমি এসেছো। তাই তো অনেক।
    – না বাবা। খালি হাতে কি নাতি দেখা যায় নাকি! চাবি নিয়ে আয়, আমরা বাসায় যাই।
    – এই ভাবে, চলে গেলে। আমার শ্বাশুরি অনেক কষ্ট পাবেন।
    – আমি বুঝিয়ে বলবো।
    – আচ্ছা, আমি চাবি নিয়ে আসছি।

    চেইন দেখে শারমিন, সাঈদ কে বললো এটা চেইন নাকি সুতা?
    – আরে বাবা, তুমি রেখে দাও। পরে যেকোনো কাজে লাগিয়ে দিও। চাবি দাও?
    – চাবি দিয়ে কি করবে?
    – বাসায় যাবে মা।
    – বাসায় গিয়ে করবে? নাতি দেখতে এসেছেন, এখন চলে যাবেন।
    – চলেই যাবেন, চাবি দাও।
    – যত্তসব নাটক। আমি রহিমা বুয়া কে বলে দিচ্ছি, আমার রুমে যেন তালা দিয়ে আসে। আমার রুমে বাইরে কেউ ঘুরাঘুরি করুক, আমার পছন্দ নয়।
    – আচ্ছা দিও তালা। এখন ঘরের চাবি দাও।
    – দিচ্ছি।

    সাঈদ হাসি হাসি চেহারা নিয়ে সবাইকে নিয়ে বাসার দিকে রওনা হলেন। যাওয়ার সময় বললেন আমার নতুন বাসার নিচে কলি-পলিদের স্যার ভাড়া থাকেন। তাকে বলে, আমি হলের ব্যবস্থা করছি।

    এই কথা শুনেই কলি-পলির চেহারায় হাসির রেখা ফুটে উঠেছে। যাক এতো দিন পর, পড়াশোনা চালু হবে।

    বাসার গেইটে শফিউল আলমের সাথে দেখা হলো সবার। শফিউল আলম কলি-পলি দের শিক্ষক। কলি-পলি দুজন সালাম দিল।

    আসসালামু আলাইকুম আলম ভাই কেমন আছেন?
    – জি, সাঈদ ভাই। ভালো আছি, অনেক দিন পর বাসায় আসছেন দেখছি!
    – জি। ভাইজান, আমার দুই বোন আপনার কলেজে পড়ে, এখন ওদের হলের ব্যবস্থা করে দিলে খুব উপকার হয়।
    – জি, অবশ্যই। আপনার বোনেদের আমি দেখেছি কলেজে, ক্লাস ও নিয়েছি, এরা বেশ কয়েকদিন ধরে অনুপস্থিত দেখছি।
    – জি, পারিবারিক ঝামেলা ছিল, সামান্য!
    এখন ভাই হলের ব্যবস্থা হলে, খুব ভালো হয়।
    – এখানে লোকাল স্টুডেন্ট বেশি, হলে সিট খালি আছে, আপনি ওদের পাঠিয়ে দিবেন, কিছু কাগজ পত্র ফিল আপ করে দিলে, দু/এক দিন পরে উঠতে পারবে। কাল এগারোটায় আমার সাথে দেখা করবে দুজনে কেমন!
    পলি-কলি মাথা নাড়লো, এবং তারা খুব খুশি।

    অনেক ধন্যবাদ ভাই
    – না, না ঠিক আছে। আসছি, একটু বাইরে যাবো।
    – জি।

    বাসায় ঢুকে রাহেলা খানম বললেন, পলি পুরো ঘর ঝাড়ু দে, কেমন ময়লা হয়ে আছে।
    – মা, আমার শরীর টা ভালো লাগছে না। রহিমা বুয়াকে বল, করে দিবে।

    রহিমা বুয়া বললো, জিনা আমি এখন সময় নষ্ট করতে ফারুম না, আফা আমারে হের রুমে তালা দেওনের জন্য পাঠাইছিল, আমি তালা দিয়া বিদায় হচ্ছি।

    রাহেলা খানম অবাক হয়ে দেখছেন, রহিমা বুয়া তালা দিয়ে হন হন করে চলে গেল। কলি ঝাড়ু নিয়ে বললো , দাও কলি বুয়া আছে, ঝাড়ু দিয়ে দিবে।

    সাঈদ দোকানে গিয়েছেন, হয়তো কিছু আনতে। বাসায় ঢুকিয়ে দিয়ে, গিয়েছেন, এখনো আসেন নি।

    জাহিদ মাকে বললো, মা আমি আজ রওনা দিব, তুমি ওদের হলে তুলে দিয়ে, গঞ্জের দোকানে ফোন দিও, আমি এসে নিয়ে যাবো।
    -এক সাথে যাই বাবা।
    – না, মা। আমার দোকান নতুন, টিউশনি আছে। তাছাড়া তালা দেওয়ার পরে এই ছোট্ট রুম আছে, তোমরা থাক, আমি যাই। ভাইজান আসলেই আমি বের হবো।

    রাহেলা খানম আর কিচ্ছু বললেন না, সত্যি এই রুম বড় ছোট এখানে দুইজন মানুষের গাদাগাদি হয়ে যায়, আর চারজন সম্ভব নয়।

    সাঈদ টাকার বিষয়ে সব জানার পরে, কি করবে, তার জন্য চিন্তা করছেন, তিনি। সব জানার পরে, মেয়েদের পড়াশোনা চালু রাখবে কি বড় ছেলে?, নাকি ঝামেলা করবে! তাই নিয়ে ভাবছেন রাহেলা, তিনি ছেলের বাসায় আসার অপেক্ষা করছেন….

    চলবে…

    আন্নামা চৌধুরী
    ০৭.১২.২০২১

  • ভাবীর সংসার (পর্ব-১৩)

    ভাবীর সংসার (পর্ব-১৩)

    জাহিদ বাড়ীতে এসে দেখলো, মা লাউ কাটছেন, তবে খুব আনমনে। পলি আলনার সব কাপড় নামিয়ে একটা একটা করে ভাঁজ করছে, কলি পড়াশোনা করছে।

    জাহিদ বললো, মা আজ কি লাউ রান্না করবে?
    – মাত্র এটা কেটে আনলাম।
    – মা, লাউ এর খোসা দিয়ে ভাজি করবে, একদম কচি লাউ দেখছি।
    – হ্যা, দেখি।
    – সাঈদের সাথে কথা হয়েছে?
    – নাহ, ভাইজানের নাকি আজ কি বাইরে কাজ, তাই অফিস থেকে বাইরে।
    – ওহ, শোন, কাল টাকা পাওয়ার পর, দুই লক্ষ টাকা তুই ফিক্সড করে পলি আর কলির বিয়ের জন্য রাখবি।

    – এটা ভালো বুদ্ধি মা, ওদের কে একটু ভালো উপায়ে যেন দিতে পারি।

    – আর পঞ্চাশ হাজার দিয়ে তুই একটা লাইব্রেরি দে বাবা। এভাবে সংসার আর চলেই না। শাহিদ আর নাহিদ কে তখন সামান্য দিতে পারবি। ওদের কিছুটা সাহায্য হবে। আর যদি এমনি টাকা দিয়ে দিস তাহলে টাকার অংক কমে যাবে।

    কিন্তু ব্যবসা করলে টাকা লাভ আসবে, তখন কাজে দিবে। আর ব্যবসা করলে পড়াশোনা টা করতে পারবি, চাকরির জন্য, সারাদিনের পায়ে হেঁটে টিউশনির কষ্ট অনেক খানি কমবে।
    – মা, ঘর ঠিক করবে না?
    – না বাবা। প্রয়োজন শেষ হয়না, আর ঘর!
    – আর বাকি পঞ্চাশ কি করবে?
    – তোর ভাইজানের বদলি নিয়ে ঝামেলা, সে এক লক্ষ টাকা চেয়েছে!
    – কি? সে টাকার কথা জানলো কেমনে?
    – না, তুই যাওয়ার পর চিঠি এসেছি। সে এই টাকার কথা জানেনা। সে জমি বন্দক দেওয়ার কথা বলছে।

    জাহিদ চিৎকার করে বলছে, মা আমাদের তিন বেলা ডাল ভাত জুটেনা৷ আর তাকে তুমি জমি বন্দক দিয়ে দিবে? আমার মা, ধৈর্যের সীমা অতিক্রম করছে।
    – তোমরা চার ভাই সমান ভাগে পাও পঞ্চাশ করে, আর বোনেরা ২৫ করে। কিন্তু এখন আমার তিন মেয়ে, একজন বিয়ে হয়েছে। তাছাড়া জমি বিক্রি মাত্র শুরু হয়েছে, আমার আরো চার/সাড়ে চার লাখ টাকার সম্পত্তি আছে। তখন আমি পলি-কলিকে আর ভাগ দিব না, জলি আর তোদের চারজন কে দিব।আর সাঈদ কেও কম দিব, কথা দিলাম।
    – ভালো।
    – রাগ করিস না বাবা। যেভাবেই হোক কলি-পলি, নাহিদ কে রেখেছে তার বাসায়, খরচ যাই হউক দিয়েছে। এখন বাবা, তুই যদি না বুঝিস আমি কোথায় যাবো?
    – মা, আমার পলি- কলির বিয়ের টাকায় কোন সমস্যা নাই। তোমার টাকা ভাইজান কে দাও, তাতে ও আমার দুঃখ নেই, কিন্তু জমি বন্দক দেওয়ার কথা কেন তার মাথায় আসলো?
    – আমি তো বন্ধক দিচ্ছিনা। এখন সে, তোদের সবাইকে আগলে রাখে, এখন তাকেও দেখতে হবো, সেজন্য পঞ্চাশ হাজার টাকা দিচ্ছি!
    – মা, কি আগলে রাখে! জানা আছে।
    – আজ দুই মাস মেয়ে দুটিকে কি পেরেছি হোস্টেলে দিতে? যেভাবেই হোক রাখে, আর তো কেউ বাবা, এই কাজ ও করেনা। থাক ঝামেলা করে লাভ নেই। তুমি বাবা, লাইব্রেরির জন্য ঘর দেখো!

    জাহিদ আর কিছু না বলেই পুকুর ঘাটের দিকে গেল, তার অতিরিক্ত রাগ হলেই সে চুপ করে ঘাটের কাছে বসে থাকে।

    পলি ঘর থেকে এসে বললো মা, ভাইজানের বদলির জন্য এতো টাকা দিবে? তার না, এতো বড়লোক শ্বশুরবাড়ী? তারা দেয় না?
    – জামাই হয়ে খুঁজবে নাকি?
    – বড়লোক শ্বশুর দেখেই তো বিয়ে করলেন, তোমার ছেলে!
    – যেদিন মা হবি, সেদিন বুঝবি কি জ্বালা, এখন বুঝবি না।

    সাতদিন পরে আজ রাহেলা খানম নাতি দেখতে যাচ্ছেন। তার ভাই আরও দশ হাজার টাকা বেশি দিয়েছেন। এজন্য তিনি পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে টয়লেট টা একটু উন্নত করেছেন। এক হাজার যাওয়ার রাস্তা ভাড়া। শাহিদের জন্য এক হাজার টাকা পাঠিয়েছেন। আর তিন হাজার টাকা দিয়ে আট আনার একটি স্বর্ণের চেইন নাতির জন্য নিয়েছেন। বংশের প্রথম বাতি।

    স্বর্ণের দাম হু হু করে বাড়ছে। এখন প্রায় ছয় হাজার টাকা হয়ে গিয়েছে। তবুও সামান্য একটু সোনা দিয়ে নাতির মুখ তো দেখতেই হয়।

    কলি সারা রাস্তা শুধু বলছে ইশ ভাইজানের ছেলেকে আমরা আদর করবো, ভাইজানের মতো ফর্সা হয়েছে নাকি? ভাবীর মতো শ্যামলা? একই প্রশ্ন বার বার করছে কলি। আবার মাকে প্রশ্ন করছে, মা নাম কি রাখা যায় বাবুর? ভাইজানের নাম সাঈদ ছেলের নাম সামী রাখলে কি হয় মা?

    রাহেলা খানম বলছেন, তাদের ছেলে তারা নাম রাখবে, তোর এতো চিন্তা কেন?
    – ওমা, আমি ফুপু না? মা আমি কিন্তু তোমার একটা জিনিস চুরি করেছি।
    – কি?
    – সেদিন ব্লাউজের জন্য একটা সাদা কাপড় মামী দিয়েছিলেন আমাদের জামার সাথে। কি নরম তুলতুলে। আমি বাবুর জন্য কাঁথা সেলাই করেছি। আর লিখেছি সামী।
    – এই কাজ কখন করলি?
    – গত কাল রাতে, সব ঘুমানোর পর, হারিকেন জ্বালিয়ে এই কাজ করেছি। ভেবেছিলাম তাদের বাড়ী গিয়ে বলবো। কিন্তু এতোক্ষণ কথা পেটে রাখার ধৈর্য্য নেই।

    পলি বললো, আমার ও ভাতিজা দেখার জন্য মন ছটফট করছে। আর দয়া করে কথা বলিস না, রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি, চুপ করে থাক।

    রাহেলা খানম মনে মনে ভাবছেন অথচ তার কত ধৈর্য্য নাতির আকিকা হয়ে নাম রাখা শেষ। এই কথা টি তিনি পেটে লুকিয়ে রেখেছেন, কারণ তারা কষ্ট পাবে।

    জাহিদ লাইব্রেরির সাইন বোর্ড বানাতে দেয় নি। ভাতিজার নামে হবে, সেজন্য। না, দেখেই কত টান ভাতিজার জন্য। সবাই বলছে এখানে ব্যবসা খুব ভালো হবে, জাহিদ ও তাই আশা করছে।

    গাড়ী দ্রুত গতিতে যাচ্ছে, রাহেলা খানম ভাবছেন সাঈদ কি বলবে পুরো টাকার কথা জেনে, যদিও সাঈদ এখন পরিস্থিতির কারণে বদলে গিয়েছে। কিন্তু এক সময় টিউশনি করে, নিজের ডাল-ভাত খেয়ে সব টাকাই এই সংসারব দিয়েছে। ঈদে ভাই-বোন দের জন্য হাত ভরে বাজার করেছে, এখন হয়তো পারছেনা, কিংবা বদলে গিয়েছে। কিন্তু আগে তো করেছে, এখন বিপদে এতোটুকু সাহায্য না করলে মনের অশান্তি দূর হবেনা রাহেলার।

    সাঈদ কি অনেক ঝামেলা করবে? এরা আকিকা হয়েছে জানলে কি খুব কষ্ট পাবে? এদের কি হোস্টেলে ভর্তি করাবে সাঈদ? নাকি সব জট পাকিয়ে যাবে? এসব চিন্তা করছেন রাহেলা খানম….

    চলবে…

    আন্নামা চৌধুরী
    ০৪.১২.২০২১

  • ভাবীর সংসার (পর্ব-১২)

    ভাবীর সংসার (পর্ব-১২)

    রাহেলা খানম ফযরের নামায পড়ে উঠেছেন মাত্র। এখন বারান্দার বেঞ্চিতে বসে আছেন। সকাল বেলার এই সময় একা একা বসে থাকতে যেন এক ধরনের শান্তি লাগে।

    ঘড়িতে ছয়টা বেজেছে মাত্র, জাহিদ মসজিদ থেকে এসেছে, এসে টুপি হাতে নিয়ে মায়ের পাশে বসে আছে।

    রাহেলা খানম বলছেন, জাহিদ তুই যে, সকাল বেলা ফযর পড়তে মসজিদে যাস, এর জন্য আমি আল্লাহর কাছে প্রতি শুক্রবার দুই রাকাআত শোকরানা নামায পড়ি। তোকে দেখলেই মনে হয়, তোর আব্বার কথা। উনি ও এই ভাবে নামায পড়ে এসে বসতেন আর বলতেন সাঈদের মা, এক কাপ গরম পানি হবে?

    – আব্বা কি খুব চা প্রেমিক ছিলেন নাকি? দেখিনি তো!
    – গরম পানি হলো, কুসুম গরম পানি লেবু আর মধু দিয়ে খেতেন। কত সচেতন মানুষ চিলেন।
    – ওহ।
    – তোরা কি আর আগে এতো সকালে উঠতি?
    – না, আগে কেমন ঘুমের কাতর ছিলাম।
    – এখন, তোর কত পরিবর্তন হয়েছে, দায়িত্ব কাঁধে আসলে কত কিছু বদলে যায়।
    – সত্যি।
    – কিছু দিব খেতে?
    – না, মা। এখন একটু বিছানায় গড়াগড়ি করে আসি সাতটায় আবার পড়ানো আছে।
    – সাইদকে ফোন দিবি কখন?
    – দশটা, সাড়ে দশটায়।
    – আচ্ছা বাবা।

    দশটার দিকে একটা চিঠি আসলো, বাড়ীতে। চিঠি প্রথম রাহেলা খানমের হাতে পড়েছে। চিঠি লিখেছে সাঈদ।

    তিনি পড়া শুরু করেছেন,

    মা,
    আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছ মা? আমরা ভালো আছি। মা, আমার ছেলের নাম রেখেছি সৈয়দ মোহাইমিনুল হক জিহান। জাহানের ছেলে জিহান। সাত দিনের আগেই আকীকা করা সুন্নত। তাই একটা লাল রঙের গরু দিয়ে আকিকা করে ফেলেছি। তোমাদের বলার মতো সময় পাইনি, হুটহাট ডিসিশন নিয়েছি। রাগ করবেনা মা। এখন আসি দুঃখের সংবাদে আমার বদলি হয়েছে, অনেক দূরে। এখন, ছোট্ট বাচ্চা আর জাহান কে এভাবে রেখে যাওয়া অনেক ঝামেলার। তাছাড়া পলি-কলির কোন ব্যবস্থা এখনো করতে পারিনি। যদি পার, সরিষা ক্ষেতের জায়গা বন্দক দিয়ে এক লক্ষ টাকার বন্দোবস্ত কর, আমার মামা শ্বশুরের হাত লম্বা তিনি বলেছেন লাখ খানেক টাকা হলে, ম্যানেজ দিতে পারবেন। মা, এটা আমার জন্য বড় বিপদ মা, তুমি ছাড়া উদ্ধারের কেউ নাই।আমি কথা দিলাম, বছর দুইয়ের মধ্যে আমি জমির বন্ধক ছাড়িয়ে দিব।
    তুমি আমাকে সাহায্য করবে, আশা রাখি।
    টাকা হাতে পেলেই কলি-পলিকে নিয়ে আসবো। তুমি জাহিদ কে একটা কল দিয়ে আপডেট জানাতে বলবে। সালাম নিবে, ভালো থেকো।
    ইতি,
    তোমার বড় হতভাগা ছেলে,
    সাঈদ।

    রাহেলা খানমের মন টা খুব খারাপ লাগছে, তার নাতির তাকে রেখেই আকীকা হয়ে গেল? তিনি এখনো চোখেই দেখলেন না। তিনি সাথে সাথেই চুলার আগুনের সাথে চিঠি পুড়িয়ে দিলেন, কারণ পলি-কলি কিংবা জাহিদ শুনলে মন খুব খারাপ করবে। থাক, বলার দরকার নেই।

    ছেলের টাকার সমাধান তিনি এখন করতে পারবেন, তবে তার অনেক সমস্যাই সমস্যা রয়ে যাবে। আর সরিষা ক্ষেতের টাকায় এই সংসারের চাল আসে। এটা বন্দক দিলে, আবার বড় সমস্যায় পড়বেন তিনি। কি করবেন কিছুই বুঝতে পারছেন না রাহেলা।

    পলি মায়ের পাশে বসে বললো মা, কি ভাবছো চুলার দিকে তাকিয়ে?
    – না, কিছু না।
    – মা, আনি বলছিলাম কি! মামা যখন টাকা দিবেন, আমাদের কাচা টয়লেট টা ঠিক করলে হয়না? এটার অবস্থা তো খুবই খারাপ।
    – দেখি!
    – আর আমার বিয়ের টাকা জমাও না জমাও, কলির বিয়ের জন্য লাখ খানেক টাকা রাখবে। যাতে একটু সুন্দর করে বিয়ে টা হয়।
    – হ্যা, দেখি।
    – মা, তোমার কি মন খারাপ?
    – না, মন খারাপ না। ভালো লাগছে না। জাহিদ বাড়ী আসছে?
    – না, আসে নাই।

    রাহেলা খানম ভাবছেন জাহিদের কথা, ফোন দেওয়ার পরে কি উত্তর দিবে সাঈদ। এদিকে ছোট্ট নাহিদ আর শাহিদ এতো বড় ঢাকা শহরে কেমনে চলছে সেই চিন্তায় মাঝে মাঝে অস্থির লাগে। জলির সংসার কেমন চলছে সেটাও জানেন না তিনি। মা হওয়ার জ্বালা এমন কেন? সকল দিকেই চিন্তা থাকতে হয়।

    সাঈদ কে টাকা দিলে, তার অনেক কিছুই হবেনা, আর টাকা না দেওয়ার ও কোন পথ তিনি জানেন না। বার বার শুধু এটা মনে হয় প্রথম নাতির আকীকা তাদের সবাইকে ছাড়াই হয়ে গেল! এতো নিষ্টুর কেন দুনিয়া?

    কিছু মন খারাপ কাউকে বলাও যায়না আবার সয়ে নেওয়াটা বিরাট কষ্টের। তিনি আছেন এখন সেই অবস্থায়। তিনি আবার বারান্দায় গিয়ে বসে রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছেন জাহিদ কথা বলে, কি খবর নিয়ে আসে…..

    চলবে…

    আন্নামা চৌধুরী
    ০১.১২.২০২১

  • ভাবীর সংসার (পর্ব-১১)

    ভাবীর সংসার (পর্ব-১১)

    রাহেলা খানম উঠানে বসে বসে সবজি কাটছেন, পলি চুলার পাশে বসে আলু সিদ্ধ করছে, ভর্তার জন্য। ঘড়িতে সকাল এগারো টার কিছু বেশি হবে। কলি বারান্দার শেষ কোনায়, মোড়ায় বসে পাঠ্য বই পড়ছে।

    রাহেলা খানমের ছোট ভাই সৈয়দ কামরুল হাসান হাতে এক পাতিল দই আর এক প্যাকেট মিষ্টি নিয়ে, রাহেলা খানমের সামনে এসে সালাম দিলেন।

    রাহেলা খানম ভাইকে দেখে বেশ চমকে উঠলেন, কারণ তার ভাই অনেক ব্যস্ত, সময় বের করে হঠাৎ উপস্থিত হবেন টের পান নি রাহেলা।

    সাথে সাথে হাত পানিতে ধুয়ে দাঁড়িয়ে বললেন, কামরুল কেমন আছিস ভাই?
    – ভালো আছি বুজি। তুমি কেমন আছ?
    – আল্লাহর শুকরিয়া ভালো আছি। সুমি আর ভাতিজা, ভাতিজি ভালো আছে?
    – আছে বুজি ভালো। সুমি ব্যাংকের চাকরি নিয়ে খুব ব্যস্ত, ছেলে-মেয়েরা পড়াশোনা নিয়ে, এজন্য সাথে আনতে পারিনি।
    – আয় ঘরে আয়।

    রাহেলা খানম ভাইকে ঘরে বসিয়ে রেখে এসে বললেন পলি, জলির জামাইয়ের জন্য যে মোরগ রেখেছিলাম, তা ধরার জন্য দৌড় দে, তোর চাচী আম্মার কাছে কালিজিরার চাল পাবি, চালের জন্য কলিকে পাঠিয়ে দে। আর তার আগে শরবত করে নিয়ে আসতে বল কলিকে।
    – আচ্ছা।

    রাহেলা খানম পিছনে না তাকিয়ে আবার ঘরের দিকে দৌড় দিলেন। পলি দেখছে, তার খুব ভালো লাগছে।

    কলি এসে বললো দেখেছিস আপা, মামা কত বড় অফিসার কিন্তু মা কে কত ভালবাসে। প্রতি বছর ঠিকই মাকে দেখতে আসে।
    – হুম। যা শরবত দে, আমি আমাদের লালু মিয়ারে ধরি।
    – আপা, এটা না দুলাভাই এর জন্য মা রাখলেন।
    – এখন লালু মিয়া, মামার পেটে যাবে। তুই দোয়া কর, যেন ঘন্টা খানেকের মধ্যে লালু মিয়ারে কাবু করতে পারি।

    কলি হাসছে যাও যাও পারবে।

    কামরুল হাসান বললেন বুজি আমি চট্টগ্রামে একটা বাড়ী কিনবো, তাই বাড়ীর কিছু জায়গা বিক্রি করতে এসেছি৷

    বাড়িরসম্পত্তি গুলো এখন ভাগ বাটোয়ারা করে আমার ভাগ বিক্রি করবো।
    – চট্টগ্রামে কেন বাড়ী কিনবি?
    – ছেলে-মেয়ে বড় হয়েছে, সারাজীবন চাকরি করেছি এখানে, এখন ফ্ল্যাট নিয়েছিলাম, সুমি একটা তিনতলা বাড়ী পছন্দ করেছে। এজন্য ফ্ল্যাট বিক্রি করে দিচ্ছি, সুমি লোন নিবে, তারপরেও আরও ১২ লক্ষ টাকা লাগে। তাছাড়া বছর সাতেক পরে রিটায়ার্ড করবো,ইনকাম বের করা দরকার। এজন্য গ্রামের জায়গা বিক্রি করবো ভাবছি, এখন এখানে বাটোয়ারা করে দেখা গিয়েছে, আব্বা তোমার নামের যে জায়গা দিয়েছেন, তার দুই শতক সহ দাম হচ্ছে। কিন্তু এই দুই শতক না হলে জায়গা লম্বাটে হওয়ায় কেউ কিনতে চায়না। তুমি যদি দুই শতক লিখে দাও, আমি তোমাকে টাকা দিয়ে দিব।
    – দুই শতকের দাম কত টাকা আসে?
    – এখানে শতক দেড় লক্ষ টাকা, তুমি তিন লক্ষ পাবে। তুমি কি দিবে আপা? তুমি হয়তো ভাববে, আমার জন্য হয়তো তোমার জায়গা চাইছি।
    – আরে না, ভাই, আমার টাকার দরকার থাকলেও মেজ ভাইজান, কিংবা বড় ভাইজান কে বলিনি। কারণ জায়গা এখনো বিক্রি শুরু হয়নি। আর বাপের সম্পত্তি ভাইয়েরা না দিলে, আমি কখনো দাবী করবো না।
    – তা ঠিক, ভাইজান বললেন তুমি দিলে বিক্রি করে ফেলতে। কারণ বাড়ী টা কিনলে মাসে ষাট হাজার টাকা ভাড়াও আসবে।
    – তোর কাজে যদি লাগে বিক্রি করবি কর, আর তুই টাকা না দিলে সাঈদ কে ভার্সিটিতে পড়ানো কষ্ট হয়ে যেতো।
    – ভাগ্না মানুষ করার অর্থ হচ্ছে আমার বোন ভালো থাকবে। ভাবতেই ভালো লাগে বড় ভাগ্না বিসিএস ক্যাডার। এখন এজন্য আর এতো দেই না কারণ সাঈদ ভালো ইনকাম করে। আর এদিকে আমার ছেলে প্রাইভেট ভার্সিটিতে পড়ে খরচের উপরে খরচ।
    – না, না। তোর দুলাভাই শিক্ষক মানুষ, সাঈদের পড়াশোনা নিয়ে সবচেয়ে বেশি ঝামেলায় পড়তেন, তুই উদ্ধার না করলে…..
    – বুজি এসব বলবেনা, সাঈদ মানুষ হয়েছে তাই শান্তি।বাড়ীঘর পাকা কর এখন, মেয়েদের বিয়ে শাদি আছে, সাঈদ ভালো আছে?
    – নাতি হয়েছে।
    – মাশাল্লাহ।

    কলি মামাকে লেবুর শরবত দিল।

    কি রে কলি কেমন আছিস?
    – ভালো আছি ছোট মামা।
    – খুব পড়ছিস দেখলাম, তাই ডাকিনি।
    – পড়া চলছে কোন মতে!
    – কেন?
    – অনেক দিন বাড়িতে আছি, কলেজ যাইনা। ভাইজান চিঠি দিলে যাবো।

    সাথে সাথে রাহেলা খানম বললেন পরীক্ষা হয়েছে,আমিও জলির বিয়ের পর একা, এজন্য ক দিন রেখে দিয়েছি।
    – না, না পড়া নষ্ট করে বেড়ানোর দরকার নাই।

    রাহেলা খানম চোখ গরম করে তাকালেন, যেন কলি আর কিছু না বলে। কারণ তিনি কখনোই সাঈদ ছোট হোক কিংবা ঘরের ঝামেলা বাইরে কেউ জানুক, তা পছন্দ করেন না। কিন্তু মামা সাঈদের জন্য অনেক করেছেন তার গুনধর ভাগিনার কথা জানাতে চেয়েছিল কলি।

    কলি বাইরে এসে দেখলো, পলি এখনো দৌড়াচ্ছে কিন্তু লালুমিয়া দৌড়াচ্ছে আরও দ্রুত গতিতে।

    শেষ পর্যন্ত দুই বোনের চেষ্টায় লালু মিয়া ধরা খেয়ে জবেহ হয়েছেন।

    মোরগ কাটতে কাটতে কলি বললো আপা, মা সব সময় ভাইজানের প্রশংসা করেন, আমি ছোট মামাকে কিছু বলতে চেয়েছিলাম, কিন্তু মা যেভাবে তাকালেন, বাপরে!
    – তিন পুত্র মরে যাওয়ার পরে ভাইজান কে পেয়েছেন। এজন্য আদর একটু বেশি।

    রাহেলা খানম মোরগের ঝোল করেছেন, পোলাও, কদু শাক দিয়ে পাতুরী, মাছের তরকারি, পাতলা ডাল। আর ভাইয়ের পছন্দের পিয়াঁজ বেরেস্থা।

    জাহিদ দুপুরের সময় মাছ নিয়ে এসে দেখে ছোট মামা এসেছেন, হাতে রুই মাছ ছিল। এটা সাথে সাথে রান্না করেছেন রাহেলা।

    কামরুল খাওয়া দাওয়ার সময় বললেন, বুজি তুমি রান্না করলে আম্মার রান্নার স্বাদ পাই। আম্মা মরে যাওয়ার প্রায় বারো বছর হয়ে যায়।
    – আম্মার রান্না কত ভালো ছিল!

    জাহিদ কি করছিস, বিসিএস দে, ভাইয়ের মতো পজিশনে যা। তোদের নিয়ে আমাদের কত স্বপ্ন
    – জি মামা।

    যাওয়ার সময় কামরুল বললেন, বুজি আমি আগামী পড়শু দিন এসে তোমাকে নিয়ে যাবো, আর সেদিন বায়নার তিন লক্ষ পাবো, তোমাকে সম্পূর্ণ দিয়ে দিব।
    – না, বিক্রি হলেই দিস।
    – না না। দিয়ে দিলে, আমিও শান্তি। আর এই ব্যাগে সুমি, কলি-পলির জন্য জামা দিয়েছেন দিও, আর এক হাজার টাকা রাখো, খরচ করবে।
    – না, থাক। লাগবেনা।
    – বুজি, তুমি কত আদর করেছো, এখন ঝামেলায় পরে আসতে পারিনা, জলির বিয়ের চিঠি পেয়েছি কিন্তু চট্টগ্রাম থেকে আসার সুযোগ হয়নি। আর এই এক হাজার জলিরে দিবে, ছোট মামার উপহার।
    – থাক, আর লাগবেনা।
    – বুজি, আবারও জিজ্ঞেস করছি, তুমি খুশি হয়ে লিখে দিবে তো? তোমার ইচ্ছা না থাকলে আমি জোড় করবো না।
    – আরে না, আমার ও দিলে উপকার হয়।
    – আচ্ছা, যাই।

    কামরুল যাওয়ার পর রাহেলা জাহিদ কে বললেন তিন লক্ষ টাকা এখন পেলে, আমার যে কি উপকার হবে বাবা। তোদের লেখা পড়ায় আর ঝামেলা হবেনা, বাড়ী ঘর ঠিকঠাক করতে পারবো, আল্লাহ এতো দিন আমার দিকে মুখ তুলে তাকালেন। আমার মরহুম আব্বা, ও মরহুম আম্মাকে আল্লাহ বেহেশত নসিব করুন। আমার আব্বা যদি আমাদের তিন বোনের জন্য জায়গা, লিখে না দিতেন, আমরা কিছুই পেতাম না।
    – নানাভাই সম্পদ শালী কিন্তু বিচারী মানুষও ছিলেন।
    – হ্যা বাবা। কিন্তু আব্বা জমি বিক্রি করা পছন্দ করতেন না তাই তোর বড় দুই মামা কখনোই জমি বিক্রি করেন নি। অনেক সময় কষ্ট করে চলেছেন। তাই আমিও কখনো বলিনি। আব্বার ইচ্ছা সবার আগে, এখন কামরুলের দরকার আমারও ভালো হয়, তাই বিক্রি করছি।
    – ভালো হয়েছে। যাক, একটু শান্তি পাওয়া যাবে।
    – আল্লাহ যদি দেন, বাবা সাঈদ কে একটা কল দিও আজ সন্ধ্যায় বাজার থেকে। পরে আবার রাগ করবে, না জানালে।

    কলি বললো কেন রাগ করবে, সে কি আমাদের রাগ অভিমান কষ্টের দিকে খেয়াল রাখে?
    – বিয়ে হউক বুঝবে যন্ত্রণা, যাই হউক জাহিদ তুই কল দিস।
    – সকালে, ভাইজানের অফিসে কল দিমু, এখন আর বাইরে যাচ্ছিনা।
    – আচ্ছা।

    রাহেলা খানমের আজ অনেক দিন পর খুব শান্তি লাগছে, তাছাড়া কামরুলের কাজে লাগবে টাকা, এটা শুনেও ভালো লাগছে। এই ভাই, তার সব সময় খেয়াল রেখেছে। সাঈদ নিশ্চয়ই খুশি হবে জানলে, তার মাথা থেকে কিছু ঝামেলা নামবে….

    চলবে…

    আন্নামা চৌধুরী
    ২৯.১১.২০২১