Tag: গল্প

  • ভাবীর সংসার (পর্ব-২৮)

    ভাবীর সংসার (পর্ব-২৮)

    রাহেলা খানমের সিট পড়েছে একদম জানালার পাশে, খ বগির শেষ সিট। তিনি কলিকে শক্ত করে ধরে বসেছেন। আর নাহিদ সামনের সিটে বসে আছে।

    কলি মায়ের হাতের দিকে তাকিয়ে আছে, যেন ছোট্ট বাচ্চার মতো আগলে রেখেছেন।

    কলি বললো মা, আমাদের খালাকে বসে আসা উচিত ছিল।
    – আমি চিঠি লিখে দিব, চিন্তা করিস না।
    – মা, খালা-খালুর মতো এতো ভালো মানুষ, আমি খুব কক দেখেছি। তারা খুব কষ্ট পাবেন।
    – আমি জানি, কিন্তু! থাক, মা আর কথা বলিস না। আমি তাদের জন্য প্রতি ওয়াক্তে নামায পড়ে, দোয়া করবো। এখন, তোর একটা ভালো বিয়ে দিলেই, আমি শান্তি। ছেলেদের বিয়ে নিয়ে আমার চিন্তা কম।

    কলি জানে, গতকাল রাতে, ভাইজানের কথায়, মা ঠিক কত টুকু কষ্ট পেয়েছেন। এজন্য, তিনি কথা বলতে পারছেন না। চুপ করে জানালার দিকে তাকিয়ে আছেন।

    বাড়ী আসার পরে, সন্ধ্যার দিকে, রাহেলা খানম জাহিদ কে বললেন বাবা, মাস্টার্স পড়ে, আর কাজ নাই। তুমি কলির জন্য একজন ভালো পাত্র দেখো।
    – মাস্টার্স করে ফেললে ভালো মা।
    – ভালো তো জানি। পলির বিয়ে হয়ে গিয়েছে। একা একটা মেয়ে বাড়ীর বাইরে থাকুক, আমার ইচ্ছে নেই।
    – হলে কত মেয়ে থাকে।
    – থাক। আমি কলিকে আর পড়াতে চাই না। এটাই শেষ কথা। আর আমার মাথা টা ধরে এসেছে, তুই দরজা টা হালকা লাগিয়ে, পাখা টা ছেড়ে দিয়ে যা।
    – মা, শরীর খারাপ নাকি?
    – না, আমি একটু ঘুমাবো।

    জাহিদ রুম থেকে বেড়িয়ে আসার পর, কলি সব ঘটনা খুলে বললো, এবং আরও বললো যে, মেজ ভাই মা একটু একলা থাক, কান্নাকাটি করে, হালকা হবে। কত কষ্ট করে, ভাইজানের পড়াশোনা চালিয়েছে। আর আজ?
    – আমি সকালে স্কুলে গিয়ে আরেক সংবাদ শুনলাম, সম্ভবত আমাকে অন্য স্কুলে বদলি করে দিবে। বছর তিনেকের জন্য।
    – কোথায়?
    – পাশের জেলায়। আমাদের স্কুলের অনেক শিক্ষকের অনেক দিন বদলি হয় না, তাই এল সাথে সবার বদলির অর্ডার আসবে। এখন লাইব্রেরি! বাড়ী কে চালাবে? শাহিদ ও তার চাকরি নিয়েই ব্যস্ত, তাছাড়া ও ব্যবসা বুঝেনা। কি করবো আমি, মাকে কিভাবে বলি, তাই চিন্তা করছি।
    – আজ থাক, কাল বলবে। আপাতত নাহিদের সাথে আলাপ কর।

    রাতের বেলা একটা কলা খেয়ে, বিছানায় আসলেন রাহেলা। কলি বললো, শুধু কলা খেয়ে ঘুমাবে?
    ,- হ্যা।
    – তুমি তো বল, “খালি পেটে জল, ভরা পেটে ফল” আর এখন তুমি?
    – আমার পেট কথা দিয়ে ভর্তি। ভরা পেটেই ফল খাচ্ছি।

    কলি আর কথা বাড়ায় নি, থাক।

    পলি, আবিদের পুরো পরিবারের সাথে গ্রামে গিয়েছে, শফিউল আলম সাহেবের বাড়ী, অনেক সুন্দর। পুরোনো আমলের দুই তলা মাটির বাড়ী। পলির খুব পছন্দ হয়েছে। শ্যামলা বর্নের দাদী শ্বাশুড়ি কেও বেশ ভালো লাগছে পলির। আবিদের সাথে, গ্রামে এসে তার ভীষন ভালো লাগছে।

    ভোর বেলা, ফযরের পরে, জাজিদ মায়ের পাশে বারান্দায় বসে আছে। রাহেলা খানম বললেন, কি রে কিছু বলবি?
    – হুম।
    – কি?
    – আমার বদলি হতে পারে।
    – তুই না বললি প্রাইমারী তে বদলি হয়না।
    – হয়, তবে, কম। আমার ভাগ্য খারাপ তাই হয়েছে।
    – ভালো কিছু আছে, তাই হচ্ছে। এতো চিন্তার কিছু নেই। আল্লাহ যা করেন, ভালোর জন্য করেন।
    – লাইব্রেরি?
    – কিছুদিন বন্ধ রাখ, না হয় যেখানে চাকরি সেখানেই নিতে হবে। শাহিদ কে দিয়ে ব্যবসা হবেনা।
    – নাহিদ এলটা প্রস্তাব রেখেছিল।
    – কি?
    – বলেছিল, ওর টিউশনি এখন ভালোই চলছে। তুমি, কলি ঢাকায় চলে যেতে। কলিকে নিয়ে একা গ্রামে থাকা বেশ ঝামেলার।
    – বাবা, স্বামীর ভিটা, স্বর্ণের চেয়ে খাটি। আমি এখানেই থাকি। কারো কথা শুনতে চাইনা।
    – কলিকে ঢাকায় ভর্তি করে দিতাম।
    – কাল রাতেই বললাম, জামাই দেখতে, আর পড়াশোনা লাগবেনা।

    কলি মাকে দেখছে, কেমন শক্ত হয়ে আছেন দুই দিন ধরে, চাপা কষ্টে ভিতর ফেটে যাচ্ছে। সে কি।সত্যি আর পড়তে পারবেনা? মায়ের এই কথাই কি শেষ কথা? নাকি তিনি মত পাল্টাবেন, তবে ভিটা ছেড়ে সহজে, চলে যাওয়া, তার কর্ম না। নাহিদ কি সত্যি পুরো পরিবারের দায়িত্ব নিতে পারবে! কত চিন্তায় ভাবছে দিন কলি….

    চলবে…

    আন্নামা চৌধুরী।
    ১৮.০১.২০২২

  • ভাবীর সংসার (পর্ব-২৭)

    ভাবীর সংসার (পর্ব-২৭)

    পলি ডাইনিং টেবিলের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। পুরো একটা বড় খাসি দিয়ে সুন্দর করে ডিশ সাজিয়েছেন রিতা। তিন পদের মাছ, দুই পদের মাংস, সালাদ, সবজি, পোলাও, ডেজার্ট দিয়ে সুন্দর করে সাজিয়েছেন তিনি।

    কলি বললো দেখেছিস খালার কান্ড! আমাদের নিজের খালা হলেও কি এমন করে আমাদের কেউ করতো!

    রিতা এসে ডাইনিং এ দাঁড়ালেন, বললেন কি রে কলি, কি গল্প হচ্ছে দুই বোন মিলে?
    – খালা এই চার/পাঁচ ঘন্টায় এতো কিছু কখন করলেন?
    – আরে, আমি সব কিছু আগে রান্না করে, বৌভাতে গিয়েছে। রহিম বাবুর্চির দায়িত্ব ছিল, আস্ত খাসি প্রিপিয়ার করা। এটা তোমার খালুর শখ।
    – খালু কোথায়?
    – জামাইয়ের সাথে গল্প করছে। ও তো খুব আড্ডা প্রিয় মানুষ। মুখ বন্ধ করে থাকতে পারে না। বেয়ান সাহেব, তোমার মা, কেন আসলেন না! মন টা খারাপ লাগছে। জাহিদ ও নাকি বাজারে, সাথে শাহিদ ও। জলিও আজ চলে গেল।
    – জলিপা, বিয়ের দিন চলে যেতো। আমরা জোড় করায়, এতো দিন থেকেছে। তার বাড়ীতে নাকি কে মেহমান রেখে আসছে।
    – তোমাদের ভাবী, জাহান, তার নাকি শরীর খারাপ লাগছে। আসবেনা।
    – ওহ।
    – ননদের জামাইয়ের জন্য প্রিপারেশন নিচ্ছে হয়তো। আইরিন, তারিন আসবে।
    – ভালো হয়েছে।

    আবিদ খুব লজ্জা পাচ্ছে, তাদের বড় পরিবার। খুব হিসেব করে চলেন তার আব্বা। এতো পদ সে কখনোই এক সাথে দেখে নি।

    সে খুব আড়ষ্ট হয়ে বসে বসে খাচ্ছে। পলির আজ মনে হচ্ছে সে তার আপন খালার বাসায় খাচ্ছে। কলি, নাহিদ, খালার দুই ছেলে-মেয়ে খুব হৈ চৈ করছে দুলাভাই নিয়ে।

    পলি যে রুমে থাকবে, সেখানে এক গুচ্ছ রজনী গন্ধা খাটের পাশে ফুলদানী তে রেখেছেন রিতা। বিছানায় সাদা রঙের সুন্দর চাদর। গোলাপ ফুল দিয়ে হার্ট সেইপ করে, ভিতরে লিখেছেন এ+পি।

    খাটের পাশে এক জগ পানি, এক টি গ্লাস উল্টো করে পিরিচ দিয়ে রাখা। ওয়াশ রুমে টাওয়াল পর্যন্ত  রাখা।

    পলি শুধু খালাকে দেখছে, আর ভাবছে এই মানুষ কত সৃজনশীল। রজনীগন্ধার সুবাসে মৌ মৌ করছে, পুরো বাড়ী। পলির এই সুগন্ধ খুব পছন্দ। যদিও আবিদের বাসায় কোন খাট সাজানো হয়নি, কিংবা কোন ফুল ও ছিল না। এখানে দেখে, খুব ভালো লাগছে তার।

    সকাল বেলা আকাশী রঙের একটা রাজশাহী সিল্ক শাড়ী এনে  পলিকে দিলেন রিতা। এটা নাকি গত মাসে তিনি, তার দেবর কে দিয়ে আনয়েছেন। একটা তার জন্য,  অন্যটি পলির জন্য। রিতা বললেন আশা করে, তোমার পছন্দ হবে পলি।
    – খালা, আপনি যে কত ভাবে ঋণী করছেন!
    – কি বলো পলি? তোমাদের মতো এতো মিষ্টি দুটি মেয়েকে সবাই খুব আদর করবে। আর পলি, প্রফেসর সাহেবেরব পরিবারের মানুষ একটু হিসেব করে চলেন, তুমি তাদের সাথে মানিয়ে নিবে, এক সময় আস্তে আস্তে তারাও ঠিক হয়ে যাবে।
    – জি খালা।

    রাহেলা বেগম দুই পদের মাংস রাম্না করেছেন, রুই মাছের দোপেয়াজা, চিংড়ি মাছ ভুনা, কই মাছ ভুনা, সবজি, পোলাও, সালাদ সব তিনি রান্না করেছেন। বাজার করেছে জাহিদ। এখন তিনি বেরেস্তার জন্য পেঁয়াজ কাটছেন। ঘড়িতে বারো টা বাজে, এখনই হয়তো পলি জামাই নিয়ে আসবে। কলি ও নেই এখানে। এক হাতে গ্যাসের চুলায় খুব ঝামেলা হয়ে যাচ্ছে তার।

    শারমিন দরজার সামনে এসে বললেন, মা কি এখন পেঁয়াজ কাটছেন? রান্না কি করবেন? একটা সহজ রাস্তা আছে, মোরগ পোলাও করে নিন, সাথে ডিম ভুনা সালাদ। অনেক ভালো হবে। শর্টকাট।
    – আমার রান্না শেষ মা। এখন বেরেস্তার জন্য পেঁয়াজ কাটছি।
    – রান্না শেষ?
    – হ্যা
    – আমার একা একা জিহান কে নিয়ে খুব ঝামেলা হয়ে যায়। ও নেই, এজন্য রাতে ঘুম হয়নি।
    – সমস্যা নাই, মা। রেস্ট নাও।

    শারমিন ঢাকনা খুলে খুলে সব দেখছে। দেখে বললো,
    মা, এতো কিছু করেছেন কেন? কাল দুপুর পর্যন্ত থাকবেন, রাতের রান্নার জন্য রাখতেন কিছু বাজার।
    – না, মা। জাহিদ-শাহিদ সন্ধ্যার পর চলে যাবে। আমি আর নাহিদ কাল সকালে যাবো। আমি, তোমাদের পরিবারের সবাইকে দাওয়াত করেছি আসার জন্য!
    – না, ওরা হয়তো আসবেনা, ব্যস্ত তো অনেক। আম্মা আসবেন বলেছেন।

    আবিদ বসার ঘরে বসে দুধ শরবত খাচ্ছে। পলিকে আকাশী রঙের রাজশাহী সিল্কে দারুন স্নিগ্ধ লাগছে।

    শারমিন এসে বললেন আবিদ ভাই, নাকি আজ থাকবেন না?
    – কাল বাড়ী যাবো ভাবী।
    – আমরা মাছ কবে খাচ্ছি? কখন বাজারে যাচ্ছেন।
    – জি, একটু পরে যাবো।

    রাহেলা বেগম বললেন, না না জামাই এবার থাক, আগামী মাসে এলে বাজার করবে।
    – না, আমি বাজারে যেতাম এখনই।
    – থাক, আজ তো সময় কম।

    আবিদ যেন হাঁফ ছেড়ে বসলো, হয়তো লজ্জায় সে বাজারে যেতে বলেছে। কারণ সে চিন্তা করেছে শ্বশুর বাড়ীতে আগামী মাসে গেলে বড় করে বাজার করবে। এখানে, বাজার করার সময়ই নাই।

    সাহেদা খানম, রান্নাঘরে গিয়ে বললেন, বেয়ান নতুন জামাই কত কেজী মিষ্টি নিয়ে এসেছে?
    – এনেছে অনেক।
    – প্যাকেট দেখছি মাত্র পাঁচ টা, সব কি বিলি করে দিয়েছেন নাকি?

    শারমিন বললো, কিপটা নাম্বার ওয়ান, ফেরা যাত্রায় এসেছে মাছ বাজার নাকি পরে করবে!
    – বলিস কি?

    রাহেলা বেগম বললেন, আমি না করেছি। এখন বাজার এনে, খাওয়ার সময় কোথায়? থাকবেনা যখন থাক। পরবর্তীতে আনবে। আর মিষ্টি পাঁচ কেজী এনেছে, দই দুই পাতিল এনেছে। আর এনে কি করবে?
    – পাড়া-প্রতিবেশী আছে না?
    – আমরা যাদের চিনি, তাদের জন্য অনেক বেশি হয়েছে।

    কলি অবাক হয়ে দেখছে রাহেলা বেগম আজ বেয়ানের সাথে বেশ কড়া হয়ে কথা বলছেন। সাহেদা খানমের মতো মানুষ দের মাঝে মাঝে কথা শোনানোই  উচিত।

    আজকে পলি বিদায়ের সাময় মায়ের গলা জড়িয়ে খুব কান্না করছে, আর বলছে আজ মনে হচ্ছে, বিয়ে করে চলে যাচ্ছি। তুমি আবার কবে আসবে মা, কবে!

    রাতের বেলা, সাঈদ অফিস থেকে আসলো বাসায়। রাহেলা বেগম ছেলেকে দেখে বললেন, কি রে তুই?
    – কাল সরকারি বন্ধ, তাই ছুটি। এজন্য এসেছি।
    – আলহামদুলিল্লাহ, দেখা হয়ে গেল।
    – জাহিদ-শাহিদ কোথায়?
    – বাড়ী চলে গিয়েছে। আমি আর নাহিদ কাল যাবো।
    – কলি বাড়ী যাবেনা?
    – কলির মাস্টার্সে ভর্তি হবে।
    – এখন ও রেজাল্ট হওয়ার বাকি, এখন এখানে থেকে কি করবে?
    – যুবায়ের ভাই, থাকতে বলেছেন। টাইপিং এর কাজ শিখেছে, সেখানে কাজে লাগিয়ে দিবেন।
    – মা, আমার তো লজ্জা লাগে, খালুকে, খালাকে যেভাবে প্রতিনিয়ত ডিস্টার্ব করছো তোমরা।
    – বাবা, উনি মন থেকেই আদর করেন।
    – আমি কি আমার শালীর মেয়ের ননদ দের ইচ্ছে করে জায়গা দিতাম, তোমরা করকতে বাধ্য করছো ।

    কলি সাথে সাথে বললো ভাইজান, আমি কাল বাড়ী চলে যাবো। আপনি চিন্তা করবেন না।
    – তুই বড় বেয়াদব হচ্ছিস। বড় দের মাঝে কথা বলিস।

    রাহেলা বেগম নিচের দিকে তাকিয়ে আছেব, কি করবেন তিনি? সত্যি কি তিনি আর তার মেয়েরা রিতা কে বেশি ঝামেলায় ফেলে দিচ্ছেন? নাকি তিনি মন থেকে করছেন? কেন জাহিদ চলে গেল আজ, সবাই এক সাথে কাল গেলেই ভালো হতো। তিনি কি করবেন কলিকে নিয়ে, চিন্তায় পরে গিয়েছেন…..

    চলবে…

    আন্নামা চৌধুরী।
    ১৫.০১.২০২২

  • ভাবীর সংসার (পর্ব-২৬)

    ভাবীর সংসার (পর্ব-২৬)

    কলি দুই ঘন্টা ধরে কেঁদেই যাচ্ছে, চোখ দুটি লাল হয়ে গিয়েছে। ওড়না দিয়ে বার চোখ মুছে যাচ্ছে কলি।

    রিতা খানম বললেন, এই কলি এরকম কেন কাঁদছো?
    বোন মানেই তো এক বালিশে থাকলেও একদিন এক দেশেও থাকা হয়না। বছর চলে যায়, কাছে বসে গল্প হয়না।
    – আপা।শুধু আমার বোন ছিল না, ছিল আমার অভিভাবক, আমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু।
    – বোন বিয়ে হয়েছে রে মা, এটা মানতে হবে। এক কাজ কর, মুখ হাত ধুয়ে ফ্রেশ হও, আমি নাহিদ আর তুমি তিনজন মিলে পলি কে দেখে আসি। তাহলে, তোমার মন কিছুটা ভালো হবে।

    কলি নিমিষেই দৌড়ে ওয়াশ রুমে চলে গেল। সে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছে।

    আবিদের বাসা মানুষ গিজগিজ করছে। কলি৷ তাদের বসার ঘরে সোফায় বসে আছে। আবিদ এসে কথা বলছে সবার সাথে।

    কলি আস্তে করে বললো খালা, আপা কোথায়?
    – একটু অপেক্ষা কর, নতুন বউ।

    আবিদ বললো খালা চলেন ভিতরে, পলি ভিতরের রুমে আছে। নাহিদ চলো?
    – আপনারা যান, আমি আসছি।

    কলি এই কথা শুনেই, দাঁড়িয়ে আবিদের পিছন পিছনে যাওয়া শুরু করলো।

    এল শেইপের বাড়ীটির একদম শেষের ঘর টা পলির। নতুন রুম এটাই, যেটা পলির জন্য তৈরী করা হয়েছে।

    পলি খাটের এক কোনায় বিয়ের সাজেই বসে আছে। কলিকে দেখেই চমকে উঠে, জড়িয়ে ধরেছে। কলি আবারও শুরু করেছে কান্না।

    রিতা খানম বললেন আর আরেক বার কান্না করবে, আমি চলে যাবো। এসেছো বোন কে দেখতে এসেছো, কিছুক্ষণ গল্প করে চলে যাবে, কান্নার জন্য নয়।

    আবিদ বললো তোমরা দুই বোন গল্প কর, আমি বাইরে আছি।
    – না, আপনি থাকেন দুলাভাই?
    – না, আসছি।

    কি রে, চোখ মুখ কান্নাকাটি করে, তো লাল করে ফেলেছিস।
    – তুই তো আনন্দে আছিস আপা, নতুন সবকিছু। আমি তো জানি আমার কেমন লাগছে।
    – আমি আমার সব মানুষ কে ছেড়ে নতুন জায়গায় এসেছি। তাছাড়া এরা সবাই কথা কম বলে, দেখা করে করে, যার যার রুমে চলে গিয়েছে।
    – তাই?
    – এই যে এতো মেহমান কিন্তু কেউ এই রুমে আসছেনা। যার যার গল্প করছে। আমাকে একটু দেখেই চলে যাচ্ছে।
    – আবিদ?
    – উনি রুমে আসছেন, যাচ্ছেন। নতুন জামাই লজ্জা পাচ্ছে।
    – আস্তে আস্তে ঠিক হবে। প্রফেসর সাহেব মানুষ খুব ভালো।

    কলি আস্তে করে বললো আপা, তুই বৌভাতের পরে কি এইখানের বাসায় যাবি, নাকি বাড়ী?
    – কি করে বলি বল? এখনই এগুলো বলি কেমনে? আচ্ছা, কোন সমস্যা হয়েছে নাকি?

    – না রে আপা, মা চায়, তুই দুলাভাই নিয়ে বাড়ীতে যাবি।
    – ভাবী কিচ্ছু বলেছে?
    – আরে না।

    ট্রে হাতে, আবিদের বোন রুমি এসে রুমে ঢুকলো। বললো আপনারা নাশতা খেয়ে নিন।

    রিতা বেগম বললেন কেমন আছ তুমি?
    – জি ভালো আছি।
    – বসো।
    – না, ঠিক আছে।
    – কিসে পড়?
    – ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিজিক্সে মাস্টার্সে পড়ছি।
    – তুমি কি আবিদের ইমিডিয়েট ছোট?
    – না, আমার ইমিডিয়েট বড় ভাই, আরিফ ভাই, মেডিকেলে ইন্টার্নশীপ করছে।
    – আচ্ছা।
    – আসি আন্টি, নাশতা করেন।

    পলি দেখলো ট্রে তে এক প্লেটে মিষ্টি, তাতে দুটি চা চামচ দেওয়া। এক গ্লাস পানি, দুটি বাটি।

    মানুষ তিন জন বাটি দুটি, পানির গ্লাস একটি, মিষ্টি কি কেউ চা চামচ দিয়ে খায়? পলি ভাবছে, এরা মেধাবী হয়েছে সত্য, কিন্তু রুচিশীল হয়নি, এমন কি মেহমানদারী ও ঠিক মতো জানে না। এর চেয়ে জলিপার বাড়ীর মানুষ এতো শিক্ষিত না হোক, কিন্তু শিষ্টাচার এদের চেয়ে ভালো জানে।

    কলি বললো আপা, আমি মিষ্টি খাবো না। আমার মন একদম ভালো নেই, বিশ্বাস কর।

    রিতা বললেন কি কলি, তুমি কি পলির মন খারাপ করতে এখানে এসেছো? তবে এক্ষুনি চলো।
    – না খালা, আর আমি কিছুই বলছিনা।

    পলি বললো খালা, মিষ্টি নেন।
    – নিব, নতুন বউ এতো চিন্তা করেনা।

    পলি শোন, শ্বশুর বাড়ী প্র‍থম এক বছর, হলো পরীক্ষা কেন্দ্র, সুতরাং পরীক্ষায় যেমন কোন প্রশ্ন কমন না পড়লেও আনসার করতে হয়। এখানেও তেমন ভালো না লাগলেও সব সুন্দর করে মেনে নিতে হয়, নিজের ভালো গুন গুলি তুলে ধরতে হয়। এক বছর তুমি সবার জন্য কর, সারাজীবন তারা তোমার জন্য করবে, ভালবেসেই দেখো একবার, উজাড় করে ভালবাসা পাবে।
    – জি খালা, অবশ্যই চেষ্টা করবো।
    – আজ আসি। আর ভালো থাকবে, কাল দেখা হবে।

    পলিকে অবাক করে দিয়ে, আবিদ কি সুন্দর একটা পাথর বসানো স্বর্ণের আংটি গিফট করলো, সাথে এক জোড়া গোলাপ।

    পলি মনে মনে খুব খুশি হয়েছে, হায়, এই চুপচাপ মানুষের ভিতরে এতো রোমান্টিকতায় ভরপুর!
    বোঝাই দায়!

    বৌভাতের দিন, সুন্দর করে শামিয়ানা টানানো হয়েছে। পলি কে সুন্দর করে সাজিয়ে দিয়েছে, তার মামী শ্বাশুড়ি। খুব স্নিগ্ধ লাগছিল পলিকে। আবিদ বার বার এসে বৌকে দেখা যাচ্ছিলো। আবিদ কে দেখলেই হাসি লাগছে পলির, লুকিয়ে দেখতে এসে বার বার ধরা পড়ছে সে।

    রাহেলা খানম তার পরিবার, তার ভাইয়ের বউ, সাঈদের শ্বশুর বাড়ীর লোক, তার কিছু কলিগ, আর রিতা খালার পরিবার নিয়ে অনুষ্ঠানে গেলেন। এদিকে তার মাথায় ঘুরছে তারা কি আজ বাড়ী যাবে নাকি?বাসায় যাবেয?

    সব চিন্তা দূর হয়ে গেল পলির হাসি মাখা মুখ দেখে, আবিদ তাদের খুব যত্ন নিচ্ছে। প্রফেসর সাহেব বার বার সবার খোঁজ নিচ্ছেন।

    কলি এসে বলছে আপা, আজ তোকে বিয়ের দিনের চেয়েও বেশি স্নিগ্ধ লাগছে। দুলাভাই লোকটা ভালই মনে হচ্ছে।

    শারমিন এসে পলির পাশে বসে বললো , আম্মা তোমাকে ফার্নিচার দিয়েছেন, বললে না তো!
    – আম্মা দেন নি ভাবী, আমার শ্বশুর বানিয়েছেন।
    – তাই?.
    – হ্যা,, এবং এই রুম সাথে এটাচ বাথরুম বানিয়েছেন নতুন করে।
    – ভালো, ভালো।

    শারমিন ঘুরে ঘুরে দেখছেন তাদের বাড়ী। এতো ঝকঝকে না হলেও বেশ ভালো তাদের বাড়ী।

    খাওয়া দাওয়ার পরে, রাহেলা খানম বললেন, বেয়াই সাহেব, আমার মেয়ে-জামাই কবে আমার বাড়ী যাবে?
    – দুই দিন গিয়ে থাকার মতো সময় ছেলের নাই, ছুটি কম।
    – আমি তো আমার বাড়ীতে নিয়ে যেতে চেয়েছিলাম।
    – আগানী মাসে ছটিতে এলে, বাড়ী যাবে। আমার মা, গ্রামে থাকেন। এখানে আসার মতো শক্তি নেই। নাতি বউ দেখবেন, আশা করেছেন। আমি পড়শু দিন যাবো, গ্রামে সব আত্নীয়রা আসবেন।আগামীকাল আপনাদের বাসায় যাবে, সারাদিন থেকে সন্ধ্যায় চলে আসবে। কথা দিলাম, আগামী মাসে আসলে দিন চারেক থেকে আসবে, বউমা আর আবিদ।

    শারমিন সাথে সাথে বললেন আগামী মাসে কিন্তু অবশ্যই দিতে হবে।
    – হ্যা। মা, অবশ্যই দিব।

    রিতা বললেন, বেয়াই সাহেব, আমি কিন্তু উকিল মা, আমি আজ আমার মেয়েকে আমার বাসায় নিয়ে যাবো।
    – আজ সারাদিন কত প্রকার ঝুট ঝামেলা গিয়েছে, আজ রেস্ট নিবে। কাল…
    – নতুন বর কনের সময়ই তো এখন ঘুরার। আপনার বেয়াই তো আমাকে নিয়ে বৌভাতের রাতে কক্সবাজার গিয়েছিলেন।
    – আচ্ছা ঠিক আছে, আপনার উকিল মেয়ে আপনি নিয়ে যান।

    শারমিন বললো খালা, কাল দুপুরে কিন্তু আমার ননদ বাসায় পাঠিয়ে দিও।
    – দেখা যাক।

    কিছু কিছু সময় অনেক কিছু না হলেই ভালো হয়। এই মুহুর্তে বাড়ী যাওয়ার মতো পরিস্থিতি নেই, পলি গিয়ে থাকবে, শারমিনের ও পছন্দ নয়। যাক, আল্লাহ ভালো একটা ব্যবস্থা করেছেন।

    যতই দিন যাচ্ছে, ততই রিতা বেগমের কাছে ঋণী হয়ে যাচ্ছেন, রাহেলা। পলি আজ যেতে না পারলে মন টা কত খারাপ হয়ে যেতো। কি সুন্দর ব্যবস্থা হয়ে গেল।

    রাহেলা খানম মনে মনে জাহিদ কে খুঁজছেন, এখান থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার পরই জাহিদ কে বাজারে পাঠাতে হবে, কালকের আয়োজনের জন্য। মেয়েকে দেখে, জামাই দেখে খুব আনন্দ লাগছে রাহেলার। কিন্তু এখন মন অন্য জায়গায় আছে, কি ভাবে সুন্দর করে করা যায় কালকের দিন টি, এই চিন্তা লাগছে তার….

    চলবে…

    আন্নামা চৌধুরী।
    ১৩.০১.২০২২

  • ভাবীর সংসার (পর্ব-২৫)

    ভাবীর সংসার (পর্ব-২৫)

    রিতা খানম শারমিনকে তার ছেলে সহ নিজে রেডি করছেন। ছেলের কি কি লাগবে, সব ব্যাগে গুছিয়ে দিচ্ছেন। তিনি শারমিন কে বললেন, একটা সুন্দর দেখে শাড়ি নে, বিয়েতে পরবি, আর আরেকটা নে, ওয়ালিমায় পড়ার জন্য।

    শারমিন বার বার বলছে, আন্টিমনি, আম্মা বাইরে, এখন আম্মাকে না বলে, ওই বাসায় চলে গেলে, আম্মা রাগ করবেন।
    – সংসার তোর না তোর মায়ের?
    – এখন, বাচ্চা নিয়ে একা ঝামেলা হয়ে যাবে খালা।
    – তুই বড় বউ, তোর বাসায় তোর ননদের বিয়ে, আর তুই যাবি কাল সকালে?
    – আম্মা, না করছেন।
    – দেখ, সাঈদ ও আজ অফিস থেকে এসে কষ্ট পাবে, তুই চল, তোর কোন অসুবিধা হবেনা।
    – আম্মা, কিন্তু রাগ করবেন।
    – এই বড়পা কি কখনো তার এই বাসা ছেড়ে কোথাও গিয়ে থেকেছে? আর তুই? চল, আমি গাড়ী দিয়ে নামিয়ে দিয়ে আসবো, চল। আর বাচ্চা রাখার জন্য মানুষের অভাব হবে নাকি!

    রিতা খানম, শারমিন কে নিয়ে তার বাসায় গেলেন, রুমের তালা দেখে রিতা বললেন, কি রে? তোর রুমে কি আছে, মনি মুক্তা?
    – সেইফটির একটা ব্যাপার আছে খালা।
    – ছোট লোক ছাড়া কেউ ঘরে মানুষ রেখে তালা দিয়ে রুম লক করেনা। যা হয়েছে বাদ দে। ননদের বিয়ে হৈ চৈ কর, বাচ্চা তার দাদীর কাছে দে, দেখবি তিনি কত আনন্দে নিয়ে রাখেন।

    হলুদের জন্য ছোট্ট স্টেইজ করা হয়েছে। গাদা ফুলের গহনায় পলি কে খুব সুন্দর লাগছে।

    রিতা খানম বললেন কি রে, তোদের স্পিকার নাই? এটা কি বিয়ে বাড়ী নাকি? কোন হৈ চৈ নাই। আনন্দ কর সবাই।

    রাহেলা খানম কে রিতা রান্নাঘরে গিয়ে বললেন, বেয়ান, জলির জামাই, তার আত্নীয়, আপনার ভাইয়ের বউ, সবাইকে আমি রাতে নিয়ে যাবো। আপনি চিন্তা মুক্ত থাকেন। আমার উনি, একটু পরে আসবেন, সবাইকে নিয়ে যাবেন দুই বারে।
    – না, বেয়ান। এখানে, হয়ে যাবে।
    – হবেনা, আমি জানি। আমার অনেক বড় বাসা, সমস্যা নাই। বিপদের জন্য তো আত্নীয়-স্বজন।
    – আমার মেয়েরা আপনার খুব ভক্ত! আপনার কাছে অনেক কৃতজ্ঞ আমি।
    – আমরা দুইজন ও মেয়ে দুটিকে খুব পছন্দ করি। কৃতজ্ঞতার কি আছে!

    আবিদের বাসা থেকে সামান্য আগে, কন্যার জিনিস পত্র এসেছে।

    রিতা খানম খুলে খুলে সবাইকে দেখিয়ে দিচ্ছেন।

    বিয়ের শাড়ি টি মেরুন রঙের খুব সুন্দর বেনারসি শাড়ি। সাথে মেরুন রঙের ওড়না! ওয়ালিমার জন্য একটা সোনালী রঙের জরি সুতার কাজ করা কাতান শাড়ি। হলুদের জন্য একটি সুতির শাড়ী, আর আরেকটা শাড়ি এসেছে, সুতির। সাথে আছে দুই জোড়া স্যান্ডেল, কসমেটিক্স, আর সামান্য ওরনামেন্টস।

    সবাই বলাবলি করছে, মাত্র চারটি শাড়ি দিয়েছে, ওয়ালিমার শাড়ীটাও তেমন দামী নয়। আর গিফট হিসেবে এসেছে, রাহেলা খানমের জন্য শাড়ি, আর কলির জন্য জামা। আর কোন গিফট আসে নি।

    আবিদের মামা এই সব জিনিস নিয়ে এসেছেন, তিনি রিতা খানম কে বললেন, ভাবী আপনি তো আর আমাদের আগের পরিচিত মানুষ, স্বর্ণ আপনাকে বুঝিয়ে দিচ্ছি। স্বর্ণ খুবই সামান্য, কারণ আবিদ নিজের টাকা দিয়ে বিয়ে করছে, দুলাভাই শুধু ওয়ালিমায় খরচ করবেন। শিক্ষক ছেলে, সব বাজার করে, স্বর্ণের জন্য তেমন টাকা রাখতে পারেনি।
    – সমস্যা নেই ভাই। যা আছে তা দিন।
    – এক টা চেইন আর লকেট, এক জোড়া ঝুমকা, আর ছোট্ট একটা আংটি।
    – আলহামদুলিল্লাহ! ছেলে নিজে এতো টুকু করতে পেরেছে, অনেক বেশি।

    শারমিন বিরক্ত হয়ে বললেন, কি গো পলি ভাইজানের সাথে রাগ দেখাও শুধু, দেখেছো কি দিল তোমার জামাই? দিবে কেমনে? টাকা থাকলে তো দিবে।

    পলি খুব শক্ত হয়ে বলছে, আমি মানুষ কে দেখে বিয়েতে রাজী হয়েছে, টাকা পয়সা দেখে নয় ভাবী।

    শারমিন আর কোন কিছু বললেন না।

    সাঈদ রাতের বেলা, মায়ের হাতে দশ হাজার টাকা দিয়ে বললো, এই টাকা তুমি যেকোনো কাজে লাগিয়ে দিও, আমার পক্ষে এর চেয়ে বেশি দেওয়া সম্ভব নয়।
    – যা দিয়েছো, অনেক। আর লাগবেনা, দেওয়া। দোয়া কর, বোনের জন্য।

    বিয়ের দিন পলিকে মেরুন বেনারসিতে খুন সুন্দর লাগছিল, মায়ের বানানো গহনা গুলিতে খুব চিক চিক করছে নতুন বউকে। এতো গহনা দেখে, ছেলে পক্ষের সবাই খুব প্রশংসা করছে।

    আবিদ পড়েছে সোনালী রঙের শেরওয়ানি, তাকেও বেশ সুন্দ লাগছে, মাথার মেরুন পাগড়ীতে বেশি সুন্দর লাগছে। কলি দুলাভাইয়ের সাথে খুব আনন্দ করছে। তিন ভাই আত্নীয়দের খুব যত্ন করছে, যাতে বোনের যেন কোন সম্মান নষ্ট না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখছে।

    বিদায়ের সময় কলি বোনের গলা জড়িয়ে হাউমাউ করে কান্না শুরু করেছে, আর বার বার বলছে, আমার আপা ছাড়া আমি কোন দিন থাকিনি, এখন কেমন করে থাকবো রে আপা! কিভাবে থাকবো!

    পলি ও বোনের গলায় শক্ত করে জটিয়ে দজরে, ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদেই যাচ্ছে।

    বিদায়ের পর যেন, চারিদিক নিস্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। কলি বিছানায় শুয়ে শুয়ে কান্না করেই যাচ্ছে। কান্না করতে করতে, বালিশ ভিজিয়ে দিচ্ছে।

    রিতা খানম বাসায় এসে বললেন বেয়ান, আগামীকাল তো ওয়ালিমা। এখন মেয়ে কে কি ওয়ালিমা থেকে এই বাসায় নিয়ে আসবেন?

    শারমিন সাথে সাথে বললো না, খালা। পলির জামাই, ফিরানীতে বাড়ীতে যাবে। শ্বশুর বাড়ী দেখবেনা? এখানে এসে কি মজা পাবে?
    – কি বলিস তুই? এরা এখানে, বাড়ীতে হঠাৎ আয়োজন করবেন কিভাবে?
    – দুদিন পরেই যাবে, কিন্তু বাড়ীতে গেলে আনন্দ হবে তাই না মা?

    রাহেলা খানম বললেন হ্যা, মা। দেখি কি করি। তিনি, বুঝতে পারছেন, শারমিন তার বাসায় আর কোন ঝামেলা হোক একদম পছন্দ করছেন না। এখন বাড়ীতে গিয়ে আবার নতুন করে কিভাবে কি আয়োজন করবেন, তাই নিয়ে ভাবছেন রাহেলা। এই মুহুর্তে কি নতুন জামাই বাড়ী যেতে রাজী হবে? ইশ কি যে এক ঝামেলায় পড়েছেন তিনি! কি করবেন, বুঝতে পারছেন না….

    চলবে…

    আন্নামা চৌধুরী।
    ০৯.০১.২০২২

  • আজিমপুর টু উত্তর –  আমি তো ভালো না, ভালো নিয়েই থেকো (সূচনা পর্ব)

    আজিমপুর টু উত্তর – আমি তো ভালো না, ভালো নিয়েই থেকো (সূচনা পর্ব)

    • আজিমপুর টু উত্তরা।
    • আমি তো ভালো না, ভালো নিয়েই থেকো।
    • আনোয়ার হাকিম।


    মৌমিতার এক কথা। তার পক্ষে আমার সাথে আর এভাবে রিলেশন টেনে নিয়ে যাওয়া সম্ভব না। তার এ অনুযোগ নতুন কিছু না। এর আগেও বহুবার এরকম অভিযোগ এনে সে সব ধরণের যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। আবার কিছুদিন পর যেচে এসে কান ঝালাপালা করা শুরু করে দিয়েছে। তাই এবারের হুমকিকে বরাবরের মত আমলে নেইনি। ভেবেছিলাম কিছু দিন গেলেই পাখী ফিরে আসবে। কিন্তু এবারের বিরতি ঢের প্রলম্বিত হচ্ছে। ফোনে তাকে পাওয়া যাবেনা জানি। ম্যাসেঞ্জার, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপেও পাওয়া যাচ্ছেনা। যাবে কি করে? আমি তো ব্লক লিস্টেড।
    অফিসের কাজে মন নেই। ক’দিন যাবত অফিসের পরিবেশও ভাল না। নতুন বস এসেছেন। এসেই আগেকার সব কিছু খারাপ, তাই পরিত্যাজ্য শ্লোগানে সবাই পেরেশানির মধ্যে আছি। আগের বস ব্যবহারে চামার প্রকৃতির হলেও কারো উপর কলম প্রয়োগ করেন নি। এই বস দেখতে আগের জনের চেয়ে পরিপাটি, পোষাকে-আশাকে ও কাজে-কর্মে। কিন্তু কথায় কথায় কলম ধরতেও ওস্তাদ। কয়েকটা চামচা জুটেছে তাঁর সাথে। পুরো অফিসটাকে সার্কাস্টিক করে তুলেছে। আমার সাথে বসের প্রথম সাক্ষাৎ মোটেই সুখকর ছিলনা। বসের সালাম মানে অবশ্যপালনীয় সাক্ষাত। টুক করে অস্ফুট স্বরে সালাম ঠুকতেই তাঁর কোপানলে পড়লাম, “সালাম দিলা না ঢুস মারলা?” আমি অপ্রস্তুত। ‘স্যরি’ বলে নিষ্পত্তি করতে গিয়ে পড়লাম আরো ভেজালে। ম্যানার আর এটিকেট সম্মন্ধে লম্বা লেকচার শুনলাম। বলাচলে ক্লাউন বনে গেলাম। চামচারা চারপাশ আলোকিত করে বসে আছে। তাদের মুখে আমার প্রতি পরিহাস আর বসের প্রতি কৃতজ্ঞতার বত্রিশ দন্তের এক্সিবিশন। মেজাজ তিরিক্ষি। কিন্তু করার কিছু নেই। চাকরি বলে কথা। করিডোরে আরো কয়েকজনের সাথে দেখা। তাদেরও মুখ কালো। তাদেরও অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। অফিসে এক ধরণের অস্বস্তি ও রাখঢাক ভাব। এমন সময় মৌমিতার ফোন, কই তুমি?
    — অফিসে
    — এখনই বের হও
    — কেন?
    — এত কৈফিয়ত দিতে পারবো না
    — নতুন বস। মার্শাল ল’ চলছে
    — সে তোমার বস। আমার না
    — তো
    — আমি ওসব বুঝিনা। বের হও আমি অপেক্ষা করছি।
    — এ মুহুর্তে অফিস লিভ করা যাবে না। তুমি আসো
    — আমি পারবো না। আসবে কিনা বলো
    — বললাম তো সম্ভব না
    — ঠিক আছে।
    কথা বলতে গিয়ে দেখি লাইন নেই।
    মৌমিতার সাথে আমার প্রথম সাক্ষাত আকস্মিক। সবেমাত্র চাকরিতে যোগ দিয়েছি। সরকারি চাকরি। বাবার পছন্দের। আমারও। চাকুরীজীবিদের জন্য বছর শেষে বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন নেওয়ার নিয়ম। সবাই দুই প্রস্থ ফর্ম নিয়ে ঢাকা মেডিক্যালে ছুটছে স্বাস্থ্য পরীক্ষা প্রতিবেদন সংগ্রহ করতে। সে এক এলাহী কান্ড। নির্ধারিত প্রফেসরের চেম্বারের সামনে লম্বা লাইন। একজন কর্মচারী সেগুলো জমা নিচ্ছে। আমি একজনের রেফারেন্সে গিয়ে পড়লাম বিপদে। কর্মচারীটা আমার দিকে কিভাবে যেন দৃকপাত করলো। আমি এর কারণ বুঝে উঠতে পারলাম না। দেখলাম ‘আগে আসলে আগে পাবেন’ নিয়মের ব্যাতিক্রম ঘটিয়ে অনেকেই বিজয়ের হাসি হেসে চলে যাচ্ছে। বুঝলাম নগদানগদি কারবারের ক্যাটালিস্ট কাজ করছে। আমার এতে আপত্তি। প্রায় ঘন্টাখানেক পর আমার ডাক পড়লো। নির্ধারিত রুমে ঢুকেই পড়লাম জেরার মুখে। এক লেডি ডক্টর বসে আছেন। মুখ না তুলেই বললেন, “হাইট কত সেন্টি”? আমি চেয়ার টেনে বসে পড়লাম। বললাম, “ভুলে গেছি”। লেডি ডক্টর মুখ তুলে তাকালেন। বললেন,”কি বললেন”? বললাম, “ভুলে গেছি”। বিস্ফারিত চোখ মেলে শব্দ বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বললেন, “মানে”? আমি স্থির হয়ে বললাম, “বমি আসছে। মাথা ঘোড়াচ্ছে”।
    — প্রেসার আছে? তার প্রশ্ন
    — জানিনা। মাপিনি কোন দিন
    — ডায়াবেটিস?
    — জানিনা
    — বড় ধরনের কোন অসুখ?
    — জানিনা।
    লেডি ডক্টর আশ্চর্যবোধক চিহ্ন চোখে-মুখে, কপালে ফুটিয়ে তুলে কলিং বেল চাপলেন। পিওন এলো। ফরমগুলো এগিয়ে দিয়ে বললেন, “উনাকে নিয়ে গিয়ে এগুলো করিয়ে আনেন”। আমি অসহায়ের মত সেই পিওনকে অনুসরণ করলাম। রুম থেকে বেরোতে গিয়ে পিছু ফিরে জিজ্ঞেস করলাম, “ম্যাম, আমার কি সাংঘাতিক কিছু হয়েছে”? লেডি ডক্টর এবার হেসে উঠলেন। বললেন, “যান তো”। আমার মন কেন জানি নেচে উঠলো। যাকগে সেসব। হাইট, প্রেসার ইত্যাদি মেপে আবার ফিরে এলাম সেই ম্যাম এর রুমে। দেখলাম তিনি সিঙ্গারা খাচ্ছেন। সামনে ছোট্ট ফ্লাক্স। চায়ের। বললেন, “হয়েছে?” ফরমগুলো উল্টেপাল্টে দেখলেন। তারপর ইনিশিয়াল দিয়ে পিওনের হাতে দিয়ে বললেন সাথে যান।
    ফর্ম হাতে অফিসে পৌছা মাত্রই ফোন। আন নোন নম্বর। ধরলাম। সেই লেডি ডক্টরের। ভুলো মনে তার টেবিলে আমার ফোল্ডার ফেলে এসেছি। ফোল্ডারেই আমার মোবাইল নম্বর ছিল। মন ইউরেকা উত্তেজনায় থেকে থেকে নেচে উঠছে। ভাবছিলাম এইসব অনেক কিছু। আবারো বসের সালাম।
    রাতে ব্যালকনিতে বসে নচিকেতার গান শুনছিলামঃ হাজারো কবিতা, বেকার সবই তা। তার কথা কেউ বলেনা। সে প্রথম প্রেম আমার, নীলাঞ্জনা। আমি নীলাঞ্জনাকে পেয়ে গেছি। সে উত্তেজনাতেই মন নেচে উঠছে, কি থেকে কি করি এই অস্থিরতায় পেয়ে বসেছে। দ্বিধা চেপে রেখে ফোন দিলাম। রিং হলো। রিসিভ হলোনা। গান শুনতে শুনতে কখন যে ঘুমিয়ে গেছি খেয়াল নেই। সকালে নাস্তার টেবিলে মোবাইলে ম্যাসেজ চেক করতে গিয়ে দেখি ক্ষুদে বার্তাঃ এত রাত জেগে কি করেন? শরীর খারাপ হয়ে যাবে- মৌমিতা। খুশীতে লাফ দিতে মন চাইলো। আম্মা সামনে বসে থাকায় চেয়ারেই দৃঢ় হয়ে বসে থাকলাম। তবে ভেতরে তুমুল আলোড়ন শুরু হয়ে গেছে। অফিসে গিয়ে রিং দিলাম। অনেক ক্ষণ পর রিসিভ হলো, “বলেন”।
    — অসুখ- বিসুখ রাত বিরেতেই হয়।
    — কি হয়েছে?
    — বুক চিন চিন করছে
    — কবে থেকে
    — এই তো কয়েক দিন থেকে
    — ডাক্তার দেখান
    — সেজন্যই তো ফোন দিয়েছিলাম। ধরেন নি। ডাক্তার আসিবার পূর্বে রোগী মারা গেল জাতীয় যদি হত
    — কথা তো ভালই জানেন দেখছি
    — এপয়েন্টমেন্ট কি হবে?
    — কিসের?
    — ডাক্তারের
    — যাকে দেখাবেন তার চেম্বারে যান। কন্টাক্ট করেন
    — আপনাকেই তো দেখাতে চাই
    — দেখাতে না দেখতে?
    — দু’টোই
    — দু’টোর কোনটাই হবে না।
    — কেন?
    — প্রথমত আমি হার্টের ডাক্তার না। আর দ্বিতীয়ত আমি চিড়িয়া না যে দ্রষ্টব্য হবো।
    এভাবেই মৌমিতা আমার নিত্যদিনের দ্রষ্টব্য হয়ে উঠে। আমাদের মধ্যে মিলের চেয়ে অমিলই বেশি। তবু জমে ভাল। আমি আবেগী। মৌমিতা সারাক্ষণ অপারেশনের সিজার হাতে ফোর ফোরটি ভোল্টের মত। আমার ভাল লাগে। সুন্দরীদের দেমাগ থাকে জানি। আর এই দেমাগই তাদের রাগের পাওয়ার হাউস। রাগলে মৌমিতার গাল দু’টো আরো রক্তাভ হয়। একটু ফোলা ফোলা ভাব থাকে। চোখে আলাদা তেজ প্রস্ফুটিত হয়। আমি আরো রাগাই। মৌমিতা ফিক করে হেসে উঠে , কখনো চুপ মেরে বসে থাকে।
    তার সাথে বিপত্তির শুরু আমার এক মহিলা কলিগকে নিয়ে। নাম শমরিতা। ঘটনার শুরু এক ট্যুরে যাওয়াকে কেন্দ্র করে। অফিসের কাজে তার সাথে যেতে হয়েছিল বান্দরবান। দু’দিনের জন্য। কথা প্রসঙ্গে আর ছবি শেয়ার করার আহাম্মকির কারণে বিষয়টি যে মৌমিতার কাছে সন্দেহের প্রশ্নবোধক ট্যাগ হয়ে উঠবে বুঝতে পারিনি। সেই থেকেই থেকে থেকে এই অন-অফ খেলা। চরম বিপত্তি বাধে বসুন্ধরা সিটিতে গিয়ে। শমরিতার কিছু কেনাকাটা আছে ওখানে। আমারও একটা মোবাইল সেট কেনা দরকার। অফিসের গাড়ীর সুবিধা পাওয়ায় দু’জন একসাথে গিয়েছি সেখানে। মোবাইল সেট কিনতে গিয়েই দেখা হয়ে গেল মৌমিতার সাথে। আনুষ্ঠানিক পরিচয় পর্বে কুশল বিনিময় হলেও বিষয়টা যে পরে কুরুক্ষেত্র বাধাবে তা আঁচ করতে পেরে ক্রমাগত ঢোক গিলতে থাকলাম। মৌমিতা তাড়া আছে বলে বলা চলে ইচ্ছে করেই চলে গেল দ্রুত। আমি কিছু বুঝতে না দিলেও আর সহজ করতে পারছিলাম না নিজেকে। মোবাইল সেট আর কেনা হয়নি সেদিন। এরপর যথারীতি মৌমিতার ফোন বন্ধ। খোলা থাকলেও রিং দিলে ধরেনা। একদিন পেয়ে গেলাম হঠাৎ। বললাম, ফোন ধরোনা কেন?
    — ধরতেই হবে, এমন বাধ্যবাধকতা কি আছে?
    — এরকম বলছো কেন?
    — কি বলবে বলো, আমি ওয়ার্ডে রাউন্ডে যাবো
    — দেখা করতে চাই
    — কেন? কলিগ আছে না? তাকেই তো সারাক্ষণ দেখছো। তাকেই দেখে রেখো। রাখছি।
    জানি শমরিতা ফোবিয়ায় তাকে পেয়ে বসেছে। নারী যতই স্বাবলম্বী হোক, যতই আয় রোজগারি হোক যতই উদার আর উচ্চ শিক্ষিত হোক এই একটি জায়গায় তার সন্দেহ, ভয়, আর হিংসা তাকে সাধারণ নারী পর্যায়ে নামিয়ে আনে। কই, আমি তো শার্লক হোমস সেজে কখনো ভাবিনি তার পুরুষ কলিগদের সাথে তার কি সম্পর্ক? আদৌ কারো সাথে কোন সম্পর্ক আছে কিনা? পাগলের মত তার চেম্বারে গিয়েছি। পাইনি। ওয়ার্ডে গিয়ে দাঁড়িয়ে থেকেছি। প্রফেসর রাউন্ডে আছে তাই ঢুকিনি। মৌমিতা আর বের হয়নি। এভাবেই যোগাযোগহীন চলছে অনেক দিন। এরকম অবস্থায় মানুষের আচরণে অস্বাভাবিকতা ধরা পড়ে, যা সে নিজেও বুঝতে পারেনা। নিকটজনেরা পারে। আম্মার চোখ ফাঁকি দেওয়া কঠিন। তাঁর নানারুপ তত্ত্বতালাশে আমি বেজায় বিরক্ত। এরমধ্যে শুরু হয়েছে পাত্রী দেখার তাগিদ। তাঁর জানাশোনা এক মেয়ে আছে। পাবলিক ভার্সিটির লেকচারার। দেখতে অপরুপা। একহারা গড়ন। বাবা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি অফিসার। ঢাকায় বাড়ী, গাড়ী সবই আছে। এক বাপের একমাত্র সন্তান। বলা চলে রাজকন্যা। পাত্রী হিসেবে দশে দশ দেওয়া যায়। কিন্তু মৌমিতা আলাদা। তার রেটিং একান্তই মনের। মনের এই অবস্থায় শমরিতার টেক কেয়ার আরো বেড়ে গেছে। বাসা থেকে নানান খাবার নিয়ে আসে। দুপুরে খাওয়ার দাওয়াত দেয়। এগারোটায় চা খেতে খেতে আলাপও হয়। শমরিতা কি তার পরিধি বাড়াচ্ছে? বুঝতে পারিনা। এমনিতে সে খুব সুন্দর, জড়তাহীন। উদার। এক ধরণের মেয়ে আছে যাদের দেখলেই দিনটা ভাল হয়ে যায়। একটু হাসলেই মনে হয় শীতের সূর্য একটু দিলখোলা হয়েছে। একদিন এমনই এক চা চক্রে অফিসে বসেই নানা আলাপ চলছিলো। হঠাৎই গম্ভীর হয়ে শমরিতা বলে, “একটা কথার ঠিক ঠাক উত্তর দিবে?”
    — বলো
    — তোমার কি কিছু হয়েছে?
    — না তো
    — সে তো বুঝতেই পারছি। আচ্ছা, বাই দা ওয়ে, সেদিনের সেই মহিলাটা কে ছিল?
    — লেডি ডক্টর
    — ব্যস, এটুকুই?
    — তো
    — তুমি কি কিছু আড়াল করছো?
    — না তো
    — উনি সেদিন ওভাবে হুট করে চলে গেলেন যে
    — আমি কি করে বলবো?
    — আর ইউ ইন আ রিলেশন উইথ হার
    — ডোন্ট নো।
    সেদিনের পর থেকে শমরিতা বেশ ফরমাল। হাই- হ্যালোতে আমাদের নিত্যদিন দেখা হয়, কথা হয়। রাখঢাক হয়। চোখাচোখি হয়। তার মুখের ভাষা বুঝি। শমরিতার কি তবে অন্য কোন চিন্তা ছিল? তার সেই স্বতঃস্ফূর্ততা আর আগের মত নেই।
    এদিকে আম্মার চাপ ক্রমশঃ বাড়ছে। তিনি প্রায় একরকম কথা দিয়েই ফেলেছেন সেই লেকচারার পাত্রীর বাবা-মা’কে। আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। আমি কোন ভাবেই মৌমিতাকে রীচ করতে পারছিনা। মেডিকেলে গিয়ে জানতে পারলাম, মৌমিতা এখন আর সেখানে পোস্টেড নেই। এম আর সিপি করতে ইংল্যান্ড চলে গেছে বেশ ক’দিন আগে। মাথাটা চক্কর মেরে উঠলো। এবার সত্যি সত্যিই বমি বমি লাগছে। মনে হয় সুগার লেভেল নেমে গেছে। চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে।
    অফিস এখন আর কোনভাবেই আকর্ষণ করেনা আমাকে। শমরিতার মধ্যেও আগের সেই স্বতঃস্ফূর্ততা নেই। পাত্রী পক্ষ দ্রুত এগোচ্ছে। আম্মা তার চেয়ে বেশি। আমি ততোধিক ব্যাক ফুটে।
    হঠাৎই হোয়াটসঅ্যাপে মৃদু গুঞ্জন তুলে মৌমিতার ক্ষুদে বার্তাঃ আমি তো ভালো না, ভালো নিয়েই থেকো।

    চলবে…

  • ভাবীর সংসার (পর্ব-২৪)

    ভাবীর সংসার (পর্ব-২৪)

    রাহেলা খানম ব্যাংক থেকে, পলির বিয়ের টাকা তুলে, এখন জাহিদ কে নিয়ে স্বর্ণের দোকানে বসে আছেন। এই দোকান হরিধন বাবুর, হরিধন বাবু রাহেলা খানমের অনেক দিনের পরিচিত। হরিধন বাবু ভিতরে কাজ করছেন, তার জন্য অপেক্ষা করছেন।

    হরিধন বাবু এসে বললেন, দিদি অনেক দিন পর আমার দোকানে এলেন।
    – যা স্বর্ণ ছিল, তা বিক্রি করা শেষ, তাই আসা লাগেনা।
    – স্বর্নের চেয়ে দামী, ছেলেরা পেয়েছেন। আর কি লাগে।
    – জি, এটা সত্য। মেজ মেয়ের বিয়ে আগামী সপ্তাহে, স্বর্ণ লাগবে।
    – বাহ, খুব খুশির সংবাদ।
    – ভরি কত করে?
    – এখন ভরি ছয় হাজার টাকা।
    – কি বলেন দাদা? এতো বেড়ে গিয়েছে?
    – জি। হু হু করে বাড়ছে।
    – আচ্ছা, একটা নেকলেস, এক জোড়া ঝুমকা, আর একজোড়া বালা দেখান। আর কমান দাদা টাকা।
    – দিদি, এই সব নিলে পাঁচ ভরির কম হবেনা, টাকা দেখবো পরে।
    – আচ্ছা, দেখান।

    রাহেলা খানম মেয়ের জন্য ছয় ভরি স্বর্ণ কিনলেন। জামাইকে দেওয়ার জন্য একটা চেইন। সব মিলিয়ে পঁয়তাল্লিশ হাজার টাকা গেল। রাহেলা খানম জাহিদ কে বললেন বাবা, খরচ কি বেশি করে ফেলেছি?
    – মা, তোমার টাকা তুমি যেভাবে ইচ্ছে খরচ কর। আর পলির শ্বশুড় যেহেতু কিছু নিতে চাইছেন না, তাহলে স্বর্ণ দেওয়াই ভালো। বিপদে কাজে দিবে।
    – তাই বাবা। আমি জানি, এই জিনিস আমার কত বিপদে বাঁচিয়ে রেখেছে।

    বাকি টাকা নিয়ে, বিয়ের মাত্র তিন দিন আগে রাহেলা ছেলের বাসায় গেলেন। যথারীতি শারমিনের রুম তালা দেওয়া। এক রুমে সবাই বসে আছে। সাঈদ চাবি দিয়ে অফিসে চলে গিয়েছে।

    কলি বললো মা, ভাবী কি বিয়ের আগে এই বাসায় আসবেনা?
    – বাচ্চা ছোট, কেমনে আসবে।
    – মা, অযুহাত দিও না।
    – যার বাসা সে না আসলে, কিচ্ছু করার নেই। আচ্ছা শোন, তুই পলির জন্য ভালো দেখে চারটি শাড়ি কিনে দিবি, এক জোড়া ঘরে পড়ার স্যান্ডেল, ওর শ্বাশুড়ির জন্য একটা শাড়ি আর টুকটাক যা লাগে কিনে নিয়ে আয়, আমি টাকা দিচ্ছি।
    – মা, আমি কোন কিছু কিনবো না?
    – কমিনিউটি সেন্টার আর খাওয়ায় চলে যাচ্ছে চল্লিশ হাজার টাকা। জামাইয়ের কাপড়, ওয়ালিমায় যাওয়ার খরচ নাই? কাপড় কিনবি!

    পলি বললো মা, আমার চারটা শাড়ি লাগবেনা একটা নতুন হলে হবে, জলিপা কলি আর ভাবীকে কিনে দাও। আর তিন ভাইকে তিন টা শার্ট। আমার আর কিছু কেনা লাগবেনা।
    – তুই চুপ থাক।

    জাহিদ বললো এই, পলি আছি রে, এখনো ভাই জীবিত, এতো চিন্তা করিস না। কলি তুই ওকে নিয়ে রেডি হ, আমি তোদের শপিং করে দিচ্ছি। মা, তুমি সাবধানে থাকো। এই টাকা তোমার কাছে রাখো। বাজার সদাই করতে হবে, কাল মেহমান আসবে।
    – না, বাবা। তুই খরচ করিস না, বিয়েতে কত খরচ, পরে টাকা লাগবে।
    – মা, তুমি চিন্তা করবেনা, শান্ত হয়ে থাকো।

    জাহিদের কেন জানি, মন টা আজ খুব খারাপ লাগছে৷ পলির বিয়ে হয়ে যাচ্ছে, কেমন যেন ছায়াহীন লাগছে। পলি খুব সুন্দর করে সব কিছু বুঝতে পারতো। বিয়ে হয়ে গেল, বোন গুলি কত দূরে চলে যায়। বিয়ের আগে, যা ইচ্ছে মন ভরে শপিং করুক। কত আত কিনবে, শখ মিটিয়ে যাক। তাই বোন কে নিয়ে শপিং যাচ্ছে জাহিদ।

    শারমিনের জন্য একটা মেরুন রঙের কাতান পছন্দ করেছে পলি। চিকন সুতার কাজ করা, চমৎকার শাড়ি। আর কলি আর জলির জন্য কেন্স হয়েছে আকাশী রঙের মিরপুরী কাতান শাড়ি। নিজের জন্য সুতির দুটি শাড়ি কিনেছে পলি। কিন্তু জাহিদের পলির দুটি শাড়ি পছন্দ হয়নি, তাই সে জলি আর কলির মতো একই রকম আরেক টা শাড়ি কিনে দিল। সবচেয়ে দামী শাড়িটা কেনা হলো, শারমিনের জন্য। জাহিদ, চার ভাইয়ের জন্য শার্ট, মায়ের জন্য একটা শাড়ি কিনে নিল। আর ছোট্ট জিহানের জন্য পাঞ্জাবি সেট। পলিকে বার বার বলছে যা ইচ্ছা কিনে নে, কোন সমস্যা নেই।

    কলি রাস্তায় এসে বললো, মেজ ভাই তুমি ভাবীর বাপের বাড়ী গিয়ে এসব দিয়ে এসো, আমি ওদের বাসায় যাবো না। আর আপার কাল পরে পড়শু বিয়ে আপা, ও যাবেনা।
    – তুই চল, কলি। তুই ছাড়া আমি একা কেমনে যাবো?
    – জানিনা। আমি যাবো না।

    জাহিদ শেষ পর্যন্ত একাই গেল। কলিং বেল দিতেই আইরিন বের হয়ে এলো, খুব বিরক্ত হয়ে বললেন আপনারা চলে এসেছেন?
    – হ্যা৷ আজ সকালে এসেছি।
    – বসেন।
    – ভাবী কোথায়?
    – এই বড়পা, এদিকে আয় একটু….

    জাহিদ বসার ঘরে বেশ কিছুক্ষণ বসার পরে, শারমিন এসে বসলেন। কি ব্যাপার জাহিদ, কেমন আছ?
    – ভালো আছি ভাবী। আপনি?
    – আছি। ভালোই আছি।
    – বাসায় যাবেন কবে?
    -সত্যি কথা, জিহান বেশি মানুষ দেখলেই ঝামেলা করে। এজন্য বিয়ের আগেরব্দিন রাতেই দেখি যাবো।
    – ওহ।
    – আপনার জন্য পলি এই শাড়ি পছন্দ করে কিনেছে।
    – আমি কি কাতান শাড়ি এই বাচ্চা নিয়ে পরতে পারবো? আর শাড়ি আমার অনেক আছে। আম্মা তো অনেক টাকা পেলেন, মেয়ের জন্য ঠিকই স্বর্ণ কিনেছেন। আর আমার জন্য শাড়ি। একটা আনার স্বর্ণ তো কেউ গিফট দিল না!
    – একটু সময় পরে নিয়েন, খুশি হবে সবাই।
    – ভাইরে, আমি বাচ্চা সামাল দিব? নাকি শাড়ী? আর, জাহিদ সেন্টারে যখন অনুষ্ঠান জলিকে সেন্টারে আসতেই বলতে।
    – ইয়ে, ভাবী। ও আর বড় মামী আম্মা শুধু আগের দিন আসবে, আর কেউ না।
    – তাহলে একটা বাসা ভাড়া নিতে? এতো মানুষ যখন আসবে।
    – জি ভাবী, ঠিকই বলেছেন। আচ্ছা ভাবী আমি আসি। কিছু দরকারী কাজ আছে।
    – হুম। যাও, চা খেয়ে যাও।
    – না, না। এখন না।

    জাহিদের একদম মেজাজ ধরে গিয়েছে শারমিনের কথা শুনে। অথচ তার মায়ের শেষ সম্বল এক জোড়া বালা, তিনি তার বড় ছেলের বউকে দিয়েছিলেন। ভাইজান দশ ভরি স্বর্ণ নতুন বানিয়ে দিয়েছেন। মায়ের জায়গা বিক্রির পঞ্চাশ হাজার টাকাও ভাইজান কে দেওয়া হলো তবুও ভাবী কত রকম কথা বলছেন। মুখ যখন আছে, বলতে হবে, এজন্য হয়তো বলছেন।

    পাশের বাসার তিন জন মহিলা রাহেলা খানম কে সালাম দিয়ে বসার ঘরে ঢুকে বলছেন, খালাম্মা আমরা আপনাদের পাশেই থাকি। বিয়ে শুনলাম তাই দেখতে এলাম।
    – খুবই ভালো হয়েছে এসেছো, বসো। আমি মা, গ্রামে থাকি, তাই তোমাদের সাথে পরিচয় নাই।
    ,- এই বাসা তালা দেওয়াই থাকে, হঠাৎ ভাই এসে পরিষ্কার করে চলে যান। আমরাও আপনাকে আজ প্রথম দেখলাম।
    – হ্যা, ছেলের চাকরি দূরে। এজন্য বউমা বাবার বাড়ী থাকেন।
    – জি। খালাম্মা, আমাদের সবার ঘরে রুম খালি আছে, মেহমান আসলে পাঠিয়ে দিবেন। একদম আপন মনে করে। আর কিছু লাগলে ডাকবেন।
    – আচ্ছা মা, ডাকবো।
    – ভাবী কি রান্নাঘরে? ননদের বিয়ে তো, তাই ব্যস্ত বোধহয়। ননদের বিয়েতে সব দায়িত্ব ভাবীর।
    – হ্যা, হ্যা। বউমা একটু বাইরে গিয়েছে, কাজে।
    – আর হলুদ করতে চাইলে উঠানে করবেন, আমরা সাহায্য করবো সমস্যা নাই।
    – অনেক ধন্যবাদ মা, সবাই বিয়েতে আসবে। রাগ করবেনা আবার, এখন দাওয়াত দিচ্ছি বলে, আজই এসেছি বাড়ী থেকে।
    – আমরা আছি, আপনি চিন্তা করবেন না। এখন আসি।

    কলি সবাই চলে যাওয়ার পর বলছে, দেখেছো পাশের ঘরের মানুষ সাহায্য করতে আসছে। আর আমাদের একমাত্র ভাবীর খবর নাই, আবার রুমেও তালা দিয়ে রেখেছে।
    – থাক, শুভ সময়ে অযথা কথা বলার দরকার নাই।
    – তোমার নীরবতাই সকল সমস্যা।
    – আর, কথা বলিস না তো! যা। কাজে যা!

    রাহেলা খানমের নিজেরই কেমন পর পর লাগছে। কিন্তু কি করবেন, কিচ্ছু করার তো নাই।

    বিয়ের আগের দিন সকালে জলি তার জামাই, দুই ননদ নিয়ে এসেছে। সাথে বড় মামী, ও তার বড় মেয়ে।

    রাহেলা খানমের জলির এই কম বুদ্ধির জন্য সবসময় ভোগেন। কত বার বলেছেন, এই খানে জায়গা কম, তবুও ঠিকই ননদ নিয়ে এসেছে। এরমধ্যে আবার দুইজন। তাদের নিশ্চয়ই জোড় করে নিয়ে এসেছে সে। এখনো শারমিন আসেনি, রুম তালা দেওয়া। কি করবেন তিনি বুঝতে পারছেন না।

    নাহিদ-শাহিদ মরিচ বাতি আর গায়ে হলুদের স্টেজ সাজানোর জন্য ফুল আর কাগজ নিয়ে উপস্থিত হয়েছে কিছুক্ষণ আগে।

    সবাই গোল হয়ে বসে কাগজ কাটছে, গাদা ফুলের লম্বা লাইন করছে, স্টেজ সাজানোর জন্য। বেশ উৎসব উৎসব লাগছে। জামাইয়ের বাড়ীর কাপড় এসে এখনো পৌছায় নি। এর জন্য অপেক্ষা করছে সবাই।

    পলির খুব আনন্দে লাগছে, তার বিয়েতে মরিচ বাতি জ্বলবে, কিংবা কেউ এতো আগ্রহ নিয়ে কাগজ কেটে স্টেজ করবে, কখনো চিন্তা ও করেনি সে। আগামী কালকের শুভ সূচনা কি শুভ হবে, তাই নিয়ে ভাবছে পলি। সবার মায়াকে ছেড়ে যাবে কেমনে! তা ভাবলেই বুকে ছ্যাৎ করে উঠে তার।

    রাহেলা খানম সব দেখছেন, কিন্তু ভাবছেন এতো মানুষের থাকার ব্যবস্থা কেমনে হবে? কেমনে আদর করে দিবেন অতিথিদের। কতশত চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে মাথায়….

    চলবে…

    আন্নামা চৌধুরী।
    ০৫.০১.২০২২

  • ভাবীর সংসার (পর্ব-২৩)

    ভাবীর সংসার (পর্ব-২৩)

    রাহেলা খানম মেয়ের চিঠি এই নিয়ে তিন বার পড়লেন, এবং চিঠি হাতে বারান্দার বেঞ্চিতে বসে জাহিদের জন্য অপেক্ষা করছেন। এখন দুপুর বেলা, জাহিদ বাড়ী আসবে!

    তিনি এক দৃষ্টিতে দুটি শালিক দেখছেন, তিনি কুংসস্কার বিশ্বাস করেন না, তবে তিনি জোড়া শালিক দেখে ভাবলেন হয়তো সুসংবাদ তার জন্য কিছু অপেক্ষা করছে।

    জাহিদের সাইকেলের শব্দে তিনি জাহিদের দিকে ফিরে তাকালেন।

    জাহিদ বললো এতো মনোযোগ দিয়ে কি দেখছো মা?
    – না, বাবা। পলি চিঠি লিখেছে।
    – কি? জামাই পছন্দ হয়নি।
    – আরে না! সাঈদ ছেলে পছন্দ করেনি, না করতে যাইতে চাচ্চে, এখন পলি ওই ছেলেকেই বিয়ে করতে চায়।
    – আলহামদুলিল্লাহ! ছেলে খুব ভালো মা। শুধু টাকা পয়সা কম, কষ্ট করেই চলতে হবে।
    – সারা জীবন এই টানাটুনির সংসারের ঘানি ঠেলেছি, এখন মেয়েদের এই ঘানি ঠেলতে দিতে, ভয় লাগে। সাঈদ কে তুই ফোন কপ্রে বল, যেন সে এখানেই বিয়ে ঠিক করে, আমি পাক্কা মত দিয়েছি।
    – তাই ভালো। ছেলে ভালো হলে, সুখ এবং শান্তি দুই থাকবে। টাকা একদিন হবেই, সেটা সময়ের অপেক্ষা।
    – তাই যেন হয়।

    সাঈদ খবর শুনে, খুব বিরক্ত হয়েছে। কারণ এই ছেলের কাছে বিয়ে দিতে তার একদম মন টানছে না। কিন্তু যেহেতু মা নিজে হুকুম দিয়েছেন, তাই সাঈদ শফিউল আলম সাহেব কে কল করে জানিয়ে দিয়েছে, তাদের কোন আপত্তি নেই। মেয়ের ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হলেই, বিয়ে হবে।

    পলি এই খবর শুনে, খুব শান্তি পেয়েছে। যাক, একজন সৎ মানুষের সাথে বিয়ে হবে।

    দুই মাস পরে, আবিদ ছুটিতে এসে, মহিলা কলেজের সামনে হাঁটাহাঁটি করছে, এক নজর পলিকে দেখবে বলে। কিন্তু পলির দেখা মিলছে না। কারণ আজ পলি ক্লাসেই আসেনি, রাত থেকে তার জ্বর। কলিও বোনের কাছে কাছে থাকছে। এখন কলি একটু নাপা কিনতে হলের বাইরে যাবে, এজন্য বের হবে।

    আবিদ প্রায় ঘন্টা খানেক ধরে কলেজের গেইটের বাইরে দাঁড়িয়ে ঝালমুড়ি, বাদাম, খেয়ে যাচ্ছে। কিন্তু পলির দেখা পাচ্ছেনা!

    হঠাৎ কলিকে দেখে আবিদ হাতে চানাচুর নিয়েই দৌড়ে সামনে এলো, কিন্তু এভাবে দ্রুত পায়ে এসে, নিজেই লজ্জা পেয়ে গেল।

    আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া, কেমন আছেন?
    – জি ভালো, আপনি?
    – ভালো আছি। এদিকে কি মনে করে।
    – আমি, এদিকে বন্ধুর সাথে দেখা করতে এসেছিলাম।
    – তা, বন্ধু কি মহিলা কলেজে পড়ে?
    – হ্যা, না না। ও মহিলা কলেজে পড়বে কেন?
    – না, কলেজের মামার চানাচুর খাচ্ছেন, তাই ভাবলাম।
    – এমনি, এমনি নিয়েছি।

    কলি নিজে ভিতরে, ভিতরে হাসছে, বেচারা বউকে দেখতে এসেছে, তাও লজ্জায় বলতে পারছেনা।

    আপনি চানাচুর খাবেন?
    – আপনি আপনি করছেন কেন? তুনি বলুন।
    – হ্যা, তাই। তুমি খাবে?
    – না, আমি খাবো না। বউয়ের কথা জিজ্ঞেস করবেন না?
    – হ্যা?
    – বলছি, আপনার হবু বউ, মানে আমার আপার, কথা কিচ্ছু জিজ্ঞেস করবেন না?
    – কেমন আছে সে?
    – ভালো নেই, অসুস্থ। রাত থেকে জ্বর।
    – এখন কি অবস্থা?
    – ঔষুধ কিনতে যাচ্ছি।
    – আমি আসি সাথে?
    – জি অবশ্যই।

    আবিদ পলির জন্য এক কেজী মালটা, কমলা লেবু ,আঙ্গুর, স্যালাইন, ঔষুধ কনে দিয়েছে। কলি অনেক না করার পরেও!

    যাওয়ার সময় বললো, তোমার আপার যত্ন নিও, আমি আজই রওনা হবো। দুদিনের ছুটিতে এসেছিলাম। আমার ঠিকানা দিয়ে দিলাম, পলিকে দিয়ে দিও। আজ আসি!

    কলির খুব ভালো লাগছে, এই মানুষটির ভালবাসা দেখে, সে সত্যি আপা কে ভালবেসে ফেলেছে। এজন্য পলিকে এক নজর দেখার জন্য দাঁড়িয়ে ছিল, আবার ফল ও কিনে দিয়েছে, অসুস্থ শুনেই মন ভার করে ছিল।

    পলি এতো ফল দেখে বললো কি রে, এতো সব কি দিয়ে আনলি? টাকা নিল ত্রিশ টাকা।
    – দুলাভাই দিয়েছে।
    – জলিপার দুলাভাই? কিভাবে আসলো?
    – আপনার জামাই, মিস্টার আবিদ।

    পলি জামাই শব্দ টা শুনেও বেশ লজ্জা পেয়ে চমকে উঠেছে, গাল দুটি লাল হয়ে আছে।

    কেন উনি এসব দিলেন?
    – উনি তো প্রায় কেঁদেই দিচ্ছিলেন, তুই অসুখ শুনে।
    – ফাইজলামি করবি না তো!
    – এই নে, ঠিকানা, পত্র লিখতে বলেছে।
    – নিজে লিখে নিয়ে এসেছিস! ফাজিল মেয়ে।

    আমার লেখা কি এতো গুটি গুটি করে হয়, দেখো ভালো করে।

    ছোট্ট চিরকুট,

    আবিদুল আলম আবিদ, আগ্রাবাদ, নুর ম্যানশন, ৩য় তলা, চট্টগ্রাম।

    পলির লেখা টা অনেক বার পড়তে ইচ্ছে করছে, আবার রাগ ও লাগছে, কেন সে তাকেই প্রথমে চিঠি লিখতে বললো, নিজেই আগে একটা চিঠি দিত!

    শফিউল আলম বিয়ের তিন মাস আগে, রাহেলা খানম কে চিঠি লিখলেন।

    আপা,
    আসসালামু আলাইকুম, আমি আবিদের আব্বা। আল্লাহর ইচ্ছায় ভালো আছেন। সব ঠিকঠাক থাকলে, আগামী তিন মাসের মধ্যে আমার পুত্রবধূকে আমি ঘরে নিব। কন্যার পিতা-মাতার চিন্তা বেশি, কন্যাকে নিয়ে। কন্যা কে বিদায় দেওয়া অনেক বেদনার। আমার দুই কন্যা আছে, এদের বিবাহের কথা মাথায় আসলে, আমি চোখে অন্ধকার দেখি, আবার ভাবী, দুই কন্যা দিয়ে সাত কন্যা ঘরে আনবো। আমার একটা বিশেষ অনুরোধের কথা জানানোর জন্য চিঠি দিলাম।
    আমি আমার ছেলেদের বিয়ে দেওয়ার আগেই তাদের রুম বানিয়ে দেই, আবিদের রুমের রঙের কাজ চলছে এখন, আমার বাড়ীর কাঁঠাল গাছ কেটে বউমার জন্য একটা খাট, ড্রেসিং টেবিল, আর কাপড় রাখার জন্য একটা আলমারী বানানো চলছে, ইনশাআল্লাহ বিবাহের আগে সব বানানো শেষ হবে।

    দয়া করে, কোন প্রকাশ আসবাবপত্র দিয়ে আমাকে ছোট করবেন না। আমি আপনার মেয়ে আমার ঘরে নিব,তাই আমার সৌভাগ্য! আপনি মাত্র ত্রিশ জনের খাবার আয়োজন করবেন, আমি বিয়ের পরের ফিন, আমার বাড়ীতে প্যান্ডেল করে ওয়ালিমা করবো, আপনার সব আত্নীয় নিয়ে আসলে খুশি হবো। আমার জন্য দোয়া রাখবেন, আর আমার মেজ পুত্র আবিদের জন্য দোয়া রাখবেন। বাড়ীর বড়দের সালাম, আর ছোটদের জন্য স্নেহ রইলো। আজ এই পর্যন্ত, ভালো থাকুন।

    ইতি,
    আপনার ভাই,
    প্রফেসর শফিউল আলম।

    রাহেলা খানম চিঠি পড়ে খুশিতে কাঁদছেন, এতে ভালো একজন পিতার সন্তানের সাথে তার মেয়ের বিয়ে হবে, যিনি মেয়েদের এতো সম্মান করেন, ভালোবাসেন। রাহেলা খানম চিঠি বন্ধ করে চিন্তা করছেন, মেয়েকে তিনি তাহলে কি উপহার দিয়ে শ্বশুড় বাড়ী পাঠাবেন! সময় আর বেশি নেই, চিন্তা লাগছে, কি করবেন তিনি মেয়ের খুশির জন্য, আর তো তিনি চাইলেও বিবাহিত মেয়েকে বেশি কিছু দিতে পারবেন না। এখনই যা দেওয়ার দিতে হবে, কি দিবেন এই চিন্তায়ই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে….

    চলবে…

    আন্নামা চৌধুরী।
    ০২.০১.২০২২

  • ভাবীর সংসার (পর্ব-২২)

    ভাবীর সংসার (পর্ব-২২)

    পলি বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে, আজ মনে হচ্ছে বাতাস টা অন্যদিনের তুলনায়, অনেক ঠান্ডা, সম্ভবত বৃষ্টি হতে পারে। কি সিদ্ধান্ত আসে, তাই নিয়ে একটু মন টা চিন্তায় আছে তার।

    জাহিদ এসে পিছনে দাঁড়ালো, পলি, কি করছিস?
    – না, কিছু না।
    – রিতা খালাম্মা গাড়ী পাঠিয়েছেন, উনার বাসায় যাওয়ার জন্য। আমার খুব লজ্জা লাগছে, আমাদের থাকার কি দরকার? আর থাকলে ভাইজানের বাসায় থাকতাম, বাসাটা খালি পরে আছে।
    – ভাইজান, চায়না, আমাদের জন্য আবার তার বন্ধ ঘর খুলতে, সে সপ্তাহে একদিন আসে, সেজন্য তার বাসা খোলার দরকার নাই।
    – এক কাজ করি, আমি আর নাহিদ চলে যাই।
    – আমি সত্যি করি বলি, আমাদের মুনা খালা আমাদের যে আদর করতেন, রিতা খালা সে-রকম একজন মানুষ।
    – তবুও….

    তারা চার ভাই-বোন যখন রিতা খালার বাসায় যাওয়ার জন্য গাড়ীতে উঠবে, তখন সাহেদা খানম বলছেন তোমাদের ট্রেন কখন?
    – খালাম্মা এখনো টিকেট করিনি।
    – টিকেট কনফার্ম করে আসবে, এখন গেলে কি আর পাবে?
    – দেখি খালা।
    – থাকলে, থেকে যাও আমার বাসায়। রিতার মেয়ের সামনে পরীক্ষা।
    – না, থাকবো না খালাম্মা, বাসেই চলে যাবো।
    – নিজের বাড়ী ঘরেই বাবা, সবচেয়ে শান্তি।
    – জি খালাম্মা।

    সাঈদ ঘর থেকে বেড়িয়ে বললেন কি রে তোরা নাকি খালাম্মার বাসায় যাচ্ছিস? বাসায় নিতাম, কিন্তু এমন বাজে অবস্থা হয়ে আছে, যে গিয়ে পরিষ্কার করতেই একদিন লাগবে। কাল সকালে কল দিস, খালার ল্যান্ড লাইন থেকে। তোর সাথে কথা আছে।
    – জি ভাইজান।

    জাহিদ গাড়ীতে উঠে চার রাস্তার মোড়ে এসে বললো, পলি-কলি, তোরা ফাইনাল পরীক্ষা ভালো করে দে, বারোশো টাকায় কি হয় তোদের?
    – কিসের বারোশো?
    – আমি এক হাজার আর ভাইজান দুইশো দেন।
    – হুম, হয় হয়।

    পলি সাথে সাথে চোখ দিয়ে ইশারা করে কলিকে চুপ থাকতে বললো।

    ড্রাইভার সাহেব, আমাদের এখানে একটু নামিয়ে দেন।
    – তুমি এখানে নেমে কি করবে?
    – না রে, যেতে ইচ্ছে করছেনা। বাড়ীর জন্য রওনা হবো।
    – এখন কি কোন বাস পাবে? রাত নয়টা বাজে প্রায়।
    – হয়ে যাবে এক ব্যবস্থা।
    – ট্রেনের টিকেট আর পাবেনা। কেমনে যাবে?
    – আহারে, পলি আমি ছেলে মানুষ, নাহিদ ও ছেলে মানুষ, ব্যবস্থা হবেই। তোদের একা যেতে সমস্যা নাই তো?
    – না, ড্রাইভার সাহেব এর সাথে খালার বাসায় আরও গিয়েছি।
    – মেজ ভাই?
    – আর কথা বলিস না পলি। এবার যা!

    কলি এবার বললো এতো রাতে…
    – একবার ব্যাখ্যা দিয়েছি আর কথা না। সাবধানে যাবি। আমি গিয়ে খালাম্মার বাসায় কল দিব।

    দুই বোনের চোখে পানি ছল ছল করছে, এই রাতের বেলা তাড়াতাড়ি রওনা হয়ে যাচ্ছে।হয়তো খালার বাসায় থাকতো জাহিদ শুধুমাত্র সাহেদা খানমের কথায় কষ্ট পেয়ে চলে যাচ্ছে। মন খুব অস্থির লাগছে দুজনের।

    রিতা খানম খুব বকছেন,কেন জাহিদ-নাহিদ কে রেখে আসলো। তিনি খাবারের সব আয়োজন করে রেখেছেন।

    কলি বললো খালা ইয়াশার পরীক্ষা এজন্য আর, ভাইয়া আসেন নি।
    – ইয়াশা নিজের রুমে পড়বে, ওরা আসলে ইয়াশার কি হবে?
    – আসবে মেজ ভাই আরেকদিন।

    দুই সপ্তাহে পরে, কলি বের হয়েছে খাতা কিনতে, তখন প্রফেসর সাহেব এই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। কলি কে দেখে থামলেন, হাতের ছাতা বন্ধ করে বললেন আরে মেয়ে আছ কেমন?
    – ভালো আছি স্যার।
    – আমার বউমা কেমন আছে?

    কলি হঠাৎ বলায় বুঝতে পারেনি, কলি বললো জি?
    – আমার পলি আম্মা আছে কেমন?
    – জি ভালো আছে।
    – আমার ছেলের পলি মায়েরে খুব পছন্দ হয়েছে। কিন্তু মা, তোমার ভাইজান আর খবর দিলেন না তো কিছু। সম্ভবত ব্যস্ত। আচ্ছা, তাড়াহুড়োর কিছু নেই, আমাকে একটু জানাতে বলবে।
    – জি।

    প্রফেসর সাহেব হন হন করে ছাতা খুলে হেঁটে গেলেন। লম্বায় পাঁভ্লচ ফিট তিন ইঞ্চির এই মানুষটি অত্যন্ত অমায়িক। আপার শ্বশুড় হলে মন্দ হয়না।

    কলি হলে ফিরছে তখন নিচে বললো আপনাদের চিঠি এসেছে বাড়ী থেকে। আপনি নিয়ে যান।

    কলি চিঠি নিয়ে রুমে এসে বললো আপা, তোর জন্য সুখবর।
    – কি?
    – চিঠি এসেছে বাড়ী থেকে। বিয়ে লেগেই গেল নাকি?
    – কি যে বলিস।
    – এই নে, পড়।

    পলি চিঠি পড়া শুরু করেছে।

    প্রিয় পলি,
    কেমন আছিস? আমরা ভালো আছি। এই চিঠি তোর জন্য। ভাইজান প্রফেসর সাহেবের ছেলেকে পছন্দ করেন নি। ছেলে শিক্ষক, সে তোকে খাওয়াতে পারবেনা। সাত ভাই, তেমন কোন সম্পত্তি নেই। ছেলের বাবার ঢাকার যায়গা নাকি সম্ভবত বুয়া। এইখানে একটা বাড়ী আছে। মা, বলেছেন তুই চিন্তা না করতে, আল্লাহ উওম ফয়সালাকারী, তিনি অবশ্যই তোর জন্য ভালো রেখেছেন। কলিকে আদর দিস।
    ইতি,
    জাহিদ।

    পলি চিঠি বন্ধ করেই, টেবিলে খাতা নিয়ে বসে গেল।

    কলি বললো কিরে আপা কি হয়েছে?
    – কিচ্ছু না। আজ কোন বার?
    – রবিবার। কি হয়েছে আপা?
    – প্লিজ তুই চুপ থাক, আমাকে একটু একা থাকতে দে।
    – মায়ের কিছু হয়নি তো?
    – এই নে, চিঠি। তুই দয়া করে বারান্দায় গিয়ে পড়। যা!

    পলি চিঠি লিখছে।

    প্রিয় মা,
    সালাম নিবে, মা, আমার টাকা পয়সা নিয়ে কোন আগ্রহ নেই। যে মানুষ টি শিক্ষিত, তার পরিবার শিক্ষিত, বংশ ভালো। তার কাছে বিয়ে হতে আমার কোন আপত্তি নাই। যদিও আমি মাত্র অনার্স ফাইনাল ইয়ারে কিন্তু, কত কত ক্লাস আমি আব্বার জন্য পড়তে পারিনি, সেটা তুমিই জানো। তাই, আমি চাই একটা শিক্ষিত পরিবারের বউ হতে। ঢাকায় বাড়ী এবং সম্পত্তির উপরে আমার কোন আগ্রহ নেই। আমি একজন ভালো মানুষ জীবনে চাই। মাগো বিবাহিত লোকের চেয়ে, টাকা কম হলেও আবিদ সাহেব বেশি ভালো। আমি বেহায়ার মতো বলছি, ভাইজান কে তুমি বলবে, জীবন আমার, সুতরাং বিয়ে যেখানে ঠিক হয়েছে সেখানেই দিতে। ফোন দিয়ে বলবে আজ ভাইকে, নয়তো চিঠি আসতে আসতে ব্জাইজান না করতে চলে যাবে।
    তুমি ভালো থেকো।
    ইতি,
    পলি।

    অতি দ্রুত সিঁড়ি নেমেই, পোস্ট করে হলে ফিরলো পলি। সে জানে এই কথা গুলি সে আরেকবার চিঠিতে পড়লে, চিঠিতে কাটাকুটি আসবে। কিন্তু এই কাটাকাটি বন্ধ করতে গিয়ে মনের কাটাকাটির রক্তক্ষরণ করে লাভ নেই।

    পলি সত্যি, এখন একজন ভালো মানুষ চায়, একদম আবিদের মতো ভালো মানুষ। পলি মায়ের চিঠি এবং ভাইজানের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা করছে….

    চলবে…

    আন্নামা চৌধুরী।
    ৩০.১২.২০২১

  • ভাবীর সংসার (পর্ব-২১)

    ভাবীর সংসার (পর্ব-২১)

    পলি এক প্লেট কাচ্চি বিরিয়ানি খেয়ে এখন কোল্ড ড্রিংক্স খাচ্ছে, বোরহানির স্বাদ পলির ভালো লাগেনা।
    কলি নিজের বোরহানির গ্লাস শেষ করে পলির গ্লাস হাতে নিয়েছে।

    নাহিদ আরাম করে দুই বোনের খাওয়া দেখছে। কি তৃপ্তি করে খাচ্ছে দুজনে। নাহিদের এই দৃশ্য খুব ভালো লাগছে।

    কলি বললো কিরে নিজের খাওয়া বাদ দিয়ে কি দেখিস?
    – তোদের দেখছি আপা।
    – আমাদের?
    – আরে, এমনি বললাম চা খাবি?
    – আজ রাতে মিল অফ দিতে হবে, যে খাওয়া দিয়েছি।
    – তাই?
    – হুম।
    – তুই আজ থেকে যা!
    – আমার স্যারের বাসায় আরেকবার যেতে হবে। আচ্ছা যুবায়ের খালুকে কি এখন অফিসে পাওয়া যাবে?
    – যেতে পারে, এক বারে ঘুরে যা।

    পলি বললো তাহলে এক্ষুনি যাবি?
    – না না, এখন না। তোদের নিয়ে বেড়ানো বাকি আছে।
    – আমরাও যাই খালুর অফিসে।
    – না, বিকালে যাবো। এখন অন্য কোথাও যাই।

    তিন ভাই-বোন রিকশা করে ঘুরছে, চানাচুর খাচ্ছে, ডাব খাচ্ছে, খুব আনন্দ করছে তিন জনে। নাহিদের পকেটে যাবার ভাড়া আর সামান্য খুচরা টাকা আছে। নাহিদ চিন্তা করেছে ভাড়া রেখে সব টাকা বোনেদের জন্য আজ খরচ করবে।

    বিকাল বেলা, যুবায়ের সাহেবের চেম্বারে নাহিদ বসে আছে। তিনি একটু নিচের ফ্লোরে গিয়েছেন অফিস বয়, দশ মিনিট অপেক্ষা করতে বলেছে।

    নাহিদ যুবায়ের সাহেবের টেবিল দেখছে, কি সুন্দর করে গোছানো, পিন পর্যন্ত আলাদা বক্স করে রাখা। টেবিলের এক কোনে, সতেজ ফুল রাখা। কত টা সৌখিন তিনি, বুঝা যায় তার অফিসের এই রুম দেখলেই।

    ঠিক দশ মিনিট পরে, যুবায়ের সাহেব রুমে ঢুকলেন।

    নাহিদ সালাম দিয়ে বললো, খালু আমি নাহিদ। সাঈদ ভাইয়ের ছোট ভাই।
    – ওয়ালাইকুম আসসালাম। কেমন আছ ইয়াং ম্যান?
    ,- ভালো আছি।
    – আমি একটু নিচের ফ্লোর ভিজিটে গিয়েছিলাম।
    – খালু, আমার একটা দরকারী কথা ছিল।
    – ইয়েস, বলো।
    – প্রফেসর শফিউল আলম, আমার স্যার। ফিজিক্স পড়ান, সম্ভবত আপনার ভার্সিটি সিনিয়র।
    – হ্যা, অনেক সিনিয়র কিন্তু খুবই ফ্রেংকলি কথা বলেন।
    – এখন আপনি কি আপার কথা, উনাকে বলেছিলেন। মানে, আপার বিয়ের কথা।
    – হ্যা, হ্যা। পলি এতে ভালো একটা মেয়ে। তুমি জানলে কেমনে?

    নাহিদ সব খুলে বললো।
    – ওহ, বেশ ভালো।
    – এখন কি আমি স্যারের সাথে কথা বলবো?
    – না, আমি কথা বলে নিচ্ছি। আমি সাঈদের সাথে আলাপ করবো। আর ছেলে চট্টগ্রাম থাকে, দেখতে আসার সময় তুমি উপস্থিত থাকবে।
    – জি খালু।
    – লাঞ্চ করেছো?
    – জি।
    -বাসায় চলে যাও, দুই তিন দিন থেকে যাবে।
    – আবার আসবো সময় থাকবো। আজ আসি, খালু।
    – বাসায় যাও সম্ভব হলে, আচ্ছা আল্লাহ হাফিজ।

    পনেরো দিন পরে, জাহিদ আর নাহিদ এসেছে শারমিনের বাবার বাসায়, আজ বিকেলে ছেলে পক্ষ দেখতে আসবে। জাহিদ-নাহিদ সব ধরনের নাশতার বাজার কিনে এনেছে। যাতে ভাবীদের সমস্যা না হয়।

    সাহেদা খানম পলিকে বললেন কি গো! তোমার কি শিক্ষক ছেলে পছন্দ হবে? তোমার তো আবার চয়েজ হাই।

    পলি কি বলবে বুঝতে পারছেনা। খালাম্মার অভ্যাস সবাইকে খুঁচিয়ে কথা বলা।

    রিতা খালা আসার সময় দুই ধরনের পিঠা, মিষ্টি নিয়ে এসেছেন তাদের সামনে দেওয়ার জন্য।

    প্রফেসর সাহেব, উনার বড় ছেলে, মেজ ছেলে, স্ত্রী এবং ছোট মেয়েকে নিয়ে এসেছেন।

    সাঈদ এসে সালাম দিয়ে বসলো।
    – বাবাজি আছেন কেমন?
    – জি ভালো আছি।
    – নাহিদ ওইদিন বলতে, তোমার বোন তাহলে সেদিনই আমি চিঠি লিখে দিতাম আমার আবিদের কাছে। তোমার বোন, সেখানেই আমার আর কিছু জানার দরকার নেই। বাবাজি মেয়ে কোথায়?
    – আসছে চাচা।
    – মেয়ে দেখার আগে, কিছু কথা বলি বাবা। আমার সাত ছেলে দুই মেয়ে। বড় ছেলে মাস্টার্স পাশ করে, এখন একটা এন.জি.ওর এরিয়া ম্যানেজার হসেবে আছে। আর যে ছেলে বিয়ে করবে সে শিক্ষক, তিন নম্বর ছেলে ইন্টার্নি করছে, মেডিকেলে। বাকিরা স্কুলে,কলেজে পড়ছে। আমি শিক্ষক মানুষ, এখানে একটা বাড়ী কিনেছি, টিন শেডের। আর ঢাকায় প্লট কিনেছি। এখন বাবা, মেয়েকে আনেন, সব বলে ফেললাম।
    – জি জি। আপনাদের ভালো লাগলে মেয়ে দেখান।

    পলির হাত-পা যেন কাঁপছে, কি হয় এই ভেবে! তাছাড়া এক্ষুনি বিয়ের জন্য ঠিক প্রস্তুত ছিল না সে।

    প্রফেসর সাহেব দেখেই বললেন আলহামদুলিল্লাহ! কন্যা আমার পছন্দ হয়েছে, বাবা আদিব তুমি ঠিক মতো দেখো, সম্ভব হলে আলাদা কথা বলো।
    – জি আব্বা।

    রিতা খানম সাথে সাথে পাশের রুমে নেওয়ার ব্যবস্থা করলেন।

    আবিদ শুধু বললো, আমি খুবই সাদামাটা একজন মানুষ, আপনার মধ্যে এক ধরনের মায়া আছে, সেজন্য মায়া পড়ে গিয়েছি আমি। আমার আপনাকে বিয়ে করতে সমস্যা নেই, শুধু ছয়/সাত মাস সময় দিতে হবে। নিজের একটু গোছানো আছে।
    – আমার সমস্যা নেই।
    – হাতের নখের খুব যত্ন করেন দেখছি।

    পলি সাথে সাথেই হাতের আংগুল লুকিয়ে ফেললো। কি অদ্ভুত ভাবে, তিনি নখ দেখছেন।

    আমার আর কিছু বলার নেই, আপনার কিছু জানার ইচ্ছা আছে?
    – আমার ও আর কিছু জানার নেই।
    – থ্যাংক ইউ।

    আবিদ সত্যি খুব সাদামাটা, চুল গুলি পালিশ করে সিথি করা। চোখে বড় ফ্রেমের চশমার। সাদা রঙের শার্ট পরা, শার্টের কলারের নিচের জায়গায় অনেক কালো হয়ে আছে৷ হয়তো ব্যাচেলর এজন্য সুন্দর করে ধুইতে পারেন নি। পলি ও ভাবছে সে অনেক কিছু পর্যবেক্ষণ করেছে, দেখছে।

    এক কেজি মিষ্টি নিয়ে আসায়, আইরিন-আয়মন খুব হাসাহাসি করছে। তারিন বলছে কি পলি আপা! এতো কিপটা কেন এরা?
    – জানিনা।
    – ভালো মিলছে। হাবা হাবা চেহারা।
    – কি?
    – কিছুই না!

    পলির রাগ লাগছে, এরা সত্যি কখনোই ঠিক হবেনা। সবকিছুতেই ভুল খোঁহে।

    সাঈদের খুব একটা পছন্দ হয়নি বোধহয়। কিছুই বুঝা যাচ্ছেনা। তিন ভাই গেইটের বাইরে দাঁড়িয়ে কি যেন পরামর্শ করছে।

    হাবা হলেও, সেও আবিদের মায়ায় পড়েছে। পলি তাদের সিদ্ধান্ত জানার জন্য অপেক্ষা করছে….

    চলবে…

    আন্নামা চৌধুরী।
    ২৬.১২.২০২১

  • ভাবীর সংসার (পর্ব-২০)

    ভাবীর সংসার (পর্ব-২০)

    আজ ঈদের দ্বিতীয় দিন,সকাল থেকে বাড়ী-ঘর সবকিছুতে পরিষ্কার অভিযান চলছে, কারণ আজ জলি নতুন জামাই নিয়ে বাবার বাড়ী আসবে।

    রান্নাঘর থেকে সুঘ্রাণ আসছে, রাহেলা খানম পোলাও, গরুর মাংস রান্না শেষ করেছেন, রুই মাছ ভাজি করবেন, এজন্য মাছ হলুদ মরিচ মাখিয়ে রেখেছেন, কারণ মাছ আগে ভাজলে খেতে মজা লাগবেনা। সব প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে। এখন সালাদ কাটতে বসবেন।

    কলি দুলাভাইয়ের জন্য মুরগীর ঝাল ভুনা করেছে। আর পলি করেছে পায়েশ। বেশ আয়োজন হচ্ছে নতুন জামাইয়ের জন্য।

    নাহিদ এসে বললো মা, আমি তো বাবুর জন্য একটা পাঞ্জাবি এনেছিলাম।
    – দাদুর জন্য?
    – হ্যা।
    – খুব ভালো করেছিস। আমিও এক সেট কাপড় জাহিদ কে দিয়ে আনিয়েছি। ওরা যেতে সময় দিয়ে দিব।
    – কত আদর করতে ইচ্ছে করে, ও আমাদের বাড়ীর প্রথম সন্তান!
    – রক্তের টান, আসবেই আসবে। শুধু সময়ের অপেক্ষা!

    এরমধ্যে কলি এসে বললো মা, জলিপা চলে এসেছে।
    নাহিদ আর রাহেলা খানম সাথে সাথে উঠানে বেড়িয়ে এলেন।

    জলি মাকে জড়িয়ে ধরে আছে। রাহেলা খানম দেখছেন তার কালো মেয়েকে ও শাড়ী গহনাতে কত্ত সুন্দর লাগছে!

    পলি-কলি দুলাভাইয়ের সাথে গল্প করছে, আর হাসাহাসি করছে। দুলাভাই মোটামুটি রসিক মানুষ, তিনিও বেশ মজা পাচ্ছেন।

    জলি সাথে করে তার চাচা শ্বশুড়ের মেয়েকে নিয়ে এসেছে। এসে মাকে বলছে জলি,
    মা, ওর নাম তিন্নি, ইডেন কলেজে পড়ে।
    – ভালো তো।
    – তিন্নি যাও, ওদের সাথে গল্প কর, এখানে গরম বেশি লাগবে।
    – যাও মা, রান্নাঘরে অত্যাধিক গরম।
    – মা, ওর বাবা কত্ত বড়লোক জানো! ঢাকায় নাকি বড় বড় দুটি কাপড়ের দোকান। বাড়ীতেও একতলা বাড়ী।
    – হুম।
    – এই যে, শাড়ি এটা তো চাচা দিয়েছেন।
    – সুন্দর শাড়ি দিয়েছেন।
    – আমার শ্বশুর বাড়ীতে ঈদে কাপড় কেনার নিয়ম নাই। সত্যি কথা হলো সামর্থ্য নাই, তাই এই নিয়ম। এই জন্য তুমি যে শাড়ি আমাকে, ঈদের জন্য দিয়েছিলে, এটা আমি ঈদের আগের রাতে আমার শ্বাশুড়িকে দিয়ে দিয়েছি। চাচা আমাকে দিয়েছেন, আমার তো ঈদে নতুন কাপড়ে হয়েছে কিন্তু আম্মার তো নাই। তাই দিয়েছি।
    – ভালো করেছিস।
    – মা, আরেকটা কথা।
    – কি?
    – তিন্নি কে কিন্তু সম্মানী দিয়ে দিও, প্রথমবার আমাদের বাড়ীতে এসেছে।
    – হ্যা।
    আচ্ছা আমি যাই, দেখি তিন্নি কি করে!

    রাহেলা খানম মাছ তেলে দিয়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। কি করবেন এখন? জাহিদ আজকের বাজার ও একজনের কাছ থেকে ধার করে দিয়েছে। আর এখন তিনি কি দিয়ে মেয়েটাকে সম্মান করবেন, চিন্তা করে কুল পাচ্ছেন না। তারা এই অবুঝ মেয়েটা এখনো অনেক কিছুই বুঝেনা। মন টা নরম, সবার কথা ভাবে, কিন্তু এত্তসব জঠিলতা বুঝেনা।

    রাহেলা খানম, পলিকে ডেকে বললেন এদিকে আয়,
    – কি?
    – জলি যে, ননদ নিয়ে এসেছে, এখন কি করি বল?
    – আমি কি বলবো মা? মেজ ভাইকে বলো।
    – কোন মুখে বলি, আজকের বাজার টা কত্ত কষ্ট করে ধার-দেনা করে এনেছে।
    – আমার কাছে কি টাকা থাকে? থাকলে তো দিয়ে দিতাম।
    – আমার মাথা কাজ করছেনা, তোদের কি নতুন কোন জামা আছে? যেটা পড়িস নি?
    – কি যে বলো মা! আমরা এতো বড়লোক হলাম কবে?
    – আচ্ছা যা।

    জাহিদ জানার পর, তার এক বন্ধুর কাছ থেকে তিনশো টাকা এনে, মাকে দিয়ে বললো হাতে দিয়ে দিও।

    রাহেলা খানমের যেন বুক থেকে বড় পাথর নেমে গেল। যদিও ছেলের এতো ঋণ কেমন শোধ করবে, সেই চিন্তায় অস্থির লাগে। এই ছেলে, সবসময়ই মায়ের মন টা বুঝে। তাছেড়া মেয়ে একদিন এসেছে, খুশি মনেই যাক, কষ্ঠ যখন আছে কপালে, তাতো থাকবেই।

    ঈদের পরে ছুটি কাটিয়ে সবাই সবার গন্তব্যে গিয়ে যার যার পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে….

    পলি-কলি টাইপিং শেখা শেষ হতেই, অনার্সের পরীক্ষা শুরু হয়েছে। গতকাল পরীক্ষা শেষ হয়েছে, এই বছর তাদের ফাইনাল ইয়ার শুরু, এজন্য এখন আর টাইপিং এর কোন চাকরিতে ঢুকছেনা দুই বোন। মন দিয়ে পড়বে, যাতে ভালো রেজাল্ট আসে। যদি চাকরি করতে ইচ্ছে থাকতো তবে, তাদের একটা চাকরীর ব্যবস্থা হয়ে যেতো, যুবায়ের সাহেব করে দিতেন। কিন্তু এখন দুই বোন মনোযোগ দিয়ে পড়ছে।

    সকাল বেলা, নাহিদ হলের নিচে এসে উপস্থিত, এসেই দুই বোনকে চমকে দিয়েছে নাহিদ, কারণ সে না জানিয়ে এসেছে। সে একটা দারুন সুখবর নিয়ে এসেছে, জাহিদের সককারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, সহকারী শিক্ষক পদে চাকরি হয়েছে।

    পলি বার বার বলছে, ইশ কি যে ভালো লাগছে নাহিদ কি বলবো! আল্লাহ আমাদের মেজ ভাইকে অনেক বড় করুন।
    – এর মধ্যে আমাদের গ্রামের স্কুল। ছোট ভাইয়া কম্পিউটারের দোকানের চাকরি ছেড়ে দিবে ভাবছে। এসে ভাইয়ার লাইব্রেরিতে বসবে, আর নিজেও ভালো করে পড়বে। এখন আমি টিউশনি করি, হলে উঠে গেলে চলতে পারবো।
    – আমাদের ও আর এক বছর, পরে ভালো চাকরি করতে পারবো।
    – হ্যা আপা। তাই! আম্মার যে ফিজিক্সের স্যার আছেন, যার বাসায় আমি পড়েছি। একটু দেখা করতে চেয়েছিলাম। এখন গেলে স্যার কে বাসায় যাবো। এক বার দেখা করে আসি?
    – তুই দুপুরে কোথায় খাওয়া দাওয়া করবি?
    – তোরা ডাইনিং অফ রাখিস তিন ভাই-বোন মিলে বিরিয়ানি খাবো। আমাদের ভাইয়ার চাকরি হয়েছে না!
    – না না লাগবেনা।
    – আরে, আপা আয় তো। কত্ত দিন আনন্দ হয়না! তোরা রেডি হ, আমি স্যারের বাসা থেকে ঘুরে আসি।

    নাহিদ প্রফেসর শফিউল আলমের বাসায় গেল, তিনি তাদের কলেজের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের হেড। যার কাছে ছাত্ররা লাইন ধরে পড়তে আসে। চমৎকার করে পদার্থ বুঝান তিনি।

    নাহিদ কে দেখেই বললেন, আরে নাহিদ কেমন আছ?

    নাহিদ পায়ে হাত দিয়ে সালাম করলো। ভালো আছি স্যার। আপনি?
    – এই যে পোলাপান নিয়ে আছি ভালোই। এই তোমরা আজ চলে যাও, আমার প্রিয় ছাত্রের সাথে কিছুক্ষণ আলাপ করি।

    নাহিদ স্যারের বসারঘরে বসেছে। বেতের এক সেট সোফা আর প্রকান্ড বড় এক সাদাকালো টিভি আছে বসার ঘরে, আর এক সেলফ পদার্থের বই।

    তিনি নাহিদের সামনে বসে বললেন, নাহিদ কেমন আছ?
    – ভালো আছি স্যার।
    – ভার্সিটি কেমন লাগছে।
    – ভালো স্যার।
    – তোমাকে দেখেই একটা কথা মনে হলো, আগে জিজ্ঞেস করি ফেলি, কারণ এখন অনেক কথাই ভুলে যাই।
    – বলুন স্যার।
    – তোমার ভাই কৃষি অধদপ্তরে কাজ করতেন?
    – জি স্যার। এখনো আছেন।
    – বাহ বাহ ভালো। আমার এক ছোট ভাই আছে, নাম যুবায়ের, ভার্সিটি জুনিয়র ছিল। তার বাসা মহিলা কলেজের পাশে। সে আমাকে বললো তার পরিচিত একটা ভালো মেয়ে আছে। মেয়ের ভাই ও নাকি কৃষি অধিদপ্তরে কাজ করে। একটু খবর নিও, তুমি আমার প্রিয় ছাত্র, তাই তোমাকে শেয়ার করলাম।
    – জি স্যার।
    – মেয়েটি সম্ভবত মহিলা কলেজে অনার্সে পড়ে। এরা দুইবোন এক সাথে পড়ে। আমার মেজ ছেলের জন্য পাত্রী খুঁজছি সে, সরকারি স্কুলের গণিতের শিক্ষক, নবম-দশম শ্রেণীতে পড়ায়। তার জন্য মেয়ে দেখছি। তা তুমি বাবা, কি খাবে? আমার সকালের খাবার ডাল, আলু ভাজি আর ভাত। সকালে এছাড়া কিছুই আমি খাইনা। বহু দিনের অভ্যাস। একটা ডিম ভাজি করে দিতে বলি?
    -জি না স্যার। ভাত আমি এখন খাবো না। সকালে নাশতা করেছি।
    – তাহলে এক কাপ চা দিতে বলছি, এটা না করবেনা।
    আমার সাত ছেলে দুই মেয়ে। সবাই বড় হয়ে যাচ্ছে। বিয়ে দিতে হবে। তাই একজন একজন করে শুরু করছি। তুমি বাবা আজ সন্ধ্যায় আমাকে খবর জানিও
    ছেলে আবার চট্টগ্রাম থাকে, তুমি ভালো বললে, ছেলেকে মেয়ে দেখতে আসার জন্য চিঠি লিখবো।
    – জি স্যার, অবশ্যই জানাবো।

    নাহিদ যুবায়ের খালুর নাম শুনেই বুঝেছে, এটা পলির জন্য বিয়ের আলাপ। নিজের বোনের কথা কি বলবে সে! তার কাছে তার তিন বোন পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো মেয়ে। তাই কি বলবে সেজন্য সন্ধ্যা পর্যন্ত সময় নিল সে।

    প্রফেসর সাহেবের টিন শেডের নিজের বাসা। সামনে বেশ বড় উঠান। ত্রিশ শতকের জায়গার উপর তার বাড়ীটি। বেশ সুন্দর বাড়ী। বাড়ীর বাইরে বড় করে লেখা, “শান্তি নীড়” প্রসেসর শফিউল আলম।

    নাহিদ কলেজের দিকে যাচ্ছে, তার বোনেদের নিয়ে বের হবে। আবার ভাবছে, স্যারে কে বিকালে সে কি বলবে, হাঁটছে আর ভাবছে….

    চলবে…

    আন্নামা চৌধুরী।
    ২৩.১২.২০২১